-
স্থিরবিন্দু
চন্দনা বলেছিল এই শরীর নিয়ে বেরুবে? ‘না বেরিয়ে উপায় কি? আমাকে নিয়ে এই কটা দিন তুমি কতো কষ্ট করে সংসার চালিয়েছো।এভাবে ঘরে থাকাটা আরো যন্ত্রণার। হরিপদর গায়ে হাত রেখে চন্দনা বলে জ্বরটা এখনো আছে। এই শরীর নিয়ে বেরুলে আমি খুব দুশ্চিন্তায় থাকবো। হেসে উঠেছিল হরিপদ। আমাদের আবার দুশ্চিন্তা? চিন্তা করলে তার কিছু না কিছু একটা […]
-
ক্যাক্টাস
রমনীমোহনের প্রাসাদোপম বাড়ির কারুকার্য করা বিশাল লোহার গেট, সেটা খোলা। তারপরে আবার একটা কোলাপসিব্ল গেট। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে চাঁদু, অর্থাৎ চন্দ্রনাথ। অবশ্য সেটা এখন আর বোধহয় কেউ মনে রাখেনি। সবাই বলে চাঁদু। চাঁদু নিজেও জানে তাকে ঐ নামে সম্বোধনের সময় সবাই একটা তাচ্ছিল্যের ইঙ্গিত ছুড়ে দেয়। এটাও জানে পাড়ায় যে কোনো বাড়িতে সে […]
-
ঋকের বড় হওয়া এবং তারপর…
(১) সিঞ্চিনি বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখল ব্রেসিয়ারটা নেই। সিঞ্চিনি বরাবরই বাথরুমে স্নান করতে ঢোকার আগে খাটের ওপর ম্যাক্সি, পেটিকোট, প্যান্টি আর ব্রেসিয়ারটা রাখে। প্রথমে পেটিকোট। তারপর ব্রেসিয়ার আর প্যান্টি। ব্রেসিয়ার-প্যান্টির ওপর ম্যাক্সিটা চাপা দিয়ে রাখে। অনেক দিনের অভ্যাস। গা মুছে গামছাটা পেঁচিয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে ঘরে এসে ওগুলো পরে নেয়। আজ বাড়িতে কেউ নেই। বিতানের […]
-
ভোঃ
‘ক’ আর ? আর কি নেব বল্ ? ফোনের এপারে মেয়ের মানে আমার গলা- একটা স্বপ্ন, দু’চারটে ভাল চিন্তা, দু’চারটে দুশ্চিন্তা,আর ভরসা। যা নিয়ে সকালে উঠবি। হ্যাঁ তা নিভ্ভরসা হ’য়ে যাওয়া নয় বলেই তোরা তিন তিনটে ভরসা বলিস্ ,আস্থা বলিস , না তো বোন্ বোনধ্ , হ্যাঁ তা বোনন- ধ-উ – ইচ্ছে করে তোত্লাচ্ছিস কেন? […]
-
মেঘ বালিকা
ঠিক পাঁচটায় টয়েটো গাড়িটা এসে দাঁড়ালো এয়ারপোর্টের গেটের সামনে। নেমে পড়লাম তিন বন্ধু। গাড়ি থেকে লাগেজ নামিয়ে ট্রলি-গাড়িতে চাপিয়ে আস্তে আস্তে এগোতে থাকলাম। ‘সেলাম সাব’ , ড্রাইভারের গলা শুনে হঠাৎই খেয়াল হল তাকে কিছু বকশিশ দেওয়া হয়নি। সঙ্গে সঙ্গে বললাম, ‘দেবাশিস ,আমরা ট্রলিটা দেখছি। তুই ড্রাইভার দাদাকে কিছু টাকা দিয়ে আয়’। আমার কথা শুনে দেবাশিস […]
-
আমার ছেলে কিচ্ছু খায় না
ডাক্তারের উল্টো দিকের চেয়ারে বসে মুখ কাঁচুমাচু করে কাজরী বললেন, ডাক্তারবাবু, আমার ছেলে কিচ্ছু খায় না। এর আগেও দু’জন চাইল্ড স্পেশালিস্টকে দেখিয়েছিলাম। এই যে তাঁদের প্রেসক্রিপশন… বলেই, আগে থেকে বের করে রাখা তিন-চারটে কাগজ উনি এগিয়ে দিলেন ডাক্তারবাবুর দিকে। ডাক্তারবাবু সেগুলিতে চোখ বোলাতে লাগলেন। কাজরী আবার বললেন, ও কিচ্ছু খাচ্ছে না, কী করা যায় বলুন […]
-
একজন সামান্থার গল্প
বহু রাত পর আজ সামান্থা ঘু্মোতে পেরেছে। বহুদিন পর আজ সে সকালের স্নিগ্ধ নিষ্পাপ আলোর বিচ্ছুরণ দেখেছে অন্য রকম এক ভাল লাগায় নিজেকে ঢেলে দিয়ে। আজ সকালের কফি তাকে মিষ্টি করে শুভাশিস জানিয়েছে। সরে গেছে তার জীবন থেকে কালো রাহুর গ্রাস। কাল রাতে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে ফ্রেডিকে। অনেকগুলো দিন সহ্য করেছে সে দাঁতে দাঁত […]
-
মিষ্টি কুমড়ো ও এক ভালোমানুষের গল্প
‘মিষ্টি কুমড়ো যে কোনোদিন কিনে খেতে হবে এ কখনো ভাবিনি বাবু ! ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি এ তো গরুতে খায়” ! কানাইদার কাঁচি আমার মাথার মধ্যে চলতে চলতে থেমে গেলো ! পঞ্চদশবর্ষীয় আমি, খালিগায়ে, ডবল পেজ খবরের কাগজের মধ্যে ফুটো করা মাথা-গলানো মেক-শিফট কাগজ-জামা থেকে ঘাড় তুলে বললাম ” সে কির’ম, কানাইদা ?” কানাইদাকে নিয়ে […]
-
সেফ কাস্টডি
আজকেই শেষ হয়ে যেত তরকা। শেষ মানে একেবারে খতম। এ তল্লাটে আর চুরবুড়ি মারাতে হত না। দাগী স্বপনের ভাই কেলেজনা গতরাতে খতম হয়ে যাওয়ার খরবটা শোনার পর থেকেই ব্যাপারটা একটু একটু করে অনুভব করতে পারছিল তরকা। চারপাশেই স্বপনের দলের ছেলেগুলো ওকে নজরে রাখছিল। অর্থাৎ সুযোগ খুঁজছিল। তরকাও এখান থেকে পালাবার তাক করছিল। কিন্তু পালানো ব্যাপারটা […]
-
প্রত্যাবর্তন
ঝাঁ-চকচকে পিচরাস্তাটা ধরে যেতে যেতে কুড়ানী ভাবল,সত্যিই দেশটার কি উন্নয়ন! আর মানুষ গুলোর কোনো ভাবনা নেই।বর্ষাতে আর ছ্যাপ-ছ্যাপে কাদা মাড়িয়ে,লুঙি-কাপড় গুটিয়ে খালি পায়ে হাঁটতে হবে না কাউকে।গ্রামের ছেলে-মেয়ে গুলোকে আর ঠেলে-ঠেলে সাইকেল পার করে স্কুলে যেতে হবে না—এখন পাকা রাস্তা!লোকের কথা চিন্তা করলে কি হবে,কুড়ানী নিজে কখনও জুতো পরে না।জুতো থাকবে কি করে ওর পায়ে?খালি […]
-
কবিরাজ
সকাল থেকে ঝিরঝির বৃষ্টি হচ্ছে । কয়েকদিনের গুমোট গরমের মধ্যে এই বৃষ্টিটুকু যেন খোদার আশির্বাদ । সারাদিন ঘরের মধ্যে বসে থেকে হামজা মোল্লার মন উসখুস শুরু হয়েছে । হামজা মোল্লা গ্রামের একমাত্র নামকরা কবিরাজ । সংসার খুবই ছোট । কিন্তু মনে সুখ নেই , সংসারে নেই শান্তি । হামজা সহজে হাল ছাড়ার লোক না । […]
-
হ্যালুসিনেশন
আবার সেই ছাতিম ফুলের সুঘ্রান। এই গন্ধটা নাকে এলেই আমি আর নিজেকে নিজের ভেতর পুরে রাখতে পারিনা। আমার ভাবনাগুলোতে কেমন জট পাকিয়ে যায় সুগন্ধী বাতাসে। বাস্তব জগত থেকে কেমন একটা স্বপ্নিল কল্প রাজ্যে ঢুকে পড়ি আচমকা।আমার অবস্থানটাই বদলে যায় দ্রুত। তখন নিজের পরিচয় সম্পূর্ণ ভুলে যাই আমি। কোথায় আছি, কোথায় যেতে চাই কিছুই বুঝতে পারিনা। […]
-
নজরদারি
হুমদোমুখো লোকগুলো জেরা করেই চলেছে। কঠিন সব প্রশ্নের জালে ক্রমশ পেরে ফেলছে স্বপ্ননীলকে। স্বপ্ননীল ভাবছে, তাহলে গোপনীয় বলে কিছুই নেই। সে কবে ওলা বা উবরে কোথায় গিয়েছিল, ওহো! ক্যালকাটায় কবে কার সঙ্গে গিলে কত টাকা ডিজিটালে পেমেন্ট করেছে, সবই ওদের জানা। এমনকি পাতি হলুদ ট্যাক্সিতে হাওড়া স্টেশনে গিয়ে বেঙ্গালুরু থেকে আসা কয়েকজনের সঙ্গে সে যে […]
-
চলচ্চিত্র
ছবি অনেকটাই প্রতীকী। এক একজনের ছবি এক এক রকমের। প্রতিটি ছবির মধ্যে একটা সময় ঢুকে থাকে নিজের মত করে। তবে ছবিও যে হেঁটে যায় তার ছবি না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত। পাশের গ্রামের ছবি পিসি। হ্যাঁ ওই নামে বেশী চিনি। টাইটেল টা বলা শক্ত, আসলে পাগলদের টাইটেল কোনোকালেই ছিল না। অবশ্য ঠিক কি কারণে পাগল […]
-
তৃতীয় নয়ন
১ তীব্র শীতের মতো এক দেশ। খাঁ খাঁ প্রান্তর, কুয়াশা মোড়া, নিঃস্তব্ধ, কোলাহলহীন। সে কি আগে এসেছে এখানে ? কখনো ? কই চিনতে পারছে না তো কাউকে। কেমন সব অলীক মুখ চোখের মানুষজন, অচেনা অঙ্গভঙ্গি, অদেখা পরিবেশ! অনুভূতিহীন চোখ মেলে সে তার চারপাশ দেখে নেয়। না তার ভয় করছে না। […]
-
চেনা-চেনা লাগে
[১] কালিদাস মাধ্যমিক (উচ্চমাধ্যমিক) বিদ্যালয়ে শুভম যেদিন অঙ্কের পার্টটাইম শিক্ষক হিসেবে জয়েন করল সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টির দাপট ছিল মনে রাখার মতন। সারা আকাশ কালো হয়ে রয়েছে, সঙ্গে অবিশ্রান্ত বৃষ্টিপাত আর উথাল-পাথাল ঝোড়ো হাওয়ার তাণ্ডব। এত খারাপ আবহাওয়া বছরের এই সময়টা সচরাচর হয় না। কিন্তু হয়েই যখন গেছে তখন কি আর করা! প্রথম দিন, […]
-
কীট
১ সারাদিন অখণ্ড অবসর। জীবন বড়ো নিস্তরঙ্গ। কাছেই কোথাও কোকিল ডাকছে। আর তার সাথে আসছে ছাতারে পাখিদের হিসেব না মেলা ঝগড়া। বড় খেয়ালী এ সকাল। আর খুব আলতো। মুঠো করে না ধরলে যেন ঝরে যাবে। শব্দ বলতে একটা হচ্ছে বটে। গুনগুন,গুঞ্জন। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন দীপান্তবাবু। ফেলে রাখা.. পড়ে থাকা তানপুরা থেকে একটা ভ্রমর বেরিয়ে আসছে। […]
-
সুক্ষ্ম শরীরে
ত্রিলোকনাথ গোস্বামী প্রতিদিনের মতই নিজের সাধনায় বসেছে। দুধওয়ালা শুভ, প্রতিদিনের মত দুধের প্যাকেটটা নিয়ে আসল – ত্রিলোকনাথের ঘরের সামনে। দুটো টোকা মারল দরজার উপর। ভালো করে ত্রিলোকনাথের দিকে তাকিয়ে দেখল, সে পদ্মাসনে বসে রয়েছে। ত্রিলোকনাথ কোনো সারা না দেওয়াতে – শুভ নিজেই ঘরে ঢুকে, টেবিলের উপর রাখা পাত্রে – দুধের প্যাকেটটা রেখে দিল। শুভ-র বয়স […]
-
ভগীরথ মিশ্র’র লেখালিখি
[ বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে তাঁর লেখা সুবৃহৎ উপন্যাস ‘ মৃগয়া’। একে কেউ বলেছেন মহাসাহিত্য আবার কেউ বলেছেন ভারতীয় উপন্যাসের মডেল। তাঁর লেখালিখি হয়ে উঠেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের গবেষনার বিষয়। তিনি ভগীরথ মিশ্র। যাঁর লেখায় পাঠক খুঁজে পান মাটির টান। তিনি মনে করেন গোটা ভারতবর্ষটাই কৃষিপ্রধান আধা সামন্ততান্ত্রিক দেশ। গোটা দেশটাই একটা গ্রাম। […]
-
চেনা লেখক অচেনা কাহিনী
চেনা জানা জগৎটাই আমাদের কাছে ধোঁয়াশা। এই জগতটারই কোন সঠিক চেহারা আমরা বুঝি না যতক্ষণ না অচেনা নানা কাহিনী, চেনার জগতের হাত ধরে আমাদের চেনা মানুষগুলোকে আরও ভালভাবে চিনিয়ে দিয়ে যায়। তাই অচেনা মানুষরা আমাদের পরিচিত জগতের মধ্যে যতটা না প্রভাব ফেলে চেনা লোকের নতুন নতুন না জানা ঘটনা আমাদের বেশি করে ভাবায়। লেখক পাঠকের […]
-
উদয়ের কথা
[ভারতবর্ষে নৃত্যের আধুনিক ধারার প্রবর্তক হিসেবে উদয়শঙ্করকে মানা হয়।ভারতীয় নৃত্যশিল্পকে বিশ্বের দরবারে নিজ দক্ষতায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। সৃজনশীল নৃত্যজগতের নটরাজ তিনি।ভারতীয় নৃত্য ধারায় ‘ব্যালে’ পদ্ধতির সর্বশ্রেষ্ঠ প্রয়োগশিল্পী হিসেবে উদয়শঙ্করকে মানা হয়।আজও প্রবহমান তাঁর সেই নৃত্যধারাকে বহন করে নিয়ে যাওয়ার গুরুদায়িত্ব উদয়শঙ্কর নিজ হাতে যার কাঁধে তুলে দিয়েছিলেন তিনি শান্তি বসু।টানা ন’বছর উদয়শঙ্করের দলের ব্যালে মাস্টার […]