26 Sep

ভোঃ

লিখেছেন:তন্বী মুখোপাধ্যায়


‘ক’

আর ? আর কি নেব বল্ ?

ফোনের  এপারে মেয়ের মানে আমার গলা- একটা  স্বপ্ন, দু’চারটে ভাল চিন্তা, দু’চারটে দুশ্চিন্তা,আর ভরসা। যা নিয়ে  সকালে উঠবি।

হ্যাঁ তা নিভ্ভরসা হ’য়ে যাওয়া নয় বলেই তোরা তিন তিনটে ভরসা বলিস্ ,আস্থা বলিস , না তো বোন্ বোনধ্ , হ্যাঁ তা বোনন- ধ-উ –

ইচ্ছে করে তোত্লাচ্ছিস কেন?

 

‘খ’

এই যে ‘আমি’ – সে স্বপ্ন দেখে রাষ্ট্রপ্রধান হবার – শুধু ‘ফার্স্ট’ লেডি হবার স্বপ্নও তাকে সেখান থেকে কোনদিন নড়াতে পারবে না; কিভাবে যেন ভেবে বসে আছে। কল্প ক্লপান্ত ধরে কাজ করা যায় যে চূড়ায় গেলে কেমন হয়, এমন হয়তো? বন্ধুরা ফাজলামি করে স্বপ্নের মাঝখানে ব’লে বসে, ‘অঞ্চলপ্রধান হলে হয় না? তুই না হয় ‘দিনহাটা’ কি ‘গোসানিমারি’ কি ‘কোচবিহারকে’ রাষ্ট্রে পরিণত করে নিবি? কিরে পারবি না!’

ওমনি বুদ্ধি নিয়েই সেবা একদিন বলে ফেলেছিল – ছেলেদের সঙ্গে যাবি? হোটেল সিগাল! নাইট হল্ট করবি? ডিট্টো প্রপোজালটা দেওয়াই আমার সত্যি বন্ধু সুকল্পাই চমকে উঠেছিল – ‘ভাগ্যিস বাড়িতে বলিসনি। মা শুনলে কি জানি কি সব ভুল ঠিক ভেবে নেবে – তারপর এমনি চোখ ক’রে তাকাবে যে তোর আমার না বিচ্ছেদ ঘটে।‘

সুকল্পা আবার বেশি বেশি ভাবে। অবশ্য আমিও বেশি ভাবতে চাই। দাদুভাই আমাদের পরিবারের রাষ্ট্রপ্রধান – তিনি খালি বলেন, অকেজোরা শুধু ভাবে, ভেবেই মরে। বিজ্ঞানের ছাত্রী নিছনি, সমাজবিজ্ঞানেরও, শুধু তাই বিশেষকেও সে বোঝে। টাইমের আপেক্ষিক গুরুত্ব দিতেই হবে।

সুকল্পাও কি ন্যাকা হয়ে গেল?

বাড়িতে বলার কি আছে?

এ শহরে আমার সাড়ে তিন বছর কি কাটল না? নামের বাড়িটা নয় থাকল নর্থ বেঙ্গলে। এখন অত্যধিক ডোন্ট পরোয়া ভাবটাই আমার জীয়নকাঠি, পক্ষান্তরে আমার ঠিকানা। এসব আবার মা-বাবাকে বলার কি আছে? মাস্টার ডিগ্রি করছে যে মেয়ে সে কি বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে যেতে পারে না! পাকে চক্রে নয় মেয়ে কলেজে পড়ি। কিন্তু ছেলে বন্ধু থুড়ি ন্যাকা নয় এমন মানুষজনকেই আমার ভাল লাগে। প্যান্ট টপে আপত্তি নেই, সিগার ফোঁকায় এমন কি গাঁজা টানায়ও আজ কেউ ডুকরে কাঁদে না, যতো বিপত্তি কি ছাতা বেড়াতে যাওয়ায়! দেখিই না কার মনে কি আছে?

সুকল্পারে কি মিস করলি! এলে বুঝতিস ঘোড়ামাথাগুলো না আমার জন্যে দিব্যি একটা আলাদা ঘরের বন্দোবস্ত করেছে। ম-স্তো এক ঘর – তত্তো বড়ো ব্যালকনি – হাজারও সিজন ফ্লাওয়ার বন্দী একটা রুফ টপ সামনেই, আর দূরে না অদুরে না কিছুদূরেই দেখা যাচ্ছে অনেকখানি সাগরখনির নীল।

‘গ’

সেবা বসেছিল – ব্রেকফাস্টে কোনটা একবারে এই জায়গার লাগসই হবে বল তো শেঠজী। মাছভাজা না?

শেঠজী মানে যে ‘কথা কম কাজ বেশী’ প্যাটার্ন – ওর নাম কিন্তু উদাস। তা তিনি বললেন – হুঁ! তাঃ!

বাধ্য হয়ে আমি গর্দভের মাছ খেতে নেই, ঘাস খুঁজে খেতে হয় বলে স্বভাবসিদ্ধ নাক কুঁচকোলাম। সেবার নামটা মেয়ের কিন্তু হাতগুলো তো তা নয়, একটি চাঁটা খেয়ে চুপ করলাম।

শেষ ডিসেম্বরের আল্গা দিন চলে গেল নাচুনে সমুদ্রের কটিতটে থেকে থেকে। চোখ লেগে রইল মাতুনিতে।

খাওয়া দাওয়া চলনসই। ফটোগ্রাফি চলনসই। গল্পটল্প মাঝে মধ্যে; আবার আমি সঙ্গীহীন হয়েও পড়ছিলাম মধ্যে মধ্যে। কিন্তু ‘কি নিঃসঙ্গ!’বোধ করিনি।

বালিতে ব’সে আঁচড় কাটতে কাটতে নতুন ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করছিলাম, ‘সুপ্রতিভ তোমার বাড়িতে কে কে আছেন? সে যখন বলল ‘কেউ না’। তখন একদম স্তব্ধ হ’য়ে রইলাম।

ওউ জিজ্ঞেস করল, ‘নিছনি তোমার বাড়িতে কে কে আছেন?’ আমি বললাম ‘সব্বাই’। কিন্তু মোনো মোমেন্টও সবাইকে একসঙ্গে তুমি পাবে না।

সুপ্রতিভের উত্তরটা ছিল বেশ কায়দার – ‘সবাই মানে তো অনেকে, তাই তাঁরা ঘিরে ঘিরে থাকেন? যখন যেমন দরকার, যেদিকে গেলে …’

আমি মনে মনে বললামঃ ‘তাঁরা কি আকাশের তারা যে ঘিরে ঘিরে থাকবেন, যদিও তাঁরা নিজেদের তাই বুঝি ভাবেন! আসলে তাঁরা একে অপরকে সহ্যই করতে পারেন না!’

দুপুরবেলা নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় একটা চেয়ারে আমি বসে বসে সুপ্রতিভের অনেক কথা সমুদ্রের দিকে একমনে তাকিয়ে তাকিয়ে শুনেছিলাম। কথাগুলো বুঝতে পারছিলাম নির্বোধের মতো নয়। সুপ্রতিভ বাসু কাল এই সময় হস্টেলে ফিরে যাবে। কাল সেবাটা নির্ঘাৎ বাড়ি ফিরে খুব ঘুমোবে। আর মোটু শেঠজী আর একটু স্লিম হবার আশায় ওয়াকারে চড়তে পারে। নিছনি শুনবে বেড়াতে আসার অনেক শব্দ। ছোটবেলায় বেড়ার গেট খুলে রাস্তায় বেরোলেই যেমন শুনতে পেত স্বাধীন হাওয়ার শব্দ। নিছনি সুকল্পাকে শোনাবে সুপ্রতিভ, সেবা, নিছনি, উদাস সবাইকার মানুষ গলা, আর অচেনা মানুষ-গলা, গাড়ির শব্দ, বিচে উট-ঘোড়ার কত্তো আওয়াজ, জন্তুগুলোর পরিশ্রমের কষ্টও হয়তো কোনো ডাকে ধরা পড়বে – বালির ওপর হাওয়া, জলের ওপর হাওয়া, সে ধ্বনি সে নাদ মহাসমুদ্রের নাদ,কখনও   মৃদু কখনও বহুল হাওয়ার ধাক্কায় কার টুপি উড়ে গেলে শব্দ ধরা পড়ে না? শব্দগুলো সব থিকথিকে মিশিয়ে বালুবেলার মতো বয়ে নিয়ে যাবে নিছনি অন্যরকম শব্দ পরিচয়ের একধারে রেখে দেখবে দু’জগতে ভাব হয় কি না! সুকল্পা ঠিক বুঝে নিতে পারে – ওর প্রখর বোধ।

সুপ্রতিভের ডাক নাম অপু। গাল ফুলিয়ে কেউ সেই সমুদ্দুর থেকে ডাকে, উচ্ছাস যেন রক্তিম হয় – ‘অপু’ ‘অপু’। তারপর অপুও নাইতে গেল। আমি তখন একলা – দূরে গিয়ে দেখলাম সমুদ্রে কোন্ জায়গা ফাঁকা তাতে শুধু রুপোলি ঝিলমিল  একপক্ষে চড়চড় ক’রে ফেনিল ঢেউ নেমে যাচ্ছে, তখন কূল থেকে অকূলে  হুড়হুড়িয়ে নেমেছে বালিরাশিও। আমাদের কোনো মন্দির কোনো দ্রষ্টব্য জায়গা দেখার নেই। শুধু চারজনেই আলো-আঁধারে সমুদ্রকাতর হয়ে রইলাম। হয়তো সবে হোটেলে ফিরেছি, পায়ে পায়ে আবারও কেউ না কেউ নেমে এসেছি বিচে। সমুদ্রের হাতে পা পেতে আদর নিতে আশ্চর্য নরম প্রাকৃতিক শুভেচ্ছার সে করতলগত হ’য়ে যেতে।

‘ঘ’

ঝলমলে মুহূর্ত অনেক রকমের। তবে নিষ্প্রভ ভাবকে নিছনি সহ্য করতে পারে না, ‘আমি ঠিক খুঁজেই নেব শরতের সকালের মতো কিছু টাইমকে’ – নিছনির মন বলে জীবনের স্বপ্ন এটাই। মাকে বললাম, ‘দু’দিন থাকছি না, ফোন কোরো না যেন’। মা অন্যমনস্কভাবে জিজ্ঞেস করলেন, বেশ তো, কোথায়? আমি বললাম, ‘বুঝি অপার পারাবারে’। মা বললেন, ‘ওরকম বোলো না – ঠিক পরিষ্কার কথা বলতে তুমি শিখলে না’। আমি বললাম, ‘ ডায়মণ্ডের দুলটা সঙ্গে এনেছি, মা পরে যাবো?’ মা বললেন, ‘এবার ঠিক হারাবে’। আমি জানি এটা অনুমতি। আমি বললাম, ‘হারাবো না’। বলতে পেরে ভাল লাগল।

বাবা ফোন করলেন শুক্রবার। ওঁকে বললাম, ‘এক্ষুনি বেরোচ্ছি, সেবা আমি আর দু’বন্ধু বেড়াতে যাচ্ছি’। উনি বললেন, পুরী যাচ্ছ? কেন? বেড়াতে তুমি ভালবাসো নাকি? গতবার অত করে বম্বে যেতে বললাম গেলে না তো? আমি আমতা আমতা করে বললাম, ‘ঐ যে বন্ধুরা ধরল, সেবা, শেঠ ’। বাবা বললেন, আত্মহারা হবার মতো বন্ধুপ্রীতির ফল? আমি বললাম, ‘না, আমি বড়ো হয়েছি, মাস্টার্স করছি’।

পাশেই তাকিয়ে দেখছি আমার চেয়েও বড়ো একটি মেয়ে, খুব সম্ভব বিবাহিতা নয়, চড়ুইভাতির মত খাবার টাবার সাজিয়ে বসেছে। যতবার একটি তার বয়সী ছেলের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে, ছেলেটি মেয়েটির আঙুল কামড়ে দিচ্ছে। তাও খাইয়ে দেওয়া বন্ধ হচ্ছে না। মাঝে একটি ছোট ছেলে তার মায়ের চুল ধরে বেদম টানছে, মুখে খিমচেও দিচ্ছে, আর হাত ধরে বলছে, ‘এখুনি বাড়ি যাব, ঢোরেমন দেখব, কেন এখানে আনলে, এখানে কিছু নেই।‘

আমার সঙ্গেও আছে উৎসব চানাচুর, উৎসব ক্যাশিউ – আমার বন্ধুদের আমি হাতে ঢেলে দিলাম, ওরা তাই মহানন্দে চিবোচ্ছে। আমার বন্ধুরা কেমন কিশোর মতো ভ্যাবলা – ওরা খুব চালাক ধরনের নয়। উদাসকে তো  গোবেচারা বললেও হয়। ওদের মুখে খাঁজগুলো ধারালো হয় নি, ভরাভরা। গালে অল্পসল্প দাড়ি। কিন্তু ওরাই তো অন্যরকম হ’তেও পারতো। খবরের কাগজের কতো ডবডবে পাতা ধেবড়ে গেছে যেন আমার চোখের সামনে। তাতে ভয় হয়, হয় বড়ো দুঃখ।

এরই মধ্যে একটা কি জিনিস কেনার জন্য ব্যাগ খুলেছি। অপু বলল – ‘এই যাঃ’ – সঙ্গে সঙ্গে ক্লাস রুটিন আর সব কাগজ ছোট বড়ো লেখা নোট উড়েই গেল ব্যাগ থেকে। আমার বন্ধুরা আছে কেন? সবাই মিলে সবটাই প্রায় উদ্ধার। সেবার হাতেই বন্দী হয়ে গিয়েছিল বেশ ক’টা নোট আর কাগজ। হতচ্ছাড়া কান মুলেই দিত বুঝি, যদি না আমি বলতাম ‘ওঃ নারী নির্যাতন’!

একটি বৌ খুব সুন্দর বাড়ি বানাচ্ছে। আমার লেখা না লেখা কাগজের একদল উড়ে গিয়ে পড়ল সেখানটাতে, ভিজে বালির ওপর প্রায় উপুড় হয়ে পড়লাম হৃত বস্তু উদ্ধার করতে। আবার দমকায় একটা কোন্ কাগজ শেষ পর্যন্ত সমুদ্র নিল। হাতের কনুইটাতে লেগেছে। আর বউটির বাড়ির ঘেরাটোপে খাবল পড়েছে। তবু তার মুখ স্মিত।

একদিন এমনি কেটে গেল। ফুরিয়ে গেল রাত্তির। একটা স্কচের বোতল এনেছিলাম লুকিয়ে। সেটা দেখে একজন ইজেলে মুখ লুকোলো, একজন জিনিসটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে জিজ্ঞেস করল – ‘তুই খাস’? আমি বললাম, না মানে, বাড়িতে দেখেছি, তোরা খাস না? তবে কিভাবে ফূর্তি টুর্তি হবে? উদাস গম্ভীর হয়ে বললঃ এসব ভদ্রলোকের হোটেল, ওসব চলে না – বার ক’রে দেবে। আমি হঠাৎ রেগে গেলাম, গলা হয়ে গেল ফাটা কাঁশি – ‘দাম কত জানিস? চাখব বলে শখ করে এনেছিলাম’, তিতকুটে গলায় বললাম – তোরা এমন গাঁইয়া। কেউ প্রত্যুত্তর করল না, অপু শুধু, ‘গান গাইতে পারিস তো গা না, না অসুর সব!’ আমার পিত্তি জ্বলে উঠল।

আবার কখন রাত্তিরে সুমুদ্দুরের ধার ধরে রাস্তা হাঁটতে বেরিয়েছি, জায়গার নাম স্বর্গদ্বার। বন্ধুত্ব হলে সবাই নিজের মতো ভাবতে পারে, কেউ কারো চিন্তা এলোমেলো করে দেওয়ায় বিশ্বাস করে না। সবাইকে সবাই ফুটে উঠতে দেয়। একে অপরকে বুঝি ঘিরেই রাখে। আমরা প্রত্যেকে ভেবেছিলাম। আশ্চর্য এনজয় করার শক্তি পেলাম। কেউ কথা বলতে চাইলে শুনি, অবাক হই, আমিও তো এভাবেই ভাবি। এই দর্শনটাই বলতে চাই।

‘ঙ’

সন্ধ্যেতে ফেরার ট্রেন, কানে হাত দিয়ে দেখি, ওমা এক কানে দুল নেই। তখনও শেষ বিকেলের আলো প্রৌঢ়ের মুখে কেমন মানাচ্ছে ! ছুটেছি একটু আগে যে বালিতে লিখেছি আমার রাষ্ট্রনায়ক হবার স্বপ্ন সেখানে। দূরের দিকেই তাকিয়ে আছি – সমুদ্র তখনও টানছে। যুদ্ধও করছি , চোখ টেনে আনি দুল খুঁজে নেবার তাগাদায়। জানি কিছুই হবে না, শুধু মা মুচকি হাসবেন, আমার পিত্তি জ্বলে উঠবে। আমার জন্মদিনের উপহারটা আর পরতে পারবো না। ঝলমলে লাগবে না, মুখে একপোঁচ কালি লেগে থাকবে। আরও দু’পা এগোতেই চিক্চিক্ – হাত দিতে অদ্ভূত, দুলটাই বেরোলো – ডায়মণ্ড, ভিজে বালি ঝুরঝুর করে পড়ে গেল অতীতের মতন।

‘চ’

ফেরাটাও। শতভাবে মসৃন। এসি কামরা পেয়েছি। আপার বার্থে। সেবা-র অবশ্যি লোয়ারটাই পছন্দ। একটি মেয়ের সঙ্গে আলাপ হল ট্রেনে, গ্র্যাজুয়েশন করছে ম্যানেজমেন্টে। সেবার সঙ্গে বসে বসে, ওরা বহু সময় গল্পে মজে রইল। সামান্য ঈর্ষা যে হ’ল না তা নয়; আবার ভাবলাম। এই তো সেবা পড়তো স্কটিশে। আমি সুকল্পা বেথুনে। সেবা পেয়ে গেল সি ইউতে। আমরা কলেজেই পড়ছি। ওর কতো নতুন বন্ধু হবে, আমার না হয় ওল্ড ইজ গোল্ড – এসব কি ভাবার মতো ছোট মনের মেয়ে আমি? আমি না রাষ্ট্রনায়ক হবার স্বপ্ন দেখি। পরীর নয়, ভালবাসার নয়, সুখেরও নয়, কাজের স্বাধীনতার স্বপ্ন। ভাল কাজের।

ভাবতে খুব ভাল লাগছিল যে আমার বন্ধুদের যে যতই জরদ্মব-জড়ভরত ভাবুক না, আমি তো দেখেছি, ওরা কি চমৎকার, কি সৌজন্য ওদের। অপু-শেঠজি-সেবা তোদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ রে। সেবা কি মনের কথা শুনতে পেল যে জিজ্ঞেস করল – ‘নিছনি কাঁদছে না কি রে?’ অপু বলল – ‘নাহোক কাঁদবে কেন?’ আমিই আগ বাড়িয়ে বলে দিলাম – ঐ যে পিজির ঘরটাতে গিয়ে ঢুকব, বাথরুম থেকে তাড়াতাড়ি না বেরোলেই রুমমেট চেঁচাবে, রুমমেট আলো জ্বালবে, আমি ঘুমোবো তখন, আবার আমি যেই পড়তে বসব, রুমমেটটি হাই তুলবেন, ধ্রুব ঘুমিয়েও পড়বে। ঘুমোবে তো ঘুমোবে আমার ‘দেশ’টার ওপর পা তুলে ঘুমোবে। উঠে বলবে- নিছনি, ‘দেশ’ আবার এখনকার দিনের ছেলেমেয়ে পড়ে নাকি?

‘ছ’

অঘটনও যে পিছু ছাড়ে না রে! ভালো কাটল ঐ সময়টা। কলেজের আই কার্ডটা হঠাৎই উল্টে বুদ্ধু হ’য়ে গেলাম। এটা তো আমার নয়। তখনও নোনা জলে ভিজে তার একটা কোন যদিও, হাত দিয়ে দেখি, বালি খসখসে। ঠিকানাটা পড়ে ফেললাম – কলকাতার ঠিকানা! পদবিটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না – নাম নির্জন – এটা কখন আমি কিভাবে আমি এনেছি! হা ঈশ্বর! হায় সুকল্পা ! এটা কখনও আমার ব্যাগে তো আমি নিজেও রেখেছি, কিন্তু হুঁশ করিনি। এতোটাই আনমনা আমি!

কৌতুহল হল এ পরিচয়ের কার্ড  কার? আগত বলেই রহস্য রোমাঞ্চ দেয় তো রে সুকল্পা। আমার ভেতর থেকে কে যেন বললো, ‘ওঠো, কলেজে যাও। সময় হয়ে গেছে, আগের মেট্রোটায় ভিড় কম হবে। মনে হ’ল আগামীর রাজনীতি এভাবে শুনতে হয়, পেতে হয়, বোধের আশায়। নিছনিরা তো অপ্রতিভ হবার নয়। তারা জানে আগামী মুহূর্তরা পদপাত তুলে নেবে, তোমাদের ক্লিষ্ট পায়ের ব্যথা তুলে নেবে তাদের হাতের প্রেক্ষাপটে। কাছেই আছে নিছনিরা, থাকবে তাদের বন্ধুরাও। বন্ধুত্ব তো খবর নয়, দৈব নয় – একটা কম্বিনেশন – একটা ভরসা।

 

Tags: ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ