22 Oct

পলাশের দিন

লিখেছেন:দেব চক্রবর্তী


একটা কুকুর আর একটা কুকুরকে তাড়া করেছে।  হয়ত বেপাড়ায় ঢুকে পড়েছিল। দুটো কুকুরের তীব্র দৌড় দেখলাম এক ঝলক। তারপরেই হঠাৎ ছিটকে পড়লাম রাস্তার পাশের ঝোঁপজঙ্গলে। ভাগ‍্যিস রাস্তার পাশের জঙ্গল কাটার কথা মিউনিসিপ‍্যলিটি মাঝে মাঝে ভুলে যায়, তাই বেরিয়ে আসতে পারলাম অক্ষত দেহ নিয়ে। হাত পা ঝেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে দেখি, আমার সাইকেল আর একটা স্কুটি জড়াজড়ি করে শুয়ে আছে মাঝ রাস্তায়। সাইকেলের অবস্থা দেখে আমার কান্না পেল। রাগে, উত্তেজনায় হাত-পা  কাঁপছে। কট-মট করে তাকিয়ে দেখি হাত-পা ঝেড়ে সামনে দাঁড়াল একটি মেয়ে। আমার মারমুখী মূর্তি দেখে ঘাবড়ে গেল সে। কাঁচুমাচু মুখ করে বলল,“ আমার কোন দোষ নেই ভাই, কুকুরটা যেভাবে— তুই আমার ভাইয়ের মতো। কোথাও লাগেনি তো?”

   “ওসব ভাই-টাই বুঝিনা! আমার সাইকেল ঠিক করে দিতে হবে।” আমার তেড়িয়া মেজাজ। 

    “মোড়ের মাথায় মিহিরদার সাইকেলের দোকানে নিয়ে ঠিক করে নিস, যা লাগবে আমি দিয়ে দেব।” বলেই স্কুটিস্টার্ট দিতে যাচ্ছিল। আমি চেঁচিয়ে উঠলাম,“পালিয়ে যাচ্ছিস যে!”

মৃদু হাসল যেন মেয়েটি। কপালের কোথাও কেটে গেছে, রক্ত গড়াচ্ছে। রক্ত দেখলে আমার শরীর কেমন করে, গা গোলায়। মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল,“তোর কপালে রক্ত!”

     “ও কিছু না! তুই যা, মিহিরদার দোকানে সাইকেলটা দিয়ে দে। বিকেল ঠিক পাঁচটায় আমি চলে আসব। ভয় নেই, পালাব না।”

 

     না, মেয়েটি পালিয়ে যায়নি। বিকেলে মিহিরদার দোকানে আমার আগেই ও পৌঁছে গেছে। ভাঙ্গা ঘরে চাঁদের আলোর মত সাইকেল রিপেয়ারিংয়ের দোকানের সামনে স্কুটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি। এমনিতে মিহিরদার দোকানটা মূলতঃ মুলি বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি। মাথার উপর কিছুটা টিন, কিছুটা পলিথিন। একটা বড় ছাতিম গাছের ছত্রছায়ায় আছে বলে অনেকটাই ঢাকা পড়েছে দোকানের বেআব্রু চেহারাটা। সেই দোকানের সামনে স্কুটিস্ট‍্যান্ড করে, পা তুলে যেন নটরাজ ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি। প্রসাধনহীন, সাদামাটা পোষাক। আমাকে দেখে হাসলো। আমি হাসলাম না। সোজা চলে গেলাম দোকানের ভেতরে। সেই মুহূর্তে মিহিরদার হাতে আমার সাইকেল। বুঝলাম, মেয়েটার নির্দেশেই ফিনিশিংটাচ চলছে।

   “তোর নামটা কিন্তু জানা হল না!” প্রশ্নটা বাতাসে ভেসে বেড়াল কিছুসময়। 

মিহিরদার হাতের কাজ দেখতে দেখতে বললাম,“আকাশ।”

       “কী বললি?” আকাশ থেকেই যেন পড়লমেয়েটি। 

       এবার ফিরে তাকাতে বাধ্য হলাম, “আমার নাম আকাশ। কেন, কী হয়েছে? আকাশ থেকেই পড়লি যেন !” তখনও আমার রাগ পড়েনি, স্বাভাবিক হতে পারছি না।

       ওদিকে মুখ টিপে হাসছে মেয়েটি। তাই দেখে রাগে শরীর জ্বলছে আমার। তেল-কালি হাতে প্লাস-রেঞ্জ-স্ক্রুড্রাইভারের সাহায্যে মৃতপ্রায় সাইকেলের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করছে মিহিরদা। মজুরী নিশ্চয় কম হবে না! ভেবে মজা পাচ্ছিলাম খুব। দেখ কেমন লাগে! স্কুটি চালিয়ে রোয়াবি! 

     “কেমন অভদ্র ছেলেরে বাবা, আমার নাম জানতে চাইল না!” ভাববাচ্যে ভাসিয়ে দিল।

       সদ্য কলেজে ভর্তি হয়েছি। মফঃস্বলের কলেজ হলেও ওখানে সুন্দরী মেয়ের ছড়াছড়ি। তাদের কয়েকজনের সঙ্গে বেশ আলাপও জমে উঠেছে ইতিমধ্যে।  সেই রোমাঞ্চ, আবেশ মনকে ঘিরে থাকে সবসময়। এই ধেড়েমেয়ের নাম জেনে আমার কাজ কী? 

          “আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই।” কেটে কেটে বললাম। মিহিরদা ততক্ষণে সাইকেল দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। 

      “কিন্তু আমার যে বলতে ইচ্ছে করছে ভীষণ!” রহস‍্যময় হাসি মেয়েটির গলায়।

      কেমন গায়ে পড়া মেয়ে রে বাবা! আমি ওর নাম জানতে চাইছি না, অথচ ও বলবেই! 

      “আমার নাম, আমার নাম বললে বিশ্বাস করবি না। তবু আমাকে যে বলতেই হবে! আমার নাম আকাশমণি, সবাই মণি বলেই ডাকে।” বলেই খিলখিল হাসি, থামতেই চায় না। 

      পড়ন্ত বিকেল। স্কুটিতে হেলান দেওয়া দীর্ঘ ছায়া ছাতিমের ছায়ায় মিশে গেছে কখন। এতক্ষণ মেয়েটিকে যে ভাবে অবজ্ঞা করে যাচ্ছিলাম, হাসির মাধ‍্যমেই তা যেন  ফিরিয়ে দিল আমাকে। মনে মনে উচ্চারণ করলাম কয়েকবার, আকাশমণি, আকাশমণি—-। কী আশ্চর্য! এও হয়! এরপর আমার মুখ থেকে আর একটা কথাও বেরল না। সাইকেল হাতে ধরিয়ে মিহিরদা বলল,“এক পাক চালিয়ে দেখ, ঠিক হল কি না!”

আকাশমণি সঙ্গে সঙ্গে ফোড়ন কেটে বলল,“দেখিস, সাইকেল হাতে পেয়ে গায়েব হয়ে যাস না যেন! তোর সাথে কথা আছে।”

      ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে সাইকেলে চেপে বসলাম। কিছুটা দূরেই একটা গোলাকৃতি পার্ক । সেই পার্কটাকে ঘিরে চক্কর দিলাম দু’বার। মিহিরদার হাত যশে সাইকেল একবারে ঝক্কাস। কিন্তু মেয়েটা আমাকে ছাড়ছে না কেন? আমার সাথে আবার কী কথা? নামের কারণে! তাই বা কেন হবে? একই নামে হাজার মানুষ থাকতে পারে। তাছাড়া, আমি আকাশ, আর ওর নাম আকাশমণি। কোথায় মাথার উপরে সারা পৃথিবীর ছাদ, আর কোথায় সামান‍্য একটা গাছ! জীবনে এই প্রথম নিজের নামের জন্য অহংকার বোধ হল আমার। ঘুরে এসে মিহিরদার দোকানের সামনে নেমে বললাম,“একদম ঠিক আছে মিহিরদা।”

      সঙ্গে সঙ্গেআকাশমণি আমার উদ্দেশ্যে বলল,“যাক, এবার নিশ্চিন্ত? দেখলি তো, আমি পালিয়ে যাওয়ার মেয়ে নই! এখন চল, পার্কটায় গিয়ে একটু বসি!”

এমনভাবে বলল যেন আমরা মাঝে মাঝেই ঐ পার্কে আড্ডা মারতে যাই! ও পালিয়ে যায় নি, কথা রেখেছে, অ্যাক্সিডেন্টে সরাসরি ওর কোন ভূমিকা না থাকলেও আমার সাইকেলের পেছনে বেশ  খানিকটা গচ্চা গেছে—এইসব ভাবনার মিশেলের জারিত ফল আমার সৌজন্যবোধের উদয়। 

       নিঃশব্দে চললাম পার্কের দিকে। আমার সাইকেলের পাশাপাশি ওর স্কুটি । একবার কি জিজ্ঞাসা করা উচিত, ওর স্কুটির কোন ক্ষতি হয়েছে কি না? কিন্তু ওকে কিংবা ওর গাড়ি দেখে মনে হচ্ছে না কোন ক্ষতি হয়েছে!  স্কুটি আর সাইকেল পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে রেখে ঢুকে গেলাম পার্কে। বসার বেঞ্চগুলো একটাও ফাঁকা নেই। বসে আছে সব জোড়ায় জোড়ায় । বসন্তের বিকেলের  খই-ওড়া বাতাসে মাঝে মাঝেই ডানা মেলছে আকাশমণির খোলা চুল। সকালে যে সামান্য সংকোচ ছিল ওর মধ্যে এখন তার বিন্দুমাত্র নেই। মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে এমনভাবে হাসছে যেন আমরা দুজন প্রেমিক-প্রেমিকা। বেঞ্চে ঘনিষ্ঠ ভাবে বসে থাকা কেউ কেউ মুখ ঘুরিয়ে দেখেও নিচ্ছে।

এইরকম একটা পরিবেশে কেন যে মরতে আমায় ডেকে আনল, বুঝতে পারছি না! ঘন ঘাসের আস্তরণ দেখে এক জায়গায় বসে পড়ল আকাশমণি। আমাকেও ইঙ্গিত করল,“নে বস! যদিও পার্কে এই সময় প্রেমিক-প্রেমিকারাই আসে, তা বলে তুই ভেবে বসিস না যে, তোকে প্রেম নিবেদন করার জন‍্য এখানে ডেকে এনেছি!”

আকাশমণির কথায় অস্বস্তি শুধু নয়, বেশ লজ্জাও পেলাম। ওকে নিয়ে আমি যে কিছুই ভাবছি না, সেটা পরিষ্কার বলে দেওয়া দরকার। কখন যে কী বলে বসবে!

     “কী হল? মুখটা ওরকম পেঁচার মতো করে ফেললি যে! আরে বাবা, ইয়ারকি করলাম তোর সাথে! বন্ধুর সাথে একটু ইয়ারকি করা যায় না? অবশ‍্য তুই যদি আমাকে বন্ধু ভাবিস, তবেই না!”

     শেষের কথাটায় একটু যেন আবেগের স্পর্শ পেলামতাই রুঢ় কথা শোনাবার জন্যে জিভ নিশপিশ করলেও সংযত করলাম নিজেকে।  ও সহাস্যে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। বিকেলের সোনা-ঝরা শেষ রোদ পিছলে যাচ্ছে ওর বাঁ গাল বেয়ে। হাসলে গালে টোল পড়ে, এই প্রথম নজরে এল। গায়ের রং ফর্সা নয়, চাপার দিকেই। সেই চাপা রং আর দুধ-সাদা দাঁতের মাঝে গজ দাঁত।  এই দাঁত দুটো না থাকলে বড়  বেমানান লাগত ওকে।

আকাশমণি মুখ নিচু করে বসে আছে। আঙ্গুলের ডগায় ছেঁড়া ঘাস। সেই ঘাস ছুঁড়ে দিয়ে তার সঙ্গে প্রশ্ন ছুঁড়েদিল,“তুই কখনও প্রেম করেছিস?”

     “মানে?” মুহূর্তে মাথার তালু জ্বলে গেল আমার। একটা অপরিচিত মেয়ে, যার সঙ্গে ঠিকমত আলাপই হল না, সে ওরকমব‍্যক্তিগত প্রশ্ন করার সাহস পায় কী করে?

      রাগে বুঝতেই পারিনি কখন ছিঁড়ে নিয়েছি এক মুঠো ঘাস। ছুঁড়তে যেতেই শূন্যে দাঁড়িয়ে গেল হাতটা।  হঠাৎ ভেসে উঠলো প্রিয়ার মুখ। দু’বছর হয়ে গেল প্রিয়ার সাথে কোন যোগাযোগ নেই। মাধ‍্যমিক পাশ করেই দিল্লি চলে গেছে বাবার সঙ্গে। প্রাইভেট টিউটরের কাছে এক-ই ব‍্যাচে ফিজিক্স পড়তাম। আমরা কখনও কেউ কাউকে সরাসরি প্রপোজ করিনি, তবুও কেন যে … জানিনা ওটাকেই প্রেম বলে কিনা! 

 

     “তুই ওভাবে রিঅ্যাক্ট করছিস কেন? আমি জাস্ট বললাম, মানে জানতে চাইলাম। চাইলে তুই না-ই বলতে পারিস। আমি কিছু মাইন্ড করব না। তবে আবারও বলছি, তোকে এসব জিজ্ঞাসা করছি বলে ভাবিস না তোকে প্রেম নিবেদন করব।”

     “ডিসগাস্টিং!” বলে চেঁচিয়ে উঠলাম আমি। আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙ্গছে।

        ও বলল,  “কোনটা?”

      আমি বললাম, “টোট‍্যাল ব‍্যাপারটাই! নাটক করে ডেকে এনে আসলে কী বলতে চাস, একটু ঝেড়ে কাশ তো!”  মুখ ঘুরিয়ে স্বগোতোক্তি করলাম, “এই এক ভাটের পাল্লায় পড়ে দিনটাই বরবাদ!”

      “বা বাঃ! তোর যে এত রাগ, দেখে তো মনে হয় না?”

      না-শোনার ভান করে মুখ ঘুরিয়ে রইলাম। বেশ কিছুক্ষণ পরে সংযত গলায় বলল, “আসলে আমার সম্পর্কে তুই কী ভাবছিস, সেটা বুঝতে পারছি না বলে–”

      “নাথিং, জাস্ট নাথিং। ওকে! হু আর ইউ? অ্যাক্সিডেন্ট করে আমার সাইকেল ভেঙ্গেছিলি, সংগত কারণেই তার রিপেয়ারিং খরচ দিয়েছিস। ব্যস, হয়ে গেল! যার যার পথ দেখ, তা না … !” বলেই উঠে দাঁড়ালাম। পা বাড়াতেই দু’হাতে আমার ডান হাত চেপে ধরল,“সরি ভাই সরি, আমি কান ধরছি, তুই রাগ করিস না! কথা দিচ্ছি, আর কখনও বলব না, প্রমিস!” 

    ওর কথায় গুরুত্ব না দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে আছি। তখনও আমার হাত ছাড়েনি। বলল,“প্লিজ আকাশ! আর একটা কথা বলব, বিশ্বাস করা বা না করা তোর ব‍্যাপার। তোর সাথে দেখা হয়ে আমার মনে হল, এতদিনে একটা ভাল বন্ধুর সাক্ষাৎ পেলাম। আর সেজন‍্যই নির্দ্বিধায় হাত বাড়িয়ে রাখলাম আমি।”

    মাথার উপর পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ। ঘরে ফিরছে ওরা। আকাশমণির কথাটা মনের মধ্যে ঘুরপাক খেল কিছুক্ষণ … “তবে কি আমার মন ধীরে ধীরে মেনে নিচ্ছে আকাশমণিকে? জানি না। ওই রকম ডেসপ‍্যারেট মেয়ে, যে কিনা বারবার সতর্ক করে বলছে, প্রেম নিবেদনের জন‍্য ডাকেনি, তার সাথে বন্ধুত্ব!”

     “কী হল হাসছিস যে! আমার কথায় তোর হাসি পেল?” আকাশমণির কথায় চমকে উঠলাম। অজান্তেই কখন যেন আমার ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে! অভিমানের সুরে বলল,“দেখ, তুই বয়সে আমার থেকে ছোট,তাই বলে নিজেকে দিদির জায়গায় বসাতে যাব না, তাহলে যে বন্ধু পাব না!  আমি আকাশ নামে একটা ছেলেকে চাই না, শুধু একটা বন্ধু চাই, যার নাম আকাশ হলেও আপত্তি নেই।”

      গলার স্বর খাদে নেমে এল শেষটায়। এ যেন অন‍্য আর এক আকাশমণি। এমন আবেগ ভরা বন্ধুত্বের আহ্বান! ভেবে পাচ্ছি না এখন আমার কী বলা উচিত। ওদিকে বিকেল ক্রমশ সন্ধ‍্যের কোলে সঁপে দিচ্ছে পার্কটাকে। দূরে দূরে বেঞ্চগুলোতে অন্ধকার ঝাঁপিয়ে পড়ছে দ্রুত। অচেনা অজানা ভাইয়ের বয়সী এক তরুণকে পার্কে ডেকে এনে নিখাদ বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিতে চাইছে এক তরুণী! তাকে কি অস্বীকার করা উচিত? এমন আহ্বানে সাড়া না দেওয়ায় কোন কারণ তো নেই!

      পার্কে একটা পলাশ গাছ আছে জানি। এবার ফুল ফুটেছে কি? না কি এখনও সময় হয়নি! আচ্ছা, একটা বাজি খেললে কেমন হয়! পলাশগাছটাকে নিয়ে বাজি। আমি একাই খেলব। আকাশমণিকে জানতে দেব না। পলাশ গাছে যদি ফুল ফুটে থাকে, তবে আকাশের সাথে বন্ধুত্ব হবে মণির। আর যদি এখনও না ফুটে থাকে, তবে …… 

     সেই থেকে মাথা নিচু করে বসে আছে আকাশমণি। আমি স্বাভাবিক হতে চাইলাম। ওর নীরবতা ভাঙার জন‍্য বললাম, “পার্কে একটা পলাশ গাছ আছে। ”

     “হ‍্যাঁ, জানিও’পাশটায়। ফুল ফোটার সময় হয়েছে। এখন তো পলাশের দিন।” কতকটা নিস্পৃহ গলায় বলল। 

     আমি বললাম,“একবার দেখে আসি, ফুল ফুটেছে কি না!”

আকাশমণি সঙ্গে-সঙ্গে বলল,“আমি সঙ্গে যেতে পারি?”

     আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই ও উঠে দাঁড়াল। বলল,“চল দেখে আসি! গেল-বছর গাছটাতে প্রচুর ফুল ফুটেছিল। এবার দেখ, ফুট’ল কিনা!”

     “ফুট’ল কিনা’’ কথাটায় একটু যেন কেঁপে উঠলাম! সসংকোচে আড়চোখে তাকালাম ওর দিকে। নিজে থেকেই আবার বলল,“শুনেছি, পলাশ নাকি প্রতি বছর সমানভাবে ফোটে না। কোন কোন বছর ফুল ফোটান থেকে জিরেন নেয়।”

      ওর কথা শুনে আমার হাঁটার গতি হঠাৎ যেন স্লথ হয়ে গেল। পিছিয়ে পড়লাম। ও কি দৌড়চ্ছে? … ক্রমশই পিছিয়ে পড়ছি যে! … এবার পলাশ ফুটেছে কিনা তা আমার আগে ওকেই যেন আবিষ্কার করতে হবে। 

Tags: , ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ