22 Oct

ফিলহাল

লিখেছেন:জীম হামযাহ


শহরের একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করা কতক যুবক সহসা লক্ষ্য করলো নিজেদের মধ্যে বেশকিছু পরিবর্তন। তারা আর আগের মতো নেই, কেমন যেন বদলে গেছে। তুমুল হাসি খুশি আর প্রানবন্ত অবস্থা কবে মিইয়ে গেছে সে খবর তারা রাখে নি। আর এখন একসাথে থেকেও তারা যার যার প্রত্যেকে আলাদা। সবাই এক রুমে খায়, এক ছাদের নিচে ঘুমায় তারপরও কেউ কারো খবর জানে না- এমনই। তাদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েও কেউ কারো সাথে আলাপ করে নি বহুদিন হবে। ব্যাপারগুলো যে তাদের অবচেতন মনে উঁকি দেয় নি তা নয়, বরং তাদের মস্তিষ্ক নিজেদের সামনে হয়তো গুরুত্বসহ উপস্থাপন না করায় তা নিয়ে তারা ভাবতে পারে নি।

আর এসব নিয়ে তারা কেউ কাউকে কিছু না বললেও তাদের কোন একজনের ঠিকই তা মনে হয়েছিলো এবং সে বলবে বলবে করেও বারবার কেন জানি ভুলে যাচ্ছিলো। তারপর যখন প্রথম সে মুখ খুললো তখন তাদের প্রত্যেকের মনে পড়লো এবং তারা বিস্ময় বোধ করলো। তারা পরস্পর একে অন্যর প্রতি এমন ভাবে দৃষ্টি রাখলো, যেন এই মাত্র প্রত্যেকে প্রত্যেককে অবলোকন করছে। দেখলো, সত্যিইতো তাই! ভাবতে গিয়ে আবারও বিস্ময়ে তারা খানিক নীরব হয়ে গেলো। তখন বিশেষ করে তাদের এটাও খেয়াল হলো, তারা  আর আগের মতো হাসছে না। মনে করতে পারে না কবে থেকে তাদের হাসি থেমেছিলো এবং সর্বশেষ কবে  তারা একসাথে হেসেছিলো!  অথচ তাদের হাসি ছিলো অবিচ্ছেদ্য এবং অপ্রতিরোধ্য। কোন বাধাই আটকেতে  পারতো না তাদের হাসিকে। আর এটা নিয়ে কম কথাবার্তাও শুনতে হয় নি তাদের। বারণ মানতে যেয়েও হেসে ওঠতো। দাঁতে দাঁত চেপে চেষ্টা করলেও আলগা হয়ে যেতো, সামলাতে পারতো না। ছিলো না রাত  দিনের কোন তফাৎ । কারণে অকারণে তারা হেসে ওঠতো।যেমন, টিকটিকি টিক টিক ডেকেছে, কেউ বাইরে একদলা থু থু ফেলেছে এসব তুচ্ছ কারণেও তারা হু হু করে হাসতো। ট্রল করতো একে অন্যকে। প্রথমে একজন শুরু করলে তারপর একসাথে সবাই। হাঁসিতে কেঁপে ওঠতো ভবনের দেয়াল।কখনো বাঁধ ভেঙে। কখনো বাঁধ উপচে। তাদের হাসি আছড়ে পড়তো মেঝেতে। ডাইনিং রুম, আশপাশ সব রুম, ব্যালকনি, বারান্দা ভাসিয়ে গড়িয়ে পড়তো সিঁড়ি হয়ে। অট্রহাসির শব্দে ধ্যান ভেঙেছে  মুনির। ইবাদত নষ্ট হয়েছে আবিদের। হাসির কোরাসে চিৎকার দিয়ে জেগেছে সদ্য ঘুমানো শিশু। নষ্ট হয়েছে কত মনোযোগীর মনোযোগ…। তাদের খাটের পায়াগুলোও নড়েবড়ে হয়েছে হাসির তুমুল অত্যাচারে।ঘুমাতে গেলে বা খাটে উঠলে এখনো এদিক সেদিক হেলেদোলে। আশপাশের বাসিন্দারা অতিষ্ট হয়ে কয়েক দফা নালিশ জানিয়েছিলো বাড়িওয়ালার কাছে। বাড়িওয়ালা এসে তাদের শাসিয়েছে, হুমকি দিয়েছে বের করে দেবে বলে। তারাও এ নিয়ে উপস্থিত কতো দুঃখ প্রকাশ করেছে। তবুও তাদের উপচানো হাসি থামে নি।

আর হঠাৎ এমন কী হলো যার কারণে তারা নিরানন্দ হয়ে পড়ছে? তারা চিন্তা করলো তাদের যে পরিবর্তন সেগুলো কোন একদিনে ঘটেনি। নানা ঘটনার ঘাত প্রতিঘাতে হয়তো দিনে দিনে এমন হয়েছে।তারা অনেক ভেবে চিন্তে উপযুক্ত কোন কারণ খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়ে সে রাতে একে একে সবাই ঘুমিয়ে পড়লো। রাতে ঘুমের মধ্যে তারা নানান স্বপ্ন দেখলেও সকালে উঠে একটিও মনে করতে পারে না। যার যার বিছানায় বসে দুলতে দুলতেও তারা মনে করতে পারে না গত রাতে কী স্বপ্ন দেখছিলো। কেউ তখন হাত দিয়ে টের পায় তার লুঙ্গি ভেজা এবং আটালো।কিন্তু কী স্বপ্ন দেখছিলো ভুলে গেছে। যথাসম্ভব সে তা গোপন করে ধীরে ধীরে ওয়াশরুমের দিকে ছোটে। অন্যরাও এক এক করে বিছানা ছাড়ে। বাথরুমে যায়। প্রাকৃতিক কর্ম সারে। দাঁত ব্রাশ করে ফ্রেশ হয়ে কেউ নাস্তা খেয়ে, কেউ বা নাস্তা না খেয়ে যার যার পথে তারা বেরিয়ে পড়ে। কারো সাথে কারো কোন কথা হয় না তখন।রাতে তারা যখন বাসায় ফিরলো, একসাথে ফিরলো না। কেউ কারো আগে, পরে আবার কেউবা অনেক দেরিতে। আগে পরে তারা রাতের খাবার সেরে ঘুমাতে যাবার আগে নিজ নিজ বিছানায় বসে আজ তারা  একে অন্যের মুখোমুখি হয়।তখন পাশের কোন বাসা থেকে নবজাতক কোন শিশুর কান্নার আওয়াজ আসছে। কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে  ও বাসার আরেকটি শিশুরও। তারা সেদিকে মনোসংয়োগ না করে নিজেদের প্রতি মনোনিবেশ করে এবং আলাপচারিতায় মেতে ওঠে। যেন বহুদিন পর তারা আবার একত্রিত হলো এবং প্রসঙ্গক্রমে আজকের দিনে তাদের দেখা নানা ঘটনার কারগুজারি তারা বর্ণনা করতে লাগলো-

১ম জনঃ- তখন দুপুরটা একটু কাত হয়েছে মাত্র। আমি হাঁটতে হাঁটতে পার্কের ওদিকে গিয়ে ভেতরে ঢুকে দেখতে পেলাম  বসে আছে জোড়ায় জোড়ায়। গাছের নিচে, ছাতার নিচে এখানে ওখানে কেউ কারো কোলে মাথা রেখে আধশোয়া আবার কেউ কাউকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।

গল্প করতে করতে কখনো তারা একে অন্যেকে  আদর করছে তা আবার কখনো নিজেদের হাতে থাকা মোবাইলে তা ধারণ করছে। তাদের মুখে  লেপটে আছে হাসি। আমি তাদের অনেকের পাশ দিয়ে গেলাম কিন্তু কাউকে অপ্রতিভ দেখলাম না…। নিঃসঙ্গ একজন বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না। কিছুক্ষণের মধ্যে বেরিয়ে  ডি-ব্লকের দিকে পা বাড়াই। পুরনো এবং পরিত্যক্ত মিলের পিছের রাস্তায় আমার পা থমকে দাঁড়ায়! খানিক ঝোপের মতো দেখতে গাছ তলায় অনেক মানুষের ভীড়। সদ্য জন্মানো খুব ফুটফুটে এক কন্যাশিশুকে কে বা কারা একটি ব্যাগে করে এনে এখানে ফেলে চলে যায়। শিশুটি এখনো জীবিত। নানাজন নানা কথা বলছে। তারা তিরস্কার করছিলো শিশুটির প্রতি এমন নির্দয়তার…!

২য় জনঃ- আমি গিয়েছিলাম সাব রেজিস্ট্রারি অফিসে। ঘন্টাখানেকের মধ্যে আমার কাজ শেষ হলে আমি বেরিয়ে কোর্ট পয়েন্টের দিকে পা বাড়াই। এবং পথ সংক্ষেপনের জন্য আমি জর্জ কোর্টের দিকে যে রাস্তা সে দিকে প্রবেশ করে সামনে এগোই। জর্জকোর্ট ভবন পেছনে ফেলে বহেরাগাছের নিচে এসে দেখলাম সেখানে দু পক্ষ মানুষের উপস্থিতি এবং তাদের সাথে তিন-চার বছরের একটি মেয়ে। মেয়েটি  ও আম্মু, ও আম্মু করে চিৎকার দিয়ে কাঁদছে আর তার মায়েরও দু গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। অপরপক্ষ মেয়েটিকে তার মায়ের সাথে যেতে দিচ্ছে না আর মেয়েটিও তার মাকে ছাড়তে চাচ্ছে না। দৃশ্যটা খুব করুণ! জানতে পারলাম, মেয়েটির বাবা-মার আজ ডিভোর্স হয়েছে। মেয়েটিকে দেয়া হয়েছে তার বাবার জিম্মায়। শিশুটি প্রচণ্ড জোরে তার মায়ের গলা জড়িয়ে ধরেছিলো, আর কাঁদছিলো। একসময় একজন (মায়ের পক্ষের হয়তো) জোর করে মেয়েটিকে তার মায়ের কোল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পিতৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়। তাকে নিয়ে যখন তারা গাড়িতে উঠছিলো তখনো মেয়েটি তার সর্বশক্তি দিয়ে হাত পা ছুড়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে ও আম্মু… ওআম্মুগো আর্তিতে চিৎকার করছিলো।এমন করুণ বিচ্ছেদ দেখে আমি আর সেখানে থাকতে পারি নি…।

৩য় জনঃ- আজ প্রত্যাশা রোডের ঐ বাড়িটাতে গিয়েছিলাম। আমার কিছু টাকা পাওনা রয়েছে ওখানে। ওদিকে যখন যাচ্ছিলাম ভাবলাম একবার উঠে দেখি। আমার আকস্মিক উপস্থিতিটা হয়তো সে সময়টার সাথে যায় নি। বাসায় ছেলে-মেয়ে কেউ ছিলো না। দেখতে পেলাম গৃহকর্তী ও তার সাথে একজন পুরুষকে। আমাকে দেখে সে তখন আনত হয়ে মোবাইলে মনোযোগ ঢেলেছে। আমি তাকে চিনি না হলেও চিনি। এই বাসায় দীর্ঘদিন টিউশনী পড়ানোর সুবাধে ভাসা ভাসা অনেক কিছু জানি এবং টের পাই।  যাক, সে সব তাদের পারসোনাল ব্যাপার। তারা আমাকে দেখে বেশ বিরক্ত ছিলেন আন্দাজ করেছি। আমার হাতে কিছু টাকা দিলে আমি তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে আপন পথধরে হাঁটি। তারপর দর্জিপাড়ার যে বাসাটিতে গিয়ে ঢুকবো সেখানে এসে দেখলাম মীর মঞ্জিলের সামনে শিশুসহ কিছু মানুষের জটলা। আমি এসে উঁকি দিয়ে দেখি একজন যুবতী মেয়ে মাটিতে বসে আছে এবং সদ্য বিধবার মতো কাঁদছে। তার চোখ মুখ ফোলা। চুলগুলো অবিন্যস্থ…। মেয়েটি তার একটি হাত দিয়ে অপর হাতের কুনুইয়ের ওপরে চেপে ধরে আছে। প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে তাকে। আর তখনও বাসার ভেতর থেকে তাকে লক্ষ্য করে নানা অশ্রাব্য গালিগালাজ আসছিলো…। এই বাসার যে ছেলেটি তাকে আমি এ পথে প্রায় দেখেছি। তার স্বভাব চরিত্র আমার কাছেও মনে হয়নি ভালো। মেয়েটির সাথে তার প্রেম ছিল।  বিয়ের প্রলোভনে একাধিক বার শারীরিক সম্পর্কে মেয়েটি  অন্তঃসত্তা কিন্তু ছেলেটি এখন তার দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না। বেমালুম অস্বীকার করছে তাকে। মেয়েটি এসেছে তার গর্ভস্থ সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবিতে…।

৪র্থ জনঃ- আমি আজ যা দেখেছি তা একই রকম এবং নিতান্তই মর্মান্তিক।মেয়েটির মুখ আমি ভুলতে পারছি না। কোন ভাবেই আমার চোখ থেকে মুছতে পারছি না তার ছবি। আমি যে ফ্ল্যাটে  টিউশনি পড়াই তার পাশের ফ্ল্যাটের সে। আমি তাকে একাধিক বার দেখেছি আমার ছাত্রীর সাথে। সে প্রায় সেখানে আসতো। তার ফ্যামেলি খুব সম্ভ্রান্ত এবং মেয়েটি অত্যন্ত সুন্দরী ছিলো বটে। বিশ্বাস করো, এমন মেয়ে খুঁজতে গেলে পাওয়া দুষ্কর হবে। দু-এক বার তার সাথে আমার কথাও হয়েছিলো। খুব ভদ্র এবং সরল লেগেছিলো মেয়েটিকে। তার এমন পরিণতি হবে কখনো ভাবতে পারি নি। প্রচণ্ড আহত হলাম যখন আজ গিয়ে জানলাম মেয়েটি গত রাতে সুইসাইড করেছে…! আর কেউ নয় তারই প্রেমিক  অন্তরঙ্গমূর্তের ভিডিও অনলাইনে ছেড়ে দিয়েছিলো! তাতে মেয়েটির পৃথিবী সঙ্কুচিত হতে হতে পায়ের নিচের মাটি হারায়…।

৫ম জনঃ- তোমরা প্রায় বলো যে আমি হ্যালুসিনেশনের শিকার হই। আজ আমি যা দেখছি নিজের চোখকে অবিশ্বাস করতে পারছি না। ভয়ে এখনো পুণঃপুণঃ কেঁপে উঠছি ভেতর থেকে। কোনমতে সেখান থেকে পালিয়ে এসেছিলাম। নয়াপাড়া থেকে বেরিরপাড় এ দুয়ের মধ্যখানে যে বিশাল জায়গা তা তো তোমরা চেনোই। আজও  কৃষিজমি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কোন বসতি না থাকায় এখনো সেখানে বৈদ্যুতিক আলো গিয়ে পৌঁছে নি । রাতের বেলা সে পথে মানুষের আনাগোনাও খুব একটা থাকে না জানো। আর আকাশে চাঁদ না থাকায়  রাতটা ছিলো এখানে ভীষণ অন্ধকার। আমার মোবাইলের চার্জ যতটুকু যথাসম্ভব তা খরচ করতে চাচ্ছিলাম না। বেরিরপাড় থেকে কম সময়ে পায়ে হেঁটে শ্যামলীতে পৌঁছতে আমি সেই সরু পথটাকে বেছে নেই। একা একা আমার গা তখন ছমছম করছিলো। আকাশের দিকে তাকাই, এখানে ওখানে কয়েকটি তারা জ্বলছে নিভছে। আমি সেদিকে তাকাতে তাকাতে হাঁটছি হঠাৎ দেখি একটি তারা খসে পড়ছে আমার থেকে খানিক দূরে সামনে একটু ডানে। আমার কৌতূহল হলো। আমি তখনই পায়ের গতি বাড়িয়ে সেদিকে ছুটে যাই।

অন্ধকারে প্রথমে কিছু বুঝে ওঠতে পারলাম না। আমি আসার আগেই কিছু একটা দৌড়ে পালিয়েছে ক্ষেত ও ঝোপের ভেতর দিয়ে। মোবাইলের টর্চ দিয়ে এদিক সেদিক খুঁজলাম কিছু পেলাম না। আমি শিউড়ে উঠলাম যখন দেখতে পেলাম ঠিক আমারই পায়ের কাছে একটি নবজাতক বাচ্চার লাশ। একহাত তার কানের নীচে অন্যহাত পড়ে আছে বুকের পাশে । শরীরে শিয়ালের খুবলে খাওয়া ক্ষত। আশপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে ভয়ে তখনই সে স্থান ত্যাগ করতে যেয়ে দেখি আরেকটি তারা খসে পড়ছে অদূর অন্ধকারে। কৌতূহলের বশে বুকে একটু সাহস সঞ্চার করে দৌড়ে সেদিকে যাই। সেখানে গিয়ে কিছু একটার সাথে হোঁচট খেয়ে উপুড় হয়ে পড়ে আমার হাত থেকে মোবাইলটি ছিটকে পড়ে। আমি হাতে ভর করে উঠে দাঁড়াই এবং ফোনটি তুলে টর্চ ধরা মাত্র আঁতকে উঠি। এ যে এক নারীর লাশ দেখতে পাচ্ছি! আামি স্পষ্ট দেখেছি তার দু হাত পিছমোড়া করে বাঁধা। কাপড় দিয়ে বাঁধাবস্থায় মুখগুজে পড়ে আছে মাটিতে। শরীরের জামাটিও ছিন্ন ভিন্ন। দেখে বোঝা যায় খুব অমানুষিক পাশবিক নির্যাতনের শিকার মেয়েটি…!

সম্বিত ফেরামাত্র সেখানে এক সেকেন্ডও দেরি না করে দৌড় দেই…।

৬ষ্ঠ জনঃ- আজকের দিনটি আমার স্বাভাবিক গিয়েছিলো। তেমন কোন ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় নি বাসায় ফেরা পর্যন্ত। আজ আগেভাগেই বাসায় চলে আসি এবং এসে এ ঘটনা জানতে পারি। আমি  অবাক! একজন মায়ের পক্ষে তা কিভাবে সম্ভব হলো? এই ফ্ল্যাটের আশা নামক মেয়েটি যে এবার ক্লাশ ফোরে পড়ছে তার মাকে তোমরা সবাই দেখেছো এবং চেনো।ওখান থেকে যে কান্না তোমরা শুনতে পাচ্ছো তারই ছোট বাচ্চাটির কান্না।  এখনো কেঁদে যাচ্ছে, কেউ পারছে না তাকে থামাতে। না পারছে ছোট শিশুটিকে কেউ সামলাতে। সেই থেকে অবিরত কেঁদে যাচ্ছে শিশুটি। এটুকু বাচ্চাকে রেখে তার মা কিভাবে পারলো পরকীয়া প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যেতে! শুনে অবাক হচ্ছো, না?…

শেষজন যখন তার কথা বলছিলো তখন তাদের রুমের বাতি অফ হয়ে গিয়েছিলো। তারা নিজ নিজ বালিশে মাথা রেখে শুনতে শুনতে ভাবনার ঘোরপ্যাচে আটকে চুপসে যায়। মানুষ দিনে দিনে এমন হচ্ছে কেন, সমকালীন অনেক জিজ্ঞাসা তাদের মাথায় ঘুরপাক খায়। কেউবা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। পাশের বাসার ছোট্ট  শিশুটি তখনও অবিরাম কাঁদছে। তার কান্না শুনতে শুনতে একসময় তারা হারিয়ে যায় ঘুমের অতলে। ঘুমের মধ্যে তারা হয়তো অনেক স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নের ভেতর স্বপ্ন দেখে।সকালে উঠে সে সবের কথা তাদের মোটেও মনে থাকবে না। অদৃশ্য সুতার টানে তারা ঘর থেকে বেরোবে । সারাদিন দৌড়ঝাপ শেষে আবার  বাসায় ফিরবে। ঘুমের ঘরে দেখা স্বপ্ন নিয়ে তারা আর ভাবে না। বাস্তব জীবনেও তাদের কতো স্বপ্ন ছিলো। সে সব এখন ধূসর হয়ে যেন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে বা গিয়েছে। ছুটাছুটির পেছনে পড়ে কোনকিছু নিয়ে তারা আর স্থির হয়ে ভাবতে পারে না। তাদের সামনে ইস্যুর পর ইস্যু তৈরি হয়। রাজনৈতিক ইস্যুর ভীড়ে নিজেদের ন্যায্য অধিকার ও দাবিটাও চাপা পড়ে যায়।জীবন জীবিকা, ক্যারিয়ার নিয়ে তারা খুবই চিন্তিত হয়। সামান্য কোন আশা দেখলে তার পিছে ছুটছে, পরে মরিচিকা দেখে আবার হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে…। কেউ ভবিষৎ খোঁজতে দূর কোন দেশের স্বপ্ন দেখে। অর্থের অভাবে কেউ কেউ দালালের মাধ্যমে ঝাঁপ দিচ্ছে সাগরে।কারো স্বপ্ন সেখানেই ডুবে যাচ্ছে কিংবা কোন চরে আটকে গিয়ে নিঁখোজের দেশে হারিয়ে যাচ্ছে সে খবর আর কেউ রাখছে না…। সম্পদের অসম বন্টন আর পুঁজিবাদি ভেলকির সামনে তারা  আজ অসহায়!

সকাল বেলা তাদের ঘুম ভাঙলো সে একই শিশুর কান্নার আওয়াজে। চোখ মুছতে মুছতে যখন তারা কান পাতলো,  শুনলো সে শিশুই কাঁদছে। তারপর তারা আবার চোখ মুছলো, শুনলো একটি শিশু নয়- কয়েকটি শিশুর  কান্নার আওয়াজ! তারা বিছানায় বসে আবারও যখন চোখ কচলাতে কচলাতে লক্ষ্য করলো, দেখলো পাশের  বাসার শিশুটি নয় মূলত তারাই গত রাতে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়েছিলো,এখন তারাই আবার কাঁদতে কাঁদতে ঘুম থেকে জেগেছে। অদ্ভূত ব্যাপার যে, তারা তাদের কান্না থামাতে পারছে না!

Tags: , ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ