27 Feb

অকপটঃএকটি জীবন নাট্য

লিখেছেন:সুদীপ পাঠক


মেয়েটি বাড়িতেই ছিল । হঠাৎ তার মোবাইল ফোনটা ঝনঝন শব্দে বেজে উঠলো । আর তার পর … 

মানালি : হ্যালো কি ব্যাপার ! এযে অবিশ্বাস্য , গায়ে চিমটি কেটে দেখতে ইচ্ছে করছে জেগে আছি নাকি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছি ?

ফিরোজ : ন্যাকামো না করে সরাসরি বলবি হয়েছেটা কি ?

মানালি : ন্যাকামোটাতো মেয়েদের সহজাত , ওটা ছাড়ি কি করে বল ? তবে আজ নিশ্চই পশ্চিম দিকে সূর্য উঠেছে না হলে স্বয়ং শাহজাদা ফিরোজ ফোন করেছেন তাও এই অধম হতভাগীনিকে ! কল্পনার অতীত তাই না ?

ফিরোজ : বুঝেছি এতো বকবক করছিস যখন তখন নিশ্চই বাড়িতেই আছিস আর ঘরের দরজা জানলা সব বন্ধ করে বালিশ আঁকড়ে বিছানায় পড়েছিস , এবার ভাতঘুম দেবার মতলব করছিস , কি তাই তো ?

মানালি : উফ্ যাষ্ট ভাবা যায় না ! তুই তো দেখছি যাকে বলে অন্তর্যামী ! নারী হৃদয়ের গহন গভীর রহস্যময়তাকে এভাবে পাঠোদ্ধার করতে আর কেইবা পেরেছে ? তুমিই যে আমার প্রিন্স চার্মিং মাই ডার্লিং ।

ফিরোজ : থাম আর বাজে বকিস নাতো । জীবনের অর্ধ্যেকের বেশী সময় তো শুয়ে বসে গড়াগড়ি খেয়ে আলস্যে কাটিয়ে দিলি । কি কুক্ষণেই যে জার্নালিজম নিয়ে মাস্টার্স করতে গিয়েছিলিস তা কে জানে ! একটা সিট নষ্ট করলি তো ? তোর জায়গায় একটা নিডি অ্যান্ড প্যাশনেট স্টুডেন্ট চান্স পেতে পারতো ।

মানালি : সত্যিই খুব ভুল হয়ে গেছেরে , অ্যাডমিশনের আগে তোর কাছে একটা গ্রুমিং কোর্স করে নেওয়া উচিৎ ছিল ।

ফিরোজ : ভুল আমার হয়েছে তোকে ফোন করাটা , আমি রাখছি ।

মানালি : এই এই  প্লিজ প্লিজ কাটিস না ; এই শোন না রে …

ফিরোজ : কান দুটো খোলাই আছে , শুনছি বলে যা ।

মানালি : তুই না বড্ড বেরসিক জানিস তো , সবেতেই দুমদাম মাথা গরম করে ফেলিস । তুই একটা নীরস প্রাণী , একেবারে কাঠখোট্টা ।

ফিরোজ : দেখ মানালি তুই খুব ভালো করেই জানিস যে … ( কথা অসমাপ্ত থেকে যায় )

মানালি : ( মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে ) হ্যাঁ নিশ্চই জানি বৈকি ; একশোবার জানি হাজারবার জানি । জানি যে ফিরোজ নামের সাতাশ বছর বয়সী যুবকটি আদ্যন্ত সিরিয়াস । যার ভ্রুযুগল সর্বদা কুঞ্চিত চোয়াল দুটো সর্বদা ইস্পাত কঠিন আর বজ্রমুষ্টিদ্বয় কখনই উন্মুক্ত হয় না । সর্বদা মুঠো হয়েই আছে , কারণ সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যতদিন না স্বদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হচ্ছে সে তার লক্ষে অবিচল থাকবে । সে একজন দায়িত্বশীল গৃহশিক্ষক ও একনিষ্ঠ পার্টি ওয়ার্কার । এর বাইরে তার আর কোনো জগৎ নেই , সে আর কিছু বোঝে না বুঝতে চায়ও না । বাকী সব ধরনের ইমোশনাল ব্যাপার স্যাপারকে সে মনোবিকলোনর তত্ত্ব দিয়ে ডিফাইন করে । কি তাই তো ? মিলছে না মিলছে না ?

ফিরোজ : সুযোগ বুঝে এভাবে ইনসাল্ট করবি জানলে কখনই ফোন করতাম না ।

মানালি : ইনসাল্ট করবো আমি ! এমন দুঃসাহস কি আমার পক্ষে করা সম্ভব ? আমি একজন অতি মামুলি মেয়েমানুষ পেটি বুর্জোয়া শ্রেণীর প্রতিনিধি । আমার আর কি পে-ডিগ্রি  আছে বল ?

ফিরোজ : ভাষার ওপর তো খুব দখল আছে দেখছি । বেশ আলংকারিক ভাষায় চিমটি কেটে হাড় জ্বালানি কথা বলতে শিখেছিস । লোকজনকে না খুঁচিয়ে কাজে লাগাতে পারিস তো । তোর বুদ্ধি কি হাঁটুতে থাকে নাকি রে ?

মানালি : ঠিক ধরেছিস রে । ঘটে তো আমাকে কিছু দেন নি ভগবান , তাই বুদ্ধিটা বোধহয় হাঁটুতেই আছে । এই রে  যাহ্ একটা সাংঘাতিক ভুল করে ফেললাম প্লিজ কিছু মনে করিস না ।

ফিরোজ : কি হলো আবার !

মানালি : ওমা বুঝলি না , সেকি রে ! এই যে তোর কাছে ভগবানের নাম করে ফেললাম । তুই নিরিশ্বরবাদী নাস্তিক মানুষ বলে কথা । আমার কতটা পাপ হলো বলতো ?

ফিরোজ : অকারণে আর কত বেঁধাবি বলতে পারিস ?

মানালি : তোরও বেঁধে তাহলে ? যাক শুনে খুব খুশি হলাম । তবে অকারণে নয়রে বেঁধাবার যথেষ্ট কারণ আছে ।

ফিরোজ : কি কারণ সেটা শুনি একবার ?

মানালি : হিংসে বুঝিস , হিংসে ? সেই জন্য । আসলে  এজীবনে তো আমার দ্বারা কোন কাজকর্ম করা হল না তাই তোর মতন সদাব্যস্ত কাজের মানুষকে দেখে খুব হিংসে হয় , বুঝলি ?

ফিরোজ : যার কাজ করার ইচ্ছে থাকে সে কখনই …        ( কথা অসমাপ্ত থেকে যায় )

মানালি : ( মুখের কথা কেড়ে নিয়ে ) ঘরে বসে থেকে না , এইটা বলতে চাইছিস তো ? আসলে কি জানিস তো শুয়ে বসে আলস্যে দিন কাটানো অভ্যাস হয়ে গেছে তো তাই আর কাজ করতে মন চায় নারে । তার ওপর আবার গায়ের রং ফর্সা । ছোটবেলা থেকে সুন্দরী সুন্দরী শুনে শুনে কান একেবারে পচে গেছে । দু দিন বাদেই বাবা মা সম্বন্ধ করে আমার বিয়ে দিয়ে দেবে । বেশ জাদরেল একটা শাঁসালো বর হবে ।  ব্যাস আমার আর চিন্তা কিসের বল ? দিব্যি পায়ের ওপর পা তুলে আরামে জীবন কাটাবো । খামোখা চাকরি বাকরি করে খেতে মরতে যাবো কেনো ?

ফিরোজ : তুই কিন্তু আজ বড্ড বাজে বকছিস মানু  , আমার ওপর তোর এতো আক্রোশ কিসের শুনি ?

মানালি : মোটেই বাজেকথা নয় , তোর দিক থেকে অবহেলা পেয়ে পেয়ে মনটা একেবারে বিষিয়ে গেছেরে ।

ফিরোজ : কি যাতা বলছিস ! কি হয়েছেটাকি তোর আজ ? আমি আবার তোকে কবে কি করলাম ? যতসব আজগুবি কথাবার্তা !

মানালি : তাতো বটেই আমিতো সব সময় ভুলভাল কথা বলে থাকি আর তুই হলি কিনা যাকে বলে মিস্টার পারফেক্ট । আজ এক মাসের ওপর হল ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি । অ্যাকসেপ্ট করার সময়টুকু  পর্যন্ত হল না তোর ! তুই কি বলতে চাস যে তুই এতোটাই ব্যস্ত ?

ফিরোজ : ওহ্ এই ব্যাপার ! আমি ভাবলাম না জানি কি !

মানালি : তোর কাছে নিতান্ত তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয় বলে মনে হতে পারে । কিন্তু আমার কাছে এটা খুব ম্যাটার করে বুঝলি ?

ফিরোজ : আমি দিন রাত তোর মতন ফেসবুকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে থাকি না ।

মানালি : আসল কথাটা এড়িয়ে যাচ্ছিস কেনো ? স্বীকার কর যে তোর স্মার্ট ফোন নেই , তাই রেগুলার ফেসবুক চেক করা তোর পক্ষে সম্ভব নয় । What’s app করা তো দূরের কথা ।

ফিরোজ : স্মার্ট ফোন না থাকাটা কি অপরাধ ?

মানালি : হ্যাঁ অপরাধ , আলবৎ অপরাধ একশোবার অপরাধ । আজকের দিনে তোর মতন আর কে আছে ? একটা এক্সাম্পল দেখা তো ?

ফিরোজ : নাহ্ তুই বরং আরাম করে ঘুমো । আমি না হয় পরে কোন একদিন …

মানালি : এই দাঁড়া দাঁড়া আমি এখনও শেষ করিনি । তোকে কত দিন বলেছি শোন ফিরু আমি তোকে একটা স্মার্ট ফোন গিফ্ট করতে চাই । তুই কিছুতেই নিতে চাসনি । আচ্ছা বেশ উপহার হিসাবে না হোক মাসে মাসে কিছু টাকা শোধ দিস , EMI হিসাবে মনে করলেই তো ল্যাঠা চুকে যায় । যে মাসে যতটা পারবি দিবি না পারলে না দিবি । কোনো হার্ড এন্ড ফার্স্ট কন্ডিশন অ্যাপ্লাই করা নেই ! কিন্তু তুই আমার কথায় কর্ণপাতও করিস নি । আসলে তোর মেল ইগো হার্ট হচ্ছে । বুকে হাত রেখে বল আমি যা বলছি সব মিথ্যে কিম্বা ভুল ।

ফিরোজ : নাহ্ কিছুই অস্বীকার করছি নারে । তোর সব অভিযোগ সত্যি । যত দোষ সব আমার … আমি মেনে নিচ্ছি ।

মানালি : ঐ শুরু হয়ে গেলো , এবার ন্যাকামোটা কে করছে বল ?

ফিরোজ : ঠিক আছে বুঝেছি বাদ দে তো , আমি এখন রাখছি ।

মানালি : খবরদার কল কাটবি না বলছি , তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু । আচ্ছা আমি স্বচ্ছল পরিবারে জন্মেছি সেটা কি আমার অপরাধ ? আমাকে শ্রেণীশত্রু ভাবটা কবে বন্ধ করবি বলতে পারিস ? কিছুতেই আমাকে বন্ধু বলে মনে করতে পারিস না কেনো রে ? আমি যে আমার সবটুকু নিয়ে তোর পাশে দাঁড়াতে চাই । বুঝেও না বোঝার ভান করে আর কত কাল থাকবি ? তুই কি চাস আমি হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে বিলি করি ? নাকি পাড়ায় পাড়ায় মাইকিং করে বেড়াই কোনটা ? ঠিক করে বলতো ?

ফিরোজ : তুই ভুল করছিস রে মানু , তুই যা বলছিস যা চাইছিস তা কোন দিন হবার নয় । কেনো সেটা সম্ভব নয় সেটাও তুই ভালোই জানিস । আমি বাস্তববাদী তাই তোর কথায় সায় দিতে পারি না , নিজেকে গুটিয়ে রাখিরে মানু ।

মানালি : প্লিজ প্লিজ ফিরু দয়া করে ধর্মের জিগির তুলিস না । অর্থনৈতিক বৈষম্যের দোহাইও দিস না , ওগুলো না খুব ক্লিশে কথাবার্তা । তুই নিজের দিক থেকে ক্লিয়ার কিনা সেটাই বল ? তোর বিশ্বাসের ভীতটা  নড়বড়ে নাকি শক্তপোক্ত সেটা তোকেই ভেবে ঠিক করতে হবেরে ফিরু ।

ফিরোজ : ঠিক আছে তোর সাজেশন মনে থাকবে , পরে সময় পেলে ভেবে দেখবো , এখন তাহলে …( কথা অসমাপ্ত থাকে )

মানালি : অ্যাই কী জন্য ফোন করছিলিস সেটা তো বললি না !?

ফিরোজ : সুযোগ পেলাম কই ! তুই যে ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লি …

মানালি : OK OK আমি চুপ করে আছি এবার বল ।

ফিরোজ : নাহ্ থাক এখন আর মুড নেই ।

মানালি : ভালো হবে না বলছি চটপট বল , আমার মাথার দিব্যি । না বললে আমার মরা মুখ দেখবি মনে থাকে যেন ।

ফিরোজ : হা হা হা এসব কুসংস্কার যে আমি আদৌ মানি না সেটা তুই ভালোই জানিস ।

মানালি : আচ্ছা তুই ঠিক কি চাস বলত ? আমি হাতের শিরাটিরা কেটে সিনেম্যাটিক একটা কিছু করি , তবে তোর শান্তি হবে ?

ফিরোজ : উফ্ বাপরে বাপ ! রক্ষে কর মা আমার , অন্যায় হয়ে গেছে ।

মানালি : গুড আই লাইক ইট । যাঃ তোকে মাপ করে দিলাম , এবার বল কেসটা কি ?

ফিরোজ : আজ একবার দেখা করতে পারবি এই ধর সাড়ে তিনটে কি চারটে  নাগাদ ?

মানালি : এই রে মুশকিলে ফেললি দেখছি । শরীরটা ভালো নেই রে । দু চার দিন পরে দেখা করলে হয় না ? যদি আজ স্পেশাল কিছু না থাকে তো …

ফিরোজ : না স্পেশাল আর কি এমনিই বলছিলাম । থাক পরেই না হয় দেখা করবো । কিন্তু তোর হঠাৎ কি হলো রে ! সেই মাইগ্রেনের পুরনো ব্যথাটা আবার চাগাড় দিয়েছে নাকি ?

মানালি : ওহ্ মাই গড ! আমার কথা তোর এতো মনে থাকে !

ফিরোজ : তাহলেই ভেবে দেখ , খুব অবাক লাগছে তাই না !

মানালি : সত্যি রে …

ফিরোজ : এবার বল কি হয়েছে ?

মানালি : তোর জায়গায় অন্য কেউ থাকলে মাইগ্রেন বলেই চালিয়ে দিতাম । কিন্তু তোকে তো আর মিথ্যে বলতে পারি না …

ফিরোজ : উফ্ আবার ! এতো ভনিতা কিসের ? যা বলবার বলে ফ্যালনা ! আমার হাতে সময় নেই ।

মানালি : শোন তাহলে আমাকে তুই একটা মেয়ে বলে কনসিডার করিস আশা করি ।

ফিরোজ : এখনো পর্যন্ত তো সেই রকমই মনে হয় ।

মানালি : আর মেয়েদের যে প্রতিমাসে মেনস্ট্রুয়েশন হয় সেটা জানা আছে নিশ্চই ? আমার আজকাল হঠাৎ হঠাৎ  অনিয়মিত পিরিয়ডস হচ্ছে , আজ সেকেন্ড ডে । এই অবস্থায় বাড়ির বাইরে বেরোনোটা একটু চাপের । আশা করি বুঝতে পারছিস ব্যাপারটা ?

ফিরোজ : তুই তো আচ্ছাই হনুমান টাইপের মেয়ে দেখছি ! এই কথাটা তো আগে বলতে হয় !

মানালি : ওরে ছাগল তোর

মাথায় ঘিলু বলে তো কিছু নেই , শুধু গোবর পোরা তাই এ কথা বলছিস । কমন সেন্স থাকলে অনেক আগেই বুঝতে পারতিস । এই কারণেই তো আজ এতো খিটখিটে হয়ে আছি । আগে কোনো দিন এরকম করেছি তোর সঙ্গে ভেবে বলতো ?

ফিরোজ : ঠিক আছে ঠিক আছে সব বুঝেছি তোকে আর বলতে হবে না । তুই রেষ্ট নে , আমরা নাহয় নেক্সট সানডে মিট করবো ।

মানালি : কিন্তু তুই যখন আজই দেখা করার কথা বলছিস দেয়ার মাস্ট বি সাম রিজন । সেটা কি জানতে পারি ?

ফিরোজ : ও তেমন কিছু না এমনি বলছিলাম …

মানালি : আমাকে আর জ্বালাস না ফিরু সত্যি কথাটা বলে ফ্যাল চটপট ।

ফিরোজ : আজ আমার আম্মির মৃত্যুদিন ; সাত বছর হল আম্মি নেই …

মানালি : তুই এতো নিষ্ঠুর কি করে হতে পারিস ফিরোজ ? আমি তো কল্পনাও করতে পারি না রে !

ফিরোজ : আসলে আজ আমার মাইন্ড একটু ডিস্টার্ব রয়েছে রে । সকাল থেকেই … মানে আমি ঠিক সব কথা তোকে বলে বোঝাতে পারছি না … হঠাৎ তোর কথা খুব মনে পড়ছিল তাই ভাবলাম …

মানালি : থাক আর বলতে হবে না । কোথায় মিট করতে চাস শুধু সেটা বল ।

ফিরোজ : না না এই অবস্থায় তুই কি ভাবে বেরোবি ? এটা অসম্ভব ! আজ বাদ দে , পরে না হয় কোন দিন …

মানালি : সে ভাবনাটা আমার ওপর ছাড়লেই ভালো হয় না কি ?

ফিরোজ : উফ্ তুই এতো অসম্ভব জেদি কেনো বলতো !?

মানালি : জানিস যখন আর্গ্যু করছিস কেনো ? কি লাভ ?

ফিরোজ : ঠিক আছে যা ভালো বুঝিস কর । রসিক বিলের পশ্চিম দিকের শেষ প্রান্তে একজোড়া বিশাল আকৃতির অমলতাস গাছ আছে দেখেছিস তো ? ওর পাশেই একটা ছোট্ট পাথুরে ঢিপি , ওখানে লোকজন বড় একটা আসে না , জায়গাটা বেশ নির্জন । পারবি আসতে ?

মানালি : পারবো , তবে এখনই তো প্রায় তিনটে বাজতে গেলো চারটের জায়গায় সাড়ে চারটে হতে পারে । তুই কিন্তু ওয়েট করবি আমি না যাওয়া পর্যন্ত । আর গিয়ে যদি দেখি কেটে পড়েছিস তাহলে তোর কপালে যে ব্যাপক দুঃখ লেখা আছে সেটা আশা করি নতুন করে বলতে হবে না ।

ফিরোজ : সেকিরে ! তোর দেড় ঘন্টা লাগবে  তৈরী হতে ? কি এমন সাজুগুজু করবি ? বিয়ে বাড়ীতে যাচ্ছিস না তো !

মানালি : সব যদি তুই বুঝেই যেতিস তাহলে তো আর কথাই ছিল না ।

ফিরোজ : ওহ্ আমার টিউশনি আছে তো , ও দিকে লেট হয়ে যাবে না ?

মানালি : ধুর তোর টিউশনির ট্যাঙ্কে গুলি । একদিন না গেলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না । সত্যি কথাটাই জানিয়ে দে না । বল যে আজ তোর আম্মির মৃত্যুদিন , তোর মন ভালো নেই আজ তুই যেতে পারছিস না ব্যাস । এতে যদি তোর পৌরুষে বাঁধে , মনে হয় ব্যাপারটা বেশ ছেলেমানুষী হয়ে যাচ্ছে তাহলে বল যে আজ বিকেলে একটা শাঁকচুন্নি পেত্নীর সঙ্গে তোর মোলাকাত হতে চলেছে । যদি প্রাণে বেঁচে যাস তাহলে না হয় ভবিষ্যতে আবার সায়েন্স পড়াতে যাবি , বুঝলি কিছু ?

ফিরোজ : জলের মতো পরিষ্কার । শুধু একটাই খটকা থেকে যাচ্ছে অকারণে একঘন্টা লেট করবি কেনো ? আসবি যখন টাইমলি আয় !

মানালি : আমার সব কিছুই তো তোর কাছে অকারণ , অনর্থক , অহেতুক ইত্যাদি ইত্যাদি মনে হবে । কিন্তু বাস্তবে তো তা নয় । কারণ নিশ্চই একটা আছে ।

ফিরোজ : সেই কারণটা জানতে পারি কি মহারানী ?

মানালি : উফ্ তোর জ্বালায় কোন কিছু সারপ্রাইজ রাখা যাবে না , ধ্যাৎ । এত্ত মাথা গরম হয়ে যায় না যে কি বলব , ভাল্লাগেনা । তোর জন্য পায়েস রান্না করবো , তাই দেরী হবে । এবার শান্তি হল ?

ফিরোজ : পায়েস !

মানালি : হ্যাঁ রে ঠিকই শুনেছিস , পায়েস । জানি তোর আম্মির মতন অতো ভালো বানাতে পারবো না তবু চেষ্টা করতে দোষ কি ? দেখাই যাক না ।

ফিরোজ : কিন্তু হঠাৎ পায়েস কেনো ? আজ তো আম্মির জন্মদিন নয় মৃত্যুদিন !

মানালি : হায়রে হায় ! তোদের নিয়ে এই এক মুশকিল জানিস তো ! ভালো করে রবীন্দ্রনাথ পড়িসনি তাই এতো সমস্যা । পড়লে বুঝতিস ।

ফিরোজ : যাব্বাবা ! এর মধ্যে আবার রবীন্দ্রনাথ এলো কোত্থেকে ?

মানালি : কোত্থেকে মানে ! সেতো সদাসর্বদা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে —

তোমার কাছে এ বর মাগি

মরণ হতে যেনো জাগি 

গানের সুরে 

যেমনি নয়ণ মেলি যেন

মাতার স্তন্য সুধা হেন

নবীন জীবন দেয়গো পুরে

গানের সুরে …

নতুন উদ্যমে বাঁচা কাকে বলে একবার শিখে নে রে । মা বাবা কারোরই চিরকাল থাকে না । আম্মির শোকে ভিতরে ভিতরে গুমরে মরলেই কি তাঁর আত্মা শান্তি পাবে বলে করেছিস ? সকাল থেকে তো পেটে নিশ্চই কিছু পড়ে নি , কি তাই তো ?

ফিরোজ : ঠিক আছে ঠিক আছে সব বুঝেছি আর জ্ঞান দিতে হবে না । তোর পায়েস আর রবীন্দ্রনাথ দুটো নিয়ে ঠিক সময়ে চলে আসিস ।

মানালি : যাবো , কিন্তু আগে থেকেই বলে রাখছি যে আমি আজ তোকে একটা চুমু খাবো । তুই কিন্তু বাধা দিতে পারবি না ।

ফিরোজ : কি বলছিস কি তুই !

মানালি : ঠিকই শুনেছিস । ডুবন্ত সূর্য আর একজোড়া অমলতাসকে সাক্ষী রেখে মানালি নামের যুবতীটি ফিরোজ নামের যুবকটিকে সাংঘাতিক প্রবল ও প্রচন্ড রকমের চুম্বন করতে চায় । যা কিনা একদিন ইতিহাসে রূপান্তরিত হবে ।

ফিরোজ : বেশ তবে তাই হোক ; সেই ইতিহাসের এক মূক চরিত্র হয়ে ওঠার জন্য যুবকটি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকবে ।

Tags: ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ