16 Apr

শর্ট-সার্কিট

লিখেছেন:উজ্জ্বল আদিত্য


চি চি চি। লোডশেডিং না  শর্ট সার্কিট ? এমন অন্ধকার হয়ে গেল কেন? আগেও একদিন হয়েছিল। কিন্তু আজকের অন্ধকারটা খুব অন্যরকম। পাখিগুলো অমন চিৎকার করেই বা উঠল কেন?

গত চারমাস ধ’রে ঝকঝকে ফ্ল্যাটের সুন্দর জানালাটা দিয়ে ঈশান সবসময় পাখির বাসাটাকে দেখে। ইলেকট্রিক তারে ছোট্ট পাখির নিপুন চঞ্চুতে বোনা বাসা। দিন পনেরো হল আরও দুটো ক্ষুদে পাখি দেখা দিয়েছে সে বাসায়। মা-পাখির আহ্লাদও বেড়েছে, ডানায় তার উড়ন্ত ঝর্ণা। বোধহয় বড়ো শান্তি সেখানে। তাদের তিন কামরার চোখ-ধাঁধানো ফ্ল্যাটের মতো অশান্তি নেই।

সারাদিন অফিসের পর রাতে মা-বাবার ঝগড়া সুনিশ্চিত। ডিভোর্স আর ডিভোর্স ! ওরা কি ক্লান্ত হয় না ? নিজেকেই খুব বোঝা মনে হয় ঈশানের। সে যেন কেন ওই পাখির বাচ্চা নয় ! একটু ভালোবাসা চেয়েছিল সে । দিনরাত শুয়ে শুয়ে তাই পাখির বাসা দেখে। ভাবনার স্রোত ঈশানের চোখের কোণে বন্যা আনে। কিন্তু চোখ মোছার ক্ষমতা নেই তার।

অ্যানিভার্সারির দিন আলো- বেলুন- কেক, কত খাবার, কত লোকজনের মধ্যেও ঝগড়াটা তীব্র হলে মা তার হাত ধরে দ্রুত নেমে যাচ্ছিল সিঁড়ি দিয়ে, দৌঁড়ে এসে বাবা ঈশানের অন্য হাত ধরে টেনেছিল, তারপর ধস্তাধস্তি, সাত বছরের ঈশান ছিটকে গিয়েছিল সিঁড়ি থেকে। স্পাইনাল কড ইনজুরি, প্যারালাইজড, হয়তো সারাজীবন থাকবে এই বন্দি দশা !

মিনিট দশেক পরে আলো এল। ঘরের আলো গিয়ে পড়ল ইলেকট্রিক তারে। পাখির বাসাটা আর নেই।

বহুদিন পরে আজ রাতে ঈশান ভালো করে ঘুমাবে। চোখ থেকে আর অসহ্য জল গড়াবে না। পাখিদের ভালোবাসার শরশয্যায় আর ভীষ্ম হতে হবে না তাকে। তাই সাত বছরের ঈশান আজকে পাখিদের সঙ্গে কাঁদেনি ।

Tags: , ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ