[ ‘Coordination Game’ – অর্থশাস্ত্রে ব্যবহৃত ‘Game Theory’ –র একটি অনবদ্য অবদান। ‘Prisoner’s Dilemma’ ‘Coordination Game’ এরই একটি বহু প্রশংসিত উদাহরণ। ‘Prisoner’s Dilemma’ নামকরণটি করেন গণিতবিদ Albert. W. Tucker. ‘Dilemma’- অর্থাৎ ‘উভয় সঙ্কট’-ই এই গল্পের মূল বিষয়বস্তু যেখানে যুক্তিবাদী মনোভাব সহযোগিতাকে লঙ্ঘন করেছে একটি মজার আঙ্গিকে।]
বিশ্বাস বা ভরসা হল বন্ধুত্বের অনিবার্য উপাদান। বিশ্বাস থাকে তো বন্ধুত্ব টিকে থাকে আর বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলে বন্ধুত্বও ভেঙ্গে যায়। তাই বন্ধুত্ব খুব সাবধানে করা উচিত। কেননা, চালাক বন্ধুর কাছে সবার আগে হল স্বার্থ, আর সেই স্বার্থরক্ষার জন্য যদি বিশ্বাস ভাঙতে হয়, তবু সে পিছপা হবে না। কিন্তু সরল হৃদয় কি করে বুঝবে চালাকের মনে কি চলছে? তার জন্য সরল হৃদয়কেও একটু চালাক হতে হয় বৈকি।
গল্পটা হল দুজন কাল্পনিক চোরকে নিয়ে- রাম ও শ্যাম। শুধু চোর বললে ভুল হবে বরং ‘মানিকজোড়’ বলা ভাল। ছোটবেলায় পরশির আমবাগানে হানা দেওয়া থেকে বড়বেলায় গৃহস্তের আলমারি সাফ করা – সবই তারা একসাথে সামলেছে। পার্থক্যটা ছিল ওদের বুদ্ধির মাপকাঠিতে। রাম ছিল যেমনি সাদাসিধে, শ্যাম ছিল তেমনি চালাকচতুর।
অদ্ভুতনগরে এক ‘অদ্ভুত’ আইন প্রচলিত ছিল। অদ্ভুতনগরের দারোগা সেই আইনের কৌশলেই বহু অপরাধীকেই ‘অপরাধী’ প্রমাণ করে গারদে পুরেছে। একবার হল কি, অদ্ভুতনগরে একটি চুরির ঘটনা ঘটল। জরুরী বিষয় হল এই যে, এই অপকর্মটি রাম-শ্যামেরই যৌথ প্রয়াস ছিল। দারোগা সেটা আন্দাজ করতে পেরেছিল কিন্তু কোন দৃঢ় প্রমাণ না থাকায় কেবল জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানায় ধরে আনল। ধরা পরার আগে শ্যাম রামকে বলে রাখল – “ যাই হোক ভাই, তুই কিন্তু দোষ স্বীকার করবি না। তাহলে আমাদের দুজনের কপালেই দুঃখ আছে”।
“সে আর বলতে!” – রাম জবাবে বলল। কে জানত যে এই রাম সত্যিই বনবাসে যেতে চলেছে!
রাম ও শ্যাম কে আলাদা আলাদা করে জেরা করা শুরু করল দারোগা। প্রথমে রামের পালা। শুরুতেই দারোগা রামকে বলল-
-“ দেখ। আমি যা বলছি খুব মন দিয়ে শোন। তোর সামনে দুটো উপায় আছে; হয় দোষ স্বীকার কর, নয় অস্বীকার কর। যদি তোরা দুজনেই দোষ স্বীকার করিস তো তোদের দুজনকেই তিন মাসের জন্য গারদে পুড়বো; যদি দুজনেই অস্বীকার করিস তো দুজনকেই এক মাসের জন্য; কিন্তু যদি দুজনের মধ্যে একজন ‘হ্যাঁ’ বলিস আর অন্যজন ‘না’, তাহলে যে স্বীকার করবি তাকে ছেড়ে দেব কিন্তু যে অস্বীকার করবি, তাকে ছয় মাসের জন্য গারদে পুড়বো। “
এতকিছু শুনে রাম থতমত খেয়ে গেল। কিন্তু বন্ধুত্তের খাতিরে দোষ স্বীকার করল না।
এরপর শ্যামকে জেরা করার আগেও দারোগা ওই একই নিয়ম শোনালো। শুনেই শ্যাম মনে মনে ভাবল- “ এ কি কাণ্ড! হয় তিন মাস, নয় এক মাস, হাজতবাস তো হবেই। তবে উপায়?” কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই চালাক শ্যামের মনে চালাকির উদয় হল। তবে সে কি জবাব দিল দারোগাকে?
থানা থেকে বেরনোর আগে একবার রামের সঙ্গে দেখা করে গেল শ্যাম। রাম বলল- “এ কি? তুই বাইরে ঘুরছিস কি রে? তোর ও তো এক মাসের হাজতবাস করার কথা!
শ্যাম বলল- “ ভাই আমার, তুই বল কোনটা বেশি? ‘শুন্য’ না ‘এক’?”
“এক” – সরল হৃদয় রাম বলল।
উত্তরে শ্যাম বলল – “ ঠিক বলেছিস। সেইজন্যই ‘শুন্য’ কেই বেছে নিলাম। রাগ করিস না ভাই। আবার ছ’মাস পর দেখা হবে। বিদায়!”
Tags: দেবাশিস সাহা
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।