১
ওস্তাদের কাছ থেকে শিখে নেওয়া ম্যাজিকগুলো ধীরে ধীরে পুরনো হয়ে যাছে মানিক বুঝতে পারে।এই তো সেদিন কিশোরগঞ্জে একটা শো ছিল,দর্শকের আসন থেকে অভিযোগ উড়ে আসে-‘এসব পুরোনো খেলার বদলে নতুন কিছু দেখান’। নতুন কি আর দেখাবে মানিক। বছর দুই হল ওস্তাদ মারা গেছে। শহরে গিয়ে নতুন ওস্তাদের কাছ থেকে ম্যাজিক শেখার মতো ক্ষমতাও মানিকের নেই। প্রথম সমস্যা আর্থিক,দ্বিতীয় সমস্যা মানসিক। চিরকাল পাড়াগাঁয়ের ছেলে মানিক শহরটা খুব একটা মারায় নি। শহরে গেলেই কেমন একটা দম বন্ধ হয়ে আসে ওর,মন কেমন একটা পালাই পালাই করে। পারতপক্ষে খুব প্রয়োজন না হলে ও শহরে যায় না। এতদিন কাজটা মোটামুটি চলে যাচ্ছিল তবে ওস্তাদ মারা যাওয়ার পরই বিপত্তিটা বাড়ল। মানুষ নতুন নতুন খেলা দেখতে চায়,পুরনো ম্যাজিকে এখন তাদের আর মন ভরে না। মানিকেরও ইচ্ছে নতুন নতুন হাতের কাজ দেখানোর,তবে উপায় নেই। দর্শকদের খুশি করতে না পারলে মানিকের মনটাও কেমন বিমর্ষ হয়ে ওঠে,মেজাজটা খিঁচড়ে থাকে। ওস্তাদ মারা যাওয়ার পর মানিক খুব বড় একটা ধাক্কা খেয়েছিল। এ অঞ্চলের অনেকেই জানে মানিক আগে ছিঁচকে চোর ছিল। এই ওস্তাদই তাকে চুরির রাস্তা থেকে সরিয়ে এনে বিনা পারিশ্রমিকে ম্যাজিক শিখিয়েছে। ওস্তাদ বলতো-‘হাতের ভেল্কি,মগজের ভেল্কি যখন দেখাবিই তখন সেটা মানুষের লোকসান করে কেন করবি? বরং মানুষকে একটু আনন্দ দে। মানুষ বড় কাঁদছে।’ এই মানুষ বড় কাঁদছে কথাটা মানিকের খুব মনে ধরেছিল। ওর বাবা ছিল সরকারি অফিসের ঝাড়ুদার। খুব রাশভারী মানুষ। নিজের আদর্শে সদা স্থির মানুষটি রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। এরকম একটি মানুষের ছেলে হয়ে মানিক চোর,এটি সেভাবে মন থেকে মেনে নিতে পারত না মানিক। ছোটবেলায় পড়াশুনা হয়নি,তারপর বাজে পাল্লায় পড়ে এ লাইনে। বাবা কিছুই জানতেন না এসবের। মাঝে-সাঝে এর ওর মুখে নানা কথা শুনেও বিশ্বাস করতে চাইতেন না। বলতেন- ‘না রে না, আমার মাকু খুব সিধা ছেলে,ওসব করতেই পারে না’। তবে একদিন বাবার এই বিশ্বাসও টলে গেছিল। মানিক জানে,তারপর বাবা বেশিদিন বাঁচেন নি। ডাক্তার অন্য কথা বললেও মানিক জানত বাবার অসুখ আসলে কি ছিল। এই ঘটনার পর মানিক নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারে নি। ওস্তাদ যবে থেকে মানিককে নিজের জিম্মায় নিয়ে এসেছে তবে থেকে কখনো ও ওস্তাদকে ফাঁকি দেয়নি। সাধনায় মেতে গিয়েছে, শিল্পীর সাধনায়। এমনকি লাইনের বন্ধুদের সঙ্গেও কোনও যোগাযোগ রাখেনি। ভাগদার পুলিশদেরও যথাসম্ভব এড়িয়ে চলেছে। এতে করে প্রথমদিকে অনেক অসুবিধা হলেও পরে ওস্তাদেরই একপ্রকার হস্তক্ষেপে সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। শোনা যায় এই ওস্তাদের পরিচয় নিয়ে কেউ কোনও খবর জানে না এই চত্বরে। এক সময়ে এক বাজিকর গোষ্ঠী এই অঞ্চলে এসেছিল। ওস্তাদ তাদেরই লোক বলে অনেকের মত। অনেকে আবার বলে ওস্তাদ তাদের লোক নয়, আদতে লোকটি পুলিশের গুপ্তচর, অনেকে বলে আসলে কোনো তান্ত্রিক। ওস্তাদের পরিচয় কেউ নির্দিষ্ট ভাবে বলতে পারে না। মানিকেরও কোনদিন জানার সাহস হয়নি। ওস্তাদ লোকটি বড়ই গম্ভীর,তবে যখন মজায় মাতেন তখন একেবারে শিশু হয়ে যান। শিশুর মতো দু হাত পা ছড়িয়ে তখন তার হাসি থামানো দায়। আবার হটাৎ নিজেকে সামলে নিয়ে গম্ভীর হয়ে যান। মানিক তার কথায় কোনোদিন তার পূর্ব জীবনের কোনকিছুই শোনেনি। শুধু হয়েছে বিদ্যের কথা। কোনোদিন একটা পুরনো কোথাও নয়, আবেগের এক ফোঁটাও তার মধ্যে কোনোদিন দেখেনি মানিক। তবে মানিক যে চোর ছিল এটা কিভাবে জেনেছিলেন ওস্তাদ? এই সব ভাবলে মানিকের মাঝে মাঝে মনে হয় যে লোকটি তাহলে সত্যিই পুলিশের লোক। এই ওস্তাদ মারা যাওয়ার পর মানিক বাবার মৃত্যুর থেকেও বেশি শোক পেয়েছিল। লোকটি মানিকের জীবনে যা করেছে তা হয়ত তার বাবাও করেননি। মানিককে সঠিক পথে এনেছেন,যাদুর সমস্ত কলাকৌশল শিখিয়েছেন এমনকি নিজে পাত্রী বেছে বিয়েও দিয়েছেন। শুধু ওস্তাদ মারা যাওয়ার পর যে খুপরিতে তিনি থাকতেন সেটা অনুসন্ধান করে প্রচুর লটারির টিকিট পাওয়া গেছিল। এই লটারির টিকিট পাওয়ার সঙ্গে ওস্তাদকে একেবারেই মেলাতে পারে না মানিক। কিছুতেই ভাবতে পারে না যে ওস্তাদ লটারির টিকিট কাটতে পারে। এমনকি এই বিষয়ে মানিক কোনোকিছু জানে নি, কখনো। সেসমস্ত লটারির টিকিট পুড়ে গেছে আগুনে, ওস্তাদের মতোই।
২
এ অঞ্চলে এক নতুন ছোকরা ম্যাজিশিয়ানের আবির্ভাব ঘটেছে। মানিক শুনতে পায় তার নাকি নতুন নতুন সব ম্যাজিক। সকলের খুব ভালোও লাগছে। বিভিন্ন জায়গায় অনেক বায়নাও আসছে, তবে এ তল্লাটে এখনো মানিক শ্রেষ্ঠ যাদুকর। ওর মতো পসার আর কারো নেই। ম্যাজিক পুরনো হলেও মানিককে এখনো টপকে যেতে পারে নি কেউ। তবে মানিক জানে সেটা কেবল সময়ের অপেক্ষা। এমনিতে এখন ম্যাজিকের তেমন চল নেই। এই ক্লাব,ওর জন্মদিন,এই মেলায় যা কিছু হয়। বাদবাকি সময় মানিককে অন্যান্য নানা খুচরো কাজ করে সংসার চালাতে হয়। ওর সংসারে স্ত্রী এবং একটি ছোট্ট ফুটফুটে মেয়ে। সেই হল মানিকের সবথেকে নিয়মিত দর্শক। আগে স্ত্রীও ছিল। কতদিন কত মন কষাকষিতে মানিক ম্যাজিক করে জিতে নিয়েছে স্ত্রীর মন। এখন হয়ত বউ নিজের ম্যাজিকে বেশি বিশ্বাস করে মানিকের ম্যাজিক থেকে। সংসার চালানোর ম্যাজিক।তাই অন্যান্য কোনোকিছুতে হয়ত তার আর বিশ্বাস নেই। তেমন কথাও নেই। চুপ করা দুটো চোখ অনেক কিছু বলে যায় মানিককে,বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না। শুধু মাঝে মাঝে যখন মানিক খুব ভাঙা মন নিয়ে বাড়ি ফেরে বউ তখন আসতে করে এসে হাতটা ধরে,বলে –‘তুমি চিন্তা কোরো না। তোমার থেকে ভালো যাদু কেউ দেখাতে পারে না এ তল্লাতে। কথাটায় খুব একটা বিশ্বাস পায় মানিক কিন্তু তারপর আবার নিজেকেই নিজে অবিশ্বাস করতে শুরু করে। সত্যিই কি তাই? সত্যিই কি মানিকের মতো ম্যাজিশিয়ান এ তল্লাতে নেই? নাকি নানারকম রঙ্গ তামাশা করে দর্শকদের মাতিয়ে রাখা কলকাতা থেকে ম্যাজিক শিখে আসা ওই ছোকরা ম্যাজিশিয়ান একদিন তার ভাত মেরে দেবে। অত তো রঙ্গ তামাশা করতে পারে না মানিক। চুপ করে নিজের খেলা দেখিয়ে যায় এবং দর্শকদের হাততালি পেলে মাঝে সাঝে হয়ত একটু বেশিই উচ্ছ্বাস দেখিয়ে ফেলে। এই ধর্মটা আজকাল একটু বেশিই পেয়েছে ও। আনন্দ,উচ্ছ্বাস দেখিয়ে ফেলার ধর্ম। বউয়ের কথায় খুব বেশি করে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে ওর কিন্তু তবু সম্পূর্ণ ভাবে করতে পারে না। বোঝে সত্যিই নতুন একজন ওস্তাদের কাছ থেকে নতুন নতুন অনেক কিছু শিখে নেওয়া দরকার। অনেক নতুন নতুন খেলা দেখানোর সরঞ্জাম চাই। সে যে খেলাগুলো দেখায় সেগুলো পুরনো হয়ে গেছে অনেক,তাতে করে দর্শক এখন আর অবাক হয় না। দর্শকের সব মুখস্থ হয়ে গেছে। নিজেকে সব সময় সময়োপযোগী করে রাখা তো তার পেশায় খুব দরকারি, নইলে ফুরিয়ে যেতে হবে। কি করবে মানিক? তার বাড়ি থেকে কলকাতা রোজ যাতায়াত করা অসম্ভব, সেখানে গিয়ে যে কারো কাছে ন্যাড়া বেঁধে থাকবে, সেও সম্ভব নয়। এদিকে ঘর সংসার আছে, খুচরো কাজ আছে। ওদিকে গেলে প্রচুর টাকা নষ্ট, তার সঙ্গে ছোট ছোট কাজগুলো হারালে সংসার চলবে কি ভাবে? এত-সবকিছুর মধ্যে মানিক ভাবে এবার ছেড়েই দেবে ম্যাজিক দেখানো। একবার তো মনঃস্থির করেও ফেলেছিল। কিন্তু পারে নি। এই ম্যাজিকের হাত ধরেই ও ফিরে এসেছে অন্ধকার থেকে আলোতে, কীভাবে বেইমানি করবে সে ম্যাজিকের সঙ্গে? কীভাবে বেইমানি করবে ওস্তাদের সঙ্গে? না পারবে না মানিক।
৩
যে দোকানে অবসরে মানিক কাজ করে সেই বিকাশ বাবুর মেয়ের বিয়ে। মানিক এবং মানিকের পরিবার নিমন্ত্রিত। সকাল থেকে মানিকের ছোট্ট মেয়ে আনন্দে লাফাচ্ছে, বিয়েবাড়ির আনন্দে। মানিকদের জীবনে বড় বাড়িতে নেমন্তন্ন তো খুব কম আসে। বিকাশ বাবু খুব ভালো লোক। অনেক খাতির করে মানিককে বলেছে আসার কথা। এমনকি বলেছে যদি পারে তবে উপস্থিত কুটুমদের কয়েকটা ম্যাজিক দেখিয়ে দিতে। হাতের কারসাজি। এই কথায় মানিক খুব আপ্লুত। রাত্রিবেলা নিজেদের ক্ষুদ্র সামর্থ্যে যথাসম্ভব বিয়েবাড়ির উপযুক্ত হয়ে মানিকের পরিবার উপস্থিত বিয়েবাড়িতে। আরেকটু পরে আসলে কি ভালো হত? মানিকের মন ক্রমাগত খচখচ করতে থাকে। কিন্তু মেয়েকে একেবারে সামলানো যাচ্ছিল না। যাই হোক, বিকাশবাবু ওদের দেখে যে ভাবে এগিয়ে এসে আপ্যায়ন করেছেন তা খুব ভালো লাগে মানিকের। বিকাশবাবু খুব ভালো লোক। তিনি না থাকলে হয়ত মানিককে না খেয়েই মরতে হত। উনি মাথার উপর আছেন,বিপদে আপদে যথাসাধ্য সাহায্য করেন। নিমন্ত্রিত অনেকের মধ্যে একটি মুখ মানিকের খুব পরিচিত। থানার লোক। মানিকের পূর্ব জীবনের মুখ, মালের ভাগদার। ওই লাইন ছাড়ার পর মানিককে নানা ভাবে হেনস্থা করার চেষ্টা করেছে,তবে তেমন সুবিধা করতে পারেনি। প্রথম চোখাচোখি হওয়ার পর থেকেই মানিক যথাসম্ভব তাকে এড়িয়ে চলেছে,তাড়াতাড়ি এসব মিটিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছে বউ এবং মেয়েকে। কিন্তু তাদের কি হুঁশ আছে? এরকম, এতো বড় বিয়ে তারা আর কখনই দেখেনি। মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড়। সেইসমস্ত সামলে যখন মানিক দ্রুত সে জায়গা থেকে চলে যাওয়ার কথা ভাবছে তক্ষুনি বিকাশবাবু পথ আটকে দাঁড়ালেন। আরে কোথায় যাচ্ছ মানিক। লোকজন যে বায়না ধরেছে তোমার ম্যাজিক দেখবে, কয়েকটা হাতের ভেল্কি দেখিয়ে যাও না। মানিক বলল বিকাশবাবু আজ ছেড়ে দিন, শরীরটাও ভালো নেই, কোনও সরঞ্জামও নেই, অন্যদিন হবে ঠিক। বিকাশবাবু কোনও অজুহাত শুনলেন না, মানিকের হাত ধরে নিয়ে গেলেন সকলের সামনে, একটা জায়গায় সকলের একটা জটলা হয়েছে। তার মাঝে মানিককে নিয়ে সকলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। মানিক খানিক অপ্রস্তুত, কিন্তু বিকাশবাবুর কথা তো আর ফেলা যায় না। তাঁর মান সম্মানের বিষয়। কিন্তু সামনের দিকে তাকিয়ে মানিকের গলাটা হটাৎ আটকে গেলো। সেই লোকটি,মানে সেই পুলিশের লোকটি একেবারে মানিকের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, তীব্র এক ঘৃণার চোখে মেপে নিচ্ছে মানিককে আপাদমস্তক। তার পাশেই মানিকের বউ এবং মেয়ে। কি করবে মানিক। কিছু বলার নেই। ঘামতে ঘামতে মানিক শুরু করলো নানা হাতের কারসাজি। নানা প্রকার,যে ভাবে সে বোকা বানিয়ে এসেছে এতদিন দর্শকদের। সকলে দারুণ খুশি, দারুণ আনন্দ। এর মধ্যে প্রত্যেক বিয়েবাড়িতেই যা হয়, কারো কিছু একটা হটাৎ খোয়া গেছে,চোখের সামনে সবকিছু ভ্যানিশ হতে দেখে তার হটাৎ মনে পড়ল যে এতক্ষণ যেটা ছিল সেটা আর নেই। হয়ত বিয়েবাড়ির কোথাও তা আপন মনে গড়াগড়ি খাচ্ছে বহুক্ষণ। কিন্তু তার তক্ষুনি মনে পড়াতে সেই মুহূর্তেই একটা হুলুস্থুল না বাঁধালে হবে না। মানিকের সেই ম্যাজিকের মধ্যেই কথাটা উঠলো এবং তক্ষুনি সেই থানার লোক মানিকের দিকে তাকিয়ে একটা ব্যাঙ্গের হাসি হেসে বেশ জোরেই বলে উঠলো-‘কিরে মানিক খেলা দেখানোর আগেই আসল খেলা শুরু করে দিয়েছিস নাকি?’। কথাটা সকলেরই কানে গেল। প্রাথমিক ভাবে সফল হয়ে বক্তা থামল না,মানিকের ম্যাজিশিয়ান হওয়ার পূর্বের পরিচয় সকলের সামনে উল্লেখ করে সে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছল যে চোর কখনো চৌর্যবৃত্তি ছাড়তে পারে না। কথাটি কেউ জানত না। বিকাশবাবু থেকে মানিকের বউ অবধি কেউ না। কিন্তু মানিকের এক সমুদ্র জল ভর্তি চোখদুটো গেলো মেয়ের দিকে। একরত্তি মেয়েটি এতক্ষণ যত গর্ব ভরে,যত উচ্ছ্বাস নিয়ে বাবার ম্যাজিক দেখছিল,হটাৎ ওই ছোট্ট মুখটা যেন অন্য কোনও ম্যাজিকে গম্ভীর হয়ে গেছে। যেন বিশ্বাস করতে পারছে না এই নতুন ম্যাজিকটাকে।এক মুহূর্ত আর না দাঁড়িয়ে সেখান থেকে চলে গেল মানিক। কেউ কেউ অবিশ্বাসী সুরে তাকে আটকানোর কথা বললেন, বিকাশবাবু তাদের চুপ করিয়ে দিলেন। তিনি চেনেন মানিককে।
৪
‘মেয়ে ঘুমিয়েছে?’-বউকে জিজ্ঞেস করে মানিক। সংক্ষিপ্ত একটা ‘হ্যাঁ’ বলে পাশে শুয়ে পরে মানিকের বউ। মানিক ভাবে সে বউকে ঠকিয়েছে। ম্যাজিশিয়ান মানিকের বউ থেকে আজ থেকে তার পরিচয় চোরের বউ। মানিক হয়ত পূর্বের সব কথা বলে দিত আগেই। কেবল ওস্তাদের নিষেধে…তারপর নিজেও ভেবেছে কি লাভ,এইসব পুরনো কথা টেনে। যা বর্তমান তাই তো বাস্তব। কিন্তু আজ হয়ত নিজেকেও নিজে বিশ্বাস করতে পারছে না সে। একেবারে বিশ্বাস করতে পারছে না।
-কাল সকালে আমি কলকাতা যাবো বুঝেছ? দুই তিনদিন লাগবে ফিরতে।
-কেন হটাৎ কলকাতা কেন?
-রফিকের একটা গ্যারাজ আছে ওখানে,যদি কোনও কাজ পেয়ে যাই ওর কাছে,তবে তোমাদেরও ওখানে নিয়ে যাবো,এখানে আর থাকা হবে না।
-হুম
-আচ্ছা শোনো
-বলো
-তুমিও কি আমাকে…
কথাটা শেষ করলো না মানিক। উল্টোদিক থেকে একটা গুমোট কান্নার শব্দ ভেসে এলো। মানিক স্পর্শ করতে পারল না নিজের বউকে,বুকে জড়িয়ে নিতে পারল না,শুধু সেই অন্ধকারে নিজের হাতদুটো একবার দেখার চেষ্টা করলো। ভাবল এমন কোনও ম্যাজিক কেন সে এখনো শিখে উঠতে পারলো না যাতে করে মুছে ফেলা যায় তার পূর্বের পরিচয়। কেন সে এখন ম্যাজিক করে কেড়ে নিতে পারছে না তার মেয়ের, তার বউয়ের কষ্ট,অপমান? তাহলে কি ম্যাজিক বলে সত্যিই কিছু নেই পৃথিবীতে?
সেই রাতে আচমকা মানিকের মনে স্পষ্ট হয়ে যায় ওস্তাদের লটারির টিকিট কাটার কারণ। দূর থেকে কাদের কথাবার্তার সঙ্গে মানিকের ভাবনারা উড়ে যায় নক্ষত্রলোকের দিকে। মানিক প্রকৃতির যাদুতে চোখ বোজে। দু ফোঁটা চোখের জল গালের মালভূমি বেয়ে নেমে যায়,আর কোনও চিহ্ন রাখে না।
Tags: জলের ধর্ম, দীপ শেখর চক্রবর্তী
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।