[ভারতবর্ষে নৃত্যের আধুনিক ধারার প্রবর্তক হিসেবে উদয়শঙ্করকে মানা হয়।ভারতীয় নৃত্যশিল্পকে বিশ্বের দরবারে নিজ দক্ষতায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। সৃজনশীল নৃত্যজগতের নটরাজ তিনি।ভারতীয় নৃত্য ধারায় ‘ব্যালে’ পদ্ধতির সর্বশ্রেষ্ঠ প্রয়োগশিল্পী হিসেবে উদয়শঙ্করকে মানা হয়।আজও প্রবহমান তাঁর সেই নৃত্যধারাকে বহন করে নিয়ে যাওয়ার গুরুদায়িত্ব উদয়শঙ্কর নিজ হাতে যার কাঁধে তুলে দিয়েছিলেন তিনি শান্তি বসু।টানা ন’বছর উদয়শঙ্করের দলের ব্যালে মাস্টার ছিলেন তিনি। জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার হিসেবে পেয়েছেন গুরুর বিখ্যাত নৃত্য ‘কার্ত্তিকেয়’র পোশাক এবং সে নৃত্য উপস্থাপনের অধিকার। আন্তরিক এক আলাপচারিতার মাধ্যমে উদয়শঙ্করের নৃত্য ও জীবনের নানা দিক ‘গল্পের সময়’-এর কাছে তুলে ধরেছেন শান্তি বসু।আলাপনে অংশ নিয়েছেন উদয়শঙ্করের আর এক ছাত্রী ও শান্তি বসুর জীবনসঙ্গী সুনন্দা বসু। নৃত্য জগতের কিংবদন্তীদের মূল্যবান কথা শুনলেন তাদেরই সুযোগ্য ছাত্রী প্রতিভা দাস। সুনন্দা বসু আলোচনায় যোগ দিয়েছেন কিছু সময় পরে।]
প্রতিভা দাসঃ নৃত্যের আধুনিক ধারার প্রবর্তক হিসেবে উদয়শঙ্করকে মানা হয়। তিনি ছিলেন নৃত্যালোকের রাজপুত্র। আপনারা শিষ্য হিসেবে অনেক কাছ থেকে দেখেছেন তাঁকে। কেমন মানুষ ছিলেন তিনি?
শান্তি বসুঃ উনি ছিলেন খুবই সহজ-সরল। প্রত্যেকের সঙ্গে ওনার ব্যবহার এত ভাল ছিল যে সবাইকে উনি নমস্কার করতেন। সে যে কেউ হোক, ড্রাইভার হোক, কাজের লোক হোক সকলকেই নমস্কার করতেন। এত বড় মাপের মানুষ অথচ মনটা ছিল সহজ সরল।এককথায় অসাধারণ।
প্রতিভা দাসঃ আপনারা যখন এত বড় মাপের মানুষের সান্নিধ্যে এলেন তখন, প্রথম অভিজ্ঞতাটা কী ছিল?
শান্তি বসুঃ ওনার কাছে আমি প্রথম যাই ১৯৫৮-তে। পিনাকী মাস্টারমশাই বলে ওনার এক ছাত্র ছিল – উনি আলমোড়ায় ছিলেন। ওরই এক ছাত্র ব্রহ্মগোপাল আমায় এসে একাডেমিতে বললেন (তখন একাডেমি নামে ছিল, এখন রবীন্দ্রভারতী হয়েছে। আমি তখন একাডেমিতে ক্লাস করি) চল উদয়শঙ্করের দলে অডিশন দিবি। ওরা আফ্রিকা যাবে, ছেলেমেয়ে চাইছে। তো ব্রহ্ম, আমি, শ্রীনৃপেন (ওর শ্বশুর) ও জয়শ্রী (ওর স্ত্রী) একসঙ্গে অডিশন দিলাম। অডিশনে ওর শ্বশুরমশাই আর আমি পাশ করলাম। কিন্তু কী মনে হল তিন বছরের একাডেমি শেষ না করে আমি আফ্রিকা ট্যুরে যেতে চাইলাম না। আমাদের অডিশন নিয়েছিলেন অমলাশঙ্কর আর উদয়শঙ্করের ব্যালেমাস্টার পাপ্পু রাঘবন। না যাওয়ার বিষয়টি ব্রহ্মকে বলতেই সে বলল তুই নিজে গিয়ে বল। তখন ওনার দলের ম্যানেজার ছিলেন অনিল চ্যাটার্জি। ওনাকে গিয়ে পুরো বিষয়টা বললাম। উনি বললেন ঠিক আছে দাদাকে বলে দেব। সবাই উদয়শঙ্করকে ‘দাদা’ বলে ডাকতেন। আমি কখনও উদয়শঙ্করকে চাক্ষুস দেখি নি। হঠাৎই তাঁকে দেখার খুব ইচ্ছে হল। অনিল বাবু বললেন অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া উনি দেখা করেন না। কিন্তু আমিও কেমন যেন নাছোড়বান্দা, বললাম, একবার চোখের দেখা দেখেই প্রণাম করে চলে যাব। কী মনে হল, উনি দাদাকে গিয়ে বললেন।কী ভেবে যেন আমার সঙ্গে দেখা করতে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। উদয়শঙ্কর এলেন কালো হাফ প্যান্ট আর স্যান্ডো গেঞ্জি পরে। আমার সামনে যখন এসে দাঁড়ালেন মনে হল যেন আমার ভেতরটা দেখে ফেলছেন। কী অপূর্ব রূপ তাঁর। অ্যাকাডেমির কথাটা জানাতেই উনি তাতে সম্মতি দিলেন এবং জানতে চাইলেন আমার পাঠক্রমের কথা। বললেন, আপনি কী কী সাবজেক্ট নিয়েছেন? আমি বললাম মণিপুরী, ভরতনাট্যম, কথাকলি। আর কথাকলি অনার্স নিয়েছি। থার্ড ইয়ারে মণিপুরী আর কথাকলি দুটো সাবজেক্ট ছিল। উনি বললেন, খুব ভাল। পাঠক্রম শেষ করেই আসুন। এই ছিল আমার প্রথম দর্শনের অভিজ্ঞতা।
প্রতিভা দাসঃ আপনি অডিশনে চান্স পেলেন । তাঁর সাক্ষাৎ পেলেন, অথচ উদয়শঙ্করের দলে জয়েন করতে পারছেন না – এই সময় আপনার মনের অবস্থাটা কেমন হল?
শান্তি বসুঃ সত্যি বলতে কি মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু আমি তখন ঠিকই করে নিয়েছিলাম যে কোনও পারফরমেন্স করব না। সত্যি সত্যি অনেক অফার থাকলেও করিনি। সোলোও করি নি। এরপর যখন ফাইনাল ইয়ার তখন ফের তাঁর কাছে গেলাম। আমাদের যিনি কথাকলি শেখাতেন, শঙ্করণদা – উনি আমাকে একটা চিঠি দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন রাঘবনদার কাছে। ওখানে একটা নিয়ম ছিল দুপুর একটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত রিহার্সাল হবে। আমি গিয়ে বললাম আমি চারটের পর রিহার্সালে আসতে পারি। ওখানে চারটে থেকে সাড়ে চারটে পর্যন্ত টিফিন ব্রেক ছিল। রাঘবনদা বললেন, দাদা (উদয়শঙ্কর) এ প্রস্তাবে রাজি হবেন না। তবুও উনি ‘দাদাকে বলে দেখি’ বলে ভেতরে চলে গেলেন। ফিরে এসে বললেন, দাদা তোমাকে ডাকছেন। তখন ১৯৬০ সালের শেষের দিক। উনি তখন রবীন্দ্রনাথের ‘সামান্যক্ষতি’র রিহার্সাল করাচ্ছেন। আমাকে রাঘবনদা কয়েকটা মুভমেন্টস করে দেখাতে বললেন। আমি দেখালাম। উনি বললেন আরও বড় বড় মুভমেন্ট করতে হবে। সেই হল শুরু।
প্রতিভা দাসঃ এখন তো পাড়ায় পাড়ায় নাচের স্কুল। ছেলে-মেয়েরা রিয়েলিটি শো-এ অংশগ্রহণের জন্য নাচ শিখতে চায়। আপনাদের সময় নাচ শেখার পদ্ধতি কেমন ছিল? কীভাবে শেখাতেন তিনি। আপনাদের সাধনা কেমন ছিল?
শান্তি বসুঃ আমি যখন প্রথম নাচ শিখতে আসি তখন রোজগার করব বা কিছু করব এমন ভাবনা মাথায় ছিল না। তখন ‘ঝনক্ ঝনক্ পায়েল বাজে’ দেখে খুব ইনস্পায়ার্ড হয়েছিলাম। তখনই মনে হল নাচ করতে হবে, নাচ শিখতে হবে। ওই আমার শুরু। আমার বাড়ির অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না কিন্তু, তবু আমি টাকা-পয়সার চিন্তা করিনি। ভাবিওনি যে এটা আমার প্রফেশন হবে। তারপরতো উদয়শঙ্করের কাছে গেছি। কখন যে পেশা হয়ে গেছে টের পাইনি।
প্রতিভা দাসঃ ক্ল্যাসিকাল ডান্স করতে গেলে নিয়মিত প্র্যাকটিস করতেই হয়, আপনারাও কী নিয়মিত অনুশীলন করতেন নাকি রিহার্সালের মধ্যে দিয়েই তা তুলে নেওয়া হত?
শান্তি বসুঃ আসলে আমি প্রথমে গণনাট্য সংঘ করতাম। সেখানে পানু পাল নাচ শেখাতেন, ব্যালে করতেন। ওখানেই হীরু নামের এক ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ। আমরা হীরুদা বলে ডাকতাম। তিনি উদয়শঙ্করের দলে কাজ করতেন। তিনি একদিন আমায় বললেন, তুমি ‘একাডেমি’তে ভর্তি হয়ে যাচ্ছ না কেন?’ আমি বললাম – আমায় কী নেবে? তখন তিনি বললেন, অ্যাপ্লিকেশন তো জমা দাও। স্পেশাল ট্যালেন্ট থাকলে ওরা নিয়ে নেবে। ওখানে ডিগ্রি দেওয়ার কথা ছিল। তা যাই হোক অ্যাপ্লাই করার পর ডাকও পেয়ে গেলাম। ‘একাডেমি’টা হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ির সীমারেখার মধ্যে। ভর্তি হয়ে গেলাম। আমাদের কথাকলি, ভারতনাট্যম ও মণিপুরী এই তিনটে ক্ল্যাসিকাল শেখান হত ‘একাডেমি’তে। নিয়মিত ক্লাস হত। আমাদের কথাকলি শেখাতেন শঙ্করণদা। গুরু শিবশঙ্করণ। ভরতনাট্যম শেখাতেন গুরু মারুথাপ্পা পিল্লাই আর মণিপুরী শেখাতেন গুরু নদীয়া সিং আর অভিনয় শেখাতেন উদয়শঙ্করের গুরু শঙ্করণ নামুদ্রির ছেলে গুরু কৃষ্ণান নামুদ্রি। আমরা সারাদিন নাচের মধ্যেই থাকতাম। বাড়ি ফিরেও প্র্যাকটিস করতাম। এর বাইরে কিছুই করতাম না। কখনও বাইরে শো’ও করতে যাইনি। এভাবেই গোটা দিনটাই ছিল প্র্যাকটিসের। গোটা দিনটাই ছিল নাচের।
সুনন্দা বসুঃ (আলোচনায় অংশ নিয়ে) তোমার প্রশ্নের সুত্র ধরেই নৃত্য শিক্ষা, প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে একটা কথা বলি। ওই যে তুমি বলছিলে না নৃত্যালোকের রাজপুত্র উদয়শঙ্কর। সত্যিই তিনি তাই ছিলেন। দেখতেও যেমন রাজপুত্রের মত ছিল, স্বভাব-চরিত্র,আচার-ব্যবহারও ছিল তেমন। মানুষ হিসেবে খুবই উঁচু দরের ছিলেন। শিল্পী এবং শিক্ষক হিসেবেও খুব উঁচুদরের ছিলেন। প্রশিক্ষক হিসেবে ওনার যে অসামান্য দক্ষতা ছিল তা আমি প্রত্যক্ষ করেছি, অনুভব করেছি। একথা তিনি নিজেও মাঝেমধ্যে বলতেন। তিনি বলতেন লোকে আমাকে নৃত্যশিল্পী হিসেবেই জানে, কিন্তু শিক্ষক হিসেবে কেবলমাত্র তোমরাই জান। উনি আমাদের কাছ থেকে অনেক কিছু আদায় করে নিতেন। ওনার টেকনিকটাই ছিল আলাদা।
প্রতিভা দাসঃ উদয়শঙ্করের সঙ্গে আপনার দেখা হওয়ার অভিজ্ঞতা যদি বলেন।
সুনন্দা বসুঃ ১৯৬২-তে এঁরা (উদয়শঙ্করের সঙ্গে শান্তি বসুরা) যখন ফিরে আসলেন তখন দাদা (উদয়শঙ্কর) দলটা ভেঙে দিলেন। শিল্পীদের বিশ্রামের জন্যই হোক বা আর্থিক অসুবিধের জন্যই হোক (উদয়শঙ্কর দলের শিল্পীদের মান্থলি পেমেন্ট করতেন) তিনি প্রতিবারই দল ভেঙে দিতেন। সেই সময় ভেঙে যাওয়া দলের শিল্পীরা মিলে আই বি টি এ নামে একটি দল তৈরি করেছিল। আমি সেই দলে যোগ দিই।১৯৬৫-তে উদয়শঙ্কর যখন নতুন করে দল তৈরি করলেন তখন এই আই বি টি- শিল্পীরা পুরো তাতে জয়েন করে গেল। আমি এইভাবেই দাদার সান্নিধ্যে আসি। প্রথম যেদিন ওনার রিহার্সালে গেলাম আমার তো হাত পা কাঁপছে। অতবড় মানুষ সম্পর্কে তখন ওদের (শান্তি বসু) কাছে অনেক কথা শুনেছি। কিন্তু মুখোমুখি তো কখনও হই নি। সত্যি বলতে কী গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছিল না।
প্রতিভা দাসঃ তাঁর কাছে শিখলেন কীভাবে। তিনি কীভাবে প্রশিক্ষণ দিতেন?
সুনন্দা বসুঃ যখন জয়েন করলাম তখন কিন্তু আসলে কী করতে হবে তা তিনি বলেন নি। কী করে দাঁড়াতে হবে, কী করে বডিটাকে তৈরি করতে হবে, মুভমেন্টস লাইট করার জন্য কী সব স্টেপস করতে হবে এ’সবগুলোই উনি আমাদের শেখাতেন। এরপর আস্তে আস্তে যখন কী করতে হবে বললেন তখন তিনি নাচ শেখানোর পর্ব শুরু করলেন। তবে উনি নিজে কখনোই আমাকে নাচ শেখান নি, সেটা শান্তি বসুই শিখিয়েছেন। তবে উনি কম্পোজিশন দেখতেন। সকলকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে আলাদা একটা মিউজিক চালিয়ে বলতেন, সুনন্দা তুমি এটা কম্পোজ করো। ওটা যখন কম্পোজ করে দেখাচ্ছি তখন উনি বলতেন এই মুভমেন্টস আগে দাও, ওই মুভমেন্টস পরে দাও। এটার সময় মাথাটা ওদিকে রাখ আর এটার সময় শরীরটা ওদিকে রাখ। এই করতে গিয়ে আমি দেখেছি পুরো নাচের চেহারাটাই অন্যরকম হয়ে যেত। তখন মনে হত না যে ওটা আমার কমপজিশন, মনে হত ওটা দাদাই (উদয়শঙ্কর) করেছেন। দাদা শেখাতেন এইভাবে। ভেতরের সুপ্ত জিনিসটা আদায় করে নিতেন।
শান্তি বসুঃ এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলি, যখন ‘চণ্ডালিকা’র প্রথম কমপোজিশনটা হয় তখন তিনি সবাইকে ঘর থেকে বের করে দিলেন। এবার এক এক করে ডেকে বললেন, তুমি ‘নব বসন্তের দানের ডালি’- গানের এই লাইনটা কমপোজিশন করো। এবার সবাই এক এক করে করছে। সবাইকে উনি বললেন ‘তুমি যেটা করলে সেটা মনে রাখো’। এবার যখন সব শেষ হল তখন গানের সঙ্গে সকলের আলাদা আলাদা কমপজিশন একটা দারুন দৃশ্যের সৃষ্টি করল। এরকমটাই দাদা করতেন। উনি খুব বড় শিক্ষক ছিলেন।
প্রতিভা দাসঃ আপনারা উদয়শঙ্করের সঙ্গে দেশে-বিদেশে বহু অনুষ্ঠান করেছেন। আজ থেকে বহু বছর আগে হলেও সে সব স্মৃতি নিশ্চয়ই টাটকা। সেইসব অভিজ্ঞতার কথা যদি শোনান।
শান্তি বসুঃ সে তো অনেক কথা। তখন ১৯৬২ সাল। আমি উদয়শঙ্করের সঙ্গে আমেরিকা গেছি। সেই যাওয়াটা খুব অদ্ভূত ছিল। প্রথমে জাহাজে করে সুয়েজ ক্যানাল পার হয়ে গেলাম ইতালিতে। সেখানে মেসিনা দ্বীপপুঞ্জ, নেপলস, ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরি দেখলাম। সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল ওই সব সফরে শঙ্কর ফ্যামিলির সঙ্গে একই গাড়িতে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম আমি। জানিনা কেন আমার এমন সৌভাগ্য হয়েছিল। ওখান থেকে জেনোয়া গেলাম। সেখান থেকে ট্রেনে গেলাম প্যারিস। সেখান থেকে ট্রেনে একটা জায়গায় গিয়ে ইংলিশ চ্যানেল পার হলাম। ওখান থেকে ট্রেনে গেলাম লণ্ডন। ওখানে কদিন থাকার পর প্লেনে গেলাম নিউইয়র্ক। উদয়শঙ্করের এই মার্কিন সফর অ্যারেঞ্জ করেছিলেন এইচ হুরক। ওখানে টেলিভিশন প্রোগ্রাম হয়েছিল। আর এই সব অনুষ্ঠানে শঙ্কর ফ্যামিলির সঙ্গে আমাকেও নেওয়া হয়েছিল। আমি তখন সকলের ছোট। গুণীজনদের মধ্যে আমার বেশ লজ্জাই লাগছিল। তো সেই সফরে আমাদের প্রথম অনুষ্ঠান হয় সিয়াটেলে। আসলে এই অনুষ্ঠানটি ছিল ভারত সরকারের তরফে। ওখান থেকে আমরা গেলাম ভ্যাঙকুভার। সেখানে শো করলাম। সে সময় উদয়শঙ্কর নিজে নাচ করছেন। ইন্দ্র করছেন, বুদ্ধ করছেন, লেবার মিশনারি করছেন। ওনার সঙ্গে আমরাও অনুষ্ঠান করছি। এটা আমার একটা সৌভাগ্য। দীর্ঘ পাঁচ মাস আমরা ট্যুর করেছিলাম। দু-মাস আমেরিকা আর তিন মাস ইউরোপ। আর ওখানে একটা বিষয় উল্লেখ করার মতো যে, শোয়ের পরে হাততালি আর থামত না। এর পর তিন-বার আমি আমেরিকায় অনুষ্ঠান করতে গেছি, কিন্তু এরকমটা দেখিনি। আসলে উদয়শঙ্কর গিয়েছিলেন ভারতবর্ষকে তুলে ধরতে। সেখানে দর্শক প্রায় সকলেই বিদেশী। পরবর্তীকালে আমি যখন গেছি তখন বেশিরভাগটাই বাঙালি দর্শক। উদয়শঙ্করের সঙ্গে যখন গেছি সপ্তাহে চার-পাঁচদিন শো হত। মাঝখানে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যাওয়ার জন্য, যাতায়াতের সময় দিতে হত। সেখানের বিভিন্ন শো-তে উদয়শঙ্কর নামে যে কী হত কল্পনা করা যায় না। এরপর গেলাম ইউরোপ ট্যুরে। সেখানে গেলাম যুগোস্লাভিয়া, পোল্যান্ড, জার্মানি(বার্লিন, বন ) ইত্যাদি জায়গায়। ইউরোপে ইংল্যান্ড (লন্ডন) থেকে আমরা গেলাম নেদারল্যান্ড। আমস্টারডামে শো করলাম, টিভি শো করলাম। তারপর জার্মানি গেলাম। এরপর যুগোস্লাভিয়া, পোল্যান্ড। উদয়শঙ্করের অনুষ্ঠান দেখতে ওখানকার দর্শকদের কী উৎসাহ। কী আগ্রহ। আমরা হলিউডেও শো করেছি। সেখানকার লোকে কীভাবে যে আমাদের শো-এর প্রসংসা করেছেন তা ভাবা যায় না।
এবার আর একটু আগের কথা বলি। সেটা ১৯৬১ সাল। সেই সময় আমি উদয়শঙ্করের দলে যোগ দিই। রবীন্দ্রনাথের জন্ম শতবর্ষে উদয়শঙ্কর ‘সামান্য ক্ষতি’ করছেন। কলকাতার মহাজাতি সদনে আর রবীন্দ্রমেলায় অনুষ্ঠান করে আমরা দিল্লি চলে গেলাম। আইফেক্স হলে ‘সামান্যক্ষতি’ দেখতে দর্শক কারা কারা ছিলেন জানলে অবাক হতে হবে। ছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান, প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু, ইন্দিরা গান্ধী সহ বিখ্যাত মানুষজন। আর এই নৃত্যনাট্যের মিউজিশিয়ান কারা ছিলেন? ছিলেন রবিশঙ্কর, আলি আকবর, আল্লারাখা, লক্ষ্মীশঙ্কর, অলোকনাথ দে,শিবকুমার শর্মার মত খ্যাতনামা শিল্পীরা।মিউজিক পরিচালনা করেছিলেন রবিশঙ্কর। এতে কোন রবীন্দ্রসংগীত ব্যবহার করা হয়নি।কিছু হামিং ব্যবহার করা হয়েছিল। যেটা করেছিলেন স্বয়ং রবিশঙ্কর,লক্ষ্মীশঙ্কর। সেই ‘সামান্যক্ষতি’ আমরা নিউইয়র্কেও করেছি।
সুনন্দা বসুঃ দাদার (উদয়শঙ্কর) সঙ্গে আমরা প্রথম শো করি মহাজাতি সদনে। সেটা ছিল ‘প্রকৃতি আনন্দ’। একটানা দেড়-দুমাস শো করেছি। শনি-রবি দুটো করে শো। এমন অভিজ্ঞতা আমাদের কখনও হয় নি। আশেপাশে বেশ কিছু শো করার পর দাদার সঙ্গে দু-মাসের ট্যুরে আসাম গেলাম। কিন্তু ওখানে দাদার স্ট্রোক হয়ে যাওয়ায় ফিরে আসতে হল। এরপর উনি সুস্থ হয়ে ফের খবর পাঠালেন। বললেন আমাদের আমেরিকা নিয়ে যাবেন শো করতে। বললেন একেবারে ইস্ট-কোস্ট থেকে ওয়েস্ট-কোস্ট অবধি তোমাদের নিয়ে যাব। দাদার ইচ্ছে ছিল আমাদের ইউরোপ দেখানোর, সেখানকার কালচার দেখানোর। কিন্তু তা সম্ভব না হওয়ায় বললেন চলো আমেরিকা দেখে আসবে। সেটা ১৯৬৮ সাল। এর জন্য আমরা টানা তিনমাস রিহার্সাল দিয়ে ছিলাম। আমেরিকায় প্রায় প্রতিদিনই শো হত। রাতে শো শেষ করে সেই রাতেই এক শহর থেকে আরেক শহরে চলে যেতাম। শো শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মালপত্র চলে যেত ট্রাকে করে, আর আমাদের জিনিসপত্র আমাদেরই সঙ্গে করে বয়ে নিয়ে যেতে হত। এরকম করে আমেরিকায় আমরা ৩৪টি শহরে শো করেছিলাম। তাও আমাদের দুটো শো করা সম্ভব হয় নি। উদয়শঙ্করের অনুষ্ঠানে বিপুল অডিয়েন্স দেখে অবাক লাগত। এর মধ্যে একজন কী দু-জন হয়ত বাঙালি। বাকি সবাই মার্কিনী। বয়স্ক দর্শকরাও আসতেন। প্রতিটি অনুষ্ঠানের ছবির অ্যালবাম এনে দাদার সই করাতেন। দাদা হেসে বলতেন, দেখো কী অদ্ভূত, কী অদ্ভূত। উদয়শঙ্করকে তারা যেন দেবতার মত জ্ঞান করত। মঞ্চে দাদার ‘ইন্দ্র’ দেখে অবাক হতাম। যেন দেবতাই স্বর্গ থেকে নেমে এসেছেন।
শান্তি বসুঃ আমরা যখন ৬২’তে আমেরিকা গেলাম তখন মাদ্রাজে নিয়ে গেলেন। ১৪ নম্বর পোগ রোডে শিবাজী গণেশনের বাড়ির পাশেই দাদার একটা বাড়ি ছিল। বিশাল হল ঘর ছিল। আমাদের ওখানে চার মাস রিহার্সাল হল। দুপুর একটা থেকে রাত্রি আটটা পর্যন্ত রিহার্সাল। শেষের দিকে রোববারের ছুটিও বাদ হয়ে গেল, সময়ও বেড়ে গেল। একটা মুভমেন্টস যতক্ষণ না পারফেকশনে পৌঁছাছে ততক্ষণ উনি রিহার্সাল করিয়েই যেতেন, করিয়েই যেতেন। ওনার কোনো ক্লান্তি ছিল না। সেই তিন-চার মাসে আমি অনেকটা তৈরি হয়ে গেলাম। সেটা ছিল আমার জীবনের মহামূল্যবান সময়। ৬২’তে যখন আমেরিকা যাই তখন আমার ভাল নাম ছিল অমরেন্দ্র বসু। ৬৮’তে যখন আমেরিকা গেলাম তখন দাদা বললেন না তুমি শান্তি নামটাই ব্যবহার কর। সেই থেকেই হলাম শান্তি বসু। ৬৬-এ উনি আমাকে ‘ব্যালে মাস্টার’ করেছিলেন। আমার আগে ‘ব্যালে মাস্টার’ ছিলেন কথাকলি শিল্পী পাপ্পু রাঘবন। উদয়শঙ্করের সিনেমা ‘কল্পনা’তেও অভিনয় করেছেন তিনি। আমার সৌভাগ্য আমি ছিলাম তাঁর দলে প্রথম বাঙালি ব্যালে মাস্টার।
সুনন্দা বসুঃ দাদা এই যে চার মাস ওদের মাদ্রাজে নিয়ে গিয়ে রেখেছিলেন, আমার মনে হয় শিল্পীদের কাছ থেকে পুরোটা নেওয়ার জন্যই তিনি এটা করেছিলেন। এমনিতে কলকাতায় থাকলে রিহার্সাল করার সময় শিল্পীদের পারিবারিক সমস্যা, যাতায়াতের সমস্যা লেগেই থাকে।
শান্তি বসুঃ একদম ঠিক কথা। এখানে (কলকাতায়) হত কী, এ আসতে পারল না শরীর খারাপের জন্য, ওর আসতে দেরী হয়ে গেল। এই সব দেখেই উনি আমাদের নিয়ে চলে গেলেন মাদ্রাজে। তখন পুরো টাইমটাই তো দাদার (উদয়শঙ্কর)। সেখানে বন্ধু-বান্ধব নেই, আত্মীয় স্বজন নেই। খালি খাও, ঘুমোও। আর নাচ করো। সে সময় কী যে পরিশ্রম করেছি তা কল্পনা করা যায় না।
প্রতিভা দাসঃ শুনেছি যে উনি খুব সময় মেনে কাজ করতেন। এ বিষয়ে আপনাদের অভিজ্ঞতা কেমন?
শান্তি বসুঃ খুবই সময় মেনে চলতেন। কী রিহার্সাল, কী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান যদি ৬টায়, তো সেই ৬টাতেই শুরু হত। এ ব্যাপারে একটা কথা মনে পড়ছে, যদিও এটা আমার শোনা কথা। তখনও আমি উদয়শঙ্করের দলে জয়েন করিনি। সেবার রাজভবনে অতিথি হিসেবে উপ্সস্থিত ছিলেন বুলগানিন, ক্রুশ্চেভ। ছিলেন জওহরলাল নেহরু, বিধানচন্দ্র রায়। ডিনারের পর আটটার সময় অনুষ্ঠান। এদিকে আটটা বাজতেই বেল বাজিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করে দিয়েছেন উদয়শঙ্কর। খবর পেয়ে বিধান রায় তাড়াতাড়ি উদয়শঙ্করকে থামান। বলেন অতিথিদের এখনও ডিনার শেষ হয় নি। শেষে ডিনার পর্ব মিটতে ফের অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরকমই ছিলেন উদয়শঙ্কর। যদিও এটা আমার শোনা কথা। তাঁর এই পথ ধরে আমরাও জীবনে সময় মেনে সব কিছু করার চেষ্টা করেছি।
প্রতিভা দাসঃ ভারতীয় নৃত্যাদর্শে ব্যালের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যে প্রভাব তাতে ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও উদয়শঙ্কর। ভারতীয় নৃত্য ধারায় ‘ব্যালে’ পদ্ধতির সর্বশ্রেষ্ঠ প্রয়োগশিল্পী হিসেবে উদয়শঙ্করকে মানা হয়। ভারতীয় মার্গনৃত্য থাকা সত্বেও উদয়শঙ্করের এই ফর্ম ভাঙা আধুনিক নৃত্যশৈলী সৃষ্টি কতটা সময়োপযোগী ছিল বলে আপনাদের মনে হয়? যেখানে উদয়শঙ্কর নিজেই বলেছেন, ‘আর্টকে যদি জীবন্ত রাখতে হয় তাহলে তাকে গতিশীল জীবনের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। অনড় ব্যাকরণের সূত্রের সঙ্গে বাঁধলেই তার মৃত্যু অনিবার্য’।
সুনন্দা বসুঃ আসলে দাদা (উদয়শঙ্কর) তাঁর নৃত্যজীবন শুরু করেছিলেন আনা পাভলোভার সঙ্গে। সেখানে তিনি ব্যালের নানা কিছু শিখেছিলেন, দেখেছিলেন। নিজে যখন ‘দল’ গড়লেন তখন সেগুলো তিনি প্রয়োগ করলেন। দাদা নিজেই বলতেন এখানে কিন্তু পাশ্চাত্য জিনিস কিছু নেই। আমি দেশী জিনিসের সঙ্গে ব্যালে মেশাচ্ছি। কোন বিদেশি মুভমেন্টস কিন্তু মেশাচ্ছি না। ব্যালে বললেও (আমরা বলি) তা ছিল উদয়শঙ্করের নিজস্ব। হয়ত ব্যালেটা দাদার ভেতরে ছিল। তবে দাদা মানতেন না যে তিনি ব্যালে করছেন।
শান্তি বসুঃ আসলে ‘ব্যালে’ বলা হলেও সমস্ত নৃত্য শৈলী ছিল ভারতীয়। উনি পাশ্চাত্য নৃত্য রীতি গ্রহণ করেননি। উনি ব্যালের ফর্মটাকে নিয়েছেন। তিনি তার নৃত্যরীতিতে কথাকলি, মণিপুরী সহ সমস্ত ভারতীয় নৃত্যকলা থেকে আহরণ করে তার নিজস্ব শৈলী তৈরি করেছেন। তার নাচে পোশাক, আলো, মিউজিক সব মিলিয়ে এক দারুন উপস্থাপনা দর্শকদের সামনে হাজির হত – যা দর্শকদের মোহিত করে রাখত। এই জন্যই তিনি এত লোকপ্রিয় হয়েছেন। তাঁর আলোর ব্যবহার ছিল অসাধারণ। ‘সামান্য ক্ষতি’ যখন প্রথম মঞ্চস্থ হয় তার আগের দিন মহাজাতি সদনে আমাদের সারারাত রিহার্সাল হল। দাদা আমাকে বললেন, বসে বসে সব দেখ, অনেক কিছু শিখতে পারবে। শেষে আগুন লাগার দৃশ্য নিয়ে কতরকম পরীক্ষা নিরীক্ষা হল। অবশেষে ঠিক হল ছেলেরা ধুতি পরে খালি গায়ে হাতে রুমাল নিয়ে আগুন লাগার দৃশ্যে অভিনয় করবে। পারফেকশন না হওয়া পর্যন্ত ছাড়তেন না। সামান্য ক্ষতিতে আগুনে বাড়িঘর পুড়ে যাওয়ার পর গ্রামবাসীদের মধ্যে একটা আলোর ব্যবহার করা হত যা দর্শকদের অবাক করত। তাপস সেনও ওই আলো দেখে আশ্চর্য হয়েছিলেন।
সুনন্দা বসুঃ আমাদের এটা মনে আছে যে ওই আলো কীভাবে আর কোথা থেকে আসছে তা জানতে কৌতূহলী হয়ে বেশ কয়েকবার মঞ্চের ভেতর দেখতেও গিয়েছিলেন তাপস সেন। আসলে তার সমেতই ওই লাইটগুলো গ্রামবাসীরা চাদরের ভেতর ঢুকিয়ে রাখত – যা এক অদ্ভূত আলো দিত। তারপর নাচ শেষ হলে ওই তার সমেতই নিয়ে চলে যেত শিল্পীরা। ফলে ওপর থেকে আলোর উৎসটাই ধরা যেত না।
প্রতিভা দাসঃ আপনি(শান্তি বসু) ছিলেন উদয়শঙ্করের সু্যোগ্য শিষ্য। তাঁর বিখ্যাত প্রযোজনা ‘কার্ত্তিকেয়’র পোশাক এবং সে নৃত্য উপস্থাপনের অধিকার আপনি পেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে আপনার উপস্থাপনায় ‘কার্ত্তিকেয়’র পরিবেশনাও আসাধারণ। গুরুর কাছে শিষ্যের এই অমূল্য প্রাপ্তি নিয়ে যদি কিছু বলেন।
শান্তি বসুঃ সত্যিই এ প্রাপ্তি অমূল্য।ওনার কাছ থেকে আমি যে সহায়তা, ভালবাসা, সুযোগ, সম্মান পেয়েছি তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। উনি যে আমাকে ব্যালে মাস্টার হিসেবে মনোনীত করেছিলেন তা তো আগেই বলেছি।উনি তাঁর বিখ্যাত প্রযোজনা ‘কার্ত্তিকেয়’র মুকুটটি আমায় পরিয়ে দিয়েছিলেন , অর্থাৎ ‘কার্ত্তিকেয়’ পরিবেশনার অধিকার দিয়েছিলেন।এছিল আমার কাছে পরম পাওয়া। পরে অবশ্য ওই মুকুট ফেরত দিই।কিন্তু ওই একই ধরনের পোশাক ও মুকুট আমি বানিয়ে নিই। আমি দেশে- বিদেশে ‘কার্ত্তিকেয়’ পরিবেশন করেছি। বহু মানুষের সমাদর পেয়েছি।এখানে একটা কথা উল্লেখ করছি, দাদা মুকুটটি পরিয়ে দিয়ে বললেন- এই নাচটা আমাকে আমার গুরু শঙ্করণ নামুদ্রি শিখিয়ে ছিলেন,এটা আমি তোমাকে দিয়ে গেলাম।
প্রতিভা দাসঃ উদয়শঙ্করের নৃত্যশৈলীর মাধ্যমেই আপনারা অসাধারণ সব নৃত্যনাট্য প্রযোজনা করেছেন সাধারণ মানুষ,দর্শক এগুলোকে কীভাবে নিয়েছিলেন?
সুনন্দা বসুঃ আমাদের নিজেদের সংস্থা ‘নৃত্যাঙ্গন’ উদয়শঙ্করের নৃত্যশৈলীর মাধ্যমেই ‘ তাসের দেশ’, ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘চণ্ডালিকা’, ‘শ্যামা’,’বুদ্ধ’র মতন একের পর এক প্রযোজনা করেছে। দর্শকদের বিপুল সাড়াও পেয়েছি।শান্তি বসু নিজেই দর্শকদের মোহিত করে রাখতেন। আমার মনে আছে ‘চণ্ডালিকা’তে শান্তি বসুর চুড়িওয়ালা নাচের সময় তা দেখতে উদয়শঙ্কর নিজে দর্শকাসনে চলে আসতেন। ‘শ্যামা’তে শান্তি বসু আর অলকানন্দা রায়ের জুটি দারুন জনপ্রিয় হয়েছিল।প্রতিটি শো-ই হাউস্ফুল হয়ে যেত। আমরা এত শো করেছি যে কখনো-কখনো দিনে দিনে দুবারও করতে হত। আমরা সবচেয়ে বেশি শো করেছি ‘তাসের দেশ’-এর। পরে আমাদের মেয়ে সুলক্ষণা সেনও (সোনা) আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়। ‘চণ্ডালিকা’ তে আমি ‘মা’ আর ও ‘মেয়ে’ করত। ও যেন সমস্ত স্টেজ জুড়ে উড়ে বেড়াত।
প্রতিভা দাসঃ অনেককেই বলতে শুনেছি যে তারা ‘শান্তি বসু’র নৃত্যের মধ্যে দিয়ে উদয়শঙ্করকে দেখতে যান,অর্থাৎ তারা আপনার নৃত্যশৈলীর মধ্যে উদয়শঙ্করকে খুঁজে পান – এটা আপনার কেমন লাগে?
শান্তি বসুঃ এক কথায় বলতে গেলে এ এক দারুণ অনুভুতি।
প্রতিভা দাসঃ এতটা সময় দেওয়ার জন্য ‘গল্পের সময়’এর তরফে আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।
শান্তি বসু ও সুনন্দা বসুঃ আমাদের পক্ষ থেকেও ‘গল্পের সময়’ ও তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।
প্রতিভা দাস – কথক ও সৃজনশীল নৃত্যশিল্পী। শান্তি বসু ও ড. মালবিকা মিত্রর সুযোগ্য ছাত্রী।
Tags: উদয়শঙ্কর, প্রতিভা দাস, শান্তি বসু, সুনন্দা বসু
email:galpersamay@gmail.com
Ashis Sanyal on September 26, 2017
শ্রী শান্তি বসু ও শ্রীমতী সুনন্দা বসু দুজন স্বনামখ্যাত বর্ষীয়ান নৃত্যশিল্পী ! তাঁদের উদয়শঙ্করের সান্নিধ্যের এই স্মৃতিচারণ অত্যন্ত মনোগ্রাহী…অনেক অজানিত তথ্যের সমাহার ! আজকের টিভি নৃত্যশিল্পীরা এই স্মৃতিচারণ পড়ে কিছুটা উপকৃত হবেন আশা করি ! “গল্পের সময়”-কে ধন্যবাদ…… এই মনোজ্ঞ সাক্ষাৎকারটির জন্য !
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।