(১)
সিঞ্চিনি বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখল ব্রেসিয়ারটা নেই। সিঞ্চিনি বরাবরই বাথরুমে স্নান করতে ঢোকার আগে খাটের ওপর ম্যাক্সি, পেটিকোট, প্যান্টি আর ব্রেসিয়ারটা রাখে। প্রথমে পেটিকোট। তারপর ব্রেসিয়ার আর প্যান্টি। ব্রেসিয়ার-প্যান্টির ওপর ম্যাক্সিটা চাপা দিয়ে রাখে। অনেক দিনের অভ্যাস। গা মুছে গামছাটা পেঁচিয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে ঘরে এসে ওগুলো পরে নেয়। আজ বাড়িতে কেউ নেই। বিতানের অফিস। কাজের দিদি ঘণ্টা খানেক আগেই কাজকর্ম সেরে চলে গেছে। কেবল পাশের ঘরে ঋক পড়ছে। কাল ওর এক্সাম। সকাল থেকে এক মনে পড়ে যাচ্ছে। তাহলে। ভুল হবার কথা নয়। হ্যাঁ, মনে পড়েছে। কালো রঙের পুরানো ব্রেসিয়ার। পরার আগে একটু টাইট করে নিতে হয়। আজও করেছে। মনের ভুল! হঠাৎ চোখে পড়ল সোফার হাতলে ব্রেসিয়ারটা খুব বাজে ভাবে পড়ে আছে। ওভাবে সিঞ্চিনি কখনোই রাখতে পারে না। সেই কিশোরী বয়স থেকে মায়ের কাছে শেখা। অন্তর্বাস কখনোই চোখের সামনে রাখতে নেই। সেই নিয়ম এই চল্লিশ বছর পর্যন্ত সিঞ্চিনি কখনো ভুল করেনি। কদিন আগে কাজের দিদিকেও বলেছে, ছাদে ওভাবে ব্রেসিয়ার প্যান্টি শুকোতে দিও না। কিন্তু আজ হটাৎ এরকম ভুল হল কেন? তাও সোফার ওপর! ওই ভাবে! ছিঃ! ভাগ্যিস ঋক ঘরে আসেনি। ও কি ভাবতো। যদিও এখনো ওর মেয়েদের অন্তর্বাস দেখার বয়স হয়নি। সবে ক্লাস সেভেন। রাত পর্যন্ত ব্যাপারটা মনের মধ্যে কিট কিট করতে লাগল। রাতে বিতানকে বলেও ফেলল। বিতান উড়িয়ে দিল। বলল, সামনের মে মাসে চল্লিশে পড়ছো। বুড়ি হয়ে যাচ্ছ। মেনে নাও। তাছাড়া বাড়িতে ব্রেসিয়ার-প্যান্টি পরার দরকার কি। তুমিতো আর কচি খুকিটি নেই। ব্যাস। সিঞ্চিনির মাথা গরম হয়ে গেল। বলল, যা বোঝোনা সেই নিয়ে কথা বোলো না। দুজনে লেগে গেল। কাল অফিস থাকা সত্ত্বেও বিতান সিঞ্চিনির ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কাঁধ থেকে নাইটির স্ট্রাপটা নামিয়ে দিল।
(২)
ওই দেখ ঋক চিত্তরঞ্জন। এবার আমরা ঝাড়খণ্ডে ঢুকছি। অন্য রাজ্য। বলতো, ঝাড়খণ্ডের ক্যাপিটাল কি। মায়ের কথা শুনে ঋক খুব দায়সারা ভাবে উত্তর দিল, রাঁচি। বেড়াতে বেরিয়েও ওকে পড়াচ্ছ। ছাড় না। বিতান বই থেকে মুখ না তুলে কথাটা বলে বই বন্ধ করে ঋককে বলল, যাও কম্পার্টমেন্টটা ঘুরে ঘুরে দেখ। দরজার দিকে যাবে না। ঋক এটাই মনে মনে চাইছিল। ওদের পরের পরের কুপে একজন আন্টি পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে। আন্টির লাল রঙের প্যান্টিটা দেখা যাচ্ছে। মাম-মামেরও ওরকম একটা আছে। মাম-মাম যখন পাশের ফ্লাটে ঝুমা আণ্টির সঙ্গে গল্প করতে যায়, ও কতবার প্যান্টিটার গন্ধ শুকেছে। তবে যেদিন কাজের আন্টি আসে না, বালতিতে রাখা মাম-মামের বাসি প্যান্টিটার গন্ধ অনেক সুন্দর। ওতে মাম-মামের শরীরের একটা অদ্ভুত গন্ধ থাকে। ঋক আরও দুবার ওই কুপের পাশ থেকে ঘুরে এল। আড়চোখে আন্টিটাকে দেখে নিল। আন্টি একরকম ভাবেই বসে আছে। আর সামনের বিচ্ছিরি দেখতে লোকটার সঙ্গে হেসে হেসে গল্প করছে। আন্টিটা কি সুন্দর! মাম-মাম যখন ঘুমোতে যায় যেরকম জামা পরে। আন্টিটা ঠিক ওরকম জামা পরেছে। আন্টির হাতদুটো কি সুন্দর! আন্টি মাঝে মাঝেই হাত তুলে চুল ঠিক করছে। হাতের নিচে আর্মপিটে একটুও লোম নেই।ঠিক মাম-মামের মতো।সোহম আর ও লাস্ট সানডেতে গুগলে আর্মপিট সার্চ করে কত রকমের আর্মপিট দেখেছিল। সোহমের মা সানডেতেও অফিস যায়। মা অফিস বেরিয়ে গেলে সোহম ঋককে ডেকে নেয়। মাম-মামও ঋককে ছেড়ে দেয়। সোহম সেই কেজি থেকেই ফার্স্ট হয়। গতবারেও সব সাব্জেক্টে হান্ড্রেড পেয়ে ক্লাস এইটে উঠেছে। মাম-মাম বলে, সোহমের কাছ থেকে কিছু টিপস নিবি, তুই এখনো ম্যাথে হান্ড্রেড পাসনা। নাইন্টিতেই আটকে থাকিস। প্রতি সানডেতে ঋক একটা খাতা নিয়ে সোহমের ফ্লাটে ঘন্টা তিনেক সময় কাটিয়ে আসে। সোহমের বাবা অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। বছরে একবার বাড়ি আসে। ক্লাস ফাইভ থেকে সোহম ড্যাডকে মেল পাঠায়। ড্যাডও ই মেলে সোহমের সঙ্গে কথাবার্তা চালায়। সোহম ল্যাঙ্গুয়েজ স্যারের ছবি ফটো শপে গোঁফ-দাড়ি লাগিয়ে ওর ছবি বলে ফেসবুকে কত মেয়ের সঙ্গে চ্যাট করে। তার মধ্যে অনেক আন্টিও আছে। সে সব চ্যাট সোহম ঋককে পড়ায়। পড়তে পড়তে ঋকের গা গরম হয়ে যায়। প্যান্টটা টাইট হয়ে যায়। সোহম একদিন বলল তুই ক্লাস এইটে ওঠ, নেক্সট বার্থডের পর তোকে মাস্টারবেসান শিখিয়ে দেবো। দেখবি কি মজা। হ্যালো ডক্টর সাইটে লেখা আছে ফিফটিনের আগে মাষ্টারবেসান করা উচিত নয়।
কি হলো ঋক, চুপচাপ বসে আছ কেন? বোর লাগছে?
ড্যাডের কথায় ঋকের ভাবনায় ছেদ পড়ে। ও বলে, না – ড্যাড। তবে? এই লিটারেচারটা দেখ। যেখানে বেড়াতে যাচ্ছ সেখানটার সম্পর্কে একটা ভিভিড নলেজ থাকলে বেড়ানোটা অনেক সুন্দর হয়। ড্যাড বলে যায়। সেখানকার মানুষের ফুড হ্যাবিট – কালচার, তারপর জায়গাটার হিসটোরিক্যাল ভালু। হঠাৎ পাশের কুপের আন্টিটা টয়লেট যেতে গিয়ে আবার সঙ্গে সঙ্গে ফিরে এসে মাম-মামকে বলল, আরে সিঞ্চিনি না। মাম-মামও ভেরি সর্ট মোমেন্ট তাকিয়ে থেকে বলল, আরে দেবযানী – কতদিন পর দেখা। কোথায় চললি? দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে। মাম-মাম ঋক আর ড্যাডের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেয়। দেবযানী আন্টি মাম-মামের সঙ্গে কলেজে পড়ত। তোর ছেলেকে তো আমার সিটের পাশ দিয়ে কবার যেতে দেখলাম। একদম তোর মত দেখতে হয়েছে, দেবযানী আন্টি ওর মাথার চুলটা নেড়ে দিয়ে পাশে বসে পড়ে। আন্টিটার গায়ে কি সুন্দর গন্ধ। মাম-মামের গায়ের গন্ধের থেকে অন্যরকম। কিন্তু ভেরি নাইস। দেবযানী আন্টির হাত ওর গায়ে লেগে আছে। ঋকের সারা শরীরটা শির শির করে ওঠে। সোহমের বাড়িতে আন্টি সাইট দেখে যেমন হয়। সেই রকম। প্যান্টটাও আস্তে আস্তে টাইট হয়ে যায়। ওদের কোনো কথা কানে ঢোকে না। ঋক খুব নির্লিপ্ত মুখ করে জানলার বাইরে দেখতে থাকে। ঋকের পাশে দেবযানী আন্টি, তার পাশে মাম-মাম আর উল্টো দিকে ড্যাড। একটু পর দেবযানী আন্টি ওইরকম পায়ের ওপর পা তুলে বসে। হটাৎ দেখে ড্যাড দেবযানী আন্টির দু পায়ের মাঝখানটা দেখছে। একটু পর পর চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ড্যাড সিওর আন্টির লাল প্যান্টিটা দেখছে। ড্যাডেরও কি ওর মতো – না, ঋক আর ভাবতে পারে না। ভাবতে চায়ও না। ওর ড্যাড একদম ডিফারেন্ট। কিছুক্ষণ পর দেবযানী আন্টি চলে যায়। যাওয়া মাত্রই মাম-মাম বলে ওঠে, ন্যাকা। কলেজেও এরকম ডেয়ারিং পোষাক পরতো। আর ছেলেগুলো ওর পাশে মাছির মত ভ্যান ভ্যান করত। তারপর ড্যাডকে বলে, তুমিও তো গিলছিলে। ড্যাড বলে ওঠে, ঋক রয়েছে একটু সেন্সার করে কথা বল। সেন্সারের কি আছে, যা সত্যি তাই বলছি। সব পুরুষই এক রকম। মা থামতে চায় না। ঋকের কোনো কথা কানে ঢোকে না। ওর কান্না পায়। ড্যাড আর মাম-মাম ঝগড়া করলে ওর মনটা খারাপ হয়ে যায় তারপরই কান্না চলে আসে। ও উঠে পড়ে।
(৩)
Adolescence is the period of development transition between childhood and adulthood, involving multiple physical, intellectual, personality and social developmental changes. The onset of puberty signals the begening of adolescence and puberty now occurs earlier, on average, than in the past. The World Health Organisation (WHO) defines an adolescent is any person between ages 10 and 19। বিতান কম্পিউটার থেকে মুখ তুলে বলল, বুঝতে পারছো দশ থেকে উনিশ। আর ঋকের এখন ষোল। ষোল তো কি হয়েছে – ও এখনও বাচ্ছা। আমি প্রথমেই বলেছিলাম, সোহমের বাড়িতে ওকে পাঠিও না। বেশ ঝাঁঝের সঙ্গে সিঞ্চিনি বলে ওঠে। বলে, তোমাকে তো আর সারাদিন বাড়িতে থাকতে হয় না। স্কুলে যাবার আগে অন্ততঃ তিনবার টয়লেটে ঢুকছে। আহা ছেলেটা টয়লেটে যাবে না- এটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। তোমাকে তো পড়ে শোনালাম, এই বয়সে ছেলেরা একটা physical, intellectual and personality চেঞ্জের মধ্যে যায়। আমারও ওই বয়সটা গেছে। আমার জীবনের একটা ঘটনা বলি শোনো – বিতান এর পরেই বাধা পায়। সিঞ্চিনির কথা শোনার অভ্যাস নেই। বিতানের জীবনের অনেক কথা সিঞ্চিনিকে বলা হয়ে ওঠেনি। নেহাৎ সমস্যাটা ছেলে, তাই। সিঞ্চিনি বাধা দিয়ে বলে, ও টয়লেটে মোবাইল নিয়ে ঢুকছে – মোবাইলে পর্ণগ্রাফি দেখে অসভ্যতা করছে। গত মাসের ঘটনাটা তুমি ভুলে গেলে – কম্পিউটারে পর্ণগ্রাফি দেখতে দেখতে প্যান্টের ভিতর হাত ঢুলিয়ে কিসব করছিল। তোমাকেও তো দেখিয়েছি। বিতান বলে ভুলে যেওনা রিনি ওই রকম একটা নামী স্কুলে ওর ক্লাসে ও ফার্স্ট বয়। সেদিন পেরেন্ট মিটিং-এ রেক্টার কি বলল শোনোনি, ফাইনালে ঋককে ওরা প্রথম দশ জনের মধ্যে এক্সপেক্ট করছে। তাতে কি-। সিঞ্চিনি বলেই চলে। বিতান ভাবে, ঋককে এবার একটা সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে নিয়ে যাওয়া দরকার। ব্যাপারটা এমনই ব্যক্তিগত যে কারো সঙ্গে আলোচনা করা যাবে না। ওর জীবনের প্রতিটা ব্যাপার সুদামের সঙ্গে আলোচনা করে নেয়। সুদাম জীবন সম্পর্কে অনেক অভিজ্ঞ। সিঞ্চিনির অবজার্ভেশান হান্ড্রেড পারসেন্ট কারেক্ট। ঋকের পর্ণগ্রাফিতে এ্যাডিকশান এসে গেছে। ভাবতে অবাক লাগে – এই এ্যাডিকশান নিয়েও ও কি করে এত ভাল রেজালট করছে। ওদের স্কুলে নিমাই বলে একটা ছেলে ছিল। রেগুলার মাস্টারবেট করত। আর সেটা ফলাও করে ক্লাসে বলত। মফস্বলের স্কুল। বিভিন্ন ধরনের ছাত্র। নিমাই’এর বাবার হাটে সব্জীর আড়ৎ ছিল। বাড়িতে সেই অর্থে কালচার বা শাসন বলে কিছু ছিল না। বিতানের এক এক করে মনে পড়ে যায়। তখন ববি রিলিজ করেছে। সময়টা পঁচাত্তর কি চুয়াত্তর। ডিম্পল কাপাডিয়ার সুইমিং কস্টিউম পরা একটা আবছা ছবি ওর পকেটে থাকতো। যে দেখতে চাইতো – দেখাতো আর কানে কানে অসভ্য কথা বলতো। বিতানের কখনও রুচি হয় নি। সেই নিমাই ক্লাস নাইনের পর থেকে হারিয়ে গেল। পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বাবার ব্যাবসায় বসল না অন্য কিছু – কে জানে। খুঁজে পেতে একবার নিমাই’এর সঙ্গে কথা বললে কেমন হয়। ও কেমন আছে। বিয়ে থা করেছে কিনা। সেক্সুয়াল লাইফ কেমন।
কি হল – আমার কোনও কথাই তো তোমার কানে ঢুকছে না মনে হচ্ছে – সম্বিৎ ফিরল সিঞ্চিনির ঝাঁঝে। তুমি এক্ষুনি ঋকের সঙ্গে কথা বল। ছিঃ ছিঃ ছিঃ, আমাকেও তো ওর সামনে খুব সংযত হয়ে থাকতে হবে মনে হচ্ছে এবার থেকে। সিঞ্চিনি কাঁদতে থাকে। বিতান সিঞ্চিনিকে কাছে টেনে নেয়। বলে, দেখ রিনি, খুব সাবধানে ব্যাপারটা ট্যাকল করতে হবে। ঋকের ক্লাসমেট হর্ষকে মনে আছে। ক্লাস সেভেনে যখন পড়ত, পর্ণগ্রাফি দেখার জন্য ওর বাবা গায়ে হাত তুলেছিল। তার পরের দিন হর্ষ কি করেছিল মনে আছে। সিঞ্চিনির মনে পড়ে যায়। সিঞ্চিনিও হর্ষের ডেডবডি দেখতে গিয়েছিল। গত মাসে হর্ষের মায়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। গড়িয়াহাটে। কেমন উদভ্রান্তের মত হন হন করে হেঁটে যাচ্ছিল। সিঞ্চিনিকে চিনতে পারল বলে মনে হল না। ভেতর থেকে একটা গোমড়ানো কান্না উঠে আসে। সিঞ্চিনি আরও শক্ত করে বিতানকে জড়িয়ে ধরে।
(৪)
কম্পিউটারটা খারাপ হয়ে গেলে ঋকের কেমন পাগল পাগল লাগে। ড্যাড বলেছে আই এস সিতে স্ট্যান্ড করলে এ্যাপেলের ট্যাব কিনে দেবে। ড্যাডের ল্যাপটপটা ঋক ব্যাবহার করে না। হিস্ট্রি ইরেজ করা বেশ হ্যাপা। এখন আর মোবাইলের ছোট স্ক্রীনে হট কিছু দেখতে ভাল লাগে না। রাতের বেলায় লাষ্ট কয়েক মাস ধরে ঋক দরজা লক করে দেয়। মাম-মাম অবজ়েকসান দিয়েছিল। ও পাত্তা দেয়নি। নেটে এডাল্ট সাইট দেখার সময় মাম-মামের কাছে অনেকবার কট রেড হ্যান্ডেড হয়ে গেছে। লাষ্ট ইয়ারে ড্যাড একজন সাইক্রিয়াটিষ্টের কাছে নিয়ে গেছিল। ঋক সব কিছু কনফেস করেছে। ওর মাষ্টারবেট করতে ভাল লাগে। একবার মাষ্টারবেট করে নিলে স্টাডি অনেক ভাল হয় – অনেক বেশি কনসেনট্রেট করা যায়। এটাও ও ডক্টরকে বলেছিল। ডক্টর হিউম্যান রেসের বায়োলজিকাল নিড আর সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার নিয়ে লেকচার দিতে শুরু করলো। ঋক অনেক কষ্টে হাসি চেপেছিল। ইউরোপিয়ান কান্ট্রিতে আর ষ্টেটসে টেন স্টাণ্ডার্ড এক্সামের আগেই ইচ এণ্ড এভরিবডির সেক্সসুয়াল এক্সপিরিয়েন্স হয়ে যায়। ঋক খুব ইনোসেন্ট স্টাইলে ডক্টরের কাছে স্টেটমেন্টটা রেখেছিল। ডক্টর ও লাইনে এন্ট্রিই নিল না। একগাদা মেডিকেল টার্ম ইউস করে শেষে বলল, দিস ইস ইন্ডিয়া ম্যান। ড্যাড আর এই সাইক্রিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যায় নি। যদিও মাম-মাম ড্যাডকে এই নিয়ে প্রচুর চাপে রাখে। ঋকের এখনও স্টেডি গার্লফ্রেন্ড হয় নি। টুংটাং’এর সঙ্গে রিলেসানটা ঠিক গার্লফ্রেন্ডের মত নয়। ও প্রচুর হ্যাটা খায় ঋকের কাছে। কিন্তু রিলেসানটা ঠিক চালিয়ে যায়। টু বি ভেরি অনেষ্ট ওই সব বাচ্ছা মেয়ে ওর পছন্দও নয়। ঋক টুংটাং’কে ভেবে কখনও মাষ্টারবেট করতে পারেনি। টুংটাং’কে একবারই মাত্র কিস করেছে। ভাল লাগেনি। একেবারে নাদান। কিসিং’এর সময় জিভটাকেই ব্যবহার করতে পারে না। টুংটাং বলেছিল, আমার ঠোঁট কেটে রক্ত বেরিয়ে গেছে – এভাবে কেউ চুমু খায়। ঋকের হাসি পায়। ওয়ার্লড কোথায় এগিয়ে গেছে টুংটাং জানে না। গ্রান্ডমামদের যুগে পড়ে আছে। এ্যাঞ্জেলিনার চুমু খাওয়া ও দেখেইনি। একদিন ঋক টুংটাং’কে মোবাইলে একটা সাকিং সিন দেখিয়েছিল। টুংটাং ব্যাপারটা কেন পারসোনালি নিল কে জানে। অদ্ভূত একটা কথা বলেছিল টুংটাং। একটা মেয়েকে ওইভাবে ইউস করা মানে নাকি ওকেও ইনসাল্ট করা হচ্ছে। আরও বলেছিল, মানুষ অনেক এগিয়ে গেছে ঋক। একটা ছেলে একটা মেয়ে রাস্তার কুকুরের মত বিহেভ করছে – সেটা শ্যুট হচ্ছে – সেটা আবার তুই আপলোড করে দেখছিস। ইউ আর ইক্যুয়াল গিলটি। তারপর মুখচোখ বেঁকিয়ে বলেছিল, ছিঃ। অপমানটা গায়ে মাখেনি ঋক। সোহম মেলে লিখেছিল, লাইফ ইস নাথিং বাট মস্তি। উই সুড নট ওয়েস্ট আ সিঙ্গল ড্রপ অফ টাইম। লাষ্ট ইয়ারে সোহম অষ্ট্রেলিয়া চলে গেছে। আন্টি একা থাকেন। এখনও ঋক প্রায়ই ওদের ফ্লাটে যায়। লুকিয়ে। তবে অন্য কারণে। মনডে আন্টির ছুটি। ঋক এভরি মনডে স্কুলে টিফিনের পর সোহমদের ফ্লাটে চলে আসে। আর আন্টি ওর সব আবদার মিটিয়ে দেয়। আন্টির ফিগারটা অনেকটা ঐশরিয়ার মত। আজ দুপুরে আন্টি অনেকগুলো ন্যুড পোজ দিয়েছে। দুজনের ডেয়ারিং ক্লোজ সেলফিও আছে অনেকগুলো। কমপিউটারের বড় স্ক্রীনে সেগুলো দেখার মজাই আলাদা। মুডটা চটকে গেল। রাত বারোটা বেজে গেছে। এখন আর সুনীল আঙ্কলকে ফোন করে লাভ নেই। নিজেই কমপিউটারটা নিয়ে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করে। না, লুজ কানেকসান নেই। হার্ড ডিস্কের প্রবলেম মনে হচ্ছে। ঋক সাইড পিলোটা দু পায়ের মাঝখানে চেপে ধরে মোবাইলে দুপুরের ছবিগুলো এক এক করে দেখতে থাকে। রিয়ালিটিতে আন্টি যতটা এট্রাকটিভ – ফ্যানটাসিতে হান্ড্রেড টাইমস বেটার। দুপুরে আন্টির রিকুয়েষ্টে অনেক কিছু ওকে পারফর্ম করতে হয়। এখন সে দায় নেই। আস্তে আস্তে ঋক আন্টিকে নিজের স্লেভ বানিয়ে নিয়ে চরম উত্তেজনায় পৌঁছতে থাকে।
(৫)
টুংটাং কয়েকদিন বাড়ি থেকে বেরোচ্ছে না। কলেজও যাচ্ছে না। অতসী ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছে। মেয়েটা খুব নরম প্রকৃতির। বাবার ধাত পেয়েছে। অল্পে ভেঙে পড়ে। ঘরে ঢুকে দেখে টুংটাং শুয়ে আছে, পাশে একটা বই খোলা। মেয়ের মাথার চুলে বিলি কেটে বলে, কিরে পাগলি, এবার কি নিয়ে। অতসী জানে ঋক-সংক্রান্ত কোনো ব্যাপার হবে। ঋককে মেয়েটা পাগলের মত ভালবাসে। আবার বলে, কিরে ঋকের সঙ্গে কিছু হয়েছে নাকি। টুংটাং উত্তর দেয় না। ও পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে। কিছু অন্তত বল, তুই এরকম থাকলে আমাদের ভাল লাগে, অতসী জোর করে টুংটাং’এর মুখটা ওর দিকে ফিরিয়ে নেয়। টুংটাং কিছুক্ষণ মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর বলে, আচ্ছে মা, এমন মানুষ কখনও দেখেছো, যার মধ্যে কোনও ইমোশান নেই, ফিলিংস নেই – আই মিন, মানবিক বৃত্তি বলতে যা বোঝায় – তার কোনও কিছুই একজিষ্ট করে না। দুস, এরকম আবার হয় নাকি। অতসী জানে এবার মেয়ের বাঁধ ভেঙে যাবে। খুব সাবধানে কথাটা উচ্চারণ করে। টুংটাং ধড়ফড় করে উঠে বসে। আমিও জানতাম, এরকম হতে পারে না। আই মিন এতদিন তাই বিশ্বাস করতাম। অতসী মেয়েকে বাধা দেয় না। টুংটাং বলে চলে, অথচ ঋককে দেখ। সেভেন টু এইট ইয়ারস ওর সঙ্গে মিশছি। দীর্ঘ দিন ধরে ওকে কালটিভেট করছি, বাট আমার প্রতি মিনিমাম ফিলিংস নেই। ও মেয়েদেরকে কোনও রেসপেক্টই করে না। ওকে দেখলে তুমি ইমাজিনও করতে পারবে না যে, ও একটা পারভার্ট। আর যারা ওর এই পারভার্সানকে পাত্তা দেয় তাদের সঙ্গে ও রিলেসান মেনটেইন করে। ইরেসপেক্টিভ অফ এজ। ওপেনলি। টুংটাং কেঁদে ফ্যালে। এবার অতসী বেশ ভাল রকম ধাক্কা খায়। মেয়েটার জন্য মনটা হু হু করে ওঠে। টুংটাং’কে জড়িয়ে ধরে বলে, ঠিক কি হয়েছে আমাকে বল। আচ্ছে একটা কথা আগে বল, তুই কি ঋককে নিয়ে ভবিষ্যতের কোনও স্বপ্ন দেখছিস।আমি এরকম ভাবে কখনও ভাবিনি। এখন বলছি, আর ভাববও না, বলে হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠে। অতসী টুংটাং’এর মাথাটা ঘাড়ে নিয়ে ওকে খানিকটা কাঁদতে দেয়। তারপর আস্তে আস্তে বলে, বল টুংটাং – আমাকে বল কি হয়েছে। একটু পর টুংটাং নিজেকে একটু গুছিয়ে নিয়ে বলতে থাকে, লাষ্ট সানডে মানি স্কোয়ারে ওর সঙ্গে কফি খাচ্ছিলাম আর ওর মোবাইলটা একটু ঘাঁটাঘাঁটি করছিলাম। কি ভাবে জানি না ফটো গ্যালারিয়ে ঢুকে যায়। দেখলাম একজন মহিলা – এজেড – তোমার বয়সী হবে। তার সঙ্গে ঋকের খুব ক্লোজ ছবি। দুজনেই ন্যুড। এখন আর টুংটাং’এর চোখে জল নেই। মুখের মধ্যে একটা ক্রোধ ঝিলিক মারছে। এই রূপ আগে কখনও মেয়ের মুখে দ্যাখেনি অতসী। অতসী অনেকদিন পর মেয়ের সঙ্গে একাত্ম বোধ করে। কে যেন অতসীর গালে একটা জোরে থাপ্পড় কষিয়ে গেছে। অতসী বলে, ঋক জানে যে ছবিগুলো তুই দেখেছিস। সিওর, সঙ্গে সঙ্গে বলেছি – এগুলো কি। ঋক বলল, দিস ইজ মাই পারসোনাল এ্যাফেয়ার। তুই দেখতে গেলি কেন। দিস ইজ ভেরি আন-ফেয়ার এণ্ড আন-এথিক্যাল। অন্যের মোবাইলে স্পাইং করা উচিত নয়। তারপর আর কোনও কথা না শুনে আমি উঠে চলে এসেছি। টুংটাং একনাগাড়ে কথাগুলো বলে হাঁফাতে থাকে।
(৬)
বিতানদা কবে খাওয়াচ্ছেন। অফিসের জুনিয়ার ছেলেমেয়েরা বিতানকে ঘিরে ধরে আবদার করল। বিতান অফিসে এমনিতে খুব পপুলার নয়। কথা খুবই কম বলে। লাউঞ্জে হাই হ্যালো বিনিময় হয় জুনিয়রদের সঙ্গে। শুধুমাত্র সুদামের কাছে ও খুব স্বচ্ছন্দ বোধ করে। সুদাম আর ও একই দিনে জয়েন করেছে। সেই প্রথম দিন থেকেই সুদামকে খুব কাছের মনে হয়। সব কথা সুদামকে না বললে বিতানের শান্তি হয় না। ঋক এম বি এ-তে চান্স পেয়েছে। সকালেই বিতান খবরটা সুদামকে ফোন করে জানায়। সুদামই অফিসে এসে খবরটা পাবলিক করে। বিতান জানে ঋকের মাথাটা খুব পরিষ্কার। এডুকেশানের ব্যাপারে ওকে কোনও দিন বলতে হয় নি। ঋককে ওর কেরিয়ার নিয়ে বলতে যাওয়ার কোনও মানেই হয় না। কিন্তু ওর একটা অন্ধকার জীবন কেমন করে যেন তৈরি হয়ে গেছে। ক্যাট পরীক্ষায় ও ভালই র্যাঙ্ক করেছে। আর এই খবরটা পাবার পর কোনও রকম আনন্দ বা খুশি করার অবস্থায় ও আর রিনি নেই। অনেকবার বিতান ঋকের সঙ্গে সোজাসুজি কথা বলেছে। বাবা হিসেবে যতটা সহজে বলা যায় আর কি। ঋকদের ভ্যালুজগুলোই অন্যরকম। ঋকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রতিবারই বিতান খুব অসহায় বোধ করেছে। পার্ভারসানেরও কি যুগে যুগে মানে পালটে যায়। ওদের সময়ে যা বিকৃতি আজ তা স্বাভাবিক। মেনে না নিলে তুমি অচল। সরে যাও রাস্তা থেকে। সুপ্রিম কোর্ট অর্ডার দিয়েছে, প্রত্যেকের তার নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী যৌন জীবন পালন করার অধিকার আছে। স্টোরের সাত্যকির মেয়ে হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করেছে। একটা কর্পোরেট হসপিটালে অ্যাডমিনিস্ট্রেসানে বড় পোষ্টে আছে। সাত্যকি মেয়ের কাছে বিয়ের কথা পাড়লে, মেয়েটি উইদাউট এনি হেজিটেসান জানায়, ও লেসবিয়ান। বিয়ে করলে একটা মেয়েকেই করবে। সাত্যকির সঙ্গে বিতান কোথায় যেন একটা একাত্ম বোধ করে। বিতান একদিন ওর মফস্বলের বাড়িতে গেছিল নিমাই’এর খোঁজে। নিমাই এখন ওর বাবার সব্জীর আড়ত-এ বসে। বিশাল একটা ভুঁড়ি। বাবা মারা যাওয়ার পর আরও দুটো গোডাউন বাড়িয়েছে। বিতান কিছুতেই আসল কথাটা জিঞ্জাসা করতে পারে না। সুদাম হলে কখন আসল কথাটা বার করে নিত। নিমাই চা খাওয়ালো। বাড়ি যাবার কথা বললই না। অবশ্য বিতান কখনোই নিমাই’এর সঙ্গে সে ভাবে মেশেনি। আবার একটা অসহায় বোধ বিতানকে পেয়ে বসে। ঋকের চিন্তা ওকে আরও নড়বড়ে করে দিয়েছে। কোনও কাজই এখন বেশ গুছিয়ে করতে পারে না। আগে ও খুব সিষ্টেমেটিক বলে কত সুনাম ছিল। ওঠার সময় দ্বিধা ঝেড়ে বলল, নিমাই, তোমার ছেলে মেয়ে কটি? সে সুযোগ আর পাইনি ভাই। তুমি তো এখানে থাকো না তাই জানোনা। বিয়ের একমাসের মধ্যেই বউ ভাগলবা, বলে খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসে উঠল। এত সুন্দর বল পেয়েও বিতান জিজ্ঞেগ করতে পারলো না – বউ কেন পালিয়েছে। আবার ঋকের কথা ভেবে মনটা হু-হু করে ওঠে। ঋকও কি বিবাহিত জীবন মেইনটেইন করতে পারবে না। চারপাশ থেকে যেটুকু কানে আসে তাতে বেশ বোঝা যায় খুব দ্রুত সময়টা পালটে যাচ্ছে। ক্লাস সেভেন এইট থেকে ছেলেমেয়েদের হাতে মোবাইল তুলে দিতে হচ্ছে আর সেখান থেকে ঢুকে পড়ছে অবাস্তবতার বীজ। কল্পনার পাখিরা খুব দ্রুত ডানা মেলছে আকাশে। ঋকও খুব দ্রুত ওর আর রিনির কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। হঠাৎ সুদাম ওর সামনে একটা চেয়ার নিয়ে বসে ওর ভাবনায় ছেদ ঘটায়। সুদাম বলে, কিরে বাচ্ছাগুলোকে মিষ্টি খাবার জন্য কিছু টাকা দিতে পারলি না। বাসি হয়ে গেলে ব্যাপারটার গুরুত্ব থাকবে? বিতান প্রথমে ভাবে সুদামকে দায়সারা একটা উত্তর দিয়ে দিই। কিন্তু পারে না। বলে, দেখ সুদাম বড্ড তাড়াতাড়ি বুড়ো হয়ে জাচ্ছিরে। কোনও কিছুতেই আর আনন্দ পাচ্ছি না। সেটা আমিও লক্ষ্য করেছি, বেশ কিছুদিন যাবৎ তুই ইন্ট্রোভার্ট হয়ে যাচ্ছিস, সুদাম একটা সিগারেট ধরিয়ে বলে। অবশ্য তুই কোনও দিনও খুব বেশি ভোকাল ছিলিস না, সেজন্য লোকে ব্যাপারটা বুঝতে পারছে না। কিন্তু একটু স্টাডি করলেই বোঝা যায়। সময় সুযোগ হলে বলিস, এখন হাজারটা টাকা ছাড় – আমি গোবিন্দকে মিষ্টি আনতে দিয়ে দিয়েছি। বিতান হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। পার্স থেকে হাজার টাকা বার করে সুদামকে দিতে দিতে বলে, তোকে একদিন সব বলব সুদাম – বড় যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে আমি আর রিনি দিন কাটাচ্ছি। ব্যাপারটা কি ছেলেকে নিয়ে? সুদাম উসকে দিয়ে বলে। বিতান অনেক কথা বলতে গিয়েও বলতে পারেনা। প্রসঙ্গ পালটাবার জন্য বলে, কখন বেরুবি? সন্ধের আগে অফিস লিভ করতে হবে। প্রচণ্ড বৃষ্টি আসবে আজ। সুদাম জানে বিতান’এর কাছ থেকে জোর করে কিছু বার করা যাবেনা। পরিবেশ পরিস্থিতি পারমিট করলে ও নিজে থেকেই একদিন সব বলবে। বলে, তুই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যা, আমার একটা জরুরী মিটিং আছে। বাড়ি ফিরতে রাত হবে।
(৭)
দুদিন ধরে টানা বৃষ্টি পড়ছে। কলকাতা ভেসে যাচ্ছে। ঋকের আগে বৃষ্টি একদমই ভাল লাগত না। এখন বেশ লাগে। ইচ্ছা থাকলেও বাড়ি থেকে বেরোনো যায় না। স্বেচ্ছাবন্দী। নিজের মত করে দিন কাটানো যায়। ক্যাটের রেজালট বেরোনোর পর অনেকে কনগ্রাট করে মেসেজ পাঠিয়েছে। ঋকের রেস্পণ্ড করতে ইচ্ছাই করেনি। সোহমের মা ওই ফ্ল্যাট থেকে চলে গেছে। ওদের ফ্ল্যাট তালা বন্ধ। আন্টি সিমটাও পালটে ফেলেছে। সোহমকে আন্টির খবর জিজ্ঞেগ করতে ও জানায়, এনি আদার সাবজেক্ট বাট মম। ও আর সাহস পায়নি। কিছুদিন আগে পর্যন্ত সোহমদের ফ্লাটের সামনে থেকে ঋক ঘুরে এসেছে। পাশের টেনান্ট পর্যন্ত জানে না। তালাবন্ধ। আন্টি শরীরের খিদেটাকে চাগিয়ে দিয়ে স্রেফ কেটে গেল। টুংটাং আর কোনও রিলেসান রাখেনি। অবশ্য টুংটাং কি আর দিতে পারতো। ঠিক ঠাক চুমু খেতেও জানতো না। এখন পর্ণ সাইটে অনেক মেয়ের সঙ্গে লাইভ চ্যাট হয়। একটা সোসাইটি গার্লকে নিয়ে ঋক একবার বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে যাবার নাম করে ডায়মণ্ডহারবার রোডের একটা রিসর্টে আটচল্লিশ ঘণ্টা কাটিয়ে এসেছে। ভাল লাগেনি। আন্টি টোটাল ব্যাপারটা এমন একটা হাইটে তুলে দিয়েছিল যে সেই হাইটে কোনও প্রফেশনাল মেয়েও যেতে পারবে না। ওর ঘরে দিনের বেলাতেও আর মাম ঢোকে না। খুব প্রয়োজন হলে ফোন করে পাশের ঘরে ডাকে। মাম মাম আর ড্যাড একটা ট্যুরিষ্ট পার্টির সঙ্গে এখন কেরালায়। বর্ষায় মুন্নার এনজয় করতে গেছে। ঋককেও প্রপোজ করে নি। কোচিতে পৌঁছে ড্যাড ফোন করেছিল। মাম-মাম একবারও করে নি। ঋকও করে মি। প্রথম দিকে দিন তিনেক খারাপও লাগেনি। টানা তিনদিন পর্ণ এনজয় করেছে। ফোর্থ ডে থেকে শরীরটা কেমন ঝিম মেরে গেল। কোনও কিছুই ভাল লাগছিল না। ইরেকসানও আসছিল না। হঠাৎ ড্যাড আর মাম-মামের জন্য মনটা হু হু করে উঠল। অনেকক্ষণ কাঁদল। ড্যাডতো ওকে মুন্নার নিয়ে যেতে পারতো। ওর মনে পড়ে গেল লাষ্ট ইয়ারে গোয়া ভ্রমণের কথা। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। ও, মাম-মাম আর ড্যাড। যাবার আগের দিন আন্টি বলল, ঋক ইউ প্লিজ ড্রপ। আমি অফিস অফ করে দেব। ফিফটিন ডেস – লিভ উইথ মি। প্রিমিটিভ ওয়াইলড সেক্স করব – হোয়াট এ এনজয়মেন্ট! এই হাতছানি ও এড়াতে পারেনি। মাম-মাম আর ড্যাডকে জানিয়ে দেয়। স্টাডির দোহাই দিয়ে। ড্যাড যেতে চাইছিল না। মাম-মাম জোর করে ড্যাডকে নিয়ে যায়। এবারে ওকে না নিয়ে যাওয়ার জন্য ড্যাড আর মাম-মাম’এর লজিক বেশ স্ট্রং। এর জন্য ওর মন খারাপ করা উচিত নয়, এটা ঋক বোঝে। তবুও কোথায় যেন একটা জ্বালা বেশ ফিল করতে পারছে ও। যত ওটাকে ঋক তাড়াতে চাইছে – তত যেন চেপে বসছে। তখন ও ক্লাস সিক্সে। সবাই মিলে ল্যান্সডাউন যাওয়া হয়েছিল। ড্যাডের বুজুম ফ্রেন্ড সুদাম আঙ্কেল হেভি মজার মানুষ। এক এক করে সব মনে পড়তে লাগল। দারুন মজা হয়েছিল। সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়া। অনেক রাত পর্যন্ত সবাই মিলে গল্প। ল্যান্সডাউন থেকে পৌরি তারপর ক্ষিরসু – আর ঋক ভাবতে পারে না। আবার একটা কান্না ভেতর থেকে আছড়ে পড়ছে যেন। কিছুতেই সামলানো যাচ্ছে না। হঠাৎ মনে হল আগের সব কিছু ভোজবাজির মত হারিয়ে গেছে। ও অনেক অনেক দূরে দাঁড়িয়ে আছে যেখান থেকে কাউকে ছোঁয়া যাচ্ছে না। না, এইসব প্রিমিটিভ ইমোসানকে ঝেড়ে ফেলতে হবে, ঋক এক ঝটকা মেরে উঠে দাঁড়িয়ে ভাবনাগুলোকে ঝেড়ে ফেলতে থাকে। কম্পিউটারের সামনে বসে পড়ে। এক্ষুনি একটা হার্ডকোর পর্ণ সাইটে ঢুকতে হবে।
(৮)
ঋকবাবু উঠে পড়, আমরা এসে গেছি, মাম-মামের গলা। ড্যাড সিওর ট্যুর ক্যানসেল করে চলে এসেছে। কামিং সানডেতে ফেরার কথা। ঋক ধড়ফড় করে উঠে পড়ে। কম্পিউটার টেবিলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। অনেকদিন পর মাম-মাম ‘ঋকবাবু’ বলে ডাকল। লাষ্ট ফাইভ টু সিক্স ইয়ারস মাম-মাম খুব পারসোনালিটি নিয়ে ‘ঋক’ বলেই ডাকে। ও তাড়াতাড়ি উঠে দরজাটা খুলে দিল। বারান্দার গ্রিলে বসা একটা শালিখ ঝটপট শব্দে উড়ে পালাল। ড্যাড,মাম-মাম’এর ঘর তালাবন্ধ। তাহলে। পরিষ্কার শুনল ঋক । হিয়ারিং ইলিউসান। স্ট্রেঞ্জ! ঋক আস্তে আস্তে বিছানায় গিয়ে বসে পড়ে। আবার মাম-মাম’এর জন্য মনটা কেঁদে ওঠে। সব অভিমান ভুলে মাম-মাম’কে ফোন করে। রিং হয়ে যায়। ওরা এখন কোথায়। নিশ্চয় হোটেলে ঘুমোচ্ছে। এবার বিছানায় শুয়ে পড়ে। গত রাতের এক্সপেরিয়েন্স মোটেই ভাল নয়। হাজার চেষ্টা করেও অর্গাজমে পৌঁছনো তো দূরের কথা – ইরেকসানই হয় নি। শরীরে খুব ব্যথা। প্রচণ্ড ক্লান্তি। কাজের আন্টি আসতে এখনো দেরি আছে। আবার মাম-মামকে রিং করে। একই রকম ভাবে বেজে যায়। মাম-মাম’এর এয়ারটেল কানেকসান। The number you have dialed, is not responding। প্রায় আটটা বাজল। ড্যাড, মাম-মাম কি এখনও ঘুমোচ্ছে। ড্যাডকে ফোন করলে ব্যাপারটা বোঝা যেতে পারতো। ঋকের একটা জিদ চেপে যায়। ও মাম-মামকেই কল করে যায়। ফোন না রিসিভ করার হাজার কারণ থাকতে পারে – এটা ঋক জানে। কিন্তু ’is not responding’ শব্দ তিনটে মনে হচ্ছে মাম-মাম যেন চাবুক মারছে। বেলা এগারোটা পর্যন্ত চেষ্টা করেও not responding। এর মধ্যে কাজের আন্টি এসে ওর খাবার রেডি করে রেখে গেছে। ঋকের আর ব্রাশ পর্যন্ত করতে ইচ্ছে করছে না। মোবাইলটা নিয়ে ঘাঁটতে থাকে। কনট্যাক্ট লিষ্ট স্ক্রোল করতে থাকে। লিষ্টে ৪৫২ জন। এ থেকে এস পর্যন্ত কাউকে ফোন করতে ইচ্ছাই করল না। টি তে এসে টুংটাং’এ একটু থামল। এই প্রথম টুংটাং’এর জন্য মনটা কেমন হয়ে গেল। গলা থাকে একটা ব্যথার গুলি একটু নড়াচড়া করেই বুকের দিকে নামতে লাগল। বুকের ডান দিকে – না না – বাঁদিকে সেই গুলিটা ভেঙে হাজার টুকরো হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। বুকে অসম্ভব ব্যথা। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। ঋক উঠে পড়ে। বেসিনে গিয়ে মুখে চোখে ঘাড়ে জলের ঝাপটা দেয়। একটু আরাম বোধ করে। প্যান্টটা গলিয়ে বাইকের চাবি নিয়ে দরজায় তালা দিয়ে বেরিয়ে পড়ে। গ্যারেজটা রাস্তার ও পাড়ে। ওদের বাড়ির সামনে রাস্তার দুটো কুকুর ঋকের পায়ে পায়ে গ্যারেজ পর্যন্ত যায়। ঋক ওদের দিকে কোনও দিন ফিরেও তাকায় না। আজ হঠাৎ কুকুরদুটোর জন্য মনটা কেমন করে উঠল। কুকুর দুটোর নাম লাল- নীল। কোনটা লাল কোনটা নীল ও ঠাহর করতে পারে না। গ্যারেজ ছাড়িয়ে দুটো বাড়ি পরে একটা মুদির দোকান থেকে দু প্যাকেট বিস্কুট কিনল ঋক। প্যাকেট দুটো ছিঁড়ে বিস্কুটগুলো একটা পরিষ্কার জায়গায় ঢেলে দিল। লাল নীল লেজ নাড়তে নাড়তে খেতে থাকে। ঋক খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে দৃশ্যটা দেখে। মন খারাপ ভাবটা একটু ফিকে হয়ে আসে। আজ বৃষ্টি পড়ছে না বটে কিন্তু আকাশটা থম মেরে আছে। মাম-মাম থাকলে আজ নির্ঘাত খিচুড়ি নামাতো। সঙ্গে পিঁয়াজ -পকোড়া। মাম-মামকে আর একবার ফোন করে দেখা যাক। যাঃ মোবাইলটাই নেওয়া হয় নি। তালাটালা খুলে মোবাইলটা আনতে আর ইচ্ছা করল না। অস্বাভাবিক জোরে বাইকটা স্টার্ট করল। লাল-নীল চেঁচিয়ে উঠল। ঋক গড়িয়াহাটের মোড় থেকে বালিগঞ্জের দিকে টার্ন নিল। ইলেভেনের এক্সামে ফাস্ট হয়ে ড্যাডের কাছ থেকে বাইকটা আদায় করেছে ঋক। মাম-মাম আপোজ করেছিল। একটা ট্রাফিক সিগন্যাল না মেনে স্পিড বাড়িয়ে দিল আরো কিছুটা। রুবি পেরিয়ে পেছন ফিরে দেখল, না কোনও কলকাতা পুলিশ তাড়া করছে না। পাটুলির কাছে এসে ডান দিকে টার্ন নিল। টুংটাং’দের ফ্ল্যাটটা দেখা যাচ্ছে। একটু দূরে বাইকটা দাঁড় করাল। আবার বাইকটা স্টার্ট করে খুব জোরে ফ্ল্যাটটা ক্রশ করে বেরিয়ে গেল। উদ্দেশ্যহীন ভাবে যেতে যেতে দুপুর দুটো নাগাদ বারুইপুরে পৌঁছে বাইকটা দাঁড় করাল। ঋক এদিকে কোনদিন আসেনি। এদিক ওদিক তাকিয়ে একটাও টেলিফোন বুথ চোখে পড়ল না। না, মাম-মাম’কে আর ফোন করবে না। বাইকটা ঘুরিয়ে নিল। কোথায় যাবে। বাড়ি ফিরতে ভাল লাগছে না। ঘটকপুকুরে ড্যাডের এক রিলেটিভ থাকে। ড্যাড মাঝে মাঝে যায়। বিন্তিমাসি নামে এক মহিলাও ওদের বাড়িতে ওই ঘটকপুকুর থেকে আসেন। অনেক ফ্রেশ ভেজিটেবিল আনেন সঙ্গে। বিন্তিমাসির বাড়ি গেলে কেমন হয়। নাঃ, কোত্থাও যাবে না ঋক।আস্তে আস্তে বাইক চালাতে চালাতে ঋক গত রাতের কথা ভাবে।ভাবতে ভাবতে শরীরের ক্লান্তিটা আবার ফিরে আসে। খিদেও পেয়েছে খুব। ড্যাডও ওকে লাষ্ট টু ডেজ ফোন করেনি। মাম-মাম আর ড্যাডের যে কোনও বিপদ হতে পারে একথা ঋকের ভাবনায় আসে না। পাশ দিয়ে একটা বড় ট্রাকের তীব্র হর্ণে ঋকের ভাবনায় ছেদ পড়ে। ট্রাকটার হেলপার দরজা খুলে ঋককে গালাগাল দিতে দিতে বেরিয়ে যায়। ঋকের জিদ চেপে যায়। সেও স্পীড বাড়িয়ে ট্রাকটার পাশাপাশি যেতে যেতে হেলপারকে নেমে আসতে বলে। উলটো দিক থেকে আসা একটা গাড়িকে সাইড দিতে গিয়ে ট্রাকটা একটু বেশিই যেন বাঁদিকে নেমে আসে। ঋক প্রথমে দেখল ওর বাইকটা মাটি থেকে অনেকটা ওপরে উঠে গেল। মাটিতে নেমে বাইকটা ঋককে নিয়ে পিছনের চাকার নীচে ঢুকে গেল। ট্রাকটা একই স্পিডে যেমন যাচ্ছিল তেমনই যেতে লাগল।
Tags: ঋকের বড় হওয়া এবং তারপর…, তপন মোদক
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।