ঠিক পাঁচটায় টয়েটো গাড়িটা এসে দাঁড়ালো এয়ারপোর্টের গেটের সামনে। নেমে পড়লাম তিন বন্ধু। গাড়ি থেকে লাগেজ নামিয়ে ট্রলি-গাড়িতে চাপিয়ে আস্তে আস্তে এগোতে থাকলাম।
‘সেলাম সাব’ , ড্রাইভারের গলা শুনে হঠাৎই খেয়াল হল তাকে কিছু বকশিশ দেওয়া হয়নি। সঙ্গে সঙ্গে বললাম, ‘দেবাশিস ,আমরা ট্রলিটা দেখছি। তুই ড্রাইভার দাদাকে কিছু টাকা দিয়ে আয়’। আমার কথা শুনে দেবাশিস একটা ১০০ টাকার নোট বের করে ধরিয়ে দিল ড্রাইভার দাদার হাতে। কিছুতেই নেবে না। অনেক অনুরোধের পর নিল।
সকাল থেকে আমাদের জন্যে খুব খেটেছে। সকাল ৯টায় তিন বন্ধুকে হোটেল স্বাগতম থেকে তুলেছে। ঘুরিয়েছে অম্বর ফোর্ট, নাহরি ফোর্ট, রাজ প্যালেস, হাওয়া মহল, জল মহল সহ আরও কত জায়গায়। বলতে গেলে গোটা জয়পুর শহরটা ঘুরিয়ে দেখিয়েছে। জয়পুরকে ‘পিংঙ্ক সিটি’ বলা হয়। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে কোন বাড়ির বাইরের রঙটা গোলাপী রঙের। এটাই এই শহরের ঐতিহ্য। পরম্পরায় চলে আসছে। তবে ঘুরতে ঘুরতে সব জায়গায় গোলাপী রঙের বাড়ি চোখে পড়েনি। মনে হয় পুরানো ঐতিহ্য , সাবেকিয়ানায় থেকে ধীরে ধীরে সরে আসতে আরম্ভ করেছে জয়পুরের বর্তমান প্রজন্ম।
এই শহরে আমাদের আগমন এইডস বিষয়ক তিনদিনের আলোচনা সভাতে অংশ নেওয়ার জন্যে। দেশবিদেশ থেকে আগত বিশিষ্ট চিকিৎসক-বিজ্ঞানী-গবেষকদের মহাসমাবেশে অংশ নেওয়াটা নিঃসন্দেহে গর্বের ব্যাপার। সেইসঙ্গে জ্ঞান ভাণ্ডার বৃদ্ধির আকাঙ্খায় আর থাকতে না পেরে তিন জন রওনা দিয়েছিলাম জয়পুরের উদ্দেশ্যে। চারবেলা রাজস্থানী খাবার-দাবার জয়পুরে একটা বড় পাওনা। বাঙালি চিরকালই আমিষে ভক্ত। এখানে পরপর তিনদিন নিরামিশ খাবার। খাবারে মশলা ছিল প্রচুর। সেইসঙ্গে প্রতিটি খাবারে ধনেপাতা মেশানো। ফল আর স্যালাডের খামতি ছিল না। খারাপ লাগছিল না আদৌ।
তিনদিনের মাথায় সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা হতেই কাছাকাছি দেখার জিনিস গুলো দেখে নেওয়ার জন্যে সমস্ত ব্যবস্থা আগেই করে রাখা হয়েছিল। ফোন করতেই গাড়ি এসে দাঁড়াল সমাবেশ স্থল বিড়লা অডিটোরিয়াম গেটের সামনে। চটপট উঠে পড়লাম তিন জন। ডাঃ দেবাশিস দাস, নিউরোলজিস্ট। কলকাতা ন্যাশানাল মেডিকেল কলেজে পড়ায়। ডাঃ অমিত ভট্টাচার্য, জুনিয়র, বেলুড় ই এস আই হসপিটালে কাজ করে। আর আমি প্রাইভেট প্র্যাকটিশনার্স। তিনজনেই এইডস বিষয়ক গবেষণামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত। দেবাশিস থাকে টালিগঞ্জে। অমিত গড়িয়ায়। আমার বাড়ি কলেজ স্ট্রিটে। অমিতের একটা দোষ হল সন্দেহ বাতিক আর ভীতু স্বভাবের। সবসময় ও ভাবে ওর সঙ্গে যারা কাজ করছে ওকে কোন না কোনভাবে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করছে। দেবাশিস বার বার বুঝিয়েছে, ওটা তার মনের ভুল। মাঝে কিছুদিন ওষুধও খেয়েছে। তবে কিছুদিন খাওয়ার পর নিজের থেকেই বন্ধ করে দিয়েছে। প্লেন ক্র্যাশ করতে পারে বলে কিছুতেই জয়পুর আসার সময় প্লেনে চাপলো না। যোধপুর এক্সপ্রেসে আসলো। ট্রেনে সারারাত না ঘুমিয়ে আমাদের দুজনকে জাগিয়ে রাখলো। ওর ঘুম না আসার কারণ হল ওকে হাসপাতাল থেকে কে যেন ফোন করছিল। ওর দেখা একজন রোগীর সম্পর্কে কিছু জানার জন্যে। সেই থেকে অমিতের ধারণা হয়ে গেল লোকটা ইচ্ছে করে ওকে ব্ল্যাকমেল করে যাচ্ছে। কোনরকমে ওকে বুঝিয়ে সে রাতটা কাটানো গেল।
জয়পুর থেকে ফেরার সময় অমিত কিছুতেই প্লেনে চাপতে চাইছিলো না। দেবাশিস জোর করে ওকে ধরে নিয়ে এসেছিল ওর ভয়টা কাটানোর জন্যে।
ট্রলি ঠেলে গেটে টিকিট দেখাতেই ভেতরে ঢোকার অনুমতি মিলল। ঢুকে ট্রলি থেকে লাগেজ নামাতে যেতেই আটকে দিল সিকিউরিটি গার্ড। ‘বাদ মে আইয়ে, আপকা টাইম আভি নেহি হুয়া। সামান কা সাথ চুপচাপ বয়ঠে রহিয়ে সিট পর’।
বোর্ডের দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল ইন্ডিগো প্লেনের সিকিউরিটি চেকআপ চলছে। আমাদের প্লেনের টিকিট ছিল স্পাইসজেটের। ছাড়বে সন্ধ্যে সাতটায়। অগত্যা পাশের সিটে মালপত্র নিয়ে বসে পড়া ছাড়া আর কোন উপায় দেখলাম না, অমিতের মুখটা দেখে হাসি পেয়ে গেল। বেচারা। মুখ শুকিয়ে আমসি হয়ে গেছে। ভীষণ ভয় পাচ্ছে ভেতরে ভেতরে। সিট থেকে উঠে ওকে ডেকে এনে পাশে বসতে বললাম। কে শোনে কার কথা।
বলল, তুমি আমার মালপত্রগুলো দেখো, আমি একটু পাইচারি করি’, মনে মনে ভাবলাম, ‘ঠিক আছে, ও যদি এতে একটু স্বাচ্ছন্দ বোধ করে তো ভালই’। বসে বসে দেখতে লাগলাম সিকিউরিটি চেকের কাণ্ডকারখানা। একের পর লাগেজ স্ক্যানার মেশিনে ঢোকাচ্ছে। ধীরে ধীরে স্ক্যান হয়ে লাগেজগুলো বেরিয়ে আসতেই যার লাগেজ সে নিয়ে ছুটছে বোর্ডিং পাশ কাউন্টারের দিকে। দেখতে দেখতে এক ঘণ্টা কেটে গেল। মাইকে ঘোষণা হতে লাগল যে সব যাত্রীরা এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে চাপবেন তারা যেন সিকিউরিটি চেক আপের প্রস্তুতি নেন। আবার একদল যাত্রীরা হুড়মুড়িয়ে চেকিং এর জন্য ঢোকা। ব্যস্ততা সব সময় লেগে রয়েছে। এর মধ্যে চোখে পড়লো কতিপয় অল্প বয়সী বিমান সেবিকা ও সিকিউরিটি অফিসারের ব্যস্ততা। ছুটে চলেছে নিজেদের নির্ধারিত কর্মসূচির দিকে। এ এক অদ্ভূত ঘেরাটোপের জায়গা। ঢুকে পড়লে আর বেরোনো যায় না।
এরই ফাঁকে দেবাশিস একবার টয়লেট ঘুরে এলো। অমিত তিনবার, আমি যাবো যাবো করে উঠে পড়লাম। কেননা আমারই জিম্মায় রয়েছে সব মালপত্র। সাড়ে ছটায় ঘোষণা হল স্পাইস জেটের সিকিউরিটি চেক আপের। অমিত আবার হুটোপাটি শুরু করে দিল। ব্যস্ত হয়ে মালপত্র ট্রলিতে নিয়ে এগিয়ে চলল। অভ্যাস নেই ট্রলি ঠেলার। জোরে ঠেলতে গিয়ে একবার পুরো ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেল। তাড়াতাড়ি গিয়ে ওর হাত থেকে ট্রলিটা নিয়ে নিলাম। স্ক্যানার মেসিনে চাপিয়ে দিলাম আমাদের লাগেজগুলো। আবার এক দফা সিকিউরিটি চেক আপের মুখোমুখি হতে হল। পরীক্ষা পর্ব চুকলো। ভেতরের ঘরে এসে ঢুকলাম। ফাঁকা সিট পেয়ে বসে পড়লাম। হঠাৎ আমার ট্যাগ কার্ডটা দেখে অমিত বলে উঠলো, কই আমার ব্যাগে তো ওসব কিছু লাগানো নেই। দেবাশিস আবার মজা করার জন্যে ওকে আর ভয় পাইয়ে দিল। বলল,‘তোর আর এয়ারপোর্ট থেকে বেরোনো হল না। কেন না তোর ব্যাগে ট্যাগ কার্ড লাগালো নেই, কলকাতা এয়ারপোর্টে পৌঁছনো মাত্র সিকিউরিটি গার্ড তোকে ধরবে যে ব্যাগটা কারো কাছ থেকে চুরি করেছো, ওটা তোমার ব্যাগ নয়’।
ব্যাস আর যায় কোথায়? ‘তবে কি হবে’- বলে ছুটলো টয়লেটের দিকে। দেবাশিস তাড়াতাড়ি ওর ব্যাগটা নিয়ে গেটের সিকিউরিটি অফিসারকে বলল, তাড়াহুড়োয় ব্যাগে ট্যাগ কার্ডটা লাগানো হয়নি’, সঙ্গে সঙ্গে একটা ট্যাগ কার্ড নিয়ে ব্যাগে লাগিয়ে দিলেন অফিসারটি।
কাঁচুমাচু মুখে অমিত ফিরতেই বললাম ,সব ঠিক হয়ে গেছে। কোন চিন্তা নেই। ট্যাগ কার্ড লাগানো হয়ে গেছে। তুই শান্ত হ। এখন প্লেনের সময় হয়ে গেছে’।
বলতে বলতে ঘোষণা হল যে সব যাত্রীরা স্পাইসজেটের জন্য অপেক্ষা করে আছেন তাঁরা যেন ধীরে ধীরে প্লেনের দিকে এগিয়ে যান ও নিজের আসনে বসে পড়েন।
আমাদের বোর্ডিং নম্বর ছিল ২২এ-বি-সি, একই রো। দেবাশিস বলল, ‘পেছনের গেট দিয়ে উঠতে হবে। কেননা ওই নম্বরের সিট পেছনের দিকেই থাকবে’। ঢোকার মুখে মধুর সম্ভাষণ – ‘স্বাগতম’ দুই মেঘ বালিকার। আমরাও প্রত্যুত্তর দিয়ে ধন্যবাদ জানানোর জন্যে মুখের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম। আরে খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে। কিছুটা থমকে দাঁড়িয়ে আবার প্লেনের ভেতরে ঢুকে পড়লাম। নিজেদের সিট খুঁজে নিয়ে বসে পড়লাম। অমিত জানালার ধারে বসতে চাইলো না, মাঝে আমি। দেবাশিস জানলার ধারে।
অনেকক্ষণ পরে মনে পড়ল মেঘ বালিকার নামটা। সঞ্চারী সাহা। অনার্স নিয়ে পড়ত প্রেসিডেন্সি কলেজে, সোসিওলজি বিভাগে । সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। ওর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল ওদের কলেজে একটা লেকচার দেওয়ার সময়ে। আমি একটা এন জি ও এর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। সেই এন জি ও থেকে স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক সমীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আমাকে। ওই কাজের জন্য কিছু মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল, প্রেসিডেন্সি কলেজে আমারই এক পরিচিত শিক্ষকের সুপারিশে সোসিওলজি বিভাগ থেকে জনা দশ পনের ছেলে মেয়ে এসেছিল ওই কাজ করার জন্যে। ওদের মধ্যে সঞ্চারী নেতৃত্ব দিয়ে কাজটা খুব তাড়াতাড়ি উদ্ধার করে দিয়েছিল। সে প্রায় বছর ৪-৫ আগেকার কথা। তখন সঞ্চারীর বয়স ছিল উনিশ বা কুড়ি। দেখতে বেশ সুন্দর, দীর্ঘাঙ্গী। কথাবার্তায় বেশ সপ্রতিভ। বিনয়ী। সার্ভে করার সময় বন্ধু-বান্ধবীদের নিজের থেকে সময় বার করে নিয়ে কি ভাবে করা দরকার, কি করতে হবে, কত তাড়াতাড়ি করতে হবে, এসব খুঁটিনাটি বুঝিয়ে দিয়েছিল, যার ফলে কাজটা খুব তাড়াতাড়ি করা সম্ভব হয়েছিল। ওই কাজটা যদি স্থানীয় ছেলে মেয়েদের দিয়ে করানো হত তবে কাজটা ভালো হতো না, সময়ও বেশী লাগতো। ওই কাজের জন্যে ওদেরকে কিছু হাতখরচ ও গাড়ি ভাড়া বাবদ কিছু টাকা পয়সাও দিয়েছিলাম। এতে ওরা খুবই খুশি হয়েছিল। থিয়োরিটিক্যাল পড়ার সঙ্গে প্র্যাকটিক্যাল কাজের অভিজ্ঞতা লাভ কম নয়। বাড়তি পাওনা হিসেবে পেয়েছিল ভাল কাজ করার জন্যে একটা শংসাপত্র।
হঠাৎ খেয়াল হল, দেবাশিস যেন কিছু বলছে, ‘ ওই দেখ, মেঘ বালিকাদের একজন কখন থেকে বারে বারে তোকে দেখছে । কেন? রে ? ’
বললাম ‘পরে বলবো, এখন নয়।’
বিমান ছাড়ার সময় হতেই, সঞ্চারী ও তার দুই সঙ্গী যাত্রীদের উদ্দেশে মুখে বলার সঙ্গে আকার ইঙ্গিতে দেখিয়ে দিল ছাড়ার সময় সিট বেল্ট কিভাবে বাঁধতে হবে, কখন খুলে দিতে হবে, শ্বাসকষ্ট হলে মাস্ক কিভাবে লাগাতে হবে ইত্যাদি, ইত্যাদি।
অমিতের মুখে আর কোন কথা নেই। একদম চুপচাপ হয়ে গেছে। ওকে সামলানোর জন্যে চানাচুর, লজেন্স, বিস্কুট কিছুক্ষণ অন্তর ওর হাতে দিতে থাকলাম। কিন্তু ভবি ভোলার নয়। একদম কাঠ হয়েই রইল। কোন কথাবার্তা নেই।
‘কি রে আর বিমানে চড়বি?’ দেবাশিস জিঞ্জাসা করলো।
‘এই ফাস্ট আর লাস্ট, আর কখনো উঠবো না,- জোরে বলে উঠল অমিত। ওর বালকসুলভ কথা শুনেই একটু জোরে হেসে ফেলেছি। একটু অপ্রস্তুত হয়ে লক্ষ্য করলাম পাশের যাত্রীরা ও সঞ্চারী কেমন অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবছে – ‘হঠাৎ কি হলো?’
এর মধ্যে সঞ্চারী ও আর তার সঙ্গীরা ২-৩ বার আমাদের সামনে দিয়ে চলে গেল ট্রলি ঠেলে। ট্রলিতে সাজানো হরেক রকমের বিস্কুট, ঠান্ডা পানীয়, কফি, চা, বাদাম, কেক, মিনারেল ওয়াটার ইত্যাদি।
‘কিছু দরকার আছে?’ মেঘবালিকা সঞ্চারী একবার জিজ্ঞাসা করল। এক বোতল জল চেয়ে নিলাম। মুখের দিকে তাকাতেই একটা সুন্দর হাসি দিয়ে ট্রলি ঠেলে এগিয়ে গেল সামনের দিকে। মনে হল যেন কিছুটা বিব্রত। কেন? এরকম একটা পেশা বেছে নেওয়ার জন্য কি? আমার তো খুব অবাক লাগছিল ওকে এই বেশে এখানে দেখে। সমীক্ষার কাজ যখন করছিল তখন আমিই ওকে বলেছিলাম, ‘তোমার বাড়ির যা পরিবেশ, তুমি কিন্তু আই-এ-এস পরীক্ষাটা দিও। নিদেনপক্ষে ডবলু-বি-সি-এস টা দিও। তোমাদের মতন কৃতি মেয়েদের খুব দরকার আছে প্রশাসনিক কাজে। এই যে চারদিকে দেখছো দুর্নীতি, কাজ না করার মানসিকতা। তোমরা যদি দল বেঁধে আসো তাহলে একদিন দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ভরে উঠবে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষে। তাই কিছুটা অবাক হয়েছিলাম সঞ্চারীকে মেঘবালিকা পেশায় দেখে।
হাসপাতালে চিকিৎক-নার্সদের নিয়ে নানা যেমন মুখরোচক গল্প চালু আছে। উড়ানেও পাইলট ও মেঘ বালিকাদের নিয়ে অনেক গল্প শোনা যায়, এরা একে অপরকে ছেড়ে না কি থাকতে পারে না। সঞ্চারীর এয়ার হোস্টেস হওয়ার পেছনে কি তেমন কোন পাইলটের হাত আছে? যদি কেউ থেকে থাকে তবে মনে হয় ভুলপথেই সঞ্চারী চালিত হয়েছে।
চমকে উঠলাম, সঞ্চারীর ডাকে। ‘ডাঃ দাস, আমরা কলকাতার কাছাকাছি এসে গেছি। সিট বেল্টটা দয়া করে বেঁধে নিন। আমাদের প্লেন এয়ারপোর্টের মাটি আর কিছুক্ষণের মধ্যে ছুঁয়ে ফেলবে। দেবাশিস তো খুব অবাক! ‘কি ব্যাপার গুরু, তোর চেনা জানা নাকি?’
এবারেও সংক্ষিপ্ত উত্তর দিলাম, ‘পরে বলবো সব কথা’।
……
এর ঠিক ক-দিন পর বিকেলবেলায় চেম্বারে যাওয়ার আগে টিভিটা খুলেই চমকে উঠলাম। জয়পুর- কলকাতা গামী স্পাইসজেটের বিমান মাঝ আকাশে উড়িয়ে দেওয়ার নাশকতা ফাঁস।কলকাতা সহ দেশের সব বিমানবন্দরে জারি হাই-আলার্ট।গ্রেফতার দশ। জঙ্গিদের তথ্য দেওয়ার অভিযোগে কলকাতা থেকে গ্রেফতার এক বিমানসেবিকা।আরে এ তো আমার অতি পরিচিত সেই সঞ্চারী সাহা। কদিন আগেই যার হাসিমুখ সঙ্গী করে জয়পুর থেকে ফিরেছি আমরা।গোটা টিভি স্ক্রিন জুড়ে ব্রেকিং নিউজ হয়ে চলেছে সঞ্চারীর ছবি আর নাম। হঠাৎই বেজে উঠল ওঘরে থাকা ল্যান্ডফোন আর একটু দূরে থাকা মোবাইলটা। অনুমান করলাম ফোনের অপর প্রান্তের একজন দেবাশিস আর অন্যজন অমিত।
Tags: প্রদীপ কুমার দাস, মেঘ বালিকা
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।