26 Sep

স্থিরবিন্দু

লিখেছেন:পঙ্কজ চক্রবর্তী


চন্দনা বলেছিল এই শরীর নিয়ে বেরুবে?

‘না বেরিয়ে উপায় কি? আমাকে নিয়ে এই কটা দিন তুমি কতো কষ্ট করে সংসার চালিয়েছো।এভাবে ঘরে থাকাটা আরো যন্ত্রণার। হরিপদর গায়ে হাত রেখে চন্দনা বলে জ্বরটা এখনো আছে। এই শরীর নিয়ে বেরুলে আমি খুব দুশ্চিন্তায় থাকবো।

হেসে উঠেছিল হরিপদ। আমাদের আবার দুশ্চিন্তা? চিন্তা করলে তার কিছু না কিছু একটা উপায় থাকে। দুশ্চিন্তার মনে হয় কোন সমাধান নেই। সে তার নিজের মতই চলে। আর জ্বর যদি বলো এটা তোমার জ্বর। এটা থাকা ভালো। স্বামীর কথায় চুপ করে যায় চন্দনা। সে জানে ওর শরীরের থেকে মনের শক্তি অনেক বেশি। সেই শক্তি দিয়ে ও কলোনির মধ্যে ছোট্ট হলেও ছেঁচা বেড়ার ঘর করেছে। গতরটাই ওর পুঁজি। ওর মন। হাড়ভাঙা পরিশ্রমের মধ্যেও মুখের হাসিটাকে ধরে রাখে। দিন আনা দিন খাওয়া রোজগারের বাধা কোন দিন পিছিয়ে আসেনি। বৃষ্টিতে শীতে-গরমে ঘরে ঢুকে পড়েনি। দুর্যোগের দিনগুলোয় বরং বেশি ভাড়া খেটেছে।

দুই

একটি ছেলে একটি মেয়ে। ছেলেটির বয়স বছর পঁচিশ। মেয়েটির কুড়ি-বাইশ হবে। ওরা দুজন দাঁড়ালো  রিক্সার সামনে। ছেলেটি বললো চন্দননগর কে-ডি-এম পার্কে যাবো। প্যাসেঞ্জারদের কাছে নামটা জেনেছি। ছেলেটির কথায় হরিপদর মাথায় ঘোর। মনে মনে ভাবলো পার্কটা চুঁচুড়ো থেকে অনেক দূর। ছোটখাটো পথের ভাড়া হলে আলাদা কথা। ওখানে পৌঁছতে এক ঘন্টারও বেশি। অতটা ধকল নিতে পারবে শরীর? হাঁ বা না, কিছু বলার আগেই ছেলেটি এবং মেয়েটি তখন বসে পড়েছে সিটের উপর। ওদের দেখে কেমন মায়া জাগলো হরিপদর মনে। না বললে নেবে যাবে। তাকে করে ভেসে উঠবে একটা দুঃখ। তাছাড়া পনের-ষোল বছরের জীবনে যেটা তার রেকর্ড, দিনে এবং রাত বিরেতে, কাউকে সে না বলেনি। আজ বললে নিজের সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গ করবে? কিন্তু আজ যে তার ভাঙা শরীর, না কথাটা বলতে এক সেকেণ্ড সময় লাগবে না। একথা বললে মনের সেই পাখিটা মনের মধ্যে উড়বে। ডানা ঝাপটাবে। ছেলেটির এবং মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে পারবো কি পারবোনা, ফেরার সময় গাড়িটা খালি এলে তার হিসাব, ভাড়ার দরদাম – যাতে পরে কোন ঝামেলা বা কথা কাটাকাটি না হয় – এই সব ভুলে গেলো সে। বরং তাদের ভালবাসার গন্ধটা পৌঁছে গেলো ওর বুকের মধ্যে। অমনি মনের পাখিটার রঙ বদলে গেলো। পাখিটা এখন সাজ পরেছে। হাসি পায় হরিপদর। ভাবে – মনের পাখি কি নারী? এখন কতো সুন্দর তাকে দেখতে লাগছে। হাওয়ায় ডানা মেলছে। চল মন পাখি চল …

ছেলেটি এবার বলে উঠলো আমরা শহরের ভিড় ভাট্টার মধ্যে দিয়ে যাবো না। আমাদের ফাঁকা জায়গা দিয়ে নিয়ে চলুন। যেখান দিয়ে মাঠ-ঘাট-জলাশয়, পুরানো গাছ-ফসল দেখতে দেখতে পাবো। আমাদের তাড়াতাড়ি নেই। যেতে যেতে কোন জায়গা ভালো লেগে গেলে বসেও পড়তে পারি।

গতকাল থেকে জ্বরটা কমেছে। কয়েকটা দিন কাবু হয়ে শুয়েছিলো বিছানায়। একটাই ঘর। ভয় হচ্ছিল যদি বাচ্ছা দুটোরও ধরে যায়। সেদিক দিয়ে বাঁচোয়া। যেটুকু দানাপানি ছিলো খরচ হয়ে গেছে। আজ দিনে মেয়েটা ভাইকে বাতাসা দিয়ে যে ফোঁটা দেবে সেটুকুও নেই। চুঁচুড়ো থেকে চন্দননগর যেতে কাঁটাকলের পাশ দিয়ে নাড়ুয়া হয়ে বাগবাজার। ওখান থেকে চন্দননগর স্টেশন। তারপর পার্ক। কিন্তু এই রাস্তার দু’পাশে বাড়ি আর বাড়ি। মাঠ-ঘাট গাছ তলার নীচু দিয়ে যেতে গেলে চুঁচুড়ো থেকে সুগন্ধ্যার দিল্লি রোডের মোড়। ওখান থেকে ধরে প্রায় ছয় কিলোমিটার সুবিপুর গর্জির মোড়। তারপর দিল্লি রোডকে পিছনে ফেলে চন্দননগর স্টেশনের রাস্তা।

অনেকটা ধকল। অনেকটা রাস্তা। ওদেরও তাড়া নেই। পৌঁছলেই হলো। মেয়েটি এবার ব্যাগ থেকে টিফিন বের করে একটা কাগজের থালায় জেলি মাখা পাউরুটি ডিম মিষ্টি দিয়ে বললো ধরো। হরিপদর চোখে জল। মনে হলো ওদের রিক্সায় একটু বসতে বলে একছুটে খাবার গুলো দিয়ে আসে ঘরে। মেয়েটি বললো কি হলো নাও। হরিপদ ইতস্তত করে। মনে মনে বলে দিদিমনি এই খাবার আমার গলা দিয়ে নামবে না।

মেয়েটি বললো তুমি খাবার না নিলে আমি পার্কে যাবোনা। আবার ট্রেনে উঠে ফিরে যাবো। মেয়েটির মধ্যে যেন হরিপদর মা ঢুকে পড়েছে। খাবারটা ধরতে গিয়ে জল নামে চোখে। মেয়েটি ফ্লাক্স থেকে কফি ঢালে। অনেকটা ঝুরিভাজা দেয় হাতে। বলে লজ্জা পেতে হবে না। সকালে কি খেয়ে বেরিয়েছো – ওসব আমার জানা আছে। হাতে পায়ে অনেকটা বল পায় সে। হরিপদর মনে হয় – সব সময় মনের জোর দিয়ে হয় না। শরীরের নিজস্ব একটা শক্তির দরকার। সেটা না থাকলে তার ওপর জোর খাটাতে গেলে বিপদের ঝুঁকি নিতে হয়।

মেয়েটির মধ্যে মায়ের শাসন। এবার সে মাকে নিয়ে রিক্সা চালাতে পারবে।

তিন

পার্কে পৌঁছে – মেয়েটি দুটো আপেল একটা পিয়ারা একটা ন্যাসপাতি দিয়ে বললো এগুলো খাবে। আমরা ঘণ্টা তিনেক থাকবো। এতো হাড়ভাঙা পরিশ্রম। পেটে কি যায় সেটা আমি জানি, পঞ্চাশটা টাকা রাখো। ভালো লাগলে থাকবো। না লাগলে চলে আসবো। অরিজিনালি আমরা ব্যান্ডেল চার্চে যাবো বলে বেরিয়েছিলাম। ট্রেনের পথে পার্কটা চোখে পড়লো। দেখে ভালো লাগলো। রাহুল বললো সামনের স্টেশনে নেমে পার্কে গেলে হুশ করে চলে যাবো – তার থেকে পরের স্টেশনে নেমে ওখানে পৌঁছলে প্রকৃতির মধ্যে দিয়ে একটা বাঁধানো প্রকৃতির কাছে আসা যাবে। তখন বোঝা যাবে এই অংশটা কতোটা কষ্টের মধ্যে আছে। রিয়েলি – এই প্যাসানটাকে ধরা যাবে।

এমন কথা শুনে হাঁ হয়ে গেলো হরিপদ। সত্যি তো একটা বড়ো জায়গা নিয়ে পার্ক হয় – সেখানে অনেক কায়দা না থাকলে, মানুষ আসবে না, মানুষকে টানতে গেলে যে যে জিনিসগুলোর দরকার সেগুলো করতে হবে। লোক এলে তবেই রোজগার।

পার্কটা ছিলো বলে কাজটা পেয়েছে। কিন্তু ওর মন উড়ুউড়ু। ফল গুলোকে সিটের নীচে দিয়ে মনে হলো। বাড়ি যাই। কিন্তু সে যে হবার নয়। মেয়েটি ওর পা বেঁধে দিয়েছে। যদি ওর ভালো না লাগে হুট করে বেরিয়ে দেখতে না পায় – বিশ্বাস ভঙ্গ হয়ে যাবে? বাড়ির জন্য বুকের ভেতরটা চিনচিন করে। চন্দনার হাতে পঞ্চাশটা টাকা আর ফলগুলো দিলে অনেকটা সামলে নিতো। মেয়েটা যে কি বুঝে উঠতে পারেনা। কোথায় যাবে, কতো ভাড়া কিছুই ঠিক হয়নি। রিক্সাটাই এখন ওদের আশ্রয়।

বছর দুই হবে। একটা দুঃখ উঠে এসেছিলো মাটির তলা হতে। একবার ঘড়ির মোড় থেকে স্টেশন পর্যন্ত দুজনকে রিক্সায় এনেছিলো, রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিলো দশটাকা।

হরিপদ বলেছিলো দু’জনের বাস ভাড়াতো দশ টাকা?

বাস ভাড়াটাই তো দিলুম।

আপনারা বাসে তো আসেননি।

নিতে হয় নাও এর বেশি দেবোনা।

দেবেন না যখন রেখে দিন।

সঙ্গে যে লোকটা ছিলো সে বললো এই আজকে একবার চেপেছি পরে যখন চাপবো সেদিন দিয়ে দোব। পাশের লোকটার লাউখোলায় হারমনিয়ামের বাজনা। লোকে যাতে বুঝতে না পারে। বুঝতে পারলে ভাববে হয়ত একটাকা দুটাকা কম পড়ে গেছে।

কিছু একটা আন্দাজ করে রতন এসে বলেছিলো ধরবো শ্যালা হারামির বাচ্চা দুটোকে? হরিপদ বলেছিলো ছেড়ে দে। মনে কর আমি ওদের আনিনি। সেদিন কষ্ট হয়েছিলো খুব। তবে কষ্টটা কে মনের মধ্যে পুষে রাখেনি। শুধু লোকটির কথায় জ্বালা জ্বালা করে উঠেছিলো শরীর। মনে হয়েছিলো মাথার ভিতরে ঢুকে কামড়ে দিয়েছে কাঠপিপড়ে।

হরিপদ বুঝতে পারে বাজে ধরণের লোকেরা যেদিন রিক্সায় ওঠে সেদিন যতই প্যাডেলে চাপ দিক রিক্সা আর গড়াতে চায় না। সেদিন কুড়ি টাকার কাজ করলে দুশো তিনশো টাকার ধাক্কা। হয় রিক্সার কিছু ভেঙে গেলো নয়তো হুনমানে পঞ্চাশ ষাটটা পেটো খোলা ভেঙে দিয়েছে। কিছু না কিছু একটা হবেই। বাজে লোকেরা ঠকিয়ে চুরি করে মিথ্যা কথা বলে মজুরির টাকা মেরে দিয়ে আনন্দ পায়। মানুষের কান্না অভিসম্পাত কুড়িয়ে ইহকালকে ঝরঝরে করে। আর যেটা হয় পরকালের নরক বাসের ঠিকানাটা নিজের হাতেই লিখে দেয়। এখানে গরীব বড়ো লোক বলে আলাদা কিছু নেই। মনবৃত্তিতে দুজনেই সমান। চায়ের দোকানে কাঁচের গ্লাস কমে যায়। ঘুঘনি আলুরদমের দোকানে স্টিলের প্লেট-চামচ কমে যায়।

একদিন রাত্রি দশটার পরে ডাউন প্লাটফর্মে শেষের দিকে একটি মেয়ে দাঁড়িয়েছিলো একটা লোকের হাত ধরে। উদ্বাস্তু মেয়েরা মাঝে মাঝে চলে আসে প্ল্যাটফর্মে। মেয়েটা বলছে টাকা না দিলে তোকে যেতে দোবনা। শুয়েছিস … লোকটা বলেছে কালকে দেবে। লোকটা মেয়েটির শরীর নিয়েছে অথচ টাকা দেবে না। ডাউন ট্রেন ঢুকলো। লোকটা এক হাঁচকায় হাতটা ছিনিয়ে উঠে পড়লো ট্রেনে। তখনই পোষ্টের পিছন থেকে পাঁচ-সাত বছরের দুটো ছেলে মেয়ে অশ্রাব্য খিস্তি করতে করতে ছুটলো ডাউন ট্রেনের পিছনে। মেয়েটি কাঁদছিলো। হরিপদ ওর হাতে পঞ্চাশটা টাকা দিয়েছিলো। আজকের পঞ্চাশ যেন সেদিনের দেওয়া নেওয়ার পঞ্চাশের সংখ্যাটার সঙ্গে অভাবের হাতছানি। দুঃখের উপহার ভাবতে গিয়ে কেঁপে ওঠে হরিপদ। কিন্তু এত বছর পর এমন ভাবনা আসছে কেন? যিনি দেবার তিনি কারো হাত দিয়ে ওকে দিয়েছে। তেমনি ওর হাত দিয়েও তিনি মেয়েটিকে দিয়েছেন এর মধ্যে নিজের বলতে রইল কি?

খিদে পাচ্ছিলো বলে একটা মুড়ির প্যাকেট কিনলো হরিপদ। খানিকটা খেয়ে রেখে দিলো। কিছু ভালো লাগছে না। অস্থিরতায় বোবা গোঙানির শব্দ হয় বুকে। হরিপদ জানে দুঃখের ভিতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যেমন দুঃখের পথটা পার হওয়া যায় তেমনি আনন্দেরও একটা আদটা দিন বরাদ্দ রাখতে হয়। শুধু আজকের দিনটাকে সে ঠাওর করতে পারছে না। মনে মনে বলে আমার কথা না হয় বাদ দিলাম, কিন্তু বাচ্ছা দুটো যে পথের দিকে চেয়ে আছে।

চার

ওরা পার্ক থেকে ঘন্টা দুই পরে বেরুলো। রিক্সার কাছে এসে মেয়েটি বললো আজ সারাদিন একসঙ্গে থাকবো। বাড়ি যাবো বললে আমাদেরও নিয়ে যেতে হবে। হরিপদ জিভ কেটে বললো আমার ছেঁচা বেড়ার একটা ঘর। কোথায় তোমাদের শুতে বসতে দেবো?

মেয়েটি বললো জানিস রাহুল তোদের বাড়িটার পাশে আমার জন্য একটা ছেঁচা বেড়ার ঘর করে দিবি?

ব্যবসার কাজে তুই বেরিয়ে গেলে আমি ওই ঘরটাতে থাকবো।

তথাস্তু মহারাণী

কথা দিলি তুই?

কথা দিলুম

হরিপদ হকচকিয়ে যায়। ওর ছেঁচা বাড়িটা আর একটা ছেঁচা বাড়ি বানাচ্ছে। বারে মেয়ে। এমন অহঙ্কার শূন্য মেয়ে – পৃথিবীতে না থাকলে পৃথিবীর আলো আনন্দটাই নিভে যায়।

মেয়েটি বললো একটা হোটেলে নিয়ে চলো। খিদে পায়নি বুঝি?

হরিপদ লজ্জা পায়।

মেয়েটি বললো ওখানে আমরা তিনজন একসঙ্গে খাবো। তুমি রিক্সা চালাও বলে নিজেকে গুটিয়ে রাখলে আমরাও উপোষ করবো।

মেয়েটি গোড়া মেরে দিয়ে বারবার অস্বস্তির মধ্যে ফেলছে। কিছু বলার আগে ও তার শেষ কথাটা বলে রাখছে। ছোট থেকেই ও বাবা মায়ের আস্কারায় বড়ো হয়েছে ঠিক কথা – তবে ওর নিজের মধ্যে আসল শিক্ষটাই আছে। এই শিক্ষটাকে প্রণাম করতে হয়। কোন দেওয়াল নেই। আড়াল নেই। আপন করাটাই ওর কাজ।

বাগবাজারের মোড়ে রিক্সা থামলো। মেয়েটি বললো শোনো তুমি কিন্তু এটা খাবোনা ওটা খাবোনা করবেনা। চুপচাপ খাবে এই বলে রাখলুম। ওর কথাগুলো চকচক করে উঠলো রোদ্দুরে।

মেয়েটি বলে উঠলো আজ ভাই ফোঁটা। বাহুলের বোন নেই। আমারও ভাই নেই। ঠিক করলুম বাড়ি থেকে গাড়ি না নিয়ে খোলা মেলা ঘুরবো – খাবো দাবো। মেয়েটার গায়ে খোলস নেই। নিজেদের গাড়ি থাকতেও সাধারণের মত এসেছে। ছেঁচা ঘরে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।

খাবারের টেবিলে বসে চোখে জল এলো হরিপদর। এত ভালোভালো খাবারের থালাটা ছেলে মেয়েদের দিলে দু ভাই বোনেতে আনন্দ করে খেতো। চন্দনা ওদের জন্য কি ব্যবস্থা করবে কিছুতেই বুঝতে পারেনা, বুকের মধ্যে তোলপাড় হয়। এত সুস্বাদু দামী খাবার সে কোনদিন খায়নি, তেমনি ছেলেমেয়েদের খাওয়াতে পারেনি।

রিক্সা থামল ব্যাণ্ডেল চার্চে। মেয়েটি বললো তুমি আমাদের জন্য বোর হচ্ছো নাতো? আমাদের খামখেয়ালি দামালপনা তোমাকে পোয়াতে হচ্ছে। হরিপদ বললো এত বছর রিক্সা টানছি। এমন প্যাসেঞ্জার কোনদিন পাইনি। খুব কষ্ট করে কথা গুলো বললো হরিপদ।

পাঁচ

চার্চ থেকে বেরিয়ে মেয়েটি হরিপদকে বললো যেশাস-কে প্রণাম করার সময় হটাৎ মনে হল তোমার সঙ্গে আমরা স্বার্থপরের মত ব্যবহার করেছি।

তুমি শ্রমকে বিক্রি করো বলে, আমরা তোমার মজুরিকে কিনে, খাঁচার মধ্যে বন্দি করে রেখেছিলুম, ছিঃ – এ যে অপরাধ।

মেয়েটি কি স্বর্গের দেবী? ওর কষ্ট যন্ত্রণার কথা ঠিকঠিক বলছে। মনটাকে হাতড়াতে থাকে হরিপদ। নিজেকে সামলে বলে এমন কথা বলতে নেই। তোমাদের আনন্দে এতটা পথের পরিশ্রম ভেসে গেছে। যদি তোমাদের আনন্দ হয়ে থাকে তাহলে আমার পরিশ্রমটাও আনন্দের। আনন্দ না থাকলে কাজ তেতো হয়ে ওঠে। মেয়েটি বললো ঘরে তোমার কে কে আছে।

ছেলে মেয়ে আর বউ

ওদের বয়স

ছেলের সাত – মেয়ের পাঁচ।

মেয়েটি বললো ওঃ গড। আমি সারাক্ষণ তোমার মধ্যে একটা অস্বস্তি লক্ষ্য করেছি। কিন্তু সময়টা অনেক ওভার হয়ে গেছে। আমাদের বিগবাজারে নিয়ে চলো। রিক্সা থামলো বিগবাজারে। কিছুক্ষণ পর ওরা দুজন প্যাকেট নিয়ে এসে বললো এগুলো রাখো।

দিদিমণি এতো কি?

কিছু নয় রাখো। এরপর অনেকগুলো একশো টাকার নোট দিলো ওর হাতে। হরিপদ বললো এতো তো নয়।

রাহুল বললো তোমার মনকে – আমার মন দিয়ে দেখলুম। সে দুটো পাঁচশো টাকার নোট রেখে দিলো হরিপদর পকেটে। মেয়েটি বলল তুই এ্যামবারেসিং ফিল করছিস নাতো?

আমি এনজয় করছি।

কি রকম? ছেলেটি তখন হাওয়ার গভীরে উড়ে যাওয়া পাখির ডানা। বললো

তুই একটা সাদা কাগজের প্রচ্ছদের উপর আর একটা প্রচ্ছদ এঁকে দিচ্ছিস।

ছয়

ঘরের মধ্যে থৈ থৈ করছে জিনিস। চাল-ডাল-ময়দা-সরষের তেল-সাদা তেল-মিষ্টি-ছেলে মেয়েদের জামা প্যান্ট। চন্দনার শাড়ি-শায়া-ব্লাউজ। ওর ধুতি গেঞ্জি-পাঞ্জাবি। ছেলে মেয়েরা ঘরে লুচি মিষ্টি খাচ্ছে। হরিপদ বাইরে থেকে বলে উঠলো। চন্দনা একবার বাইরে এসো।

হরিপদ ডান হাতটা ওপরে তুলে বললো দেখো আকাশটা কেমন হাসছে।

Tags: ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ