সেদিন আমি আর সুতপা সিনেমা দেখে ফিরছি, হঠাৎ রবির সঙ্গে দেখা। রবি আমার পিসতুতো ভাই। বাগুইআটিতে বড়সড় ফ্ল্যাট কিনেছে। ছোটোবেলায় আমরা একে অপরকে ছাড়া চলতেই পারতাম না। ও ছিল আমার ডাংগুলি, গুলি, গুলতি খেলার সঙ্গী। প্রতি মাসে একবার করে হয় পিসিরা আসত আমাদের বাড়ি, না হলে আমি-বাবা-মা-বোন সবাই মিলে যেতাম পিসির বাড়িতে। বাবা ছিল সকলের বড়।বিজয়ার পর এক মাস বাবা-মা কে প্রণাম করার জন্য বাড়িতে আত্মীয়স্বজন লেগেই থাকত। মামার ছেলে,মাসির মেয়েরা,পিসির ছেলেরা সবাই মিলে খুব জমে যেত। তবে রবি এলে আমাদের দুজনকে বাড়িতে খুঁজে পাওয়া যেত না। এলাকার মাঠ,ঘাট,পুকুরপাড় চষে ফেলে বাবা ধরে নিয়ে আসত আমাদের।
একে একে সকলের বিয়ে হল,ছেলেপুলে হল। কফি হাউসের সেই গানের মত কোথায় যেন চলে গেল সেই সব দিনগুলো। আজ দীর্ঘ বছর হয়ে গেল আমার আর পিসির বাড়ি যাওয়া হয় নি। ওরাও আর আসে না। কচিৎ কখনো ফোন-টোন হয়।
রবির সঙ্গে দেখলাম ওর বউ নমিতাও আছে। দুজনেই খুব মুটিয়েছে। ছেলেটাকে কোথায় রেখে এসেছে কে জানে। চারজনে একথা সেকথার পর রবি বলল, একদিন আয় না সকাল করে সবাই মিলে। কতদিন আসিস নি।
ভাবলাম সত্যিই তো,সুতপা আর বুম্বাকে নিয়ে নিক্কো পার্ক, সায়েন্স সিটি, চিড়িয়াখানা,ইমামবাড়া একশো সাতাশ বার ঘুরে ফেলেছি। তবু কেন যে আত্মীয়স্বজনদের বাড়ি যাই না। বললাম, আসলে যেতে খুব ইচ্ছে করে রে, কিন্তু বুম্বার পরীক্ষা আর পড়া পড়াশুনোর চাপ এত বেড়েছে যে …
সুতপা আমার দিকে আড়চোখে তাকালো। ও জানে বুম্বার পড়াশুনোর সঙ্গে আমার যোগাযোগ আকাশ আর পাতালের। তারপর কথা ঘোরাতে আমিও বললাম – তোরাও তো আসতে পারিস সময় করে…
রবি আর নমিতা প্রায় একসঙ্গেই বলে উঠল – আমাদেরও সেই একই সমস্যা। গুড্ডুটার পড়াশুনোর জন্যই কোথাও যেতে পারি না।
প্রত্যেকে প্রত্যেকের সমস্যা বোঝার পর যে যার গন্তব্যে পা বাড়ালাম। কিছুটা চলে গেছি হঠাৎই রবি ডেকে বলল তুই কী ফেসবুকে আছিস?
আমার সম্মতি পেতেই বলল, ঠিক আছে কাল অফিসে গিয়েই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাব, অ্যাকসেপ্ট করিস। যোগাযোগটা থাকবে।
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।