এই শহরে আমি নতুন এসেছি। চাকরিতে বদলি হয়ে। আমার থাকবার একটা জায়গা চাই। কিন্তু পছন্দমত থাকার জায়গা আর পাচ্ছি না। আমি অবিবাহিত পুরুষ। একা পুরুষকে কেউ সহজে ঘর ভাড়া দিতে চায় না। আর আমিই বা এত তাড়াতাড়ি এক থেকে দুই হই কী করে? যতদিন না এক থেকে দুই হই ততদিন কি আমি ঘর ভাড়া পাব না? আমাকে কেউ ঘর ভাড়া দেবে না? অবশেষে আমার বন্ধু সুকমল আমাকে একটা আস্তানার খোঁজ দিল। এই সংবাদে আমি তো খুবই খুশি হলাম। সঙ্গে সঙ্গে ছুটলাম ঘর দেখতে। তার সঙ্গে গিয়ে দেখি সেটা একটা বাড়ির চিলেকোঠার ঘর। তো চিলেকোঠাই সই। সুকমল আমাকে বলল – এখানে আপাতত কয়েক মাস থাক, এরপর ভালো কোন ঘরের খোঁজ পেলে জানাব। তখন সেখানে উঠে যাস।
আমার তো ঘরটা বেশ ভালোই লেগে গেল। এক কথায় বলা যায় পছন্দই হয়ে গেল। দোতলা ছাদের উপর ঘর। ঠিক চিলেকোঠা বলা যাবে না। মানুষের বাস করার পক্ষে বেশ ভালোই ঘর। বেশ পরিকল্পনা মাফিক বানানো হয়েছে। ঘরের লাগোয়া একটা রান্নাঘর ও একটা টয়লেট। ঘরের সামনে একটা ছোটো ডাইনিং স্পেস। একা লোকের পক্ষে এই তো যথেষ্ট। আর ভাড়াও খুব একটা বেশি নয়। আমার সাধ্যের মধ্যেই। এখানে আসার আগে আমি যে মফস্বল শহরে থাকতাম সেখানে ছিল প্রচুর গাছপালা। যেন গাছপালা দিয়ে ঘেরা ছিল শহরটা। এখানে ছাদের এই জায়গাটা বেশ নিরিবিলি। ছাদে দাঁড়িয়ে দিগন্তরেখায় চোখ রাখলে দেখা যায় শুধু গাছ আর গাছ। এখানেও কত রকম গাছ যে দিগন্তরেখায় সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। আমি ইঁট-কাঠ-পাথর দিয়ে তৈরি বাড়ির সঙ্গে যদি গাছপালা না দেখতে পাই আমার কেমন যেন দমবন্ধ হয়ে আসে। শ্বাস নিতে যেন কষ্ট হয়। ছুটির দিন বিকেলে ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশ গাছপালা পাখ-পাখালি আকাশে মেঘের ভেসে যাওয়া দেখতে দেখতে চা খাওয়া আমার প্রিয় অভ্যাস। চা খেতে খেতে সন্ধ্যা নামা দেখতে থাকি। দিনের আলো আস্তে আস্তে ম্লান হতে শুরু করে। দূরে কোথাও শাঁখ বেজে ওঠে। আকাশের রং কেমন আস্তে আস্তে ধূসর বর্ণ ধারণ করতে থাকে। এই সব দেখতে দেখতে আমার মনে কেমন যেন একটা বিষাদের সঞ্চার হতে থাকে। আমি কেমন যেন বিষাদ আক্রান্ত হয়ে পড়ি। একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে যাই।
কয়েকদিনের মধ্যেই আমি আমার জিনিসপত্র নিয়ে এই ঘরটায় উঠে আসি। জিনিসপত্র আর কী, একটা ছোটো তক্তপোশ, একটা ছোটো কাঠের টেবিল, একটা ছোটো আলমারি আর একটা বইপত্র রাখার কাঠের র্যাক। আর অল্পকিছু বিছানাপত্র। এই সবের জন্য আর কতোটা জায়গাই বা লাগে। একটা ঘর আর তার লাগোয়া একটা টয়লেট হলেই আমার চলে যায়। আমার বন্ধু সুকমল একটা কাজের মেয়ে ঠিক করে দিয়ে গেল। কাজের মেয়েটার নাম মালা। বয়স বেশ অল্পই। চব্বিশ পঁচিশ বছরের বেশি হবে বলে তো মনে হয় না। বেশ হৃষ্টপুষ্ট চেহারা মেয়েটার। দেখতে খুব একটা ভালো না হলেও দেহে একটা আলগা চটক আছে। এর মধ্যেই সে তিন সন্তানের মা। তার স্বামী একটা দোকানে কাজ করে। সেখান থেকে যে মাইনে সে পায় তা দিয়ে সংসার ঠিক মতো চালানো যায় না তাই তাকে এই কাজ করতে হচ্ছে। ঠিক হল মালা সকালে আমার অফিসে বেরোনোর আগে রান্নার কাজ সেরে দিয়ে চলে যাবে। তরকারি করা থাকবে, আমি অফিস থেকে ফেরার পথে রুটি কিনে নিয়ে আসব। রুটি আর তরকারি দিয়ে আমার রাতের খাওয়া সেরে ফেলব। এই ব্যবস্থাই বহাল রইল।
রবিবার ছুটির দিন। বিকেলে ছাদে দাঁড়িয়ে যথারীতি চায়ের কাপ হাতে সূর্যাস্ত দেখছি। সন্ধ্যা নামা দেখছি। দেখতে দেখতে দেখি আমার ঘরের থেকে বেশ কিছুটা দূরে আরও একটা ঘর। আগের দিন দেখেছিলাম কিন্তু অতটা ভাল করে লক্ষ্য করিনি। এখন ভালো করে দেখলাম ঘরটাকে। আমার ঘরের মতোই ঘরটা। সেখানে গিয়ে দেখি ঘরের দরজাটা খোলা আর একজন বৃদ্ধ লোক শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখছেন, অনেকটা আমারই মত। বৃদ্ধ লোকটাকে দেখে মনে হল অনেকই বয়স হয়েছে। বৃদ্ধ মানুষটি যেন তাঁর জীবনের মতো আকাশের বুকে সন্ধ্যা নামা দেখছেন তন্ময় হয়ে। আমাকে দেখে বৃদ্ধ ইশারায় আমাকে ডাকলেন। আমি তাঁর ঘরে প্রবেশ করলাম।
ঘর প্রায় অন্ধকার, একটা অল্প পাওয়ারের বাল্ব জ্বলছিল। বাল্বের হলুদ আলোয় ঘরটাকে কেমন যেন বিবর্ণ ও ম্লান দেখাচ্ছিল। ঘরের মধ্যে কেমন একটা গন্ধ পেলাম। কোন কিছু পচলে যেমন গন্ধ বেরোয় অনেকটা সেরকম গন্ধ। হয়তো দেখা যাবে ইঁদুর বা ওরকম কিছু মরে পচছে ঘরটায়। এটা তারই গন্ধ। আবার বুড়ো মানুষের গায়ের গন্ধও হতে পারে। বৃদ্ধ মানুষদের গায়েও এক রকম পচাটে গন্ধ থাকে। বৃদ্ধ আমাকে দেখলেন চোখ তুলে। তারপর খুবই ক্ষীণ গলায় তিনি আমাকে তাঁর খাটের পাশে বসতে বললেন। আমি খাটে বসে ঘরের চারদিকটা ভালো করে নজর করতে লাগলাম। ঘরে শুধু একটা খাট, গ্লাস ঢাকা একটা জলের কুঁজো আর একটা আলনায় কিছু জামা-কাপড়। এছাড়া আর তেমন কিছু আমার চোখে পড়ল না। বৃদ্ধ খুবই আস্তে প্রায় ফিসফিস করে জানতে চাইলেন – নতুন লোক বুঝি? এই বাড়িতে নতুন আসা হল? আমি ঘাড় নেড়ে জানালাম – হ্যাঁ। বৃদ্ধ চুপ হয়ে গেলেন।
কয়েক মুহুর্ত বৃদ্ধ আর কোন কথা বললেন না। আমার দিকে চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগলেন। তারপর চোখ বুজে ফেললেন। আমি ভাবলাম ঘুমিয়ে পড়লেন বুঝি। বুড়ো হলে মানুষের এরকম হয় জানি। বুড়ো মানুষেরা কথা বলতে বলতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েন, আবার কখন যে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন, তার কোন ঠিক থাকে না। আসলে বুড়ো মানুষেরা হলেন গাছের হলুদ পাতা, কখন যে তাঁরা টুপ করে ঝরে পড়বেন তা টের পাওয়া যায় না। ঘুম ও জাগরণের মাঝে কখন যে তাঁরা চিরশান্তির দেশে পাড়ি জমান তা জানাও যায় না। কিন্তু, না, মানুষটি ঘুমিয়ে পড়েননি। আমার দিকে চেয়ে কী একটা কথা যেন বলতে গিয়েও থেমে গেলেন। কী বলবেন ভেবেছিলেন তা বুঝি ভুলে গেলেন। অথবা বুঝি বলতে গিয়েও বলতে পারলেন না।
আবার পরদিন অফিস। অফিস থেকে রাতে বাড়ি ফিরে একটু বিশ্রামের পর কিছুক্ষণ বইপত্র পড়া আমার স্বভাব। পড়া আর সেরকম হয়ে ওঠে না। অফিস থেকে ফিরে খুবই ক্লান্ত বোধ করি। একটু আধটু পড়ার পরই ঘুম পেতে থাকে। চোখ যেন জুড়ে যেতে চায়। একটু আধটু বইপত্র নাড়াচাড়া করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি বুঝতেই পারি না। ঘরের আলো জ্বলতে থাকে। মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে বিছানা থেকে উঠে আলো নেভাই। এরকম প্রায় প্রতিদিনই ঘটে থাকে।
আমি বৃদ্ধের কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। আবার সপ্তাহ ঘুরে রবিবার আসে। আবার একটা ছুটির দিন। আবারও আমি বৃদ্ধের ঘরে যাই। আজ দেখি বৃদ্ধ মানুষটি একটু যেন আলাদা। ঘরটাও যেন একটু পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন মনে হোল। জিনিসপত্র একটু যেন গোছগাছ করে রাখা। তিনি যেন আমার আসার অপেক্ষা করছিলেন। তাঁর শরীরে রোগ সেরকম কিছু নেই। আসলে তিনি প্রবলভাবে জরাগ্রস্ত। জরা যেন তাঁর শরীরকে ক্রমশ গ্রাস করে নিচ্ছে। আমার সঙ্গে একটা দুটো কথা বলার চেষ্টা করছিলেন তিনি। কথা বলতে তাঁর খুবই কষ্ট হচ্ছিল। তবুও তিনি আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলেন।
তিনি তাঁর নিজের কথা বলতে চাইছিলেন। কিন্তু একটা দুটো কথা বলতেই তিনি হাঁফিয়ে উঠছিলেন। ওই ভাবেই তিনি থেমে থেমে নিজের কথা বলতে লাগলেন। যাই হোক, একটু একটু করে মানুষটার কথা থেকে তাঁর সম্পর্কে জানতে পারছিলাম। তিনি তাঁর অতীতের কথা বলতে লাগলেন। এই বাড়িটা তাঁদেরই। তাঁদের ছিল বিরাট পরিবার। তাঁদের একান্নবর্তী পরিবারের কথা বলতে লাগলেন। তিনি সরকারি চাকরি করতেন। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করার পর যে টাকা তিনি পেয়েছিলেন তা তিনি ভাইপো-ভাইঝিদের দিয়ে দেন। বর্তমানে তিনি প্রায় নিঃসম্বল। শুধু পেনশনের টাকাটাই যা ভরসা। তিনি অবিবাহিত, তাঁকে দেখারও কেউ নেই। ভাইপো-ভাইঝিরা কেউই আর তাঁকে এখন দেখতেও আসে না। তাঁকে দেখভাল করার জন্য একটা ছেলে আছে, সে তার যা কিছু কাজকর্ম করে দিয়ে চলে যায়। তিনি এই বয়সে এসে সত্যিই খুব অসহায় বোধ করেন। তিনি বাড়ির ছোটো ছেলে। তাঁর দাদারা কেউ আর বেঁচে নেই। তাঁদের ছেলেমেয়েরাও সব অন্যত্র থাকে। এই বাড়িতে এখন শুধুই ভাড়াটেরা থাকে। আর তিনি একাকী এই তিনতলার ঘরে পড়ে থাকেন।
একদিন বৃদ্ধ মানুষটা আমাকে বললেন – হ্যাঁ, বাবা, আমাকে একটু দুধ জোগাড় করে দেবে? আমি তোমাকে এর জন্য টাকা দেবো। আমি তাঁকে বললাম – এ আর এমন কী ব্যাপার, হ্যাঁ, আমি আপনাকে দুধ জোগাড় করে দেবো। আমি কথা শেষ করতে না করতেই তিনি আবার কী একটা কথা আমাকে বলতে গিয়েও যেন ঠিক বলতে পারছিলেন না। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম – আপনি কি কিছু বলতে চান? তিনি খানিকটা ইতস্তত করে বললেন – না আমি বলছিলাম কি, এমনি গোরুর বা প্যাকেটের দুধ নয়। আমি চাইছিলাম ……. বলে তিনি আর কথা শেষ করতে পারলেন না।
আমি অবাক হয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলাম। তিনি কোন দুধের কথা বলতে চাইছিলেন? আমি ভাবতে লাগলাম – তিনি কি ……. । আমাকে অবাক করে দিয়ে এবার তিনি বললেন – আমি জানি তুমি শুনলে হয়তো অবাক হবে। আমাকে হয়তো খারাপও ভাবতে পার। আসলে আমি চাইছিলাম মেয়েমানুষের দুধ। মুমূর্ষু মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ মেয়েমানুষের দুধ খেলে বেঁচে ওঠে তা জানো কি? আমি আমার ঠাকমাকে দেখেছিলাম মানুষের দুধ খেয়ে কেমন মৃত্যুপথ থেকে ফিরে আসতে। আমার ঠাকমা তখন মুমূর্ষু। বিছানায় শুয়ে শুয়ে মৃত্যুর দিন গুনছে বুড়ি। তখন কে যেন ঠাকমাকে মাইদুধ খাওয়াতে বলেন। আমার কাকিমার তখন সদ্য ছেলে হয়েছে। একমাত্র সেই দিতে পারে বুকের দুধ। কাকিমাকে বলতে সে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেল। আমার ঠাকমাকে আমার কাকিমা তার নিজের বুকের দুধ খাইয়ে বাঁচিয়ে তুলেছিল। আমার তখন অল্প বয়স। আমি নিজের চোখে দেখেছি আমার কাকিমাকে নিজের স্তন হাত দিয়ে টিপে দুধ বের করে একটা পাত্রে রেখে ঠাকমাকে খাওয়াতে। আমার কাকিমার ইয়া বড়ো বড়ো মাই ছিল। আর তাতে দুধও ছিল প্রচুর। তখনকার দিনে মেয়েদের বুকে দুধও হতো খুব। শুধু একদিন নয় পরপর বেশ কয়েকদিন আমার কাকিমা আমার ঠাকমাকে তার বুকের দুধ খাইয়েছিল। কাকিমার দুধ খেয়ে আমার ঠাকমা বহু বছর বেঁচে ছিল। আমারও খুব ইচ্ছে, বাবা, আমি আবার বেঁচে উঠি। আবার হেঁটে চলে বেড়াই। দেবে, বাবা, আমাকে জোগাড় করে মেয়েমানুষের টাটকা দুধ। এতটা কথা বলতে তাঁর খুবই কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু তবু তিনি যেন না বলে পারলেন না। কবেকার কথা স্মরণ করে তাঁর ঘোলাটে চোখে জল চলে এল।
আমি বইতে এরকম ঘটনার উল্লেখ পেয়েছি। অনেকের এরকম ধারণা আছে। সেটা ঠিক কি ভুল তা বলতে পারব না। পার্ল এস বাক-এর লেখা উপন্যাস মাদার-এ এরকম একটা ঘটনার উল্লেখ আমি পেয়েছি। এ সব ব্যাপার যদি আমি না জানতাম, তাহলে হয়তো বুড়োটাকে আমার ভুল বোঝবার সম্ভাবনা থাকত। হয়তো মনে হতো বুড়োটা বদমাশ। বদ চরিত্রের লোক। কিন্তু আমার তা মনে হল না। আসলে বুড়ো মানুষটা চাইছেন জরার হাত থেকে রেহাই পেতে। আর তাঁর মনে হয়েছে স্তন্য পান করলেই বুঝি তিনি সেরে উঠবেন। যেমন তাঁর ঠাকুমাকে দেখেছেন কাকিমার দুধ খেয়ে বেঁচে উঠতে। আসলে মানুষ কখনই মরতে চায় না। যেভাবেই হোক পৃথিবীতে বেঁচে থেকে এর রূপ রস গন্ধ উপভোগ করতে চায়। এই বৃদ্ধ মানুষটাও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু আমার সমস্যা হল আমি এখন মেয়েদের দুধ জোগাড় করি কেমন করে? কোনও দুগ্ধবতী মেয়ের কাছে গিয়ে কি বলা যায়, আমাকে একটু আপনার বুকের দুধ দেবেন? এরকম কথা শুনলে মেয়েরা যে আমাকে মারতে আসবে। আমার নামে বদনাম রটাবে।
যাই হোক, বৃদ্ধ মানুষটার কথাটা তো আর ফেলে দিতে পারি না। কিন্তু কাকে বলি দুধের কথা? আমার বাড়িতে কাজ করে মালা বলে যে মেয়েটি তাকে বলা যেতে পারে। তিন ছেলেমেয়ের মা সে। ছোটো মেয়েটার বয়স কত আর হবে এক বা দেড় বছর বা তার কমও হতে পারে। আমি ঠিক জানি না। কিন্তু এক দেড় বছরের বাচ্চার মায়ের বুকে কি দুধ থাকা সম্ভব? মালাকে সেভাবে আমি কোনোদিন লক্ষ্য করে দেখিনি। সে আসে কাজকর্ম করে চলে যায়। কিন্তু এরপর থেকে আমি মালাকে লক্ষ্য করে দেখতে লাগলাম। বিশেষ করে আড় চোখে তার বুকের দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম। মালার বুকটা বেশ ভারিই। দুধ থাকলে তো স্তন ভারি হবারই কথা। কিন্তু দেখে বোঝা কি যায় তার বুকে অমৃত আছে কি নেই? আবার তাকে যে জিজ্ঞেস করে জেনে নেবো তার বুকে দুধ আছে কি না, সেটাই বা বলি কী ভাবে। হঠাৎ করে সে কথা কি কোন মেয়েকে জিজ্ঞেস করা যায়?
ভাবনাচিন্তা করতে লাগলাম। তবে মালা ছাড়া আমি তো আর সেরকম কোনো মেয়েকে চিনিই না যার কাছে গিয়ে বুকের দুধের কথা বলা যায়। প্রথমে ভেবেছিলাম মালাকে সরাসরিই জিজ্ঞেস করে জেনে নেবো যে তার বুকে দুধ আছে কি না, কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম মালা সেটা অন্যভাবে নিতে পারে। আমাকে ভুল বুঝতে পারে। হয়তো ভাববে – ওসব বুড়ো ফুড়ো কিছু নয়, দাদাবাবুরই স্বভাব খারাপ। তাই ঘুরিয়ে কু-প্রস্তাব দিতে চাইছেন। তখন আমি কী করবো? আর যদি সে কাজ ছেড়ে দিয়ে এ সব কথা পাঁচ কান করে বেড়ায় তাহলে আমার দুর্নামটা কেমন রটবে? আবার বুড়ো মানুষটার কথাটাও যে না রাখলে নয়। কিন্তু আমি করিই বা কী? কিছু তো একটা উপায় বের করতে হবে।
একদিন মালা কাজকর্ম সারার পর আমাকে জিজ্ঞেস করল – দাদাবাবু, আপনাকে একটা কথা বলব, কিছু মনে করবেন না তো? আমি বললাম – না না, কী আর মনে করবো, কী বলবে বলে ফেলো। তখন সে একটু ইতস্তত করে বলল – আসলে আমার বড়ো ছেলেটাকে ইস্কুলে ভরতি করতে কিছু টাকার দরকার। আপনি আমাকে কিছু টাকা ধার হিসেবে দেবেন? মাসে মাসে মাইনে থেকে কেটে নেবেন। আমি এই সুযোগটাকে হাতছাড়া করতে চাইলাম না। আমি বললাম – তোমাকে এই টাকাটা শোধ দিতে হবে না। আমি এমনিই এই টাকাটা তোমার ছেলের জন্য দিলাম। যাই হোক না কেন, মালাকে টাকাটা দিলে সে আমার প্রতি কিছুটা নরম ও সদয় হবে নিশ্চয়। আমার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। তখন ওই ধরনের কোন প্রস্তাব দিলে সে চট করে হয়তো রেগে উঠবে না। আর আমি তাকে বুঝিয়ে বলার সুযোগও পাবো। তাই আমি আর দেরি না করে মালাকে সঙ্গে সঙ্গে টাকাটা দিয়ে দিলাম। সেও খুশি হয়ে উঠল। এবার আমি একটু সরাসরি মালার বুকের দিকে চেয়ে দেখলাম। তার স্তনের আকার বেশ ভালই। তার বুকটা বেশ পুষ্ট। দুধ যদি থাকে তার বুকে, তাহলে তা বেশ ভালো পরিমাণেই আছে। ওই বুক থেকে একবাটি দুধ সে দিতেই পারে বৃদ্ধ মানুষটাকে। সে বোধহয় টের পেল আমি তার বুকের দিকে তাকিয়ে দেখছি। টাকাটা নিয়ে মালা আমার দিকে চেয়ে একটু মুচকি হেসে চলে গেল।
পরের দিন মালা এলে আমি তার সঙ্গে এটা সেটা কথাবার্তা বলতে লাগলাম আর সুযোগ খুঁজতে লাগলাম কীভাবে কথাটা পাড়া যায়। টাকা পেয়ে মালা যেন একটু সহজ হয়ে উঠেছে। হয়তো ভাবছে দাদাবাবু কী না ভালো। একবার চাইতেই টাকাটা দিয়ে দিলেন। একবার ভাবলাম সরাসরি কথাটা বলেই ফেলি কোন রকম ভনিতা না করে। কিন্তু, না, বলতে পারলাম না। ইতস্তত করতে লাগলাম। মালার মতো কোন যুবতীকে কি হঠাৎ করে বলা যায়, আমাকে একটু তোমার বুকের দুধ দেবে? কথাটা কি অশ্লীল শোনায় না? এটা কি খাটাল থেকে গোরুর দুধ নিয়ে আসার মতো ব্যাপার? যে হাতে পাত্র নিয়ে গিয়ে দাঁড়ালাম আর গয়লা তার গোরুর দুধ দুয়ে আমাকে দিয়ে দিল। এটা সেরকম ব্যাপার নয় মোটেই।
একদিন কীসের জন্য যেন অফিসে ছুটি ছিল। আমি ঘরেই ছিলাম, একটু বইপত্র উল্টেপাল্টে দেখছিলাম। বেশ কিছু পত্রপত্রিকা জমে গেছে। একটু গোছগাছ করে রাখছিলাম। মালা তার কাজকর্ম সারছিল। কাজ সারা হলে সে ঘরে এসে একটু দাঁড়াল। আমি তাকে বসতে বললাম। বললাম – তোমার সঙ্গে কিছু কথা আছে। একটু শুনবে? মালা জবাবে বলল – হ্যাঁ, দাদাবাবু, বলুন কী বলবেন। আমি নিজেকে একটু গুছিয়ে নিলাম। কী বলব আর কী ভাবে বলব, সেটা একটু মনে মনে ভেবে নিলাম। প্রথমে বললাম – মালা, তুমি তো ওই বৃদ্ধ লোকটিকে দেখেছ? ওনার নিজের বলতে তেমন কেউই প্রায় নেই। আর কেমন অসুস্থ তিনি তাও নিশ্চয়ই দেখে থাকবে। তো ওনার একটা ইচ্ছে আছে, বুড়ো মানুষের ইচ্ছা, সেই ইচ্ছার কথাটা কি তোমাকে বলব? তুমি হয়তো তাঁর ইচ্ছাটা পূরণ করতে পারো। মালা খানিকক্ষণ কী ভাবল তারপর বলল – কী ইচ্ছে ওনার? দেখি তো বুড়ো মানুষ, হাঁটা চলা করতে পারেন না, খুবই কষ্ট ওনার। বয়সের ভারে একেবারে নুয়ে পড়েছেন।
আমি এবার বললাম – তুমি জানো কি না জানি না। তুমি হয়তো না জানতেও পার। আসলে কী জানো তো, বয়স্ক মানুষদের একটা ধারণা আছে তাঁরা যদি মানুষের অর্থাৎ মেয়েমানুষের দুধ পান করতে পারেন তাহলে তাঁরা দীর্ঘ জীবন লাভ করতে পারেন। তা তোমাকে বলছিলাম কি, তুমি কি তোমার বুকের দুধ একটু ওই বৃদ্ধ মানুষটাকে দিতে পার? যদি অবশ্য তোমার বুকে দুধ থেকে থাকে। এর জন্য আমি তোমাকে কিছু টাকাও দেবো। কথাটা শুনে মালা আমার দিকে কেমন যেন একটা চোখে তাকিয়ে দেখল। সে কী ভাবল কে জানে। সে আমার কথা বিশ্বাস করল কি করল না ঠিক বুঝতে পারলাম না। সে আবার ভাবল না তো যে আমার কোন খারাপ উদ্দেশ্য আছে। একটু পরে মালা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল – হ্যাঁ, সেও এরকম একটা কথা শুনেছে বটে। বৃদ্ধ হলে মানুষের মধ্যে বাঁচার একটা তীব্র ইচ্ছে জাগে। আর তখন তাঁদের মধ্যে এই ইচ্ছা জাগে যে তাঁরা যদি মেয়েদের দুধ একবার পান করতে পারেন তাহলে তাঁরা মৃত্যুর হাত থেকে সাময়িক রেহাই পেতে পারেন। এতে অন্যায়ের কিছু নেই।
মালা এবার আমাকে বলল – হ্যাঁ, আমার বুকে যথেষ্ট দুধ আছে। আমার ছোটো মেয়ে এখনো সবটা দুধ খেয়ে শেষ করতে পারে না। আমাকে হাত দিয়ে টিপে ফেলে দিতে হয় বুকের দুধ। আমি ওই বুড়ো মানুষটাকে আমার বুকের দুধ দিতে রাজি আছি। এই কথা শুনে আমি সত্যি খুবই আপ্লুত হয়ে পড়লাম। যাক, তাহলে বৃদ্ধ মানুষটার কথা আমি রাখতে পারলাম। মালা আমাকে বলল – ঠিক আছে, আমি একটা বাটিতে আমার বুকের দুধ দুয়ে রাখছি, আপনি ওই বুড়ো মানুষটাকে দিয়ে দেবেন। বলে সে রান্নাঘর থেকে একটা বাটি নিয়ে আসতে গেল। বাটি হাতে সে আমার দিকে পেছন করে দাঁড়িয়ে তার একটি স্তন হাত দিয়ে চেপে ধরে দুধ বার করতে লাগল। তার স্তনের দুধ বাটিতে পড়ে একটা শব্দ হতে লাগল। গোরুর দুধ দোয়ার সময় যেমন আওয়াজ হয়, চ্যাঁক চুল, চ্যাঁক চুল…… অনেকটা সেরকম আওয়াজ হতে লাগল। তবে একটু আস্তে আস্তে হচ্ছিল আওয়াজটা। খানিক পরে মালা বাটিভরতি দুধ আমার সামনে রেখে একটু মুচকি হেসে, আমি আসি, দাদাবাবু, বলে চলে গেল। দেখলাম বাটি ভরতি ঘন ও গাঢ় দুধ। দেখে আমারও যে লোভ হচ্ছিল না সেটা বলতে পারি না।
একটু পরে ওই বাটিভরতি দুধ নিয়ে আমি হাজির হলাম বৃদ্ধের ঘরে। এখন দিনের বেলা। রোদে চারদিক ঝকঝক করছে। বৃদ্ধের সামনে দুধের বাটিটা রেখে বললাম – এই নিন আপনার দুধ। বাটিভরতি দুধ দেখে বৃদ্ধের চোখ মুখ চকচক করতে লাগল। তিনি আমার দিকে অবিশ্বাসীর দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে বললেন – কোথা থেকে জোগাড় করলে এই অমৃত? আমি তাকে মালার কথা বললাম। শুনে বৃদ্ধ বললেন – খুব ভালো মেয়ে সে, আমার খুব উপকার করল সে, এখন এই বলকারক দুধ খেয়ে আমি আবার আমার যৌবন ফিরে পাবো। আবার উঠে দাঁড়াতে পারব। হাঁটব চলব এই পৃথিবীতে। কী সুন্দর এই পৃথিবী। আমার শরীর নব যৌবনের কিশলয়ে ভরে উঠবে। এই বলে তিনি দুহাতে দুধের বাটিটা ধরে চকচক করে সমস্ত দুধটা খেয়ে নিলেন। ঠোঁটে কিছুটা দুধ লেগে ছিল। তিনি হাত দিয়ে মুছে নিলেন। মুখে তাঁর পরিতৃপ্তির হাসি। আমার দেখে ভাল লাগল। একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ যদি কোন আশা নিয়ে বেঁচে থাকতে চায় এই পৃথিবীতে তো বাঁচুক না।
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।