অত্যন্ত চিন্তিত থাকায় অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটছিল ইমন। বাড়িতে টাকার টানটুন কিছুতেই যেন শেষ হবে না। বাবা ইদানীং প্রায়ই অসুস্থ থাকছে, রোজগারের কিছু ধান্ধা এবার না করলেই নয়। রূপালিরর বাবাও সেদিন বলে দিল অন্তত দু’বিঘা জমি আর ব্যাঙ্কে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেখাতে না পারলে সে ইমনের সাথে মেয়ের বিয়ে দেবে না। এইসব চিন্তায় ভাবনায় রাতে ঠিক করে ঘুমতে পারছেনা ক’দিন হল। সামনে একটা জটলা দেখে সেখানে গিয়ে উঁকি মারল। গণেশ লাল বাবুর তেলের মিল তৈরি হচ্ছে এখানে। আরও কত যে নতুন নতুন ব্যবসা বাড়াবে, কে জানে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সমস্যাটা বুঝতে পারল ইমন। মিলের শ্রমিকদের ব্যাবহারের জন্য কুয়ো সংস্কার করাতে চাইছিলেন তিনি। কিন্তু বহুদিনের অব্যবহৃত কুয়ো তার উপর ভুসভুসে মাটি, কেউ নামতে রাজি হচ্ছে না। ইমন এগিয়ে গিয়ে ওটার গভীরে তাকাল। নিচে যেন এক মুঠো অন্ধকার ছাড়া আর কিছু নেই। নামার কথায় বুক কেঁপে উঠল প্রথমে। এক অমোঘ আকর্ষণ তৈরি হয়ে ঘিরে ধরল ওকে। অনেকগুলো অঙ্ক একসঙ্গে কষে ফেলল । নিঃসঙ্কোচে এসে বলল আমি নামব। গনেশ লাল যেন ভূল শুনল এমন করে তাকিয়ে থাকল ওর দিকে। ইমনের বাবা এ তল্লাটে নাম করা কুয়ো কাটিয়ে। ইমন সঙ্গে থেকেছে বহুবার। কিন্তু একেবারে একা! তবু পারতে ওকে হবেই। বাবা আর কতদিন সংসারের বোঝা বইবেন! তাছাড়া রূপালির বাবা –। বাবার কথায় নয় রূপালির জন্যই মনটা ভেঙে গেছে পুরো। ও ওর বাবাকে সমর্থন করল! জমি ওদের আছে কিছুটা। বাবাকে বললে বাবা লিখেও দেবে, কিন্তু বলে কোন মুখে! বোনের বিয়েটাও এখন হল না। আর অতগুলো টাকা! রুপালিও টাকার কথাই ভাবল! একবারও ওদের প্রেম আর স্বপ্নের কথা নয়! দূর, এজীবনে আর ভয় ডর কিসের! টাকাই সব। গনেশ লালকে বলল, আমি নামব কুয়োতে কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।
হ্যাঁ হ্যাঁ বল। আগ্রহের সাথে জানাল গনেশ বাবু।
আমাকে কুয়োতে নামার মজুরি বাদে একটা পার্মানেন্ট চাকরি দিতে হবে আপনার ফার্মে।
একটু হাত কচলে গনেশ লাল বলল, আচ্ছা ঠিক আছে সে হয়ে যাবে। আমার তো লোক লাগবেই। তা ছাড়া তুমি খাটানিয়া ছোকরা।একটু চিন্তা করে করে বলে পরক্ষনেই বেশ উৎফুল্ল হয়ে বলল, আচ্ছা চিন্তা নেই, তোমার। নেমে পর।
ঘন্টাখানেকের মধ্যেই কোমরে দড়ি বেঁধে কুয়োর ভেতর নেমে পরল ইমন। দুহাতে মাটি কাটছে আর বালতিতে করে তুলে দিচ্ছে উপরে। আর একটু আর একটু হলেই পরিষ্কার টলটলে জল জেগে উঠবে। ধুয়ে দেবে সমস্ত দুর্ভাগ্য। যত ভাবছে তত উৎসাহ উদ্দীপনায় কেটে ফেলছে খারাপ সময়, অভাব অভিযোগ, অসম্মান। অসম্মান তো বটেই। সেই আনত মুখ, বাবার কথায় সায় দেওয়া ওই মেয়ে যার সঙ্গে বাঁধবে ভবিষ্যতের ঘর সংসার। না হৃদয়ের টান আর নেই। সেটা সেদিনই দুমরে মুচরে গেছে। যেটা আছে তা হল নিজেকে প্রমান করা। হাত চালায় ইমন। নামার সময় সবাই বলাবলি করছিল, এতটা রিস্ক না নিলেই পারতো ছেলেটা কিন্তু ওসব কথায় কি আর ভাঙা বুক জোড়া লাগে নাকি বাবার ওষুধ আসে! বোনের বিয়ে পেটের ভাত –। কুয়োয় জল ভেসে উঠলে ওর একবুক তৃষ্ণা মিটবে। শরীর মন শীতল হবে। উপর থেকে ওরা কিছু বলছে কি! শোনার চেষ্টা করে। হঠাৎ পাস থেকে কিছু মাটি ঝরে পরল গায়ে। ও ঝেড়ে ফেলে জট খোলার চেষ্টা করে ভেসে আসা কথা বার্তার। আবার মন দেয় মাটি কাটায়। এবার অনেকটা মাটি, তারপর আরও অনেকটা, পরতে থাকে ঝরনার মত। ইমন চিৎকার করল বাঁচাও আমাকে বাঁচা আ আ ও। কিন্তু সে আওয়াজ ওপরে পৌছানোর আগেই চোখে মুখে মাটি ঢুকে পরল। কোথায় বালতি কোথায় দড়ি কে জানে! ও হাত পা ছোড়ার ব্যার্থ চেষ্টা করে তলিয়ে যেতে থাকে। গাঢ় অন্ধকারে স্পষ্ট বুঝতে পারছে নিজের একধরনের বহমানতা। ধীরে বইতে বইতে হঠাৎ গতি দ্রুত হল। আরও দ্রুত। বসে বসে একটা পেছল পথে নেমে চলেছে। গাঢ় অন্ধকারে স্পষ্ট বুঝতে পারছে নিজের তলিয়ে যাওয়া। মাটির ঘনত্ব কমে গেল হঠাৎ। ও চোখমুখ কচলে তাকানোর চেষ্টা করল। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারল না। শুধু চলা আর চলা। বয়ে যেতে যেতে আর অনুমান শক্তিও অবশিষ্ট নেই ওর। কতক্ষন পর কে জানে, ঝপ করে একটা জলাশয়ে পরল। এখানে প্রথম আলো দেখল। একটা হাল্কা নীল আর কমলার মিলমিশ আলো। বুক ভরে নিশ্বাসও নিল বেশ। চারপাশে অস্বচ্ছ কাঁচের দেওয়াল। একটা বাগান, সেখানে রূপোর গাছে একদিকে সোনার ফুল অন্যদিকে রঙ বেরঙের অসাধারণ উজ্জ্বল পাথরের ফল। অপূর্ব সে শোভা। কিন্তু কোথাও কোন প্রাণের ছোঁয়া নেই। জলাশয় থেকে উঠে দাঁড়ালো ইমন। কিছুক্ষণ বোকার মতো এদিক ওদিক তাকিয়ে এগোতে শুরু করল সামনে। বেশ কিছুটা এগিয়েছিল। দেখল এক অপূর্ব সুন্দরী সদ্য যৌবন প্রাপ্ত তরুণী দাঁড়িয়ে আছে সে পথে। গায়ের রঙ সাদা বললে কম বলা হবে। জড়িয়ে আছে এক ধোঁয়ার আবরণ। আলুলায়িত কেশদাম কোমর ছাপিয়ে নেমে এসেছে। শান্ত দৃষ্টি, রক্তিম ঠোঁট। বিস্ময় ধরে রাখতে পারল না ও। যতটা সম্ভব চিৎকার করে বলল, কে তুমি! আমি কোথায় এসেছি! এ স্বর্গ নাকি নরকের দ্বার! মেয়েটি ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করতে বলল। তারপর স্নিগ্ধ স্বরে বলল, এখানে জোরে কথা বলতে নেই। এটা স্বর্গও নয়, নরকও নয়। তুমি জীবিতই আছো তবে আমাদের এই বাসস্থানে মলিনতার কোন স্থান নেই তাই তোমার ওই পোষাক খুলে জলে ছেড়ে দিয়ে এসো। বলে কি মেয়েটি, পোষাক খুলে ফেলে আসব! অবাক হয় ইমন। এবার সে একটু আদেশের মতো করে বলে, তুমি পোষাক খুলে এসো আমি এগোচ্ছি। তরুণী একটি বাঁকে অদৃশ্য হয়ে গেল, ইমন হতবাক হয়ে এগোয়। হঠাৎ মনে হয়, এই অচিনপুরে যদি আর ওই মেয়েটিকে খুঁজে না পায়! ও লজ্জা ভুলে মন্ত্রমুগ্ধের মত খুলে ফেলে সব। তারপর অবাক হয়ে দেখে ওর শরীরেও ওই তরুণীর মত ধোঁয়ার আস্তরণ। ও আর কিছু না ভেবে দ্রুত তরুণীর পথ অনুসরণ করে। কিছুক্ষন আঁকাবাঁকা পথে এগিয়ে আবার দেখতে পেল মেয়েটিকে। আবার প্রশ্ন করল, এটা কি স্বর্গ! একটু যেন বিরক্ত হল সে। আবার ইমন জিজ্ঞেস করল, তোমার নাম কি?
— ইরাবতী। আর আমরা এখন যাচ্ছি মহারাণী পেস্তার কাছে।
—- মহারাণী ! মানে এখানে আস্ত একটা রাজ্য আছে! হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া, অস্ত্র সৈন্য, সে এক অপূর্ব ঘটনা। এগুলো গল্প ও ছোট বেলায় মায়ের কাছে শুনেছিল। ওর মা খুব সুন্দর সুন্দর বই পড়ত আর গল্প বলত। একদিন মা মরে গেল আর ওর জীবনটাও—। না না কথা ভাবতে ভাবতে ও এগিয়ে চলেছিল। বিশাল এক গুহামুখে পথ শেষ হল। গুহায় পায়ের তলে যেন আগুনের কুন্ড কিন্তু তার উপরে স্বচ্ছ পাথরের আবরণ। ফলে কোন উত্তাপই অনুভূত হচ্ছিল না বরং বেশ মনোরম শীতলতা সঙ্গে উজ্জ্বল আলো। সামনে পাথরের বেদীতে আধশোয়া এক নারী, মহারাণী। এতক্ষণ ইরাবতীকে দেখে মনে হচ্ছিল, এর চেয়ে সুন্দরী আর হয় না কিন্তু মহারাণী পেস্তাকে দেখে চোখে যেন ধাঁধা লেগে গেল। যেন এক-টুকরো নক্ষত্র। শরীর থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছিল সবজে আলো। সবুজাভ ধোঁয়ার পোষাক আর ফটফটে দৃশ্যমান অঙ্গ। অন্য আরেক সুন্দরী বসে বসে তাকে গল্প শোনাচ্ছে। ইরাবতী ইশারায় ইমনকে ওখানে বসতে বলল।
গল্প প্রায় শেষের পথে – মহারাজ নাছোড় রানীকে রাজ্যে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। কিন্তু রানীর আত্মসম্মানও প্রবল। সৈন্য সামন্ত প্রজা এমনকি সন্তানেরাও মহারাজের সঙ্গে সুর মেলাল। কিন্তু রানী তার মান বিসর্জন দেয় কেমন করে! বিয়ের পর থেকে একটার পর একটা অন্যায় মেনে নিয়েছে। ধর্ম পালনের জন্য জঙ্গলে থেকেছে দিনের পর দিন। অন্য দেশের রাজার কাছে বন্দি থেকেছে অকারন। তাতেও হয়নি, সতীত্ব প্রমানের যন্ত্রণাদায়ক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়েছে। সে পরীক্ষা এতটাই নির্মম যে প্রচলিত কথায় তাকে অগ্নিপরীক্ষা বলা হত। দুর্ভাগ্যের আরও বাঁকি ছিল। বনে নির্বাসন দেওয়া হল তাকে। নিরপরাধ হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র রাজার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখার জন্য। অথচ এরপরও তিনি গোপনেও না, এমনকি ভূলেও , খোঁজ নিলেন না একবারও। অথচ দুই বীরপুত্রের অধিকার ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সেই মহারাজ। রানী আত্মসম্মান বজায় রাখতে সামনে ইঁদারায় ঝাঁপ দিলেন। কিন্তু আসলে সেটা ইঁদারা ছিল না, ছিল এই পাতাল রাজ্যের প্রবেশ পথ আর সেটা কারও জানা ছিল না। এখানে প্রকৃতি তার রত্নভাণ্ডার লুকিয়ে রেখেছে। পৃথিবীর একদম কেন্দ্রে বলে এখানে দিনরাত্রি নেই। সময় স্থির। চুম্বকীয় প্রভাবে অসুখবিসুখও হয় না। মহারানী পেস্তার বয়স বাড়ল না, মৃত্যু তাকে স্পর্শ করল না।
পেস্তা! মহারাণী পেস্তা! কিন্তু এ গল্পতো রামায়নের ভেবেছিল ইমন! তবে কি মহারাণী পেস্তাই সীতা! জিজ্ঞেস করতে চাইল। কিন্তু বিস্ময় তার বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে ইতিমধ্যে।
মহারাণী পেস্তার সঙ্গে ঝাঁপ দিয়েছিল তার ছায়া সঙ্গী ঋষি কন্যা বেলা আর মহারাণীর গর্ভস্থ সন্তান। পাতাল প্রবেশের আগে ক’দিন যুদ্ধ ক্লান্ত মহারাজের সেবা করে সেই সন্তান পেয়েছিল আশীর্বাদ স্বরূপ। সেই কন্যাই ইরাবতী। মহারাণী আর ঋষি কন্যার কাজ হল এই পাতাল নগরীকে শিল্প সূষমায় ভরিয়ে তোলা আর কন্যা ইরাবতীর যত্ন করা। গল্প বলা শেষে উঠে পরল বেলা। মেঘের পোষাক এলিয়ে বেলা একটা পান্নার থালায় অজস্র মনি মানিক্য হীরা চুনি নিয়ে এল। দক্ষ হাতে সেগুলো থেকে বানাতে শুরু করল পাতা এবং ফুল। আর মহারাণীও মগ্ন হলেন কাজে। তিনি এক টুকরো মেঘ থেকে সুতো কাটতে বসলেন। ইরাবতী সোনার নূপুর পায়ে শুরু করল নৃত্য অনুশীলন। কতক্ষন বা কত দিন কে জানে! এসব কাজের মধ্যে শুধু ইমনই দর্শক। ওর মন চঞ্চল হয়ে উঠল বাড়ির জন্য। ছোট বোন, অসুস্থ বাবা। মহারাণী পেস্তা ওর দিকে তাকিয়ে বলল, বাড়ি যেতে চাও? নূপুরের শব্দ থেমে গেল। ইরাবতীর অমন সুন্দর চোখে এ কোন বেদনাএ ভাষা! এত অল্প সময়ে তাও আবার ওর মত সামান্য ছেলের জন্য!
অবাক হতে হতে কখন যেন এই আসন্ন আশ্চর্য বিরহ যন্ত্রণা ওকেও সংক্রামিত করেছে। কেন যে খুব কষ্ট হচ্ছে। ইরাবতীর চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরছে। মাটিতে পরার আগেই ও হাত পেতে ধরে নিল।
বেলা এগিয়ে এল, সঙ্গে প্রচুর মনি মানিক্য। ও হাত মুঠো করে বলল আমার কিচ্ছু লাগবে না। মহারাণী পেস্তা খুব খুশি হলেন। বললেন, এসবই তুমি পাবে তবে অন্যরূপে।
ইমন যখন চোখ খুলল, আলো অন্ধকারের ঘোর কেটে দেখল ও গোটা গায়ে মাটি মেখে শুয়ে আছে গণেশ লাল বাবুর কুঁয়োর সামনে। রাজ্যের সাংবাদিক, চিত্র সাংবাদিক, স্থানীয় মানুষ নেতা আমলা ওর চারপাশে। টানা চারদিন পর সামরিক তৎপরতায় ওকে উদ্ধার করা গেছে জীবিত অবস্থায়। এম্বুলেন্স এসে ওকে নিয়ে গেল হসপিটালে। চারিদিক থেকে পটাপট ঘোষণা হচ্ছে সাহস এবং জীবনী শক্তির পুরস্কার। কেউ বলছে, উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেবে, কেউ সই করছে চেকের পাতা। কেউ চাকরির আশ্বাস দিয়ে এই সুযোগে গরমাগরম নিজের প্রচার সেরে নিচ্ছে। এসবের মধ্যে ওর চিকিৎসা শুরু হল। হঠাৎ ইমন খেয়াল করল, ওর হাতটা মুঠো করাই আছে। আস্তে আস্তে ওটা খুলে দেখল ভেতরে দুটো বিশাল আকৃতির হীরক খন্ড ঝকঝক করছে। ঠিক তখনি রূপালীকে নিয়ে ওর বাবা বিগলিত হতে হতে হসপিটালে ঘরে ঢুকছিল। ও ওদের দেখে সাথে সাথে আবার হাত মুঠোবন্দি করল। পন্যের বাজারে ও দুটোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে অত্যন্ত সাবধানে। কেন যেন, রূপালীকে দেখে একফোঁটাও আনন্দ হল না আজ। চোখ বুজে নিল। আর বন্ধ চোখের ভেতর খুজে পেল ইরাবতীর বেদনা সিক্ত চোখ দুটো।
Tags: অর্পিতা গোস্বামী চৌধুরী, ইরাবতী
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।