তন্ময়কে সবাই বলে ‘আসলি খিলাড়ি’। খেলতে নামলে ড্র করে খেলা শেষ করা ওর ধাতে নেই। চেহারায় যে ধাতু থাকলে স্মার্ট বলা যায় সেগুলোর বাইরেও ইমেজ নামে একটা বস্তু ওর আছে যা থাকলে আগেকার দিনে রককালচারে বলত—-লেডিকিলার। যদিও এখনকার দিনে লেডিকে কিল করতে হয় না,শহরে বেশির ভাগ লেডিই কিল করে রাখে ছেলেদের।তাই শব্দটা অর্থে র অবকর্ষতায় ভুগে ভুগে অর্থ বদলেছে।সোজাকথায় তন্ময়ের বাজার দর মহিলা মহলে হেব্বি।তন্ময় হাতে ট্যাটু করলে মেয়েমহলে গল্প।ও যখন নিনজা বাইক নিল তখন ওর মেরে হমদম মেরে দোস্ত অহল্যা এমন হাবভাব শুরু করল যে ওর অন্য চাহানেওয়ালারা বেশ কেতরে গিয়েছিল, তবুও তন্ময়ের নিনজার পেছনেই বসতে চেয়েছিল অনেকেই।তন্ময় এর মেদ বিহীন পেটানো চেহারার মধ্যে আকর্ষণ এর জাদু যত না তার চেয়ে বেশি উপস্থিতির জাদু।তন্ময় মেয়েমহলে উপস্থিত হলে ই সব মেয়েরা যে ভাবে তন্ময় হয়ে যায়, তাতে তন্ময়কে বিশেষ কিছু করতে হয় না,ওই উপস্থিতির জাদুতেই সব হয়ে যায়—যেন মনে হয় এমনি এমনি হয়ে গেল সব।বিয়েবাড়ি থেকে শ্রাদ্ধবাড়ি মায় ট্রেন এর টিকিট কাউন্টারের লম্বা লাইন–তন্ময় উপস্থিত আর সুন্দরী রা ওর চারদিকে নেই–এটা ঘোর তন্ময় বিরোধী ও স্বীকার করবে না। তবে সবাই যে ওর বান্ধবী হয়ে ওঠে বা তন্ময় সবার সঙ্গে বাড়তি আশায় এগিয়ে যায় এমন নয়, কিন্তু ওই–কি যে হয়ে যায় কে জানে! বাট এটা সবাই জানে–তন্ময়ের বাইকের পেছনে এক মেয়েকে দুবার দেখা যায় নি।সেটা বির্কষনের প্রভাবে না চাহিদা যোগানের উর্দ্ধমুখী রেখাচিত্র-এ র জন্যে–এসব রহস্য একমাত্র ওপর ওয়ালাই বলতে পারবেন।তন্ময়ের এত গল্প বিশেষত আন্তরিক তার গল্প লোকমুখে ছড়ানো থাকা সত্ত্বেও ইমেজে এতটুকু জং পড়ে নি।মেয়েরা কেউই ওকে দূরে সরায় নি এই বলে—–ইস্ ভীষণ বাজে রে,এত অসভ্য না যে কি বলব,ইত্যাদি ইত্যাদি।অর্থাৎ অসভ্যতার ইমেজ ছুঁতেই পারনি সভ্য তন্ময়কে। তাই সভ্য তন্ময় অ উপসর্গে যতি চিহ্ন ঝুলিয়ে তন্ময় বেশ উপভোগ করে এই অযাচিত নিবেদন।এতে কে কতটা নিবেদিত হল তার গোপন দলিল বোধহয় তন্ময়ের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কিছুটা স্মৃতি র সংসারে চালান দিয়েছে বাকিটা জাস্ট এনজয়ের তত্ত্ব এ সিগারেটের মত ফুঁকে উড়িয়ে দিয়েছে।একবার তো যা কেলো হয়েছিল সে বলার নয়।আইভি বলে একটা মেয়ে প্রায় নাছোড়বান্দা হয়ে তন্ময়কে নিয়ে একোয়া মেরিনায় গিয়ে রুমে ঢুকতে গিয়ে দেখলে তাদের আগে যারা ঐ রুম নিয়ে টাইম পাশ করে বেরোচ্ছিল সেই জোড়া শালিখ এর মধ্যে বক্ষলগ্না মেয়েটি তন্ময়কে দেখতে পেয়েই প্রায় ছুটে এসে জাপটে ধরে।তাতে আইভি নামের মেয়েটা ক্ষেপে যাওয়ার বদলে পরিষ্কার জানিয়ে দিল—ধরে রাখার সামর্থ্য না থাকলে এমনই হয়।গর্বিত তন্ময় তাই এখন প্রায় ডোন্ট কেয়ার এর মনোভাব ছাড়িয়ে
‘জীবন্ত রোমিও’র মিথ হয়ে ভোগবাদী দর্শন এর সংজ্ঞা হয়ে উঠতে চাইছে নিজের অনিচ্ছাতেই।অলরাউন্ডার তন্ময় বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল –ওরা ক্যাজুয়ালি আসে আর ও নিজেও নিয়ে নেয়।সমবয়সীরা বুঝে গেছে নিন্দা মন্ত্র এ তন্ময় বোসকে বশীকরণ করা যাবে না,কিছুতেই ইমেজ এ দাগ লাগানো বা আঁচড় টানা যাবে না―কারণ ও এক সার্থক স্বভাব প্রেমিক।
২॥
এহেন তন্ময় কে যখন বেশ কয়েকদিন অহ ল্যার সাথে দেখা গেল পর পর নানাজাযগায় তখন এলাকায় অহল্যাকে নিয়ে চর্চা চলল টানা কদিন।মেয়েটি র ইতিহাস ভূগোলের চর্চা র পাশাপাশি তন্ময় এর ঐতিহাসিক ঠিকুজি কে মিলিয়ে গল্প জমল নানা ছাঁদে।
তাহলে কি তন্ময় বোস সত্যি সত্যি ফাঁসল?মেয়েদের এইপ্রশ্ন এসে থামল তন্ময় ঘনিষ্ঠ অর্ঘ্য র কাছে প্রত্যুষার মাধ্যমে ।প্রত্যুষা অর্ঘ্যর ‘স্টেডি লাভার’ হয়েও তন্ময় এর ব্যাপারে যথেষ্ট ‘ইন্টারেস্টেড গাই’।ইদানিং তন্ময় -অহল্যা সংবাদ অর্ঘ্য র কানে আসছিল নানাভাবে।প্রথমদিকে পাত্তা দেয় নি অর্ঘ্য। কারণ ওরকম হাজার হাজার ‘একরাত কি দুলহান’ এর কাহিনী আছে তন্ময় বোস কে ঘিরে ।ওসব ছুটকো কাহিনী কে প্রথমদিকে পাত্তা না দিলেও যেদিন প্রত্যুষা ভেঙে পড়ার মতন অবস্থায় জানাল ব্যারাকপুর এর মালঞ্চ লজ এর মালাবদলের কাহিনী, সেদিনই মালামাল অফারের টানে ছোটা মানুষের মতন অর্ঘ্য ছুটল তন্ময় এর সন্ধানে ।গিয়ে যা শুনল এবং দেখল তাতে অর্ঘ্য তন্ময় কে প্রায় মৃন্ময় রুপে আবিষ্কার করল।
বোল্ড কথাটার বাজারদর আছে বলে অর্ঘ্য ইদানিং খুব ব্যবহার করছিল কিন্তু তন্ময় এর মুখে ডাকাবুকো অহল্যাকে যেভাবে পেল তাতে ‘বোল্ড’, ‘টমবয়’ কোন বিশেষণ-এ বিশেষিত করবে বুঝে পেল না। শুধু বাড়ি ফেরার পথে বোল্ড তন্ময় এর একটা গোল্ড টোন কানে বাজছিল—-“কেন যে গেছিলাম বাবলা গাছে পেছুন ঘষতে, এখন তো বস বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দেবার জন্য রেডি ।”
এই দুশ্চিন্তা র পেছনের গল্পের সংক্ষিপ্তসার মোটামুটি এই রকম—-মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ তন্ময় বোস যথারীতি সুটেড বুটেড হয়ে সকালের ট্রেনে চেপেছিল ব্যারাকপুর শিয়ালদহ লাইনে ।সেখানেই হঠাৎ জেন্টস কম্পার্টমেন্ট এ উঠে পড়ে ‘সোদপুরের শ্রীদেবী’ নামে খ্যাত এই অহল্যা দে।প্রথমে চোখাচোখি তারপর ভিড়ের ধাক্কাধাক্কিতে কাছাকাছি চলে আসা আর তারপর হাতানোর খেলা খেলতে খেলতে কখন যে তন্ময় বোসের সচেতন মনের বাইরে থেকেও এই অহল্যাবাঈটি তন্ময়ের পুলিশ বাপের অগাধ সম্পত্তির খবর তুলে নিয়ে টিকটিকির কায়দায় সব দখলদারির আশায় ব্যারাকপুরের মালঞ্চ লজ বুক করিয়ে, জম্বুদ্বীপের চাঁদ দেখাতে দেখাতে আসলি হানিমুনের প্ল্যান এঁটে ফেলেছে ।
এরপরের গল্প গুলো ছকে বাঁধা । প্রতিদিন ফোন,সিম বদলালে বাড়ি চলে আসা মায় তন্ময়ের বাবার অফিসে মানে ভবানী ভবনে গিয়ে অফিসারদের সামনে “সব দিয়ে ভালবেসে ঠকে গিয়ে এখন আইনের সাহায্য নেওয়া ছাড়া উপায় নেই” এর মতন কাহিনী কপচানো কিংবা বাড়ি র লোকেদের সদ্য চাকরি পাওয়া তন্ময়ের বাড়ি পাঠিয়ে ” যা হয়েছে মেনে নিন” এর মতন প্রস্তাব পেশের মাধ্যমে সাত পাকে জড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা সফল হল কোণায় লাল হলুদ টিপ দেওয়া শুভ বিবাহ কার্ড ছাপানোর মাধ্যমে ।সোজা কথায় বোল্ড অহল্যার গুগলিতে ক্লিন বোল্ড তন্ময় তার গোল্ড অ্যাটিটিউড এর বদল ঘটিয়ে আক্ষেপের পর্যায় অতিক্রম করে প্রবলকে সহ্য করার ভাবনায় এক বিমূর্ত সাধনায় রত যোগসাধকের ভূমিকায় ।
৩॥
ঝানু খেলোয়াড় তন্ময় বুঝে গিয়েছে এমন বোলার এর এগেন্সটে সামনের দিনগুলোতে খেলতে হবে যার বল না খেললেও বিপদ আর খেললেও আউট হওয়ার সম্ভাবনা । এখন সংসার নামক অজানা জগতে সবকিছু কে স্বাভাবিক নিরাপত্তার মধ্যে বহমান রাখতে হলে হজমি গুলি ছাড়া হজমের পক্রিয়াটি রপ্ত করতে হবে এইরকম পরিস্থিতিতে । কারন ওদের জেনারেশনের কাছে চার বর্ণের রঙিন ভালোবাসার আকৃতি মড্ হয়েছে সে আর এক্স এর তিন বর্ণের পায়ের ওপর ভরসা বিহীন মস্তি কে “জাস্ট -টাইম পাসের” তত্ত্বে ভাসিয়ে দিয়ে ।তন্ময় তাই ঠিক করে ছিল -এখন যা হচ্ছে হোক ,পরে কিন্তু পুষিয়ে নেবে । —এই কিন্তু শব্দটার হাত ধরেই অনেকগুলো হয়তো মনের মধ্যে জড়ো হল অহল্যার অতীতের গল্পের চারপাশে ।এই হয়তো গুলো কে সত্যি প্রমাণের অদম্য বাসনায় বাড়ি আর শ্বশুরবাড়ি র অনিচ্ছাকৃত বোঝাপড়া র মধ্যে তন্ময় কোন এক প্রবাহের টানে ভেসে কোন মেয়ের সত্যিজীবনের গল্প আবিষ্কারে নামল,যা এর আগে অন্তত শতাধিক মেয়ের কাছেদূরের অবস্থানেও করে নি ,নেহাত আবেগর বশবর্তী হয়েও। তখনও ঘর বাঁধার কোন ভাবনা, শয়নে স্বপনে তাকে নিয়ে ভাবনার মতন নেকুপুশু চিন্তা মনে আশ্রয় ই পায়নি জাস্ট টাইমপাসের বিশ্বাসে ভর করে। কত রক্ত ঝরানো বিপ্লবের বিপ্লবী তন্ময়ের মনের পর্দায় বোধহয় এই অহল্যাই ফার্স্ট ব্রেক- আপ ঘটালো রক্তবিহীন মালঞ্চ শয্যায় বিবাহ বিপ্লবের সফল অঙ্কুরোদগম ঘটিয়ে। সেদিনকার তন্ময় এর অসন্তুষ্টি আগেকার সব সফলতার আনন্দে যেমন সাময়িক জল ঢেলেছিল আর ফার্স্ট বলে উইকেট নিতে ভালোবাসা শয্যা বিপ্লবী তন্ময়ও ‘দুনম্বরী ‘ ভাবনাটাকে তাড়া করতে করতে হাঁফিয়ে উঠে স্বান্তনার যুক্তি সাজিয়ে আশ্বস্ত করছে নিজেকে।”সব কি জীবনে ঠিক পাওয়া যায় ” বা”এত হিসেবে জীবন মিলবে না” বা “কিছু খামতি থাকবেই জীবনে”বা”এত খেলা খেললে কোন খেলায় হারতেই হবে”——‘ইত্যাদি প্রভৃতি যুক্তিতে নিজেকে বোঝাতে গিয়ে এই প্রথম তন্ময় মনে মনে” রিলশন ” শব্দটার গভীরতাটা টের পেল আর এককালের সবচেয়ে ফেবারিট মস্তি শব্দটার বিপন্ন চিৎকার যেন শুনতে পেল।
৪॥
যাইহোক মনের দ্বিধা মনেই রেখে, বন্ধুদের মুখে “বুরভাক বয়”,ব্যাচারার,মতন আওয়াজ খেতে খেতে বিয়ের পিঁড়িতে বসেই পড়ল এককালের খ্যাতনামা স্বভাব প্রেমিক তন্ময় বোস। প্রথাগত মালাবদলের পর জনপ্রিয় শুভদৃষ্টির আসরে নানা টিপ্পনির মধ্যে উড়ে আসা একটি টিপ্পনি কনফিডেন্স লেভেলটা নাড়িয়ে বলে গেল –লেগস্টাম্প এর বলে বুঝে না খেললে এল বি ডব্লিউ এর মতন আউট হয়ে ঘরে বসেই ফাঁসতে হয়।তাই চোখাচোখির পর্ব তন্ময়কে বাধ্য বরের মতন একটা চাবুক চাউনির সামনে এনে একটা বিশ্বাসকে দুর্বল করে দিতে লাগল। বাধ্য হয়ে মেনে নেওয়া যুক্তিগুলোর যেমন ভেঙে দেওয়ার শক্তি থাকে না ঠিক তেমনই বহু শয্যা বিপ্লবের সফল নায়ক তন্ময় ফুলশয্যার ঘরে নিজেকে নিয়ে যাবার সময় সেই উদ্দীপনা অনুভব করল না যা প্রত্যেক পুরুষ নিজেকে প্রমানের পূর্বে করে থাকে ।কিছুটা নিজের চেনা,বহুপরিচিত অঞ্চলে যেভাবে পতাকা উত্তোলন করতে আসে নেতারা, ঠিক তেমনই ঢংয়ে ঘরে ঢুকল তন্ময় ।ফুলেল বিছানায় অহল্যা দের বিপরীতে বসেই প্রথমে বেশ বোকার মতন চেয়ে রইল। চোখের নাচুনি আর ঠোঁটের ফিচেল হাসির খেলায় অহল্যা একটা সম্বোধনীসম্মতি সূচক ব্যঙ্গে ধাক্কা দিল তন্ময়কে আর মুহূর্তের মধ্যে নিজেকে সামলে পাল্টা আমন্ত্রণের ঈশারা ছুঁড়ল তন্ময় ।”অনেক তো হল আজ আর নয়” বলে শরীর বিছিয়ে এলিয়ে গেল অহল্যা, ঠিক যেমন বাঈজিরা অঙ্গবিস্তারের হিল্লোলে সাড়া তুলতে চায় পুরুষ শরীরে ঠিক তেমনি । কিন্তু সেই আবেদন ছুঁতে পারল না বোল্ড তন্ময়ের দ্বিধাণ্বিত মনের তাগাদাকে। অহল্যার শরীরের ওপর নিজেকে বিছিয়ে অহল্যার মুখটাকে নিজের মুখের কাছে এনে জড়িয়ে সমর্পিত পুরুষের বহুলালিত প্রাগৈতিহাসিক প্রশ্নটি ছুঁড়ল–অহু,আমিই তোমার জীবনে প্রথম তো? যেন শত বর্ষের ভরসার খোঁজ চাওয়া আকুতি আর সঙ্গে সঙ্গে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো অহল্যা – যেন ফাস্ট বলে তিনটে স্টাম্প উড়িয়ে উইকেট ছিনিয়ে নেওয়া বোলার। সজোরে সমস্ত শরীর মুচড়ে তন্ময়কে বিছানায় উল্টে দিয়ে নিজের শরীরটাকে ওর শরীরে লেপটে দিয়ে মুখটাকে দুহাতে তুলে গভীর একটা চুম্বনের পর দুআঙুলে তন্ময়ের নাকের ডগাটা নাড়িয়ে হালকা স্বরে বলল–বোক্কা, স্পিনাররা কখনও নতুন বল পায়?
Tags: ১০০% লাভ, দেবাশিস মজুমদার
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।