কি হল পেলে? – স্ত্রীর উত্তেজিত কন্ঠের প্রশ্নের উত্তরে নীরব রইলেন ধূর্জটিবাবু।
” না”,বলছে- “অল দি রুট্স ইন দিস লাইনস আর বিজি,প্লিজ ডায়াল আফটার সামটাইমস।”
ইস্- এই এক ঢং এর কথা – কত মানুষ নিরুপায় হয়ে আর একটা মানুষকে খোঁজে, সেটা একদলের কোন হুঁশ থাকলে হয়।- স্ত্রীর অকাট্য যুক্তি আর ধীরাজকে না পাওয়ার উত্তেজনা এবং একইসাথে পাড়ার মানুষদের নিস্তব্ধ চাওয়াচাওয়ি লক্ষ্য করে সত্তর পার বৃদ্ধ ধূর্জটিবাবু একমুহূর্তে কোন কথা বলাকে অপ্রয়োজনীয় মনে করলেন।
ধীরাজ মানে ধীরাজ দত্ত ।পাড়ার সদ্য চাকরি পাওয়া সেল্স রিপ্রেজেনটেটিভ ছেলেটি হঠাৎ হাওয়া বদলের শখে বউকে নিয়ে হাওয়া হয়েছে দীঘার সমুদ্র সৈকতে ।এদিকে বাড়িতে বৃদ্ধ বাবার হঠাৎ বুকের ব্যথা ওঠায় বাবার বাল্যবন্ধু এই ধূর্জটিপ্রসাদ রায়ই স্থানীয় নার্সিং হোমে ভর্তি করে প্রতিবেশী- বন্ধু র দায়িত্ব পালন করেন। পাড়ার গন্য- মান্য- জঘন্যদের শত চেষ্টাতেও ফোনে ধরা যাচ্ছে না ধীরাজ কে।স্ত্রীর ও নিজের মিলিয়ে ফোনের সংখ্যা চার।কিন্তু চারটে ফোনের আটটা নম্বরে বিচিত্র সব উত্তর আসছে— কোনোটাতে শুধু বীপ্ বীপ্,কোনটায় নট্ রিচেবেল,কোনটতে -প্লিজ ডায়াল আফটার সামটাইমস্,কোনটিতে -বর্তমান নম্বরটি পরিষেবা সীমার বাইরে আছেন, ইত্যাদি,ইত্যাদি ।
সমসাটা কিছুই নয়।স্থানীয় নার্সিং হোমে ভর্তি করার অবস্থা ভালো নয় জানানোতেই উৎকন্ঠা ছড়িয়েছে পাড়ায় ।তখন এইধূর্জটিবাবুই নিজ সিদ্ধান্তে কলকাতা সংলগ্ন হাসপাতালের বড় ডাক্তারকে নিয়ে এসে ডাক্তারি- অভয় পেলেও বন্ধুর ছেলেকে খবর দিয়ে না জানানো পর্যন্ত নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না।
“এর চেয়ে আমাদের সময় ই ভালো ছিল ।এত ফোনের স্টাইল ছিল না। সেবার ছোটকার যখন শরীর খারাপ হল, আমরা ভাইরা সবাই সান্দাকফু ট্রেকিং এ।তখন এসব মোবাইল যুগ স্বপ্ন । পাড়ার দীনেশ জ্যাঠা স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করে ধরলেন দার্জিলিং পুলিশকে ।সেখান থেকে হোটেলে । আর আমরাও দুদিনের মধ্যে বাড়িতে । আমরা কিন্তু খবরটা পেয়েছিলাম এক ঘন্টার মধ্যে । ভাবো তো?”, বললেন ধূর্জটিপ্রসাদ।
– তাহলে তাই কর না একবার । স্ত্রীর কন্ঠস্বর এর আকুলতা স্পর্শ করল ধূর্জটিপ্রসাদকে- দীঘা পুলিশকেই ফোন ধর না একবার ।
-অগত্যা মধুসূদন। দেখা যাক – বলে ফোন টা টেনে নিলেন ধূর্জটিপ্রসাদ ।
দেখা যাক সত্যি হল মিনিট পনেরোর মধ্যে । আর ঘন্টা পাঁচ এর মধ্যে বন্ধু পুত্র ধীরাজ কে দেখতে পেয়ে ধূর্জটিবাবু নিশ্চিন্ত হয়েই চিরকেলে মাসিমা সুলভ আচরণে ফোন রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে প্রায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন বলা যায় ।
স্ত্রীকে বললেন – শোন এই ফোন বাবুদের স্টাইল বাজির নমুনা ।চারটে ফোনের আনুমানিক দাম চল্লিশ হাজার এর আশপাশ ।তার দুটোতে নাকি ব্যাটারি শেষহয় শুধু নেটের অতিরিক্ত ব্যবহার করাতে। আগের রাতে কর্তা গিন্নি শেষ রাত অবধি নেটে ছবি দেখেছে।ফলে ব্যাটারির দফারফা।পাওয়ার ব্যাঙ্ক আর বাকি একটা ফোন নাকি বাড়িতে ভুল করে ফেলে গেছেন বাবুরা।আর বাকি একটা ফোনের একটা সিমে টাওয়ার ছিল না আর অন্য সিমটায় টাওয়ার ছিল কিন্তু নূনতম পয়সা মানে প্রাণশক্তি চালু রাখার ব্যালেন্স অনেক দিন ভরবে ভরবে ভেবেও ভুলে যাওয়ায় ইনকামিং কল বন্ধ করে দিয়েছিল।ফলে শূণ্য মাঠে বংশীধারী রাখাল– ভাবো একবার ।”
“এমা”- স্ত্রীর ছোট্ট প্রতিক্রিয়া।
“তা ধীরাজকে বললাম ।” একটু থেমে শুরু করলেন একসময়ের দাপুটে ভিজিল্যান্স অফিসার ধূর্জটিপ্রসাদ- ” এই বুড়োর কথাটা শোন।তিনটে ফোন বেচে দে।ঐ টাকা এম আই এস করে দে।যে টাকা ইনটারেস্ট পাবি,সেই টাকায় একটা ব্যালান্স ভরার ব্যবস্থা করতে পারবি ।এত ফোনে গুলিয়ে যাবে না, কোনটায় পয়সা আছে আর কোনটায় নেই।এতে অন্তত ঠিক সময়ে ঠিক লোক তোকে পাবে।শুনে তো বাবুর মুখ গোমড়া, নেহাত বাবার বন্ধু তার এই বিপদের সময় এতটা করেছে কিছু বলল না।”
স্ত্রী বাধা দিলেন – কেন বলতে গেলে?
“বলব না,একটু বলা দরকার আছে, এতগুলো ফোন রেখে কোন ঘোড়ার মাথা কিনল শুনি” – পেছনে রাখা সোফার তাকিয়ায় নিজের ক্লান্ত দেহটা এলিয়ে দিয়ে নিশ্বাস ছেড়ে বললেন – “লাভ একটা আছে বটে, ওই লোকদেখানো স্ট্যাটাস বাড়ে,নতুন ফোন হাতে রাখা, বাকি দশ বছর আগে যা ছিল তাই “।
একটুথেমে একটা দীর্ঘশ্বাসকে দীর্ঘতমভাবে ছেড়ে বললেন – “ব্যালেন্স নেই কোন এই সমাজটার- বুঝলে গিন্নি-সমাজের ব্যালেন্সটাই কেটে গেছে- না হয় কেটে দিয়েছে” ।
Tags: অণুগল্প সংখ্যা, দেবাশিস মজুমদার, স্টাইল
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।