23 Jan

অমানুষ

লিখেছেন:দেবাশিস মজুমদার


বিজ্ঞাপনটা চোখে আসতেই নিজেকে মনে মনে প্রস্তুত করতে শুরু করেছিল রতন। চাকরিটা চিড়িয়াখানায়। সরাসরি যোগাযোগের কথা বলা আছে। বিশেষ কিছুই বলা নেই। শুধু সুস্থ সবল চেহারার অধিকারী হতে হবে। মাপজোক যা দিয়েছে তাতে বেশ দস্যুমোহন গোছের স্বাস্থ্য দাবি করেছে। রতনের সবই আছে। ‘ঐটাও’ বেশ বড়। হ্যাঁ, বলা আছে, ‘ঐ’টার কথাও। এবং মোটামুটি একটা মাপের ধারণাও দেওয়া আছে। রতন সবটাই পরখ করে মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে নিল। কারণ বহুদিন এধার ওধার করেও জমছে না। সব থেকে বড় হেডেক ওর এখন কৃষ্ণা। কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছে না, চিড়িয়াখানায় কি ধরণের কাজ ওকে করতে হবে। শুধুই বলা আছে সবল স্বাস্থ্যের অধিকারী যুবক চাই। তার তলায় দেওয়া আছে মাপামাপির গল্প। জয়গুরু বলে বায়োডাটাফাটা নিয়ে হাওড়া থেকে চিড়িয়াখানার বাস ধরে ফেলল রতন। জানলার ধারে জায়গাও জুটে গেল একটা। রাস্তায় সদ্য নামা বর্ষার বৃষ্টিটা মন ভরে উপভোগ করল। মাঝে একটু ঝাঁকুনির তালে তালে আর জ্যামের মধ্যে আটকে ঈষৎ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে কৃষ্ণাকে সঙ্গে নিয়ে স্বপ্নও দেখল। হঠাৎ কন্ডাকটারের চিল্লানি কানে আসতেই সুখস্বপ্নটা ছুটল।

— চিড়িয়াখানা, লাইব্রেরি-লাইব্রেরি, চিড়িয়াখানা…হুমড়ি খেয়ে পড়তে গিয়ে কোনওমতে সামলে নিয়ে শেষ মুহূর্তে লাফিয়ে রাস্তায় নামল রতন। রাস্তা ক্রশ করে গেটের পাশে টিকিট কেটে সিকিউরিটির কানে কানে কর্মখালির কথাটা বলতেই, লোকটা আপাদমস্তক তাকিয়ে ওর চেহারাটা মাপল। নিজের পোশাক পরা চেহারাটার ওপর রোগা লোকটার পরখ করা দেখতে দেখতে একটু বেশ ইয়ে ইয়েই করছিল রতনের। যাই হোক, কীই বা বলা যায়! চাকরির ব্যাপার। এরপর গার্ড আঙ্গুল তুলে একটা ঘর দেখাল, ওখানে যান। থতমত খেয়ে রতন ‘হ্যাঁ’ বলে এগিয়ে গেল লোকটার চোখের দৃষ্টিটা এড়িয়ে যেতে। কী বিশ্রি চাউনি! ব্যাটাছেলে কখনও আরেক ব্যাটাছেলের চেহারার দিকে এভাবে তাকায়! যাইহোক, ঘরটার দরজার সামনে নেমপ্লেট — এ.বাগচি / ডিরেক্টর। দরজাটা খোলা। কিন্তু বুকের ওপর আরেকটা ছোট দরজা ব্রেসিয়ারের মতো আটকানো। দরজাটা ঠেলতেই উত্তর এল, ‘আসুন’। ভেতরে ঢুকে একটু এগিয়ে দাঁড়াল রতন। খুব আলো-আঁধারি মাখা ঘরটা। পুরনো সাহেবদের আমলের ঘর তো। ফাইল থেকে চোখ তুলে সামনের টেবিলে বসা সাদা চুলের অফিসার বললেন, ‘বসুন’। একটু আড়ষ্টতা নিয়ে না বসে একটু আমতা আমতা করে রতন বলল, ‘না মানে ঐ কাগজের বিজ্ঞাপনটা দেখেই…’

-‘ও আপনিই তাহলে, মানে…ক্যান্ডিডেট। ভদ্রলোক চোখ দিয়ে যেন রতনের শরীরের জামা-কাপড় সব খুলতে আরম্ভ করলেন। এ তো মহা ঝেমেলায় পড়া গেল। সবাই ওর চেহারা চেখে দেখছে আর মাপছে। শুধু ভেতরে ভেতরে নয়, বাইরেও বেশ সিঁটিয়ে যেতে লাগল রতন।

-‘ঠিকাছে। এক কাজ করুন। ওঘরে গিয়ে জামা কাপড় সব খুলে ফেলুন।’

-‘অ্যাঁ!’ রতনের গলায় প্রায় আর্তনাদের সুর।

ভদ্রলোক চোখ তুলে তাকালেন, ‘হ্যাঁ, আপনাকে মানে আপনার শরীরটা একটু পরখ করে দেখতে হবে তো।’

-‘মানে?’ রতন তো বুঝতেই পারছে না, এই চাকরির সঙ্গে ওর শরীর দেখার সম্পর্ক কোথায়? একী ঝামেলায় পড়া গেল রে বাবা! ও তো আর ডাক্তার দেখাতে আসেনি।

-‘হ্যাঁ, হ্যাঁ যান তাড়াতাড়ি’। ভদ্রলোক বললেন, ‘আপনার শরীর খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে মাপজোক দেখাই চাকরির প্রাথমিক শর্ত।’ ভদ্রলোকের গলার স্বরে দৃপ্ততা।

অসহায় রতন বলল, ‘মানে, সব খুলতে হবে?’

-‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, যান তাড়াতাড়ি করুন। গেঞ্জি, জাঙ্গিয়া সব খুলে ফেলুন। আমরা পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি।’ ভদ্রলোক চেয়ার ছেড়ে অন্য একটা ঘরে এগিয়ে যেতে যেতে বললেন, ‘শুনুন, আপনি এই নিয়ে তিন নম্বর। এর আগে দুজন এসেছিল। হয়নি। ফিরে গেছে। তবে আপনাকে বাইরে থেকে যা দেখছি ‘হয়ে যাবে’ বলেই মনে হচ্ছে।’

এই হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছেই কথাটা রতনের মনের মধ্যে একটা আলোড়ন তুলল। হঠাৎ কেউ যেন একটা শিঙা ফুঁকেই নামিয়ে রাখল। গতি আসল রতনের শরীরে। দেরি না করে পাশের ঘরে ঢুকেই পটাপট জিন্স, গেঞ্জি, ড্রয়ার সব খুলে ফেলল। সামনের আয়নাটার দিকে তাকিয়ে নিজেই চমকে গেল। এই ঘরটায় আলোটা একটু জোরালো। সি এফ এলের আলো তো তাই জোর বেশি। বাড়ির বাথরুমেও নিজেকে এভাবে আবিষ্কার করেনি রতন। কারণ বাথরুমের আয়নাটা বড্ড বেশি উঁচুতে। দাড়ি কাটার সময় শুধু মুখ দেখতে কাজে লাগে আর অন্য সময় ঘরে জামা বদলায় ঝড়ের গতিতে। লুঙ্গি পরা অবস্থা থেকে কোনওমতে ড্রয়ার গলিয়ে প্যান্টটা গলায়। আর জামাটা গায়ে ফেলেই দৌড়োয়। ঘরে ওর আয়না ফায়নার ব্যাপার নেই। কৃষ্ণা হয়তো ওকে এভাবে আবিষ্কার করে থাকবে কোনও সময়। কিন্তু সেও তো ক্ষণিকের, আলোচনার সময় হয়নি কখনও। কারণ তখন সে আলোচনার সময় নয়। তাকিয়ে আলোচনার আগেই তো ঝাঁপাঝাঁপি আর চাপাচাপির চাপ থাকে। ফলে এভাবে নিখুঁত মনোহর আইচ মার্কা বডি বিল্ডার ধরনের নিখুঁত মাপামাপির দিকে ও কখনওই যায় নি আর প্রয়োজনও পরেনি কখনও।

-‘বাঃ! খুলে ফেলেছেন?’ ভদ্রলোকের কণ্ঠস্বরে কিছুটা ভেতর থেকেই চমকে উঠল রতন। প্রশান্ত হাসি মুখে মাখিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে ভদ্রলোক বললেন, ‘বাঃ! বাঃ! বিউটিফুল। সঙ্গে ঢুকলেন বেঁটে টাক মাথা বুড়ো মতো একটা লোক। ‘বাঃ!’ ওই ভদ্রলোক যোগ করলেন, ‘যা সাইজ চাইছিলাম ঠিক তাই।’ থতমত খেয়ে পেছন ফিরে লোকটাকে মাপতে লাগল রতন। লোকটা কোনও লাজলজ্জা না করে রতনের ‘ঐ’টা একটা লাঠি দিয়ে তুলে নিয়ে ছেড়ে দিল। রতন প্রতিবাদের কোনও সুযোগই পেল না।

-‘সিলেক্টেড’। একটা ঠাণ্ডা হালকা শব্দ ঘরটায় যেন খুশির স্রোত বইয়ে দিল।

-‘আট দিয়ে দেব, চলবে?’ ভদ্রলোকের সরাসরি প্রশ্নে রতন যথেষ্ট ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।

-‘মানে?’ ন্যাংটো রতন কিছুই বুঝতে পারছে না। এরপর তোতলাতে লাগল, ‘আট মানে? কী দেবেন? কেন দেবেন? আগের অফিসার ভদ্রলোক বললেন, ‘আরে বাবা মাইনে। আট হাজার হলে চলবে?’

এবার উলঙ্গ রতন আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজের চেহারাটা দেখতে দেখতে ভাবতে লাগল, যাঃ শালা, ন্যাংটো করে চেহারা দেখে আর ‘ঐ’টা তুলে ধরে দেখে চেহারায় এরা কী এমন পেল যে, তাতেই আট হাজার দিয়ে দেবে? এতো শালা বেইজ্জতির ব্যাপার। কৃষ্ণা জানলে খুব রাগারাগি করবে। এসব তো ওরই সম্পত্তি না!

রতন ড্রয়ারটা পরতে পরতে বলল, ‘আপনাদের কোনও কথাই মাথায় ঢুকছে না আমার। আমায় ন্যাংটো করে দেখে আট হাজার বেতন দেবেন কেন? কী বলতে চাইছেন, আমি পাগল না আপনারা?’

ভদ্রলোক ইশারায় পাশের ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে বসালেন ওকে। তারপর গলা নিচু করে বলতে শুরু করলেন, ‘শুনুন মিস্টার…বাই দ্য ওয়ে আপনার নামটা যেন কী? স্যরি জানা হয়নি এখনও।’

প্যান্ট, গেঞ্জি, জামা গলিয়ে বেশ মিলিটারি মেজাজ এসে গিয়েছিল রতনের। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল, ‘শুনুন, আমার নাম শ্রী রতনকুমার ঢালি।’

-‘ওকে’ ভদ্রলোক শুরু করলেন, শুনুন রতনবাবু আমরা কেউ পাগল বা দুশ্চরিত্র নই যে আপনাকে ন্যাংটো করে দেখতে যাব। আমাদের এখানে একজন সুউচ্চ বলবান পুরুষ মানুষ দরকার (একটু হেসে) জাস্ট আপনার মতো। আর যার ‘ঐ’টা বেশ সাইজ মতো হবে।

-‘মানে? কাজটা কী?’ রতনের রোখা জবাব।

‘কাজটা ‘ঐ’টার নয়। কাজটা — ইয়েস মানে আই মিন আমাদের এখানে মানে ধরুন সাত আট ঘণ্টা মানে বলতে চাইছি ভাল একদম আমেরিকা থেকে স্কিনটা আনিয়েছি। বিশ্বাস করুন স্রেফ সিক্সটি ফাইভ থাউজেন্ড দিয়ে…’

হঠাৎ ভদ্রলোক ঝুঁকে পড়ে হাতটা বাড়িয়ে দিলেন, ‘না করবেন না প্লিজ, ভীষণ ক্রাইসিসে আছি। জানি ব্যাপারটা ভাল না, তবু বলছি প্লিজ না করবেন না। বিশ্বাস করুন কোনও জানোয়ার বাঁচছে না দাদা, যা আনাচ্ছি তাই মরে যাচ্ছে।’ হাতটা তুলে দুরের একটা ঘর দেখালেন, ‘ঐ যে ঘরটা দেখছেন, ঐ ঘরটায় এনেছিলাম সুজিকে। আফ্রিকান ফরেস্ট থেকে কঙ্গো বেল্টের শিম্পাঞ্জী। একাস্টামড করতে পারল না। ভাবতে পারেন, জাস্ট সেভেন ডেজ, এক্সপায়ার করল। আসলে কলকাতার ক্লাইমেটটাই না পশুপাখিদের পক্ষে আর ঠিক থাকছে না। তাই আমরা জাস্ট একটু অন্যরকম ভাবেই ভাবছি। যদি ধরুন মানুষকেই — মানে আপনার মতো বেশ বলবান মানুষকে একটা চাকরির সুযোগ করে দিই। খরচও আমার অনেক কম পড়বে, মানে ওদের খাওয়া, ওষুধ দেখভাল সব দিয়ে যা পড়ত তার ওয়ান থার্ডে হয়ে যাবে। আর তার ওপর ধরুন একটা বেকার লোকেরও হিল্লে হল। তবে ভাববেন না, স্কিনটা একদম আপ টু ডেট, আপনার চেহারায় মানিয়ে যাবে। আপনাকে একটুও চিন্তা করতে হবে না। গায়ে র‍্যাশ বা অন্যান্য ডিজিজের কোনও চান্স নেই। গ্যারান্টি দিয়েছে কোম্পানি। যদি হয় ওষুধ খরচ ওদের। তবে ঐ একটাই শর্ত, ‘ঐ’টা ঢাকা যাবে না কিন্তু রতনবাবু।’ একটু থেমে বললেন, ‘মানে বুঝেছেন তো?’

রতন কী বুঝবে আর কী বা বলবে? চেয়ারে এলিয়ে পড়ে আছে। শেষে বনমানুষের চাকরি! হে ভগবান! তবে বিয়েটা হয়ে যাবে এটা নিশ্চিত!

-‘কী হল? রাজি তো?’ ভদ্রলোকের কণ্ঠস্বরে উৎকণ্ঠা। মানে দেখুন একটা কথা ভাবুন আপনি যদি ঠিক ঠিক হিসেব করেন একটু ভেবে দেখুন কত মানুষ দিনের মধ্যে কতরকম বন্য আচরণ করে। কতরকম ভাবে রোজগার করে একচ্যুয়লি এখানে তো আপনাকে কেউ চিনবে না। সকাল সাড়ে নটার মধ্যে ঢুকে যাবেন ঘরে আর পাঁচটায় বেরিয়ে আসবেন। কথা দিচ্ছি ঘরে কোনও গন্ধ থাকবে না। স্কিন কোম্পানি থেকেই একটা ফ্রেশনার দেওয়া থাকবে। আর ওখানে ট্রেনার আছে যান দেখিয়ে দেবে। মুভমেন্ট, অ্যাটিচিউড সব বলে দেবে। কোনও চিন্তা নেই। আস্তে আস্তে দেখবেন অ্যাডজাস্ট করে গেছেন। আর ন্যাশানাল হলিডেতে ছুটি। আর এমারজেন্সি — মানে আপনার শরীর খারাপে খাঁচা বন্ধ।’

রতনের হাঁ মুখ খোলা, কোনও কথা নেই, বুঝতে পারছে না কাউকে বলবে কী করে যে সে কী করে? ভদ্রলোক মুহূর্তের মধ্যে একটা ফাইল খুলে ফেললেন, ‘হ্যাঁ, এখানে কয়েকটা সই, আর কাল সকাল থেকেই শুরু করে দিন।’ রতনের উত্তর দেওয়ার শক্তি হারিয়ে গেছে। চোখের পাতা পড়ছে না। স্থির তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে। লোকটাও ততোধিক তৎপর শিকার খাঁচায় পোরার উদ্দেশ্য সফল করতে। মাথাটাকে গলা থেকে বাড়িয়ে আর একটু এগিয়ে দিলেন রতনের দিকে, ‘আচ্ছা যান। আমার রিস্কে আপনাকে কনভেয়েন্স অ্যালাউন্স আরও এক হাজার টাকা দিয়ে দিচ্ছি ক্যাশ। নিন, তাড়াতাড়ি সইটা করুন। কনভয়েন্সের টাকাটা আজই হাতে হাতে অগ্রিম দিয়ে দিচ্ছি। আর মাইনেটা মাস গেলে অ্যাকাউন্টে চলে যাবে। কাগজপত্র সব পরে নিয়ে নেব। আস্তে আস্তে পপুলারিটি বেড়ে গেলে ইনক্রিমেন্ট হবে টাকার অঙ্কটাও বাড়বে। ওটুকু সুপারিশের দায়িত্ব আমার।’ এরপর কাউকে ডাকলেন ভদ্রলোক ইশারায়। একটা লোক ‘হ্যাঁ’ বলে দিচ্ছি বলে চলে গেল। এরপর রতনের দিকে ঘুরে বললেন, ‘শুনুন, এখন তিনটে বাজে, আজই ট্রায়াল দিয়ে যান। আগে সইটা সারুন। তাড়াতাড়ি।’ ভদ্রলোক নিজের পেনটাই পকেট থেকে বের করে ধরিয়ে দিলেন রতনের হাতে। সইটাও যেন ওর হাত ধরেই হয়ে গেল। রতনের আচ্ছন্ন অবস্থাটা কাটল ট্রেনারের উপস্থিতিতে। খাঁচা থেকে বেরিয়ে বা খাঁচায় ট্রেনারের ঘোরাঘুরির কায়দা দেখানোর কৌশল দেখতে দেখতে ভদ্রলোকের গলাটা কানে বাজছিল। ‘বাইরে কেন, বাড়িতেও বলতে যাবেন না মশাই। এসব রটলে মিডিয়া ফিডিয়া হলে আমাদের বিপদ, সাথে সাথে আপনারও। শুধু কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবেন, চিড়িয়াখানায় একটা চাকরি পেয়েছি। ব্যস। কেউ তো আপনার সঙ্গে এখানে আসতে যাচ্ছে না। আপনাকে এখানে এসে খুঁজতে বা চিনে বের করতেও যাবে না। হে হে বুঝলেন না, আপনি আজ থেকে আট ঘণ্টা বনমানুষ, বাকিটা মানুষ।’

এবার কৃষ্ণার মুখটা ভেসে উঠল, খাঁচার দরজার রডটা শক্ত করে চেপে ধরল রতন। পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল মেইন এন্ট্রান্সের দিকে।বিকেল তখন সাড়ে চারটে, আলিপুর জু’র পড়ন্ত বিকেলের রোদ গায়ে চাদরের মতো জড়িয়ে আছে রতনের। কৃষ্ণার কথা মনে হচ্ছে শুধু। সিঁথিতে সিঁদুর, হাতে শাঁখা-পলা, নোয়া। মাথায় চেলি, লাল বেনারসির ঘোমটার আড়ালে নতমুখে কৃষ্ণা। ফ্ল্যাশ ঝলসাচ্ছে মুহুর্মুহু। ঐ নিষ্পাপ মুখটা কী জানে ওর বর আট ঘণ্টা বনমানুষ আর বাকিটা মানুষ? চশমা পকেটে কি না হাতড়াতে গিয়ে হাত ঠেকল একটা খামে। খামের খাঁজ ধরে আঙুল দুটো ছুঁয়ে গেল কড়কড়ে নোটগুলো। ঠিক — ওটাই কনভেয়েন্স অ্যালাউন্স- অ্যাডভ্যান্স ক্যাশ পেমেন্ট হয়েছে — বনমানুষের যাতায়াতের ভাড়া।

Tags: ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ