ফোনটা দুবার বেজে থেমে গেল। ঋষিতা ফোনের সামনে বসেছিল। সে ইচ্ছে করে রিসিভ করেনি। যত সব বাজে ফোন। কাকে দিচ্ছি , বয়স কত ,কত দেবেন – এরকম হাজার প্রশ্ন । একজন তো বলেই ফেলল ,না হয় দিলাম । আপনার উপকার হলো। তাহলে ও তো অর্থ দিয়ে দায়মুক্ত হতে পারবেন না। শুধু অর্থ দিয়ে কি অমূল্যধন পাওয়া যায়। একটা সম্পর্ক রাখতে হ্যাঁ তা তেমন হয়ত টাইট না হতে পারে -সে তো রাখাই যেতে পারে। আমি আমার একটা হরিয়ে যেমন আমি আমার অতি নিকট জনের সমীহ হারাবো ,আপনি বলতে পারবেন না যে আপনি আপনার হাজবেন্ডেরর সঙ্গে আগের মতো আচরণ করতে পারবেন। তবে হ্যাঁ আপনাদের অভিনয় দক্ষতা প্রশংসার অতীত।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে কপালের উপর একটা হাত রেখে চোখ বুজল ঋষিতা। ঋষিতাও তো দিতে পারে। তাহলে …! ঋষিতা ভাবে মঞ্জিল প্রথম আলো থেকে যখন তার দিকে দৃষ্টি দেবে তখন যদি তাকে অসুন্দর দেখে মুখসে যে মুখ ফিরিয়ে নেবে না কে বলতে পারে ।মঞ্জিল ছিল ইউনিভার্সিটি ছাত্রীদের হার্টথ্রোব ।শুধু রূপ নয় ,অর্থ প্রতিপত্তি ও কম ছিল না । ঋষিতা একটি অতি সাধারণ বাড়ির মেয়ে। তার উচ্চশিক্ষার সিঁড়ি ভাঙতে গিয়ে তার পরের ভাই-বোনদের অর্থকষ্টে পড়তে হয়েছে। অনেক যুদ্ধ করে তাকে জয় পেতে হয়েছে ।রঞ্জন ঋষিতার সহপাঠী।সে ঋষিতাকে খুব ভালোবাসত। বোকার মত। ঋষিতা যে কতবার ওর চিঠি ছিঁঁড়ে কুচি কুচি করে ফেলে দিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই । সেগুলোর আবেদন কিন্তু ছিল মর্মস্পর্শী । আকাশ থেকে চাঁদ ধরার ফাঁদ নয়, বাড়ির স্বজনদের ত্যাগ করে তিতিক্ষা নয়। সরল সাদামাটা ।কিন্তু গভীর।ঋষিতা দীর্ঘশ্বাস ফেলল ।অভিমান করে সমস্যার সমাধান হওয়ার নয়। ঋষিতা নম্বরটায় ফোন করলো।
দুটো রিং হওয়ার পর ওপাশ থেকে একজন বলল ,আমি এ্যাডটা পড়েছি ।আমি রাজি আছি।
– আপনার নাম ?কোথায় থাকেন ?
-এগুলো কি খুব জরুরী ?
– না তা নয় ? তবুও… কত টাকা নেবেন ?
-কিচ্ছু না ।
– অনুগ্রহ !
ওপাশ থেকে কোন উত্তর নেই ।
ঋষিতা ভাবল অনুগ্রহই তো ।টাকা দিয়ে তো সব কেনা যায় না।
ঋষিতা বলল, তাহলে ঠিকানাটা লিখে নিন। সম্ভব হলে কাল চারটা থেকে সাতটার মধ্যে আসুন । এলে কথা হবে।
কলিং বেল টিপতে একজন বয়স্ক লোক দরজা খুললেন।ভেতরে বসালেন।চাকর দু’ কাপ চা দিয়ে গেল ।
বয়স্ক লোকটি বললেন, ভাগ্যের ফের ছাড়া এ আর কী বলা যায়। অ্যাক্সিডেন্টে প্রাণ বেঁচে গেল কিন্তু চোখদুটো সারাজীবনের মতো …
ভদ্রলোক কথা শেষ করতে পারলেন না। গলা বুজে এলো।কিছুটা সামলে নিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভদ্রলোক বললেন,ঈশ্বর করুণাময়।
– তাহলে কোন হসপিটালে যাব বলে দেবেন । ফোন নাম্বার দিয়ে যাচ্ছি ।
বয়স্ক লোকটি বললেন, নাম ?
-নামে কি এসে যায়। আপনার যেমন একটা চোখের দরকার আছে আমার তেমন একটা চোখ দানের দরকার আছে।
বয়স্ক লোকটি ফ্যালফ্যাল করে তাকালে লোকটি বলল ভেতরটা একবার এক্স রে করার ইচ্ছে হলো। ভয় নেই ফেল করব না ।আপনার বৌমাকে বলে দেবেন ,যে চোখ কেবল ঘৃণিত হয়েছে সেই চোখে আপনার বৌমা প্রতিদিন ধর্ষিতা হবে।
বয়স্ক লোকটির চালশে চোখে জিজ্ঞাসা ।তিনি অস্পষ্ট চোখে দেখলেন, চলমান ভীড়ে লোকটি মিশে গেল।
Tags: কৃপাণ মৈত্র, ধর্ষিতা
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।