03 Mar

সহজ টানাপোড়েন

লিখেছেন:সুষ্মিতা রায়চৌধুরী


(১)

ডক্টর কেভিন সব রিপোর্টগুলো জড়ো করে বললেন, “সারোগেসি করাতে পারেন কিন্তু এখনই করাবেন কিনা সেটা আপনাদের ওপর।”

কলেজের প্রথম দেখায় প্রেম এবং তারপর দুই পরিবারের সম্মতিতে,দশ বছর আগে,বিয়ে হয় অভিরুপ আর শ্রাবস্তীর।বন্ধুরা ঠাট্টা করে বলতো, “একটু ট্র্যাজেডি না থাকলে প্রেমকাহিনী ঠিক জমে না বুঝলি”।

কলেজ জীবনের চারবছর অগুন্তি প্রেমের প্রস্তাব পায় ওরা দুজনেই।কিন্তু শ্রাবস্তীর একঢাল কালো চুলের রক্তি আর ভাষাময় চোখ শুধুমাত্র জড়িয়ে থাকতো অভিরুপের সুঠাম শরীর।অভিরুপের বুকে মাথা রেখে কেটে যেতো অগুন্তি পড়ন্ত বিকেল।

কলেজের শেষ  বছর,যখন বন্ধুরা ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র তোড়জোড় করতে ব্যস্ত,অভিরুপ শ্রাবস্তীকে বলে “ভ্যালেন্টাইন্স ডের দিন দুপুরে বাড়িতেই থাকবো বুঝলি”।অভিরুপের  সঙ্গে  দিনের পর দিন ঘরবন্দি থাকতে রাজি শ্রাবস্তী।

ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র দিন অভিরুপের মা-বাবা গেছিলো এক আত্মীয়ের বাড়ি।এর আগে কোনওদিন ওরা একা দুপুর কাটায়নি বাড়িতে।শ্রাবস্তী দেখে অভিরুপের ক্যানভাসে লাল,নীল আর সাদা রংয়ের আধিপত্য সেদিন।সারা ঘরে ছড়ানো তুলি আর স্কেচ পেন্সিল।

“নতুন কিছু আঁকবি অভি?”শ্রাবস্তীর প্রশ্নে একটা লাল গোলাপ গুঁজে দেয় অভিরুপ তার চুলে।আলতো করে খুলে দেয় হাতখোপা।একঢাল লম্বা চুল পিঠ ঢাকতেই শাড়ীর আচঁল লুটিয়ে পড়ে মেঝেতে।টিপটাও খুলে দেয় সে কপাল থেকে।শুধু গলায় থাকে অভিরুপের দেওয়া লকেটটা।শ্রাবস্তির ঠোঁট দুটো কাঁপলেও সম্মতি থাকে সবটায়।অভিরুপ শ্রাবস্তীর সম্মতিতে রাশ ভাঙে আদরের।তুলির টানে ক্যানভাসে ফুটে ওঠে শ্রাবস্তীর শরিরী বিভঙ্গ।ভ্যালেন্টাইন্স’ডে তে অভিরুপের তুলির টানে রঙীন হয় শ্রাবস্তীর অন্তরাত্মা।

“এই ছবিটা কোনওদিন বিক্রী করবি না তো?”

অভিরুপ সোহাগে ভরিয়ে দেয় শ্রাবস্তীকে।চুপকথায় প্রতিশ্রুতি পায় আব্দার।

কিন্তু একমাস পরে শ্রাবস্তী জানায় সে প্রেগন্যান্ট।আচম্বিতে পৃথিবী টালমাটাল হয়ে গেলেও,অভিরুপের যত্নে,ভরসায় সেরে ওঠে শ্রাবস্তীর মন। অ্যাবর্সন   ঠিক ভাবে হয়ে যায় সবার অজান্তেই।ওদের সুখ-দুঃখের ওপর অধিকার শুধু ওদের ব্যক্তিগত।

কলেজ শেষ হওয়ার পর দুজনেই চাকরি পায় বেশ নামকরা বিদেশী  কোম্পানিতে।ওদের বিয়ের দিন বাসরে সবাই ইয়ার্কি মারে, “তোদের একবছরেই বাচ্চা হয়ে যাবে দেখিস”।

চাকরিসুত্রে দুজনেই হবে লন্ডননিবাসী।কলকাতা ছাড়ার কষ্টটা ক’মাস বেশ অবসাদে ফেলেছিলো দুজনকেই।আসলে কেউ না জানলেও ওরা জানতো,ওদের ভালোবাসার সবথেকে বড়ো স্বাক্ষী কুমোরটুলির ওই ছেড়া ত্রিপল,হলুদ ট্যাক্সির দৈনন্দিন চলাফেরা,মাটির ভাঁড়,প্যারামাউন্টের সরবত,টানা রিক্সার টুংটাং,ট্রাম,ফেরিওয়ালার ডাক।আসলে সব ভালোবাসারই একটা টান থাকে।কিন্তু যখন সেটাই দূর্বলতা হয়ে যায় তখন কিছুক্ষণের জন্য সময়টার রাশ ধরতে হয় নিজেদের।সামলে নিয়েছিলো ওরাও।সদ্য বিবাহিত জীবনের আনকোরা আনন্দে তখন বাঁধনছাড়া উন্মাদনা।এতোবছর ভালোবেসেও এতটুকু একঘেয়েমি আসেনা ওদের।রোজ নতুন লাগে পরস্পরকে কাছে পাওয়া।ঠিক তখনই আবার প্রেগন্যান্ট হয় শ্রাবস্তী।

“এই মুহুর্তে কোনও তৃতীয় মানুষের জায়গা নেই আমাদের মধ্যে”,এটাই বলেছিলো ওরা।প্রথমবার অ্যাবর্সনের সেই কষ্টটা এবার যেন অনেকটাই কম।জীবন তো পড়ে আছে।প্রিয়বন্ধুর সাথে,ভালোবাসার অলিন্দে সুখে ঘরকন্না করে দাম্পত্য।লন্ডনের পাথুরে রাস্তায় হাতধরে এগিয়ে যায় সময়।ওদের দরকার লাগে না কারোর।আজকাল বন্ধুরা একটু যেন ঈর্ষা করে ওদের।

কিন্তু দুবছরে একবার,ওরা যখন কলকাতায় যায়,তখন ওদের আগেরমতনই ভালো লাগে শহরটাকে।কিন্তু এখন যেনো লন্ডনের টানটা বেশী।দুই মা বাবা মাঝেমধ্যে আসে।তখন যেন ওরা আবার নতুন করে ফিরে পায় ওদের কলেজ লাইফ।অফিস থেকে ফেরার পথে বিগবেনের সামনে দেখা করে ওরা দুজনে।অভিরুপের আলতো চুমুতে সেই একইরকম ঊষ্ণতা এখনো।দুটো কালো কোট পুরনো প্রেম ঝালিয়ে নেয় প্রতীকী ঘড়িটার নীচে।হেঁটে পার হয় পাথুরে রাস্তা।বাড়িতে ঢোকার আগে কিছুতেই শেষ হয়না ওদের গল্প – এখনও।আটবছর পরেও সেই কলেজের মতন এখনও  বাড়ির অজান্তে প্রেম করার শিহরণ থাকে ওদের বিবাহিত জীবনে।বৃষ্টি নামে লন্ডনের রাস্তায়।বাষ্পে ভাসে বেডরুমের কাঁচ।বছর পেরিয়ে যায় অনুরাগে-অনুভবে।

 

(২)

“দশটা বছর কেটে গেলো।এতবড়ো ভুলটা করলাম কি করে আমরা।এতটা স্বার্থপর হয়ে গেলাম?ভেবেই দেখলাম না কতোটা ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে নিজেদের”?শ্রাবস্তীকে আঁকড়ে ধরে একই কথা বলে যাচ্ছে অভিরুপ।

হিটারের আঁচেও যেন হীমশীতল স্রোত বয়ে যাচ্ছে সারা ঘরটায়।ডক্টর কেভিনের কথাটার সাথেই শেষ হয়ে গেলো ওদের ব্যক্তিগত স্বপ্নের ফানুসটা।

গত দুবছর ধরে সন্তান নেওয়ার সমস্ত চেষ্টা বৃথা হয়ে গেলো ওদের।কোনও শারিরীক অসুস্থতা নেই দুজনেরই।শুধু তাই নয় দুজনেই বেশ ফিট এবং কর্মঠ।কিন্তু কোনওভাবেই মা হতে পারেনা শ্রাবস্তী।পরপর তিনবারের মিসক্যারেজের পর,ডক্টর বলেছিলো আই.ভি.এফ করাতে।পরপর তিনবার তাতেও কোনও কাজ দেয়না।শুধু টাকার অঙ্কটা বাড়তে থাকে রোজ।আজকাল কেমন চুপ করে থাকে শ্রাবস্তী।বন্ধুবান্ধব,নাচগান,নাটক শেষ হলেই ঘরে দুটো মানুষের মাঝখানে একটা অদৃশ্য নিস্তব্ধতা।তৃতিয়বার মিসক্যারেজের সময় শ্রাবস্তী তখন ছ’মাস অন্তসত্তা।সেই ভয়াবহ রাতটার পর অভিরুপ আর আগের মতন করে পায়না ওর শ্রাবস্তীকে।সেদিন রাতে কান্নার আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেছিলো অভিরুপের।বাথরুমে যেতেই গাটা শিউরে উঠেছিলো ওর।সাদা মেঝের সবটাই তখন রক্তাক্ত আর শ্রাবস্তী বসেছিলো হাতে একটা রক্তপিন্ড নিয়ে।গা গুলিয়ে উঠেছিলো অভিরুপের কিন্তু সামলে নিয়েছিলো নিজেকে সেদিন।কোনওমতে শ্রাবস্তীকে পরিস্কার করে নিয়ে গেছিলো হাসপাতালে।এতটুকু কাছছাড়া করতে চায়না সে শ্রাবস্তীকে তারপর থেকে।

“চাইনা কোনও সন্তান।আমি তোমাকে নিয়েই খুব ভালো আছি”, শ্রাবস্তীকে বলেছিলো অভিরুপ।কিন্তু এই প্রথমবার মনোমালিন্যের ভারটা সহজে নামতে চায়না মন থেকে।রোজ জমতে থাকে অভিমানের পাহাড়।ফোনে এখন বন্ধুদের সহানুভূতি। ট্রাজেডিতে সবাই শুভাকাঙ্খি হয়ে পড়ে।দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে ভালোবাসা।

ছত্রিশের শ্রাবস্তীর “এগ কোয়ালিটি” খারাপ।তাই কোনওভাবেই সুস্থ সন্তান হওয়া সম্ভব না ওদের।বয়সের  সঙ্গে  এবং অগুন্তি গর্ভনিরোধক পিল নেওয়ার ফলে তার সন্তান ধারণ করা অসম্ভব।

“কেন বাচ্চাটাকে মেরে ফেললাম আমরা?আমরা খুন করেছি ওকে।তাই ও আর ফিরে আসে না”,কেদে ওঠে মাতৃত্বের স্বাদ না পাওয়া শ্রাবস্তী।

“অভিরুপের হাসি আর শ্রাবস্তীর চোখ এই দেখেই চিনে নেবো তোদের মেয়েকে”,বন্ধুরা বলতো ওদের।ওদের দুজনের ব্যক্তিগত পরিধিতে কেউ কোনওদিনও ঢুকতে পারেনি।পরস্পরের ওপর একক অধিকার শুধু দুজনের।আজ অব্দি কোনও কারণেই ভিন্নমত হয়নি দুজন।

“আমি পারবোনা শ্রাবস্তী সারোগেসি মেনে নিতে।আমি চাই না সন্তান। অন্য কেউ আসবে না আমাদের পৃথিবীতে।প্লিজ শ্রাবস্তী আমি মেনে নিতে পারবোনা”,অভিরুপ হাত জোর করে বলে শ্রাবস্তীকে।

বিদেশে থাকার দরুণ দত্তক নেওয়ার আইনত অধিকার তাদের নেই।শ্রাবস্তীর অবসাদটা অসহনীয় হয়ে উঠছে রোজ।সব থেকেও যেন শুন্যতা।ক্যানভাসে তুলি ছোয়ায় অভিরুপ আবার।নতুন করে শ্রাবস্তীকে ভালোবাসায় সাজাবে বলে।সিঁদুর একে দেয় কপালে।নিজের শরীরের ঊষ্ণতায় ভিজিয়ে দেয় শ্রাবস্তীর শরীর।ক্যানভাসে ফুটে ওঠে পূর্বরাগ।

“কেমন লাগছে নিজেকে?আমায় সবটা ভালোবাসা দেওয়া যায়না শ্রাবস্তী?আমায় তোমার কোলে মাথা রেখে শুতে দাও আবার প্লিজ,”অভিরুপ কপালে চুমু খায় শ্রাবস্তীর।

“চারদিকে রক্তপিন্ড আঁকো অভি।একটা ছুরি দিয়ে টেনে বার করে আনো আমার ছোট্ট মেয়েটাকে।কুপিয়ে খুন করি ওঁকে আমি।রক্ত আকো অভি”।

চুপ করো প্লিজ,কানে আঙ্গুল দেয় অভিরুপ।রাজি হয়ে যায় সে “এগ ডোনার” নিতে।শুরু হয় প্রস্তুতি।

দুমাস পর প্রেগন্যান্ট আজ শ্রাবস্তী।হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সিতে শরীর বেশ খারাপ হলেও একটা অদ্ভুত ভালোলাগার আবেশে জড়িয়ে থাকে শ্রাবস্তী রোজ।

“জানো অভি,আমি তোমায় আরও কাছে অনুভব করতে পারি আজকাল।মনে হয় শুধু আত্মিক নয় এখন তোমাকে নিজের ভেতরও ধারণ করতে পারি আমি।” ক্লান্ত শ্রাবস্তীর চোখদুটো কথা বলে তার ভেতর বাড়তে থাকা প্রাণের সাথে।

অভিরুপ হাসে কিন্তু তবুও একটা অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করে আজকাল।প্রথমবার সে বলতে পারেনা শ্রাবস্তীকে তার অস্বস্তি।সে নিজেও কি জানে কষ্টটা আসলে কি?একটা প্রশ্ন কুঁড়েকুঁড়ে খায় তাকে রোজ।অন্য কোনও মেয়ের সাথে শ্রাবস্তী কিভাবে ভাগ করে  নিলো তাকে? অবিবেচক অযৌক্তিক একটা প্রশ্ন তবুও কেমন হিংসা হয় আজকাল।কেটে গেছে আটমাস।অভিরুপ কাছে এলেই ছোট্ট প্রাণটা যেনো ঠিক বুঝতে পারে তার উপস্থিতি।শ্রাবস্তী বলে, “বাবার গন্ধ পায় মেয়ে দেখেছো”?

লন্ডনে এখন ঘরবন্দি সবাই হঠাৎ আসা ভাইরাসের প্রকোপে।ভিডিওকলে অভিরুপ ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে, “সারোগেটেড বেবি কি মায়ের সব বৈশিষ্ট্য পায়?”

উত্তরে ডক্টর কেভিন বলেন, “দেখুন জেনেটিকালি না হলেও সাধারণত যিনি বাহক হোন তার অনেককিছুই  সন্তান পায়”।

ভিডিওকলের পর শ্রাবস্তী চিৎকার করে ওঠে,“ভালোবাসতে পারো না ওকে তুমি?”

অভিরুপ প্রথমবার রাশটা ধরতে পারে না।চিৎকার করে বলে ওঠে, “ভালো থাকতে না তুমি শুধু আমার সাথে?জানি আমি ভুল তাও বলছি আমি শুধু তোমাকে চেয়েছিলাম।এইভাবে অন্য কারোর সাহায্যে আমাদের ভালোবাসাকে পরিপূর্ণ করতে চাইনি।আমার দমবন্ধ লাগে এভাবে।আমি খারাপ।তাও আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা এটা।আমরা দুজনেই সময়কে নষ্ট করেছিলাম কিন্তু তাই বলে তুমি আমায় দূরে সরিয়ে দেবে?ভাগ করে নেবে অন্য কারোর সাথে? আমি তোমার চোখ তোমার হাসি চেয়েছিলাম আমাদের মেয়ের মধ্যে।এখানে তো তুমি নেই।এটা তো অন্যকারোর।”

তীব্র ঘেন্নায়,রোষে,বিরোধীতায় কাঁপতে থাকে শ্রাবস্তী।

 

(৩)

ছোট্ট মিয়াকে হাতে নিয়ে পাথর হয়ে বসে আছে অভিরুপ।ফোন আসছে একটার পর একটা।ঠোঁটদুটো  একদম শ্রাবস্তীর মতন।চোখ বন্ধ করে কেমন গাল ফোলাচ্ছে ওদের মেয়ে মিয়া।শ্রাবস্তী অভিমানে এই ভাবেই গাল ফোলায়,তখন ওকে আদর না করলে রক্ষে নেই।অভিরুপ বুকের মধ্যে চেপে ধরে সদ্যজাত মিয়াকে।চোখ দিয়ে জলটুকু ফেলার অধিকার তার আজ নেই।যে ভালোবাসায় প্রতিশ্রুতি পেতো সহজ প্রেমের গল্প,যে প্রেমকাহিনীতে এখনও জীবনটাকে সহজ করে দেখা যেতো,তা সময়ের চক্রব্যুহে জতুগৃহ।

একটা সহজ প্রেমের গল্প লিখতে বসেছিলো ওরা। হঠাৎ একটা ঝড়ে তছনছ হয়ে গেলো সবটা। কারণটা নির্লিপ্ত।

“আই আ্যম ভেরি সরি অভিরুপ।প্রেসার এতো লো হয়ে গেছিলো,ওক্সিজেন লেভেলও ওঠানো যাচ্ছিল না ভেন্টিলেশন ছাড়া।ইন্টারনাল ব্লিডিং কিছুতেই আটকানো গেলো না।মিয়াকে বাঁচাতে পারলেও শ্রাবস্তীকে পারলাম না কিছুতেই।মিয়াকে ক’দিন পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।দেখতে হবে যে ওর মধ্যে কোনও ভাইরাসের প্রকোপ না আসে।আই আ্যম ভেরি সরি ম্যান”,ডক্টর কেভিন অভিরুপের নুয়ে পড়া শরীরটা ধরে বলে গেলেন শেষ কথাটা।

কথা ছিলো কোনওদিনও একা না থাকার।হঠাৎ জ্বর আর শ্বাসকষ্টে শেষ হয়ে গেলো সবটা।কিছু  বুঝে ওঠার আগেই শ্রাবস্তী প্রতিশ্রুতি ভেঙে দিল।

সবাই বলতো ওদের গল্পে ট্র্যাজিডি নেই।হাসপাতালের বেডে শ্রাবস্তীর গা ঘেঁষে শোয় অভিরুপ।চুল সরিয়ে দেয় কপাল থেকে।হাতদুটো চেপে ধরে শুধু বলে, “যদি আগামি সময়টাকে যত্নে রাখি,তখন ক্ষমা করে দিস প্লিস”।বুকের ভেতরটা যেনো কেউ দুমড়েমুচড়ে দিচ্ছে জোরে, কিন্তু হাসপাতালের ঘরের কাঁচের জানলার পরিবেষ্টনে ঢাকা পড়ে যায় আর্তনাদ।বেঁচে থাকাটা দুর্বিষহ হয়ে যাচ্ছে রোজ।কেটে যায় একবছর।

“আজকাল কষ্টেরা বেশ ভালো আছে মিয়াকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে।”

একবছর পর জীবনটাকে আর সহজ না লাগলেও সুন্দর লাগে অভিরুপের।পিতৃত্বের সম্পূর্ণতায় শুদ্ধ হয় ভালোবাসার সংজ্ঞা।মিয়াকে নিয়ে অভিরুপের লড়াই সময়ের সাথে।বুকের জ্বালাটা ঠান্ডা করে মিয়ার প্রথম সবকিছু।

সবাই বলে মিয়া হুবহু শ্রাবস্তীর মতন দেখতে।বরং অভিরুপের গায়ের রং ছাড়া আর কিছুই পায়নি সে।

ক্যানভাসে মিয়ার ছোটবেলার সাথেই রংতুলিতে মিশে যায় শ্রাবস্তীর উপস্থিতি।সময়ের জটিলতায় মানুষ দূরে যেতে পারে,সম্পর্কের গভীরতা কখনই না।

Tags: ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ