লিও তলস্তয় মহৎ শিল্পের স্বরূপ আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, তা জ্ঞানী আর সাধারণ মানুষ সবাইকে সমানভাবে পরিতৃপ্ত করতে পারে। তবে তিনি বলেননি, মহৎশিল্পের আরেকটি লক্ষণ এই যে, তার বল্গাহীন অভিযান দেশ আর কালের বেড়াজাল ডিঙিয়ে যায় অনায়াসে। গ্রিকমহাকাব্য ‘ওডিসি’ তেমন মহৎশিল্পের অন্যতম দৃষ্টান্ত। রোমান কবি ভার্জিলের মহাকাব্য ‘ঈনিড’ অন্তরে ওডিসির সুগভীর প্রভাব গ্রহণ করে সম্পদশালী হয়ে উঠেছে। আর দান্তের ‘ডিভাইন কমেডি’ সবিশেষ ঋণী ‘ঈনিড’-এর কাছে। ইউরোপের রেনেসাঁসে ওডিসি স্রষ্টার প্রভাব বহু আলোচিত। কেবল ইংরেজি ভাষার প্রধান কবিদের ওপর ওডিসির নিহিত প্রভাবের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেই বক্তব্যপ্রবাহকে দীর্ঘতর করা যায় অনায়াসে, তবে আমাদের লক্ষ্য আপাতত আখ্যানমূলক সাহিত্যে সীমিত। আলোচ্য মহাকাব্যকে অঙ্গাঙ্গী জড়িয়ে রয়েছে জেমস জয়েসের যুগান্তকারী উপন্যাস ‘ইউলিসিস’ যা ওডিসিউসের লাতিন নাম। সিসিফাসের যে অতিকথা আলব্যের কামুর সাহিত্য প্রত্যয়কে বিশেষ আদল দিয়েছিল, ওডিসি তাকেও স্থান দিয়েছে আপন দেহে। এ ধারায় রয়েছে আলবার্তো মোরাভিয়া’র বিতর্কিত আখ্যান ‘ডিসপ্রেজো’। আর্থার সি.ক্লার্ক লিখেছেন কল্পবিজ্ঞানের চমকপ্রদ কাহিনি ‘2001: A Space Odyssey’, কজানজাকিস রচনা করেছেন বিশ শতকের মহাকাব্য ‘The Odyssey: A modern sequel’. ইউরোপের রেনেসাঁই নয় কেবল, উনিশ শতকে আমাদের বাংলায় যে বহু বিতর্কিত নবজাগরণ ঘটে, তাঁর অন্যতম প্রাণপুরুষ মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও নিজেকে ওডিসি’র স্রোত থেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে রাখতে পারেননি। দেশজ রামায়ণ কাহিনী আশ্রিত মেঘনাদবধ কাব্যের অষ্টম সর্গের প্রেতপুরীর ধারণা ভার্জিল এবং দান্তে মারফত ওডিসি থেকেই নেওয়া। অনিতা দেশাই-এর ইংরেজি উপন্যাস ‘জার্নি টু ইথাকা’কেও এক অর্থে বলা চলে একালের ওডিসি। বস্তুত কল্পনাপ্রবণ বাকশিল্পীরা মানসিকতা অনুযায়ী নিজ নিজ পূর্বপুরুষ নির্ধারণ করে নেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ জীবনানন্দের সাহিত্য ভাবনা এ দেশের ছিল না, তিনি তবু রূপসী বাংলারই শিল্পী। আবার বাংলার অগ্রণী কথাশিল্পী অমিয়ভূষণ মজুমদারও বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্য থেকে সৃষ্ট হননি। পাশ্চাত্য সাহিত্য-সমুদ্র অবগাহনে জারিত তাঁর লেখক মানস। তিনি বলেছেন, ‘বাল্যকালে বাংলা সাহিত্য আমার বাড়িতে পাঠ করা নিষিদ্ধ ছিল।১ …আমার জীবনে প্রথম উপন্যাস হয়ে এল দুখানা প্রকাণ্ড বইঃ ক) বাডেন ব্রুকস, খ) ব্যাবিট। ইতিপূর্বে বাংলা উপন্যাসই পড়িনি। না শরৎচন্দ্র, না বঙ্কিমচন্দ্র, না রবীন্দ্রনাথ — কারো উপন্যাসই নয়।…আমার সাহিত্যশিক্ষা একপেশে। ব্রুকস দিয়ে শুরু করে যা চলছে, তাকে বাংলা সাহিত্যের সংযোগ বলা চলে না।২
ফলে তাঁর মানস অভিযানে কেবল দেশ নয়, কালের সীমাও অদৃশ্যপ্রায়। চিরায়ত গ্রিক সাহিত্যাদর্শের প্রতি অমিয়ভূষণের আগ্রহের সাক্ষ্য বহন করছে ‘বিশ্ব মিত্তিরের পৃথিবী’ আর শেষপর্বের উপন্যাস ‘ট্র্যাজেডির সন্ধানে’। এখানেই শেষ নয়, তাঁর সৃষ্টিও অনুবর্তন করেছে ওডিসির সাম্রাজ্যবাদী অভিযানের আন্তস্থ উত্তরাধিকার। আলোচ্য ‘মধু সাধু খাঁ’ কি উপন্যাস, না বড় গল্প নাকি নিছক ছোটগল্পই এহেন টুলোপণ্ডিতি তর্কে অযথা কালক্ষেপ না করে রচনাটিকে আমরা উপাখ্যান বলে উল্লেখ করব।
এ নদী সে নদী করে, ভাগিরথী-ভৈরব- ব্রহ্মপুত্র পেরিয়ে ধল্লায় ধীর গতিতে তীর ঘেঁসে চলে মধুর তরী একটানা। ঠিক একটানাও নয়, এখানে ওখানে চর । অতর্কিতে বাইরের আক্রমণে নৌকাডুবির আশঙ্কা সদাই বিদ্যমান, তাই আত্মরক্ষার ব্যবস্থা করে রাখতে হয়। অভিযাত্রা এক্ষানে ষোড়শ শতাব্দী বাংলায় এক বাণিজ্য ভ্রমণ রূপে পেয়ে যায়। যুদ্ধ, মৃত্যু ও ধর্মভাবনা, হিংসা-যৌনতা, প্রেম ও বিশ্বাসহীনতা-জীবন সম্পৃক্ত সবিএখানে পরিস্ফূট হয় সুগভীর আন্তঃস্থ ব্যঞ্জনায়। বণিকের পণ্য পশরা, ফিরিঙ্গি ভ্রমণকারী, হাটে বাঁদি বেচাকানা, সতীদাহ ইত্যকার সমকালীন ‘বস্তুময় জীবন সত্যের সমাহার’ ৩ আর অন্তঃশীল নিরবয়ব সময়স্রোত গড়ে তোলে উপাখ্যানটির চলিষ্ণু আবহ। ‘There are two journys in every odyssey’যেমন বলেন ডেরেক ওয়ালকট তাঁর নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত Omeros-এ আদতে যা হোমারের মহাকাব্যের অনবদ্য আধুনিক কাব্যভাষ্য এখানে তাঁর একটি নদীর স্রোতে প্রতিস্রোতে নৌকো ভাসিয়ে, অন্যটি মধুর ‘মনেও যেন তেমন এক চিন্তার স্রোতে আপাত-বিচ্ছিন্ন ভাবনা সকল উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে a living thing, one and continous’রূপে।৫ ভাবনার পিছনে ভাবনা চলে, তারপর তা ভাসান দেয়,’ সেই ভাবনা, যা প্রধান লক্ষ্য, তাকে ফুটিয়ে তোলার বাহনের চাইতে বেশি মূল্য লেখক কাহিনীকে দেননি। উপাখ্যান শিল্পের আধুনিকতা আদি মধ্য অন্ত যুক্ত নিটোল কাহিনীকে জীর্ণ বস্ত্রের মতো পরিত্যাগ করেছে অনেক পূর্বেই। কেবল ঐতিহাসিক বা সামাজিক উপাখ্যান নয়, এমন কী মনস্তাত্বিক উপাখ্যানও আজ এক অর্থে অনাধুনিক। আধুনিক লেখকের জন্য রয়েছে কেবল ব্যক্তি মানুষের অস্তিত্বের জগৎ। তারই মধ্যে কিংবা অনুষঙ্গে ইতিহাস, সমাজ, মন আর মনন আজ নিয়ত সক্রিয়। ‘মধু সাধু খাঁ’র একদিকে তাই ঐতিহ্য, অন্যদিকে আধুনিকতা। আবার এখাতে কাব্য, অন্যহাতে দর্শনকে ধরে ‘মধু সাধু খাঁ’ অর্জন করে নেয় আধুনিকতার ভিন্ন এক মাত্রা।
‘প্রিয় পাঠিকা’ সম্বোধন করে লেখক মাঝে মধ্যে উপাখ্যানে সরাসরি উপস্থিত হয়েছেন। কথক তো রয়েছেন মধুরই সমকালে অথচ পাঠিকার সঙ্গে আলাপ করছেন এইকালে। লেখক এইভাবে অতীতকে যেন স্পর্শযোগ্য বর্তমানে তুলে আনেন। ‘সাতিশয় হারামজাদা’ বলে বিশোষিত হলেও মধু সা দোষেগুণে নেহাতই মধ্যবিত্ত গোত্রের মানুষ। বহুদর্শী সে, প্রয়োজনে যথেষ্ট ঝুঁকি নিয়েও নিকটজনকে খুন করতে পেছপা হয় না। আবার কখনও দূর-অতীতের কারুর নিদারুণ কষ্টের কথা শুনলে ‘তেমন কালো তীক্ষ্ণ কিছু যেন তার বুকেও বেঁধে। আর তা থেকে তেমন রক্ত ঝরে।’ অন্যত্র নানা রঙের আকাশ দেখা ছাড়াও হরিণ-হরিণীর প্রেম, খেলার দৃশ্য দেখে মধু ভাবে, ‘এমন দৃশ্য দেখি মানুষে অমর হয়।…হে প্রাণনেতা, আবার প্রাণ দিহ, আবার চক্ষু দিহ, আবার দেখিবা দিহ, আবার…’ সে কিছুতেই নিজেকে পাপ-পূণ্য, উচিত-অনুচিতের জটিলতা মুক্ত করতে পারে না। পক্ষান্তরে এই সমস্ত দুর্ভাবনা সাময়িক বিব্রত করলেও পারে না তাকে টলাতে। সে অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছে, মানুষ যেমত বাঁচে আর যেমত বাঁচা উচিত এক না হয়। কেননা, ‘জীবন মহাশয় তার আপাত গাম্ভীর্য সত্ত্বেও অত্যন্ত প্রাগমেটিক রূপে বাঁচার চেষ্টার সমষ্টি।৬ তাই জীবনের কোনও কাল্পনিক পূর্ণতার আদর্শকে নয়, যেমন আছে অবিকল সেই জীবনকেই মধু ভালবাসে। আত্মসচেতন এক অগভীর মনের মানুষ সে। হিন্দু-মুসলমান-খ্রিস্টান সকলেরই মুক্তমনা মধুর নৌকায় এসে জোটে। সবার সঙ্গেই সহজে মেলামেশা করে সে, তবে কিনা মধুর পাতলা ঠোঁট খুবই চাপা। দেহমনে গভীর ক্ষত বহন করেও মধু তাই রক্তমাংসের সজীব মানুষ, কিছু বা স্ববিরোধীও। উপাখ্যানশিল্পকে অমিয়ভূষণ প্রায়শ দূরের দর্পণ হিসেবে নির্মাণ করেন। হয়তো বা দূর অতীত অভিমুখী তির্যক দৃষ্টিপাতের কারণেই অনেক সময় মানব জীবন সেই মায়াদর্পণে ক্রম উন্মোচিত হয় যুগপৎ তার বাস্তবতা এবং রহস্যময়তা নিয়ে।
ভেসে যেতে যেতে মগ্ন চৈতন্য মধুর ভাবনার জলে ফুটে ওঠে গৃহে ছেড়ে আসা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, ‘পুতির বিয়ে দিয়েছে, বেটা-বউও সুলক্ষণা। ফুলের মতো মেয়ে, কিন্তু এখনই পাছা ভার হচ্ছে না কেমন। আর যদি নাই ফেরে সে, তাদের মধ্যে কী বীজ বেঁচে থাকে না?’
পিতৃপুরুষের দায় অন্তরে বয়ে, ভবিষ্যতকে স্বপ্নে নিয়ে এগিয়ে চলে দীপ্ত বর্তমান মধু সা।
ফিরিঙ্গি ফিঞ্চ উপাখ্যানে আনীত হয় ভিনদেশ, ভিন জীবন ভাবনার প্রতিনিধিরূপে। সে সাত সমুদ্দুর পেরিয়ে এসেছে দেশ দেখতে। কোনও নিগূঢ় উদ্দেশ্যেও থাকতে পারে তার এই পর্যটনের পিছনে।৭ উদ্দেশ্য যাই থাক, মধু আর ফিরিঙ্গি, দুজনেই শেষঅবধি ভ্রমণ করে চলে। মধু যেমন বংশধরদের মধ্যে বিশল্যকরণী খোঁজে , ফিঞ্চ তেমনি তার রোজনামচার মধ্যে দিয়ে। ‘কখন কী হয় বলা যায় না। পান্ডুলিপি তাই সে নিরাপদে গচ্ছিত রাখে, তুমি আবার চক্ষু দিহ বলবে না অথচ তোমার চোখের দৃষ্টি কাগজে লিখে রাখলে, চোখ বুজলেও যা থেকে যাবে।’ জীবন নশ্বর জেনে, স্বপ্ন-চক্ষুকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় তারা।
এক্ষণে পাঠকের হয়তো মনে পড়ে যাবে লেখকের আরেক নৌ-বাণিজ্য জাত্রার আখ্যান — চাঁদ বেনের কথা। চাঁদ আর মধু দুই নৌবণিকই রূপমুগ্ধ আর যে , ‘Life itself full of play, full of pain, full of laughter!’৮ আদ্যন্ত তারই রসিক। রচনা দুটির সমস্ত পথ জুড়ে যেন থরে থরে সাজানো রূপ-রস-গন্ধ-বর্ণের বন্দোবস্ত। সবকিছুই আশ্চর্য রূপময় আর উপভোগ্য।
অর্থ, আহার, বেশ-ভূষা, সুরা, ক্রীতদাস আর রূপসী নারী সবই তাদের কাছে সুন্দর, অকুণ্ঠিত জীবন সম্ভোগের উপাদান। নৌ-বাণিজ্য এ দুই বহু ভাষাবিদ বণিকের বংশগত ব্যবসায়। উভয়ের পিতার মৃত্যু ঘটেছে নৌ-যাত্রাপথে। শিকার প্রসঙ্গ ও তুলনামূলক ধর্মালোচনা স্থান পেয়েছে রচনা দুটিতে। ইতিহাসপ্রসিদ্ধ স্থান ও ব্যক্তিনামের উল্লেখও যথেষ্ট। তবে কোনও গভীর তাৎপর্যের সূত্রে গ্রথিত না থাকায় এ সমস্ত টুকরো ছবি, প্রক্ষিপ্ত তথ্যাদি কেবল ঐতিহাসিক আবহমাত্র গড়ে তুলতে পেরেছে। মাঝে মাঝে চমক, আদ্যন্ত টানটান কৌতূহল আর অনিশ্চিতিতে গড়ে উঠেছে এ দুটির নির্মাণ-শিল্প। দুটোতেই লেখক যেন শোনান কম, দেখান বেশি। তবে চাঁদ বেনে ওরফে চন্দ্রশেখর বসুর মতো মহাবণিকের তরঙ্গ-ভঙ্গিল জীবনের আখ্যান এ নয়। এখানে নেই সাত সমুদ্র পেরিয়ে চলা কিংবদন্তী নায়কের মহাযাত্রার কাহিনী। বরং এখানে পাই এক বিপ্রতীপ জগৎ, ম্যুরালের পাশে যেন মিনিয়েচার পেইন্টিং। চাঁদবেনে কালাতীত সমস্যাকে বুকে ধরতে উদ্যত, অপরপক্ষের মধুর উপাখ্যানে সময়ের পরিধিও অতিসীমিত। চাঁদের ছিল মধুকর, মধুলব্ধা, মধুলিট, মধুতৃপ্ত, মধুমতী ও মধুপায়ীর এক অতিকায় নউ-বহর। মধুসা’র সবেধন নীলমণি একখানি লিকলিকে সরু পৈতৃক নৌকা। এই সঙ্গে চাঁদবেনে আর ওডিসির পারস্পরিক তুলনাটা সেরে নেওয়া যাক। লোকপুরাণকে প্রাথমিক আশ্রয় করে দুই শিল্পী নিজেদের উল্লিখিত মহাকাব্যিক সৃষ্টি করেছেন। উভয় রচনায় গৃহীত হয়েছে গল্প থেকে গল্পান্তরের রীতি প্রকরণ, একাধিকবার বিবৃত হয়েছে কিছু ঘটনা। ওডিসির মতো চাঁদবেনেও ব্যাপ্ত তার সুদীর্ঘ পটভূমিকায়, ঘটনা ও চিন্তার ঘাত-প্রতিঘাতে। চাঁদও ওডিসিউসের মতো ‘ম্যান অফ মেনি ডিভাইস’ যুদ্ধ এবং বাণিজ্য যথাক্রমে ওডিসিউস বা চাঁদের একমাত্র কাজ নয়। তাদের আগ্রহের ক্ষেত্র ও যোগ্যতা বহুধাবিস্তীর্ণ। মানুষের সম্ভ্রম সহজেই আদায় করে নেয় তাদের উপস্থিতি। সমুদ্রপথে উভয়ে পড়ে হিংস্র নরমাংস ভক্ষকের কবলে। আবার তারা ঘটনাচক্রে অচিনদেশে বহুবল্লভ হয়। কোটিস্বর্ণের বণিক আক্ষরিক অর্থে রাজা না হলেও ওডিউসের পতিব্রতা সুন্দরী স্ত্রী পেনিলোপির মতো চাঁদের রূপসী প্রেমময়ী স্ত্রী সনকাও রাজবংশের। পাহাড়ে ঘেরা নগর রাষ্ট্রে নগর পরিষদের সভা এমন ভাবনাকেই সমর্থন করে। উভয়কে বছরের পর বছর দেশের বাইরে স্বজনহারা হয়ে থাকতে হয়। সমুদ্র আর সময়ের স্রোত তাদের ভাসিয়ে নিয়ে যায় দিগদিগন্থীন অজানার উদ্দেশ্যে In the odyssey we roam from sea through the narrative, and the restless hero seems never so much at home as when he is on ship board.৯
এ মন্তব্য সমানভাবে প্রযোজ্য চাঁদবেনে সম্পর্ক। উত্তাল সমুদ্রপথে দু’জনেরই সংগ্রাম করে বিরূপ ভাগ্যের বিরুদ্ধে, যেন রুষ্ট সমুদ্র-দেবতা উভয়ের উপর দুর্ভাগ্য হয়ে চেপে বসে। শত বিপদের মাঝেও অবিচল থাকে তারা। আবার বিপরীত বরাত জোরে বারবার মৃত্যু মুখে পড়েও প্রাণে বেঁচে যায়, দুর্ভাগ্য-দগ্ধ পুরুষ হয়ে সমুদ্রবক্ষে ঘুরে বেড়ায়। বস্তুত যাদের মধ্যে দৈব এবং দুর্দৈবের সহাবস্থান তারাই রোমাঞ্চকর অভিযানে আবিষ্কার করে অজ্ঞাত দেশ। এইভাবে রচনা দুটি হয়ে ওঠে সমুদ্র ওঠে সমুদ্রযাত্রা আর আবিষ্কারের দূর-স্মৃতিময় কাহিনি। তরুণ ওডিসিউস পুত্র টেলিমেকাস সমুদ্রবক্ষে জাহাজ ভাসিয়ে নিখোঁজ পিতার সন্ধান করে, চাঁদবেনেতেও পাই সাদৃশ্যমূলক ঘটনা। প্রসারতা ও উচ্চতায় তুঙ্গস্পর্শী ব্যক্তিত্ব দুটি জীবনকালেই নিজেদের কাহিনির রূপান্তর শোনে গড়ে তোলে মৃত্যুতীর্ণ জীবনের অতিকথা। পণ্ডিত দভভপানি কালজ্ঞ বলেই চাঁদের ভবিষ্যত দেখতে পেয়েছে। তেমনি আরেক কালজ্ঞ বলেই চাঁদের ভবিষ্যৎ দর্শন করেছে। কাহিনি দুটি বর্তমান থেকে অতীতে গেছে বহুবার আবার কালজ্ঞের ভবিষ্যৎ দর্শন করেছে। কাহিনি দুটি বর্তমান থেকে অতীতে গেছে বহুবার আবার কালজ্ঞের ভবিষ্যৎ দর্শনের ফলে স্পর্শ করেছে ত্রিকালের মাত্রা। জুদ্ধকালে চাঁদ দীর্ঘদিন পর সমতটে ফিরে আসে কুষ্ঠী ভিক্ষুক হয়ে, তাকে দেখে প্রথমে কেউ চিনতে পারেনি। পর্যুদস্ত কালন্ত প্রৌঢ় চাঁদের প্রতিমা লেখক এখানে গড়েছেন তা ওডিসিউসের প্রতিরূপ। তবে ওডিসিউসের নিয়ন্ত্রণ করেছে স্বর্গের দেবী-দেবতা আর চাঁদবেনে কালের প্রভাবে ঈশ্বরহীন জগতের গদ্য মহাকাব্য। সঙ্গত কারণেই অমিয়ভূষণের সৃষ্টিতে স্বর্গ ও প্রেতপুরীর দৃশ্য বর্জিত। প্রভূত সাদৃশ্য সত্ত্বেও ওডিউসের দীর্ঘযাত্রা গৃহাভিমুখী, চাঁদের বর্তমানও যেন সদা জলে ভাসমান। সমুদ্রের প্রবাহিত জলের সঙ্গেই তুলনীয় এই সময়ের স্রোত। স্থান ও কালের যাত্রা মিলিতভাবে সম্ভব প্রায় অর্ধেক বিশ্বব্যাপী। এদিকে মধুর ভ্রমণ বঙ্গ-অসমেই সীমিত। কেননা চাঁদের যেখানে বহির্বাণিজ্য, মধুর সেখানে অন্তর্বাণিজ্য। ওডিসিউস বা চাঁদ চরিত্রের অনৈসর্গিক বিস্তার মধুতে বর্তায়নি। ওডিসিউসের মতো চাঁদ মৃত্যুভয়হীন। হলেও মধু সেই ভয়েই সদাসন্ত্রস্ত। তাদের আপন আপন জীবনার্থ অন্বেসণের বিশেষ একটি ভঙ্গিমা লক্ষ্য করি রচনা দুটিতে পৌনঃপুনিক উঠে আসা হরিণ-ঘাই হরিণীর প্রসঙ্গ-অনুসঙ্গে। ‘হরিণের যে শক্তি তাকে ঘাই এরদিকে ধাবিত করে, সেই একই শক্তি মানুষেও। হরিণের সে শক্তি ঘাই-এর ক্ষেত্রে যেমন বিচারহীন, মানুষের সেই শক্তিও মূলত অন্ধ, বিচারহীন। অথচ এই অন্ধ আবেগ হেন শক্তি ছাড়া মানায় কর্মহীন, জীবজগৎ স্তব্ধ (চাঁদবেনে) অনুরূপ দৃশ্যে পৃথক ভাবনা পাই মধুর অভিজ্ঞতায়। হরিণী রূপিণী প্রকৃতির ডাক শুনে হরিণ পুরুষ চালিত হয়। শেষপর্যন্ত ঘাই হরিণীর জন্যেই ঘনিয়ে আসে তার অস্তিত্ব সংকট। কারণ ‘ঘাইরা পালাতে দেয় না।’ সাংখ্য দর্শনের প্রকৃতি পুরুষ তত্বই ভিন্নার্থে অমিয়ভূষণের সংবেদী চিত্রকল্পে ব্যাখ্যাত হয়ে ওঠে। তাই মধুর অবচেতনের ভয় গানের ধুয়োর মতো ভেসে ভেসে ওঠে, ‘পুরুষ কী জীয়ে?…না, পুরুষ জীয়ে না।’ ওডিসির সঙ্গে তুলনীয় উপরিতলস্থিত লৌকিক-অলৌকিকের দোলাচলতা (নারীর চকিতে রূপান্তর ইত্যাদি) চাঁদবেনেতে থাকলেও মধু সাধু খাঁয় স্বযত্নে বর্জিত। মধু সাধু খাঁর সমাপ্তির সঙ্গে চাঁদবেনের দুস্তর ব্যবধান। চাঁদবেনের শেষ অধ্যায় ‘শান্তি পর্বের’ সঙ্গে বরং কিছু সাযুজ্য রয়েছে ওডিসির অন্তিম সর্গ ‘দ্বন্দের অবসান’এর। এখানেও সেই শান্তি, প্রাচীন গ্রিকদের যেদিকে বিশেষ পক্ষপাত ছিল। ১০
প্রসঙ্গত, ওডিসিউস যে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, ঐতিহাসিকদের মতে সমুদ্রবাণিজ্যে দক্ষ গ্রিকদের বাণিজ্য সম্প্রসারণের প্রচেষ্টাই সেই যুদ্ধের প্রকৃত কারণ। গ্রিকরা ইজিয়ান সাগরের বিভিন্ন দ্বীপে এবং দারদানেলেস ও বসপরাস প্রণালী অতিক্রম করে কৃষ্ণসাগর পর্যন্ত বাণিজ্য বিস্তারের চেষ্টা করে। এতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সমুদ্রোপকূলবর্তী এশিয়া মাইনরের ট্রয় নগরী। সমুদ্র প্রণালী দুটি তাদের অধিকারে থাকায় কৃষ্ণ সাগরগামী বিদেশি বাণিজ্য জাহাজ থেকে ট্রয় প্রশাসন মাশুল আদায় করত। নাবিকদের ওপর নানা জুলুমও চালাত।১১
সাদৃশ্য সন্ধানে তাকানো যাক চাঁদবেনের দিকে। তার সময়ে ভারতীয় সমুদ্র-বাণিজ্য অত্যন্ত কোণঠাসা হয়ে পড়ে। জলপথ তখন আরবীয়দের দখলে। তাদের স্থির করে দেওয়া মূল্যে পণ্য বিক্রয় করতে হয়। বিদেশি জাহাজ লুণ্ঠন, কুটনীতিক বাধাবিপত্তিও সেখানে সৃষ্টি করা হয়। নির্ভীক দৃঢ়চেতা চাঁদ অমন জোর-জুলুম মেনে নিতে পারেনি। সে চায় এই সমুদ্রপথ সব দেশের বণিকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে, ভারত থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত অবাধ বাণিজ্য করবার দুর্নিবার উচ্চাশা তার। যুদ্ধ করে আরবদের পর্যুদস্ত করা অসম্ভব। কালের বাস্তব এখানে বড় বাধা। অভিজ্ঞ নাবিক চাঁদ জানে সমুদ্রে অনেকসময় একাধিক পথ থাকে। তাই ভূমধ্যসাগরে যাবার বিকল্প পথের সন্ধান করতে হবে। লক্ষ্যটির তীব্র অভিঘাত তাকে অস্থির করে তোলে। উদ্দাম স্বপ্ন ও দেশপ্রেমের উন্মত্ত আবেগের আগুনে ভাগ্যকে সে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। অজানা জলপথ আবিষ্কারের সেই সুদূরাভিসারে প্রিয়জন, অর্থ-কাম আহার সব তুচ্ছ হয়ে যায়, এমন কী নিজের জীবনও। আত্মস্থ অন্ধ আবেগ হেন শক্তির ডাকে সাড়া দিয়ে সমস্ত সম্পর্কের মৃত্যু ঘটিয়ে আপসহীন চাঁদ কালকে চূড়ান্ত প্রত্যাঘাতের উদ্দেশে বেরিয়ে যায় অন্তহীন সমুদ্রযাত্রায়। কালদগ্ধ পুরুষ হয়ে সমুদ্রবক্ষে ঘুরে বেড়ায়। পরাজিত হয়ে সে থাকতে পারে না। এখানে এসে আখ্যানটি পরিণত হয় উদভ্রান্ত অভিযান বিলাসী একক কালদ্রোহীর মহিমা কীর্তনে। লেখক হিরো ওডিসিউসের স্থানে চাঁদকে ট্র্যাজিক হিরো রূপে দাঁড় করাতে চান। ট্র্যাজিক মহিমায় মূর্ত করে তুলতে চান ব্যক্তিসত্তার অপরাজেয়তা। তার চেতনার উত্তরণকেই দেখান অতি মূল্যবান পরিক্রমারূপে।
তাই চাঁদবেনের পাশে ‘মধু সাধু খাঁ’ সংহত গীতিকাব্য বিশেষ। মধু সাধু খাঁ যেমন পাঠিকার উদ্দেশে লেখা, তেমনি চাঁদবেনের লক্ষ্য যেন পাঠক। তবু বিপুল উদ্যোগ আয়োজন সত্ত্বেও চাঁদবেনে কার্যত থেকে যায় অর্থ-ঐতিহাসিক পটে ধৃত জৌলুসময় রোমান্স হয়ে। চাঁদ তার ‘স্রস্টার দ্বারা আরোপিত অসামান্যতার ভার বইতে গিয়ে ঠিক যেন মানুষ হয়ে উঠতে পারে না।’ ১২ স্বাভাবিক জীবন থেকে দূরে সরে যাবার দরুন তার কাহিনী অর্জন করতে পারে না ঈপ্সিত নৈকট্য। মধুর ক্ষেত্রে এমন বল্বার অবকাশ নেই। সে একইসঙ্গে সাধারণভাবে সব মানুষের প্রতিভূ এবং নিজেও এক বিশিষ্ট জীবন্ত মানুষ হয়ে ওঠে।১৩ যেহেতু ‘কোনও লেখকই উপন্যাসের মধ্যে তার কলাকৌশলের ব্যাখ্যা দেয় না।১৪ সেজন্য পাঠককে বুঝে নিতে হয় অমিয়ভূষণ রচনা দুটিতে তাঁর প্রিয় জয়েসের মতো ‘Mythical way’১৫ গ্রহণ করেছেন। তাঁর সৃষ্টির ভুবনে ওডিসির দুই যাত্রা মুখ চাঁদবেনে আর মধু সাধু খাঁ। ‘একজন বাইরের দিকে নজর রাখছে, অন্যে ঘরের ভিতর খুঁজছে।’১৬ চাঁদবেনে তার পৃথুল ব্যাপ্তি ও বৈচিত্র্যময়তায় বহন করছে ওডিসির বাহ্যাড়ম্বর আর মধু সাধু খাঁ নিজ বেঁটে-খাটো শরীর (ওডিসিউসও দ্য লিটিল ওয়ান) ধারণ করেছে তারই অন্তঃসার।
তরতর নদীর স্রোতের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই যেন আশ্চর্য জঙ্গমতায় বিকীর্ণ মধু সাধু খাঁর গদ্যশরীর। পংক্তিতে পংক্তিতে উপমা ও চিত্রপ্রতিমা শব্দনৌকা হয়ে দাঁড় বেয়ে চলে। আপাত অন্তিম পর্বটি যেন জীবন। মাতার উপরে অন্তহীন কালো আকাশ, নিচে অথৈ জলরাশি। সেথায় ভেসে চলে মধুর জীবনতরী। অপেক্ষা শেষ রাতের অন্ধকার কেটে যাবার। কী রকম আলো ফুটবে কে জানে? কারণ যেমত অন্ধকার হয়। ওডিসিউস দীর্ঘযাত্রার পথেই জেনেছিল তার অমোঘ ভবিতব্য, গৃহ থেকে দূরে জলপথে একদা তার সামনে নেমে আসবে পরম অন্ধকার। তখন পাশে থাকবে ক’জন ঘনিষ্ঠ সহযোগী। ওডিসি বৃত্তান্ত অবগত না হয়েও মধুও কি তেমনিই কিছুর আশঙ্কা করেছে এ অবস্থায়? চির রহস্যময়ী রূপসী বাংলার প্রকৃতি সুধা আজীবন পান করেও, মৃত্যুর আতঙ্কের মাঝে তার হৃদয়ে গন্ধ লেগে থাকে আকাঙ্ক্ষার, কণ্ঠে অপার পিপাসা, ‘ভগবান যদি মত হয় ছেলের বেটা তস্য বেটা হয়ে এ দেশেতেই যেন জন্মাই যদি তেমন কিছু ঘটে যায়।’ যে মুহূর্তে আশঙ্কা হয়, হারিয়ে যাচ্ছে সে, সেই মুহূর্তেই নিজেকে খুঁজে পাওয়া শুরু হয়। অন্ধকারের উপলব্ধির মধ্যেই সে পেতে চায় আলোর ইশারা। মধু যেন কম্পমান প্রত্যাশায় প্রকারন্তরে পুনরায় আকুতি জানায় ‘হে প্রাণ নেতা আমার প্রাণ দিহ, আবার চক্ষু দিহ, আবার দেখিবা দিহ, আবার।’ ওডিসির ন্যায় মধুর উপাখ্যানেও আমরা ভ্রমণ আর গৃহস্থ জীবনের রোমান্সের মিশ্র অনুভূতি লাভ করি, লক্ষ্য করি স্বদেশের প্রতি ঐকান্তিক টান। জয়েসের ইউলিসিসে যেমন নাম ছাড়া কোথাও ওডিসির চরিত্র ও ঘটনাবলী পাইনা অথচ সেই মহৎ সৃষ্টির অন্তঃস্রোত বইতে থাকে সর্বত্র, তেমনি মধুতেও পেয়ে যাই ওডিসির নির্যাসিত আদিরূপ। ‘কারণ যেমত অন্ধকার হয়,’ এই অন্তিম বাক্যটির শেষে ছেদ দেননি লেখক। ব্যক্তি মধুসার ক্রম উন্মোচন দেখতে দেখতে কার্যত কোথাও পৌঁছনো গেল না। সেদিক থেকে উপাখ্যানটির কোনও গন্তব্যই নেই। অমিয়ভূষণের বেশ কয়েকটি ছোটগল্পের মতো এখানেও কেবল যাওয়াটাই গল্প। আতিপাতি করে কি যেন খুঁজতে খুঁজতে যাওয়া, যা শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়ায় ব্যক্তির নিজেকে, নিজের অস্তিত্বকে অবিরত খোঁজার প্রয়াস। অস্তিত্বের নিহিত দ্বন্দ্বেই যার নিয়তি অর্জিত। এই যাত্রা শুধু গ্রিক বীর ওডিসিউসের নয়। এমন কী নয় কেবল ষোড়শ শতকী রূপসী বাংলার জনৈক নৌ-বণিকের বাণিজ্যযাত্রা। আসলে ‘যে সমগ্র মানব জীবন স্রোত অবিশ্রান্ত প্রবাহিত হচ্ছে’১৭ এ তারই, জীবন মৃত্যুর আলো আঁধারের মধ্যবর্তী সেতুতে মানুষের চিরন্তন যাত্রা। মধু তাই দেশকালকে ছুঁয়ে থেকেও দেশকাল নিরপেক্ষ হয়ে ওঠে যার অবস্থিতি সর্বযুগে, সর্বত্র। জীবনসম্ভব, সে কারণেই মহান এই অভিযাত্রা। লেখক অন্তিমে ছেদ না দিয়ে জানিয়ে দেন। এই উপাখ্যানের কোনও উপসঙ্ঘার নেই অপরিমেয় জীবনের যাত্রা কোথাও শেষ হয় না। কেননা আমরা জেনেছি ‘প্রতিটি মানুষ তার নিজের স্বতন্ত্র সত্তা নিয়ে অন্ধকারে হারায়েছে’ — সেই সঙ্গে এও সমান সত্য, ‘মানুষের মৃত্যু হলে তবুও মানব থেকে জায়।’১৮ এইভাবে ওডিসি সুদীর্ঘ সময় আর সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বাংলায় মধু সাধু খাঁ রূপে নবজন্ম নিয়েছে। সেই মধুও এখন বিকীর্ণ অন্ধকারের মুখোমুখি, পুনর্জন্মের প্রতীক্ষায়, ‘আবার প্রাণ দিহ…’।
উল্লেখপঞ্জি;
১) অমিয়ভূষণের সাক্ষাৎকার, নবার্ক, নভেম্বর ১৯৮৬।
২) অমিয়ভূষণ মজুমদার — পঁচাত্তরতম জন্মদিন পত্রিকা ১৯২২।
৩) অশ্রুকুমার সিকদার, গড় শ্রীখণ্ড; ছিন্নমূল মানুষ ও আস্তিক্যবাক্য, আধুনিকতা ও বাংলা উপন্যাস, অরুণা ১৯৯৩।
৪) ওডিসির মতো এখানেও নানা প্রসঙ্গে উঠে আসে প্রক্ষিপ্ত কিছু গল্প। যেমন পত্রলেখার কাহিনি বা বঘমালা মনোহর কেচ্ছা। দ্বিতীয়টির সঙ্গে ওডিসির এরস এফ্রিদিতি কেচ্ছার সাদৃশ্য।
৫) Henry James, The Art of Fiction, 1884
৬) অমিয়ভূষণ মজুমদার, সাহিত্যিক জীবন মহাশয়, লিখনে কী ঘটে, আনন্দ ১৯৯৭।
৭) ১৫৮৩ সালে একদল ইংরেজ জাহাজে চেপে পশ্চিম এশিয়া অভিমুখে যাত্রা করে। দলের অন্যতম সদস্য চামড়া ব্যবসায়ী রালফ ফিচ আসেন ভারতে। স্থল ও নদীপথে দীর্ঘদিন ধরে তিনি বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ভ্রমণ করেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে যারা পরামর্শ দিয়েছিলেন, ফিচ তাদের অন্যতম। বাংলার মাটিতে তার পদার্পণের পঞ্চাশ বছর পরে কোম্পানি বাংলায় প্রবেশ করে। ফিচ ভারতে প্রথম ইংরেজ পর্যটক যিনি তার ভ্রমণ বৃত্তান্ত বই আকারে প্রকাশ করেন। তীর্থঙ্কর রায়, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিও ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাস, আনন্দ ২০১৩।
৮) Herman Hesse, A Guest of Spa.
৯) W. Lucas Collins, The Odyssey 1870
১০) ‘প্রাচীন গ্রীকেরা সেরিনিটি জিনিসটার খুব পক্ষপাতী ছিলেন। তাদের কাব্যের মধ্যেও এই সুর অনেক জায়গায় বেশ ফুটে উঠেছে। জীবনানন্দ দাশ, রবীন্দ্রনাথকে লেখা চিঠি, দেশ সাহিত্য সংখ্যা ১৩৮২
১১) বীরেশ্বর মিত্র, বিশ্ব মহাকাব্য প্রসঙ্গ, আনন্দ ২০১৫।
১২) বুদ্ধদেব বসু, রবীন্দ্রনাথঃ কথাসাহিত্য, নিউ এজ, ১৯৮৩
১৩) অমিয়ভূষণ মজুমদার, রমণী রত্নের সন্ধানে, লিখনে কী ঘটে, আনন্দ ১৯৯৭।
১৪) অমিয়ভূষণ মজুমদার, শ্রীকান্তে কী ঘটে, রচনা সমগ্র ৭ম খণ্ড, দে’জ ২০০৯।
১৫) T.S Eliot, Ulysses, Order and Myth, 1923
১৬) অমিয়ভূষণ মজুমদার, রমণী রত্নের সন্ধানে, লিখনে কী ঘটে, আনন্দ, ১৯৯৭।
১৭) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ছিন্নপত্র, পত্র ১৮৮৮।
১৮) জীবনানন্দ দাশ, মানুষের মৃত্যু হলে, শ্রেষ্ঠ কবিতা।
Tags: অনিন্দ্য সৌরভ, আধুনিক ওডিসি
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।