01 Jul

তৃতীয় বৃত্তে অপরাজিতা

লিখেছেন:দীপংকর মুখোপাধ্যায়


(এটা তো গল্পই নয় । সেই অর্থে আমার লেখাও  নয় । ইতিহাসের লেখা । যারা নিয়মিত অসাধারণ খবরের খোঁজ রাখেন তাঁদের মনেও পড়তে পারে । আগে যাঁরা এ নিয়ে লিখেছেন এই সুযোগে তাঁদের স্বীকৃতিও জানাই ।)

২০২০ আমাদের সামাজিক দূরত্ব শেখালো – এ কথাটা একদমই সত্যি নয়।

সামাজিক দূরত্বের বীজ  আমাদের রক্তে । আমরা মানে তুমি, আমি, ওই সিংহটা, হরিণ, পায়রা, টিয়া আর বিষাক্ত সাপটাও  – অর্থাৎ সব প্রাণীই ।

আমাদের ঘিরে থাকে  তিনটি  বৃত্ত । বাইরের বড় বৃত্তটি  নিরাপত্তার বলয় । এই বৃত্তের বাইরে থাকলে হরিণ সিংহকে ভয় পায়না । পায়রা নিশ্চিন্তে ডিম পাড়ে ।  এখানে কিছুই ঘটেনা, তাই গল্পহীন এই বৃত্ত একা একা পড়ে থাকে সবার নজরের বাইরে ।

মাঝখানের দ্বিতীয় বলয় দেয় সতর্কতার সংকেত । এখানে হরিণ তৈরী থাকে যে কোনো মুহূর্তে পালানোর জন্য ।  পায়রাটা সাবধানে নজর রেখে দানা খোঁটে । কেউটে ফণা তুলে ভয় দেখায় ।আবার এই বৃত্তটিই  প্রত্যাশার ধাত্রীভূমি ।  মনের মানুষ এখানেই প্রথম দেখা দেয় ।  বাণিজ্য, বন্ধুত্ব  আর প্রেমের প্রথম বীজ এখানেই প্রোথিত হয় ।

সব থেকে  কাছের তৃতীয় বলয়টি আত্মরক্ষার ।  আবার  আত্মসমর্পনেরও ।  এই বৃত্তে ঢুকে পড়লে সাপ ছোবল মারবে ।  বিড়ালে আঁচড় দেবে ।  আবার এই বৃত্তেই প্রেমের পূর্ণতা -এখানেই বন্ধুত্বের  আলিঙ্গন । এই তৃতীয় বৃত্ত ভেঙেই  মানুষ সমাজ তৈরী করেছে । পৃথিবীর সব গল্পই এই তৃতীয় বৃত্ত ঘিরে লেখা । আমাদের এই কাহিনীও তাই । এটি এক অপরাজিতার  গল্প, যিনি  আন্দামানের উত্তর সেন্টিনিল দ্বীপের তৃতীয় বৃত্তভেদের নায়িকা ।

নীলজলে ঘেরা সবুজপাহাড়ি  অরণ্য। শ্বেতশুভ্র সৈকত।  অপরূপা  আন্দামান দ্বীপমালা যেন বঙ্গোপসাগরের রানী । অনেক ইতিহাসের সাক্ষীও । এখানের দ্বীপগুলোর মধ্যে  উত্তর  সেন্টেলিন  একটু অনন্য ।  তাকে ঘিরে তিন কিলোমিটারের  সরকারি সামাজিক দূরত্ব । এবং সেটি যথাযথ ।

সামাজিক ঘনিষ্টতা জারোয়াদের ক্ষতি করেছে । সভ্যতার সংস্পর্শে এসে দু দুবার মহামারী হয়েছে । সেই ভুলটা আমরা সেন্টিলিজদের  ক্ষেত্রে করতে চাইনা । আর ওরাও  চেয়েছে  একান্তে থাকতে । ষাট হাজার বছর ধরে !

সেন্টিলিজ প্রজাতি হয়তো প্রাচীনতম ভারতীয় সমাজ । মহেঞ্জাদারো  তো মাত্র সাড়ে চার হাজার বছর আগের কথা, মহাভারত আরও নবীন ।

দূরত্ব রহস্য বাড়ায় । দেশি বিদেশি অনেকেই স্থানীয় নাইয়াদের পয়সা দিয়ে দূর থেকে দেখে এসেছে এই সুন্দর দ্বীপ ।  দ্বীপের কাছে এলেই কিন্তু নজরে  এসেছে তীর ধনুক হাতে স্থানীয় প্রতিরক্ষা ।  নাবিকরাও  দ্বীপ পর্যন্ত যায়না । ওদের দুই ঘুমন্ত সঙ্গীর নৌকা একরাতে ভেসে ভেসে ওই দ্বীপে পৌঁছে আর ফেরেনি ।

২০১৮সালে এখানেই বিশ্ব জোড়া গল্প হয়ে গেলো – জন এলেন চাউ । ২৬ বছরের মার্কিন যুবক জন ছিল এক দুঃসাহসিক অভিযাত্রী ।  অনেক রোমহর্ষক কাহিনীর নায়ক সে।জেদি বিষাক্ত সাপের (rattle snake) এর দংশন থেকে বেঁচে ফিরেছে জন । ট্রেক করতে গিয়ে রাস্তা হারিয়ে ফেলে জমে যাওয়া গ্লেসিয়ার বেয়ে নীচে নামার অভিজ্ঞতা আছে তার ।  সুন্দর স্বাস্থ্যের এই যুবককে কাছ থেকে দেখে অনেকেই ভালোবেসেছে ।

জনের কিন্তু আরো গভীর আবেগ যীশু খ্রিস্টকে ঘিরে।  ধর্মে খ্রিস্টান জন  গভীর ভাবে বিশ্বাস করে যে যীশু তাঁর রক্ত  দিয়ে মর্ত্যবাসীর পাপের ঋণ শোধ করেছেন ।  যীশুপ্রেম তাঁকে অল নেশণ্স (All  Nations) নামের একটি সংগঠনের কাছাকাছি নিয়ে আসে যাদের ব্রত যীশুর নাম বিশ্ব জুড়ে  প্রচার করা ।

স্কুলে থাকতেই  জন সেন্টেলিজদের কথা শুনেছিলো ।  সে শুনেছে যে ওদের দ্বীপে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই । জনসংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে ।   আরও শুনেছে যে এমন একটি  সুন্দর দ্বীপে  ঈশ্বরের উপাসনা  হয়না । জনের মনে সন্দেহ – তাহলে  কি  এই দ্বীপটিই  শয়তানের  শেষ দুর্গ?

ওদের  চিকিৎসার প্রয়োজন । ধর্মে দীক্ষাও জরুরী । তার মনে স্থির বিশ্বাস জাগলো  সেন্টিলিজদের উদ্ধারের দায়িত্ব এখন তারই । অভিযানপ্রিয়তা আর গভীর যীশুপ্রেম ।  এ দুটির সঙ্গম  যে জনকে সেন্টেনিল দ্বীপে নিয়ে আসবে সেতো সোজা অংকের হিসেব ।

তাই হলো । ২০১৮ র নভেম্বরের এক রাতে জন সমুদ্র প্রহরীদের নজর এড়িয়ে স্থানীয় জেলেদের সাহায্যে দ্বীপের খুব কাছে এসে নোঙ্গর ফেললো । আর সকালে সূর্য ওঠার সাথে সে একাই একটি কায়াক নিয়ে দ্বীপের দিকে রওনা দিলো । জনের পরনে শুধু অন্তর্বাস কারণ সেন্টালিজরা বস্ত্রহীন থাকে ।

এই সকালে সে সরাসরি দ্বীপের মাটি না ছুঁয়ে সমুদ্রতট  ধরে এগিয়ে দূর থেকে একটি আদিবাসী কুটিরের ওপর তার নজর রাখলো । জনের উপস্থিতি  বুঝতে পেরে  পাঁচজন  দ্বীপবাসী বেরিয়ে আসে। তাঁদের কণ্ঠে  উঁচুস্বরের আপত্তি । হাতে তাদের ধনুক আর বর্শা ।

জন দূর থেকে জানালো  যে সে শত্রু না  – যীশুর আর ভগবানের ভালোবাসা নিয়ে এসেছে সে । দ্বীপবাসীরা জনের ভাষা জানে না । তাদের হাত ধনুকে পৌঁছে গেল । ব্যর্থ মনোরথ জন কায়াক ঘুরিয়ে দ্রুতগতিতে নৌকায় ফিরে এলো ।

অভিযাত্রীরা ভয়ে পালায় না । ধর্ম প্রচারকরাও তাই । জনের মন বললো যে অবিশ্বাসের কুয়াশা কাটিয়ে সে সেন্টালিজদের কাছে ঠিক পৌঁছে যাবে। সেই বিকেলেই সে ফিরে এলো সেন্টিলিন দ্বীপের মাটিতে – দ্বীপবাসীদের থেকে একটু দূরত্ব রেখে ।

দ্বিতীয় বৃত্তের ওপার  থেকে দ্বীপবাসীরা উঁচুস্বরে  আপত্তি জানালো আবার ।  জনের মনে কিন্তু এখন অগাধ আস্থা । আর তার মনে হলো যে ওদের ভাষায় কথা বললে দূরত্বের বরফ গলবে, তাই সে ওদের কথা অনুকরণের চেষ্টা করলো । তার ভাষাজ্ঞানের  দুর্বলতায় রাগী দ্বীপবাসীদের  মুখেও  হাসি এসে গেলো।

জন তখন প্রার্থনা করছেন । কয়েক মিনিট যেন একটু  শান্তির পরিবেশ । আপত্তির তীব্রতা কম। মনে আশার আলো। হঠাৎই একটি  তীর ছুটে এসে  জনের বাইবেলের প্লাস্টিকে বিঁধলো । আর পেছন ফিরে জন দেখে তার কায়াকটাও নেই। সেন্টিলিজরা জনকে  কিন্তু প্রাণে মারেনি।  সে সাঁতার কেটে নৌকায় ফিরলো ।

রাতের গভীর ।  জন নিজের সাথে একা। তার সাহস, তার বিশ্বাস তাকে বললো যে এখন একটাই পথ । আর সেটা সামনের দিকে ।

সকালে জন আবার সেন্টেনিল দ্বীপে। এবার লক্ষ্য তৃতীয় বৃত্ত।

সেদিন বিকেলে দূর থেকে জেলেরা  দেখেছিলো শান্ত সমুদ্র সৈকত খুঁড়ে কার যেন  শেষ শয্যার প্রস্তুতি হচ্ছে । মৃত ব্যক্তির চেহারার সাথে জনের  মিল ছিল । তৃতীয় বৃত্ত অধরাই থেকে গেল জনের ।

দু হাজার কিলোমিটার দূরে দিল্লিতে ড. মধুমালা চ্যাটার্জি  দুঃখের সাথে বললেন,

– ‘যারা সমুদ্র, সূর্য আর প্রকৃতিকে নিজের করে নিয়েছে, তাদের নতুন করে ভগবান দেওয়ার স্পর্ধা করে কেন মানুষ ?’

এ কথা বলার অধিকার অর্জন করেছেন মধুমালা । আন্দামানী আদিবাসীদের তাঁর থেকে ভালো কেউ চেনেনা । তাঁর লেখা বই আর গবেষণা পত্র পৃথিবীর সব নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রামাণ্য তথ্যের মর্যাদা পায় । আর তিন দশক আগে তাঁরই উপস্থিতিতে সেন্টিলিজরা বাইরের জগতের সাথে প্রথম হাত মিলিয়েছিল ।

এ গল্পের শুরু আরও একটু আগে।

বারো বছরের মধুমালা তখন শিবপুরে থাকে । একদিন সকালে Telegraph  পত্রিকার একটা ছোট খবর তার নজরে এলো । আন্দামানের এক দ্বীপে বিলুপ্ত প্রায় অঞ্জে উপজাতিতে এক নতুন শিশুর আবির্ভাব হয়েছে ।  উৎসবে নাচছে দ্বীপ । জগৎজননীর আশীর্বাদে  বিশ্ব জুড়ে প্রাণের লীলা । আজ এক  কিশোরীর হৃদয়ের তারে বেজে উঠলো  বিশ্বমাতার  সেই স্নেহের অনুরণন । হাজার মাইল দূরে এক ছায়াঘেরা দ্বীপ । সেইখানে কোনো এক প্রাচীন বৃক্ষের নিচে ছোট কুটিরে এক নবজাত শিশুর জন্য আবেগে উদ্বেল মধুমালা । যেতেই  হবে তাকে ওই শিশুটির কাছে ।

– ‘চলো না বাবা আন্দামানে যাই ।’ বাবা সস্নেহে বোঝালেন আন্দামানের আদিবাসীদের কাছে পৌঁছনো অত সহজ নয়। সময় লাগে ।অনুমতি লাগে । প্রস্তুতি লাগে ।

সেই প্রস্তুতি শুরু হলো মধুমালার ।

স্কুল শেষ করে  মধুমালা মানববিজ্ঞানে  (এনথ্রোপোলজি)  স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে  সসম্মানে উত্তীর্ণ হলেন আর এনথ্রোপোলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (Anthropological Survey of India) তে গবেষক হওয়ার আবেদন করলেন –  আন্দামানের আদিবাসীদের ওপরে কাজ করার জন্য।

এমন যোগ্য এবং স্পষ্ট দৃষ্টির মেয়েকে না বলে কার এমন সাধ্য ।

ছয়  বছরের এই গবেষণার সময়টিতে  আদিবাসীদের নিজের লোক হয়ে উঠেছিলেন মধুমালা । জারোয়ারা তাঁকে নিজেদের মেয়ে  মানতো  আর অনজেরা আদর করে ডাক্তার বলতো তাঁকে । তিনি আদিবাসীদের নিয়ে কাজ করার  আমন্ত্রণ পেয়েছেন বিদেশে থেকেও –  যেটা পারিবারিক কারণে নেওয়া হয়ে ওঠেনি ।

জারোয়ারা , অনজেরা সামাজিক সম্পর্কের গন্ডীর মধ্যে এলেও সেন্টেলিজরা কিন্তু তখনও দ্বিতীয় বৃত্তের ওপারে অনড় । তাদের কাছে যাওয়ার বেশ কয়েকটি সরকারী প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে ।

এটা জানা ছিল যে সেন্টেলিজরা কলা আর নারকেল পছন্দ করে । সমুদ্রতটে  চুপিসারে কলা বা নারকেল রেখে আসলে ওরা সাগ্রহে সংগ্রহ করে । কিন্তু কাছে যেতে গেলেই তীর আর বর্শার তীব্র প্রতিরোধ ।

১৯৯১ এর জানুয়ারিতে সরকারের তরফে এক নতুন প্রয়াস হলো । নতুনত্বটি  হলো  মধুমালার অন্তর্ভুক্তি ।

মধুমালা ততদিনে আন্দামানের আদিবাসীদের নিয়ে ভালো কাজ করেছেন। বিভিন্ন স্থানীয় ভাষাও শিখে নিয়েছেন । তাঁর  অন্তর্ভুক্তিতে অন্য একটি অংকের হিসেবও  ছিল । তিনি নারী । দলের মধ্যে তাঁর উপস্থিতিতে  হয়তো সেন্টেলিজদের এই বাণী দেবে যে আক্রমণ বা ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে এরা আসেনি ।

মধুমালাদের জাহাজ থামলো দ্বীপ থেকে দূরে । একটি নৌকোয় তাদের দল দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা দিল অনেক নারকেল আর আকাশ ছোঁয়া প্রত্যাশা নিয়ে । দ্বীপের কাছে পৌঁছলো  নৌকো ।  মধুমালা দেখছেন গাছের আড়ালে আদিবাসী মানুষেরা ।  হাতে ধনুক ।দলনেতার নির্দেশে নৌকো থেকে অগভীর জলে কয়েকটি নারকেল ফেলা হলো । মধুমালা ওদের ভাষা জানেন না কিন্তু শুনেছেন অঞ্জেদের  সাথে মিল আছে । সেই ভাষাতেই তাঁদের ডাকলেন দূর থেকে – ‘এসো ।  নারকেল নিয়ে যাও ।’

ষাট হাজার বছরের দূরত্বের পাঁচিল ভালোবাসার  ছোঁয়ায় যেন কাঁপলো  একটু ।  দ্বিতীয় বলয়ের দুই পাড়ে তখন মানুষের দুই ভিন্ন সভ্যতা দাঁড়িয়ে ।  সেন্টেলিজদের মনে দ্বিধা । একদিকে এক স্নেহময় নারীর বন্ধুত্বের আহবান আর অন্যদিকে দূরত্বের অতি প্রাচীন প্রথা ।

সরকারি দলে আশার অপেক্ষা   – এবার হয়তো বরফ গলবে ।

অনেক অনেক সময়ের পরে, সেন্টেলিজদের মধ্যে গতিবিধি নজরে এল । একে একে  জলে নেমে নারকেল  তুলে নিতে শুরু করলো তারা । ইতিহাসে এই প্রথম সেন্টেলিজদের স্বেচ্ছায় দ্বিতীয় বলয় অতিক্রম । নৌকোয় সাফল্যের খুশি ।

চার ঘন্টা ধরে মানব সমাজের দুই ভিন্ন প্রতিনিধির মধ্যে এই স্নেহের দেওয়া নেওয়ার খেলা চলেছিল । একসময় নৌকোর নারকেল শেষ। দ্বীপবাসীরা  আশাহত । তাঁদের আরও চাই যে । সরকারি  দলটি ফিরে গেলো জাহাজে,  আরও নারকেল নিয়ে আসতে ।

বিকেলে আবার শুরু সেই খেলা । সময়ের সাথে তখন সংকোচের দূরত্ব দ্রুত কমে যাচ্ছে । দু একজন আদিবাসী এসে নৌকোটিকে ছুঁয়েও গেলো ।

কিন্তু একটু মোচড় না থাকলে তো যে কোনো গল্পই  বিস্বাদ । হঠাৎই মধুমালার নজরে এলো দ্বীপে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবকের হাতে ধনুক তৈরী । সে এক অসাধারণ মুহূর্ত । মধুমালার স্নেহের দৃষ্টিতে তাকে কাছে আসার আহ্বান  আর যুবকের ত্রুদ্ধ অবস্থানে দূরে যাওয়ার আদেশ । কেউই চোখ নামায না । অবশেষে সেই যুবকের ধনুক থেকে তীর ছুটে এলো । সে তীর কিন্তু মধুমালাকে ছোঁয়নি । যুবকের পাশে দাঁড়ানো এক মহিলা তাকে ধাক্কা দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট করে দেয়  শেষ মুহূর্তে । অন্য সবার সাথে সেই অনুতপ্ত যুবকও বুঝলো যে এই আনন্দের মেলায় সে একাই বিরোধিতা করছে । মৈত্রীর শেষের কাঁটাটাও যেন বিদায় নিলো ।

এবার তো সরকারি দলের এগিয়ে যাওয়ার পালা ।আরও কয়েকজনের সাথে মধুমালাও নেমে পড়লেন জলে । এখন কেউ দূরত্ব মানবেনা আর ।  হাতে হাতেই নারকেলের দেওয়া নেওয়া ।

সমুদ্রতটের অগভীর জলে এক অপরাজিতা তখন হাসছেন । ষাট হাজার বছরের দূরত্বের পাঁচিল পেরিয়ে তৃতীয় বৃত্তে মিলন হলো মানুষের দুই ভিন্ন প্রজাতির । আর বারো বছরের শিবপুরের মেয়েটি যে মাতৃত্বের অনুভবে আবিষ্ট হয়েছিল আজকের এই অনন্য মুহূর্ত তাকে যেন  সেই অনুভবের পূর্ণতা এনে দিল ।

 

(ড. মধুমালা চ্যাটার্জী  দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের মিনিস্ট্রি অফ সোসাল জাস্টিস এণ্ড এমপাওয়ারমেন্ট -এর সঙ্গে যুক্ত আছেন )

Tags: , ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ