কর্পোরেশন দপ্তরে এ নিয়ে যত চিঠি পাঠানো হয়েছে, তার ফাইল এত মোটা হয়ে গেছে যে সেটা তুলতে পারা একজন মানুষের কম্ম নয়।
ভি.আই.পি.কে বাড়িতে ডাকার আগেই মনে ভয় ছিল, মিসেস ওঁর সামনে নালার সমস্যা তুলে ধরতে পারে। কারণ আমি ওর মানসিক অবস্থা জানি। সেই জন্যই বুঝিয়েছিলাম, “দেখ, নালা-টালা তুচ্ছ জিনিস। ওটা ভি.আই.পির বাঁহাতের ও না,চোখের ইশারার কাজ। উনি আসছেন, খবরটা ছড়িয়ে পড়া মাএ কাজটা আপনাআপনি হয়ে যাবে ।”
কিন্তু কথা গুলো ও বেমালুম ভুলে গেছে ।বাধ্য হয়ে আমাকেও ভি.আই.পির সামনে হ্যাঁ,হুঁ করে যেতে হল।শেষ পর্যন্ত ভি.আই.পি বললেন “এই নিয়ে অত চিন্তা করার কিছু নেই।”
ভি.আই.পির আশ্বাস পেয়ে মিসেস দীর্ঘকাল পর ঠিকমতো ঘুমোতে পারল।বন্ধু আর পড়শিরা এসে অভিনন্দন জানিয়ে গেল, যে এতদিনে সমস্যার একটা সমাধান হচ্ছে ।
ভি.আই.পির কথায় আশ্বস্ত হয়ে মাসখানেক নালাটা নিয়ে আমরা কিছু ভাবি নি, এমনকি ওদিকে তাকাইনি।নালা এখন আমাদের চোখে এমন রোগীর মতন যে আজ নইলে কাল মরবে..কাল নইলে পরশু..তবে মৃত্যু অবধারিত। বিষয়টা ধীরে ধীরে ধীরে আমাদের আলোচনার বাইরে চলে গেল।
মাসকয়েক পর মিসেস কর্পোরেশনে ফোন করে। উত্তর এল, ওটা পরিষ্কার করা হবে ।আরও কমাস অতিক্রান্ত কিচ্ছু হয়নি।বউ এবার ভি.আই.পির অফিসে ফোন করে। উনি অত্যন্ত ব্যস্ত, বাইরে গেছেন, বিদেশে গেছেন….কিছুতেই যোগাযোগ করা গেল না।
মাসকয়েকের চেষ্টায় ভি.আই.পির সঙ্গে যোগাযোগ হলে উনি খুব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বললেন, কাজ হয়ে যাবে ও নিয়ে চিন্তা করবেন না। উত্তর পাওয়ার মাসছয়েক পর মিসেসের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে গেল। মন্ত্রনালয় থেকে শুরু করে ও দপ্তরে দপ্তরে ঘুরতে লাগল। এই টেবিল থেকে সেই টেবিল।এই রুম থেকে সেই রুম সর্বত্র হচ্ছে হবে-হচ্ছে হবে ধরনের আশ্বাস পেলেও কাজের কাজ হলো না।
একদিন অফিস থেকে ফিরতেই মিসেস জানালো ও নালায় একগুচ্ছ ফুল ভেসে যেতে দেখেছে ।শুনে বললাম হয়তো কেউ ফেলে দিয়েছে ।
তিন চারদিন পর মিসেস আবার বলে, নালায় ও বেশ কিছু বই ভেসে যেতে দেখেছে।শুনে রীতিমতো ভয় পেয়ে গেলাম, মনে হল মাথায় গোলমাল হয়েছে। তবে মিসেস অন্য সব ব্যাপারে নর্মাল ।
পরে পাড়ার অন্যরা নালায় নানা ধরণের জিনিস ভেসে যেতে দেখল,কোন দিন শেখর ওপরানো গাছ, কোনদিন পাখির বাসা বা ভাঙা সানাই।একদিন রাতে দেরি করে ফিরে দেখি মিসেস বড্ড ঘাবড়ে রয়েছে । বলল আজ আমি সেই ভি.আই.পি কে নালায় সাতাঁর কাটতে দেখেছি। ওকে দেখে ভীষণ খুশি মনে হচ্ছিল। মনের আনন্দে নালায় ডুব দিচ্ছিলেন, হাসচ্ছিলেন হইচই করচ্ছিলেন এমনকি লাফালাফিও করছিলেন, লোকে সুইমিং পুলে যেমন করে ।
হিন্দি থেকে ভাষান্তর – অনিন্দ্য সৌরভ
…………………………………
অসগর ওজাহত, জন্ম -১৯৪৬, ফতেপুর উওরপ্রদেশ। হিন্দি সাহিত্যে ডক্টরেট।বিতর্কিত কথাশিল্পী ও নাট্যকার । মুজাফফর আলি পরিচালিত গমন, আগমন, অঞ্জুমন ইত্যাদি চলচ্চিত্রের চিএনাট্যকার। দূরদর্শন ধারাবাহিক ‘বুদ-বুদ’এর লেখক পরিচালক। গল্পের বই – অঁধেরে মে, সুইমিং পুল, দিল্লি পৌঁহুচনা হ্যায়। উপন্যাস – সাত আসমান ।
Tags: অনিন্দ্য সৌরভ, অসগর ওজাহত, সুইমিং পুল
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।