দুপুর গড়িয়ে গেলে বিষ্টুদের পুকুরঘাটে বাসন মাজতে বসে বহ্নি। আর এইসময় নিজের কথাকে কারুকাজ করে নিতে আসে কবি কৌরব। বহ্নির কারুকাজ বলতে লেখাগুলোকে বাইরের লোকের কাছে বরাত পাইয়ে দেওয়া। বাইরের মানুষের সাথে বহ্নির অনেক যোগাযোগ। আজ ওর এঁটো পাতিলের ওপর টুপ করে কী যেন একটা পড়ল।
-“দলা পাকিয়ে কী ফেলছ দেখি?” দেখল তারই দেওয়া সাদা খাতাটার পাতা একটা একটা করে মুঠো পাকাচ্ছে কৌরব।
বহ্নি শিউরে “এমা! আর লিখছ না?”
বহ্নির কথায় একরাশ হতাশা উগরে দিল কৌরব, “কী হবে ওদের জন্যে লিখে? পাগলা হাতি দিয়ে পিষে দিলেও বে-বোধগুলোর চোখ কান নাক কিছুই ফুটবে না!”
কৌরবের কথায় বহ্নি বড্ড ব্যথা পেলো, “ফুটবেনা মানে? তোমার লেখাগুলো আমি কত দূর দূর ছড়িয়ে দিই জানো? কাল টিভিতেও দেখছিলাম, মৌলালি মোড়ে বিরাট একটা মিছিল। ছেলে বুড়ো সবাই তোমার লেখাটাকে স্লোগান করে এগিয়ে যাচ্ছে!”
-“আর?”
-“দেখো ভোট চলে গেছে সেই কবেকার কথা! সবাই সবার দেওয়াল নিকিয়ে ফেলেছে। কিন্তু সর্দারদের পাড়াটাকে লক্ষ্য করেছ? এতবড় একটা পরব গেল। ওরা কিন্তু ওদের দেওয়ালে সাপ লতা আঁকেনি!”
ওদের নিয়ে তোমার এত আগ্রহ কেন বুঝলাম না!”
এবার বহ্নি এঁটো হাতে কৌরবকে টানতে টানতে ঝোপের ধারে নিয়ে গেল। ঝোপের ডালপালা ধরে আচ্ছা করে ঝাঁকুনি দিল। তারপর অনেকটা আক্ষেপ করে বলল, “আমার আখার খোল থেকে আগুনের ফুলকিগুলো কোথায় যেন উড়ে যাচ্ছে! এক কাজ করো, এখান থেকে একটা জোনাকি ধরে দাও তো দেখি!”
-“তুমি খেপেছ? এখানে জোনাকি কোথায় দেখলে?”
বহ্নি হুঙ্কার দিয়ে উঠল, “বলছি তো আছে! এতকিছু বোঝো! অথচ এইটুকু বোঝো না?”
কৌরব বাকি কাগজগুলো বহ্নির মুঠোর মধ্যে গুঁজে দিল।
হঠাৎ একদিন ওই এলাকার কিছু বোবা আর অন্ধ এরেস্ট হল। ওদের অপরাধ ওরা আগুন হাতে করে দৌড়াচ্ছিল!
মিডিয়া এল। তদন্তকারী অফিসার এল। বহ্নির বয়ান অনুসারে কৌরবের বাড়ি ঘেরাও করা হল।
-“আগুনটা তোমরা কোথায় লাগাতে চাইছিলে?” অন্ধ বোবা লোকগুলো কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে পারল না।
অতএব ওদেরকে জীপের পেছনে বেঁধে নির্মমভাবে টানতে শুরু করল! বহ্নি দৌড়ে একখানা খাতা এনে কৌরবকে বলল, “শিগগিরি লিখে দাও। তা নইলে ওদের মেরেই ফেলবে!”
কৌরব ঘর অন্ধকার করে আরেকখানা জতুগৃহ লিখতে বসল!
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।