15 Apr

সিঁদুরে মেঘ

লিখেছেন:গৌরব সরকার


জীবনে চলার পথে আর পাঁচজনের মতো প্রতিভারও জীবন থেকে অনেক মুখ হারিয়ে গেছে বা কুয়াশাবৃত হয়েছে।তাদের মধ্যে কেউ কেউ তার হৃদয়ের টুকরোও বটে। কোভিডের ঢেউ আছড়ে পড়তেই যেমন তুমুলভাবে নাড়িয়ে দিল প্রতিভাকে, তার সন্তানের পিতা রণজয়কে ছিনিয়ে নিয়ে।পঁয়ত্রিশের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে একমাত্র সন্তান এলিজাকে নিয়ে তার জীবন এক অজানা প্রবাহের মাঝখানে, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা কাটিয়ে একটু স্থিতিশীল হতে চায়। কখনও জীবন বলে উড়তে চাই, জুড়তে চাই অন্য কোথাও ,অন্য কোনো শাখায়–প্রতিভা পিছিয়ে আসে এলিজার কথা ভেবে।বিয়ের পর রণজয় যা যা বুঝে ওঠার চেষ্টা করেনি কখনও সে সব মনে পড়ে প্রায়শই, দিনের পর দিন ক্রমাগত তলানিতেই এসে ঠেকছিল সম্পর্কটা, স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকারটুকু দিতে কার্পণ্য করে এসেছে যত দাম্পত্যের বয়স বেড়েছে–তবুতো রণজয়কে ভালোবাসতেই চেয়েছিল প্রতিভা।

শোকের যত বয়ঃবৃদ্ধি হয় তত ক্ষয়‌ হয় !ক’দিন ধরে কথা হচ্ছে দূর সম্পর্কের দেওর ফিরোজের সঙ্গে।বেশ ভালো লাগতে শুরু করেছে, মন বসতে শুরু করেছে, মনে হচ্ছে যেন আবার বাসা বাঁধা যায়।শূন্যতা যেমন বলে কয়ে আসেনা তবে যেন ধূমকেতুর লেজের মধ্যেই থাকে পূর্ণতার বাড়ন্ত।

মনে হল মা যেন কারো সাথে কথা বলছে!জেদের বশে মায়ের হাতের ফোনটা নিয়ে টানাটানি করতে গিয়ে পাঁচ বছরের এলিজা মায়ের গালে এক চড় মেরে বসল,

-” কে ও কে? আমি কেন কথা বলব না? দাও ফোন-টা দাও।”

এলিজাকে দেখে যেন দু’চক্ষে সহ্য হচ্ছে না প্রতিভার।আগুন ধরে গেল।চোখদুটো জ্বলে উঠল মেয়ের এমন আচরণে,

-“কী ভেবেছিস? তোর বাবার মতো আমাকে পেটালেই আমি চুপ করে থাকব।”

খুঁজতে খুঁজতে হাতের কাছে দেখল ফলের ঝুড়ি।সেখান থেকে ছুঁড়িটা তুলে ঠেকিয়ে দিল মেয়ের গলায়,

-” শেষ করে দেব সব!একেবারে শেষ করে দেব!নাক টিপলে দুধ বেরবে তার এত সাহস!বাপের মতো স্বভাব হয়েছে না….”

সব কিছুর মূলে ঘরের ওই খোলা জানালাগুলো।যেন কথা বলে প্রতিভার সঙ্গে বিকেলবেলায় একটু হাতের কাজ শেষ করে এসে বসলে। হাত দুটোকে বাইরে মেলে ধরলে যেন কত আন্তরিক মনে হয়,

-” তুই না তোর মেয়ে কে আগে রে?কী ভাবছিস নিজের আশ্রয় না মেয়ের জন্য সাশ্রয়?কে আগে বলনা?কে আগে –মা না মেয়ে?সব ভাসিয়ে দে –দেনা ভাসিয়ে।কার কী যায় আসে? কে বা কার? জীবনটা তো তোর…”

রান্নাঘরে প্রেসার কুকারের সিটি বেজে উঠল–এটা পাঁচ নম্বর।চিকেন স্টু হয়ে গেছে।দুপুর দেড়টা। আজ চিকেন আর গরম ভাতে এলিজার লাঞ্চ।

-” টিভির দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে এলিজা, মুখটা নাড় তাড়াতাড়ি…উফ্ফ্ আবার জল…জল খেয়েই পেট ভরাবি…”

সব মায়েরা রোজ যা করে , সব শিশুরা রোজ যা শোনে সেইসব।তবু জানালায় কান পাততে ভালো লাগে, হাত বাড়াতে ভালো লাগে ,ভাবতে ভালো লাগে এ-কথা সে-কথা। জীবন ও জানালার দূরত্বটুকু মুছে দেওয়ার আয়োজনেই কখন দিন ফুরিয়ে যায়।

Tags: ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ