08 Aug

ধৌতি

লিখেছেন:সিদ্ধার্থ সান্যাল


সারারাতের আষাঢ়ে বৃষ্টি সকাল বেলায় ছেড়ে গেছে ।

আকাশ মেঘলা। যে কোনো সময়েই আবার ঝমঝমিয়ে আসতে পারে।

কিন্তু আজ রবিবার। সোনু ডেস্পারেটলি বাড়ি থেকে বেরিয়ে ঠাকুরবাড়ি পৌঁছে গেলো।

তারপর উঁচু মার্বেল রকটার ওপর ছোট্ট লাফ দিয়ে উঠে বসে পা দোলাতে দোলাতে বললো, ধ্যুস, দশটা তো বেজে গেলো । বসে বসে এখন অপেক্ষা করো আর রাস্তার লোক দ্যাখো ! রোব্বারের  সকালগুলো একেবারে ক্যাচাল হয়ে গেলো মাইরি, এই যখন তখন বৃষ্টি আর ওই শালা বাদলটার জন্যে । এ বলে আমায় দ্যাখো আর ও বলে আমায় দ্যাখো !

আমি তো কিছুক্ষণ আগে থেকে এসে ঘাঁটি আগলে বসেছিলাম।

হাতে নবা-র দোকানের গরম বেগুনী ফুলুরির ঠোঙা ।

সোনু  হাত বাড়িয়ে আমার হাতের ঠোঙাটা থেকে একটা লম্বা বেগুনী তুলে কচমচ করে খেতে খেতে একটু নরম হয়ে বললো, অবশ্য আমাদের বাদলের কী আর দোষ, সব ওই সরকারি শ্লোগানের জন্যে, কী না, সব দপ্তর আমরা কম্পুটারাইজড করবো, হুঃ !

মুখ ভেঙ্গিয়ে শেষ কথাগুলো বলে সোনু ঠোঙা থেকে আর একটা ফুলুরি তুলে নিলো।

ব্যাপারটা এখন একটু খোলসা করে বলা দরকার।

অতিসম্প্রতি ব্রজশ্যামদার অফিসের টেবিলে একটি নব্য ল্যাপটপের আবির্ভাব হয়েছে।

না, নিজের পয়সায় কেনা নয়, সরকারি টাকায় কেনা।

কারণটা হচ্ছে, ব্রজশ্যামদার অফিসে নিয়ম হয়ে গেছে এখন সেচদপ্তরের  সব ডেটা, ইনফরমেশন ইত্যাদি ল্যাপটপেই রাখতে হবে, দপ্তরের সব চিঠিপত্র, নোট ইত্যাদি কম্পিউটারে টাইপ হবে, তারপর ই-মেল-এ পাঠাতে হবে।

অফিসে ডিজিটাল প্রিন্টার এসেছে, ইন্টারনেটের কানেকশনের জন্য রাউটার বসেছে, সরকারি নথির ডিজিটাল ফাইল তৈরি ও স্টোর করে রাখার জন্য অফিসে জনে জনে পেন ড্রাইভ ইস্যু হয়েছে, আরও কতো কী !

ব্রজশ্যামদার ভাষায় সে এক ‘প্যানডোমোনিয়াম’ ( আমি আগে দুএক বার কথাটা ‘প্যানডেমনিয়াম’ বলে ওঁকে কারেক্ট করতে গিয়ে জোর ধমক খেয়েছি ) কাণ্ড !

অফিসের যত গোলা লোকজনকে ডিজিটাল কাজেকম্মে দুরস্ত করার জন্য ‘মিশন মোড’ প্রচেষ্টায় শুরু হয়েছে কম্পিউটারের ট্রেনিং ।

মাসের চারটে শনিবার অফিসের গ্রুপ বি আর গ্রুপ সি কর্মীরা কোলকাতায় সল্ট লেকের সরকারি ট্রেনিং সেন্টারে সকাল দশটা থেকে পাঁচটা বাধ্যতামূলক ট্রেনিং করছে ।

চারদিন ট্রেনিং-এর পর সার্টিফিকেট । এই ট্রেনিং-এ ছাড় শুধু তাদেরই, যারা কম্পিউটার চালনায় ‘কারযসাধক জ্ঞান ( মানে working knowledge আর কী !) আছে’ লিখে মুচলেকা দেবে !

এইসব ‘প্যানডোমনিয়াম’-এর পটভূমিকায়, বেতালা আসল কথাটা  হচ্ছে ব্রজশ্যামদার বিয়ের একবছরও পুরো হয়নি ! দাদার আমার পা এখনও শূন্যে ভাসমান, মাটি ছোঁয়নি !

উইক-এন্ডে ঝড়খালি থেকে বিজয়গড়ে ফিরে হপ্তার একটাই শনিবার ট্রেনিং-এর ভোগে দিয়ে নব্যা ঘরণীর সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হওয়াটা ব্রজশ্যামদার একেবারেই মনে ধরেনি।

সাতপাঁচ না ভেবে তিনি তো ঝটপট ওয়ার্কিং নলেজের মুচলেকায় সই করে বসে আছেন।

অতঃ কিম ! অফিস কম্যান্ডার নরহরি বায়েন ভীষণ কড়াধাতের অফিসার।

রাগী হেডমাস্টারের মতন বেত উঁচিয়েই আছেন, নেহাত সরকারি অফিস হওয়ার কারণে বেতটা দেখা যায় না এই যা !

অধিকন্তু, ব্রজশ্যামদার কাছেই শোনা, দাদার ওপর নাকি তিনি এক্সট্রা খিঁচিয়ে থাকেন ।

কারণটা অবশ্য অতি বিচিত্র, ব্রজশ্যামদা কেন তাঁর বসের পিতৃদত্ত নামের মধ্যভাগ নিজের নামের ‘পশ্চাদ্ভাগে’ জুড়ে দিয়েছেন ! হরি-টা যে ব্রজশ্যামদার পারিবারিক পদবি এ যুক্তিতে বিশেষ ডাল গলেনি।

এহেন নরহরি যদি ব্রজশ্যামদার ফলস মুচলেকা আবিষ্কার করে ফেলেন তাহলে তো শো-কজ মেমো নিশ্চিত, ঝড়খালি থেকে সুন্দরবনের আরও গভীরে কোন প্রান্তিক অফিসে ট্র্যান্সফারও অসম্ভব নয়।

অগত্যা, ব্রজশ্যামদা বাদলের শরণাপন্ন হয়েছেন।

আমাদের তিনজনের টিমে বাদল যাকে বলে টেক-স্যাভি ।

তার পকেটে সুপার-স্মার্ট মোবাইল, চিলেকোঠায় নিজের ঘরে নিজস্ব ল্যাপটপ, ছোট একটা স্মার্ট টিভি। আর কাকার কাছে ঘ্যানঘ্যান করে আদরের ভাইপো একটা হাইস্পিড ইন্টারনেট কানেকশনও নিয়ে নিয়েছে ।

অবশ্য লেঙটিয়া ফ্রেন্ড হওয়ার খাতিরে এতে আমাদের দুজনের পোয়াবারো।

কলেজ আর পড়াশোনার পরে সময় পেলেই আমার তার ঘরে ‘হইচই’ লাগাই।

এইসব কারণে আমাদের ঘাড়ত্যাড়া সোনুও বাদলকে একটু সমঝে চলে, যখন তখন তার পেছনে উলটোপালটা লেগে তার মুড খারাপ করে দেয় না।

৩ 

সে যাক, যা বলছিলাম, আমাদের দাদা তো বেকায়দায় পড়ে গিয়ে বাদলকে তাঁর রবিবার সকালের ল্যাপটপ ট্রেনার নিযুক্ত করেছেন।

এর আগেও অবশ্য এমনটা ঘটেছে। বেশ কয়েক মাস আগে বাদলকেই ব্রজশ্যামদার শ্বশুরবাড়ি থেকে পাওয়া অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনটা চালানোর সব কায়দাকানুন দাদাবউদি যুগলকে শেখাতে হয়েছিলো।

এখন ব্রজশ্যামদার কথায়, শনিবারের সারাদিনব্যাপী সরকারি ট্রেনিঙের বদলে ( সোনু অবশ্য প্রথমদিকে একবার ট্রেনিং ইন্সিটিউটে দুপুরের ফ্রি লাঞ্চের কথাটা বলে দাদার নাকমুখ দিয়ে বেরনো অবজ্ঞার ফোঁৎ শব্দটা হজম করেছে ) বাদল প্রতি রোববার সকালে ঘণ্টা তিনেক ব্রজশ্যামদার বাইরের ঘরে দাদাকে ল্যাপটপের খুঁটিনাটি বুঝিয়ে দিক, যাকে বলে স্পেশাল কাস্টমাইজড ট্রেনিং !

আর এর জন্য একটা ইস্টবেঙ্গলের বড়ো লীগ ম্যাচ দেখানোর ক্লাবহাউস টিকিট বাদলের জন্য একেবারে বাঁধা। ফুটবল পাগল বাদল ইস্টবেঙ্গলের জন্য বাদল তো আমাদের যে কাউকে যে কোনোদিন খুন পর্যন্ত করতে পারে !

তাই এহেন কমিটমেন্টে অভিভূত বাদল তো খুব কনফিডেনটলি ব্রজশ্যামদাকে আশ্বস্ত করেছে এই বলে যে, চারদিন লাগবে না, তিনটে সিটিংয়েই ল্যাপটপ চালানোর সব ঘাঁতঘোত ও দাদাকে জলবৎ বুঝিয়ে দেবে।

তো এই ব্যবস্থা চলছে গত তিন হপ্তা ধরে। রবিবার সকালে হরিধামে এখন আমাদের দুজনের প্রবেশ নিষেধ । প্রতি রবিবারের আড্ডা আপাতত সাসপেন্ড হয়ে আছে।

অন্য দিনগুলোয় কোন সময়ে যদি আমরা দাদার কম্পিউটার শিক্ষার অগ্রগতি নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করি তো  ব্যাটা বাদলের বাচ্চা কেবল ট্রেনিঙের মাঝে বৌদির পাঠানো নলেন গুড়ের পায়েস, হালুয়া আর কাজু কিসমিস দেওয়া চিঁড়ের পোলাওয়ের গল্প করে, আমাদের কোশ্চেনের ধারও মাড়ায় না ।

এসব শুনতে শুনতে সোনু শালা বলে আরও কিছু বিড়বিড় করে, সেটা আর শুনতে পাই না।

যাকগে যাক, আজ সেই তিন রবিবার কেটে গিয়ে চতুর্থ রবিবার।

সকালে বাদলকে ডেস্পারেটলি ফোন করাতে ও বললো, ঠাকুরবাড়ির রোয়াকে আজ সকালে ওর হাজিরা দেওয়ার চান্স নাকি নাইনটি টেন।

কারণ গত রবিবার অবধি ও ব্রজশ্যামদাকে পেন ড্রাইভে ফাইল কপি করা, পেন ড্রাইভে ট্রান্সফার করা, ই-মেল করা এই সব ভালো করে শিখিয়ে দিয়েছে ।

অন্যান্য বেসিক ব্যাপার-স্যাপারের লেসন তো প্রথম দিনেই কমপ্লিট।

আর কি বোর্ডে টাইপ করার ব্যাপারটা তো দাদার বাঁ আর ডান হাতের খেল।

আজ কোন লেসন নেই।

তাই আমাদের যদি ইচ্ছে আর সময় থাকে তাহলে আজ আমরা তিনজনেই আড্ডায় যেতে পারি। ও ব্রজশ্যামদাকে বলে রেখেছে।

শোনো কথা…ইচ্ছে আর সময় ! এই জন্যেই তো সোনু ওকে মাঝে মাঝে সস্নেহে তিলেখচ্চর বলে !

আমরা কোথায় হেঁচকি তুলছি আর ব্যাটা আমাদের জলসত্র দেখাচ্ছে !

সেই কথামতো আমরা তো এসে বসে আছি । প্রায় আধঘণ্টা কেটে গেলো, তেলেভাজার ঠোঙা অনেকক্ষণ খালি হয়ে গেছে। একটা ফোন করবো কী না ভাবছি, এমন সময় বাদল হাঁফাতে হাঁফাতে এসে হাজির হলো। আমি কিছু বলবার আগেই বাদল বলে উঠলো, দেবা, জানি রে আমার বেশ দেরি হয়ে গেছে। কি করবো বল, প্যালেস্টাইনের এমন একটা গণহত্যার খবর দেখাচ্ছিলো আল জাজিরা-তে…

সোনু খালি ঠোঙার মধ্যে কিছু পড়ে আছে কী না খুঁজছিলো, মুখটা তুলে বললো, আলো জিরা ? সে কেমন জিরা ? কালো না সাদা ? কোন ফোড়নে দেয় ? ( খুক খুক হাসি )

বাদল থেমে গিয়ে সোনুর দিকে তাকিয়ে এক মুহূর্ত পরে বিরক্তির গলায় বললো, আলো জিরা নয় আল জাজিরা ! খবর তো রাখবি না কিছুই, কেবল হইচই দেখে…

আমি থামাবার জন্য বললাম, ছাড় না। ও স-অ-ব জানে, দেরী করে এসেছিস, তাই তোর লেগপুল করছে বুঝিস না কেন ! ওই দ্যাখ, হাসছে ! আরে, আমরা তো এবার যাবো তো…না কি ? সাড়ে দশটা বেজে গেছে ।

– চল যাই। দাদার একটা অন-সাইট পরীক্ষাও নিয়ে নেবো, যাকে বলে লার্নিং আউটকাম ! হ্যাঁ, আজকে বোধহয় চিকেন পাস্তা হবে, গত রবিবারই বৌদি বলে দিয়েছিলো ।

সোনু লাফ দিয়ে রোয়াক থেকে নেমে পড়ে প্যান্টের পেছন দিকটা ঝাড়তে ঝাড়তে বললো, এই আসল কাজের কথাটাই তো আগে বলবি শালা…না কি আলজিরা, চারমগজ…যত্ত সব গেঁড়েমি !

ব্রজশ্যামদার বাড়িতে পৌঁছে কলিং বেলটা বাজাতে কাজের মেয়েটা দরজা খুলে বললো, আপনারা ভেতরে এসে বসুন, দাদা চান করতে ঢুকেছে।

বাইরের ঘরে চেয়ার দুটো আর তক্তপোষের ওপর শতরঞ্চির ওপর একটা ঝকঝকে খেশ পাতা।

আমি আর সোনু চেয়ার দুটোতে বসলাম। বাদল কয়েকদিন একা একা এসে ঘরের লোক হয়ে গেছে, তক্তপোষের ওপর উঠে জম্পেশ করে বসলো।

এদিক ওদিক তাকাচ্ছি, দেখি কোণের টেবিলে একটা কালো রঙের ব্যাকপ্যাক।

বাদলের দিকে তাকাতে ও ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলো ওর মধ্যেই আছে দাদার ল্যাপটপ।

তারপর আঙ্গুল দিয়ে দেখালো, দরজার ওপরে ফ্রেমের পাশে ইন্টারনেটের রাউটার ঝুলছে ।

সোনু কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় কাজের মেয়েটা একটা বড়ো ট্রেতে তিনটে বোল নিয়ে ঘরে এসে ঢুকে সামনের টেবিলে নামিয়ে রাখলো।

গরম ধোঁয়া-ওঠা চিকেন পাস্তার গন্ধে ঘর ভরে গেলো।

এর পর সোনুর তো আর কিছু বলার থাকতে পারে না। তড়াক করে উঠে এসে এক মুহূর্ত বোলগুলোর দিকে দেখলো। তারপর বোধহয় যেটাতে একটু বেশী আছে মনে করে সেই বোলটা তুলে নিয়ে আবার চেয়ারে বসে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

আমাদের পাস্তার বোল প্রায় খালি হয়ে গেছে এমন সময় ব্রজশ্যামদা ঢুকলেন, সদ্য চান করে, পাজামা পাঞ্জাবি পরা, চুল যত্নে ব্যাকব্রাশ করে আঁচড়ানো।

ঘরে ঢুকেই দাদার উক্তি, বাদল, একটা কেলো হয়েছে রে।

বাদল তাড়াতাড়ি বলে উঠলো, কি হোল দাদা, ল্যাপটপ ক্র্যাশ হয়েছে না কি ?

– না না, ক্র্যাশ হবে কেন ! ল্যাপটপের ওপর কিছু পড়েনি, ওটা আলমারির ভেতরে খুব সাবধানে রাখি। ব্রজশ্যামদার ঝটিতি উত্তর। একটা চাপা খুকখুক হাসির আওয়াজ, সোনুর।

ট্রেনার বেচারার দুঃখী মুখের দিকে একবার তাকিয়ে আমি বললাম, না দাদা, বাদল বোধহয় সফটওয়্যার ক্র্যাশের কথা বলছে।

ইতিমধ্যে বাদল তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে ব্যাকপ্যাক থেকে ল্যাপটপটা বার করে চালু করেছে।

ঠিকঠাক বুটিং হতেই বাদল বললো, এই তো, সব ঠিক আছে। কেলোটা কিসে হলো দাদা ?

ব্রজশ্যামদা চৌকিতে উঠে পা মুড়ে বসে পড়লেন। বসতেই খচরা সোনু ব্যাটা হাতের খালি বোলটা ওঁকে দেখালো।  ব্রজশ্যামদা একবার সোনুর মুখের দিকে তাকিয়ে জোরগলায় বলে উঠলেন, বিনি, পাস্তা আর থাকলে নিয়ে আয় এ ঘরে।

তারপর বললেন, শোন না, কি হয়েছে কাল। তোর শেখানো মতো, গত সপ্তায় একটা বড়ো পেনডিং রিপোর্ট, সে প্রায় সাত আট পাতার, ধরে ধরে টাইপ করলাম সাবধানে, অন্য কাজের ফাঁকে ফাঁকে। তারপর সেটাকে প্যারা জাসটিফাই-টাই করে পেন ড্রাইভে তো চালান করলাম সাকসেসফুলি । বেশ আনন্দ হলো, বুঝলি ! পকেটে পেন ড্রাইভটা ফেলে খুশী মনে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম । মনের ইচ্ছে, রোব্বার সকালে আমার ট্রেনারকে সাকসেসটা দ্যাখাবো আর একটু আধটু যা এডিট করার বাড়িতে ওই বিকেলে বসে করে ফেলবো। ব্যস, তাহলেই কেল্লা ফতে…সোমবার হেড কোয়ার্টারে ই-মেল !

ইতিমধ্যে পাস্তার সেকেন্ড হেল্পিং এসে গিয়েছে। সোনু পুরোটা নিজের বোল-এ টেনে নিয়ে বেশ খুশী খুশী গলায় বললো, তারপর ? বলে যান দাদা !

– আরে, তারপর কি কেলো ! বাড়ি ফিরে তো বেমালুম ভুলে গেছি পকেটের পেন ড্রাইভটার কথা। রাতে, যেমন দিই, সারা হপ্তার জামাকাপড় মেশিনে দিয়ে দিয়েছি, আমার সেই প্যান্টটা শুদ্দু। আমার তো মনেই নেই ।

– সর্বনাশ ! আমার আর বাদলের মুখ থেকে প্রায় একসঙ্গে বেরিয়ে এলো ।

– লে হালুয়া ! মুখভর্তি পাস্তা নিয়ে নীচু গলায় সোনুর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া।

বাদল বললো, তাহলে দাদা আপনার ওই আটপাতা টাইপ করা রিপোর্ট !

সোনুর মুখ খালি হয়ে গেছে, হেসে বললো, ওই তো, মনে নেই ? ‘ঢুড়তে রহ যাওগে !’

আমি বললাম, সোনু, তুই পাস্তা খা । সিরিয়াস ব্যাপার এটা, দাদার এক হপ্তার টাইপিং এফর্ট ! দাদা, কোথাকার পেন ড্রাইভ ওটা ?

– কিংস্টন ! ঠোঁটের কোণায় কেমন যেন একটা অদ্ভুত হাসি ঝুলিয়ে দাদা উত্তর দিলেন ।

– জ্যামাইকান পেন ড্রাইভ ! ভুরু কপালে তুলে সোনুর ছদ্ম বিস্ময় প্রকাশ !

বাদল এবার বিরক্তির গলায় বললো, সোনু, তুই চুপ করবি ! ওটা কোম্পানির ব্র্যান্ড নেম ।

আমাদের এই জেনুইন চিন্তার ক্যাচকেচির মধ্যেও দেখলাম ব্রজশ্যামদা যেন নির্বিকার, ঠোঁটে একটা বুদ্ধের হাসি ঝুলিয়ে রেখেছেন। বাদলের কথা শেষ হলে বললেন, আরে তোরা তো আমার কথাটাই শেষ করতে দিচ্ছিস না !

বাদল তো ট্রেনার, তাই বেশ চিন্তিত । বললো, অ্যাই, তোরা চুপ করে থাক। দাদা, বলুন তো কি হলো তারপর। পেন ড্রাইভটা কি ওই প্যান্টের পকেটেই ছিল ?

– হ্যাঁ তো ! শোনই না ! সারা হপ্তার নোংরা জামাকাপড় তো ! আমি তো রাতে ‘হেভি মোডে’ মেশিন চালিয়ে দিয়েছিলাম । গতকাল ভোরে সব কাপড়জামা মেশিন থেকে বার করছি, দেখি প্যান্টের একটা পকেটের মধ্যে কি খচখচ করছে ! হাত ঢুকিয়ে দেখি সেই পেন ড্রাইভ ! সর্বনাশ ! আমার তো সেই মুহূর্তে তোদের মতো অবস্থা, একেবারে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম । তারপর একটু ধাতস্থ হতেই হাতে ঝকঝকে পেন ড্রাইভটা নিয়ে ছুটলাম ল্যাপটপটা বার করতে। অন করে বুটিং হয়ে গেলেই ওটা ঢুকিয়ে দিলাম স্লটে। তারপর দেখলাম…

বাদল আর আমি আর থাকতে না পেরে প্রায় একসঙ্গেই বলে উঠলাম, কি দেখলেন দাদা ?

ব্রজশ্যামদা বললেন, খুলে গেলো ! হ্যাঁ, পেনড্রাইভটা কোনো ঝামেলা না করে খুলে গেলো !

– আর আপনার রিপোর্ট-এর ফাইলটা ? বাদলের গলা প্রায় আর্তনাদের মতো শোনালো !

– সেটাও খুলে গেলো…সবগুলো পাতা…নো প্রবলেম ! আর সত্যি বলতে কি, রিপোর্টের লেখাগুলো এবার যেন একটু বড়ো বড়ো আর ঝকঝকে পরিষ্কার দেখলাম রে বাদল ! শোন না…ওই হোয়ারলপুল আর কিংস্টন কোম্পানিকে যদি মেল করে ব্যাপারটা জানাই…ওদের ওয়াশিং মেশিন আর পেন ড্রাইভের রিলায়েবিলিটির ব্যাপার তো…তাহলে ওরা আমাকে ফ্রিতে একটা ওয়াশিং মেশিন আর কয়েকটা পেনড্রাইভ পাঠিয়ে দিতে পারে না ?

কি বলিস তুই ? নেটে দ্যাখ না বাদল , যদি ওদের কাস্টমার কেয়ার নম্বরগুলো পেয়ে যাস !

[মতামত ও বানানবিধি লেখকের নিজস্ব ] 

Tags: ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ