১
পায়ে ধরে মাগি কইন্যা তোমার যৈবন।
— ময়মনসিংহ গীতিকা।
নেপেন বলল, সেই ফতিমা এখন জামালের সঙ্গে থাকছে।
গণির কাছ এখবর চমকানোর মতই। ফতিমা যখন মল্লিকপাড়াতেই এক দূর সম্পর্কের এক নানীর বাড়ি ছিল, তখন অনেকেই ওকে বিয়ে করতে চায়। শেষে জামালকে নিকে করল ঐ আগুনে সুন্দরি।
টাক মাথা জামাল সেখ। বাড়ির সামনে এক জামগাছের নিচে বসে জরির শাড়িতে দিবারাত্র সূচসুতোয় কাজ করে যাচ্ছে। এমনকি অন্যান্য জরিওলারা যখন দুপুরে একঘন্টা বিশ্রাম নেয়, জামাল তখনও বসে বসে কাজ করে। সর্বক্ষণ কাজ করে করে ওর দৃষ্টি ঘোলাটে। চোখের নিচে কালো ছোপ। হাসিটা দেখলে মনে হয় বাসি হাসি। সেই লোককে ফতিমার মত এক রূপসী বিয়ে করতে পারে, চমকানোর মতই খবর বটে।
উত্তেজনা চেপে রেখে গণি স্বাভাবিক গলায় বলল, না করার কি আছে। একটা বুড়ো জামগাছের নিচে বসে জামাল কাজ করে যায়। তার একমাত্র সঙ্গী রেডিও আর তুই। এখেনে ওকে দেখার কেউ নেই। হাত পুইড়ে খেতে হত। ভালোই হল বুঝলি নেপেন।
নেপেন বলল, যাও তবে, ভাবির হাতে এককাপ চা খেয়ে এস।
গণি গম্ভীর হল। নেপেন এমন একটা লোক যে কাকে কি বলতে হয় জানে না। তবে সে সরলমতি লোক। মন ও মুখ এক। এ জন্য নেপেনকে তার ভালো লাগে। যে কোন ব্যাপারে তাকে বিশ্বাস করা যায়। তাই এসব ছোটখাট ভুল সে ক্ষমা করে দেয়।
তুই কি চা খেয়ে এলি নাকি?
খাই। তোমার এখেনে যখন আমার কোন কাজ থাকে নে, জামালের কাছে যাই। জামতলায় বসে থাকি, ভাবি চা দিয়ে যায়। জামাল বলে, এই উদাস দুপুর আমার ভালো লাগে নেপেনভাই। আর ভালো লাগে তোমায়। এখানে তুমিই একমাত্র আমার বন্ধু হে।
একদা এই ফতিমা গণির কাছে কাজ চাইতে এসেছিল। মল্লিকপাড়ায় এসে সে প্রথমে গণির নাম শোনে। খুব রহিস আদমি। ইচ্ছে করলে তাকে কাজ দিতে পারে। কিনতু গণি তাকে কাজ দিল না। বলল, তুমি মল্লিকপাড়ার কালু কি রহমতের কাছেও কাজ শিখে নিতে পার। ওরাও ভালো ওস্তাগর। আমি কাজ কাউকে শেখাই না। আমার এখানে কাজ জানা লোক চাই। যেমন তেমন নয়, ভালো কাজ জানতে হবে। তাছাড়া তুমি মেয়েমানুষ। আমার এখানে যারা কাজ করে সবাই বেটাছেলে।
ফতিমা এসেছিল একদম সকালে। গণির বাগানের শিউলিগুলো তখন সবে শিশিরে ভারি হয়ে টুপটাপ ঝরা শুরু হয়েছে। বাতাস শিউলি-গন্ধে মাতোয়ারা। তার মাথা ধরে আসে। শিউলির গন্ধ এত বেলা অবধি থাকার কথা নয়। কারিগরদের বলল, তারা কেউ গন্ধ পাচ্ছে না। গণি ভাবল এ তার হল কি? সারদিন ঘরে ফুলের গন্ধ পায়? ক্ষণে ক্ষণে তার মনে পরতে থাকল সেই কোঁকড়ানো চুলের ঢল, ডালিমরঙ্গা ঠোঁট, আঁটোসাটো গড়ণের দেহের বাঁধন। শ্বাস টানার দমকে ভারি বুক দুটো ফুলে ফুলে উঠছিল তার।
তবে এ গন্ধ ফতিমার? মনে হতেই উত্তেজনায় উঠে বসল গণি। এতক্ষণ সে ধরতে পারেনি কেন? সে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই ফুলের গন্ধটা ভেসে এসেছিল বটে। কিনতু জানালার পাশেই তার বাগান, হরেক কিসিমের ফল-ফুলের গাছ; তাই অতটা খেয়াল করেনি সে। ফুলের গন্ধের নারী—হয় নাকি এমন?
সে তলিয়ে যেতে থাকে সেই গন্ধের অভ্যন্তরে। এক আশ্চর্য অনুভূতির ভেতর ডুবে যেতে যেতে সে দেখে সামনে এক বিশাল জলাশয়। সেখানে বড় বড় পদ্ম ফুটে আছে। গোলাপি সেই পদ্মের ভেতর থেকে বের হয়ে এল এক সম্পূর্ণ নগ্ন নারী। সে এগিয়ে আসতে থাকল পাড়ে বসা গণির দিকে। সামনে এসে বলল, কি গণি সাহেব, চিন্তে পারেন?
ফতিমার রূপের খ্যাতি ছড়িয়ে পরতে থাকে গোটা মল্লিকপাড়ায়। তার রূপসুধা পান করার জন্য পাড়ার মাচায় মাচায় নানান বয়সি ছেলে ছোকরার ভীড়। সে কখন ঘর থেকে বেরুবে, কখন দোকান বাজার যাবে, কখন একটু দেখা যাবে গলার আওয়াজ শোনা যাবে তা শোনার জন্য, তাকে একটু সাহায্য করারা জন্য ছেলের দল মুখিয়ে থাকে। যারা সবসময় লুঙ্গি পরত, এখন তারা সর্বক্ষণ বাহারি জিন্স-টি শার্ট পরে। তারা ফতিমার পিছু পিছু যায়, কথা বলতে চায়। ফতিমা এসব খুব পছন্দ করে। সে চায় ছেলের দল তার জন্য হন্যে হয়ে পাক দিক রাস্তায়। তার নাকে নথ, নাভির নিচে শাড়ি এমনি করে তুলে পরে, যাতে পায়ের গোছ দেখা যায়। ঝুমঝুম নূপূর বাজে তার। এই নূপূরের শব্ধ গণিও পেয়েছিল। তাকিয়ে গণি দেখে সে নূপূর যেন জুঁইফুল দিয়ে গড়া। তিলফুলের মত তার নাক। স্বর্ণ চাঁপার মত গায়ের রঙ। সে যেমন গণিকে আচ্ছন্ন করে ছিল, তেমনি তাতে মজে গেল গোটা মহল্লার ছেলেপুলেরা।
পাড়ার বউরা তার এই বেহেল্লাপণায় খুবই খাপ্পা। এই যে গা দেখিয়ে বেড়ানো, পুরুষদের কটাক্ষহানা, তাদের দেহ-মন-প্রাণ-যৌবনকে মাত করে রাখা এতে বউদের গা ঘুলিয়ে ওঠে, তারা ঠোঁট ওলটায়, নানা ছল ধরতে থাকে ফতিমার। বলে, ওঃ, মেয়েমানুষের কি কেচ্ছে। মুসলমান ঘরের মেয়ে ত এমনি হয় না। এদ্দিন হিঁদুর ঘরে বউ হয়ে ছিল বলেই মাগি এমনি ছেনালি করে। গা গতর বার করে সিনিমার নায়িকা হয়ে যদি সর্বক্ষণ পুরুষ ছেলের চোখে মেলে ধরে নিজির যৈবন, তবে তারাই বা কেমনে সামলে রাখে নিজিদের। এরপর দেখবে, পুরুষেরা ওকে ছিঁড়ে খাবে।
এই সব খবর, নানা রটনা গণিকে দেয় নেপেন। সে যত শোনে, হাত কামড়াতে ইচ্ছে করে। এত ভুল করল সে? এমন নারীকে চিনতে তার তো ভুল করার কথা নয়? ফতিমাকে কাজ শেখানোর অছিলায় যদি রেখে দিত সে, তাতে কি এসে যেত? দু’পয়সা না হয় ক্ষতিই হত তার। কিনতু বদলে যা লাভ হোত, ক্ষতি পুষিয়ে যেত তার ষোল গুণ।
আজ নেপেন নতুন খবর দিল। পাড়ার অনেক মালদার পার্টি ছিল। উঠতি বয়সের ছেলে সব, জরির কাজে ছোট বয়স থেকে হাত পাকিয়ে অনেক পয়সা করে ফেলেছে। তাদেরকে নিকে করলে গণি অবাক হোত না। তাই বলে জামাল? গণির মতই মাঝ চল্লিশ বয়স হবে লোকটার। কিনতু দেখায় অনেক বয়স্ক। মালদায় তার পরিবার থাকে। তার বড় ছেলে মাধ্যমিক দিয়েছে। তার নিচে এক ছেলে ও তিন মেয়ে।
ফতিমা মাস খানেক ধরে জামালের সঙ্গে থাকছিল। এক ঘর, একটা উঠোন। ঘরের ভেতর বাতাবি লেবুগাছ। সে যখন জামালের ঘরে গিয়ে উঠল, কত বুকে যে শেল বিঁধল তার ইয়ত্তা নেই। গণির সেদিন কিছু করার ছিল না কেবল দেখে যাওয়া ছাড়া। কেবল মনে হতে থাকল, জামাল যে এমন ভাগ্য করে এসেছিল, তা কি সে নিজে জানে?
তারা একসঙ্গে থাকছে, এই খবর শুনে স্থানীয় মসজিদ থেকে বলা হয়, তোমরা শাদি করে নাও।
বাইরে যতই ভাবলেশহীন থাকুক, তার মনেটা যে পুড়ে যাচ্ছে, এটা গণি ছাড়া আর কেউ জানে না।
নেপেন গণির পাশ থেকে উঠে গেল। ঢূকে গেল গণির বাড়ির ভেতর। এই একটি মাত্র লোক যে সরাসরি তার বাড়ির ভেতর ঢুকে যেতে পারে।
গণি উঠে জানালার কাছে গেল। শিউলি গাছে এখনও ফুল লেগে আছে। বাতাসে তার কোন গন্ধ নেই।
একটা দীর্ঘশ্বাস পরল গণির।
২
মুখেতে ফুট্টা উঠে কনক চাম্পার ফুল।
— ময়মনসিংহ গীতিকা।
ফতিমারা থাকত হাওড়ার পিলখানা বস্তিতে। তার পাশেই এক কারখানায় কাজ করত বিহারী নিরজ সিং। তার সঙ্গে ভাবসাব হলে নীরজ তাকে নিয়ে পালায়। একবালপুরে সংসার পাতে। একটি ছেলে হয়, সুরজ। সে যখন পাঁচ বছরের, খেলার মাঠ থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। থানা পুলিশ করে কোন লাভ হয়নি।
এরপর নানা কারণে তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। পিলখানায় ফিরে আসে সে। সেখান থেকে নানীর বাড়ি। সে শুনেছিল এই এলাকায় জরির কাজ হয়। তার যদি একটা হিল্লে হয়, এই ভেবে আসা।
ফতিমা ওর চুরি যাওয়া বাচ্চাকে পেতে চায়।
সে কি এ তল্লাটে আছে রে নেপেন। দ্যাখ গিয়ে আরব দেশে পাচার হয়ে গেছে। উটের রেসে দৌরুচ্ছে।
ফতিমা ভগবানের কাছে ওর বাচ্চাকে ফেরত চায়।
সেই প্রসঙ্গ থেকে সরে এসে গণি বলল, যা দিকিনি জামালকে ডেকে আন। ওর কাজে ভুল হচ্ছে। পার্টি কাজ ফেরত দেবে বলেছে। অতগুলো শাড়ি, লাখ টাকা দাম হবে। গেলে তো যাবে আমার, জামালের কি?
যাচ্ছি। তবে একটা কথা–
গণি খুবই আগ্রহী হয়ে ওঠে, বল।
নেপেন বলল, বড় ভাবির খুব কষ্ট গণিদা। একা একা বাগানে উদাস হয়ে বসে থাকে।
গণি ভেবেছিল নতুন কোন খবর পাবে ফতিমার। হল উলটো। তার চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল। নেপেন বলে যেতে থাকল, আমি এক দুনিয়া চরা লোক। তোমার পুরাতন বাড়ির ওদিকে জাফরদের বাড়ি। ওদের অনেক সুপুরি গাছ আছে। যদি খসে পরে রাস্তায় আর কাঁচা সেই সুপুরির ছিলকা আমি দাঁত দিয়ে ছুলে খাই। তখন দেখি ভাবিকে। চুপ করে আকাশে দিকে চেয়ে, অশোক গাছের নিচে বসে আছে দুখিনী সীতার মতন।
গণি বিরক্ত হয়ে বলে, আর তুই গাছে উঠে হুপ হুপ করতে পারলিনি?
সে তুমি আমায় যাই গালমন্দ কর গণিদা–। কতদিন যে তুমি ওদিক পানে যাওনা বলত?
এই ভাবে গণির অতি-ব্যাক্তিগত জীবনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যেতে থাকে মধ্য তিরিশ, পাশের গ্রামের নেপেনচন্দ্র দাস। সে গণির বাড়ির নানা ফাই-ফরমাস খাটে। বিশেষত তার ছোট বিবি হালিমার বয়স সবে বাইশ। তার হাজার বায়নাক্কা। পয়সার অভাব গণির নেই। সাতটা কম্প্যুটারাইজ মেশিনে সব সময় থান কাপড়ে কাজ হয়ে চলেছে। লটকে লট শাড়ি নামছে হররোজ। মেশিনের কাজই সব নয়। তারপরও হাতকাজ বাকি থাকে। সেই নিঁখুত হাতকাজ করে জামালের মত কয়জন। নেপেন তাদের বাড়ি বাড়ি শাড়ি দিয়ে আসে। কাজ মিটলে ফেরত আনে।পাওনা-গন্ডা পাকা খাতায় বুঝিয়ে দেয়।
মাস গেলে পঞ্চাশ হাজারের কাছাকাছি আয় করা গণির বিবির শখ-সাধ মেটায় এই নেপেন। খবরের কাগজ দেখে, টিভির বিঞ্জাপন থেকে সে নিত্য নতুন পাউডার-ক্রিম ও অন্যান্য প্রোডাক্টের নাম লিখে রাখে। নেপেনের কাজ সেই সব অর্ডার পাড়ার স্টেশনারি দোকানে দিয়ে আসা ও মাল আনা। এখন সে যে ঘন ঘন জামালের কাছে যাচ্ছে, তাতে গণি আগের মত আর রাগ করে না। সে ফতিমার খবর পায়।
সেদিনই নেপেন বলছিল, জানো গণিদা ফতিমার গায়ে ফুলের গন্ধ।
জুঁইফুলের?
না। পদ্মের। সেদিন ফতিমা আমার কাছে এসে দাঁড়াতে দেখি এক সোন্দর গন্ধ। বলি ভাবি কি আতর মাখলে? ভাবি বলে, দূর। আতর মাখব কেন। এ হল পদ্মের গন্ধ।
শেতপদ্ম?
তাই বললে। তখন বলি, খালবিল ঘোরা লোক আমি, পদ্ম কম ঘাঁটলুম নে। কিনতু এমনতার গন্ধ কোনদিন পাইনে।
শুনে ভেবে হেসে ফেলে ভাবি। মুচকি হেসে বললে, এ হল সমুদ্রের পদ্ম।
নেপেন চলে যেতে গণি একাকি ভাবে, ব্যাপারটা কি হল? ফতিমার কথার সুযোগে সে কি বড় বিবির কথা গুঁজে দিল ইচ্ছে করে? নাকি যেমন হড়বড় করে বকে যায়, তেমনি বকে গেল? ফতিমার প্রতি তার গোপন আগ্রহ কি বুঝে ফেলল নেপেন? তাই কি ইচ্ছে করে সে উস্কে দেয় রেহেনার স্মৃতি?
তবুও গণি স্মৃতি-মেদুর হয়ে উঠল।
৩
মেঘের সমান কেশ তার, তারার সম আঁখি।
— ময়মনসিংহ গীতিকা।
লুঙ্গি আর ফতুয়া পরে জামাল একটু ঝুঁকে হাঁটে। পায়ে নীল চটি। অফিস ঘরটার ভেতর চেয়ারে বসল। একতোলা-দোতলা জুড়ে গণির কারখানা। কর্মচারিরা কারখানার পাশেই একটা টানা হলঘরে বিছানা পেতে রাত্রিবাস করে। পালা করে ডিউটি। কাজ শেষ হলে গণির নিজস্ব মারুতি ভ্যানে[মারুতির ভেতর কোন সিট নেই। সেখানে কাপড়ের গাঁট রাখা হয়।] চাপিয়ে বড়বাজারে এক মাড়োয়ারির গুদামে মাল ডেলিভারি দিয়ে আসে। সঙ্গে যায় নেপেন। ড্রাইভারের সঙ্গে সে মাল ওঠানামার কাজ করে।
জামাল বলল, বলুন গণি সাহেব।
কাযে যে তোমার ভুল হয় জামালভাই।
আগে বলেননি তো।
আগে হয়নি তায় বলিনি। এবার হচ্ছে। আগে তো এমন হত না তোমার? তোমার হাতকাজ এই এলাকায় সেরা। তোমার হাতের উপর যে চোখ বুজে বিশ্বাস করা যায়, এ যেমন তুমি জানো, আমিও জানি। তাই তুমি যা মজুরি চাও তাই দিই। কি এমন হল যে সহজ কাজেও ভুল কর? কি অসুবিধে বল দিকিনি।
তাহলে আপনাকে অনেক কথাই বলতে হয়।
আমার হাতে এখন অনেক সময় আছে।
আপনি কখনও ধুলা-ওড়া দেখেছেন গণিসাহেব?
তুমি কি আমার সঙ্গে মজা করছ?
তোবা তোবা–জিভ কাটল জামাল। বলল, আপনি অন্নদাতা। এই এলাকার আর কারও কাজ আমি করিনে সে কেবল আপনার জন্য। ক’দিন আগে ইমতিয়াজ মেশিন বসিয়েছে আপনি নিশ্চয় জানেন। সে আমারে খপর করেছিল। আমি রাজি হইনি। বলিছি, আমি সেই গোড়া থেকে আপনার কাজ করে চলিছি। তখন আপনার মেশিন ছিল নে। পুরানো বাড়িতে পাঁচটা ঢাড্ডা পেতে আপনি কাজ চালাতেন। আপনার ঘর গেলেই বড় ভাবি নিজের হাতে লেবুর সরবত করে দিত।
সে কথা থাক। গণি হাত তুলে বলল। আমি জানতে চাইছি, মাল ব্যাপারিরা নিচ্ছে না। খুঁত হচ্ছে। যা দাম মেলার কথা, পাচ্ছি না।
সেই কথাতেই আসছি গণি সাহেব। আপনি জানেন, আমি নতুন শাদি করেছি। এখন দুফুরে বিশ্রাম নেই। সেদিন শুতে যাব, দেখি বাতাসের ধাক্কায় এক বিঘত ধুলো ঘরে ঢুকে পরল। বললে পেত্যয় হবে নে গণি সাহেব, আমার বিবি সেই ধুলোদের ছুঁয়ে দিল। অমনি ধুলোরা এক ঝাঁক জোনাকি হয়ে গেল।
বল কি হে?
একরাতে দেখি সে বিছানায় নাই। ভাবলুম যদি বাইরে যেয়ে থাকে। সেই সময় পার হয়ে গেলে আমি ‘কি হল না হল’ ভেবে বাইরে আসি। দেখি বিবি আমার পরি হয়ে চাঁদনি রাতে আকাশে দু’হাত মেলে ওড়ে। ওর সাথে কখনও সঙ্গম হল নে সাহেব। আমি এদ্দিন বিবি ভেবে যার সঙ্গে সঙ্গম করিছি, সে হল বিবির ছায়া। রাতে আমি শুয়ে পরলে সে তার ছায়াকে আমার ঘরে পাঠায়। এটা ধরা পরল অনেক পর। যখন দেখি সেই ছায়াময়ী উঠোনের বাতাবি লেবু গাছের ডালে-পাতায় মিশে যায় আর পরদিন সকালে অবাক হয়ে যাই লেবুগাছের ডালে হাজার হাজার কুঁড়ি ধরেছে দেখে।
বুঝলে জামাল–গণি বলতে থাকল, আমার বড় বিবিকেও পরির মত দেখতে ছিল। হঠাত আবেগ এসে যায় গণির ভেতর। মালিকের মুখোস খসিয়ে সে যেন ব্যাক্তিগত জীবনের কেন্দ্রে জামালকে ঢুকিয়ে নিতে চায়।
বড় ভাবি কাঁদে শুনি।
তোমায় কে বললে?
কেউ না। আমার চোখে ঘুম কম। যাও বা ঘুমাই, এত পাতলা ঘুম যে এট্টুতেই ভেঙ্গে যায়। মাঝেমাঝে রাত-বিরেতে রাস্তায় হেঁটে বেড়াই নেপেনের মত। কত হুরি-পরিদের রাত বিরেতে উড়ে যেতে দেখি। কখনও দেখি এক ঝাঁক আবাবিল উড়ে গেল পশ্চিমে। তখন শুনি কান্নার আওয়াজ। পরে বুঝি যে ও বাড়ি থেকে বড় ভাবি কাঁদে।
গণি উত্তর করল না।
আপনার কানে কখনও কান্নার শব্দ আসেনি?
এবার গুম হয়ে গেল গণি। তারপর জানালা দিয়ে শিউলি গাছের দিকে তাকিয়ে বলল, শুনিছি। কিনতু বুঝিনি। ভাবতাম বাতাস কাঁদছে বুঝি। কখনও মনে হত রাতটাই বা কেঁদে চলেছে সারারাত।
যাই গণি সাহেব। কাজের ব্যাপার মনে থাকবে। আমি জবান দিতে পারি আর ভুল হবে নে কাজে।
রফিক মিদ্দের ঘর ভাড়া নিয়ে থাকছ, ও কি ভালো ঘর? রোদ ঢোকে না, ড্যাম্প ধরা দেল। তুমি আমার এখানে এসে থাকতে পার। আমার এখানে ঘর এমনিই পরে রয়েছে। সামনে জায়গাও আছে অনেকটা। হাওয়া বাতাস থাকে। তোমার এই যে ঘং ঘং কাশি, ওই ঘরের কারণে সারছে না। ঘর বদলাও।
আসি।
ঘরে গিয়ে আলোচনা কর।
ফতিমার সঙ্গে রেহেনার রূপের কোন তুলনাই চলে না। রেহেনার গড়ণ চমতকার হলেও ফতিমার ঢলঢল কাঁচা অঙ্গের লাবণির সঙ্গে তার কোন তুলনাই চলে না। রেহেনার গায়ে ঘাস পাতার গন্ধ। তেমনি হালিমার শরীরে কেবল মাংশের আস্বাদ। ফুলের গন্ধের নারী কেবল ফতিমাই।
রেহেনাকে কি সত্যিই সে একাকী জীবনযাপনে বাধ্য করল? ফতিমার অনুসঙ্গে সকলে কেন রেহেনার অনুসঙ্গ এনে ফেলে? তার ফেলে আসা বাড়িতে সে কি সত্যিই দুখিনী সীতার মত কষ্টের জীবন যাপন করে? জামাল বলে গেল, পরিবিবি নিয়ে ঘর করার সাধ সব পুরুষেরই যায় গণি সাহেব। কিনতু–
পরিবিবি পেয়ে তুমি খুশি নও জামাল?
খুব খুশি। কিনতু যখন মিলনের সময় আগত হয়, আমি কেমন ঝিমিয়ে যাই। পরি ছায়া রেখে দেয় বিছানায়। এবার যত খুশি সংগম করুণ তার সঙ্গে।
থাক। আমি আগেই খবর পেয়েছিলাম ফতিমা পরি। নেপেন রাতচরা লোক। ও দেখেছে দিঘির পাড়ে। ফতিমাকে ও চিনেছে। কিনতু তার পাশে আরও একজন আকাশের দিকে দু’হাত তুলে ঈশ্বরের কাছে কিছু ভিক্ষে চাইছ এমন দেখেছে। তাকে সে চিনতে পারেনি। তুমি কী ঐ ছায়ার কথা বলছ?
সে রমণী ছায়া নয় গণিসাহেব। সে আপনার বড় বিবি।
রেহেনা? অস্ফুট স্বরে নামটা উচ্চারণ করে শক খাওয়ার মত চমকে ওঠে গণি।
প্রথম যৌবনে গণি তাকে পরিবিবি বলেই ডাকত। পুরাতন আধ ভাঙ্গা বাড়ির সেই বাগানে কত চন্দ্র-উচ্ছল যৌবন তাদের কেটেছে তার ইয়ত্বা নেই। চাঁদের আলোয় রেহেনার শরীর নিদারুণ কোমনীয় হয়ে উঠত। তার কিশোরী স্তন চাঁদের মতই অবয়ব ধারণ করত। যেমন শিশিরের ছোঁয়ায়, পতঙ্গের চুম্বনে শালুকফুল পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়, তেমনি চাঁদের আলো নগ্ন শরীরে প্রবেশে প্রথমে যেগে উঠল বৃন্ত; তারপর দুই স্তন শালুকের মত ফুটে উঠল।
তখন হাতে পয়সা নেই, শখ-সাধ সব চেপে রাখতে হোত বুকের ভেতর। কি সব দিন ছিল। পয়সা নেই, কিনতু ভালো লাগত। এখন তার অনেক পয়সা। সেই জোরে অনেক কিছু করতে পারে। কিনতু সেই বেঁচে থাকাটা সে আর ফিরে পাবে না। এখন জীবন পাল্টে গেছে তার। রেহেনাকে মাসিক খরচ দিয়েই সে খালাস। তার বাড়ির বাজার, দোকান সব এক বিধবা বউ করে।
প্রথম বিবিকে সে নির্মম ভাবে ছেঁটে ফেলল যখন ক্যান্সারের ভয়ে তার জরায়ু বাদ দিতে হল। গণির কামজর্জর শরীরে ঢুকে পড়ল সদ্য যুবতি পড়শির মেয়ে হালিমা। বিয়ের আগে তিনবার নানা জায়গায় মিলিত হয়েছিল তারা। তারপর গণির মনে হল, হালিমার শরীর ছেড়ে সে থাকতে পারবে না।
গণি এক নতুন বাড়ি তৈরি করল হালিমার জন্য।
৪
তুমি হও গহীন গাং আমি ডুইবা মরি।
— ময়মনসিংহ গীতিকা।
সে যে পরি হয়ে উড়ে বেড়ায় এ কথা তুই জামালকে বলিস আর আমার কাছে চেপে গেলি নেপেন?
ভাবিকে আমি দেখেছি আকাশের দিকে মুখ তুলে দু’হাত উপরে করে কিছু চাইতে।
কি চাইতে পারে সে?
তা আমি কেমনে জানব।
তোকে কখনও বলেনি?
না।
জিঞ্জাসা করিসনি?
সে আমি পারি নাকি?
গণি চুপ করে গেল। ঘরের ভেতর একটু পায়চারি করে বলল, জামালের কাছে যাবি?
কি বলব গিয়ে?
আমাকে জামাল একদিন যেত বলেছিল। যাব যাব করে অনেকদিন হয়ে গেল। আজ আমার মন ভাল নেই। নাকি শরীরটা কে জানে। তুই যাবি আমার সঙ্গে।
নেমন্তন্ন তোমার। আমি কেন যাব? আমি এই তো সকালে গেলুম। হালিমার জ্বর হয়েছে। জামাল সেবা করছে, তাই আর বসিনি। তুমি মালিক, তোমার খাতির আলাদা। একাই যাও।
জামালের ঘরের প্রতি হাঁটতে হাঁটতে গণি ভাবছিল এই যে সে জামালের বাড়ি যাচ্ছে, সেটা কি ঠিক করছে? জামাল সেদিন চলে যাবার আগে দরজার মুখে থমকে দাঁড়িয়েছিল। বলে, পরি ওড়া কখনও দেখেছেন গণিসাহেব?
না।
তবে গরিবের বাড়ি একবার পায়ের ধূলা দেন সাহেব।
ওরা ঈশ্বরের কাছে কি চায় জামাল?
জামালের ঘরের পিছনে এক বড় পুকুর ঘাট। সেখানে ফতিমা দাঁড়িয়ে রয়েছে। তারপর এদিক ওদিক দেখে নিয়ে উবু হয়ে বসে পরল নারকেল গুঁড়ি দিয়ে বানানো ঘাটের শেষ ধাপে। নিস্তব্ধ সবুজ জল আঁচলা ভরে তুলে ধুয়ে নিল যোনিদেশ। তিনবার। রাস্তার পাশে এক তেঁতুল গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে গণি তখন ঠিক-বেঠিকের সমাধান করছিল। অনেকেই যেতে বলে, কিনতু তাদের বাড়ি যাওয়া হয় কী? তবে সে জামালের বাড়ি যাচ্ছে কেবল ফতিমার টানে? গুঁড়ির আড়াল থেকে এ দৃশ্য দেখে সে স্তব্ধ। চলতশক্তিহীন। ফতিমা তাকে খেয়াল করেনি। আপন মনে যেমন এসেছিল, তেমনি চলে গেল।
আচ্ছন্নভাব নিয়ে গণি হাজির হল জামালের বাড়ি। সবে ভাত ঘুম দিয়ে উঠেছে জামাল। হয়ত ফতিমা ঘরে গিয়ে ডেকে দিয়েছে। হাঁক শুনে জামাল বেরিয়ে এল। বিগলিত হল গণিকে দেখে। বলল, আসেন সাহেব।
বেশ আছ তোমায় দেখেই মালুম। সর্বত্র একটা পরিচ্ছন্ন ভাব।
আলতো হাসি দিয়ে জামাল বলল, এট্টু লেবুপানি লেন।
তা চলতে পারে। কিনতু যে কারণে আসা, তার কি হবে?
সব হবে। আপনি অস্থির হবেন নে। ঘরে আসুন।
না হে। এই জামতলাই ভালো।
তাই হয়? কত বড় মানুষ আপনি।
বড় কি না জানি না। পয়সা করেছি বলতে পার। এই তোমার নক্সীকাঁথা পাতা আছে চ্যাটাইয়ের উপর। মাথার উপর জামগাছের ছায়া। একটা শীতল ভাব আছে বুঝলে। কতদিন পর এলাম এই জায়গায়? মনে নেই। তুমি এখানে বাস করছ দশ বছর, তার আগে এসেছিলাম। কি অদ্ভুত লাগে না জামাল? আমার বাড়ি থেকে হেঁটে পনের-কুড়ি মিনিটের রাস্তা, অথচ দেখ সেখানে আসতে মাঝে কতগুলো বছর হারিয়ে গেল।
জামাল চুপ করে রইল। সে বুঝল গণি সাহেবকে আজ কথায় পেয়েছে।
গণি নানা কথা বলে যেতে থাকল। একসময় বলল, ওরা তবে কখন ঈশ্বরের কাছে আর্তি জানাবে?
সে দেরি আছে। সন্ধে হোক, রাত নেমে আসুক, চাঁদ উঠুক।
এখনও কি সূর্য আছে?
এই আলো এখুনি মুছে যাবে।
ওরা চায় কি?
জানি নে গণি সাহেব।
তুমি কখনও জিগাসা করনি?
করলেও উত্তর পাই নে।
গণি একটু থেমে বলে, যদি আমি ওই সময় ওদের সঙ্গে থাকি তো কেমন হয় জামাল?
মনে হয় না ভালো হবে। দূর থেকেই দেখা ভাল।
এ কথা কেন বলছ?
তখন কি ওরা মানবী থাকে? পরি হয়ে ওঠে। ঐ অবস্থায় মানুষ কাছে থাকলে সে হয়ত আর নারী জীবনে ফিরে নাও আসতে পারে।
খুব ক্লান্ত লাগছে।
আপনি ভেতরে যাবেন নে যখন এখানেই বিশ্রাম নিন।
শুয়েই পরল গণি। এত নরম কাঁথা বুনতে পারে ফতিমা? তাতে এত এত আরাম। ছায়াচ্ছন্ন স্থান। আলগা একটা বাতাস দিচ্ছে। কোথাও টি টি করে পাখি ডাকছে। জামগাছের দু’একটি পাতা ঝরছে। ফাঁক দিয়ে চাঁদ দেখা যায়। হালকা স্মৃতির মত রঙ তার। মাটির গন্ধ লাগছে নাকে। এক ঝাঁঝাল গন্ধ। সে খুব অবাক হয়ে গেল। মাটির এমন গন্ধ হয়? চল্লিশ পেরিয়েও সে কখনও এমন মাটির গন্ধ পায়নি। সোঁদা গন্ধ নয়, ভিজে নয়, শুকনো বা অন্য কোন চেনা গন্ধ নয়। সে অতি-আশ্চর্য হয়ে যখন উঠতে যাচ্ছে, তখন চোখ খুলে দেখল এক অপরূপা ভিজে ঠোঁট নিয়ে তার উপর ঝুঁকে আছে। তখন গন্ধটা তীব্র হল।
গণি বলল, এ তোমার গায়ের গন্ধ?
সে মৃদু হাসল।
বোস আমার পাশে।
দু’জনে পাশাপাশি বসল। গণি তার নিঃশ্বাসের মিষ্টি গন্ধ পাচ্ছিল। চারিদিকে কেমন এক নিস্তব্ধতা। কোথা থেকে অদ্ভূত সুরে এক পাখি ডাকছে। মনের ভেতর কোন চাপ নেই, উতকন্ঠা নেই। গণি শান্ত গলায় বলল, তুমি কে?
আমি ঝিনুক কন্যা। সমুদ্রের ঝিনুক থেকে আমার জন্ম।
এখানে কি ভাবে এলে?
সমুদ্রের ফেনার উপর ভেসে ভেসে পাড়ে এসে উঠলাম।
তুমি আমার হলে না কেন?
তোমার কাছেই প্রথম…। কিনতু তুমি–
গণি মুখ নিচু করে বলল, আমি বুঝতে পারিনি। আমার আর একটা সুযোগ দাও।
সে হাসল। গণি তার একটু ছোঁয়া পেতে উদগ্রীব হয়ে উঠল। যে নরম নক্সী কাঁথায় তারা বসে আছে, তাতে ফুল আঁকা, নারী আঁকা। সেই নক্সীনারীর নগ্ন স্তন আড়াল করতে একটা জামপাতা ঝরে পরল। পৃথিবীটা খুব অচেনা মনে হতে থাকল গণির। মনে হল ঝিনুক-নারী তাকে যাদু নক্সী কাঁথায় উড়িয়ে নিয়ে চলেছে সমুদ্রের দিকে। নারী তাকে দেখাবে কিভাবে এক ঝিনুক থেকে এক পরিপূর্ণ নারীর জন্ম হয়।
জামাল এসে ঠেলা দিল, উঠুন গণি সাহেব। রাত হল। এবার যেতে হবে। পরি দেখবেন নে?
ধড়মড় করে উঠে বসল গণি। চোখ কচলে বলল, রাত হয়ে গেছে নাকি?
নয়টা।
আমাকে ডাকনি কেন?
চিন্তা করবেন না, নেপেন এসেছিল। আপনার বাড়িতে খপর গেছে। তারপরও আমি আপনাকে জাগাতে চেয়েছিলাম। কিনতু ফতিমা আমায় রুখল। আপনি অঘোরে ঘুমুচ্ছেন দেখে সে ডাকতে এসেও ফিরে গেছে। অনেক ঘুমালেন। এবার পানি লেন। তারপর চা খেয়ে আমরা ঐ মাঠের পানে যাব।
চা কি তুমি বানাবে নাকি?
না সাহেব। ফতিমা করেছে। আসেন।
এখানেই নিয়ে এস জামাল। এখানেই খাব। বেশ ভালো লাগছে বুঝলে। কতদিন পর যেন শান্তি পেলাম।
জামাল কোন মন্তব্য করল না।
খুব ধীরে-সুস্থে আরাম করে চা পান করল গণি। চাঁদের আলো ছড়িয়ে পরেছে চারিদিকে। এতটা গোল হয়ে উঠেছে যে, নারীর স্তনের মত…গণি অবাক হয়ে গেল। চাঁদ এত বড় হয় নাকি আজকাল?
চল হে।
চলুন। এদিকে–
একটা কথা বলি জামাল, ঠিক ঠিক উত্তক কোর। তোমায় বলছি কারণ উত্তরটা আমারও জানা নেই। সেটা হল তোমার বাড়ী এই যে এলাম, কেন?
কেন আবার, পরি ওড়া দেখবেন বলে।
এটা আমিও ভেবেছি, কিনতু এটা উত্তর না। এর উত্তর অন্য। সেটা কী হতে পারে?
আমার ছোট মাথায় এইটুকুই ভাবতে পারি।
বাড়ির গা দিয়ে জামালের পিছু পিছু এগিয়ে গেল গণি। যেতে যেতে তার মনে পরছিল কিভাবে এক নারী পুকুরঘাটে নেমে সমগ্র যোনি ধুয়ে নেয়। আচ্ছা, তখন পুকুরের পানির কি অবস্থা হয়? সে কী তখন এক গহীন গাং হয়ে ওঠে? যে গাং এর তল-অতল বলে কিছু নেই; সেখানে যদি কোন পুরুষ সাঁতার দিতে চায় তো সারা জীবনেও হয়ত সে সাঁতার তার আর শেষ হয় না।
এখন তার পায়ের নিচে এক বিস্তির্ণ উঠোন। তা পেরিয়ে নারকেল-আমগাছের সারি। এর ভেতর দিয়ে গিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় সেই যেখানে নারী পরি হয়ে ওঠে।
Tags: অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী, পরিকাহিনি
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।