06 Sep

বিভূতি স্যারের নোটস

লিখেছেন:পূষন


[প্রকৃতি তাঁকে অন্যরকম ভাবে টানত। তাঁর অনেক গল্প, অনেক উপন্যাসে নানা মায়াময়ী রূপে উপস্থিত হয়েছে প্রকৃতির পাঁচালি। অনেকে তাঁকে ‘প্রকৃতি -পাগল সাহিত্যিক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।  সেপ্টেম্বর মাস তাঁর জন্মমাস। বিভূতিভূষণের স্মৃতিবিজড়িত ঘাটশিলায় গিয়ে প্রিয় লেখকের প্রকৃতি পাঠকেই স্মরণ করলেন তরুণ লেখক পূষন।]

[এক]

‘ বিকেলের এই শেষ-না-হওয়া কবরখানায়

আমরা দু’জন কেমন জীবন বাঁচতে এলাম ?’

যত সময় যাচ্ছে প্রশ্নটা ততই অনতিক্রম্য হয়ে উঠছে। কোনোকোনো দিন কবি শ্রীজাত-র এই লাইন দুটোকে পশ্চিম দিকের  গোধূলি-আকাশে নিঃশব্দে চলাফেরা করতেও দেখেছি। যেমন এখন দেখছি চলন্ত ট্রেন থেকে। সন্ধ্যে নামতে খুব বেশী দেরী আর নেই, অদ্ভুত একটা রঙ ছড়িয়ে রয়েছে সবকিছুতে। প্রতিদিন এইসময়টায় পৃথিবী বোধহয় তার পুরনো ডায়েরি পড়ে। অনেক সময় আমাদেরও পড়িয়ে নেয় আমাদেরই কিছু হলদে পুরনো পাতা…
… হ্যাঁ, কবরখানাই বটে, মনের ভিতর যে ডায়েরিটা লেখা হতে থাকে তার পাতায় পাতায় তো এক বিশাল কবরখানারই বিচিত্র নকশা। এই কবরখানার নির্মাণ চলে ব্যক্তিজীবনের একদম শেষদিন অবধি। বহু অপরিকল্পিত ভাঙা-গড়া ওর নিত্যসঙ্গী। অনেকে শুয়ে থাকে ওখানে, অনেকের কিছু কিছু অংশ ওখানে শুয়ে থাকে। মনের ডায়েরিটা তাই এক কবরখানাই হ’ল যার এপিটাফগুলোতে জীবনের আসল সফরনামাটা প্রতিমুহূর্তে লেখা হতে থাকে। আজ ট্রেনের জানালা দিয়ে আসা ঠাণ্ডা একটা হাওয়ায় সেই ডায়েরির কয়েকটা পৃষ্ঠা বেশ ফড়ফড় করছে। কোন দিনের বা কোন সময়ের তারা – সেটা ঠিক বুঝতে পারছি না, কিন্তু তাদের উড়তে থাকার, সময়ের স্রোতের একটু বিপরীতে বারবার ফিরে-ফিরে আসার একটা অনতিস্পষ্ট ধ্বনি বেশ কানে আসছে। কোথা থেকে  যেন অস্ফুট কিন্তু একটানা একটা অনুরণন ভেসে আসছে—

‘…… কেমন জীবন বাঁচতে এলাম?’…………‘…… কেমন জীবন বাঁচতে এলাম?’ ……

মনে হচ্ছে, ট্রেনটা যেন উপরের লাইনদুটোর মাঝখান দিয়েই চলেছে। শুধু ট্রেনটাই বা বলি কেন, আমিও তো চলেছি তাদের মাঝখান দিয়ে, আর আমার মাঝখান দিয়ে এগিয়ে চলেছে ওরাও। চলেছে, আরও চলেছে… একটু একটু করে ওরাও যেন বড় হচ্ছে, পরিণত হচ্ছে ক্রমশ। আচ্ছা, লাইনদুটোর কি বয়স বাড়ে? অভিজ্ঞতা বাড়ে? ওরাও কি ‘বড়’ হয় ধীরে ধীরে? জানি না, হ’লে ওদের করা প্রশ্নটার উত্তর হয়ত তবে ওরাই একদিন আমাকে ঠিকঠাক বুঝিয়ে দেবে।

প্রশ্নটার যিনি একটা সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারতেন বলে মনে করি তাঁর ‘গৌরীকুঞ্জ’-এ হয়ত কাল-পরশুর কোন একটা সময়ে পৌঁছাবো। তিনি থাকলে কি বলতেন ? কোনো উপনিষদের বাণী শোনাতেন? ওই ‘মধুবাতা ঋতায়তে…’ টাইপের কিছু আর কি! কে জানে। কিন্তু উত্তরটা অত থিওরিটিকাল হলে কি আর চলে? যে জবাবটার উপর প্রায় সমস্ত জীবনের একটা সংজ্ঞা নির্ভর করছে, সেটাকে খুব প্র্যাকটিকাল হতে হবে বৈ কি! কিন্তু বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় যে প্র্যাকটিকাল কথা বলেন নি, এমনটা নয়। মনে পড়ে যায় ‘ইছামতি’-র একটা ক্ষুদ্র অংশ যার বাকি বারোআনাই ভুলে গিয়েছি —
ভবানী খোকাকে বলছেন, মাকে ভালোবাসো?
খোকা বলছে, হ্যাঁ।
— বাবাকে (ভবানী স্বয়ং) ভালোবাসো?
— হ্যাঁ।
তারপর একসময়ে ভবানী প্রশ্ন করলেন, ঈশ্বরকে ভালোবাসো?
খোকা বলল, না।
–কেন?
–তাকে চিনি না তো !
বাংলা সাহিত্যের যে অতি ক্ষুদ্র অংশটা আমি এই  জীবনে পড়তে পেরেছি, চূড়ান্ত প্র্যাকটিক্যালিটির এর চেয়ে বড় কোনো নিদর্শন ব্যক্তিগতভাবে আর একটাও পাইনি। এই কথা যিনি এমনভাবে লিখতে পারেন, নিতান্ত সাধারণ একজনের সব জীবন জিজ্ঞাসার সমাধান তাঁর কাছে পাওয়া যাবেই। জীবনের একটা আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা বা পরমার্থ নিশ্চয়’ই আছে, উপনিষদে লেখাও আছে নির্ঘাত। কিন্তু এই যে প্রতিদিনের ঘষে-চলা জীবন, সকালের ভিড়-ঠাসা ডাউন ট্রেনের জীবন, রোগগ্রস্ত দূষিত জীবন, কথায় কথায় পিছন-ফেরা অতীতবিলাসী যে জীবন (জীবনানন্দের সেই ‘তিমিরবিলাসী’ ও বলা যায়, যদি প্রেজেন্ট টেন্সটা ধরি আর কি! ); তারও তো একটা মানে আছে না কি? এই ক্ষয়িষ্ণুভাবে বেঁচে থাকা …

… বেঁচে থাকা … বেঁচে থাকা… ঠিক! ফার্স্ট স্লিপে ক্যাচ আসার মত মাথায় এলো ‘অপরাজিত’-র একটা ভাঙা-লাইন—‘বাঁচিয়া থাকাই এক সম্পদ’। অনস্বীকার্য।তবে পুরোপুরি হয়ত বুঝব না এখন, চেয়ারে বসে চেয়ারটাকে তোলা সম্ভব নয়। তবে এ’টুকু বোঝা যায় যে এটাও জীবনের একটা দিক হতে পারে, একটা দুর্গন্ধীপূর্ণ খণ্ড হতে পারে, ‘ কিন্তু জীবনের শেষ সত্য নয়’ (আবার জীবনানন্দ! )। অর্থাৎ, এমনটা তো হয়েই থাকে! খুব স্বাভাবিক। আমাদের সেই অপূর্ব-র (অপু) ও তো ছিল, একটা অন্ধকারের টানেল—
“… ভবিষ্যৎ জীবনে অপু এ গলিটার নিকট দিয়া যাইতে যাইতে নিজের অজ্ঞাতসারে একবার রাস্তা হইতে গলির মোড়ে চাহিয়া দেখিত, আর কখনও সে ইহার মধ্যে ঢোকে নাই।”(‘অপরাজিত’)

তাহলে বড়-রাস্তায় কি কি থাকবে? আর কি কি থাকার কথা? দুর্গা, প্রণব, অপর্ণা, লীলা… কিংবা ভানুমতী, কিংবা পুষ্প অথবা… কিন্তু, এদের সাথে কি জীবন সত্যিই দেখা করিয়ে দেয়? নাকি যাদের সাথে আসলে দেখা হয় তাদের ঠিক কেমন হওয়া উচিত ছিল এই চরিত্ররা সেটাই বোঝাতে চায়? অমীমাংসিত প্রশ্ন। বেনিফিট অফ ডাউট দিলে আরেক প্রশ্ন আসে, এরা (মানে, ওর কাছাকাছি ‘potential’ -এরসম্পর্কগুলো) তো অন্য কোন নামে কম-বেশি ‘বহুরূপতা’-র উদাহরণ ছড়িয়ে কখনও-না-কখনও আমাদের জীবনেও ছিল, সকলে না হলেও অনেকে অন্তত, তবে আমাদের সাথেও কি তেমনটা হতে পারে না? এইরকম কোন ট্রেনের অন্য কোন কামরায় কি আবার তার সাথে বা তাদের সাথে ফের দেখা হওয়াটা সম্ভব? দেখা হলেও কি অবস্থায় দেখা হবে? … আচ্ছা, এমন মনে হবে না তো যে দেখা না হলেই ভালো ছিল? হতেই পারে। মানুষের যা অগ্রগতি! তখন?

ধরা যাক, দেখা হয়েই গেল। এবার দু-চারটে নিয়মরক্ষার সাধারণ কথার পরে কি হতে পারে? কথারা এগিয়ে, আরও এগিয়ে যেতে যেতে পাস্ট আর প্রেজেন্ট টেন্স গুলিয়ে ফেলে একটা অনির্দিষ্ট পারফেক্ট-কণ্টিনিউয়াস টেন্স গঠন করতে পারে যাতে ‘এই-সময়’-এর সমস্ত কিছুর কাছে ‘সেই-সময়’-এর কোন কিছুই কিছুমাত্র বেমানান না ঠেকে। কিন্তু এটা হওয়ার চান্স কম, কারণ কাজটা প্রচণ্ড ব্যাকরণবিরোধী। তাহলে অধিকাংশক্ষেত্রে কি হতে পারে সেই সব ‘দু-চার কথা’-র পরে? কিছুই না, সব ক’টা মাথা প্রায় ঢুকেই হয়ত পড়বে যার যার মোবাইলের ভিতরে, তবে হ্যাঁ, ডাইনোসর-যুগের কেউ থাকলে কিন্তু জানালার বাইরে তাকিয়ে চাপা দীর্ঘশ্বাস ছাড়বে, অন্তত একটা। তার দিক থেকে খুবই বাজে ব্যাপার! তাহলে ভালো কোনটা— দেখা হওয়া না দেখা-না-হওয়া? অভিজ্ঞতা বলছে, দ্বিতীয়টা।প্রত্যক্ষ কারণ, প্রায় সকলেরই এখন মিনিমাম একটা ঢাউস স্মার্টফোন আছে। পরোক্ষটা গুরুতর। কিন্তু মনের যে অংশটা কোনদিন বড় হয় না, কোনদিন ঠেকেও শেখে না, সে তো দেখা করতেই চায়। অবশ্যই কারও কারও সাথে, সকলের সাথে নয়।কোন ট্রেনে উঠে বা বাসে চেপে সেই তো চারপাশটা বারবার তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে নিতে থাকে— আর কে উঠ’ল?…… এবার তাকে বোঝাব কি করে?

বোধহয়, আমাদের প্রত্যেকের মনের ঠিক এই চিরহরিৎ অংশটাতে বসেই বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও কিছু-না-কিছু লিখে চলেছেন। প্রতিটা মুহূর্তে লিখে চলেছেন। লিখছেন, কাটছেন—আবার লিখছেন। প্রকৃতপক্ষে, তাঁর লেখা কোনদিন থামেই নি, আর যতদিন মানুষ থাকবে ততদিন সেটা থামবেও না। বায়োলজিক্যাল হৃৎপিণ্ডের ভিতরে কোথাও ‘হৃদয়’ ব্যাপারটা যেভাবে থাকে, আমাদের সকলের ভেতর বিভূতিভূষণ অনেকটা সেভাবেই থেকে গিয়েছেন। অন্যভাবে দেখলে…

—‘বলছি, কাল রাতে একবার হোটেলের লোককে ফোন করেছিলি? রুম রাখবে তো? নাকি আবার রাতে তোদের সেই ‘রামলাল’-এর সাথে শুতে হবে ঘাটশিলায় গিয়ে?’

সচ্ছলের জোরালো প্রশ্নে ট্রেনের সিটে ফিরে আস’ল মনটা। দিব্যেন্দু কিছু বলার আগে অভিজিৎ-ই সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়ে দিল, ‘হ্যাঁ দাদা, রাখবে ব’লে আশা করাই যায়।’

ঝাড়গ্রাম পার হয়ে এসেছি ইতিমধ্যে। বাইরের অন্ধকারে সব মাঠ-জঙ্গল কেমন যেন অন্য জগতের বলে মনে হচ্ছে। দিনে দেখলে এদের হয়ত আর চিনতেই পারব না। জগতের সমস্ত চেনাই মনে হয় তাৎক্ষণিক কিংবা তৎক্ষণ-অবধি, চিরকালের নয়।
… অভিজিৎ অবশ্য ঠিকই বলেছে, ‘আশা করাই যায়’।তাই তো! হ্যাঁ, আশা করা যায় বলেই তো নিকটবর্তী পাটকলের বদলে সুদূর আফ্রিকার ‘চাঁদের পাহাড়’-এ যাওয়া যায়। আশা করা যায় বলেই তো ‘অপরাজিত’! আশা করতে না জানলে ‘ইছামতি’-র লালু পালের (‘নালু’ পাল) কি হ’ত?এতদিন ঠিক এভাবে মনে হয় নি, কিন্তু আজ যেন খুব স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছি যে বিভূতিভূষণের লেখারা (যেটুকু পড়েছি) অত্যন্ত মিহিভাবে হলেও বিভিন্ন প্রকারে আশার কথাই বলে। এক ক্লিষ্ট জীবন থেকে কোন-না-কোনভাবে অন্যএক উজ্জ্বলতর জীবনে উন্নীত হওয়া যাবেই— প্রাত্যহিক জীবনের কাছ থেকে এই আশা রাখার কথাই হয়ত বলে। হতে পারে সে জীবন ঠিক যেমনটা কাঙ্ক্ষিত ছিল অবিকল তেমন, কিংবা পুরোপুরি তেমনটাও হয়ত নয়; কিন্তু শেষমেশ এক পরিপূর্ণ, শান্তিপ্রদ একটা জীবন তো বটেই…
………মনে পড়ে ‘অপরাজিত’-তে লেখকের আঁকা সর্বজয়ার মৃত্যুর আগের মুহূর্তগুলোর ছবি। সর্বজয়ার শেষ-শয্যায় তাঁকে পরলোকে নিয়ে যেতে মৃত্যু নিজে এসেছে ছোট্ট অপুর রূপ ধ’রে। ভাবা যায় না। ‘অনবদ্য’ বললেও আসলে কিছুই বলা হয় না ওই লাইনগুলোর ব্যাপারে। লাইনগুলোর কথা মনে করলেই সব কথা, সব অনুভূতি জড়িয়ে আসতে চায় প্রতিবার। তাও সব অবশতা কাটিয়ে এ’টুকু বলতে চাই, আগাগোড়া একটা দীন, অভাব-জর্জরিত, প্রায়-অন্ধকারময় জীবনকেও মৃত্যু কি অদ্ভুতভাবে তার সবচেয়ে বড় পরিপূর্ণতা দেখিয়ে এবং স্বয়ং সেই পূর্ণতার বেশে এসে আরও এক পরিপূর্ণতর জীবনলোকের পথে নিয়ে গেল !! মৃত্যুর এই ছবি একরকম আশাবাদের (optimism) ক্যানভাসেই তো আঁকা। আর এই সমস্তকিছুর উপর জেগে থাকে এই কথাগুলো —

‘…… এই সবটা লইয়া যে আসল বৃহত্তর জীবন—পৃথিবীর জীবনটুকু যার ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ মাত্র, সে জীবনের অধিকার হইতে কাহারও বঞ্চনা করিবার শক্তি নাই… এটুকু শেষ নয়, এখানে আরম্ভও নয়। …’                               (‘অপরাজিত’)

…… এবং আশা করা যায়, ‘দেবযান’ এবং ‘দেবযান’-এর সেই  সেই চির-গোধূলির দেশের…
‘…… পৃথিবীতে মাঝে মাঝে গোধূলির সময় মেঘলা আকাশে যেমন একটা অদ্ভুত হলদে আলো হয়; ঠিক তেমনি একটা মৃদু, তাপহীন, চাপা আলো গাছপালায়, গঙ্গার জলে, বুড়োশিবের মন্দিরের চুড়োয়। …’
যতীনদের সেই সাগঞ্জ-কেওটার বুড়োশিবতলার ঘাটেরা আমাদের সকলের প্রতিদিনের জীবনের সমস্ত ক্ষয়ের আড়ালে কোথাও নিশ্চয়’ই সম্পূর্ণরূপে অক্ষয় হয়ে আছে, চিরকালের জন্য হারিয়ে যায় নি। সময় মত অন্য সেই জীবন এসে আমাদের প্রত্যেককে প্রত্যেকের ভালো-লাগাদের সাথে সেই ঘাটগুলোয় ফের মিলিয়ে দিয়ে যাবে… আশা করা যায়… এরকম একটা আশা করাই যায়……

“… কখনও জলের শব্দে দিনের বাতাসে
তবু রোজ একবার বুঝে লই
হাঙরের পারে আজ নাই আর যারা
কোথাও—কোথাও তারা বেঁচে আছে।”          (জীবনানন্দ দাশ)

 

 

[ দুই]

রিসর্টের ঘরে আমার যেখানে শোওয়ার ব্যবস্থা হ’ল, ঠিক তার সামনেই একটা বড় জানালা। শুলে আমার পায়ের দিকে পড়বে। রাতের খাওয়ার পর খাটে বসে ‘সানডে সাসপেন্স’-এর পুরনো ভক্ত দিব্যেন্দু মৌরি মুখে দিয়ে আমার উদ্দেশ্যে বলল, “কি গরম রে! রাতে ওই জানালাটা তো খুলেই রাখতে হবে দেখছি!” তারপর গলা পালটে বলতে লাগল, “তা… হরির হোটেলে তো খেলে বিভূতি, এবার রাতে ওই জানালা দিয়ে যদি ভৌতিক কিছু চোখে পড়ে তাহলে সেটা কি খুব ভালো দেখাবে? রাত্রে হঠাৎ ঘুম ভেঙে হয়ত দেখতে পেলে যে জানালার বাইরে ওই গাছটার ডালে কেউ দোল খাচ্ছে,তখন… এই, একবার বল, ‘ও কে?… মুংলা!!’ বল, বল না!’’
এখানে বলে রাখা দরকার, আমার নাম কোন কালেই ‘বিভূতি’ নয়, ‘হরির হোটেল’-এর মত অন্য কোন এক ভূতের গল্পে দিব্যেন্দু এই নামের এক অশরীরীর পরিচয় পেয়েছিল, এবং সেই থেকে ওর কেন জানি না মনে হয়েছে যে আমিই বিভূতি। ‘মুংলা’ চরিত্রটা ও যোগাড় করেছে ‘অমরধাম’ গল্প থেকে। গাছের ডালে সেই মুংলার দোল খাওয়ার ব্যাপার আর ওই সংলাপটা ওখানেই ছিল। গল্পটা আমার জানা। ‘সানডে সাসপেন্স’ আমিও শুনি।

ওখানে বিভূতিভূষণের লেখা কিছু ভূতের গল্পও তো শুনেছি। খারাপ লাগেনি। বিশেষ করে ‘মায়া’ আর ‘অভিশপ্ত’ গল্প দুটো বেশ ভালোই লেগেছে। কিন্তু ‘আরক’ আর ‘গঙ্গাধরের বিপদ’ অতটা মনে ধরেনি। ‘আরক’-এর বিষয়টা ‘আরণ্যক’-এও পেয়েছি বলে মনে পড়ে। ‘তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প’ আমার অবশ্য আগে থেকেই পড়া ছিল। ভূতের গল্প এবং ভূতের সিনেমার প্রতি আমার একটা নেশা বরাবর আছে এবং সেই কারণেই বলব, বিভূতিভূষণের লেখা ওই শ্রেণীর গল্পগুলোকে ঠিক ভূতের গল্প না বলে বরং তাদের ভৌতিক বা অলৌকিক ঘরানায় সাজানো ছোটগল্প বললে বোধহয় খুব ভুল বলা হবে না।এই গল্পগুলো লেখা বা বলার মূল উদ্দেশ্য ভয় পাওয়ানো নয়, তার আড়ালে যেনঅন্য কিছু বলে দেওয়া। ভূত একটা আঙ্গিক কিংবা পার্শ্বচরিত্র মাত্র। গল্পগুলোর অধিকাংশই বুঝি লেখা হয়েছে ‘পরলোক আছে’—এই বিশ্বাস থেকে এবং এই বিশ্বাসকে একটা স্বাভাবিকতা দেওয়ার পরিণামে। অলৌকিকের প্রতি একটা আস্তিকতার সুর যেন বাজে। মানে, বেঁচে যে ছিল মানুষ, মরে অবিকল সেই তো ভূত! লোক এক, ভিন্ন শুধু ডাকনাম — এই রকম ব্যাপার।তাই হয়ত বিভূতিভূষণের অশরীরীদের অনেকে প্রায় মানুষের মতই, সুন্দরতর হতে পারে(‘আরক’-এর পরীর দল), কিন্তু খুব ভয়ানক বা কদর্য কখনওই নয়। এ’সব নিতান্ত ব্যক্তিগত উপলব্ধি; ভুল হতেও পারে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মণিহারা’-কেও আমি ওই সারিতে রাখি। তবে সেটার ব্যাপার বেশ আলাদা। যাক গে, ‘মণিহারা’-র কথা নাহয় অন্যদিন হবে… তা যে কথা বলছিলাম, বিভূতিভূষণের তৈরি ভূতেরা কখনওই ভয় দেখায় না, অসহ্য সাসপেন্স তৈরি করে না, অভাবনীয় টুইস্টে পিলে চমকিয়ে দেয় না। একটা অন্য ডাইমেনসানে নিয়ে যায়। অন্য একটা জগতের বাসিন্দাদের কথা শোনায় যারা আমাদের টাইম অ্যান্ড স্পেসের সমান্তরালেই কোথাও আমাদের সাথে সাথে নিয়মিত চলাফেরা করে চলেছে। এক সময় হয়ত তারা আমাদের মতই ছিল। এখনও কাছাকাছিই আছে, কিন্তু একটু অন্যভাবে। সহাবস্থানটা খুব অস্বাভাবিক তো নয়ই, বরং বেশ convergent। ভূতের এই মোলায়েম concept বিভূতিভূষণের সমকালীন আর কারও লেখায় মনে হয় নেই। ‘মায়া’ গল্পটা তাই আমার প্রিয়। ‘অভিশপ্ত’ আর আরেকটা গল্প (নামটা বোধহয় ‘পৈতৃক বাড়ি’ বা ওইরকম কিছু, ঠিক মনে পড়ছে না) খুব নস্ট্যালজিক, হাতের নাগালে একটা টাইম মেশিনের অভাব বোধ করায়। ‘গঙ্গাধরের বিপদ’-এ বাতাসে বিলীয়মান আমির খানের অসহায়তা তাকে আর একজন যথার্থ ‘ভূত’ থাকতে দিল ক’ই?

… কিন্তু এসব তো বাড়িতে করা বিশ্লেষণ।এখন দেখি মনে হচ্ছে যে ঘাটশিলার এই রাতের অপরিচিত প্রকৃতিতেওই নিরীহ চরিত্ররাই যে আচমকা একটু খোনা সুরে কথা বলে উঠতে পারে, এ আর বিচিত্র কি? বলা তো যায় না, বিভূতিভূষণ তো এখানে থেকেছেন, কিছু দেখে-ঠেকেও তো ওসব লিখে থাকতে পারেন… বাগানের ফোয়ারার দিকে শেষ রাতে চোখ পড়ে গেলে কি না কি দেখব বাবা কে জানে! আর পিছনের বারান্দা থেকে ফেরার সময় দরজার বাইরে যে রান্নার লোকটাকে টেবিলের উপর ঘুমোতে দেখে এলাম, তারও নিজস্ব একটা ছায়া আছে কি না সেটাও তো ছাতা ঠিক খেয়াল ক’রে দেখা হয় নি !! ……

সামান্য হাসাহাসি হলেও সে রাত্রে তাই জানালা-দরজা বন্ধ করেই শুয়েছিলাম। কেমন ঘুমিয়েছিলাম সেটা কি আর বলতে হবে?

[তিন]

‘…… তোমায় আমায় দেখা হল সেই মোহানার ধারে’

তোমার সাথে আমার প্রতিটা দেখা তো মোহনাতেই ছিল! তোমার এবং আমার মোহনা সেগুলো। পছন্দের সব দেখা-হওয়াগুলো এক-একটা মোহনা তৈরি করে। একটা ধারা থেকে আরেকটা ধারায় যাওয়ার পথ, অন্তত যাওয়ার সম্ভাবনাটুকু। দুটো আলাদা পথের স্রোত এসে ওই মুহূর্তটায় কিছুক্ষণ জড়িয়ে থাকে। ধারা দুটো সমুদ্রপ্রত্যাশী, কিন্তু সঠিক দিক তার নেই জানা। একে অন্যকে তাই ভুল নামে ডাকে। কখনও সমুদ্র মনে করে, কখনও ভাবে সমুদ্রে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম। কখনও ভ্রম ভাঙে, দূরে চলে যায় ধারা নিজেদের প্রয়োজনে। খালি ওই মুহূর্তটা সবসময়যায় না। নিজের চারপাশে খানিকটা পচা-জল নিয়ে কোন কোন সময় সে থেকেই যায়। এইভাবে আমাদের ভেতরে গজিয়ে ওঠে কিছু অ-ভৌগোলিক ‘মনুষ্যক্ষুরাকৃতি হ্রদ’…
…… আচ্ছা, আমাদেরও কি তেমন মোহনাই হ’ল? ……
… আকাশে কালো মেঘ, আলো প্রায় নেই বললেই হয়। সুবর্ণরেখা, চিত্রকূট এবং সবেমাত্র রাতমোহানা দেখে অটোয় চেপে এইসব অবান্তর জিনিসপত্র ভাবতে ভাবতে ফিরছি। রাতমোহানা থেকেই ছিটেফোঁটা বৃষ্টি সঙ্গ নিয়েছে। দূরে বেশ জোর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে শব্দহীনভাবে। চিত্রকূটে যে ছোটোখাটো ঝড়টার সামনে পড়েছিলাম সেটার উত্তরসূরি হিসেবে একটা ঠাণ্ডা ঝোড়ো হাওয়া এখনও সাথে রয়েছে। আমাদের অটো চলেছে বেশ একটা বড় মাঠের পাশ দিয়ে। মাঠের উপরের আকাশে মেঘের স্তর একটু পাতলা, একটা মরা আলো সেই ভাঙা মেঘেদের কিনারাগুলোতে লেগে আছে বিষণ্ণতার মত। ওই হলদে আলোটা আমি আগেও দেখেছি, কিন্তু এত বিয়োগান্তক কখনও মনে হয় নি।
অটোটা হঠাৎ বাঁয়ে বাঁক নি’ল, আর তখনই আমি দেখলাম রাস্তার ধারের একটা বড় গাছের নীচে একটা লোক একলা বসে আছে। ওই আবহাওয়ায়। বয়স আন্দাজ চল্লিশ, বেশ ভালো জামাকাপড় গায়ে; পাগল বা ভিখারি নয় লোকটা। কেন বসে আছে? কেউ কি আসবে? দরকারি কারও জন্য অপেক্ষায় আছে কি লোকটা? অটো এগিয়ে যেতে লাগল, মনে মনে আমি একটু পিছিয়ে গেলাম খালি।
… প্রসন্ন আমীন … বছর আটেক আগে পড়া ‘ইছামতী’-র সেই প্রসন্ন, আমীনকে আজ ফের মনে পড়ে গেল। কুটিল স্বভাবের এই লোকটির ভেতরেও একটা একতরফা বোবা প্রেম ছিল। অপরিণত, কুণ্ঠিত, প্রায়-সম্ভাবনাহীন অথচ নাছোড়বান্দা একটা ভালোবাসা। প্রথমে ‘গয়ামেম’; শেষে ‘গয়া’-র প্রতি। গয়ার ‘খুড়ো’ সম্বোধনেও সেটা দমে যায় নি। সেই প্রসন্ন আমীনও তো এরকমই এক মেঘলা সন্ধ্যায় বিলের ধারে গয়ার সাথে দেখা করার জন্য অপেক্ষমান ছিল। ছবিটা মনে পড়ে গেল। খুব ভালো লেগেছিল imagery-টা। বিভূতিভূষণের কোন প্রেমই বাঙালির সংসারকে, সংসারের প্রচলিত সংস্কার বা নিয়মকে অতিক্রম করে না, এখানেও তাই। কিন্তু আমার কাছে সবচেয়ে মজার বিষয় হল, শেষটা ভুলে গেছি; অথচ ওই বিলের ধারের ছবিটা মনে লেগে আছে। এতদিন পরেও ওই মেঘলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে থাকা মাঠটার কোন এক কোণ থেকে যেন গয়া ও প্রসন্ন আমীনের অস্পষ্ট কণ্ঠস্বর কানে আসছে।
……‘… খুড়োমশাই, বাড়ি যান! জোর বৃষ্টি আসছে, বাড়ি যান’ …… ‘ও গয়া, দাঁড়াও, … গয়া, শোন না!…’…… ‘বাড়ি যান’ ……

…… ভালোবাসাটা মেলে। গয়ামেমের সেই চলে যাওয়াটা কি কারও সঙ্গে মেলে ? … উঁহু, কার সাথে মেলে না ?? …..

[চার]

‘গৌরীকুঞ্জ’ এবং সেখানকার সংগ্রহশালা দেখলাম। যে বাড়িতে লেখক ছিলেন সেটা দেখা হল। ব্যক্তি বিভূতিভূষণের বাড়ি কি আর এটা? না, কোনোভাবেই মেলে না। ওই ডাইমেনসানে যাওয়ার ক্ষমতা নেই, তাই মিলছে না — এটাও হতে পারে। কিন্তু বক্তব্য সেটা নয়। গিয়ে যে জিনিসটা প্রথম নজরে পড়ল সেটা হচ্ছে দেওয়ালে ফ্রেম করে টাঙানো লেখকের দ্বারা ব্যবহৃত একটা ফতুয়া (শার্টও হতে পারে) আর একটা ধুতি। দুটোই সাংঘাতিক ময়লা আর জরাগ্রস্ত। লেখকের জীবদ্দশাতেই হয়ত তারা এই মূর্তি লাভ করেছিল। দেখে নিজের মনেই বলে উঠলাম, যেটা বহু আগেই ফেলে দেওয়া উচিত ছিল, শেষমেশ সেটাই কিনা থেকে গেল! নিজের কথায় নিজেরই সামান্য হাসি পেল।কথাটা টের পেয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও যে ওই মুহূর্তে নির্ঘাত হেসেছিলেন সেটা আমি জানি। তাই পরক্ষণে কথাটা একটু তলিয়ে ভাবতেই হাসিটা স্রেফ উবে গেল। … এটাই তো হওয়ার কথা। আমাদের পরে আমাদের সব কিছুতে আমরাআর কোথায়? তখন সাধারণের দৃষ্টিকোণ থেকে সবই তো ‘ফেলে দেওয়ার মত’ বলে মনে হবেই। চারপাশের যে গোলমালটার মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছি সেটা ততক্ষণই আমার যতক্ষণ তার ভেতরে আমি আছি, তার বেশী নয়। এই বাড়িটার কথাই ধরা যাক। অতএব পৃথিবীতে এই আমি-ই হলাম আমার একমাত্র কাছের ও কাজের জিনিস—এটা আবার বেশবোঝা গেল। লেখকের manuscript দেখে  অবশ্য আরেকটা জিনিসও জেনেছিলাম। সেটা হল, আমার হাতের লেখা খুব একটা ছোট নয়।

[পাঁচ]

… আমরা জেনেছি যারা পথঘাট মাঠের ভিতর
আরও আলো আছে এক ……

এই আলোটার কথাই মনে হয় লিখেছিলেন জীবনানন্দ দাশ। কাল ভোরবেলার ট্রেনে ফিরে যাব। অপু যে সময়ে কঞ্চি হাতে করে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলত বাড়ির পাশের জঙ্গলটায়, এখন সেই বিকেলবেলা। ঘোরা শেষ, রঙ্কিণী দেবীর মন্দির দেখে এবার রিসর্টে ফিরছি। শান্ত সূর্যের আলো একটা ফানেলের মধ্যে দিয়ে যেন এসে পড়েছে সামনের রাস্তাটার উপর। গাছের পাতাদের রঙ এখন কিছুটা কমলা। আর আমরা চলেছি রেললাইনের পাশের সেই রাস্তা ধরে। আমাদের সাথে তাল রেখে একটা ট্রেনও চলেছে একটু আগে-পিছে। ট্রেনটাকে অদ্ভুত লাগছে চোখে। অনেকটা অপুর দেখা ট্রেনের মত। খুব ছোটবেলায় বাবার সাথে ট্রেন দেখতে যেতাম। মনে আছে। বাবা আজ বেঁচে নেই। কিন্তু সেই ‘ট্রেন-দেখা’-র নজরটা যেন ফিরে এলো।বোধহয় ব্যাকগ্রাউন্ডের ম্যাজিক। পরিস্থিতির সাথে সঙ্গতিহীন একটা লাইন মাথায় এলো ‘অপরাজিত’-র শেষদিক থেকে— ‘…শুধু তাহার দিদি শুইয়া আছে’…। বুঝতে পারছি, সেই বিকেলের কবরখানার গেট আবার খুলছে। চারপাশের দৃশ্য, ওই ট্রেন, ওই আলোটা, উপরের ওই ছোট্ট লাইন এবং ওঁরা তিনজন — এই সব কিছু নিয়ে একটা ছবি তৈরি হল মনের ভিতর। ছবিটা এ’রকম ……
একটা বড় মাঠের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলেছি। মাঠটা একদম আমাদের প্রথম সেই স্কুলের মাঠটার মত দেখতে। স্কুলটাকেও যেন দেখলাম একঝলক। আমি চলেছি সে’সব পিছনে রেখে। আমার এগিয়ে চলার পথে এসে পড়েছে সেই কমলা রঙের প্রিজারভেটিভ রোদটা। সেটা বেয়েই চলেছি একরকম। সেই আলোর ভেতর উড়ছে ধুলো, রেণু। বেশ কিছু অস্পষ্ট কিন্তু চেনা-চেনা শব্দ শোনা যাচ্ছে হাওয়ার ভেতরে। পুরনো একটা গন্ধও আছে ওটায়। সামনে একটা কবরখানা। প্রতিটা ফলকে চেনা কিছু নাম, ঘষে-যাওয়া দু-একটা ছবি। গেটের সামনে আসতেই সেটা খুলে গেল। একটু ইতস্তত করেও শেষে পা বাড়ালাম। এখানকার সবকিছুতেই কোথাও যেন আমি আছি। আরেক অপূর্ব রায় টাইম ট্র্যাভেল করে আবার যেন তার ছোটবেলার সেই নীলকুঠির মাঠটা দেখতে এসেছে…
ঘুরে দেখতে দেখতে হঠাৎ দেখি আমার বহুদিনের সিনিয়র তিন বন্ধু কখন যেন আমার পিছনে এসে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। সচরাচর প্রায় প্রতিদিনই দেখা হয়, কোন সময় আবার বহুদিন যোগাযোগই থাকে না। কিন্তু এখানটায় যখনই আসি, ওঁদের সাথেই আসি। কোন কোন দিন না বলে এলেও কিভাবে যেন ওঁরা ঠিক এসে হাজির হন এবং এমনভাবেই আমার পিছনে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখেন… তারপর একটা সময়ে নিঃশব্দে আমার পথে আমার সাথে পা মেলান। আজও ডাকিনি, কিন্তু এসে পড়েছেন ওঁরা— রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ এবং বিভূতিভূষণ। আমরা চারজন একসাথে চুপচাপ এগিয়ে চলেছি আমার সেই আলোর পথটা ধরে… এগিয়েই চলেছি…আমাদের আলোকিত চারপাশটা ঠাণ্ডা একটা ঝিরঝিরে হাওয়ায় অল্প অল্প কাঁপছে… এবং এগিয়ে চলেছি আমরা … আরও এগিয়েই চলেছি ……

পুনশ্চঃ জীবনে যিনি কোন কিছু শেখান, চেনান বা বোঝান তিনিই ‘স্যার’ , যিনি ‘স্যার’ তিনিই শেখান— সবসময় এমনটা নয়। জীবন বেশ একটু পরিণত হলে ওই (প্রথম শ্রেণীর) ‘স্যার’-রা মনের চোখে বন্ধু হয়ে যান। প্রচণ্ড সম্মানিত বন্ধু। ওই তিন জনই আমার সেরকম ‘বন্ধু-স্যার’। এখানে শুধু আমার বিভূতি স্যারের নোটখাতাটার কিছু লাইনের টুকরো তুলে ধরলাম। যখন যেভাবে যেটুকু মনে এসেছে, ততটাই।খাতাটা অবশ্য সবসময় কাছে থাকে, উলটে-পালটে হামেশাই দেখি… ঘুরতে এসে এই ঘাটশিলার অনুষঙ্গে খালি আরেকবার ঝালিয়ে নেওয়া গেল আর কি !

Tags: ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ