ফিনল্যাণ্ডে অনুষ্ঠিত ‘শান্তি সম্মেলনে’ আমন্ত্রিত হয়ে আমরা কয়েকজন ভারতের প্রতিনিধি হেলসিঙ্কিতে আসি। সেখান থেকে আবার সোভিয়েট প্রতিনিধিগণের দ্বারা আমন্ত্রিত হয়ে লৌহ যবনিকার দেশ সোভিয়েট রাশিয়ায় বেড়াতে এসেছি। দেখছি এখানকার অনেক কিছুই অদ্ভূত কীর্তি। প্রাক বিপ্লব যুগের জার-সাম্রাজ্যের চোখ-ঝলসানো অপরিমেয় ঐশ্বর্য, আর তারই পাশে পাশে বিপ্লবোত্তর সোভিয়েট রাশিয়ার গড়ে তোলা বিপুল গণসম্পদ। কিন্তু ‘মস্কৌ’ এসে পর্যন্ত কেবলই মনে হয়েছে এই দেশেই তো রেয়েছে বিশ্বপুজিত এক মহামানবের মহান তীর্থ ক্ষেত্র!
সে তীর্থ দর্শন না করে কি ফেরা যায়? এতদূর আসাই যে বৃথা হবে।তাই, মস্কৌ শহরে পৌঁছেই অতিথি বৎসল নিমন্ত্রণ-কর্তাদের কাছে আমাদের অভিলাষ ব্যক্ত করলুম। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা হয়ে গেল আমাদের যাবার।
মিষ্টি রোদে ভরা এক প্রভাতে প্রাতরাশের পর বেলা দশটা নাগাদ আমরা আটজন ভারতীয় প্রতিনিধি দু’খানি সপ্তাসন বিরাট রাশিয়ান ‘জিম’ মোটরকারে উঠে রওনা হলুম ঋষি টলস্টয়ের আশ্রম ‘ইয়াস্নায়া পোলিয়ানা’ গ্রামের উদ্দেশে।
মস্কৌ থেকে টলস্টয়ের এই আবাস প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে। ইংরিজি হিসেবে প্রায় ১২৫ মইলের কাছাকাছি। মলোটভ কারখানার তৈরি ‘জিম’ হাওয়াগাড়ী যেন আমাদের উড়িয়ে নিয়ে চললো। গাড়ীতে সাত জনের বেশ আরামে বসে যাবার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু, আমরা ছিলুম এক এক গাড়ীতে মাত্র চারজন করে – মোট আটজন যাত্রী। প্রত্যেক গাড়ীতে একজন করে দোভাষী পথপ্রদর্শকও ছিলেন। এক জনের নাম শ্রীযুক্ত অ্যান্ড্রে। ইনি মস্কৌ য়ুনিভার্সিটিরি জনৈক স্নাতকোত্তর ছাত্র। আর একজন শ্রীযুক্ত য়ুরা। ইনি মস্কৌ রেডিয়োর একজন বিশিষ্ট কর্মচারী। এঁর পিতা ভারতে ‘টাস’ এজেন্সিতে আছেন শুনলুম। ইনিও ছাত্রজীবনে কিছুদিন ভারতে থেকে পড়াশুনা করেছিলেন।
ঘন্টা চারেকের মধ্যেই আমরা ঋষি টলস্টয়ের ‘ইয়াস্নায়া পোলিয়ানায়’ এসে পৌঁছলুম। টারম্যাকাদাম করা সুন্দর পথ বরাবর শহর থেকে গ্রামের মধ্যে চলে এসেছে। সারাটা পথের দু’ধারে রাশিয়ার কত গ্রাম, ক্ষেত আর চাষী মজুরদের কুটীর – দেখতে দেখতে চলেছি। মনে হচ্ছিল ঠিক যেন আমাদেরই দেশের পল্লী অঞ্চল। সেই কুঁড়ে ঘর, মাটির দেওয়াল,খড়ের চাল। কোথাও বা আগাগোড়াই কাঠের তৈরী বাড়ী। বাড়ীগুলির অবস্থা খুব ভাল বলে মনে হলো না। কতকটা জীর্ণ হয়েছে। কিছু ভেঙেও পড়েছে। রং চটে গেছে। মেরামত করা হয়নি অনেকদিন। রাস্তার দু’ধারে আমাদের দেশের মতোই জল নিকাশের জন্য খানা কাটা। ড্রেন নেই। তবে জলের কল হয়েছে। বিজলী বাতিও রয়েছে।
চাষী আর চাষী বউরা অধিকাংশই ক্ষেতে খালি পায়ে আর খালি গায়ে কাজ করছে। কারণ, এসময়টা ওখানে গরমকাল। মেয়েদের গায়ে জামা আছে। মাথায় রুমাল বাঁধা। শহরের মেয়েরাও এদেশে টুপী পরেন কম। প্রায়ই খালি মাথায় থাকেন। পথে বেরুলে রুমাল বাঁধেন।
আমরা সেখানে পৌঁছবা মাত্র আমাদের স্বাগত জানালেন টলস্টয়-পল্লী-ভবনের ম্যানেজার ও টলস্টয় মিউজিয়ামের ডিরেক্টর। দু’জনেই আমাদের বহু সমাদরে গ্রহণ করলেন। ভারতীয় প্রতিনিধি দলের মধ্যে আমিই বয়োজ্যেষ্ঠ বলে আমাকেই মুখপাত্র হয়ে সকলের সঙ্গে তাঁদের পরিচয় করিয়ে দিতে হল। চিরাচরিত প্রথা অনুসারে তাঁদের অভ্যর্থনা সূচক বক্তৃতার যথাযোগ্য উত্তরও দিতে হল। কিছুক্ষণ বিশ্রাম ও আলাপ-আলোচনার পর তাঁরা আমাদের নিয়ে এলেন নিকটস্থ একটি পরচ্ছিন্ন সুন্দর রেস্তোঁরায় মধ্যাহ্ন ভোজনের জন্য। এখানে খাবার টেবিল সাজানো হয়েছিল এমন কলা-কুশলতার সঙ্গে যে দেখামাত্র মনটি প্রফুল্ল হয়ে উঠলো। আহার্য দ্রব্যও প্রত্যেকটি সুস্বাদু ও সুরুচিকর। মনে রাখতে হবে এটা রাশিয়ার কোনও বড় শহরের বড় হোটেল নয়। অজপাড়াগাঁয়ের এক পল্লী সরাই।
গল্প করতে করতে খাওয়া হচ্ছিল। ভোজন শেষ হতে চারটে বেজে গেল। ম্যানেজার ও ডাইরেক্টর দু’জনেই বয়োবৃদ্ধ। এঁরা দু’জনেই দীর্ঘকাল টলস্টয়ের সান্নিধ্য লাভের সুযোগ পেয়েছিলেন। বিশেষ করে টলস্টয়ের বাড়ী-ঘরের তত্ত্বাবধায়ক কমরেড ভ্যালেন্টিন বুলগাকফ্ টলস্টয়ের শেষ জীবনে হয়েছিলেন তাঁর একান্ত সচিব, অর্থাৎ ‘পার্সোন্যাল সেক্রেটারী’। চারটে বেজে গেছে দেখে ব্যস্ত হয়ে ওঁরা আমাদের নিয়ে চললেন টলস্টয় মিউজিয়ামটি দেখাতে। কারণ, পাঁচটায়সেটি বন্ধ হয়ে যাবে। মিউজিয়ামের সম্মুখস্থ প্রাঙ্গণ ও উদ্যানটির বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়না বলেই মনে হল।
কিন্তু, মিউজিয়ামটির অভ্যন্তরে প্রবেশ করে দেখা গেল এখানে সযত্ন তত্ত্বাবধানের অশ্রান্ত পরিচয় সর্বত্র। শ্রীযুক্তচ বুলগাকফের বয়স শুনলুম সত্তর পার হয়েছে। ইনি সুপুরুষ। যৌবনে যে প্রিয়দর্শন ছিলেন তা বোঝা যায়। ইনি টলস্টয়ের ব্যক্তিগত জীবন ও কর্ম-জীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কিছুই বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে আমাদের বুঝিয়ে দিতে লাগলেন। তাঁর প্রতিদিনের কর্মজীবনের ভিতর দিয়ে ঋষি টলস্টয় আমাদের চোখের সামনে যেন মূর্ত হয়ে উঠছিলেন। মিউজিয়ামের নিচের তলায় অফিস, প্রেসিডেন্ট ও অধ্যক্ষের বসবার ঘর। দর্শকদের বিশ্রাম কক্ষ, গবেষকদের অনুশীলনাগার প্রভৃতি রয়েছে।
উপরতলায় সাজানো রয়েছে টলস্টয়ের জীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যত কিছু দ্রব্য সামগ্রী। টলস্টয়ের কলম, পেন্সিল, ঘড়ি, দেওয়াল পঞ্জী, রোজনামচার খাতা, তাঁর জামা পা’জামা জুতো মোজা টুপী লাঠি সব কিছুই সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। বুলগাকফের কাছে বার বার আমাদের জানা কথাটাই শুনলুম যে, ভারতের প্রতি টলস্টয়ের অসীম প্রীতি ছিল। কোনও ভারতবাসী রাশিয়ায় এসেছেন শুনলে তিনি তার সঙ্গে দেখা করবার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠতেন। বহু চিঠিপত্রের মধ্যে তাঁর এই প্রবল আগ্রহের পরিচয় পাওয়া যায়। টলস্টয় সম্বন্ধে বুলগাকফ নিজে একখানি বই লিখছেন জানালেন। শুনে, তাঁকে খুব উৎসাহ দিয়ে এলুম।
এই মিউজিয়মে টলস্টয় সংক্রান্ত যাবতীয় জ্ঞাতব্য তথ্যই সংগৃহীত রয়েছে। তাঁর অসংখ্য চিঠিপত্র, গ্রন্থাবলীর নানা সংস্করণ, পুস্তকের পাণ্ডুলিপি, বিভিন্ন বিদেশী ভাষায় তাঁর যত বই অনুবাদ হয়েছে সবগুলিই জড়ো করে এখানে সাজিয়ে গুছিয়ে নম্বর দিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁর হাতের লেখা কাগজপত্র, নানা বয়সের আলোকচিত্র প্রভৃতিও সযত্নে রক্ষিত। মহাত্মা গান্ধীর লেখা পত্রাবলীও সযত্নে রাখা হয়েছে।
এখান থেকে বেরিয়ে আমরা ঋষি টলস্টয়ের গার্হস্থ আশ্রম দেখতে গেলুম। এটিও পাঁচটার পর বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু স্বয়ং তত্ত্বাবধায়ক ও অধ্যক্ষ মহাশয়রা সঙ্গে থাকায়, তাঁদের কৃপায় পাঁচটা বেজে যাওয়া সত্ত্বেও বিশেষ অনুমতি বলে আমরা সেখানে প্রবেশাধিকার পেলুম।
ঋষি টলস্টয়ের আবাস গৃহ।
অত্যন্ত সম্ভ্রমের সঙ্গেই আমরা তাঁর বাড়ীর সুবৃহৎ প্রবেশদ্বার অতিক্রম করলুম। ঘন তরু বীথি সমাচ্ছন্ন বিশাল উদ্যান পরিবেষ্টিত সে বাড়ী। প্রবেশ পথেই রয়েছে তাঁর একটি আবক্ষ মর্মর মূর্তি। বাগানের পথ অতিক্রম করবার সময় তাঁরা দেখালেন – রিং-দোলনা, প্যারালাল বার, যা নিয়ে তিনি ব্যায়াম করতেন। ডাম্বেল এবং মুগুরও ভাঁজতেন। এই যে পাথর খানি দেখছেন এটি তাঁর বাড়ীর ভিত্তি-প্রস্তর। এই যে গাছের তলায় বেঞ্চগুলি পাতা রয়েছে এখানে তাঁর দর্শনার্থী ও সাহায্য প্রার্থী কৃষকেরা অপেক্ষা করতেন। তিনি প্রত্যহ এখানে এসে তাদের অভাব অভিযোগ শুনতেন এবং সাধ্যমত তার প্রতিকারও করতেন। ‘লাঙল যার জমি তার!’ এ ঋষি টলস্টয়েরই মহৎ বাণী। তিনি নিজের জমিদারীর সমস্ত কৃষিযোগ্য জমি ভূমিহীন চাষীদের মধ্যে বিতরণ করে দিয়েছিলেন। সেজন্য তাঁকে প্রভূত পারিবারিক অশান্তি ও লাঞ্ছনা ভোগ করতে হয়েছিল। শেষটা এতই দুঃসহ হয়ে ওঠে যে তিনি গৃহত্যাগ করিতে বাধ্য হন।
কাউন্ট লিয়ো টলস্টয় সম্ভ্রান্ত বংশের একজন অভিজাত জমিদার হয়েও নিজের জমিতে নিজের হাতে লাঙল দিতে লজ্জাবোধ করতেন না। তিনি বলতেন, অপরের উৎপাদিত শস্যে জীবন ধারণ করা মানুষের জীবনের চরম লজ্জা। বুলগাকফের কথা শুনতে শুনতে দীর্ঘ উদ্যান পথ অতিক্রম করে আমরা এইবার তাঁর বাড়ীতে এসে পড়লুম। এখানে জুতো খুলে রেখে এঁরা যে মোটা পশমি কাপড়ের জুতো ধার দেন দর্শকদের তাই পায়ে দিয়ে যাবার নিময়। কারণ, জুতোর ধূলো কাদা এই পবিত্র গৃহের নানা স্থান নোংরা করে দিতে পারে। তাছাড়া কাঠের মেঝে ও কাঠের সিঁড়িতে একসঙ্গে অনেক জোড়া জুতোর বিশ্রী শব্দও বিরক্তিকর হয়ে ওঠে।
বাড়ীতে ঢুকে প্রথমেই ডানদিকে দেখালেন ‘রিসেপশান হল’, এখানে মাননীয় অতিথি অভ্যাগতরা টলস্টয়ের সঙ্গে দেখা করতে এলে অপেক্ষা করতেন। তারপর লাইব্রেরী এবং বসবার ঘর বা ড্রয়িংরুম। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে পাওয়া গেল টলস্টয় পরবিারের নিজেদের পারিবারিক ড্রয়িংরুম। দেয়ালের গায়ে পূর্বপুরুষদের তৈল চিত্রগুলি সাজানো রয়েছে। শয়নকক্ষ, ভোজনাগার, বাথরুম, তাঁর স্ত্রীর বসবার ঘর ও শয়নকক্ষ। বৃদ্ধ বুলগাকফ আমাদের নিয়ে ঘুরে ঘুরে সব দেখাতে ও বোঝাতে লাগলেন। অক্লান্তভাবে আমাদের অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলেন। সঙ্গে সঙ্গে সেই মহামানবের জীবনের চিত্তাকর্ষক ইতিহাসও শোনালেন। নিজেই নিজের ঘর পরিস্কার করতেন তিনি। ভৃত্যদের সাহায্য নিতেন না।
যেটি যেখানে যেমন ছিল তাঁর জীবদ্দশায় ঠিক সেটি তেমনি অবস্থায় সেইখানেই সযত্নে রাখা রয়েছে। রাশিয়ার এই বিশ্বপূজিত মানুষটি কোন ঘরে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন। কোথায় কোন টেবিলে বসে তিনি একাগ্রচিত্তে তাঁর অমূল্য গ্রন্থরাজি রচনা করতেন। কোন ঘরে থাকতেন তাঁর বন্ধু ও অতিথি ডাক্তার মেচনেকফ যাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে তিনি গোপনে তাঁর এই পৈতৃক পল্লীভবন পরিত্যাগ করে জন্মের মতো নিরুদ্দেশ যাত্রা করেছিলেন, সবই তিনি আমাদের বিশেষভাবে দেখালেন ও বোঝালেন।
ক্রমে বাড়ীখানির সবটুকু খুঁটিয়ে দেখে আমরা পিছনের একটি সরু পথ দিয়ে বাইরে মাঠের ধারে এসে পড়ি। এখানে একটি বিশাল মহীরুহ আছে। এঁর নাম হয়ে গেছে ‘নিঃস্বের বনস্পতি!’ সেই ‘গরীবের গাছ’ স্পর্শ করে ধন্য বোধ করলুম। দরিদ্র ও নিপীড়িত মানব সমাজের অকৃত্রিম বন্ধু, উদার হৃদয়, মহান চরিত্র সেই দার্শনিক ও চিন্তানায়কের প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত ক’রে আমরা ক’জন ভারতবাসী আমাদের মিলিত সভক্তি প্রণাম জানালুম। বিলাশ ও ঐশ্বর্যের আরামদায়ক জীবনকে তুচ্ছ ক’রে বংশমর্যাদা ও আভিজাত্যগর্ব পরিহার করে যিনি দরিদ্রের বন্ধু হয়েছিলেন, সেই মহাপুরুষের উদ্দেশে আমাদের হৃদয়ের উচ্ছ্বসিত ভক্তি নিবেদন করে দিলুম।
এখান থেকে মাইলখানেক দূরে ‘গ্রীণস্টীক’ উপত্যকায় একটি ঘনছায়াচ্ছন্ন দেবদারু কুঞ্জের মধ্যে আমরা দেখতে গেলুম এই মহামতির নশ্বর দেহাবশেষের শেষ আশ্রয় যে সমাধি গর্ভে স্থান পেয়েছে। তিনি অনেকবার বলতেন, একজন মানুষের পক্ষে ছ’ফুট জমিই তো যথেষ্ট, যেখানে তাঁর মৃতদেহ স্বচ্ছন্দে কবরশায়ী হতে পারে।
যেমনি নির্জন, শান্তিপূর্ণ ও ছায়াসুশীতল সেই বনভূমি, তেমনি সেই স্তব্ধ পরিবেশের মধ্যে মহামনীষীর অনাড়ম্বর সমাধিটি। ছ’ফুট লম্বা একটি অতি সাধারণ মাটির কবর। কোন প্রস্তরে রচিত, স্থাপত্য কলায় অলংকৃত সুদৃশ্য গঠন মন্দির নেই। কোন পাষাণ ফলকে উৎকীর্ণ তাঁর গুণাবলীর শিলা-লিপি নেই। সেই মৃত্তিকার অতি সাধারণ কবরটি আচ্ছন্ন করে রয়েছে শুধু নবদুর্বা সদৃশ গুচ্ছ গুচ্ছ শ্যামল তৃণদল। তাঁর স্বহস্ত রোপিত দেবদারু তরুগুলির প্রসারিত শাখাবাহু থেকে মাঝে মাঝে যেন পুষ্পার্ঘের মতো চ্যুতপল্লব ঝরে ঝরে পড়ছে। সমস্ত মন যেন একটা অভূতপূর্ব ভক্তিশ্রদ্ধায় ভরে উঠলো।
টলস্টয়ের অন্তিম ইচ্ছাই ছিল যেন তাঁর কবর সামান্য একজন দীন দরিদ্র মানুষের সাধারণ সমাধির সমতুল্য হয়। তিনি বলে গিয়েছিলেন – কোন পাষাণবেদী বা সমাধিমন্দির স্থাপন কোরনা কেউ আমার মৃতদেহকে আবৃত করে। কোন শিলা-লিপিতে যেন আমার পরিচয় উৎকীর্ণকরে সেখানে প্রোথিত করা না হয়। তাঁর শেষ ইচ্ছা দেশবাসী পরম নিষ্ঠা ও শ্রদ্ধার সঙ্গেই পালন করেছেন। ততাপি দেখা গেল – সেই অতি সাধারণ কবরও মহাপূরুষের আপন মহমিায় অসাধারণ হয়ে উঠেছে!
ভারতবন্ধু মনীষী টলস্টয়ের মহত্ব সম্বন্ধে আমাদের অনেকেরই আজও সম্যক ধারণা নেই। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ-যুগ থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথম পাদ পর্যন্ত শিক্ষিত ভারতবাসী মাত্রেরই মুখে মুখে তাঁর নাম শোনা যেত। আজও আমরা অনেকেই জানিনা যে তিনি কতবড় একজন ভারত-প্রেমিক ছিলেন। তাঁর জীবনে, তাঁর সাহিত্যে, তাঁর পত্রাবলীতে অপরিমেয় মানবপ্রীতি, স্বাধীনতানুরাগ, কঠোর ন্যয়নিষ্ঠা, হিংসা ও নির্যাতনের প্রতি অপরিসীম ঘৃণার পরিচয় পাওয়া যায়। সুদীর্ঘ জীবনের বেশির ভাগই তিনি ব্যয় করে গিয়েছেন জনকল্যাণের দুরুহ কর্তব্যপালনে।
ইং ১৮২৮ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মৃত্যু হয় ১৯১০ সালে। দীর্ঘায়ু পেয়েছিলেন তিনি – এটা শুধু আমাদেরই সৌভাগ্য নয়, রাশিয়ার ও পৃথিবীরও সৌভাগ্য। বিশ্বের সৃজনধর্মী সাহিত্যের ক্ষেত্রে তাঁর লেখনীতে যে বলিষ্ঠতার পরিচয় ছিল তা অনন্য-সাধারণ। তাঁর মৃত্যুর মাত্র সাত বৎসর পরেই নিষ্ঠুর জার-স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে রুষ জনগণের মহাবিপ্লব দেখা দেয়। বিপ্লবী নেতা মহামতি লেনিন কৃতজ্ঞচিত্তে স্বীকার করেছেন যে এতবড় বিপ্লব সম্ভব হয়েছিল শুধু নিপীড়িত জনগণের মুক্তিকামী এই মহামানব প্রেমিকের দীর্ঘ অনলস তপস্যার তেজে। দরিদ্র দুর্বল অসহায় মানুষদের উপর শক্তিশালী বলদর্পীদের নিষ্ঠুর উৎপীড়ণ ও শোষণের বিরুদ্ধে তিনি যে বীর্যবানের মতো অসম সাহসিকতার সঙ্গে কলম ধরেছিলেন তারই প্রভাবে সোভিয়েট বিপ্লব ভাস্বর হয়ে উঠেছিল।
সম্ভ্রান্ত বনিয়াদী গোষ্ঠিতে তাঁর জন্ম। ‘কাউন্ট’ উপাধি ছিল তাঁদের বংশগত রাজকীয় মর্যাদার পরিচায়ক। কিন্তু, টলস্টয়ের চিন্তা ও ভাবনা তাঁকে যে আদর্শের দিকে পরিচালিত করেছিল তাতে ক্রমেই তিনি অভিজাত শ্রেণী থেকে দূরে সরে আসছিলেন। ধনী ভূস্বামীদের নর্মিম নিষ্পেষণে দেশের যে শ্রমিক ও কৃষক সম্প্রদায় নিঃস্ব ও নিরুপায় হয়ে পড়ছিল তাদের প্রতি অপরিসীম সহানুভূতিতে তাঁর অন্তর ভরে উঠছিল। বঞ্চিত জনগণের বেদনাই তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছিল ‘সংগ্রাম ও শান্তি’র (ওয়ার এণ্ড পীস) মতো একখানি সুবৃহৎ উপন্যাস রচনা করতে। ‘এপিক নভেল’ বোধ করি একেই বলা চলে। ভবিষ্যত ভারতের মুক্তির জন্য প্রয়োজন এঁরই মত মানুষের।
‘সংগ্রাম ও শান্তি’ বইখানির মধ্যে তিনি শুধু মানব চরিত্র চিত্রণেই তাঁর অসাধারণ দক্ষতা প্রকাশ করেননি, প্রকাশ পেয়েছে ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে সংঘটিত বিপর্যয় অনুশীলনে তাঁর আশ্চর্য বাস্তব বোধ। তাঁর প্রগতিমূলক চিন্তা ও আলোচনায় প্রকাশ পেয়েছে জনগণের দেশাত্মবোধ থেকে উৎসারিত এক দুর্নিবার প্রচণ্ড উৎস। এই সুবৃহৎ উপন্যাস খানির প্রকৃত নায়ক ও প্রধান চরিত্রই হল সামন্ততন্ত্রে উৎপীড়িত ও বিদেশী শত্রুর আক্রমণে বিপন্ন রাশিয়ার দেশরক্ষায় দৃঢ়সংকল্প জনসাধারণ। ১৮১২ খৃষ্টাব্দে দিগ্বিজয়ী নেপোলিঁয়োর মস্কৌ অভিযানকে টলস্টয় এঁকেছিলেন এক জনযুদ্ধরূপে। অত্যাচারীর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা ও দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যুদ্ধকে তিনি সেদিন ন্যায়সঙ্গত বলে স্বীকার করলেও যুদ্ধকে তিনি প্রকৃত শান্তির পথ বলে মেনে নিতে পারেননি।
নেপোলিঁয় পরিচালিত ফরাসী অভিযানের সেই ব্যর্থতাকে তিনি পররাজ্যলোলুপ আক্রমণকারীদের নৈতিক অধঃপতন ও মানসিক দৈন্য বলেই নির্দেশ করেছিলেন। রুশ জনসাধারণের জয়কে তিনি দেশাত্মবোধের জয় ও ন্যায়নীতির জয় বলে ঘোষণা করেছিলেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে জার্মাণীর পরাক্রান্ত বাহিনীর দুর্ধ্বর্ষ আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করেছিল রুশ জনগণের মনের উপর টলস্টয়ের এই ‘সংগ্রাম ও শান্তির’ অপ্রতিহত প্রভাব। তাই টলস্টয়ের আসন রুশ বিপ্লবীদের সবার হৃদয়ের উপর সুদৃঢ় শ্রদ্ধায় সুপ্রতিষ্ঠিত।
টলস্টয়ের দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘আনা কারনিনা’ কথাশিল্পের এক অপূর্ব অবদানরূপে সাহিত্যক্ষেত্রে আত্মপ্রকাশ করেছিল। অভিজাত সমাজের এক নীতিভ্রষ্ট যুবকের প্রবঞ্চনায় ক্ষত বিক্ষত এক প্রেম-বিহ্বলা মহিয়সী নারীর জীবনের শোচনীয় পরিণাম দেখতে পাই আমরা এই উপন্যাসখানিতে। কিন্তু, এইটুকুই তার একমাত্র প্রতিপাদ্য বস্তু নয়। এই বইখানি লিখেছিলেন তিনি ১৮৭০ থেকে ১৮৭৯ সালের মধ্যে। এই সময় রাশিয়ায় ধনী অভিজাত সম্প্রদায়ের সামাজিক ও নৈতিক অত্যচার চরম অবস্থায় এসে পৌঁছেছিল। ‘আনা কারনিনা’র প্রধান আলোচ্য ছিল ভূস্বামী ও চাষীর তিক্ত সম্পর্কের আনুষঙ্গিক সামাজিক সমস্যামূলক প্রশ্ন!
১৮৮১ সালে তিনি মস্কৌ এসে দীর্ঘকাল অবস্থান করেছিলেন। মস্কৌ শহরে তাঁর এই বাড়ীখানি সযত্নে সংরক্ষিত হয়েছে। বহু যাত্রী এইটিও দেখে যান। এই সময় থেকে তাঁর মতের ও আদর্শের ক্রমশঃ পরিবর্তন হ’তে দেখা যায়। তাঁর পরবর্তী রচনাগুলির মধ্যে এক নূতন দৃষ্টিভঙ্গীর পরিচয় পাওয়া যায়। মস্কৌ এসে তিনি অসহায় দীন দরিদ্র নগরবাসীদের যে অপরিসীম দুর্দশার প্রত্যক্ষ পরিচয় লাভ করেন, তাঁর পরবর্তী কয়েখানি গ্রন্থে সে বেদনার সকরুণ অভিব্যক্তি চোখে পড়ে। ‘রেসারেকশান’ উপন্যাস খানিতে টলস্টয়ের মনের এই বিরোধ ও পরবির্তন বেশ ভালভাবেই ফুটে উঠেছে দেখা যায়। ‘রেসারেকশান’ বই খানির মধ্যে তিনি তীব্র কশাঘাত করেছেন জারশাসিত রাশিয়ার ধনী অভিজাত শ্রেণীর যতরকম অন্যায় অত্যচারমূলক অনুষ্ঠানের উপর। কাউকে তিনি রেহাই দেননি। জার স্বৈরতন্ত্রের স্বেচ্ছাচারী শাসনের আমলে বিচার বিমুখ আইন আদালত, ধর্মভ্রষ্ট গীর্জা ও পুরোহিত সম্প্রদায়, নীতিভ্রষ্ট অভিজাত শ্রেণী, উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীদের দুর্নীতিপরায়ণতা, পুলিশ ও সৈন্যবাহিনীর উচ্ছ্বঙ্খলতা, রাষ্ট্রীয় ও সমাজ ব্যবস্থার দুর্বলতা – সব কিছুকেই তিনি নির্মমভাবে কশাঘাত করেছিলেন। এই সব অন্যায় অধর্মের প্রতিকার হিসাবে তিনি আত্মশুদ্ধি, প্রেম ও সত্যের প্রতি অনুরাগ, হিংসার বিরুদ্ধে অহিংস মনোভাব, দুর্বল মানুষকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি নিয়ে ভালবাসতে শেখা ইত্যাদি নৈতিক উচ্চ আদর্শও প্রচার করেছিলেন। কিন্তু, হ’লে কি হবে ? ‘রেসারেকশান’ লেখার ফলে ঋষি টলস্টয়কে সেদিন সমাজচ্যুত হতে হয়েছিল!
সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল এই মহামানব-প্রেমিকের লেখনী থেকেই। তিনি যেমন পুঁজিবাদী ধনতন্ত্রকে ধিক্কার দিয়ে গেছেন, তেমনি কায়মনে সামন্ত্রতন্ত্রের উচ্ছেদ কামনা করে গেছেন। তাঁর লেখনী পরিচালিত হয়েছে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির বিরুদ্ধে, যুদ্ধের নামে অগণিত নরহত্যার বিরুদ্ধে। তিনি শান্তি ও কল্যাণের মন্ত্রই উচ্চারণ করে গেছেন। তাঁর ‘সিবাস্টোপোল স্টোরিজ’ এবং ‘ওয়ার এণ্ড পীস’ বইগুলিতে শত্রুনিবহনিধনের যে রণচারণ-বাণী পাওয়া যায়, পরবর্তী রচনায় তা নেই। তিনি তখন শান্তি, প্রেম ও অহিংসার আদর্শ পূজারী। এই গুণেই তিনি ভারতবাসীদের হৃদয় জয় করতে পেরেছিলেন এবং ভারতের প্রতি তাঁর প্রীতি ও শ্রদ্ধার মূলে কাজ করেছিল সেই ‘অহিংসা পরমোধর্ম’ বাণী। ভারতের সেই সর্বজীবে সেবা ও দয়ার আদর্শ।
বিদেশী শাসকদের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর বিদ্রোহের প্রতি বরাবরই তাঁর গভীর সহানুভূতি ছিল! ১৮৫৭-৫৮ সালের ‘সিপাহী বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধকে তিনি আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। ভারতের মুক্তি সংগ্রামের সেই প্রাথমিক প্রচেষ্টাকে যুবক টলস্টয় ভাবি বন্ধন মোচনের পথে প্রথম পদক্ষেপ ব’লে বর্ণনা করে গিয়েছেন। তিনি ভারতের বিবরণ শুধু সংবাদপত্র থেকেই সংগ্রহ করতেন না, ভারত সংক্রান্ত নানা গ্রন্থও সংগ্রহ করে পড়তেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সৈনিকদের, দেশ-প্রেমিক ভারতীয় মুক্তিযোদ্ধাদের উপর ইংরেজ সরকার যখন অমানুষিক অত্যাচার শুরু করেন, টলস্টয় তার বিরুদ্ধে দারুণ ক্রোধ প্রকাশ করেছিলেন এবং কঠোর শ্লেষপূর্ণ উক্তির দ্বারা তার প্রবল প্রতিবাদ লিপিবদ্ধ করেছিলেন। তাঁর জীবনের শেষ দিকে তো দেখতে পাই ঔপনিবেশিক নীতির তীব্র বিরোধিতা, পররাজ্য গ্রাস ও নিজেদের মধ্যে ভাগ বাঁটোয়ারা করে নেওয়া, দুর্বল জাতির উপর নির্যাতন, শাসন ও শোষণ, ব্যবসা সম্প্রসারণের নামে দুনিয়ার বাজার দখল করে একচেটে অধিকার স্থাপন প্রভৃতির বিরুদ্ধে বারবার ধিক্কার জানিয়ে তাঁর প্রচণ্ড ঘৃণাও প্রকাশ করে গেছেন।
পরাধীন ভারতের বিবিধ সমস্যা নিয়ে বিশিষ্ট ভারতবাসীদের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলতো। বিদেশীর বন্ধন চাপে নিষ্পেষিত ও শৃঙ্খলভারে জর্জরিত ভারতবাসী তাঁর কাছে এহেন আন্তরিক সহানুভূতি ও সমবেদনা লাভ করে তাঁকে ভারতের অকৃত্রিম হিতৈষী ও অকপট বন্ধু বলে স্বীকার করে নিয়েছিল। টলস্টয় মিউজিয়মের পত্র সংকলনে দেখা যায় – প্রথম চিঠি লেখেন তাঁকে মান্দ্রাজের ‘আর্য’ পত্রিকার সম্পাদক শ্রীরামকৃষ্ণাণ। ব্রিটীশ শাসকদের হিংস্র অত্যাচারের হাত থেকে নিরীহ ভারতবাসীদের রক্ষার ব্যবস্থা করতে তাঁকে সনির্বন্ধ অনুরোধ করা হয়েছিল। আমেরিকায় প্রকাশিত ‘লাইট অফ এশিয়া’ পত্রিকার সম্পাদক শ্রীমৎ প্রেমানন্দ ভারতীও ভারতের দুর্দশার ‘কথা টলস্টয়কে পত্র লিখে জানিয়েছিলেন। মান্দ্রাজের ‘নিউ রিফর্মার’ পত্রিকার সম্পাদক ভি, গোপালন মিট্টি এবং গুরুকুল কাঙরির ‘বৈদিক’ পত্রিকার প্রকাশকও তাঁকে পত্র লিখে আধ্যাত্মিক ও নৈতিক দিক থেকে ভারতের মুক্তির জন্য সচেষ্ট হতে অনুরোধ জানান। টলস্টয়ের অহিংস মতবাদের বিরুদ্ধেও কোনও কোনও শিক্ষিত ভারতবাসী প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন দেখলুম। যেমন ‘ফ্রী হিন্দুস্থান’ পত্রিকার সম্পাদক শ্রীতারাকান্ত দাস। এ পত্রের উত্তরে টলস্টয় যে শান্ত সুন্দর সুদীর্ঘ পত্র দিয়েছিলেন সেই তাঁর ‘জনৈক হিন্দুকে লেখা পত্র’ সুদূর আফ্রিকায় কর্মরত দেশপ্রেমিক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রকৃতপক্ষে গান্ধীজী তাঁর কর্মজীবনের প্রভাতে টলস্টয়কে অহিংসার আদর্শ গুরুরূপে মেনে নিয়েছিলেন।
ভারতের মুক্তিসাধনায় মহাত্মা গান্ধীকে সর্বপ্রথম প্রেরণা দিয়েছিল ঋষি টলস্টয়ের উৎসাহপূর্ণ ও উদ্দীপনাময় পত্রাবলী। সাউথ-আফ্রিকায় ব্রিটীশ ঔপনিবেশিকদের নিষ্ঠুর অত্যাচার এবং ভারতবর্ষে ইংরেজের নৃশংসলীলা নিয়ে মহাত্মা গান্ধী বহুবার তাঁর সঙ্গে পত্রালাপ করেছিলেন। ‘ইয়াস্নায়া পোলিয়ানা’র টলস্টয় মিউজিয়মে প্রত্যেক চিঠিখানি সযত্নে রক্ষিত আছে। সময়াভাবে সমস্ত চিঠি খুঁটিয়ে পড়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। শুধু চোখ বুলিয়েই আসা হয়েছে।
শোনা গেল টলস্টয়ের বৃদ্ধ বয়সের নিত্য সঙ্গী এবং তাঁর ব্যক্তিগত বা একান্ত সচিব কমরেড ভ্যালেন্টিন বুলগাকফ টলস্টয়ের একখানি সুবৃহৎ জীবনী সংকলন করেছেন। আমরা সেই বইখানির জন্য আশান্বিত হ’য়ে এই মহা মনীষীর আবাসতীর্থ ‘ইয়াস্নায়া পোলিয়ানা’র ধুলি স্পর্শে ধন্য হয়ে রাত্রি আটটায় মস্কৌ অভিমুখে ফিরলুম। পৌঁছতে রাত্রি ১২টা বেজে গেল। তা হোক, তবু এ তীর্থ যাত্রার আনন্দস্মৃতি জীবনে অক্ষয় হয়ে থাকবে।
[লেখকের নিজস্ব বনান অপরিবর্তিত ]
Tags: ঋষি টলস্টয়, নরেন্দ্র দেব
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।