৭ এপ্রিল, ১৯৮৫। রবিবার। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় হাসপাতাল থেকে বাড়ি এসেছেন। এবং একটু ভাল আছেন শুনে সকালবেলা গেলাম তাঁর কাছে। ইচ্ছে ছিল জেনে নেব কিছু কথা। সঙ্গে ছিলেন ‘এসময়’-এর সম্পাদক সুমিত চট্টোপাধ্যায় আর কল্লোল দাশগুপ্ত। কিছু পরে এলেন কবি সমীর রায়।
পরিচ্ছন্ন ছোট ঘরটিতে বালিশে ভর দিয়ে বসেছিলেন তিনি। শীর্ণ শরীর — নিশ্চয়ই কষ্টও ছিল কিছু। কিন্তু দূরারোগ্য ব্যাধির কালো ছাপ পড়েনি তাঁর মুখে বাঁ কথায়। তাঁর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় খুব নিবিড় ছিল না। কিন্তু যে মুক্ত সরল বাক্যালাপ শুনেছিলাম সাত বছর আগে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আলোচনা-চক্রে যে উজ্জ্বল উপস্থিতি দেখেছিলাম কয়েক বছরের বইমেলায় লিটল ম্যাগাজিনের স্টলগুলির সামনে – সেই অমলিন প্রাণময়তায় সেদিনও ঘাটতি ছিল না কোথাও। তিনি কথা বলেছিলেন, হাসছিলেন – আমার প্রশ্নের জবাব দিতে তক্ষুনি রাজি। জিজ্ঞেস করলাম, – ‘কথা বলতে কষ্ট নেই তো?’ বললেন, – ‘না। কাগজ পেন্সিল নিয়ে বসেছেন যে – লিখবেন না কি?’ বললাম, – ‘একটু লিখি। সব কি মনে রাখতে পারব?’ হাসলেন – ‘কিন্তু যে কথাগুলি গোপন রাখতে বলব তা লিখতে পারবেন না।’ বললাম, – ‘কোন কথাগুলি গোপনীয় তা বলে দেবেন।’ মাঝে মাঝে আসছিলেন শ্রীমতী চট্টোপাধ্যায়। শরবত দিলেন। ক্বচিৎ দু’একটি কথাতেও যোগ দিচ্ছিলেন। সহজ ও সরস পরিবেশে কথা শুরু হল। সদ্য হাসপাতাল প্রত্যাগত ক্যানসার রোগীর ঘরে কি করে সেই সরসতা সম্ভব হয়েছিল আজ ঠিক কল্পনা করতে পারছি না। কিন্তু হয়েছিল। সেই সকালটির কথা কখনই ভুলব না।
প্রশ্নঃ বামপন্থী চিন্তাভাবনা কবে থেকে শুরু করলেন?
উত্তরঃ জগবন্ধু ইন্সটিটিউশন-এ ক্লাস সেভেন-এ পড়ার সময় টেররিস্টদের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে। এক বন্ধু একদিন আড়ালে ডেকে বলল, ‘মরতে ভয় পাস?’ সে বয়সে ও কথার একটাই উত্তর হয় — ‘না।’ সে পাড়ার দু’একজন নেতার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিল। অনুশীলন দল। দলের ভেতরের কথা সামান্যই জানতাম। দেশ স্বাধীন করতে হবে – এটুকুই বুঝেছিলাম। কাজ বলতে চিঠিপত্র আর খবর পৌঁছে দেওয়া ছাড়া কিছুই করিনি। কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নানা প্রশ্ন জাগল। তাঁদের শিক্ষা ছিল নাটক-নভেল পড়বে না, ধর্মগ্রন্থ পড়বে, মেয়েদের দিকে তাকাবে না – এসব যুক্তিসঙ্গত লাগত না। ছেলেবেলা থেকে বই পড়েছি প্রচুর। বাবার বাক্সভর্তি বই ছিল। ইংরেজি, বাংলা। ক্রমেই দলাদলি ও সংকীর্ণতার আভাস পাচ্ছিলাম। নেতাদের ওপর শ্রদ্ধা থাকছিল না। একদিন একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি কথা প্রসঙ্গে পূর্ববঙ্গমিশ্রিত কটূক্তি করেন। খুব আঘাত পাই। আমি তো বাঙাল নিশ্চয়ই। তাঁর দলে পূর্ববাংলার কত ছেলে আছে। আমি তো তাঁর কথায় প্রাণ দেবার জন্য প্রস্তুত অথচ তিনি কত গভীরভাবে ঘৃণা করেন আমাদের। তখন ক্লাস টেন-এর ছাত্র। তারপরই দল ছেড়ে দিলাম। দলেরও তখন ভাঙা অবস্থা। আমাকে ধরে রাখার বা শাস্তি দেবার ক্ষমতা তাঁদের ছিল না। সেই সময়েই একবার পাড়ার কিছু বন্ধুর সঙ্গে এক বামপন্থী মিছিলে যোগ দিই। বামপন্থা সম্পর্কে ভাবনার সেই শুরু। সময়টা ১৯৩৫ সাল মতো।
প্রশ্নঃ সেই চিন্তার ক্রমবিকাশ কিভাবে ঘটলো?
উত্তরঃ নিয়মমাফিক কোনও ক্রমবিকাশ হয়নি। ম্যাট্রিক পাশ করে রিপন কলেজে ভর্তি হই। কলেজের ছেলেরা মার্কসবাদ নিয়ে আলোচনা করত, নিজেদের মার্কসবাদী বলত কেউ কেউ। বামপন্থী হওয়াটা ছিল ফ্যাশন। কিন্তু সাধারণ কর্মীদের প্রতি নেতৃত্বের একটা উদাসীন ও উন্নাসিক মনোভঙ্গী ছিল। কোনও প্রশ্নের ঠিকমতো জবাব কেউ দিতেন না। কিছু বুঝিয়েও দিতেন না। আমার কোনও পলিটিক্যাল পড়াশোনা ছিল না। সুভাষচন্দ্রকে যখন বামপন্থীরা নিন্দা করেন তখন তা ভাল লাগেনি। ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম – মনে পড়ে। এইভাবে কিছুটা বন্ধুদের সঙ্গে থেকে কিছুটা নানা জায়গায় যাতায়াত করতে করতে ১৯৪০ নাগাদ বামপন্থী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কিছুটা যোগাযোগ হয়ে যায়। ফোর্থ ইয়ারের পর কলেজের পড়াশোনা ছেড়ে দিই। অনিয়মিতভাবে দলের কিছু কিছু কাজ করি। প্রগতিশীল লেখকসঙ্ঘের কিছুটা সংস্পর্শে আসি। কিন্তু পুরোপুরি দলীয় ব্যক্তিদের নেতাদের তখনও আমার খুব মন থেকে ভাল লাগত না।
প্রশ্নঃ লেখা শুরু করলেন কিভাবে? কবে থেকে?
উত্তরঃ কলেজে থাকতে খাতায় কবিতা লিখতাম। বিশেষ ছাপা হত না। পার্টির সূত্রেই আমি ১৯৪২ সালের কাছাকাছি সময় থেকে ‘অরণি’ পত্রিকায় নিয়মিত কবিতা লিখতে শুরু করি। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫-এর মধ্যে ‘বসুমতী’তেও অনেক লেখা বেরিয়েছে। একটু একটু করে পরিচয়ের সীমানা বাড়ে। কবি বিমলচন্দ্র ঘোষের সঙ্গে ১৯৪৪-এ খুব ঘনিষ্ঠতা হয়। অরুণ মিত্রের বাড়িতেও যেতাম। ১৯৪৪ থেকে ‘কবিতা’, ‘পরিচয়’ ও ‘পূর্বাশা’ পত্রিকায় কিছু কিছু লিখেছি। কলেজে আমার অধ্যাপক ছিলেন বুদ্ধদেব বসু ও বিষ্ণু দে। কিছু পরিচয় ছিল। ‘সাহিত্যপত্র’ যখন বেরলো প্রথম তিন সংখ্যাতেই কবিতা লিখেছিলাম। ১৯৪৬-৪৭-এ প্রচুর লিখেছি, প্রচুর ছাপাও হয়েছে।
প্রশ্নঃ একটা কথা। আপনি বলছেন, সেই সময়ে বামপন্থী দলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল আপনার। কিন্তু যে পত্রিকাগুলিতে লিখছেন তার মধ্যে ‘কবিতা’ ও ‘পূর্বাশা’ তো সম্পূর্ণ অ-রাজনৈতিক চরিত্র ছিল তাই না?
উত্তরঃ পার্টির সঙ্গে আমার খুব গভীর যোগাযোগ কখনও ছিল না। সভা-সমিতি বা মিছিলে যেতাম কিন্তু কারণটি বিবেচনা করে যাবার চেষ্টা করতাম। আমার ব্যক্তিগত সমর্থন থাকলে তবেই যেতাম। আর ব্যক্তিস্বাধীনতায় হাত দেওয়া ভাল লাগত না। আমি চিরকালই সব ধরনের পত্রিকায় কিছু কিছু লিখেছি।
প্রশ্নঃ চাকরি করতেন না কিছু?
উত্তরঃ ১৯৪২ থেকে চাকরি শুরু করি আমার দাদারই প্রতিষ্ঠান ঢাকুরিয়া ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশন-এ। তখন দেশি ব্যাঙ্ক ছিল সব। ১৯৪৮-এ সেই ব্যাঙ্ক ফেল করে। আমিও বেকার হয়ে যাই। প্রায় পাঁচ বছর বেকার ছিলাম।
প্রশ্নঃ তখন সংসার ছিল?
উত্তরঃ হ্যাঁ। ১৯৪৪-এ বিয়ে করি।
প্রশ্নঃ চলত কি করে?
উত্তরঃ প্রায় চলত না। ‘ক্রান্তি’ ও ‘গণবার্তা’য় কিছু কিছু কাজ করতাম। ‘ক্রান্তি’-তে মাসে কুড়ি আর ‘গণবার্তা’ থেকে মাসে চল্লিশ — এটাই নিয়মিত আয় ছিল। ‘পূরবাশা’-এ চাকরি পেলাম তারপর। কিন্তু মাসের শেষে মাইনে আর পাই না। অনেক ঘোরাঘুরির পর একশ টাকা আদায় হল। আর যাইনি। সেই সময় রেস খেলতাম খুব।
প্রশ্নঃ রেস? মানে ঘোড়া?
উত্তরঃ হ্যাঁ। মরিয়া অবস্থা হয়ে উঠেছিল।
প্রশ্নঃ কখনও জিতেছিলেন?
উত্তরঃ কখনও না। তারপর ১৯৫২-তে চাকরি পাই আমার বড়দার চায়ের ব্যবসায়ে। যেতে হল পূর্ববাংলা, এখন বাংলাদেশ। বেতন একশ টাকা। কিছুদিন পর ছেড়ে চলে আসি। তারপর সেই পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দিই। কিছুদিন আগে পর্যন্তও সেই যোগ ছিল। তবে ব্যবসা আমার ভাল লাগে না। রীতিনীতিও বুঝি না। সেখান থেকে প্রাপ্যের অনেক কম পেয়েছি চিরকাল।
প্রশ্নঃ রাজনীতির সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারটা বলুন। তারপর কি হল?
উত্তরঃ ওই ‘ক্রান্তি’ আর ‘গণবার্তা’-এ কাজ করার সময়ে যোগাযোগ হল আর এস পি-র সঙ্গে। এখনও সে যোগ আছে। রাজনৈতিক দলের মধ্যে আর এস পি-র সঙ্গেই আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠতা। তবে প্রধানত পত্রপত্রিকাগুলির সঙ্গেই আমার সংযোগ। আর এস পি-র মত ছিল সাহিত্য পার্টির নির্দেশ প্রাধান্য পাবে না। আমারও মত তাই। ওরা পত্রিকা চালানোর ব্যাপারে কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করত না। আমার অন্য কোথাও লেখাতে কোনও বাধা ছিল না।
প্রশ্নঃ তাহলে আর এস পি-ই আপনার পার্টি?
উত্তরঃ তাও ঠিক নয়। দলীয় সংকীর্ণতা, ক্ষমতালাভের চেষ্টা করা তাদের মধ্যেও দেখেছি। একবার আর এস পি-র ক্যান্ডিডেট ছিল বলে বাঘাযতীন স্কুলে আমার চাকরি হয়নি যোগ্যতা সত্ত্বেও। আমি আর এস পি-র পরিচিত ছিলাম কিন্তু পার্টির ক্যান্ডিডেট ছিলাম না। পরে কিন্তু সেই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক খুব দুরাবস্থার সময়ে কিছুদিন স্কুলে চাকরি দিয়ে আমাকে বাঁচিয়েছিলেন। আর এস পি-র মতাদর্শ, সংগঠন — এসবের সঙ্গেও আমার তেমন কোনও যোগ ছিল না। তবু বলব ওদের পত্রিকার সঙ্গে আমার দীর্ঘকালের সংযোগ। সেখানে নিজের মতো করে কাজ করতে পেরেছি। এই দলের বহু সদস্যের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত প্রীতির সম্পর্ক। বহু ভাল লোক দেখেছি তাঁদের মধ্যে।
প্রশ্নঃ ‘দেশ’-এ কখনও লিখেছেন?
উত্তরঃ হ্যাঁ। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সঙ্গে পরিচয় ছিল। একসময়ে মনোমালিন্যও হয়েছিল। তখন তাঁর বিরুদ্ধে অনেক কথাই অনেককে বলেছি। নীরেন কিন্তু আমার বিরুদ্ধে কখনও কিছু বলেনি। মহাজাতি সদনের এক অনুষ্ঠানে তিনি এগিয়ে আসায় আমরা আবার বিরুদ্ধতা কাটিয়ে উঠি। নীরেনের কথায় ‘দেশ’-এ লিখেছি। তারপর ১৯৬১-৬২-তে ‘দেশ’ গোষ্ঠী যখন স্বাধীন সাহিত্যের সমর্থনে অনেক কথা বলতে শুরু করে — তার বিরুদ্ধে লিখেছি ‘দর্পণ’-এ, ‘সাপ্তাহিক বসুমতী’তে। এই স্বাধীন-সাহিত্য বিরোধিতার সূত্রেই আবার কম্যুনিস্ট পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হল। ‘পরিচয়’ তখন আমাকে লিখতে বলে, খুব ছাপেও আমার লেখা। কম্যুনিস্ট পার্টির মধ্যে ভাঙন ধরছে সেটা তখন বুঝতে পারিনি। সি পি আই আমাকে তাদের লেখক হিসেবে অনেকটা গ্রহণ করে।
প্রশ্নঃ কমুনিস্ট পার্টি ভাগ হওয়া, চীন আক্রমণ ইত্যাদি সময়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কি ছিল?
উত্তরঃ রাজনৈতিকভাবে তখন একেবারেই সক্রিয় ছিলাম না। পত্রিকা চালাই আর লিখি। নিজের মতো করে দেশের কথা বলার চেষ্টা করি। তার মধ্যে কোনও দলীয় মতবাদ ছিল না।
প্রশ্নঃ প্রতিষ্ঠানবিরোধী লেখার কথা সব সময়েই ভেবেছেন তো?
উত্তরঃ ওভাবে কখনও কিছু ভাবিনি বা বলিনি। নিজের যখন যা মনে হয় সহজভাবে তাই বলার চেষ্টা করি। কোনও তত্ত্বই আমি কোনওদিন তেমন বুঝিনি। আজও বুঝি না। মার্কসবাদ সম্পর্কে অনেককাল কিছুই পড়িনি। পরে কিছু পড়েছি। খুব বেশি নয়।
প্রশ্নঃ নকশালপন্থীদের সঙ্গে যোগের কথা বলুন।
উত্তরঃ নকশালপন্থীদের সঙ্গে কোনও যোগই ছিল না। প্রথম প্রথম কাগজ পড়তাম। কোনও উৎসাহ বোধ করিনি। মতামতের সমর্থকও ছিলাম না। কোনও কোনও কাজের প্রবল বিরোধী ছিলাম। এখনও আছি। স্কুল আক্রমণ করার, ছাত্রজীবন নষ্ট করার কোনও যুক্তি নেই। স্কুল হল নতুন কর্মী বেছে নেবার, তৈরি করবার জায়গা। স্কুল ব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে কোনও বিপ্লব হয় না। কিন্তু তারপর ক্রমেই সরকারের অত্যাচার দেখতে দেখতে অস্থির হয়ে উঠলাম। এই পাড়ার অল্প বয়সের ছেলেরা শুধু মিছিল করছে, সভা করছে বলে – যেভাবে অত্যাচার হয়েছে তাদের ওপর, জেলে নিয়ে গিয়ে বিনাবিচারে মেরে ফেলা হয়েছে – তারা তো ক্রিমিন্যাল নয়। দেশের জন্য ভিন্ন এক শাসনব্যবস্থার কথা ভাবছে – এই অপরাধে গণতান্ত্রিক সরকার যদি এই নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চালায় তাহলে তার প্রতিবাদ করা উচিত মনে করেছি। সেজন্যই তাদের মনে করে, তাদের উদ্দেশে, অত্যাচারের প্রতিবাদে আমার কবিতা।
প্রশ্নঃ তাহলে নকশালপন্থীদের সঙ্গে আপনার কোনও যোগই ছিল না?
উত্তরঃ জেলে ওরা আমার কবিতা পড়েছিল কেউ কেউ। অনেকে জেল থেকে বেরিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে। আরও নকশাল ছেলেরা যাওয়া-আসা শুরু করে। তাদের পত্র-পত্রিকায় আমার কবিতা চায়। আমিও তাদের দিয়েছি। কিন্তু রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক যোগাযোগ তাকে বলে না। মতামতের মিল-অমিলের কথাও তেমন ওঠেনি। তারপরে তো ওদের মধ্যেও মতবিরোধ। দল ভেঙে গেল। আমার প্রতিবাদ শুধু সরকারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে। আমার সমর্থন শুধু নতুন সমাজব্যবস্থার চিন্তার প্রতি। আমি বড় কিছু করেছি বলতে পারি না। তবে আমার সাধ্যের মধ্যে যেটুকু বলা উচিত মনে হয়েছে সেইটুকুই শুধু বলেছি।
আরও অনেক কথাই জানার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সকাল শেষ হয়ে যাচ্ছিল। আর কথা বলানোও উচিত মনে হয়নি। ভেবেছিলাম আবার কখনও যাব। অনেক আগেই যাওয়া উচিত ছিল। আমরা তথাকথিত সুস্থরা ঠিক বুঝি না সময়ের সত্যিকারের দাম।
তাই নিয়ে নচিকেতা, তবু তুমি গড়বে প্রতিমা?
অন্ধ হবে, বোবা ও অধীর
তবু ক্লান্তিহীন, মৃত্তিকায় পুনর্জন্মের অস্থির
জিজ্ঞাসায় মৃত্যুর তুষার
বার বার হেঁটে হবে পার?
অগ্নিদগ্ধ দুই হাতে কতবার খুলবে তুমি যমের দুয়ার?
……………………………
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
সংগ্রহ – সোঁতা, একাদশ বর্ষ, প্রথম সংখ্যা, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা, ২০০১
Tags: বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটি সকাল, সুমিতা চক্রবর্তী
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।