-হ্যালো –
-হ্যাঁ- বল…।
– ফোন করনি কেন ?
-আমিতো ভাবছিলাম তুমি করবে ।
-আগের দিন আমি করেছিলাম, এবার তো তোমার করার কথা ছিল ।
-তাই- না ? আমার একদম মনে ছিল না যে এবার আমার পালা । তবে ফোন করার আবার পালাপালি কিসের ?
-তুমি সেই একই রকম আছ । । পাঁচটায় আসার কথা, আমি রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম- তুমি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে ছটার সময় আসতে । আর এসে নানারকম গল্প বানাতে ।
– আর আসা মাত্রই তুমি ঝগড়া শুরু করে দিতে ।
– করব না ? রাস্তার মোড়ে একা একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, লোকজন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আর কী ভাবছে কে জানে । মাথা গরম হবে না ?
-তখন মাঝে মাঝে কীরকম কথা বন্ধ হোত ?
– হ্যাঁ আর দুদিন যেতে না যেতেই তো সন্ধি প্রস্তাব পাঠাতে আমার বন্ধুদের কাছে । এখনও তো ভাবছি ফোন করা বন্ধ করব কিনা ।
– না না রাগ কোর না , টেলিফোন না করলেও মনে সব সময়ে তুমি ছিলে, সব সময়ে ভাবছিলাম কখন তোমার আসবে টেলিফোন । আসলে হিসাবে ভুল হয়েছিল কার কল করার কথা । তবে সন্ধি প্রস্তাব শুধু আমি পাঠাতাম ? তুমি পাঠাতে না ?
– হ্যাঁ সে তো একবার । সেবার আমার বর্ধমানে ট্যুরনামেন্ট । ভাব না করে নিলে কার সঙ্গে যেতাম ।
-আমার তো তখন কাজ একটাই । তুমি নামী ব্যাডমিন্টন প্লেয়ার , আজ এ ট্যুরনামেন্ট কাল ও ট্যুরনামেন্ট । আজ এখানে কাল ওখানে , আমি ব্যাগ বয়ে বেড়াচ্ছি।
– আমি তোমাকে বলতাম সব জায়গায় যেতে? তুমি তো কলেজ পালিয়ে, টিউশন ফাঁকি দিয়ে আমার সঙ্গে সঙ্গে যেতে ।
– সেবার কার ‘কথা বন্ধ’ টা একটু লম্বা হয়ে গিয়েছিল ।
– হ্যাঁ, সেবার তো ঠিকই করে ফেলেছিলাম পারমানেন্ট ব্রেক আপ । তুমি আমাকে সিনেমা দেখতে ডেকে নিজে টিকিট কেটে হলে ঢুকে পড়েছিলে ।
– তুমি আসবে আমাকে বলনি । বললে আমি কেন একা হলে ঢুকে পড়ব ! এই সহজ কথাটা তুমি বোঝনি ।
– আমি বলেছিলাম আসব, তুমি শোননি । তুমি তো অন্যের কথা শুনতে না- নিজেই বলে যেতে ।
– কী ছবি ছিল- মনে আছে তো ?
– মনে থাকবেনা ? ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’। আমি হলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, এদিক অদিক তাকাচ্ছি । লোকজনের চোখমুখ দেখে বুঝতে পারছি তারা আমাকে খারাপ মেয়ে ভাবছে । কী অপমান !
– আমি কীরকম কায়দায় ভাব করেছিলাম বল ?
-হ্যাঁ সেটা ছিল সত্যিই মজার ।
– কিছুতেই কিছু হচ্ছে না । হঠাৎ পেপারে বিজ্ঞাপন দেখলাম অরন্যের দিনরাত্রি শেষ সপ্তাহ । দুটো টিকিট কেটে একটা পাঠিয়ে দিয়েছিলাম তোমার বন্ধুর হাতে । হলে বসে বসে ভাবছি আসবে তো ! হল অন্ধকার হয়ে গেল তবু দেখা নেই । তারপর হঠাৎ…………
– তখন তো পরদার দিকে তাকিয়ে বসে ছিলে । আমি পাশে এসে বসেছি কোন তাপ উত্তাপ নেই ।
– তখন তো এসে গেছ । একটু ডাঁট দেখাতে হবে না?
-চুলের মুঠিটা ধরলাম, তখন ডাঁট গেল ।
-সে যাত্রায় পার্মানেন্ট ব্রেকআপ ঠেকানো গেলেও শেষ পর্যন্ত তো ঠেকানো গেল না ।
-তার জন্যে তো তুমি দায়ী । পুরুষ মানুষের মনে একটু সাহস থাকা দরকার ।
– সেটা কিছুটা ঠিক । তবে তুমি একটু তাড়াতাড়ি করেছিলে , আমাকে একটু সময় দাওনি ।
– একদম বাজে কথা । তুমি সময় চাওনি । তুমি খালি বলতে চাকরি নেই ……।।
– তখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ি, কতই বা বয়স, বিয়ে কী করে করতাম বল তো ?
– সেটা একটা সমস্যা ছিল বটে সেই সময়ে , মানে চল্লিশ বছর আগে । কলেজে পড়তে পড়তে প্রেম করলে ঐ মুস্কিল । ছেলেরা বিয়ের উপযুক্ত হয়ে ওঠত না আর মেয়েরা বিয়ের জন্য বাড়ির চাপ সামলে উঠতে পারত না । ফলে যা হবার তাই হত ।
-তবে আর আমাকে শুধু শুধু দোষ দাও কেন ?
– শুধু শুধু নয়, একটু সাহস থাকলে হয়তো অন্যরকম হতো । তবে আমি পরিপূর্ণ জীবন কাটিয়েছি্, প্রেমে পূর্ণ ।
মানুষ টা খুব ভাল ছিল, আমাকে আদরে রেখেছিল । কিন্তু থাকলো না । দুরারোগ্য ব্যাধি । ছেলে বিদেশে, আমি আর একা থাকতে পারলাম না । এই হোমে চলে এলাম । বেশ আছি এখানে । তারপর কোত্থেকে আবার তোমার উদয় হল ।
-শোন না- একদিন দেখা হবে ?
-না- একদম না ।
– তুমি দেখা করার কথা বললেই একদম স্ম্যাশ করে দাও । তোমাদের হোম কি কলেজের হস্টেল, সুপারিনটেন্ডেন্ট নাকে চশমা লাগিয়ে পাহারা দিচ্ছে কোনও পুরুষ যাতে ঢুকতে না পারে ?
– না না তা কেন ? এখানে তো পুরুষ মহিলা সকলেই থাকে ।
-তবে ?
-আমি চাইনা তুমি আস, তাই ।
-এটা কীরকম হল ? ফোন না করলে রেগে যাচ্ছ অথচ…। শোন আমি একটা মজাদার প্ল্যান করেছি । ১৯৭০ সালে তৈরী অরণ্যের দিনরাত্রি । ঐ একই চরিত্রদের নিয়ে তৈরি হয়েছে গৌতম ঘোষের ছবি ‘আবার অরণ্যে’। ওরা পঁয়ত্রিশ বছর পর আবার একসঙ্গে বেড়াতে যাচ্ছে অরণ্যে , পুরনো দিন পুরনো অনুভূতি ফিরে পেতে । চলনা আমরাও যাই উনিশশো সত্তর একটা দিন একদিনের জন্যে ফিরে পেতে ।
-বাঃ- আইডিয়াটা দারুণ ।
– নন্দনে চলছে- টিকিট কাটি ?
– না থাক ।
-কেন ? কারণ টা কী?
-পুরোন দিন আমাদের আর ফিরে আসবে না ।
– তা আসবে না তবে একটা দিন একটু অন্যরকম । মনটা তাজা রাখলেই হল ।
-শরীর না থাকলে কি মন থাকে ?
– কেন কী হয়েছে তোমার ?
– সময় চলে গেছে । লালন ফকিরের গানটা শোননি – সময় গেলে সাধন হবে না ? সময় গেলে কিছুই হয়না, প্রেমও হয়না ।
-শরীরের কথা বল । শরীর কেমন তোমার ?
-খেলোয়াড়দের যা হয় । অস্টিওপোরসিস । আমার পা দুটো………।
-থাক থাক আর বোলনা । আর শুনতে চাইনা । আমি এইযে তোমার সঙ্গে কথা বলি আমার মনের চোখে তোমার আগের চেহারাটাই ভাসে, সেই ছিপছিপে ব্যাডমিন্টন প্লেয়ার, মিনি স্কার্ট পরে যে ফেদারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উড়ে বেড়াত কোর্টের এপ্রান্ত থেকে ও প্রান্ত । আমার কল্পনায় তুমি বরং থেকে যাও সেই রকমই ।
-আর তুমি সেই বেলবটস, বড় ঝুলপি তরুণ যার ঝাঁকরা চুল আমার মুঠোয় আসত বেচাল দেখলেই ।
-তাই ভাল । আমরা বরং বসে থাকব – কখন তোমার আসবে টেলিফোন ।
-ঠিক । কখন তোমার আসবে টেলিফোন ।
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।