বৈরাগীটি দৌড়ে এসে ট্রেনে উঠলেন । কম্পার্টমেন্ট ফাঁকা, দূরে দু একটা লোক দাঁড়িয়ে । ঠান্ডাও পড়েছে জব্বর , ডিসেম্বরের রাত বলে কথা।
ট্রেনের বগিও ফাঁকা । বৈরাগী একটা সিটে বসে হাঁফ ছাড়লেন। আজকে খুব খাটনি গেছে , পয়সা কামিয়েছেনও বেশী। হঠাৎ তিনি লক্ষ করলেন যে বগি পুরোপুরি খালি নয় । দুটো সিট পরে এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক বসে আছেন । বৈরাগী উঠে গিয়ে তাঁর পাশে বসলেন ।
ভদ্রলোকের পরনে পাঞ্জাবী-ধুতি। এক হাতে লাঠি ,অন্য হাতে স্যুটকেশ । ভদ্রলোক বৈরাগীটিকে আড়চোখে একবার দেখলেন , কিছু বললেন না ।
ক্লান্তির মধ্যে বৈরাগী যে কখন গুন গুন করে গান গাইতে শুরু করেছিলেন নিজেই বুঝতে পারেননি । তাই হয়ত বৃদ্ধ ভদ্রলোক বললেন , “গাও না ভাই একটা গান , শুনি ।”
বৈরাগী বললেন , “গাইব ?” তারপর শুরু করলেন , ” বল মা তারা দাঁড়াই কোথা……….”
গান যখন শেষ হল তখন বৃদ্ধ ভদ্রলোকের মুখে হাসি ফুটেছে । বললেন ,”বাঃ! অপূ্ব।”
ভদ্রলোক বললেন ,” আমার বাড়ি একদিন এসো না , আমায় গান শোনাবে ।”
বৈরাগী আপত্তি করলেন না।
বৃদ্ধ একটা কাগজে কী একটা লিখে দিয়ে বললেন ,” এই আমার ঠিকানা । ”
বৈরাগী হাতে নিয়ে দেখলেন বালিগঞ্জের এক বাড়ির ঠিকানা ।
পরদিন সকালে দশটার মধ্যে বৈরাগী পৌঁছে গেলেন ওই ঠিকানায়। বাড়ির সামনে জটলা ।
ভিড়ের মধ্যে ঢুকে বৈরাগী দেখলেন একটা শবদেহ রাখা ।
বৈরাগী চমকে উঠলেন । এই মুখ তার চেনা । লোকের কাছে জানলেন গত কাল বিকেলে ভদ্রলোক হার্ট অ্যাটাক হয়ে মারা গেছেন ।
বৈরাগী ঝোলায় হাত ঢুকিয়ে ভদ্রলোকের দেওয়া কাগজটা বার করেই শিউরে উঠলেন । মনে করলেন , “এও কী সত্যি ! ”
কাগজের উপর লেখা পালটে গেছে, হয়ে গেছে , ” পরলোক । “
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।