04 Nov

শিল্পের মশাল/সম্পাদকীয়

লিখেছেন:পার্থ প্রতীম রায়


‘গল্পের সময়’।‘সময়’এই কথাটির আন্তর অভিঘাতে আমরা কি কখনও ডাকঘরের অমলের মতো অনেক রাতে বিছানায় উঠে বসে শুনেছি কি –“…বাইরের কোন্ অন্ধকারের ভিতর দিয়ে ঘন্টা বাজছে ঢং ঢং ঢং।” অথবা যেখানে সে ফকিরকে বলছে – “ কত দিন কত রাত ধরে সে কেবলই নেমে আসছে। পাহাড়ের পায়ের কাছে ঝরনার পথ যেখানে ফুরিয়েছে সেখানে বাঁকা নদীর পথ ধরে সে কেবলই চলে আসছে – নদীর ধারে জোয়ারির খেত, তারই সরু গলির ভিতর দিয়ে দিয়ে সে কেবল আসছে ….।”

‘সময়’কে এবং তার অবিচ্ছিন্ন প্রবহমানতাকে অমলের মতো প্রায় শরীরী ব্যঞ্জনায় প্রত্যক্ষ করিনি হয়তো কেউ কেউ; কিন্তু, জীবনের কোনো গভীর সংকটের মুহূর্তে দাঁড়িয়ে প্রবহমানকালকে স্পর্শ করে শঙ্খ ঘোষের ‘সন্ততি’ কবিতার শেষ লাইনটি উচ্চারণ করিনি কি কেউ কেউ – খুব নীচু স্বরে – “ভেবো না ভেবোনা কিছু। দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে।”

এই সজল আশ্বাসে মাঠের শেষে ঘরের কাঠামো জেগে ওঠে, নতুন করে বেঁচে ওঠবার আয়োজন শুরু হয়।

‘গল্পের সময়’ গল্পের আয়োজক। নতুন নতুন গল্পের। কখনও কখনও ‘গল্পের সময়’ বিশেষ সময়ের গল্পের আয়োজন করে। যেমন ‘কালান্তক কালের গল্প’। প্রত্যেক গল্পকার বা কথাশিল্পী তাঁর ‘কাল’কে স্পর্শ করে থেকেই গল্প বা শিল্প রচনা করেন। কিন্তু, তাঁর রচিত শিল্প যা স্পন্দমান জীবনেরই সমতুল সে কিন্তু তার নিহিত বর্তমানেই নিঃশেষিত হয় না। বহমান থাকে কালান্তরে সহৃদয়-হৃদয় পাঠকের সংবেদে।‘গল্পের সময়’-এরও অভিপ্রায় এই। তাই আরেক অর্থে ‘গল্পের সময়’ ‘সবসময় গল্পের সময়’। এটি গল্পের সময়ের স্পর্ধিত আত্মঘোষণা নয়। বরং এক ভিন্ন অর্থে অমলের ফকিরকে বলা কথাগুলির যে – ‘সে কেবলই চলে আসছে’ বারবার ‘সে কেবলই চলে আসছে’ তারই এক অতিসংক্ষেপিত অভিব্যক্তময় দ্যোতনা।

দুই

আয়োজন শুরু হয়ে গিয়েছে। উৎবের। শারদীয়া উৎবের। আর একটু একটু করে ভরে উঠছে প্রিয় উৎবের সামগ্রিক পটভূমি।আকাশ আবার অন্ধকার হয়ে এল। সেই চিরপরিচিত ছবি। গ্রামের পর গ্রাম থম্‌থমে ঘোলা জলে দু-একটা পাকা বাড়ি বোবা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অর্ধেক ডোবা। কোথাও এক চিলতে টালির ছাদ মাথায় নিয়ে ঘরের একটা দেওয়াল এখনও দাঁড়িয়ে আছে হেলে। যেন মাজা ভাঙা মানুষ একলাটি দাঁড়িয়ে দেখছে – জল আর জল আর জল …।আর ঠিক এই মুহূর্তে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের একটি বিশেষ কবিতার নাম মনে এল – ‘আমাদের ঘর নাই – আছে তাঁবু অন্তরে-বাহিরে’।

যেন এক বাউল আমাদের সমস্ত দুর্দশাকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফের রঙিন সুতোয় বুনে বানিয়েছে এক অপরূপ আলখাল্লা। আর তাকে মানিয়েছেও দারুণ। দোতারা বাজিয়ে ঘুরে ঘুরে গাইছে – ‘আমাদের ঘর নাই – আছে তাঁবু অন্তরে-বাইরে’।

আর বারবার সমে ফিরে ফিরে এসে সে ডাক পাঠাচ্ছে আমাদের রক্তের ভেতরে সমস্ত সম্বল দিয়ে শিল্প গড়ে তুলবার।

আর সেই ডাকে সাড়া দিয়ে যেন এক যোগে সমস্ত শিল্পী – কথাশিল্পী-প্রতিমা শিল্পী-আলো-গান আর মণ্ডপ শিল্পের নির্মাতা আর তাদের সহযোগিরা মিলে মেধা আর শ্রমের যৌথ সমন্বয়ে গড়ে তুলছে আমাদের প্রিয় উত্সবের প্রকাণ্ড চালচিত্র।

আমরা ‘গল্পের সময়’ এই প্রকাণ্ড চালচিত্রের একটা কোন্‌ আমরাও তুলে ধরেছি ‘মশালের মতো’। নাম দিয়েছি – ‘শারদ অধ্যায়’। সেখানেই আপনাদের সকলকে বিশেষ আমন্ত্রণ। ধন্যবাদ।

Tags: ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ