15 Apr

বিনোদন

লিখেছেন:সুদর্শন মুখোটী


সবে স্কুলের গণ্ডী পেরিয়েছি । সত্তর দশকের প্রথম ভাগ । বঙ্গে তখনও দূরদর্শনের পদার্পণ ঘটেনি । রেডিও ছিল অনেক বাড়িতে । সাত পড়ুয়ার পাঠে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কায় রাহা বাড়িতে রেডিও স্থান পায়নি । সেই একান্নবর্তী বাড়ির দুই ক্ষুদেকে প্রাইভেট পড়াবার দায়িত্ব পেলাম আমি। ছাত্রদের পরিবারে ছিল তিন ভাই আর বাল্যবিধবা তাদের বড়দি। সঙ্গে তো ছিলই তিন ভাইয়ের সাত পুত্র কন্যা।

পড়ানোর সময় সেই বড়দি পরম যত্নে টা – সহযোগে চা দিয়ে যেতেন । এক লিটিল ম্যাগাজিনে আমার একটা কবিতা ছাপা হলো । এক কপি দিলাম রাহাদের বড় ভাইয়ের হাতে । খুশি হয়ে তিনি বললেন , ” বড়দিকে দেবো । বেচারির  ব‌ই পড়ে আর আপন মনে কবিতা লিখেই তার অবসর কাটে । কেউ একটা লাইন‌ও পড়ে দেখে না , তবু নিয়মিত লেখার জন্য খাতা কিনে দি‌ই । ”

চা দিতে এসে একদিন তিনি আঁচলে লুকিয়ে আনা একটা খাতা আমাকে দিলেন । বললেন , ” আমি অল্প শিক্ষিত , মনের খেয়ালে কবিতা লেখার চেষ্টা করি । হয়তো ভাব আর ভাষা ঠিক মেলাতে পারি না । তুমি কবি মানুষ , আমার লেখাগুলো একটু পড়ে দেখো । ”

সঙ্গে থাকা কাপড়ের সাইড ব্যাগে ভরে বাড়িতে এনে ওনার খাতাগুলো পড়লাম । কাঁচা লেখাই বলা যায় , তবু পড়েছি সততার সঙ্গে । খাতা ফেরৎ দেওয়ার সময় ওনার মুখে একটা খুশির আভা দেখতে পেয়েছি ।

বছর দুয়েক পরে উনি ইহলোক ত্যাগ করলেন । শ্রাদ্ধ বাসরে উপস্থিত থাকতে হলো রাহা ভাইদের উপরোধে । মালা দিয়ে সাজানো বড়দির ছবির পাশেই রাখা আছে এক স্তুপ খাতা । রাহাদের বড় ভাই বললেন , ” বড়দির একমাত্র বিনোদন কবিতা লেখা । সব খাতাই অপঠিত , তবু ওর প্রিয় খাতাগুলো সাজিয়ে রেখেছি । ওর আত্মা শান্তি পাবে ।”

মনে মনে বললাম, ওনার বেশ কয়েকটা খাতা  আমি তো পড়ে দেখেছি। মুখে কিছু প্রকাশ করলাম না শ্রাদ্ধ বাসরে ।

Tags: , ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ