[ফরাসি সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, এবং মানবাধিকার কর্মী ভিক্টর হুগোর জন্ম ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৮০২ । তাঁকে উনিশ শতকের সবচেয়ে প্রভাববিস্তারকারী রোমান্টিক লেখক বলা হয়ে থাকে । নিজের রচনায় আবেগ, বাগ্মীতা এবং পরিনত মনস্কতার কারণে অল্প বয়সেই সাফল্য এবং খ্যাতি অর্জন করেন লা মিজারেবলস –এর এই লেখক। হুগোর প্রথম কবিতা সংকলন ১৮২২ সালে প্রকাশিত হয়, যখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২০। তাঁকে একজন মহান কবি, সুরকার এবং গীতিকার হিসেবে সবার কাছে উন্মোচিত করে দেয়। তাঁর লেখা ‘জেনি’ গল্পটি অনুবাদ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। গল্পের সময়ের পাঠকদের জন্য সেই গল্পটিই এখানে তুলে আনলাম আমরা।]
তখন রাত্রি। গরীবের সামান্য কুটির, কিন্তু বেশ গরম ও আরামপ্রদ ; আরো গোধূলি আলোতে পূর্ণ ; এই আলোর ভিতরের জিনিসগুলো খুব অস্পষ্টভাবে দেখা যাইতেছে ; উনানে ভস্মাচ্ছাদিত জ্বলন্ত অঙ্গার ঝিক্মিক্ করিতেছে এবং উহার উত্তাপে মাথার উপরকার কড়ি – বর্গাগুলা কালো হইয়া গিয়াছে। দেয়ালের গায়ে জেলিয়াদিগের মাছধরা – জাল ঝুলিতেছে। ঘরের কোণে একটা তাকের উপর কতকগুলা সামান্য ধাতব হাঁড়ি – কুঁড়ি ঝিক্মিক্ করিতেছে। একটা দীর্ঘ ভূ-পতিত মশারী – সমেত একটা বড় শয্যা – তাহার পাশে গোটা – দুই পুরাতন চৌকির উপর একটা গদি প্রসারিত। এই গদীর উপর নীড়শায়ী – পরী – শিশুর ন্যায় পাঁচটি ছোট ছোট শিশু নিদ্রিত। শয্যার পাশে পালং – পোশের উপর মাথা চাপিয়ে, ছেলেদের মা নতজানু হইয়া বসিয়াছিল। একলা রমণী। কুটিরের বাহিরে কৃষ্ণবর্ণ সমুদ্র, ঝোড়ো ফেন–পুঞ্জ তটের উপর আছ্ড়াইয়া গোঁ গোঁ শব্দে আর্তনাদ করিতেছিল।
বাল্যকাল হইতেই সে জেলিয়া। একথা বলিলে বোধ হয় অত্যুক্তি হইবে না, বিশাল জলরাশির সহিত প্রতিদিনই তাহার সংগ্রাম চলিত ; কেননা প্রতিদিনই ছেলেদিগকে খাওয়াইতে হইবে এবং প্রতিদিনই বৃষ্টি হোক, বাদল হোক, ঝড় হোক – মাছ ধরিবার উদ্দেশ্যে তাহার ডিঙি সমুদ্রবক্ষে ভাসিয়া পড়িত। সে যখন তার চার – পালের ডিঙিতে করিয়া নিঃসঙ্গভাবে সমুদ্রের উপর মৎসজীবীর ব্যবসায় চালাইত, সেই সময় তাহার স্ত্রী গৃহে থাকিয়া পুরাতন পালগুলায় তালি লাগাইত, জালগুলা মেরামত করিত, এবং যে ছোট্ট উনানটির উপর মাছের ঝোল টগ্বগ্ করিয়া ফুটিত সেদিকেও তাহার নজর রাখিতে হইত। যখনই তাহার পাঁচটি ছেলে ঘুমাইয়া পড়িত অমনি সে নতজানু হইয়া ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করিত যেন তরঙ্গ ও অন্ধকারের সহিত সংগ্রামে তাহার স্বামী বিজয়ী হয়। এইরূপভাবে জীবন – যাত্রা নির্বাহ করা বাস্তবিকই তাহার পক্ষে কঠিন। তরঙ্গ – রাজির মধ্যে একটা ছোট্ট দাগের মত একটা জায়গায় শুধু মাছ ধরিবার সম্ভাবনা ছিল ; জায়গাটা তার ঘর অপেক্ষা হদ্দ দুইগুণ চওড়া, অন্ধকারাচ্ছন্ন, খামখেয়ালী ধরনের ; ঐখানে ঐ চলন্ত মরুর উপর কেবলি পরিবর্তন হইতেছে ; তথাপি কেবল নিছক নৈপুণ্য এবং জোয়ার – ভাঁটা ও বায়ু – জ্ঞানের সাহায্যে শীত – রাত্রির কুয়াশা ও ঝড় – ঝাপটার মধ্যে ঐ স্থানটা আবিষ্কার করিতে হইবে। এবং ঐখানে যখন তাহার পাশ দিয়া চঞ্চল তরঙ্গ সকল মরকতসর্পের মত চলিয়া যাইত এবং অন্ধকার উপসাগরটা সম্মুখে গড়াইয়া যাইত, ঊর্ধ্বে উৎক্ষিপ্ত হইত, এবং নৌকার সটান্ দড়ি – দড়াগুলা ভয়ে যেন আর্তনাদ করিত – সেই সময় সেই বরফ জমা সমুদ্রের মধ্যে সে তাহার জেনিকে ভাবিত ; এবং জেনিও তাহার কুটিরে বসিয়া স্বামীর কথা মনে করিয়া অশ্রু – বর্ষণ করিত।
ঐ সময়ে যখন সে তাহার কথা ভাবিতেছিল আর ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করিতেছিল, গাংচিলের কর্কশ চীৎকার তাহাকে ব্যথিত করিল এবং সাগর – শৈলের উপর তরঙ্গ – গর্জন তাহার অন্তঃকরণে ভীতির সঞ্চার করিল। কিন্তু সে সর্বদাই ভাবনা – চিন্তায় – দারিদ্রের ভাবনা – চিন্তাতেই নিমগ্ন থাকিত। তাহার ছেলে – মেয়েগুলি শীত – গ্রীষ্মে খালি পায়ে চলিত। গমের রুটি তাহারা কখনই খাইতে পাইত না ; কেবল যবের রুটি খাইত। ও মা, কি হবে। কামারের হাপরের জাঁতার মত বাতাস গর্জাইতেছে এবং সাগরের উপকূল, কামারের লেহাই (anvil) – এর মত প্রতিধ্বনিত হইতেছে। সে অশ্রুবর্ষণ করিতে লাগিল ও থর্থর্ করিয়া কাঁপিতে লাগিল। আহা ! সেই সব হতভাগিনী স্ত্রী যাহাদের স্বামী সমুদ্রের উপর ভাসিতেছে ! এই কথাটা শুনিতে কি ভয়ানক ! “আমরা যারা প্রিয়জন – সেই বাপ, প্রণয়ী, ভাই, ছেলে – সকলেই ঝড়ের মধ্যে।” কিন্তু জেনি আর একটা কথা ভাবিয়া আরও অসুখী হইয়াছিল। তাহার স্বামী একাকী – এই দারুন রাত্রে একাকী ও অসহায়। আহা মা বেচারী ! এখন সে বলিতেছে “আমার ইচ্ছা করে, ওরা বড় হয়ে উঠে ওদের বাপকে সাহায্য করে।” পাগলের স্বপ্ন ! ভবিষ্যতে যখন উহার পিতার সঙ্গে ওরা ঝড়ের মধ্যে থাকিবে, তখন আবার সে সাশ্রুলোচনে বলিবে – “এখনো যদি ওরা শিশুই থাকিত তবে বেশ হইত।”
জেনি তার লন্ঠন ও তার “ক্লোক”টা লইল। মনে মনে ভাবিল “এখন দেখবার সময় হয়েছে – সে ফিরে আসছে কি না, সমুদ্র একটু ঠান্ডা হয়েছে কি না, সঙ্কেত মাস্তুলে এখনো আলো জ্বলছে কি না।” সে ঘরের বাহির হইল। কিছুই দেখা যায় না – দিগন্তদেশে কেবল একটা সাদা রেখার দাগ। বৃষ্টি পড়িতেছিল – প্রভাতের সেই অন্ধকারাচ্ছান্ন শীতল বৃষ্টি–ধারা। কোনও কুটিরের গবাক্ষ হইতে একটিও আলোক – রশ্মি দেখা যাইতেছে না।
যখন সে চারিদিকে তাকাইয়া দেখিতেছিল তখন হঠাৎ তাহার নজরে পড়িল একটা পুরাতন ভগ্ন কুটির, সেখানে আলো কিংবা আগুনের চিহ্নমাত্র নাই। দরজাটা বাতাসে দুলিতেছে। পোকায় – খাওয়া দেওয়ালগুলা যেন ভাঙা ছাদটাকে ধারণ করিয়া রাখিতে পারিতেছে না। খোড়ো – ছাউনির হলদে খড়ের গুচ্ছগুলাকে বাতাসে নাড়া দিতেছিল। সে বলিয়া উঠিল – “রোসো, সেদিন আমার স্বামী যে বিধবাটিকে একলা ও পীড়িত দেখে’ এসেছিল আমি সেই গরীব বিধবাকে যে ভুলে যাচ্ছি। কেমন আছে, একবার দেখতে হবে।”
সে দরজায় ঘা দিয়া কান পাতিয়া রহিল। কেহই উত্তর দিল না। সমুদ্রের বাতাসে জেনি থরথর করিয়া কাঁপিতেছিল।
“সে পীড়িত। আর তার ছেলে বেচারীরা ! তার ত দুইটি মাত্র ছেলে। কিন্তু সে বড়ই গরীব, তার স্বামী নেই।”
সে আবার দরজা ঠেলিয়া হাঁক দিয়া ডাকিল – “ওগো ! কে আছ ভিতরে ?” কিন্তু কুটির তখনও নীরব নিস্তব্ধ। সে বলিল – “ও মা ! কেমন অঘোরে ঘুমুচ্ছে দেখ, এত ডাকেও উঠছে না।”
সেই সময়, দরজাটা আপনি খুলিয়া গেল। জেনি প্রবেশ করিল। তাহার লন্ঠনের আলোয়, কুটিরের অন্ধকার নিস্তব্ধ অভ্যন্তরদেশ আলোকিত হইল এবং দেখা গেল, যেন ছাঁকুনির শত রন্ধ্র দিয়া চাল হইতে অজস্রধারে জল পড়িতেছে। ঘরের শেষ – প্রান্তে কে যেন শুইয়া আছে। একজন স্ত্রীলোক হাত পা ছড়াইয়া পড়িয়া আছে – স্পন্দনহীন। খালি পা – চোখে দৃষ্টি নাই। তাহার ঠান্ডা সাদা বাহুটি, শয্যার খড়রাশির মধ্য হইতে নিচে ঝুলিয়া পড়িয়াছে। সে মৃতা, সে এক সময়ে বেশ বলিষ্ঠ ও সুখী ছেলের মা ছিল, এখন দীর্ঘকাল সংসারের সহিত সংগ্রাম করিয়া কঙ্কালসার উপচ্ছায়ায় পরিণত হইয়াছে !
মায়ের শয্যার পাশে আছে দুইটি ক্ষুদ্র শিশু – একটি ছেলে, ও একটি মেয়ে – একটা দোলনা – শয্যায় একত্র ঘুমাইতেছে। মৃত্যু আসন্ন বলিয়া মা যখন অনুভব করে তখন উহাদিগকে গরম রাখিবার জন্য তাহার ক্লোকখানা উহাদের পায়ের উপর চাপাইয়া তাহার পরিচ্ছদ–বস্ত্রে উহাদিগকে আবৃত করিয়া রাখিয়াছিল।
শান্ত ছোট ছোট মুখ দুইখানি – শান্তভাবে নিঃশ্বাস পড়িতেছে – পুরাতন ভাঙা দোলনা – শয্যায় উহারা কেমন অকাতরে ঘুমাইতেছে ! মনে হয় যেন এই অনাথ শিশু দুইটির ঘুম কিছুতেই ভাঙিবে না। বাহিরে মুষলধারে বৃষ্টি হইতেছিল এবং সমুদ্র হইতে সঙ্কেত ঘণ্টার মত যেন কি একটা শব্দ হইল। যাহার ভিতর দিয়া ঝড় বহিয়া যাইতেছিল সেই পুরাতন ফাটা ছাদ হইতে এক ফোঁটা জল সেই মৃতের মুখের উপর অশ্রুবিন্দুরূপে গড়াইয়া পড়িল।
এই মৃত রমণীর গৃহে জেনি না জানি কি করিতেছিল। তাহার ক্লোকে ঢাকিয়া কি লইয়া যাইতেছে ? তাহার হৃৎপিণ্ডটা ধুক্ধুক্ করিতেছে কেন ? একবার ফিরিয়া তাকাইতে সাহস না পাইয়া তাড়াতাড়ি নিজের কুটিরে কেন ফিরিয়া আসিল ? তাহার নিজের শয্যার ভিতর সে কি লুকাইয়া রাখিল ? না জানি কি চুরি করিতেছিল ?
যখন সে তাহার ঘরে প্রবেশ করিল, তখন দিগন্তের শৈলগুলা একটু শুভ্র হইয়া উঠিতেছিল। শয্যার পার্শ্বস্থ চেয়ারে সে বসিয়া পড়িল। তাহার মুখ খুব ফ্যাকাসে হইয়া গিয়াছিল। মনে হইল যেন তাহার অনুতাপ হইয়াছে। তাহার কপাল বালিশের উপর রাখিয়া এবং মাঝে মাঝে ভাঙা ভাঙা শব্দ উচ্চারণ করিয়া আপন মনে কি গুন্গুন্ করিয়া বলিতেছিল। এদিকে ঘরের বাহিরে অশান্ত সমুদ্র গোঁ – গোঁ শব্দে আর্তনাদ করিতেছিল।
“ওমা ! আমার মিন্সে না জানি কি বল্বে ! এখনি যে সে কত কষ্ট পাচ্ছে – আমি করলাম কি ? আমাদের হাতে এখনই যে সে কত কষ্ট পাচ্ছে – আমি করলাম কি ? আমাদের হাতে এখনই ত পাঁচ ছেলে রয়েছে ! ওদের বাপ খেটে খেটে মরছে ; যেন তার ভাবনার ভাব পুরো হয় নি – আমি আবার তার উপর আরও ভার চাপাচ্ছি। ঐ কি আসছে ? না কিছুই না। আমি অন্যায় করছি – সে এসে আমাকে যদি মারে ত উচিত কাজই হয়। ঐ কি সে ? না।
আসে নি ভালই হয়েছে। দরজাটা নড়ছে – কে যেন আসছে। না কেউ না, তাকে ঘরে ঢুকতে দেখলে ভয় হবে এই বা কেমন কথা !”
কালো – কালো সমুদ্রের হাঁস চীৎকার করিয়া পাশ দিয়া চলিয়া যাইতেছে, বায়ু ও সমুদ্রের ঘোরতর গর্জন হইতেছে – এই সকল বাহিরের শব্দে তাহার কিছুমাত্র হুঁশ নাই ; সে চিন্তায় মগ্ন ও শীতে থরথর করিয়া কাঁপিতেছে।
হঠাৎ দরজাটা খুলিয়া গেল, প্রভাতের একটা শুভ্র রশ্মি ঘরে প্রবেশ করিল। জল–ঝরা জাল টানিতে টানিতে জেলে দরজার চৌকাঠে আসিয়া দাঁড়াইল ; এবং হর্ষের হাসি হাসিয়া বলিয়া উঠিল – “এই দ্যাখ, তোর জাহাজ এসে পৌঁছেছে।” “তুই” – এই বলিয়া নব প্রণয়িণীর মত তাহার স্বামীকে জড়াইয়া ধরিয়া তাহার কর্কশ মোটা জামার উপর জেনি মুখ চাপিয়া রহিল।
জেনি যাকে এত ভালবাসিত, তাহার তুষ্টি–মাখা মুখখানি ঘরের অগ্নিশিখার আলোকে প্রকাশিত হইল। জেলে বলিয়া উঠিল –
“এই দেখ গিন্নি, আমি এসে পড়েছি। আমার অদৃষ্ট মন্দ !”
“হাওয়ার ভাবটা কি – রকম ছিল !”
“ভয়ানক।”
“আর মাছ – ধরাটা !”
“খারাপ কিন্তু তাতে কিছু এসে যায় না। আমি আবার তোকে আমার বুকের মধ্যে পেয়েছি – আর কি চাই
এতেই আমি তৃপ্ত। মাছ কিছুই পাইনি, কেবল জালটাই ছিঁড়েছে। আজ রাতে বাতাসটাকে যেন ভূতে পেয়েছিল। ঝড়ের একসময় আমার মনে হ’ল এইবার বুঝি নৌকাডুবি হবে। রশিটা ছিঁড়ে গেল। কিন্তু তুই এতক্ষণ এখানে করছিলি কি ?”
সেই অন্ধকারে জেনির সমস্ত শরীর শিহরিয়া উঠিল। একটু মুশকিলে পড়িয়া সে বলিল, “আমি ? – কিছুই না। নিত্য যা করি তাই। আমি সেলাই করছিলুম – আমি সমুদ্রের গর্জন শুনছিলুম – আর আমার বড় ভয় হচ্ছিল।”
“হাঁ, শীতের সময়টা বড়ই কঠিন। কিন্তু এখন সেসব কথা আর মনে করিসনে।”
তারপর যেন একটা অপরাধের কাজ করিতে উদ্যত – এইরূপ ভাবে কাঁদিতে কাঁদিতে জেনি বলিল –
“দেখ মিনসে ! আমাদের পাড়াপর্শিটি মারা গেছে। বোধ হয় গত রাত্রে সে মরেছে – তুই বেরিয়ে যাবার একটু পরেই। সে দুটি শিশু রেখে গেছে ; একটির নাম “উইলিয়াম”, আর একটির নাম “মাদলীন্”। ছেলেটি এখনো ভাল ক’রে চলতে পারে না, আর মেয়েটি এখনো আধো – আধো কথা বলে। গরীব স্ত্রীলোকটি ভয়ানক অভাবে পড়েছিল।”
পুরুষের মুখটা গম্ভীর হইয়া পড়িল। ঝড়জলে – ভেজা তার পালকের টুপিটা একটা কোণে সে ছুঁড়িয়া ফেলিল এবং মাথা চুলকাইতে চুলকাইতে বলিল – “কি বিপদ ! আমাদের এখনি ত পাঁচটা ছেলে ; এই দুটি নিয়ে সাতটি হবে। আজ এই খারাপ হাওয়ার সময়, এখন থেকেই ত রাতের খাওয়াটা বাদ দিতে হবে। এখন কি করা যায় ? কিন্তু এ ত আমার দোষ নয় ; এ ভগবানের কাজ। এ – সব গভীর কথা তলিয়ে দেখা আমার কর্ম নয়। এই বাচ্চাগুলির কাছ থেকে ওদের মাকে ঈশ্বর কেন ছিনিয়ে নিলেন ? এসব কথা বোঝা শক্ত। আমি ত পন্ডিত নই। আহা, এই ক্ষুদে বাচ্চাগুলি ! গিন্নি, তুই যা, ওদের নিয়ে আয় গে। তারা যদি জেগে থাকে, তা হ’লে মরা মার কাছে একলা থাকতে তাদের ভয় হবে। আমাদের ছেলের সঙ্গেই আমরা ওদের মানুষ করব। ওরা আমাদের পাঁচটি ছেলের ভাই বোন হবে। যখন ঈশ্বর দেখবেন, আমাদের ছেলেদের ছাড়া আরও দুটি ছেলেমেয়েকে আমাদের খাওয়াতে হবে, তখন তিনি আমাদের বেশী ক’রে মাছ দেবেন। আর আমার কথা যদি বলিস, আমি জল খেয়েই থাকব। আমি এখনকার চেয়ে দ্বিগুণ খাটব। সে কথা থাক। এখন যা, চট্ করে তাদের নিয়ে আয়। কিন্তু ব্যাপারখানা কি ? তুই বিরক্ত হলি নাকি ; অন্য সময়ে ত তুই খুব চট্পট্ ক’রে কাজ করিস – আজ তোর হ’ল কী।
তাহার স্ত্রী শয্যার পর্দাটা একটু সরাইয়া বলিল -“ এই দেখ্ !”
…………………………………..
অনুবাদ- জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর
Tags: জেনি, ভিক্টর হুগো
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।