কাপুরুষ ঘুমের ঘোরে হাত রেখেছিল অন্যের হৃদয়ে। হৃদয় উষ্ণ, তবে তাতে শোণিতের শব্দ ছিলো না। মুহূর্তে তার ভেতরে ককিয়ে উঠেছে কান্না। তার অন্তরাত্মা বৈশাখের ঝুরো ধুলোর মতো মাটিতে ছড়িয়ে থাকছে।সীমান্তে তখন সন্নাটা। এক্মুহূর্তের রাতশেষ। তবে কার বুকে সে হাত রেখেছিল? সে নারী না পুরুষ বুঝতে পারেনি তখন ঘোর ভয়ে। নিজে সে মেয়ে নয়। পাশ ফিরে হাত বাড়ালো সে নদীর জলে হাত ঠেকলো। তাহলে কি কারুর কোনো বুকের কাছে কাপুরুষ শুয়ে ছিলোনা একটু আগে? অনুভব করেনি হাতের তালুতে মানবদেহের মেদুর কোনও ওম? মনের ভুল?
এই নদী হঠাৎ জলের বেগ বেড়ে চলে যখন তখন দেখা দিয়েছে। আবার নিশ্চিন্ত বয়েই যায়, নুড়ি পাথর থাকে, কদাচিৎ বড়ো পাথর।আগে এমনি ছিল, নদীর অস্তিত্ব অচেনার মতো ছিল। ঝরনার মতো অনেকরকম বাল্য- কৈশোর ছিলো, সেসব দানা বেঁধে নদী এভাবে পরিণত। এখন জানান দিচ্ছে পাড়ে ঠেল দিয়ে, সরসর করে উঠে ঢেউ দিয়ে।কূল ছাপিয়ে বেশ দূর পর্যন্ত জমি ডুবিয়ে গতি কমাচ্ছে, বাড়াচ্ছে। সোঁ সোঁ শব্দ উঠছে একধরনের। একটু দূরে বাঁক ঘুরেছে ঘাড় বাঁকিয়ে মিশে গেছে আরেক নির্ধারিত গন্তব্যে। অন্তর্গত কলোচ্ছ্বাস অথচ কতো বছর এখানে কোনো পাড় ভাঙার ঘটনা নেই। নদী সরু, তার ধারে চওড়া এই ঘাসগুল্ম নিয়ে কোমরবন্ধের মতন জমি।আর কোনো বাধা বাঁধন নেই তার। খুব কাছে তার এই নদী। সবুজ কালো রঙ তার, একেবারে প্রাকৃতিক।এই মাটিতে পা, ঐ আর একটা পা এগোলেই জল,তল কতো নিচে কে জানে! এই লোকটা নদীর পাশে শুয়ে পড়ে কতবার।সীমান্তের অনেকটা ঠিক নদীর পার বরাবর। নদী পার হলেই অন্য রাজ্য , অন্য দেশ। বশ্যতা স্বীকার করা-দেশ বলে প্রাচীর- রক্ষী কেউ নেই , কিছু নেই। নদীই যেন দেশের সীমারেখা, দেশের রক্ষকও ,প্রবাহিত পরিখা।
এমন কি হয়, হৃদয় ছুঁলে থেমে যায় নদী? এমন কি হয় না সব চলা বেকার করে নদীর দিল্ সব উষ্ণতা জড়ো করে আনলো! সে স্বীকার করলো তার শরীরের সঙ্গে একটা সপ্রাণ সম্পর্ক হয়েছে আর একটা শরীরের। বিহ্বল হয়ে সে চুপ করে একদম, থেমে শুয়ে বোধ করে হাত রাখবার ক্ষণ। হয়তো তার দায় সীমান্তের দুই কূলে সমান ভাবে নিজেকে বিতরণ করে যাওয়া। এক ধারে ঘেঁষে থাকে না নদী।
একভাবে পড়ে থাকে এক প্রান্ত। কাপুরুষ ভালোবাসে নদীতীরে শুয়ে থাকতে।অনন্ত কাকে বলে তা না জানলে কোনো অসুবিধে নেই। বরং ধারণার দিক থেকে সুবিধে, অন্তকে যদি পাওয়া যায়, বোঝা যায় সবকিছু, মালুম হয় এই সব ব্যাসার্ধগুলো শেষের আগে ছিল বা থাকে।
কাপুরুষ ধরা যাক একজন পুরুষ। সে আছে চোখ বুজে আবার সেই ছোঁয়াটুকু পাবে বলে।নদীর কাছে দেওয়া- নেওয়ার পালায় নিজেকে তার কিছু একটা মনে হয়েছে আবার। আজ ঘনঘটার রাত্রি কাটিয়ে যেমন যায় গেছে , রেখে গেছে অশান্তি গাঢ়।
ঘুমের আচ্ছন্নতায় কেউ তাকেই তো ক্ষণেক আগে ছুঁয়ে গেল, মনে হয় জান্নাতের মোলায়েম অঙ্কুর। এই বিরান জায়গায় তার না গুণে গেঁথে রাখা কতো বছর মাস কেটে গেছে এমনভাবে। জায়গাটা উপত্যকা বটে, তার তিনদিকে কতো-শত গাছপালার ঝুপসি। এমনভাবে ঝুঁকে থাকে তারা, যেন করুণার কোল পাতা থাকবেই আজীবন। নরম গাছ, লাল, সবুজ গোটাগোটা ফল, নীল, গোলাপি, শাদা হলুদ ফুল, সোনালি রুপালি পাতা ,এমনকী কাণ্ড শাদাটে গাছের!নরম নরম ভালো থাকার কথা বলে যাচ্ছে। রোদ সুখের।শুধু বৃষ্টি বন্যা,চিন্তার, এবং বরফ বড়ো দুশ্চিন্তার। তাও তুষারপাত হয়, বছরে একবার তো বরফ পড়ে।
এখন সে যেমন পরে আছে এমনি ভাল। ঊর্দ্ধাঙ্গে পোশাক পুরুষের উপযুক্ত নয়। তার বুকের কোথাও আবৃত কিছু নাই থাক, সে চায়। এমন কোন দুর্বলতা কোথাও নেই যার জন্য পরতে হবে চওড়া কপাট বক্ষের অন্তত আঙরাখা। ভয় নেই, শীত নেই, লোকলজ্জা নেই, স্পর্শকাতরতা নেই। অল্পবেশবাসে নদীর ধারে এমনি শুয়ে তার কতো বছর আয়ু কমে গেল। একটা ঘর তার আছে, তাও মনে হয় মিথ্যে কোনো আবডাল , সেখানেও অন্তরালে থাকতে তার কখনও ভালো লাগে না। তার বুকের রঙ গভীর জঙ্গলের মতো সবজেটে।তার জুবান আছে, পতঙ্গের মতো সে সব বাক্য-একটানা, একভাব।সে মোট্মাট একা। চুলে হাওয়া বিলি কেটে যায় যখন তখন পাওয়া যায় ফলন্ত মৌজ গন্ধ।
নির্বিকার তার দিন কাটুক সে চাইলেও,সর্বদা কাটেনি তার দিন এমন। কাফিলা এসেছে, গেছে, দুরন্ত উচ্ছ্বাসে সে তাদের সঙ্গে মিশতে চেয়েছে। তারা তাকে দেখতেই পায়নি, এমনভাবে তখন সে লুকিয়েই বা পড়েছে। কী করে যেন- তারা তার কুটির চিনেছে, তুলে আনা বনের ওষধি নিয়ে চলে গেছে সঙ্গে করে। খল-নুড়িতে থাকে নি একটুকরো শিকড়-বাকড়ও। পশম কাপড় রেখে গেছে তার জন্য, সারা শরীর ঢাকা –পোশাক। খুব ঠাণ্ডায় সেগুলো সে পরেও থেকেছে। সহ্য হয়ে গেছে, সূর্য একটু শক্তিশালী হতেই রোদ মেখে অর্ধনগ্ন উঠে গেছে পাগডাণ্ডি দিয়ে কিংবা নেমে গেছে নদীতে।
অনেকদিন কাফিলা আসেনি। তবে সাধুরা এসেছেন। সে একটা বুদ্ধি করেছে। তপস্বীদের পোঁতা ত্রিশূলের নিচে রেখে দিয়েছে বেশ কিছু কষ্ট করে যোগাড় করা শেকড় বাকড়। ওগুলো খেলেও শীত লাগে না, ব্যথা মরে যায়। কাপুরুষের কোনো নাম আমরা শুনি নি। তাই তাকে এরকম অত্যন্ত নেতিবোধক নাম দিয়েছি। কোনো খারাপ তার লাগে না, সেজন্যে তোয়াক্কাও করি নি। সে যা হোক কাপুরুষ যথেষ্ট পরিশ্রম করে, ফলপাকুড় আনতে হয় , কাঠ আনতে হয়, লতাপাতা খুঁজতে যায় সে কোথায় না কোথায়। এই জায়গাটাই মানুষ নেই, হিংস্র জন্তুও নেই বিশেষ। সুপ্রচুর নীল নীল পরিন্দা, সুন্দর দেখতে, সুন্দর ভাবে মনে ছাপ রেখে যায়। শিকারি পাখি আছে অনেক রকম ধারালো নখ, নেমে আসার ধরন দেখলে ভয় লাগে।
কাপুরুষ জানে এই জায়গাটা শরীরের গলার মতো। সরু একদিকে উঠেছে মাথা উঁচু হয়ে, ধড়টা দক্ষিণে, বেশ বড়ো কতোবড়ো? তাসে জানেনা। ওপরের দিকে অন্য একটা সীমানা –সে দেখে এসেছে, বিরাট বিরাট পাহাড় ভেদ করে গেছে যে গিরিপথ, তার মাঝখান থেকে বানিয়ে তুলেছে নিজেদের বিজয়সূচক স্তম্ভ। তারও পরে নতুন দেশ সে চিনে এসেছে। সে দেশ সে মুলুক অপূর্ব চিনারে ঘেরা। মেয়েরাও চিনারের মতো,ত্বক উজ্জ্বল। মেয়ে-মদ্দ সকলেরই পাকানো চেহারা,বোঝা যায় রীতিমতো জোর আছে।ওকে বোধহয় তারা দেখতে পায়নি।তাই ও আর যায়নি।শুধু শুধুই ওর মন খারাপ হয়ে যায়।
এখন শীতের ঠিক আগের ঋতু, মাঝে মাঝে শিসের মতো হাওয়া আসে। পাহাড়ের ভেতরের রাস্তাটায় বেশ গরম ভাব, ব্যবসায়ীরা বাক্স করে কেশর মশলা প্রভৃতি নিয়ে যাচ্ছে, ওর ভাল লাগে সেই গন্ধ। আর ভাল লাগে তপস্বীরা গাছের আঠা পুড়োয় তার গন্ধ।
ওপারে কীসের একটা মেলা বসেছিল। রঙে ছোপানো কাপড় পরে, মাথায় ফুল গুঁজে মেয়েরা,কপালে ফেট্টি বেঁধে লোকজন এসেছিল নৌকো করে। ওরা নৌকা করে ওপারে তাকে নিয়ে গেলো। কিন্তু ও বুঝতে পেরেছিলো সেখানে একটা মেয়েকে পেতে চাইছে বেশ কয়েকজন। কেউ হটছে না, এক এক জন লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে, একে একে মরণপণ লড়াই করবে তারা। যে বেঁচে যাবে তাকে বিয়ে করবে মেয়েটি। লোকগুলো এক এক করে নামবে জঙ্গের ময়দানে। একজনের সর্বাঙ্গ দিয়ে রক্ত পড়ছে, সে আর দেখতে পারলো না।ভয়ে তার মাথার ভেতরটা ছিঁড়ে পড়ছিল। এপারে আসার পর তাকে শয্যা ছেড়ে উঠতে হয় নি কদিন, ঘর ছেড়ে বার হওয়া তো দূর। তারপর সব নিস্তব্ধ, অবিশ্বাস্য গরম নদীর জল, যতদূর চোখ যায় রক্তাভ।কমলো মাথার যন্ত্রণা, আরোও কতোগুলো দিন নদী পাংশু, গাছপালা খয়েরি, রবমাত্রই ভৌতিক।সবসময় মনে হতো কী যেন ঠিক তার পেছনে, কে যেন সরে গেলো। একটি মেয়ে? তারপর কুয়াশা অনেককিছু মুছে দিল, রক্তের দাগগুলো ভাগ্যিস বরফের নিচে চলে গেছে ভাবলো সে।
সত্যিই একটি মেয়ে সালতির মতো একটা কি বেয়ে এপারে আসত একদিন দেখেছিলো। নদীর ওপারের লোকজন, তার নিজের জাতের, তারা দিব্যি তাকে দেখতে পায়। এবারে তাকে লুকিয়ে পড়তে হলো। সারাদিন থেকে সন্ধ্যের পর মেয়ে ওপারে ফিরে যেতো। পাহাড়ে উঠে যেতে দেখা যেতো।খুব নজর না করলে বোঝা যেত না।দুটি কাজললতার মতো মেয়েটার দু-চোখ। চিকণ লতা যেন ছিপছিপে দেহ। ছপটি দিয়ে দু-দিকের ছোটো গাছগুলোতে আঘাত করতে করতে উঠতো, খুব সম্ভব সাপগুলো পালাতো। পাহাড়ের ওপরে কিছু কিছু ধাপ কাটা, সেখানে খুব মেষচরানিরা যায়। এক- একটা ছোটো ছেলের সঙ্গ নিয়ে মেয়েটা আরও দিগন্তের দিকে লোপ পেয়ে যেতো। একদিন ছেলেগুলো ফিরলো, মেয়েটা এলো না। সে নাকি তার দেশের কোনো গান গেয়েছিল, সম্ভব সে জন্যে সে হারিয়ে গেছে।এ দেশের যুবারা অনুগৃহীতের নিজের গানের স্পর্ধা সহ্য করতে পারে নি।ঠেলে ফেলে দিয়েছে। বোধহয় পাহাড়ের কোন না কোন খাঁজে একদিন পাওয়া যাবে তার নিষ্প্রাণ দেহ।
সে দিন সে একটা কাজের মতো কাজ পেলো। নিঃসাড় মেয়েটাকে তুলে আনতে খুব কষ্ট হয়নি তার। অনুমান যে তার অব্যর্থ।শুশ্রূষা করতে বেঁচে গেলো মেয়েটি। একপক্ষে খুলে গেল কাজললতার দুটি পাতা টিকোলো নাকের দু-পাশে। দিন সাতেক পরে জেগে উঠল সত্যিই, হঠাৎ কোমরের গুপ্ত জায়গায় হাত দিয়ে টেনে বার করলো হিলহিলে একটা ছুরি।কাপুরুষ পালিয়ে বাঁচল। কন্যাটি নদীতে ডুব দিলো, যেভাবে মৎস্যকন্যা জলের গভীরে সাঁতরায় সেভাবেই বিকেলের আলোয় ঝকঝক করে করে কতোদূরে চলে গেলো। তারপর সে শুনলো মৎস্যকন্যার বিষণ্ণ গান।সে জানে এ গানে পরাধীনতার দুঃখ উপলব্ধি করা যায়। তার খুব ইচ্ছে হলো জলের গভীরে সেও নামে। পুরো গানের সব কথাগুলো শুনতে চাইলো তার মন। তবু সে গেলো না। ছুরি তার মনে গেঁথে থাকল।
এলো এই হেমন্তকাল। কতোদিন সে আর উথাল-পাথাল ভাসে নি নদীতে। নতুন আপেলের মতো রঙ ধরেছে নদীতে। সে ভেবেছে গিরিপথ পার হয়ে গিয়ে যে দেশ, তার চমৎকার মানুষদের কথা। শিশুগুলিও কী সুন্দর, কী বড়সড়! লোকগুলোর ইয়া গোঁফ,তাগড়া জোয়ান সব , স্বাস্থ্যময় দেহ।আর কোমরে লম্বা তরোয়াল। কারুর হাতেও বিরাট লাঠি।মেয়েরাও রীতিমতো দীর্ঘাঙ্গী। বোঝা যায় প্রচুর শক্তি তাদের, গাল এদের আপেলের মতো, চোখ নীল পরিন্দার মতো। চুল সন্ধ্যার পাহাড়ি গাছের কেটে রাখা ডালের মতো। কাপুরুষ ভালোবাসবে ঝরা পাতার মধ্যে হাত-পা লুকিয়ে শুয়ে থাকতে থাকতে তাদের কথা ভাবতে। তার ইচ্ছেকেউ তাকে না চিনুক, না বুঝুক, ভালোবাসা তো দূর, সে সকলকে কাছে গিয়ে দেখবে।ছোঁবে।
একদিন নেকড়ের পাল এসেছিলো জল খেতে, তার দিকে তাকায় নি, জিভও চাটে নি। নেকড়ে মায়েদের তার ভালো লেগেছিল। মনে মনে সে পুচকে গুলোকে ছুঁতে পেরেছিল, ওরা ভেলভেটের মতো মোলায়েম। ওদের শিকারিরা দেখলে মেরে ফেলতো- চামড়া ওদের দামি।
আর একদিন এসেছিল কয়েকজন ভবঘুরে।যেখানে সেখানে বাহ্যে যেতো।তারা কাপুরুষের গায়ের ওপর পড়ে থাকা পাতা সরিয়ে খুঁচিয়ে জাগিয়েছিলো, তাকে টেনে বসিয়ে দিয়ে খ্যাঁ খ্যাঁ করে হেসেছিলো আর উত্তর-পশ্চিমে দেখিয়েছিলো ‘ভয়”। বলেছিলো পালিয়ে যেতে,হাতের ভঙ্গিতে আর কী বলেছিলো কাপুরুষ বোঝে নি। মনে হয়েছিলো তার পাহাড় কাঁপবে, নদীর জল উথলোবে,হ্রেষারব শোনা যাবে, পতাকা- লাগানো বড়ো বড়ো লাঠি নিয়ে অনেকে ছুটবে, বর্শায় বিঁধে গড়িয়ে পড়বে ঘোড়সওয়ার।
কাপুরুষ শুনতে পায় সত্যি দামামা বাজছে। দলে দলে ছুটে যাচ্ছে অস্ত্রধারী অশ্বারোহী, ছুটে যাচ্ছে চিনার-ঘেরা দেশের দিকে। অজানা ভবিষ্যৎ প্রায় তার গলা টিপে ধরে। কী হতে চলেছে! মশালের আলোয় বিরাট দেখাচ্ছে গাছপালা। আগুন লেগেছে ভীষণ, অস্ত্রে অস্ত্রে আঘাত লাগছে, তা থেকে ফুলকি ছড়াচ্ছে, সে দেখতে পাচ্ছে। দাউ দাউ করে জ্বলছে তার প্রিয় শহরটি। মুহূর্তে নরক হয়ে গেছে সেই স্থান।আর্ত চিৎকারে খানখান হয়ে পড়ছে পাথর, অট্টালিকা। ছোরার ফলা এসে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিচ্ছে নরম গাছের কাণ্ডগুলোকে।
হঠাৎ যেন একটা কী জীবন্ত উষ্ণ অনুভুতির স্মৃতি তাকে চকিতে চমকে তোলে। সে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছোটে নদীর ধার ধরে ধরে ঘন বনের দিকে। তার অনুমান আবারও ঠিক। নদীর বাঁকে নেমে এবার ছুরি বিদ্ধ মেয়ের শরীর নদী থেকে তুলেছে সে । আরও ভীষণ জঙ্গলে সে যাচ্ছে মেয়েটির হয়তো বা লাশ কাঁধে নিয়ে। রণহুঙ্কার তার মনে হয় কিছু পরে থেমে যাবে। তখন নামাবে লাশ।মৃত না হলে নদীর জলের ছিটেতে মেয়েটি চোখ মেলতেও পারে। যে নদী ডুবিয়ে দেয় নি, কিছু আগে তার তীব্র প্রাণ ছিলো, সে বাঁচার জন্য সাঁতার কেটেছিল। রমণীকে বুকে তুলে ছুটছে কাপুরুষ, দেখছে না নদীর দিকে, আরও অনেক লাশ যদি দেখে ফেলে সে কী করবে? কী বা কাপুরুষ পারে? পিঠের ছুরিটা সে তুলে ফেলেছে। ক্ষত থেকে রক্ত বেরোচ্ছে।বিদেশিনীর হৃদযন্ত্র যদি জেগে ওঠে ,সে বিদেশে জীবিত নারীটিকে ফিরতে দেবে না, আগে তার কাছে শুনে নেবে সেদিনের যুদ্ধের কাহিনী।
[ বানানবিধি লেখকের নিজস্ব]
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।