বহু রাত পর আজ সামান্থা ঘু্মোতে পেরেছে। বহুদিন পর আজ সে সকালের স্নিগ্ধ নিষ্পাপ আলোর বিচ্ছুরণ দেখেছে অন্য রকম এক ভাল লাগায় নিজেকে ঢেলে দিয়ে।
আজ সকালের কফি তাকে মিষ্টি করে শুভাশিস জানিয়েছে। সরে গেছে তার জীবন থেকে কালো রাহুর গ্রাস।
কাল রাতে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে ফ্রেডিকে। অনেকগুলো দিন সহ্য করেছে সে দাঁতে দাঁত চেপে। চোখ বন্ধ করেছে দু’হাতে কিন্তু দরদর করে নেমেছে গালের দু’পাশ ভিজিয়ে লবন স্রোত।
কানে কটন বল গুঁজেছে, যতটা প্রবেশ করালে বাহ্যিক কিছুই কর্ণ কুহরে ধাক্কা দেবেনা ততটা। তাও শুনতে পেয়েছে রাতের পর রাত টমির আর্তনাদ।
ক্যুই ক্যুই করে টমি সামান্থাকেই ডেকেছে তাকে উদ্ধার করতে নিজস্ব গৃহ কর্তার দ্বারা ধর্ষিত হবার কালে। অসহায় সামান্থা সাহস জোগাতে পারেনি অনেক অনেক দিন। পারেনি মাতাল লম্পট স্বামীর এই বর্বর ঘৃণ্য আচরণের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে। নীরবে সয়েছে সব।
গোপনে ঝরে গেছে কষ্টের অঝোর ঝর্ণা। সন্তানহীন জীবনে সেই টমিকে নিয়ে এসেছিল ফিলিপের পেট শপ থেকে পনের মাস আগে। তারপর থেকে ভুলে থেকেছে সন্তান না হবার অপূর্ণতা।
ভুলে থেকেছে পাষণ্ড স্বামীর নিষ্ঠুরতা। ভুলে থেকেছে কি করে বাবা মার কথা অগ্রাহ্য করে নিজে পছন্দ করেই ফ্রেডিকে বিয়ে করেছিল মানুকা চার্চে।
তারপর থেকে বাবা মার সাথে সম্পর্ক নেই। বিয়ের আগের ফ্রেডিকে বিয়ের পর আর চিনতেই পারত না। কেমন বদলে গেল। আসলে বিয়ের আগে দেখেছেই বা কদিন। তখন আবছা আবছা যতটুকু দেখেছে তাতে সবটুকুই ছিল শহরের নাম করা ধনী বাবা মার একমাত্র কন্যা সামান্থা বা তার সম্পত্তিকে নিজের করে নেবার গোপন ইচ্ছের মুখোশ পরা সুন্দর মুখের অন্য রকম মোড়কে আবৃত এক সুন্দর মানুষ। যাতে মুগ্ধতার সবটুকু ঢেলেছিল উজাড় করে দিয়েছিল নিজেকে তার কাছে।
এখন আর সেসব ভাববে না সামান্থা। আজ তার রাহু মুক্তির দিন। রাতের পর রাত খুব নীরবে মোবাইলে ছবি তুলে তুলে প্রমাণ জড় করেছে সে তারপর চুপচাপ তুলে দিয়েছে যথাযথ বিভাগের হাতে।
পশু নির্যাতন আইনে ফ্রেডিকে আদালত শাস্তি দেবে কি দেবে না তা আর ভাবছে না সে।
শুধু ভাবছে সে দাঁড়াতে পেরেছে। সে সাহসী হতে শিখেছে। সে আর নত হবে না দুর্বলতার বেড়ি পরা পায়ের কাছে। তার হাত এখন সত্যের ঝান্ডা বহন করতে শিখে গেছে।
টমি নিশ্চয়ই সব বুঝতে পারে নইলে ওর চোখ কেন টলটলে স্ফটিকের মত স্বচ্ছতায় কাঁপে!
টমির সাদা কালো শরীরে আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ভাবে আজকের দিন একজন সাহসী মেয়ের দিন। আজকের দিন পুরনো কালি মুছে ফেলে নতুন ছবি আঁকার দিন।
সেই রঙ ঢেলে ছবি আঁকার ক্যানভাস কিনতে হলে প্রথমে যেতে হবে বাবা মার কাছে। এত দিন সেই সাহস ছিল না।
আজ সামান্থা উঠে দাঁড়ায়। সকালের কমলা রঙ সূর্যের আলো ওকে পথ দেখায়। সে এগিয়ে যায়।
Tags: আইভি রহমান, একজন সামান্থার গল্প
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।