গল্পঘর
বাংলা গল্পের ভান্ডারে বৈচিত্রের শেষ নেই। দিকপাল সব লেখকেরা সেখানে অকাতরে দান করে গেছেন হাজারো মণি-মুক্তো। সমকালীন সময়ে এক একটি গল্প, বড় গল্প বা উপন্যাস যেমন আলোচনার ঝড় তুলেছে তেমনই কখনও কখনও কালের নিরিখে তা হয়ে উঠেছে অবশ্যপাঠ্য। এরমধ্যে বিখ্যাত সাহিত্যিক বা ঔপন্যাসিকের যেমন বিখ্যাত সৃষ্টি আছে তেমনই রয়েছে অখ্যাত লেখকের বিখ্যাত গল্পটিও। সময় যত এগোচ্ছে ততই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে মানুষ। লাইব্রেরিতে গিয়ে দু-মলাটের মধ্যে থাকা সেসব মণি মুক্তোর স্বাদ গ্রহনের সময় কোথায়? ইচ্ছে থাকলেও বই বাজারে গিয়ে বা প্রকাশকের ঘরে গিয়েও অনেক পেয়ে উঠতে পারেন না সেই কাক্ষিত গল্পটিকে। শুধুমাত্র পাঠকের কথা ভেবে, ভাল গল্প পড়ার আনন্দে আমরা গল্প ঘরে তুলে আনছি সেই রকমই কিছু গল্প। ফেলে আসা সময়ে লেখা কোনও ভাল গল্পের খোঁজ পেলে তার প্রকাশ সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ করে ই-মেলে তা পাঠিয়েও দিতে পারেন আমাদের। আমরা তা রেখে দেব গল্পঘরে। গল্প ঘর হয়ে উঠুক ভাল গল্পের সিন্দুক।
-
অমৃতসর
স্বাধীনতার আগে জালিয়ানওয়ালাবাগে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। এই হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে হিন্দু এবং মুসলমান দু-ই ছিল। হিন্দু এবং মুসলমান, মুসলমান এবং শিখদের আলাদা আলাদা ভাবে চেনার কোন অসুবিধা হচ্ছিল না। তাদের চেহারা, তাদের মেজাজ, তাদের চাল-চলন এবং ধর্ম পৃথক হওয়া সত্ত্বেও, জালিয়ানওয়ালাবাগে আজ তাদের সবাইকে এক এবং অভিন্ন করে দিয়েছিল। তাদের হৃদয়ে একই উৎসাহ […]
-
গুরমুখ সিং-এর উইল
প্রথমে টুকটাক চাকু-চালাচালি, তারপর দু-তরফের জোর লড়াইয়ের খবর আসতে লাগল। এই লড়াইয়ে চাকু, কৃপাণ, তলোয়ার এবং বন্দুক বেপরোয়া চলল। কখনও কখনও বা দেশী বোমা ফাটার খবরও আসতে লাগল। অমৃতসরের অধিকাংশ মানুষেরই ধারণা ছিল এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বেশীদিন স্থায়ী হবে না। আপাতত উৎসাহ উদ্দীপনা আছে, এই উৎসাহ উদ্দীপনা মিইয়ে গেলেই অবস্থা আপসে-আপ ঠিক হয়ে যাবে। এর […]
-
অমরত্ব
অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই একটি ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়, যাকে কোনও নীতিশাস্ত্রীয় বাক্যের দ্বারা প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এই আগ্রহ যতক্ষণ না পরিতৃপ্ত হচ্ছে ততক্ষণ এই জাতীয় মানুষের শরীর মনকে উদ্দীপ্ত, উত্তেজিত, চনমনে করে রাখে। এই অতি আগ্রহের নাম দেওয়া যেতে পারে — অমরত্বের বাসনা। অমরত্বের বাসনা কিন্তু সাধারণ মানুষদের মধ্যে কম। কিন্তু যাঁদের […]
-
সুইমিং পুল
কর্পোরেশন দপ্তরে এ নিয়ে যত চিঠি পাঠানো হয়েছে, তার ফাইল এত মোটা হয়ে গেছে যে সেটা তুলতে পারা একজন মানুষের কম্ম নয়। ভি.আই.পি.কে বাড়িতে ডাকার আগেই মনে ভয় ছিল, মিসেস ওঁর সামনে নালার সমস্যা তুলে ধরতে পারে। কারণ আমি ওর মানসিক অবস্থা জানি। সেই জন্যই বুঝিয়েছিলাম, “দেখ, নালা-টালা তুচ্ছ জিনিস। ওটা ভি.আই.পির বাঁহাতের ও না,চোখের […]
-
ইহলোক
সম্প্রতি মা’র কিছু চিঠি আমাকে ভারি অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। চিঠিতে আর আগের মতো অনিয়মিত টাকা পাঠানোর অভিযোগ থাকে না। মাসের এক দু তারিখে ডাকযোগে টাকা না পাঠালে ক্ষোভে দুঃখে চিঠি – আমি মরি না কেন, মরলে তোমরা বেঁচে যাও, মা’র এমনতর আক্ষেপ থাকে চিঠিতে। কিন্তু সম্প্রতি সব চিঠিতে কেবল বাবার নামে অভিযোগ – তোমার বাবা […]
-
প্রাক্তন প্রেমিক
মিনিবাসে উঠে আর একবার চিঠিটা পড়ল অশোক। ‘তুমি পাঁচটার আগেই চলে এসো। আজ তোমার জন্মদিন। দেখেছ, আমার কেমন মনে আছে !’তারপর আবার ভাঁজ করে রেখে দিল পকেটে। গোটা চিঠির কয়েকটি মাত্র লাইন, এর বেশি আর পড়বার দরকার হল না। মনে আছে, সবই মনে আছে মাধুরীর। এই ছ’বছরে, এত দীর্ঘ একটা সময়ে, অসংখ্য ফুল ঝরে গেছে, […]
-
অতনু ফিরে যাবে
এটা কি আগে এখানে ছিল, না ছিল না? একটা বেঁটে মতো গম্বুজ, তার সবদিকই নানারকম পোস্টারে মোড়া, একটা বড় ফিল্মের পোস্টারে এক যুবতী দু’চোখ দিয়ে হাসছে। এক পাশে ছিল ধানক্ষেত আর জলা, রাস্তার অন্যপাশে দোকানপাট। হ্যাঁ, স্পষ্ট মনে আছে অতনুর, ধানক্ষেতের পাশে যে অগভীর জলাভূমি, সেখানে গামছা দিয়ে মাছ ধরত কয়েকটি কিশোর, মাছ বিশেষ পাওয়া […]
-
দেখা হবে
নকশি কাঁথার মতো বিচিত্র এক পৃথিবী ছিল আমাদের শৈশবে। এখনও পায়ের তলায় পৃথিবীর মাটি, চারিদিকে গাছপালা, মাথার ওপর আকাশ। বুক ভরে শ্বাস টেনে দেখি। না, শীতের সকালে কুয়াশায় ভেজা বাগান থেকে যে রহস্যময় বন্য গন্ধটি পাওয়া যেত তা আর পাওয়া যায় না। আমাদের সাঁওতাল মালি বিকেলের দিকে পাতা পুড়িয়ে আগুন জ্বালত। সেই গন্ধ কতবার আমাকে […]
-
শিশিরের জল
দমদম এয়ারপোর্ট থেকে বেরোবার আগে তার পাসপোর্ট দেখে বাঙালি ইমিগ্রেশন অফিসার হেসে বললেন, ‘আপনি অষ্ট্রেলিয়ান?’ ‘হ্যাঁ। পাসপোর্টই বলছে আমি অষ্ট্রেলিয়ার নাগরিক।’ ‘বহু দিন পরে এলেন! ভাল থাকুন।’ পাসপোর্টে স্ট্যাম্প মেরে ভদ্রলোক সেটা ফেরত দিলেন। কাস্টমসেও কোনও অসুবিধে হল না। স্যুটকেস নিয়ে প্রি-পেড ট্যাক্সির টিকিট কেটে সে যখন বাইরে এল, তখন রাতের অন্ধকার গাঢ় হয়েছে। ড্রাইভার […]
-
ভাত
লোকটার চাহনি বড়বাড়ির বড়বউয়ের প্রথম থেকেই ভালো লাগেনি। কী রকম যেন উগ্র চাহনি। আর কোমর পর্যন্ত ময়লা লুঙ্গিটা অত্যন্তই ছোট। চেহারাটা বুনো বুনো। কিন্তু বামুন ঠাকুর বলল, ভাত খাবে কাজ করবে। -কোথা থেকে আনলে? এ সংসারে সব কিছুই চলে বড়পিসিমার নিয়মে। বড়পিসিমা বড়বউয়ের পিসি-শাশুড়ী হন। খুবই অদ্ভুত কথা। তাঁর বিয়ে হয়নি। সবাই বলে, সংসার ঠেলবার […]
-
মতিজানের মেয়েরা
বিয়ে হলে নতুন সংসারে মেয়েদের একটি অবস্থান নির্ধারণ হয়, সে বাড়ির বউ হয়, বউ হওয়া মানে একটি নতুন জন্ম সুখ দুঃখ অনেক কিছু মিলিয়ে আপন ভুবন-সংসারের কর্তৃত্ব-এমন একটি ধারণা ছিল মতিজানের। কিন্তু এই সংসারে ওর অবস্থানটা যে কোথায় তা ও বুঝতে পারে না। এই সংসারের ওর কি প্রয়োজন সেটাও জানে না। মাথার ওপর আছে শাশুড়ি, […]
-
আত্মহত্যা
বিছানাটা ময়লা; বালিশটা তেলচিটে, তোশক থেকে বিশ্রী একটা ভ্যাপসা গন্ধ উঠছে … সারা বর্ষা রোদে পড়েছে কি না সন্দেহ। … এ বিছানায় শুয়ে বরং লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা যায়, কিন্তু স্বপ্ন দেখা যায় না সুদুর্লভ প্রিয়ার। মেসের বিছানা নয় – বাড়িরই, তবে বাড়িতেও, মানে মোহনদের মতো বাড়িতে এর চাইতে ভাল কিছু আশা করা যায় না। […]
-
ক্ষুধিত পাষাণ
আমি এবং আমার আত্মীয় পূজার ছুটিতে দেশভ্রমণ সারিয়া কলিকাতায় ফিরিয়া আসিতেছিলাম, এমন সময় রেলগাড়িতে বাবুটির সঙ্গে দেখা হয়। তাঁহার বেশভূষা দেখিয়া প্রথমটা তাঁহাকে পশ্চিমদেশীয় মুসলমান বলিয়া ভ্রম হইয়াছিল। তাঁহার কথাবার্তা শুনিয়া আরো ধাঁধা লাগিয়া যায়। পৃথিবীর সকল বিষয়েই এমন করিয়া আলাপ করিতে লাগিলেন, যেন তাঁহার সহিত প্রথম পরামর্শ করিয়া বিশ্ববিধাতা সকল কাজ করিয়া থাকেন। বিশ্বসংসারের […]
-
একাদশী বৈরাগী
কালীদহ গ্রামটা ব্রাহ্মণ-প্রধান স্থান। ইহার গোপাল মুখুয্যের ছেলে অপূর্ব ছেলেবেলা হইতেই ছেলেদের মোড়ল ছিল। এবার সে যখন বছর পাঁচ-ছয় কলিকাতার মেসে থাকিয়া অনার্স-সমেত বি.এ. পাশ করিয়া বাড়ি ফিরিয়া আসিল, তখন গ্রামের মধ্যে তাহার প্রসার-প্রতিপত্তির আর অবধি রহিল না। গ্রামের মধ্যে জীর্ণশীর্ণ একটা হাইস্কুল ছিল—তাহার সমবয়সীরা ইতিমধ্যেই ইহাতেই পাঠ সাঙ্গ করিয়া, সন্ধ্যাহ্নিক ছাড়িয়া দিয়া দশ-আনা ছ-আনা […]
-
পুঁই মাচা
সহায়হরি চাটুয্যে উঠানে পা দিয়েই স্ত্রীকে বলিলেন-একটা বড় বাটি কি ঘটি যা হয় কিছু দাও তো, তারক খুড়ো গাছ কেটেছে, একটু ভালো রস আনি। স্ত্রী অন্নপূর্ণ খড়ের রান্নাঘরের দাওয়ায় বসিয়া শীতকালের সকালবেলা নারিকেল তেলের বোতলে ঝাটার কাটি পুরিয়া দুই আঙুলের সাহায্যে কাটার কাটিলগ্ন জমানো তৈলটুকু সংগ্ৰহ করিয়া চুলে মাখাইতেছিলেন। স্বামীকে দেখিয়া তাড়িতাড়ি গায়ের কাপড় একটু […]
-
বেদেনী
শম্ভু বাজিকর এ মেলায় প্রতি বৎসর আসে। তাহার বসিবার স্থানটা মা কঙ্কালীর এস্টেটের খাতায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মতো কায়েমি হইয়া গিয়াছে। লোকে বলে, বাজি; কিন্তু শম্ভু বলে ‘ভোজবাজি-ছারকাছ’। ছোট তাঁবুটার প্রবেশপথের মাথার উপরেই কাপড়ে আঁকা একটা সাইনবোর্ডেও লেখা আছে ‘ভোজবাজি-সার্কাস’। লেখাটার একপাশে একটা বাঘের ছবি, অপরদিকে একটা মানুষ, তাহার এক হাতে রক্তাক্ত তরবারি, অপর হাতে […]
-
টিচার
রাজমাতা হাইস্কুলের সেক্রেটারি রায়বাহাদুর অবিনাশ তরফদার ভেবেচিন্তে শেষ পর্যন্ত টিচারদের কিছু সদুপদেশ দেওয়া স্থির করল। বুড়ো বয়সে এমনিতেই তার ঘুম হয় কম, তার ওপর এইসব যাচ্ছে তাই খাপছাড়া ব্যাপারে মাথা গরম হয়ে যাওয়ায় কদিন আর ঘুম হয় নি। টিচাররা ধর্মঘট করবে বেতন কম বলে, বেতন বাকি থাকে বলে, এটা সেটা হরেকরকম অসুবিধা আছে বলে চাকরি […]
-
রস
রস নরেন্দ্রনাথ মিত্র কার্তিকের মাঝামাঝি চৌধুরীদের খেজুর বাগান ঝুরতে শুরু করল মোতালেফ। তারপর দিন পনের যেতে না যেতেই নিকা করে নিয়ে এলো পাশের বাড়ির রাজেক মৃধার বিধবা স্ত্রী মাজু খাতুনকে। পাড়া-পড়শি সবাই তো অবাক। এই অবশ্য প্রথম সংসার নয় মোতালেফের। এর আগের বউ বছরখানেক আগে মারা গেছে। তবু পঁচিশ-ছাবি্বশ বছরের জোয়ান পুরুষ মোতালেফ। আর […]
-
লাল জুতো
গৌরীর সঙ্গে ঝগড়া হওয়ার দরুন কিছু ভাল লাগছিল না। মনটা বড় খারাপ,–নীতীশ ভাবতেই পারছে না, দোষটা সত্যিই কার। অহরহ মনে হচ্ছে–আমার কি দোষ? জীবনে অমন মেয়ের সঙ্গে সে কখনই কথা বলবে না। দক্ষিণ দিককার বারান্দা দিয়ে যতবার যায় ততবারই দেখে, গৌরী পর্দ্দা সরিয়ে এদিক পানে চেয়ে আছে, ওকে দেখলেই পলকে পর্দ্দা ফেলে দেয়। এ চিন্তা […]
-
একটি তুলসীগাছের কাহিনী
ধনুকের মতো বাঁকা কংক্রিটের পুলটার পরেই বাড়িটা। দোতলা, উঁচু এবং প্রকাণ্ড বাড়ি। তবে রাস্তা থেকেই সরাসরি দণ্ডায়মান। এদেশে ফুটপাত নাই বলে বাড়িটারও একটু জমি ছাড়ার ভদ্রতার বালাই নাই। তবে সেটা কিন্তু বাইরের চেহারা। কারণ, পেছনে অনেক জায়গা। প্রথমত প্রশস্ত উঠান। তারপর পায়খানা-গোসলখানার পরে আম-জাম-কাঁঠালগাছে ভরা জঙ্গলের মতো জায়গা। সেখানে কড়া সূর্যালোকেও সূর্যাস্তের ম্লান অন্ধকার এবং […]
-
জননী
আমরা ভাইবোন মিলে মায়ের পাঁচটি সন্তান। বাবা বলত, মায়ের হাতের পাঁচটি আঙুল। সবার বড় ছিল বড়দা, মায়ের ১৯ বছর বয়সের ফল। প্রথম বলে বড়দা মায়ের সেই বয়সের রূপ যতটা পেয়েছিল পুঁটলি বেঁধে নিয়ে জগতে এসেছিল। শুনেছি, ঠাকুরমা বলত, অত রং অমন চোখ নিয়ে যদি এলি, তবে দাদু, মেয়ে হয়ে এলি না কেন? ঠাকুরমার ক্ষোভ বছর […]
-
যদু ডাক্তারের পেশেন্ট
ক্যালকাটা ফিজিসার্জিক ক্লাবের সাপ্তাহিক সান্ধ্য বৈঠক বসেছে। আজ বক্তৃতা দিলেন ডাক্তার হরিশ চাকলাদার, এম ডি, এল আর সি পি, এম এম আর সি এস। মৃত্যুর লক্ষণ সম্বন্ধে তিনি অনেকক্ষণ ধরে অনেক কথা বললেন। চার পাঁচ ঘণ্টা শ্বাস রোধের পরেও আবার নিশ্বাস পড়ে, ফাঁসির পরেও কিছুক্ষণ হৃৎস্পন্দন চলতে থাকে, দুই হাত দুই পা কাটা গেলেও এবং […]
-
লাভের বেলায় ঘন্টা!
ঘাটশিলার শান্তিঠাকুর বলেছিলেন আমায় গল্পটা… ভারি মজার গল্প। দারুণ এক দুরন্ত ছেলের কাহিনী… যত রাজ্যের দুষ্টবুদ্ধি খেলত ওর মাথায়। মুক্তিপদ ছিল তার নাম, আর দুষ্টুমিরাও যেন পদে-পদে মুক্তি পেত ওর থেকে। আর হাতে-হাতে ঘটত যত অঘটন! এই রকম অযথা হস্তক্ষেপ আর পদক্ষেপের ফলে একদিন যা একটা কান্ড ঘটল… গাঁয়ের শিবমন্দিরের ঘণ্টাটার ওপর ওর লোভ ছিল […]
-
বেদেনী
শম্ভু বাজিকর এ মেলায় প্রতি বৎসর আসে। তাহার বসিবার স্থানটা মা কঙ্কালীর এস্টেটের খাতায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মতো কায়েমি হইয়া গিয়াছে। লোকে বলে, বাজি; কিন্তু শম্ভু বলে ‘ভোজবাজি-ছারকাছ’। ছোট তাঁবুটার প্রবেশপথের মাথার উপরেই কাপড়ে আঁকা একটা সাইনবোর্ডেও লেখা আছে ‘ভোজবাজি-সার্কাস’। লেখাটার একপাশে একটা বাঘের ছবি, অপরদিকে একটা মানুষ, তাহার এক হাতে রক্তাক্ত তরবারি, অপর হাতে […]
-
বনফুলের দুটি গল্প
বনফুলের দুটি গল্প বেচারামবাবু হরিশ মুদী সন্ধ্যাবেলা হিসাব বুঝাইয়া গেল যে গত মাসের পাওনা ২৭.৭০ পঃ হইয়াছে এবং তাহা অবিলম্বে দেওয়া দরকার। সদ্য-অফিস-প্রত্যাগত বেচারামবাবু বলিলেন–“আচ্ছা মাইনেটা পেলেই–!” অতঃপর কাপড়-চোপড় ছাড়িয়া বেচারামবাবু বাহুরের রোয়াকটিতে বসিয়া হাঁক দিলেন–“অরে চা আন্–।” চা আসিল। চা আসিবার সঙ্গে সঙ্গে পাড়ার হরিবাবু, নবীন রায়, বিধু ক্লার্ক প্রভৃতি চার পাঁচজন ভদ্রলোকও সমাগত […]
-
চিত্রকর
ময়মনসিংহ ইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে আমাদের গোবিন্দ এল কলকাতায় । বিধবা মায়ের অল্প কিছু সম্বল ছিল । কিন্তু , সব চেয়ে তার বড়ো সম্বল ছিল নিজের অবিচলিত সংকল্পের মধ্যে । সে ঠিক করেছিল , ‘ পয়সা’ করবই সমস্ত জীবন উৎসর্গ করে দিয়ে । সর্বদাই তার ভাষায় ধনকে সে উল্লেখ করত ‘ পয়সা ‘ বলে […]
-
অতৃপ্ত কামনা
সাঁঝের আঁধারে পথ চলতে চলতে আমার মনে হল, এই দিনশেষে যে হতভাগার ঘরে একটি প্রিয় তরুণ মুখ তার ‘কালো চোখের করুণ কামনা’ নিয়ে সন্ধ্যাদীপটি জ্বেলে পথের পানে চেয়ে থাকে না, তার মতো অভিশপ্ত বিড়ম্বিত জীবন আর নেই! আমারই বেদনা-রাগে রঞ্জিত হয়ে গগনের পশ্চিম দুয়ারে জ্বালা সন্ধ্যা-তারা আমার মুখে তার অশ্রু-ভরা ছল-ছল চোখ নিয়ে চেয়ে ওই […]
-
অনধিকার প্রবেশ
একদা প্রাতঃকালে পথের ধারে দাঁড়াইয়া এক বালক আর-এক বালকের সহিত একটি অসমসাহসিক অনুষ্ঠান সম্বন্ধে বাজি রাখিয়াছিল। ঠাকুরবাড়ির মাধবীবিতান হইতে ফুল তুলিয়া আনিতে পারিবে কি না, ইহাই লইয়া তর্ক। একটি বালক বলিল, “পারিব”, আর-একটি বালক বলিল, “কখনোই পারিবে না।” কাজটি শুনিতে সহজ অথচ করিতে কেন সহজ নহে তাহার বৃত্তান্ত আর-একটু বিস্তারিত করিয়া বলা আবশ্যক। পরলোকগত মাধবচন্দ্র […]
-
বাতাসী
বাতাসী জেলের মেয়ে। বাপ নাই, মা নাই, ভাই নাই – থাকিবার মধ্যে আছে এক বুড়ি ঠাকুরমা। সকলে মরিয়া গেল ; যাহাদের পরে মরিবার কথা, তাহার আগে চলিয়া গেল ; বুড়ি রহিল, আর রহিল তাহার বুড়া বয়সের একমাত্র অবলম্বন বাতাসী। বাতাসী নামটার একটু ইতিহাস আছে। বাতাসীর বাপ মার অনেক দিন সন্তান হয় নাই। তাহারা কত দেবতার […]
-
জেলফেরত
নাম ছিল রমেশচন্দ্র সেন। কিন্তু লোকে তাকে রমেশ বলে জানত আর রাজ্যসুদ্ধ ছেলেমেয়ে সকলেই তাকে ঐ নামেই ডাকত। ছেলেবেলা মারপিট করে স্কুল থেকে তাড়িত হয়ে জিমন্যাস্টিক আর গুন্ডামি করে বেড়াচ্ছিল, একটু – আধটু ছবি আঁকার দিকে ঝোঁক থাকায় বাড়ির লোকে তাকে আর্টস্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলে কিন্তু সেখানেও তার কিছু হল না। লতা–পাতা–ফুল আঁকার ক্লাস থেকেই […]