Tag Archives: শ্রেয়া ঘোষ


  1. গল্পের সময় উৎসব সংখ্যা
    জামতাড়া গ্যাং

    (১) বেশিদিন নয়, এক বছর পুরতে  আরও মাস চারেক বাকি ছিল। এই  ক’মাসের খাপছাড়া সংসার।  চুকিয়ে দিয়ে যখন বেরিয়ে আসে কেউ, টান পড়ে কি কোথাও। পড়লেও সে টান পোক্ত নয়। উপড়ে ফেলতে তেমন কষ্ট কিছু হবার কথা নয়। দুটো ট্রলি, বড় হাতব্যাগটা  আর একটা ল্যাপটপ। বেরিয়ে এসে দরজাটা টেনে দিলেই খচ করে  মসৃণ শব্দে  একটা […]

  2. মাঘ ফাগুনের গল্প

    (১) আজ তিরিশে। তিরিশে জানুয়ারি।আসছে মাসের  চোদ্দই ভ্যালেন্টাইন ডে। সেই সুবাদেই সাত তারিখের মধ্যে একটা প্রেমের গল্প জমা দিতে হবে। আজই চোখে পড়ল বিজ্ঞপ্তি। এর মধ্যে তিন তারিখ আমাকে দেখতে আসবে। সেটা অবশ্য নতুন কথা নয়। রবিবারের কাগজ দেখে মা পাত্রী চাই এর ছোট বিজ্ঞাপনগুলো দাগিয়ে রাখে প্রথমে। তারপর মোটা আট নম্বর খাতায় ফোন নম্বরগুলো টুকে রাখে। এক একটা নম্বর লিখে মাঝে খানিকটা করে জায়গা ছেড়ে রাখে। শেষে একটার পর একটা নম্বরে ফোন। মা’র উৎসাহে একটু কি ঘাটতি পড়ছে সম্প্রতি? দুটো ফোন নম্বরের মধ্যে রাখা জায়গা কমছে। আগে ছিল একটা পুরোন ডায়রি, এল. আই . সি.’র। শেষ হতে চার নম্বর রুলটানা খাতা। এখন আট নম্বর সাদা খাতা। সাদা পাতায় লেখা অভ্যেস নেই তেমন মা’র। লাইন বেঁকে যায়। পাতার শেষ দিকে পৌঁছে নম্বরের সঙ্গে লেখার মিল থাকেনা। ফোন করে বেইজ্জতিও হয়ে যায়।  তার আগে শুক্রবার থেকে তাগাদা মেরে দাদাকে দিয়ে ফোনে পয়সা ভরায়। মা স্নানে যায় যখন, মঝেমাঝে আমি ছেলেদের ছবিগুলো লুকিয়ে দেখি। এসব লুকোচুরির দরকার ছিলনা আগে। আমি, দাদা, মা সকলে মিলে হুমড়ি খেয়ে ছবি দেখতাম। হাসাহাসি। কেউ টেকো তো কেউ মোটু। বুড়োটে বা অসভ্য টাইপ। এখন আর কাউকেই বাতিল করা হয়না। আর মা ছবি লুকিয়ে রাখে। প্রথমেই সাত পাঁচ ভেবে নিয়ে পরে কান্নাকাটি, মন খারাপ। – আগে কথাবার্তা এগোক খানিক, তারপর ছবি টবি। চুপচাপ মেনে নিই। আর সুযোগমতো টুক করে দেখে নিই। তবে কোন  তাবনাকে ঘেঁষতে দিই না মনের চৌহদ্দিতে। এবার বেশ অনেকদিন পর দেখতে আসা অব্দি এগোল। করোনা, ভাদ্র মাস হ্যানাত্যানা। তবে এসব ভাবের ঘরে চুরি। বয়স বাড়ছে, মুখে তার ছাপ পড়ছে। যতই কায়দা করে ছবি তুলে দিক দাদা পাত্রপক্ষ ভোলেনা। বলেই দেয় মুখের ওপর, আরএকটু স্পষ্ট ছবি পাঠান, অথবা কেউ বলে আরও দুচারটে ছবি, ঘরের বাইরে, ন্যাচারাল ছবি নেই? ছবি পছন্দ হল যদি তখন স্কুল, কলেজ, অনার্স না পাস কোর্স, মাস্টার্স  করেনি ? গান জানা টানা, সেলাইফোঁড়াই,হাতের কাজ, যেমন মা বলে তখনকার সময়ে ছিল, এখন আর তা নিয়ে অত কেউ মাথা ঘামায় না। এর পর চাকরি। চাকরি শুধু করলে হবেনা, যখন খুশি ছাড়ব কিনা। এটাতে মাস্টার স্ট্রোক হাঁকাতে পারে মা। – ওর চাকরি নিয়ে কোন প্রবলেম হবেনা দিদি। ইচ্ছে হলে ঘরে বসেও…..। এই করোনার সময়ে তো পুরো ঘরে কম্পিউটারেই কাজ করে যাচ্ছে। কোন অফিস? – প্রাইভেট কোম্পানি। এর পর প্রসঙ্গান্তরে যাবার জন্যে মা সামান্য তাড়াহুড়োয়। সোজা একটা উপায় শিখিয়ে দিয়েছি আমিই। – পরীক্ষা টরীক্ষা তো দিচ্ছে। বেটার পেলেই … আজকাল আর বুক ধুকপুকটুকুও করেনা। মা আর দাদাটার জন্যেই কষ্ট হয়। জানি মুখে যাই বলুক, প্রত্যেকবার একটা আশায় কেমন অধীর হয়ে থাকে।শুধু ওদের কথা ভেবেই আপ্রাণ চেষ্টা করি একটা পণ্যের মতো সত্যি মিথ্যে মেশান বিজ্ঞাপন দিয়ে  ক্রেতার  মন জিতে নিতে। দাদা বরাবর কুল থাকে। এবারই দেখছি বড্ড ছটফট করছে। (২) যা বলছিলাম, তিরিশ থেকে সাত। এই সাতটা দিন, না আট দিন। জানুয়ারিতে একতিরিশ দিন বলে বাড়তি আরেকটা দিন। ম্যাডাম বলে দিয়েছেন, এই এক  সপ্তাহ তোমাকে সময় দিলাম তনু। স্যার বলছিলেন এক তারিখেই তোমার হাতে চিঠি ধরাতে। আমি বলে কয়ে সাতটা দিন চেয়ে নিয়েছি। বরাবরই আমি ম্যাডামের  এই বাড়তি স্নেহটুকু বুঝতে পারি। তনুশ্রী থেকে কদিনের মধ্যেই তনু হয়ে গেছি বলে শুধু নয়। গম্ভীর হয়ে থাকলে তুমি , নাহলে তুই হয়ে গেছি সেই কবেই। টি. এ. বিল টিল… ঝামেলা হয়নি কখনই, যেমন রাকেশ কি বাণীদিদের । – ভীড় বাসে টাসে উঠতে যেওনা। টোটো কি অটো করে নিও। আমি থ্রু করিয়ে দেব। তবে আমি বাড়তি সুযোগ নিই নি কখনও এর চেয়ে বেশি। সেরকম হলে তো অ্যাপ ক্যাবের ভাড়াও চেয়ে বসতাম। কিন্তু পরিস্থিতি এখন ঘোরালো হয়ে উঠছে। কোভিডের জন্যে বাজার ডাউন। অনেককেই বসিয়ে দিয়েছে। – একটা কিছু করে দেখা এবার তনু। প্রীতি, মিলনী স্যারের কাছে এসে তোর কথা তুলে ঝামেলা করে গেছে। একটা ক্লায়েন্টও দিতে পারিসনি ….. ছ`মাসের জায়গায় সাড়ে ন`মাস গড়িয়ে গেল। শুধু আমার কথায় তোকে কাগজ ধরায়নি। – বিয়ে হয়ে বাচ্চা ভি পয়দা হবার টাইম পার হয়ে গেল, তনুশ্রী তো এনগেজমেন্ট তকই পৌঁছল না। ঢপ মেরে যাচ্ছি তোর হয়ে এটা ওটা। ওরই লাকটা খারাপ প্রদীপদা। একটা তো প্রায় ফাইনাল হয়ে গেল তখন ছেলের জেঠু করোনায় গেল। তোর ঐ ফরেনের কেসটার কথা জিগ্যেস করছিল। বলে দিলাম ফ্লাইট চালু হলেই ওটা ধরে নেবে তনু। প্রায় ফাইনাল। চোদ্দই ভ্যালেন্টাইন। সাত তারিখের মধ্যে ফাইনাল করতে হবে। একটা একটা করে দিন চলে যাচ্ছে । প্রেসার বাড়ছে,ঘাড়ের কাছে  কন্টিনিউয়াস দপদপানি, […]

  3. অনিকেত

    ফোনটা আসতই এক দিন।এক দিন না একদিন আসতই ফোনটা।নিশ্চিত জানত ঋভু।আঠাশ বছর ধরে। আমি সুমনা – চিনবে না হয়তো।আমি… বুঝতে পেরেছি।যদিও বুঝতে পারাটা অদ্ভুত।কিম্বা হয়তো খুব স্বাভাবিক। নতুবা  ঋভুর এই নিশ্চিত অপেক্ষা কার্যকারণহীন সাট্টার নম্বর ধরার মতো  খেলো হয়ে যেত। সম্পর্ক আছে কিছু ? থাকলেও অত্যন্ত জটিল।কিম্বা হয়তো একদম সোজা সরল।মণিকা স্বামী, ছেলেকে ছেড়ে পালিয়েছিল পার্থজিতের সঙ্গে।কিম্বা পার্থজিত মেয়ে আর বউকে ছেড়ে পালিয়েছিল মণিকার সঙ্গে।পুরোন ঘটনা।বহু যোগ বিয়োগ, ভুল উত্তর , না মেলা ভাগশেষ…. সুমনার এই ফোনটাও উত্তরমালায় ছিলনা।তথাপি সুমনা ফোন করেছিল। যখন আঠাশ বছর পার।আঠাশ বছর পার তবু  ঋভু জানতো এই অনিবার্য ফোনের কথা। কোন প্রস্তুতি নেয়নি যদিও।উত্তর প্রতি -উত্তরের কোন ক্রম তৈরি করেনি সে মনে মনে কদাপি। কিছু ঘটনা, কোন স্মৃতি, কোন অপেক্ষা সতত সজীব থেকে যায়। আজীবন। আর এখন তো মাত্রই আঠাশ বছর। – আঠাশ বছর আগে তোমার বয়স কত ছিল?  সুমনার প্রশ্ন কি প্রস্তুতিবিহীন? জানেনা ঋভু।এই প্রথম আটকে রাখা স্রোতমুখ খুলে যায়। এতটুকু সতর্ক হবার সময় পায়না – শনিবার ছিল ছ’ বছরের জন্মদিন। স্কুলের বন্ধুরা এসেছিল। ওদের মা বাবা,পাড়ার বন্ধু, পিসিমণি, জেঠুমণিরা… ।সোমবার সকালে চলে গিয়েছিল।অফিস ট্যুর বলে বেরিয়ে গিয়েছিল। আমাকে আর বাবাকে। ফেরেনি আর। কোথায় গিয়েছিল তুমি জান। – তোমার ক্ষেত্রে সাডন শক ছিল।আমরা জানতাম।আমি আর মা।জানতাম বাবা থাকবেনা আর আমাদের সঙ্গে। কলকাতা যেত।ঠাম্মির বাড়ি যাবার কথা বলে।অথচ ঠাম্মি ফোন করে বাবাকে চাইত।আমি মাকে বলতে পারতাম না সেকথা।মা’ও হয়তো অনেক কিছু লুকিয়ে রাখতে চাইত আমার থেকে।মণিকা নামটা হাওয়ায়  ভাসত। চলতে ফিরতে ধাক্কা খেতাম আমরা। আমি আর মা। ছোট্ট ওয়ান রুম ফ্ল্যাট।পার্টিশন করে কোনক্রমে দুটো খুপরি।  কিছু আড়াল করার উপায় ছিল না। মণিকা, মণিকা , মণিকা – একটা বেলুনের মতো ফুলে উঠছিল ক্রমশ।ঘরের মাঝখানটা জুড়ে ফুলে উঠছিল।আমাদের- আমাকে আর মা’কে  ঠেলে দিচ্ছিল।দেওয়ালের সঙ্গে পিষে চেপ্টে দিচ্ছিল।বাবা ঢুকে পড়েছিল বেলুনটার ভেতর। পুরোটা ঢুকতেই ফেটে  গেল। বম্ব ব্লাস্ট। আমাদের নাকে মুখে বিষাক্ত গ্যাস ।দম আটকে মরে গিয়েছিলাম যেন।স্প্লিন্টারে ছিন্নভিন্ন হয়ে ছিটকে পড়েছিলাম।অথচ এরকম , ঠিক এরকমই ঘটবে আমি জানতাম ।ভোরে কতবার দেখেছি এই স্বপ্নটা। ঘুম ভেঙে ভেবেছি আজই হয়তো। স্কুল থেকে ফিরে ভাবতাম আজই হয়তো।টেনশনে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম আমরা । মা আর আমি। পার্থজিত মিত্র’র স্ত্রী আর মেয়ে। – বাবাকে ঢিল মারতো পাড়ার ছেলেরা। অফিস যাবার পথে।ফেরার পথে গলির মোড়ের জটলা থেকে বেড়ালের ডাক, গাধার ডাক। সব চুল উঠে গেল বাবার, জানো?  দু তিন মাসের মধ্যে পুরো টাক ।টাকলু বাবু  টাকলু বাবু করতো।ছড়া কাটতো… টাকলু গেল মাছ ধরতে কোন সে নদীর কূলে, চুল নিয়ে গেল কোলাব্যাং আর বউ নিয়ে গেল কে রে? স্কুলের বন্ধুর মা’রা আমার জন্যে আলাদা করে টিফিন পাঠাতো। সেই সঙ্গে আবার সাবধানও  করে দিত – ঋভুর সঙ্গে বেশি কথা বলার দরকার নেই। কোন ম্যাম আমাকে বকতোনা।অন্য ছেলেদের শাস্তি দিত । আমাকে বলতো – ঋভু তুমি  পরের দিন হোম – ওয়ার্কটা সাবমিট করে দিও।সেশনের মাঝপথেই স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পরের বছর নতুন স্কুল।বাংলা মিডিয়াম।হস্টেল।স্কুলের পর কলেজ।হস্টেল। মা মরা ছেলে। সকলকে বলতে বলতে – সেই ছ বছর থেকে সমানে বলতে বলতে… বাবা অফিস থেকে সাইটে ট্রান্সফার নিয়ে নিল। এই সাইট, ঐ সাইট… দেড় বছর, কোথাও দু বছর। – দেখা হয়নি আর কখনও? – ডিভোর্সের কেস চলছিল যখন, আমাকে যেতে হয়েছিল একবার বাবার সঙ্গে।লাথি দেখিয়েছিলাম কোর্টরুমেই। – মা তোমার কথা বলতো।মানে মণিকার ছেলের কথা। বলতো বাচ্চাটা একা বড় হবে। মা তোমার কথা বললে আমি রেগে উঠতাম। অথচ পরে আমিও ভাবতাম। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছে বাচ্চা ছেলে একটা। অন্ধকার অন্ধকার বাড়ি। অপছন্দের খাবার । – বাবা দারুণ রান্না করে। আমিও। হস্টেলের ছুটিতে বাবার সাইটে চলে যেতাম।ঐ কদিন কিচেনে বাবা কাউকে ঢুকতেই দিত না। […]

যোগাযোগ


email:galpersamay@gmail.com

Your message has been sent. Thank you!

গল্পের সময় পরিবার
সমীর
অগ্নীশ্বর
দেবাশিস
চিন্ময়
পার্থ
মিতালি
জাগরণ
দেবব্রত

© 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ