একবার জানালার সামনেটায় দাঁড়ালো পার্থ। আটতলার উপরের জানালা। সকাল থেকে নিম্নচাপ। জানালার কাঁচের পাল্লা খুলতে বেশ দাপুটে হাওয়া দিল। নীচে ঝুঁকে দেখলো অফিস ক্যাম্পাসের রাস্তার আলো জ্বলছে। এদিক ওদিক জল জমেছে অল্প অল্প। পিছনে ঘুরে দেখল পার্থ, অফিসের কিউবিকলগুলো। ফাঁকা। বসের ঘরে তখনও আলো আছে। বস হয়তো একমনে ফেসবুক করছে। একটা ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু গভীর শ্বাস ফেলল পার্থ। জানালার পাল্লাটা ধরে বেয়ে উঠল। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখলো। পূর্ণার মেসেজ এসেছে, কখন ফিরবে জিগেস করেছে। জানালার উপরে দাঁড়িয়েই লিখলো ‘দেরি হবে, খেয়ে নিও’। গ্যালারি গিয়ে তিন্নির ছবি দেখলো একবার। এক রত্তি মেয়েটা বুঝবে না। বাবাকে বোঝার আগেই বাবা কই? বড্ড অপরাধী মনে হলো পার্থর হঠাৎ নিজেকে। একবার ভাবলো আর ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে সবাই জেনে যাবে। পূর্ণার ওপর অনেক ঝড় ঝাপটা যাবে। পূর্ণা নিশ্চই সামলে নেবে। পূর্ণার সাথে প্রথম আলাপের কথা মনে পড়ে গেল। সেই কলেজ,তারপর ক্যাম্পাসিং, পূর্ণা আগেই চাকরি পেল। তারপরে পার্থ। একসাথে ব্যাঙ্গালোর। বাড়ীতে লুকিয়ে ব্যাঙ্গালোরে লিভ ইন। তারপর কলকাতায় ফিরে বিয়ে। এর মধ্যে দুটো কোম্পানি বদল করেছে পার্থ। আচ্ছা পুলিশ কি সন্দেহ করবে? পূর্ণার সাথে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে কিনা খুঁজবে? পার্থর পরকীয়া খুঁজবে নিশ্চই! নাকী বসকে জেরা করবে ? মিলিদি বড্ড নিরীহ মানুষ। ভয় পেয়ে যাবে নাতো ! নাহ অফিসের বিট্টূ, অনিন্দিতারা সামলে দেবে নিশ্চই। আচ্ছা, তিন্নি…
“নাহ!!”
“নাহ!!”
মন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে! নাহ! আর না! আর ভাবা যাবে না!!
খানিক পরে ছুটে এসেছিল সিকিউরিটি। আধঘন্টার মধ্যে পুলিশ। খোঁজ পেতেই অফিসে জড়ো হলো কলিগরা; বাড়িতে আত্মীয়, বন্ধু, পুলিশ।
— কী?
— কী হয়েছিল?
— কেন?
— কিভাবে??
— ইশ!
— পার্থরতো বউ-বাচ্চা, দামী চাকরি, নতুন ফ্ল্যাট! কেন?
— এরকম হাসিখুশি মিশুকে পার্থ!! কেন?
— আচ্ছা ব্লু-হোয়েল না কী বেরিয়েছে? সে সব নাতো??
— ধ্যাৎ এতো বড়োলোক!
— আচ্ছা তবে কি দু-নম্বরি লাফরা? অন্য কেসফেস?
— আচ্ছা দাদা ও পাড়ার ওই ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রলোকের কেসটা কী?
— আচ্ছা দাদা কেসটা ঠিক কী?
— আচ্ছা পুলিশ কোনো ক্লু পেল?
— পুলিশ গুলো কোনো কম্মের না!
— আচ্ছা দাদা কেন? আপনারা তো দেখতেন রোজ! কিচ্ছু বুঝতে পারেন নি?
— আরে আমরা তো সেটাই ভাবছি! কিছুতো আঁচ করা যায়!
পুলিশ এখনও খুঁজছে?
পাড়াও এখনও খুঁজছে!
পূর্ণা, তিন্নি, বিট্টু, অনিন্দিতা, মিলিদি, অফিস ক্যাম্পাসের সিকিউরিটি সবাই খুঁজে বেড়াচ্ছে।
এমনকী দেখুন, আমি আপনিও ভাবছি কেন? কারণটা কি? আসল গল্পটা ঠিক কী ছিল?
সবাই ভাবছি! সবাই খুঁজছি!
কেন? কারণটাকি?
আর পার্থ?
Tags: অনির্বাণ রায়, কী এমন কারণ যা শুধু পার্থই খুঁজে পেল ?, গল্প
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।