বিয়ের পাঁচ বছরপর তানিয়াকে নিয়ে এই প্রথম বেড়াতে আসা। মেঘ পাহাড়ের সহবাসে পশ্চিম ঘাটের অপূর্ব সৌন্দর্যমন্ডিত জায়গা এই “খান্ডালা ” । বৃষ্টিতে ধুলোমাখা পাহাড়ি শহরটা ধুয়ে ঝকঝকে পরিষ্কার হয়ে গেছে ,পাহাড়ের গায়ে যেন ঘন সবুজাভ চাদর । মনে হচ্ছে যেন নতুন বিয়ের পর হানিমুনে এসেছে ওরা । তানিয়াকেও আজ বড় সুন্দর দেখাচ্ছে ।
গরম গরম পকোড়া আর কফি খেতে খেতে বিনায়ক টিভি দেখছিল , হঠাৎ নজর গেল তানিয়া সোফা থেকে উঠে সোজা বেডরুমে ঢুকে লাইটটা অফ্ করে দিল । বিনায়ক আওয়াজ দিল “ কি হল তানিয়া ? ”
আগেও এমন ঘটেছে বহুবার , সবার সামনে জানা হয়নি । এমন হলে রাতেও তানিয়াকে স্বাভাবিক লাগত না , বিছানার একধারে গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকত ,“ ভালো লাগছে না বিনায়ক ” বলে বিনায়কে দূরে সরিয়ে দিত । আজ বিনায়ক নাছোড়বান্দা …
“ কি হয়েছে , মাথা ধরেছে ? খুলে না বললে কি করে বুঝব বলো ।” আজ যেন অন্য তানিয়াকে খুঁজে পেয়েছিল সে , উচ্ছল হাসিখুশি,এত সহজে সব হারিয়ে যাবে !বলল,“ কি হল… মুখ তোলো … দেখি… খুলে বলো প্লিজ ” ।
হঠাৎ চিৎকার করে কেঁদে উঠল তানিয়া , “ আমি তোমাদের হারাতে চাই না , তোমরা ছাড়া আমার কেউ নেই , যদি ঘৃণা করো , আমি নিজেকে শেষ করে দেব ” ।
“ কি বলছ তানিয়া , আগেও দেখেছি তুমি এমন করেছো , কিন্তু কেন ? আমার উপর ভরসা নেই ? তোমার মনের কথা জানার কোন অধিকার নেই আমার ? ”
জীবনের গোপন ও ভয়ঙ্কর কথাগুলো তানিয়া বলতে লাগল…“ সেদিন শরীর খারাপ শুনে দিদুনকে মা দেখতে গিয়েছিল , সেইদিনই দিদুন মারা যায় আর মা চার দিন ওখানে আটকে যায় । আমি তখন ক্লাশ এইটে । যে বাবা আমার বিধবা মা ও আমাকে গ্রহণ করেছিল, সেই … আমি চীৎকার করি… মিনতি করি … , মাকে বাবা মেরে ফেলবে বলেছিল … তবুও মা ফিরে এলে সব বলেছিলাম , মা প্রচন্ড মারধোর সহ্য করেছিল … জ্বলন্ত সিগারেট মার পিঠে গুঁজে দিয়েছিল লোকটা , হোস্টেলে পাঠিয়ে মা ঐ মদ্যপ লোকটার লালসা থেকে বাঁচায় আমায় ”।
শরীরটা কাঁপছিল তানিয়ার । বড় অসহায় লাগছিল , বিনায়কের। কষ্ট হচ্ছিল । ভাবছিল ঘরেও মেয়েরা সুরক্ষিত নয় ? কত সময় কেটে গেছে খেয়াল নেই ,শক্ত করে বিনায়কের হাতটা ধরে তানিয়া যেন নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে । বিনায়ক তাকে বোঝাতে পেরেছে এতে তার কোন দোষ নেই , জীবনে এমন অনেক আকস্মিক ঘটনা ঘটে যাকে দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যেতে হয় ।
জানলাটা খুলতেই অপূর্ব এক হাল্কা শীতল হাওয়া ঘরটায় ঢুকে পড়ল। তানিয়া ঘুমোচ্ছে , বিনায়ক ওর কপালে চুমু খেয়ে বেডসাইডে রাখা টেলিফোনটা থেকে ডাক্তার বন্ধুর নম্বরটা ডায়াল করল ।
Tags: খোলা হাওয়া, গল্প, মৌসুমী চক্রবর্তী ষড়ঙ্গী
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।