একধারে জঙ্গল। তারপাশে ছোট্ট একটা নদী। ছোট বড় পাথরের গা দিয়ে বয়ে চলেছে তিরতির করে।
পূব দিকে যখন সূর্য ওঠে, ভোরের ঝিরঝিরে বাতাস জাগে, গাছগুলোর পাতায় পাতায় কাঁপন ধরে। পাখীদের চিকিরমিচির শুরু হয়।
তখন সে নদীতে কোথাও হাঁটুজল, কোথাও গোড়ালী পর্যন্ত। নদীটার সঙ্গে তার খেলা চলে কিছুক্ষণ। লাফাই ঝাঁপাই খেলা। নদীটাও যেন খুশীতে ঝিলমিল করে।
তারপর রোদ্দুর যখন একটু গরম হয়, তখন মায়ের সাথে সে যায় জঙ্গলে। কাঠকুটো কুড়োতে। জঙ্গলের ধারে এই ঝুপড়িটায় শুধু মা আর মেয়ে। মা সারা দিন ধরে চুবড়ি বানায়। তখন সে মায়ের কাছে বসে কাজ দেখে আর খানিক খেলা করে – একলাই।
খেলা তার অনেকরকম। রঙীন প্রজাপতি আর কাঠবিড়ালীদের পেছনে ছোটাছুটি করা, গাছের ডাল ধরে দোল খাওয়া অথবা মাটি আর নুড়ি সাজিয়ে ঘর বানানো।
খেলতে খেলতে রোজ সে দ্যাখে মেঠো রাস্তা দিয়ে গাঁয়ের লোক চলেছে পশ্চিম পানে। মেয়ে, পুরুষ, বাচ্চারা সকলে দল বেঁধে। দূরের গঞ্জে জন খাটতে। সন্ধে হলে তারা ফিরবে। মেয়েটার তখন বাবার কথা মনে পড়ে। বাবাও কাজের খোঁজে চলে গিয়েছে অনেক দিন আগে। আজও ফেরেনি। বাবা আদর করে তার নাম রেখেছিল তিতি।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামে। মা বলে আঁধার হলে জঙ্গলে যেতে নেই। রাত হয়। দূরে একটা শুকনো তালগাছের মাথায় চাঁদ দেখা দেয়। তারাগুলো চেয়ে থাকে। মেয়েটার ভয় লাগে। মায়ের কোলের কাছে সে আরও ঘন হয়ে শোয়। তখন ভাল লাগে।
এমনি করেই সে বড় হচ্ছিল। একদিন জল আনতে গিয়ে দেখলো নদীর ওপারে এসেছে অনেক লোক অনেক গাড়ি আর দৈত্যের মতো বড় বড় যন্ত্র।
তারপর নদীর ওপারে তৈরি হল বড় বড় বাড়ি, দোকান, বাজার। এল কত লোক।
এরপর এক দিন মা তার মারা গেল। গাঁয়ের কিছু লোক এসে মায়ের দেহটাকে নিয়ে জঙ্গলের মধ্যে পুঁতে দিল। আর মেয়েটাকে সঙ্গে নিয়ে গেল পশ্চিমের গঞ্জে জন খাটতে।
তারও পরে মেয়েটা এসে পড়লো এক জঙ্গলে, যেখানে আঁধার হয়না। এই জঙ্গলের নাম শহর। মেয়েটার এখন নাম বসন্তকুমারী। তার মুখ দিয়ে এখন সর্বদা কুৎসিত গালিগালাজ বের হয়। খদ্দেররা হিহি করে হাসে।
আর সেই নদীটা? বড় বড় বাড়ী দোকান বাজারের ময়লা জল নদীটায় পড়ে, নদীটা নর্দমা হয়ে গেছে।
……………
গল্পটি ‘ দেশকাল’ পত্রিকার ২০১৫ মার্চ সংখ্যায় প্রকাশিত। সম্পাদকের অনুমতিতে তা প্রকাশ করা হল।
email:galpersamay@gmail.com
Joy Acharya on June 19, 2018
I see you have published my story. But you have deleted the last few lines – the climax. You have killed the story.
admin on June 20, 2018
লেখককে ধন্যবাদ। শেষ অংশটি সংযোজন করা হল। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত। – সম্পাদকমণ্ডলী,গল্পের সময়
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।