বিজ্ঞাপনটা আরতি দেখেনি। দেখলে কিছুতেই আজ আর শোভনকে বাড়ির বাইরে যেতে দিতনা সে। ভাঙনধরা গরাদের গ্রিলে মাথা রেখে অচেতনেই বলে উঠল তার ঠোঁটদুটো— “ভালো হোক”। মস্তিষ্ক চোখ বোজে। তার জমাট শূন্যতা জুড়ে শ্লেষের হাসি। “আর ভালো!”
বিজ্ঞাপনটা নেহাতই সাদামাটা। একটা বাচ্চাছেলে বারবার পড়ে যাচ্ছে সাইকেল থেকে আর তার বাবা তাকে আবার তুলে দিচ্ছে সাইকেলে— যতক্ষণ না প্যাডেল আপনা হতেই ঘুরতে শুরু করে। ‘ফাদার্স ডে’ উপলক্ষে কোনো অ্যাড। কিন্তু সেই সময়ই ওপরের অ্যাণ্টেনাটা নড়ে গিয়েছিল খানিক। পাখিটাখি হবে হয়তো। ঝিলঝিল করে গিয়েছিল পর্দা ওই কয়েক সেকেণ্ডই। আরতি আর বসেনি তারপর। সোফা ছেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল গরাদের সামনেটায়।
সাইকেলটা কখনোই কেনা হয়নি তার। না নিজের জন্য, না শোভনের জন্য। আরতি মেয়ে, তাই তার বাবা কোনো সাইকেল কিনে দেয়নি তাকে। দাদাই ডবলক্যারি করত সবসময়। শোভনের অবশ্য ওসব বায়না কখনই নেই। তাই তার আজকের চলে যাওয়াটাও স্ট্রেচারে শুয়েই। অ্যাম্বুলেন্সে। যেমনটা হয় আর কি! ওর বাবাই অবশ্য এগিয়ে দিতে গেছে তাকে আশ্রমের গেট ওবধি। সিস্টারের নিষেধ— বাকি পথটুকু ওনারাই আগলাবেন জরভরত ওই ছেলেকে— অবশ্য যে কটা দিন ওর আয়ু রয়েছে ততদিনই! ওর মধ্যে আর প্যাডেল ঘোরানো শিখবেনা ছেলেটা – বলেই দিয়েছেন ডাক্তার।
দরজায় খুট করে আওয়াজ — শোভনের বাবা বুঝি ফিরল। টিভিতে তখন আবার ফিরে এসেছে সেই বিজ্ঞাপন —থমকে গিয়ে দুজোড়া অন্ধকার জোট বাঁধে ঘরে। বিড়বিড় করে আরতির ঠোঁট, “ওকে ওরা মানুষ করবে। ওরাই পারবে। আমরা খরচ জোগাতাম কোত্থেকে?”
মস্তিষ্ক সায় দেয় এবার —“সেই, এ ছেলে যে সন্তানসুখ দিতেও অপারগ।কেনই বা খরচ বহন করতাম এই পঙ্গু মাংসপিন্ডের? মা বাবারা স্বার্থপর হয় বইকি!”
শোভনের বাবা, নাঃ, ওর স্বামী জল চায় একগ্লাস – সোফায় শরীরটা ছেড়ে দেওয়ার আগে।
“ এক্ষুনি দিচ্ছি ” বলে অন্যমনস্ক ভাবে চোখে লাগানো সমুদ্রের কলটাই খুলে দেয় এবার আরতি অচিরেই।
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।