খবরের কাগজটা মুড়ে পাশ ফিরে শুল রবি। জানলাটা বন্ধ করাই ছিল। এসিটা দু পয়েন্ট বাড়িয়ে দিল। মাইকটা গান শোনাবেই প্রতিজ্ঞা নিয়ে চিৎকার আর বাড়িয়েছে – ‘চক্ষে আমার তৃষ্ণা’। ভর দুপুরেও ইচ্ছা থাক বা না থাক, বছরের কয়েকটা দিন, গৃহবাসীদের দ্বার খুলতেই হবে। অর্থাৎ কান খুলতেই হবে। পুজো, ভোটপুজো, রক্তদান মিলিয়ে দিনের সংখ্যা বাড়ছেই। ভাল লাগ বা না লাগ এসব হজম করতে সবাই শিখে গিয়েছে। তারপর আজ ২৫শে বৈশাখ, পাড়ার অনুষ্ঠান। পাশের বাড়ির রথীন জ্যেঠু ছোটবেলা থেকেই এই দিনটাতে খেপায় রবিকে। কি গুরুদেব আজ জন্মদিনে কি গান শোনাবে বল? রবির এই এক বিপদ তার নাম নিয়ে। এই নাম ছাড়া আর কোন সংস্রব নেই তার দাড়িবুড়োর সাথে। এটাও তার বন্ধুরাই বলে ঠাট্টা করে। সামান্য ছড়া আর দু একটা গল্প – কবিতা পাঠ্যপুস্তকে যা পড়েছে তা বাদ দিলে আর বিশেষ কিছুই জানে না সে। আর হ্যাঁ, বাংলা রচনা বইতে জীবনীটা পড়েছিল ক্লাস সেভেনে। পড়েছিল বলা ভুল, বিপ্লব স্যার মুখস্থ করিয়েছিল। এছাড়া ওনার আর প্রায় কিছুর প্রতিই আগ্রহ নেই। ওর দিদি বিশাল ভক্ত ঐ রবীন্দ্রনাথ – নজরুলের। একে স্কুলটিচার তার ওপর আবার বাংলার। আগে আবৃত্তি – নাটক – নৃত্যনাটক এসব পাড়ায় করত। সে ওর মতন ইংলিশ মিডিয়াম মেটেরিয়াল নয়। তবে রবি যে একেবারে গোলা মাল তাও বলা যাবে না। নোবেল পাওয়া বা বুকার পাওয়া সব গল্প উপন্যাসই প্রায় পড়া। তবে হ্যাঁ ওই বাংলা পড়ার ব্যাপারে একটু খুঁতখুতুনি আছেই। আর ওই সমস্ত মাথায় ফুল দিয়ে কোমর বেঁধে হাত পা কোমর ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে আকবার আকাশ খামচে তারপর নীচের দিকে হাত মুড়িয়ে গামছা নিংড়ে নেওয়ার মতন একঘেয়ে রবীন্দ্রনৃত্য একদম জঘন্য লাগে রবির। কি করা যাবে। সবার সব জিনিস ভাল লাগতে হবে এমন তো কোনো মানে নেই। ওর ওই লোকদেখানো ভাওভাব ব্যাপারটাই নেই। ভাল লাগে না তো লাগে না। পরিষ্কার বলে। তাই রবি ওর পুরো নামের সামনের অংশটা নিয়েই ডাক নামে গুরুদেবকে স্মরণ করায় মানুষকে। গোটা রবীন নামটা নিয়ে ওনার কাছাকাছি নিয়েও দূরে সরিয়েছেন ওনাকে। এ নিয়ে ভেবে নিজের মনেই হেসেছে ইনফরমেশন টেকনোলজিস্ট আকৃতদার রবীন দত্ত। অফিসে পাড়ায় এমনকি স্কুলের রবীন্দ্র জয়ন্তী বা রবীন্দ্র – নজরুল জন্মোৎসব এর মতন অনুষ্ঠানগুলো সযত্নে এড়িয়েছে দাঁতের এক্সারসাইজ দেখিয়ে। ওর ভালো লাগা বলতে বিদেশি লোক বা নিদেন পক্ষে ভারতীয় লোকদের ইংরাজী গল্প উপন্যাস আর হিন্দি ফিল্মি গান। এনিয়ে নানা সমালোচনা শুনেও গায়ে মাখে না রবি।
দুই
পাশ ফিরে শুতেই দুচোখের পাতা এক হয়ে এল। বাইরের গলির মাইক থেকে হালকা স্বরে ভেসে আসছিল – ‘ছায়া ঘানাইছে বনে বনে।’ আস্তে আস্তে বনের অন্ধকারই যেন ওকে ঘুমের দেশে ডাকছিল। ঘুমের দেশে যেন সে ভেসে ভেসে পৌঁছে গেল এক অদ্ভূদ বাড়ির সামনে। কেউ নিয়ে গেল না সে নিজেই পৌঁছে গেল ও বুঝতে পারেনি। দূর থেকে অনেকটা দিদির মতন গলা ভেসে এল – “ রবি ও রবি চলে আয় শিগগির চলে আয়।”
রবি মন্ত্রমুগ্ধের মতন ঢুকে গেল বাড়িটির মধ্যে। পুরো বাড়িটা যেন কাঁচের মতন। মাথায় দিকটা সোনার থালার মতন ডিস অ্যান্টেনা। সিঁড়িটা চলমান। দরজাটা পাশে খোলে না। ওঠে আর নামে। নেমে গেলে মেঝেতে ঢুকে যায়। তখন দরজাটা খোলা। আর বন্ধ হলে পুরো বাড়িটাই যেন সোনার টুপি পড়া কাঁচের গোলক। রবির একবারমনে হল এটা একটা গবেষণাগার। যন্তর মন্তর ঘর। আবার একবার মনে হল বড়ো অফিস ঘর। ঘরের মধ্যে হাজার হাজার স্ক্রিন মুখের সামনে রেখে বসে আছে প্রচুর লোক। বাচ্ছা ছোটো ছেলেরাও আছে। সামনের কয়েকটি স্ক্রিনে রবীন্দ্রনাথের ছবি বদলে হয়ে যাচ্ছে নজরুলের ছবিতে। প্রত্যেকটি লোকের কানে হেডফোন গোঁজা আর সামনের কিবোর্ডে কিসব টাইপ করে যাচ্ছে। ও ভেতরে কিভাবে ঢুকে পড়ল নিজেই বুঝতে পাড়ল না। ঢুকতেই একজন প্রশ্ন করল – রবিবাবু আপনি তো ইঞ্জিনিয়ার, সে যুগের। আপনি আমাদের একটা উপকার করতে পারেন? আপনি আমাদের জন্য বাংলা সাহিত্য কাহিনী গুলো উচ্চারণ করে ধরে ধরে বুঝিয়ে দেওয়ার ‘অ্যাপ’ যদি বানিয়ে দেন। আমরা সবাই বাংলা বলতে পারি কিন্তু পড়তে পাড়িনা। রবির মুখ দিয়ে কোন কথা সরল না। কিছুক্ষন পর বোকার মতন প্রশ্ন করল – আপনার মানে তোমরা কোথাকার লোক? উত্তর এল –‘আমরা সব একুশশো কুড়ি সালের ছাত্রছাত্রী। অনেক কষ্টে আপনাকে আমরা পেয়েছি। আসলে আমরা ২০১০ সালের একজন ইঞ্জিনিয়ারকে খুঁজছিলাম, কিছুতেই পাচ্ছিলাম না। গুগল আমাদের যে নতুন অ্যাপটা বানিয়ে দিয়েছে তার নাম, ‘বাংলা রক্ষাকবচ’ অ্যাপ। এই অ্যাপ দিয়ে পুরনো কোন বাংলাভাষা জানা ইঞ্জনিয়ারকে কানেক্ট করতে পারব। আর তার সাথে ঠিক নয় তার আত্মার সাথে কানেক্ট হবে। তিনিই নতুন অ্যাপ – মানে বাংলা গদ্য পড়া বোঝানোর জন্য কবি লেখকদের আত্মার সাথে যোগাযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে বোধগম্যতা তৈরির ব্যাপারে সাহায্য করতে পারবেন। একটু থেমে রইলেন সবাই। হঠাৎ ভারী গলায় অধ্যাপকীয় গাম্ভীর্যে একটা কণ্ঠস্বর ভেসে এল আসুন রবিবাবু। আজ তো ২৫শে বৈশাখ। আপনাকে আমাদের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি। আপনার সাহায্য খুব জরুরী। কিছু কিছু কথা আমরা পড়তে পারছি না বাংলা হরফে। ইংরাজি হরফে সমস্ত লেখাই আছে আমাদের কাছে। কিন্তু বুঝতে পারছি না কিছুই। রবিঠাকুর-নজরুল থেকে শুরু করে সব বাংলা সাহিত্য নিয়ে এটা একটা প্রবলেম দাড়িয়েছে। রবীন্দ্র নজরুলের সব গান গুলো ডাউনলোড হয়ে গেছে। শোনাও যাচ্ছে। মানে বোঝা যাচ্ছে না অনেক জায়গায়। এই সমস্যা মেটাতেই আমরা গুগলের ‘বাংলা রক্ষাকবচ’ অ্যাপের সাহায্য আমাদের নিতে হয়। সেখানে সার্চ ইঞ্জিনে গিয়ে রবি ইঞ্জিনিয়ার ২০১০ লিখতেই আপনার আত্মার সঙ্গে ট্র্যাক করা গেছে। আমরা আপনাকে পেয়েও গিয়েছি, এটা আমাদের সৌভাগ্য।
রবি কি করবে, কি বলবে বুঝে ওঠার আগেই সেই গম্ভীর কণ্ঠে অনুরোধ এল – এটা একটু পড়ে বুঝিয়ে দেবেন, প্লিজ। রবি স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে বলল – এটা তো একটা প্রবন্ধ – সাহিত্যের পথে। পাশের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বলল – এটাতো আর একটা প্রবন্ধ ‘কালাস্তর’। পড়ে বোঝানোর অনুরোধ রইল। সময়ের কোন হিসাব করতে পারছে না রবি। অনেক ঘরে রবীন্দ্র নৃত্য-নাট্য, গান ইত্যাদি নানা ভাবে নানা স্ক্রিনে ঘুরছে। সবাই এক দৃষ্টে দেখছে। রবি বুঝল আজ ওরা এভাবেই রবীন্দ্র জয়ন্তীতে মেতেছে। ওর মনোভাব ওদের ম্যানেজমেন্ট কম্পিউটার বুঝতে পেরেছিল মনে হয়। সেও গম্ভীর কন্ঠে জানাল – আজ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন বলে রবীন্দ্রচর্চা চলছে। অন্যান্য দিন নানা সাহিত্যিকের লেখা নিয়ে চর্চা হয়। অন্যদিকের ম্যানেজমেন্ট বলল – হ্যাঁ ঠিকই আন্দাজ করেছেন এটা বাংলা ভাষা চর্চা কেন্দ্র। বই তো আমরা মিউজিয়ামে দিয়েছি। এখানেই অবসর সময়ে ইচ্ছুক লোকজন ছাত্রছাত্রী আসে ভাষা শিক্ষা করতে। আপনি প্লিজ আমাদের একটু সাহায্য করুন। সাহিত্য কর্ম অংশটিকে উদ্ধার করার কাজ। আমরা আপনার ওপর নির্ভর করছি। রবি বুঝতে পারছে না ও কি করবে। এই আবহাওয়ার মধ্যে ঢুকে শরীরে একটা কষ্টও হচ্ছে। একটু দ্বিধা নিয়ে বলল – আপনার ‘বাংলা রক্ষাকবচ’ অ্যাপ দিয়ে আমাকে পেয়েছেন – সবই বুঝলাম, কিন্তু আর একটু পিছিয়ে গেলেই তো সরাসরি লেখকদেরই পেয়ে যেতেন। আপনাদের সুবিধাই হত। ওপাশ থেকে কম্পিউটার উত্তর দিল – সম্ভব নয়। আমাদের এই অ্যাপের ক্ষমতা সীমিত। ১৫০ বছরের পুরনো আত্মাকেই ধরা যায়। তার আগের আত্মাকে ধরা যায় না। তার আগের আত্মাকে ধরা যায় না। যেমন – সতেরশতক বা আঠারশতক এর যোগীদের ধরবার চেষ্টা করেছিলাম ‘ভারতের সাধক’ বইটার জন্য। ধরা যাচ্ছে না। সেট হ্যাং করে যাচ্ছে। কি বলবেন – খোদ নজরুলকে ধরতে গিয়েছিলেন আমাদের এক নজরুল প্রেমী ইঞ্জিনিয়ার। দু একবার এসে দেখা দিয়েই বেড়িয়ে গেলেন – একবার তো নজরুলের ছবি চলে গিয়ে ভেসে উঠলেন বরদা চরন মজুমদার। কি যে কান্ড হয় পুরনো লেখকদের ধরতে। রবীন্দ্রনাথকে আমরা ট্রাই করিনি। মজার কথা শুনবেন। সুকান্ত ভট্টাচার্য সার্চ করা হয়েছিল। নো রেজাল্ট শো করে সাইট ব্লিঙ্ক করছে। তবে আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা নেমে পড়েছে। গবেষনা চলছে। বছর দশেকের মধ্যে সমস্ত সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এর এই কাজেই একটু সাহায্য পাবার আপনাকে পাশে চাওয়া। রবি হাঁ করে কথাগুলো গিলছিল। চলা ফেরার ক্ষমতা প্রায় চলে গেছে। শরীরটা যেন প্রায় ভাসমান । সেই গম্ভীর কন্ঠ আবার শুরু করল – লেখককে সরাসরি কানেক্ট করতে পারলে তিনি নিজের লেখা নিজের ভাষায় পড়ে দিয়ে যাবেন। নিজের মতন করে পাঠককে বোঝাতে পারবেন। তার সময়কাল নিয়ে বলবেন। শান্ত – ভারী জটিল অন্তর্নিমিত অর্থ ব্যাখ্যা করবেন। পাঠকের সুবিধা। অধ্যাপক শিক্ষক তো কেউই এখন বাংলা পড়ে বোঝাতে পারে না। মানে এটাই একটা বাংলা ক্লাস মানে অ্যাপ নিয়ন্ত্রিত ক্লাস যেখানে কবি লেখক সরাসরি ক্লাস নেয়। মাঝে কোন শিক্ষক অধ্যাপক থাকে না। মানে বই প্রশ্নোত্তর থাকবে না, শুধু সরাসরি অ্যাপ-এ চলে যেতে হবে। এর জন্মদিন গুলোতে আমরা জন্মোৎসব করব সাতদিন। শুধু সেই লেখকের সাথে সাতদিন ঘর করা। যেমন ধরুন আজ থেকে সাতদিন শুধু রবীন্দ্রনাথ চর্চা আর কি! আপনি এই গবেষনায়, এই হারানো নথি উদ্ধারে আমাদের একটু সাহায্য করুন না।
রবি মানে এবার একটু বল পেয়েছে। বলল আচ্ছা – “ এমন অ্যাপ যদি চালু করেন – বইটা স্ক্রিনে ভেসে উঠল। আপনার কানে হেডফোন রইল। অ্যাপ আপনার মাতৃভাষায় লেখাটা পড়ে ফেলল।
অল্প ব্যাখ্যাও করল।” গম্ভীর কন্ঠ রবির কথার মাঝখানে কথা থামাল – না না আমরা তো স্ক্রিনের কিছুই বুঝব না। আমরা তো বাংলা অক্ষরই চিনি না। আমাদের এখানকার সবাই ইংরাজি অক্ষর চেনে। ইংরাজি হরফে লেখা রবীন্দ্র রচনাবলী, নজরুল গ্রন্থাবলী সব আছে। কিছুই হচ্ছে না। অন্যান্য লেখকদের লেখাও ইংরাজি হরফে বদলাচ্ছে। কিন্তু ওতে অসুবিধা অনেক কথার উচ্চারণ হচ্ছে না। বাংলা হরফে থাকলে যে উচ্চারণ সেটা হচ্ছে না। মানে বুঝতে পারা যাচ্ছে না। তাই আমরা মানে একেবারে লেখকের অক্ষরকেই ধরতে চাইছি। সেটাই অনেক ভাল হবে না? গম্ভীর কন্ঠ থামল।
রবির সমস্ত টেকনলজিক্যাল নলেজ গুলিয়ে ঘেঁটে এক হয়ে যেতে লাগল। ও যেন নিজের ওজন হারিয়ে ফেলছে বলে মনে হল। কেউ যেন ওকে একটা কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে ঠেলে দিল। “ ওই দেখুন স্ক্রিনে আপনার অতীত দেখা যাচ্ছে। ওই অতীতের মতন করে আমাদের ভাষাজ্ঞান দান করে দিন না”। গম্ভীর কন্ঠ কম্পিউটার বলে উঠল। রবি দেখল সত্যি, ছেলেবেলায় ওর পাড়ার রবীন্দ্রজয়ন্তী, দিদি লালপেড়ে সাদাশাড়ি পড়ে গান গাইছে – “ হে নূতন দেখা দিক বারবার”। একটু পরে ছোটোদের নৃত্যনাট্য শুরু হল – সঙ্গে গান হচ্ছে ‘আমরা সবাই রাজা’, দর্শক আসনে রবি কানের হেডফোনটা খুলে রেখে একদৃষ্ঠে গান শুনছে, রবীন্দ্রনাথের কয়েকটা গান ও শুনতে ভালোবাসতো। এগুলো তাদের মধ্যে পড়ে। রবির মনে পড়ে গেল অতীতের অনেক কিছু। কম্পিউটার বলল – এই যে আপনি আমাদের বোঝাবেন – ‘সবাই রাজা’র মানে কিংবা ‘যে দিন ভেসে গেছে চোখের জলে’র সঠিক মানেটা। এখানে তো কেউ কিছু বলতেই পারছে না। এবার বুঝতে পারলেন তো। আসলে সাহিত্যিকদের ধরবার আগে নতুন মধ্যবর্তী অ্যাপ বানিয়ে আপনাদের সময়কার স্মৃতির সাহায্যে গান গল্প কবিতার কাছাকাছি অর্থে পৌছোতে চাইছি। এরপর সাইট উন্নত হলে লেখকদের আত্মাকে ধরার অ্যাপ পেয়ে যাব। বাকিটা পরে ভাবা যাবে। এখনকার আমাদের অসুবিধাটা আপনি দূর করতে পারবেন। তাই আমরা আপনাকে আমাদের ‘বাংলা রক্ষাকবচ’ অ্যাপের সাথে যোগ করে দিয়ে নতুন একটা সাইট যোগ করে দিলাম। নাম দিলাম ‘রবি-কবচ’ সাইট। বাংলা সাহিত্য নিয়ে কোনও অসুবিধা হলেই কোনও লেখা বা কোনও অক্ষর তার মানে, কোনও পদ্ধতির মানে বুঝতে চাইলেই আপনাকে ডেকে আনা হবে। রবি হঠাৎ কেঁপে উঠল। বুকের মধ্যে দিয়ে কি একটা যেন চলে গেল, মাথাটা যেন পেছনের দিকে ফেলে দিয়ে যেন ঠেলে এগিয়ে গেল। কেউ যেন ঠেলে পাশ গড়িয়ে দিল।
তিন
চোখ মেলল রবি। চারিদিকে অন্ধকার ঠেকছে। এসি মেশিনটা বন্ধ হয়ে গেছে। ঠান্ডা ঠান্ডা ভাবটা রয়ে গেছে ঘরে। এসি মেশিনের দিকে তাকাতেই ডিগ্রি লেখা যে অক্ষরটা ফুটে থাকে তা দেখা গেল না। আর একটু দৃষ্টি পরিষ্কার হতেই বুঝল ঘরে আর একটা কেউ আছে। ছায়ামূর্তির মতন দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষণ তা হলে কোথায় ছিল সে? এরপর নাকে সেন্টের গন্ধ এসে ঠেকল। এই গন্ধটি চেনা। দিদি এই সেন্টটি মাখত। তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় শুনল দিদির কণ্ঠস্বর, কিরে কখন থেকে ডাকছি। কিরে তুই? শেষে ধাক্কা দিয়ে ঘুম ভাঙালাম। কতদিন পরে এবার ভাবলাম পাড়ার রবীন্দ্রজয়ন্তীতে গাইব। তোর জামাইবাবু নিয়ে এল। তোর জামাইবাবু বলল তোকে নিয়েই যাবে অনুষ্ঠানে। এসেই দেখনা কেবল ফল্ট। ওঠ্ ইঞ্জিনিয়ার চল এবার রবীন্দ্রজয়ন্তী দেখতে। জামাই বাবুই বলল নিয়ে যাও ইঞ্জিনিয়ারকে, দেখুক দিদির রবীন্দ্রনাথকে। ওমা ঘরে ঢুকে দেখি ঘুমের মধ্যে একা একা বকছিস। কি বকছিলি রে?
তালকাটা রবির গলার থেকে একটাই শব্দ বেরিয়ে এল ‘সভ্যতার সংকট’।
দিদি মুখ বেকিয়ে বলল, কি বলছিস কিসের সভ্যতা, কিসের সংকট ? ঘুমের মধ্যে কিসব দেখেছিস আর উল্টোপাল্টা বলছিস ঠিক নেই। নে ওঠ, তৈরি হ, রবি পাশবালিশটা আঁকড়ে পাশ ফিরে ছড়ানো গলায় শুধু বলল – ‘ও রকম মনে হয়’।
Tags: ও রকম মনে হয়, গল্প, দেবাশিস মজুমদার
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।