কাল মাঝরাতের দিকে কালবৈশাখীর অনেকটাই আভাস ছিল ! গলিরমোড়ে গতসন্ধ্যায় চট-জলদি তৈরী করা ছোট প্যান্ডেলটার চালটা তাই কিছুটা বেচাল, দুয়েকটা খুঁটিও বেহাল হয়েছে ! ভোরের আলো ফুটে গেছে বেশ কিছুক্ষন আগে, তেরছা রোদ এসে পড়েছে ভেজা মাঠের ঘাসের নরম চাদরের ওপর ! প্যান্ডেলের কোণে ছোট সুজনি ঢাকা চেয়ারের ওপর ছবিটাতে মালা দেওয়া ! শান্ত নিস্তরঙ্গ সকালে আড়ম্বর কম, ছবির সামনে কিছুফুল, দু-তিনটে ধূপের ধোঁয়া, অর্বাচীন সমবেত সংগীত আর পাড়াতুতো বক্তার বক্তৃতা শেষে কচিহাতে অকুন্ঠ তথা অসম্বদ্ধ হাততালির শব্দ…..মিলে গেলো বড়ো রাস্তার ট্রামের ঘন্টির আওয়াজের সঙ্গে ! সভাশেষে জলযোগে কাগজের ছোট ছোট প্লেটে এল একটা করে গুটকে কচুরী আর দরবেশ !
সারাদিন ট্রামে বাসে ট্রেনে প্রচুর পয়সা রোজগার করলো ভিখারীরা রবিঠাকুরের গান গেয়ে! কোন নিন্দুক যেন বলেছিলো উনি সাধারণের কবি নন ! ওবেলা..কোথায় যাওয়া যায়…রবীন্দ্রকানন বা সদন…নাকি সরোবর…. এই ঠিক করতে করতে সব বাড়ীর মুখর দুপুর গুলো কেটে গেলো!
সন্ধ্যায় কোনো দোষ দেবার উপায় নেই ! বড়ো রাস্তা জুড়ে প্যান্ডেলের আগাপাশতলা আর রাস্তার দুধার ভাসছে চন্দননগরের আলোয় ! আশেপাশে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে কর্মকর্তা যুবকের উত্তেজিত কণ্ঠস্বর ‘বুজলেন দাদা ওদের স-সঙ্গে আমাদের কমপিটিসান’ ! মাইকে ভেসে এলো আমন্ত্রিত বক্তার আওয়াজ……..’রবিন্দরনাথ খু-উ-ব বড়িয়া কবি ছিলেন’ ! তাঁর ভাবখানা এই – কবি বেঁচে থাকলেও তিনি এই সবই বলতেন ! ‘এরপর আপনারা সান্ত হয়ে বোসুন্…..বিসেস আকোরসন…..রোবিনদ্রো গীতি-বিচিত্রা……..অর্রকেসট্ট্রার সাথে !’
শেষ হতে রাত হবে !ইতঃস্তত দু-একটা কালো গাড়ী তাই ছড়িয়ে রয়েছে কালো পিচরাস্তার ধারে !
এরও অনেকপরে……..আর সব কিছু থেমে গেলেও পৃথিবীর আহ্নিক আর বার্ষিক গতি যথারীতি ঠিকঠাক…….কলকাতার বুকে তাই রাত্রি নামে গভীর হয়ে ! নির্জন চৌরাস্তায় বেল কুঁড়ি মালা বিকিয়ে যায় প্রায় বিনামূল্যে….জনহীন রাজপথে ট্রাফিকের স্পন্দমান হলুদ আলো যেন ফাঁকামাঠে গোল দেওয়ার মতো লাগে !
হাওড়া স্টেশনে রাত জাগা খোঁড়া ভিখারীর গুনগুন গান ডুবিয়ে দিয়ে মধ্যরাতে শেষ ট্রেন ছেড়ে গেলো ! তার সাথে সাথে আরও একবারের মতো ক্লান্ত পায়ে পঁচিশে বৈশাখ ফিরে গেলো !
Tags: গল্প, পঁচিশে বৈশাখ ১৪২৫, সিদ্ধার্থ সান্যাল
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।