এ ঘটনা ষাটের দশকের শেষের দিকে । এ রাজ্যের কলকারখানায় তখন মাঝে মাঝেই চলছে ‘ ঘেরাও’ । শ্রমিক অসন্তোষ এবং দাবী আদায়ের এক নতুন অস্ত্র। কখনো জেনারেল ম্যানেজার , কখনো ডাইরেক্টর অর্থাৎ সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা যাদের কিছুটা আছে বেছে বেছে শুধু তাদের ওপরই এই অস্ত্রের প্রয়োগ চলছে । উত্তাল সময় । উচ্চপদের অফিসাররা তটস্থ । কে যে কখন ঘেরাও হয়ে যাবে বোঝা যাচ্ছেনা। বিশেষ পরিস্থিতিতে পুলিশের সাহায্যও লাগছে। গোটা রাজ্যে ‘ ঘেরাও’ এক বহুচর্চিত বিষয় ।
সেদিন কলকাতার একটি অভিজাত ক্লাবে মহিলা মহলের সান্ধ্য মজলিস বেশ জমে উঠেছে। সেখানেও আলোচনার বিষয় ‘ ঘেরাও’ ।
অনেকেই চুপচাপ আবার কেউ কেউ সোচ্চার। হাসিখুশি রমলা রায় হঠাৎ বলে উঠলেন,
– আর বোলোনা ভাই, যা অবস্থা আমাদের চলছে। দিনরাত টেনশান । পরশু আমার মিস্টার টানা আটঘণ্টা ঘেরাও ছিলেন কারখানার ভেতরে।
ঊর্মিলা পাল এবার একটু যেন উসখুস করলেন কিছু বলবেন বলে। বললেন – আর মিস্টার পালের কী অবস্থা হলো জানো? বলোতো কাউকে একটানা বারোঘণ্টা ঘেরাও করে রাখলে কতটা কষ্ট হতে পারে ভাবো।
এইরকমই চলছিল। ‘ঘেরাও’ চর্চা জমজমাট। সবাই নিজের নিজের স্বামীদের অভিজ্ঞতার কাহিনি বলে যাচ্ছিলেন চিপস আর কফিতে অল্প অল্প চুমুকের ফাঁকে । যাদের স্বামীরা তেমন গুরুত্বপূর্ণ পদে নেই তারা এখানে অসহায় শ্রোতা।
সচরাচর একটু গম্ভীর মিসেস রানু সেন এতক্ষণ চুপ করেই ছিলেন। হাতে ধরা ছিল একটা হালকা জিন। একটু চুমুক দিয়ে মুচকি হাসলেন। আস্তে আস্তে বললেন,
– আমি এতক্ষণ কিছু বলিনি। তোমারা ভাবতে পারো মিস্টার সেনকে গত সপ্তাহে অফিসের ভেতর পুরো চব্বিশ ঘণ্টা ঘেরাও করে রেখেছিল ? উনি যতই বলেন যে ডাইরেক্টর হলেও বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা না করে এতোবড় ডিসিশন নিতে পারেননা , তা কে সেসব শোনে।
এবার সাময়িক বিরতি কারণ চব্বিশ ঘণ্টার রেকর্ড কারো নেই। অনেকক্ষণ পরে পুতুল রায় আস্তে করে বললো, অতনু নিজেও বেশ চিন্তায় থাকে। সেদিন বলছিল কবে দুম করে ঘেরাও হয়ে যাবে ঠিক নেই।
কথাটা শুনে উপস্থিত মহিলাদের মধ্যে চাপা গুন্জন, কারো চোখে কৌতুকের ঝিলিক। বেশ ঠোঁটকাটা হিসেবে নাম বা বদনাম আছে লাবনীর । সে বলে উঠলো, অতনুদার আবার কিসের টেনশন পুতুলদি। উনি যে লেভেলে সেখানেতো কোনো ক্ষমতাই নেই। ওয়ার্কাররা ওনাকে ধর্তব্যের মধ্যেই রাখেনা। আমি সব জানি।
এই খোঁচাটার জন্যে পুতুল তৈরি ছিলোনা। তাই তাৎক্ষণিক কোনো জবাব খুঁজে পেলোনা। হুলটা ফুটে রইলো। সে বুঝতে পারছে ‘ঘেরাও’ নিয়ে এই চাপা প্রতিযোগিতায় সে হেরে যাচ্ছে। মনের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ জমা হচ্ছে । ভাবছিলো অতনু কোম্পানির পার্সোনেল ম্যানেজার হিসেবে কোনো ব্যাপারে দশ বারো না হলেও নিদেন পক্ষে ঘণ্টা চারেক ঘেরাও হতে কি পারেনা । আজ তাহলে এইসব ঠেস দেওয়া কথাগুলো হজম করতে হতোনা ।
সেদিন বেশ কিছুটা মনখারাপ নিয়ে বাড়ি ফিরে এসে দেখে অতনু নিশ্চিন্ত মনে একটা বই পড়ছে ।
কোনো ভনিতা না করেই পুতুল তাকে সরাসরি প্রশ্ন করলো , তোমাদের কারখানায় কোনো গন্ডগোল নেই?
হাতের বইটা পাশে রেখে অতনু পুতুলের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো । তারপর শান্ত গলায় বললো, না কোনো গন্ডগোল নেই । হঠাৎ একথা কেন জিজ্ঞেস করছো ?
পুতুল একটু বিরক্ত হয়ে জবাব দিলো, জিজ্ঞেস করার কারণ আছে । কোনো গন্ডগোল নেই, দাবি দাওয়া নিয়ে লড়াই নেই, মারপিট নেই, ঘেরাও টেরাও নেই । লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছিনা ।
শান্ত স্বভাব অতনুর মাথাটা বেশ ভালোরকম ঘুরে গেলো । পুতুলের কথাগুলোর মধ্যে কিসের সুক্ষ্ম ইঙ্গিত রয়েছে বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো । আস্তে আস্তে বললো,
– ঠিক কী বলতে চাইছো জানিনা । তুমি আপাতত শান্ত হয়ে বসে একটু ঠান্ডা জল খাও । তারপর আমাকে বোঝাও আমাদের কারখানায় কোনো গন্ডগোল নেই বলে
তোমার লজ্জার কী আছে ।
– সেসব তুমি বুঝবেনা । তুমি কি কোনোদিন আমাকে বোঝবার চেষ্টা করেছো ? এখন মন দিয়ে আমার কথাগুলো শোনো ।
এই বলে পুতুল সোফায় অতনুর গা ঘেঁষে বসলো । একটু চাপা অভিমান , পারফিউমের মিষ্টি গন্ধ –
– হ্যাঁ , এবার বলো ।
পুতুল সেদিন ক্লাবে যেসব কথা হচ্ছিলো তার বিবরণ দিয়ে বললো , যেভাবেই হোক তুমি একবার ঘেরাও হও লক্ষ্মীটি । নাহলে আমার মান সম্মান থাকছেনা । সবায়ের বিদ্রুপ আর হাসি সহ্য করতে পারছিনা । সবাই বলে তোমার নাকি কোনো গুরুত্বই নেই, এলেবেলে ।
কথার শেষটায় অতনুর মনেও একটা জ্বালা ধরে গেলো । সে বলল, সবইতো বুঝলাম । দেখি কী করা যায় ।
পরদিন কারখানার অফিসে পৌঁছে অতনু মরিয়া হয়ে একটা প্ল্যান করলো । ইউনিয়নের দাপুটে নেতা অশোক তেওয়ারীর সঙ্গে অতনুর খুব ভালো সম্পর্ক । অশোক বেশ বুদ্ধিমান , শিক্ষিত আর ডাকাবুকো । অতনুকে বেশ সমীহ করে । অনেক ভেবেচিন্তে তাকে চেম্বারে ডেকে পাঠালো অতনু ।
– বলুন স্যার , কী করতে পারি আপনার জন্যে।
কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে লজ্জার মাথা খেয়ে শেষপর্যন্ত অতনু বলেই ফেললো, আপনাকে আমার জন্যে একটা কাজ করতে হবে ।
– অবশ্যই করবো । বিনা দ্বিধায় বলুন কী এমন কাজ যেটা বলার জন্যে এখানে ডাকলেন ।একটু ইতস্তত করে অতনু বললো ,আমাকে একদিন ঘেরাও করার ব্যবস্থা করতে হবে ।
চমকে উঠলো অশোক তেওয়ারী । পোড় খাওয়া অভিজ্ঞ মানুষ সে তবুও ভাবলো ঠিক শুনছে তো ? তবে যথেষ্ট বুদ্ধিমান , তাই একটা কিছু আন্দাজ করলো ।
– কিন্তু কোনো ইস্যুতো নেই স্যার ।
অতনু মরিয়া ,ইস্যু কিছু একটা তৈরি করুন । খুব সাবধানে ,আপনি আর আমি ছাড়া কেউ জানবেনা ।
এরপর অনেক গবেষণা করে একটা পথ বেরোলো । এই কোম্পানি পুজা বোনাস দেয় ৮.৩৩% । সেইসময় এটাই রেওয়াজ ছিলো । কেউ কেউ অবশ্য কুড়ি পারসেন্ট দিত । পুজো তো সামনেই । এবারে যদি কুড়ি পারসেন্টের দাবী তোলা যায় কেমন হবে । কোম্পানি মানবেনা জানা আছে কিন্তু সেই দাবী আদায়ের জন্যে পার্সোনেল ম্যানেজার অতনু রায়কে অন্তত একবার ঘেরাও করার ব্যবস্থা করাই যায়। অতনু লাফিয়ে উঠলো । ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া । সে জানে তার যেটুকু ক্ষমতা তাতে শ্রমিকদের একটুও লাভ হবেনা কিন্তু তাকে ঘেরাও করার একটা ইস্যু হতেই পারে ।
এরপর রূদ্ধদ্বার আলোচনায় স্ট্র্যাটেজি ঠিক করা হলো । পরের দিনই ইউনিয়নের নেতারা নিজেদের মধ্যে মিটিং করে ম্যানেজমেন্টকে চিঠি দিয়ে কুড়ি পার্সেন্ট পুজো বোনাসের দাবি জানাবে । কর্তৃপক্ষ মানবেনা জানা কথা । একটা সপ্তাহ অপেক্ষা করবে , তারপরেই হঠাৎ একদিন ঘেরাও করা হবে অতনু রায়কে । পোস্টারে কী কী লেখা হবে , স্লোগান কী হবে সব ব্যবস্থা পাকা হয়ে গেলো । পোস্টারে লেখা লেখা থাকবে ” মালিকের দালাল অতনু রায় দূর হটো ” । তাছাড়া আরও অনেক চোখা চোখা কথা যেমন ” কুড়ি পার্সেন্ট বোনাস না মানলে অতনু রায়ের মুন্ডু চাই ” ইত্যাদি । এক পরিচিত সাংবাদিককে আগেই খবর দিয়ে রাখবে যাতে গোটা ব্যাপারটা ভালো প্রেস-কভারেজ পায় ।
পরদিন যথাসময়ে দাবী পেশ করা হয়ে গেলো ।এই সাতটা দিন অতনু বেশ খোশমেজাজে । পুজোবোনাসের দাবীপত্র ঠিক সময় জমা দেওয়া হয়েছে । পুতুল খুব খুশী । ঠিক সাতদিন পরে দাবী না মানলেই ঘেরাও হবে অতনু । অশোক তেওয়ারী কথা দিয়েছে বেলা তিনটের সময় শুরু হবে বহু কাঙ্খিত ঘেরাও । প্রথমে ঠিক হয়েছিল ঘন্টা দুয়েক চলবে । পরে অতনুর বিশেষ অনুরোধে ওটা চারঘন্টা করা হয়েছে । কিছু বাছাই করা গালাগালিও থাকবে শ্লোগানের মধ্যে বিরতির সময় । সম্পূর্ণ চিত্রনাট্য ফাইনাল হয়ে গেছে ।
নির্দিষ্ট দিনে পুতুল ভোরবেলায় উঠে স্নান সেরে নতুন একটা শাড়ী পড়ে ফেললো । কপালে বড়ো করে সিঁদুর টিপ , লেক কালীবাড়ি পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে পুজো দিলো । লোকে বলে এ দেবী জাগ্রত। পুতুল মনে মনে প্রার্থনা করলো আজ যেন ‘ঘেরাও’টা বেশ জবরদস্ত হয় ।
ঠিক দশটায় অতনু অফিস পৌঁছে গেলো । কিছুক্ষণ পর থেকেই ঘন ঘন সময় দেখতে লাগলো । ও: , ঘড়ির কাঁটা কিছুতেই আর এগোচ্ছেনা । বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একটু টেনশন যদিও সে মনে মনে জানে অশোক তেওয়ারীর সব ব্যবস্থাই পাকা ।
লাঞ্চের পর সময়টা অতনুর কাছে খুব মূল্যবান কারণ একটু পরেই শুরু হবার কথা সেই বহুকাঙ্খিত ‘ ঘেরাও ‘ নামের নাটক। যার জন্যে অপেক্ষা করে আছে সে নিজে এবং সেইসঙ্গে পুতুল । এমন সময় কানে একটা আওয়াজ আসতে লাগলো যেন একসাথে অনেক লোক কথা বলছে । অতনু ভাবলো এবার নিশ্চয়ই সব ওয়ার্কার মিলে অশোকের নেতৃত্বে দল বেঁধে শ্লোগান দেওয়া শুরু করবে । সে ইচ্ছে করেই নিজের অফিস থেকে বেরিয়ে বাইরের দিকে কারখানার ভেতরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলো যাতে ইচ্ছে করলে তাকে সহজেই ঘেরাও করা যায় । হঠাৎ অতনু লক্ষ্য করলো সব ওয়ার্কার এবং অন্যান্য কর্মচারীরাও একজায়গায় জড়ো হয়েছে বটে কিন্তু তাদের শরীরী ভাষায় কোনো আন্দোলন বা প্রতিবাদের ছাপ নেই বরং তার বদলে তাদের চোখেমুখে খুশী আর আনন্দের ছাপ ।
অশোক তেওয়ারী দৌড়ে এলো অতনুর কাছে । দৃশ্যত ভীষণ উত্তেজিত ।কাছে এসে বললো, দারুণ সুখবর স্যার । আমরা কেউই ভাবতে পারিনি এতো সহজেই সব হয়ে যাবে ।
অতনু জানে অশোক তেওয়ারীর কথা অক্ষরে অক্ষরে পালিত হবে। খুশী মনে সে জিজ্ঞেস করলো, তাহলে এখনি শুরু হচ্ছে, আমি তৈরি হয়েই আছি । অশোক সেইরকম উত্তেজনা নিয়েই বললো,না না সেসবের আর দরকার হচ্ছেনা। কোম্পানী বিশাল টাকার একটা এক্সপোর্ট অর্ডার পেয়েছে গ্লোবাল টেন্ডারে যেটা প্রায় মাসতিনেক আগে জমা দেওয়া হয়েছিল ।
সেই আনন্দে সি.এম.ডি সাহেব আজ সকালে এমার্জেন্সি বোর্ড মিটিং ডেকে এবার পুজোয় প্রত্যেকের জন্যে কুড়ি পার্সেন্ট বোনাস দেবার প্রস্তাব পাশ করিয়ে নিয়েছেন। একটু পরেই অফিসিয়ালি ডিক্লেয়ার করা হবে । তবে খবর একেবারে পাক্কা । এই অবস্থায় কী করে আর ঘেরাও হবে আপনিই বলুন স্যার ।
অতনুর মাথায় তখন আর ঘেরাও-টেরাও নেই । তার মনটা একটা হঠাৎ খুশীর ছোঁয়ায় ভরে গেলো । কুড়ি পার্সেন্ট যথেষ্ট ভালো টাকা। তখনই মনে মনে ঠিক করে ফেললো এবার পুজোর সময় জমিয়ে বেড়াতে যাবে , দূরে কোথাও ।
ঠিক পাঁচটায় বেরিয়ে পড়লো অতনু । এতো তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে দেখে পুতুল অবাক । হিসেবমতো চারঘন্টা ঘেরাও করলে এখন তো ফিরতে পারেনা । তাছাড়া শরীর বা বেশভূষাও তেমন একটা বিধ্বস্ত নয় । বেশ পরিপাটি । ব্যাপারটা কী ? মেজাজটাও তো বেশ ফুরফুরে লাগছে । ঠিকঠাক ঘেরাও হলে এমন তো হতে পারেনা ।
কাছে আসতেই অতনু দুহাতে জড়িয়ে ধরলো পুতুলকে । যথেষ্ট সংশয়ে পড়ে গেলো পুতুল । সে ভাবছিলো ঘেরাও এবং গালাগালি খাওয়ার পরে এতো ফূর্তি কেমন করে হয় ।
অতনু আর উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারছেনা , পুতুল মন দিয়ে শোনো । এবার পূজোয় আমরা কোভালাম যাচ্ছি । ফেরার পথে মুন্নার ।
– হঠাৎ ? কেমন করে ?
– আরে বাবা , আজই দুপুরে কোম্পানি নিজে থেকেই টোয়েন্টি পার্সেন্ট বোনাস ডিক্লেয়ার করেছে ।
অতনু দেখলো এমন একটা খবর শোনার পর পুতুল গম্ভীর । অনেকক্ষণ চুপ করে থাকলো । একটু পরে কাঁদতে কাঁদতে বললো ,না হলোনা, এতো কান্ড করেও কিছু হলোনা । এতো পুজো, এতো মানত। ভস্মে শুধু ঘি ঢালাই সার ।
অতনু বেশ কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো । পুতুলকে আরো জোরে জড়িয়ে ধরলো। কী বলছো বুঝতে পারছিনা । কী হলনা পুতুল ?
কান্না ভেজা গলায় পুতুল আস্তে আস্তে বললো,ওসব তুমি বুঝবেনা । আমি তোমাকে এখন বোঝাতেও পারবোনা ।
Tags: অনিলেশ গোস্বামী, গল্প, ঘেরাও
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।