[১]
একটা উচ্চ-প্রাথমিক বয়েজ স্কুলের টিচারের চাকরি নিয়ে তনয় যে অজ-পাড়াগাঁয় পোস্টেড হল সেটা দেখতেই খালি সাধারণ। জায়গাটা রাজ্যের এক প্রান্তে, তনয়দের স্কুলের মোটামুটি দেড় মাইলের মধ্যেই সমুদ্র। তবে সমুদ্রসামীপ্য নয়, এই এলাকার বিশেষত্ব অন্যরকম। তনয় প্রথম সেটা জানতে পারল তার স্কুলের ডিউটি জয়েন করার আন্দাজ দিন কুড়ি বাদেই।
স্কুলের টিফিনটাইমে স্কুল গেটের বাইরে বেশ কয়েকজন হজমি, ঘুগনি, আচার ইত্যাদি জিনিস বিক্রি করতে আসে। টিফিন শেষ হলে যে যার মত ফিরে যায়। আবার আসে ছুটির সময়। সব গ্রাম্য এলাকায় সাধারণত ছেলেরা স্কুলে একা-একাই যাতায়াত করে, এখানেও তাই। সে’জন্য স্কুল শুরু আর শেষ হওয়ার সময় শহুরে এলাকার মত গার্জিয়ানদের আদিখ্যেতাটা এখানে একেবারেই নেই। অতএব, ছুটির সময়ও ওই সব ঘুগনি, হজমি প্রভৃতির বেশ ভালোই বাজার থাকে। তনয়দের স্টাফরুম দোতলায়। টিফিনের সময় সেখানকার একটা চেয়ারে বসে শুকনো পাউরুটি চিবোতে চিবোতে তনয় বিমনাভাবে ওই স্টাফরুমের একখানা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। স্কুল গেটের দিকে মুখ-করা সেই জানালাটা দিয়ে তনয় দাঁত-বের-করা ছেলের দলকে ওইসব মুখরোচক খাবার খেতে দ্যাখে। তার মনে হয়, সেও স্কুলে থাকাকালীন এসব প্রচুর খেয়েছে, আর তার কিছুকাল পর থেকেই ধরেছিল রোল-চাউমিন। এখন সে খাচ্ছে শুকনো রুটি, এরপর রোগে ধরলে হয়ত একেবারে সেদ্ধ খেতে হবে…নাহ, বয়স বাড়ার সাথে সাথে এইভাবেই বোধহয় জীবন থেকে সুস্বাদ উধাও হয়ে যায়। নিজের স্কুলজীবনে পড়া সেই ‘নেচার’ কবিতাটা ফের মনে আসে তনয়ের।
ধীরে ধীরে জানালার পাশের ওই চেয়ারখানাই তনয়ের স্থায়ী বসার জায়গা হয়ে গেল। আর তারপরেই তনয়ের একখানা অবজারভেশন হল। টিফিনের পরের দুটো ক্লাস অফ থাকে তনয়ের। সেই সিক্সথ আর সেভেন্থ পিরিয়ডের মাঝের সময়টায় টানা ছয়দিন ধরে নজর করে সে দেখল, টিফিন শেষ হওয়ার প্রায় একঘন্টা পরে খাটো ধুতি আর ময়লা ফতুয়া পরা একজন খুব বুড়ো ফেরিওয়ালা স্কুলের পাশের বিশাল দেবদারু গাছটার নীচে এসে বসে। লোকটার কাঁধে বাঁশের বেশ পুরু আর চার-পাঁচ হাত লম্বা একখানা কঞ্চি, সেই কঞ্চির বিভিন্ন অংশ থেকে ঝোলে সুতো-বাঁধা অনেক রঙ-বেরঙের ছোট-বড় কাচের শিশি। খুব সুন্দর গোলাকার কাচের ঢাকনা বা ছিপি লাগানো শিশিগুলো। তবে ওই শিশিতে যে কি থাকে তা এত দূর থেকে বোঝা অসম্ভব। লোকটা পনের কি বিশ মিনিট থাকে; তারপর চোখের চশমা ঠিক করে নিয়ে আস্তে আস্তে পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে দূরে মিলিয়ে যায়। পরদিন আবার আসে। লোকটার একখানা শিশিও তনয় এখনও অবধি বিক্রি হতে দ্যাখে নি, কিন্তু তাও লোকটা হররোজ টাইম-মত আসে। কি আছে ওই শিশিগুলোর মধ্যে? ড্রাগ নয় তো? বিশেষ খদ্দের নেই, তাও নিয়মিত কেন আসে লোকটা? তনয়ের কৌতূহল ক্রমশ বেড়েই চলল।
স্কুলের ষাণ্মাসিক পরীক্ষার কয়েকদিন পরে হঠাৎ একটা ঘটনা নজরে পড়ে গেল তনয়ের। সেদিন সে স্টাফরুমের ওই জানালা দিয়েই বুড়োর দিকে তাকিয়েছিল। হঠাৎ তনয় দেখল, টিফিন শেষ হওয়ার ঘন্টাখানেক পরে তারই এক সামান্য সিনিয়র সহকর্মী নিখিলবাবু চুপিচুপি স্কুলের গেট দিয়ে বেরিয়ে গেলেন এবং বেরিয়ে গিয়ে তিনি সেই বুড়ো ফেরিওয়ালার কাছ থেকে খুব সামান্য কথার পরে একখানা লাল রঙের ইঞ্চি খানিক লম্বা শিশি নিয়ে চারপাশে একবার চোখ বুলিয়েই সেটাকে পকেটস্থ করলেন। তারপর বুড়োর হাতে কয়েকটা নোট গুঁজে দিয়ে আরেকবার চারদিক দেখতে দেখতে খুব দ্রুত স্কুলের ভেতর ফিরে এলেন। এই নিখিলবাবু আজ চার বছরের বেশী এখানে আছেন, বাসাজনিত নানান সমস্যায় তিনি তনয়কে বিস্তর সাহায্য করেছেন। তনয়ের সাথে তাঁর মোটের উপর সদ্ভাব আছে। তাই ওই শিশির ব্যাপারটা তনয় দু’-একদিনের মধ্যেই নিখিলবাবুকে জিজ্ঞেস করবে বলে ঠিক করে ফেলল।
[২]
ব্যাপারটা গুছিয়ে নিয়ে নিখিলবাবুকে জিজ্ঞেস করতে করতে তিনদিন লেগে গেল তনয়ের। ছুটির পরে স্কুলের পাশের গুমটিতে চা খেতে খেতে সেদিন খুব সাধারণভাবেই প্রশ্নটা করেছিল সে। কিন্তু তার প্রশ্নের যে এরকম কোন জবাব আসতে পারে, তাও একজন বিজ্ঞানের শিক্ষকের কাছ থেকে, এটা একেবারেই আশা করেনি তনয়।
তনয়ের প্রশ্নের উত্তরে নিখিলবাবু যে অবিশ্বাস্য কাহিনী বললেন তা মোটামুটি এ’রকম — ওই বুড়ো ফেরিওয়ালার কাছ থেকে তিনি যে শিশিটা নিয়েছিলেন সেটায় নাকি একজন প্রাক্তন বিজ্ঞান শিক্ষকের ভূত ভরা ছিল! আর শুধু সেটাতেই নয়, বাদ বাকী সমস্ত শিশিতেই নাকি নানান ধরন আর প্রজাতির ভূত রাখা ছিল! অর্থের বিনিময়ে এইরকম অর্ডারমাফিক ভূত বিক্রি করাই নাকি ওই বুড়োর জীবিকা। নিখিলবাবু এক সপ্তাহ আগে বায়না দিয়ে রেখেছিলেন। আসলে হয়েছে কি, ষাণ্মাসিক পরীক্ষার খাতা বাড়িতে ডাই হয়ে পড়ে আছে, আর এদিকে বউ-এর মাসতুতো বোনের বিয়ে। খাতা দেখার সময় একেবারেই নেই, অথচ নির্দিষ্ট দিনে রেজাল্টও জমা দিতে হবে। তাই পরীক্ষার ওইসব খাতা দেখার জন্য ওই ভূতের যোগাড়। এরকম নাকি এই অঞ্চলে হামেশাই ঘটে। নিখিলবাবু নিজেই নাকি আগে দু’-দু’বার এমন করেছেন। এতে চাপ কিছুই নেই, খালি হাতবদলের সময় চুক্তি থাকে যে নির্ধারিত কাজ হয়ে গেলে সেই ভূতকে শিশিতে ভরে ছিপি না এঁটে সমুদ্রের জলে ভাসিয়ে দিতে হবে আর কোন মন্দিরে একমাসের ভিতর ওই বিদেহী আত্মার মুক্তির উদ্দেশ্যে পুজো দিতে হবে। তবে সেরকম না করলে কিন্তু সেই ক্রেতার মৃত্যু একেবারে অবশ্যম্ভাবী। সেই দায়িত্ব অবশ্য ভূত বাবাজীর। তাছাড়া এইখানকার ভূতেরা সকলে নাকি খুব কো-অপারেটিভ আর মানুষ-ঘেঁষা। এই এলাকার অনেক লোকই নাকি ফুলটাইম মানুষ নয়। তবে এমনি দেখলে বা কথাবার্তা বললেও কিন্তু ভূত বলে আলাদা করে চেনার জো নেই। হাতে-গরম উদাহরণ—-হরেন নাম নিয়ে একটা মাঝবয়সী ভূত নাকি এই তিনমাস আগেও গ্রামে মুদির দোকান চালাত। অথচ তার নিয়মিত খদ্দেরদের মধ্যেও কেউ জানতেই পারেনি! তারপর এক সন্ধ্যেবেলায় গ্রামের দক্ষিণের জলাটার ধারে জল থেকে জ্যান্ত মাছ ধরে খেতে গিয়ে সে হাতেনাতে ধরা পড়তেই ব্যাপারটা প্রথম জানাজানি হয়ে যায়। এই নিয়ে বিচারসভাও বসেছিল গ্রামের মুরুব্বিদের নিয়ে। নিখিলবাবু নাকি নিজে গিয়েছিলেন সেই সভায়। তারপর এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দার অনুরোধে অত্যন্ত লজ্জিত হয়েই নাকি সেই ‘হরেন’ শেষে সজল চোখে তার ঠিকানাবদল করতে বাধ্য হয়। তার দোকানটা এখনও গ্রামের একপাশে বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। এই তো হাল এখানকার। তলে তলে এমন আরও কত যে আছে…
ছেলেবেলায় কোন একটা গল্পে এ জাতীয় একখানা বিষয় তনয় পড়েছিল বটে কিন্তু বাস্তবে যে এমন কিছু হতে পারে এ তো ভাবাই যায় না। কিন্তু প্রথমে এ নিয়ে হাসাহাসি করলেও নিখিলবাবুর প্রত্যয়ী কণ্ঠের চাপে তনয়ের বিশ্বাস আর শেষ পর্যন্ত অটল থাকতে পারল না। সে ঘরে ফিরেও অনেকক্ষণ ব্যাপারটা নিয়ে ভাবল। খুবই অবাক লাগছে তার। একে তো ভূত আদৌ আছে কি না সেটার উপর বিশাল প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। তার উপর সাংঘাতিক সাহস করে সেই রকম ‘নিরালম্ব বায়ুভূত’-কে ধরাও তো কম কথা নয়। শুধু তাই নয়, ভূতকে ধরে আবার শিশিতে ভরে বিক্রি! এরকম হয় নাকি?
রাত এগারোটার পরে ঘরে কিনে রাখা গুড় আর মুড়ি দিয়ে ডিনার সেরে চৌকিতে শুয়ে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ফের কথাটা মনে পড়ল তনয়ের। বিষয়টা নিয়ে ফের কিছুক্ষণ ভাবতেই একটা মতলব মাথায় এল তার। মতলবখানা যে খুব মহৎ তা নয়, কিন্তু বেশ অভিনব আর রসালো। তনয় মনে মনে পরের কয়েক মিনিটেই স্থির করে ফেলল যে কালকেই সে সকাল-সকাল আবার নিখিলবাবুকে ধরবে। উনি তো অভিজ্ঞ, এ’সবের আঁট-ঘাট ওনার তাহলে নিশ্চ’ই সমস্ত জানা আছে।
পরেরদিন স্কুলে গিয়েই সে নিখিলবাবুকে আড়ালে টেনে নিয়ে গিয়ে তার প্ল্যানের কথাটা বলে ফেলল। চোখ গোল গোল করে পুরোটা শুনলেন নিখিলবাবু।আর শেষে তনয়ের পেটে নিজের কনুই দিয়ে হালকা গুঁতো মেরে হাসতে হাসতে বললেন, ‘ওরে বাবা! তোমার তো ভয়ঙ্কর মাথা ভাই! কোথায় ছিলে এতদিন? কয়েক বছর আগে তোমায় পেলে……যাক গে, মনে হচ্ছে ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আজ যেও আমার সাথে, কথা বলিয়ে দেব। আমি নাহয় মল্লিককে আমার ক্লাসটায় স্টপগ্যাপ নিতে বলে রাখব’খন। আচ্ছা, এখন ক্লাসে যাই। পরে দেখা হবে।’
টিফিনের পরে নির্দিষ্ট সময়ে নিখিলবাবুর সাথে স্কুলের বাইরে বেরিয়ে এল তনয়। রাস্তার পাশের দেবদারু গাছটার দিকে তাকাতেই দু’জনের নজরে এল যে সেই বৃদ্ধ ফেরিওয়ালা ইতিমধ্যেই সেখানে উপস্থিত হয়েছে। কাঁধের ঝুলন্তশিশিসমেত বাঁশের কঞ্চিখানা নিজের একপাশে রেখে চুপ করে গালে হাত দিয়েদিব্যি বসে আছে হাই-পাওয়ারের ঘোলাটে আর পুরু কাচের চশমা পরা লোকটা। ওদের দিকে তাকিয়ে কি মিটিমিটি হাসছে ও? কে জানে! তনয়রা পরস্পর একদফা চোখ চাওয়া-চাওয়ি সেরে নিয়ে এইবার ওই বুড়োর দিকে ধীরপদে এগিয়ে গেল।
তারপর আর কী! এর ঠিক সাতদিন পরে একটা বেগুনি রঙের কাচের শিশি সাবধানে জামার পকেটে নিয়ে স্কুলফেরত ভরসন্ধ্যেবেলায় নিজের ঘরে এসে ঢুকল তনয়। ঢুকেই দরজায় ছিটকিনি এঁটে দিল সে। উত্তেজনায় তার বুক একেবারে হাপরের মত উঠছে-নামছে। বুড়োর কথা যদি ঠিক হয় তাহলে যে কি হবে সেটা ভেবেই আনন্দে তার ভেতরটা নেচে উঠছে একেবারে। কয়েক মূহুর্ত নিজেকে কিঞ্চিৎ ধাতস্থ করে নিয়ে নিখিলবাবু আর বুড়োর নির্দেশিত মামুলি কিছু উপাচার সেরে নিল তনয়। তারপর কপাল ঠুকে সে দিল সেই বেগুনি রঙের কাচের শিশির ঢাকনাটা খুলে। সহসা কেমন-করে-জানি খুব ক্ষীণ অথচ মেদুর একটা নহবতের সুর আর ভেজানো ল্যাভেন্ডারের মিষ্টি গন্ধে তনয়ের গোটা ঘরখানা ভরে উঠল।
[৩]
তিন মাস পরের কথা বলছি। ভালোই আছে তনয়। তার মতলবটা বেশ খেটে গেছে বলতে হবে। মতলবখানা ঠিক কি ছিল, সেটা এবার সংক্ষেপে বলে ফেলা যাক। নিখিলবাবু সেদিন বলেছিলেন যে ওই বুড়ো ফেরিওয়ালার কাছে অর্ডার দিলে নাকি যে কোন ধরনের ভূত পাওয়া যায়। সেটা শুনে তনয়ের মনে হয়েছিল,কোন মেয়ে-ভূতকে আন-অফিসিয়াল গার্লফ্রেন্ড হিসেবে রাখলে কেমন হয়? তার সাথেই নাহয় থাকবে, ওই ‘লিভ-ইন’-এর মত আর কী! খালি দেখতে-শুনতে ভালো হতে হবে, বেসিক এজুকেশন এবং রান্না প্রভৃতি ঘরের কাজ সামান্য জানা থাকলেই চলবে… আর হ্যাঁ, তনয়ের অনুগত হতে হবে। তার মুখের উপর ফস করে কোন বিরূপ কথা বলা বা বেয়াড়া প্রশ্ন করা কিন্তু একেবারেই চলবে না। এছাড়া নিরাপদ হওয়াও একটা ফ্যাক্টর বটে। ব্যস। ফেরিওয়ালাকে তনয় তার চাহিদার কথা বলতেই সে তো হেসে প্রায় খুন! অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে সে বলেছিল, ‘বুঝেছি, বুঝেছি। তিরিশ বছর ধরে এই কারবার করছি স্যার; কিন্তু এমন বায়না এই প্রথম পেলাম। তবে বলেছেন যখন, হয়ে যাবে। কিন্তু হাজারটি টাকা লাগবে। দাম বেশী হলেও জিনিস নিয়ে ভাববেন না স্যার, পুরো আমার গ্যারান্টি। সাতদিন পরে টাকা নিয়ে আসুন , মাল পেয়ে যাবেন।’
পেয়েও ছিল তনয়। আশাতীত ফল। এক হাজার টাকার বিনিময়ে যে এত ভালো ভূত, না, পেত্নী যে পাওয়া যেতে পারে এটা ও স্বপ্নেও ভাবে নি। প্রচণ্ড অনুগত, কেয়ারিং এবং মিঠে স্বভাবের মেয়ে। কোন নাম ছিল না; তাই তনয় ওর নাম রেখেছে আলেয়া। সেই আলেয়া কিন্তু ঘরের কাজ বেশ ভালোই সামলায়, গুনগুন করে গানও গায়, তনয়ের সাথে গল্প-তামাশা করে আবার তার যত্ন-আত্তিরও কোন ত্রুটি রাখে না। বিবাহিত স্ত্রীও বোধহয় এতটা করবে না। সে’সব দিক থেকে তোফা আছে তনয়। তার এখন প্রচুর সুবিধে। এত কিছু করে, তা সত্ত্বেও আলেয়ার কোন দাবীদাওয়া নেই। সত্যিকারের বউ বা গার্লফ্রেন্ড হলে আজ ‘এটা চাই’, কাল ‘ওটা লাগবে’ কর’ত; এর কিন্তু ওসব বালাই নেই। কোনরকম হাতখরচের প্রশ্নই ওঠে না। গয়নাগাটি, সিনেমা-শপিং কিংবা নিদেনপক্ষে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া বা রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোর বিষয়গুলোও অবান্তর। বিবিধ ব্রতপালন কিংবা পুজো-পার্বনজনিত খরচ-কাম-ঝঞাটও নেই। আর শ্বশুরবাড়ির তো কোন সিন-ই নেই! এমনকি, খাওয়ার খরচও জিরো! আর সবচেয়ে বড় কথা, ক’দিন পরে যদি আর না পোষায়, খুব সহজেই ঝেড়ে ফেলা যাবে। কোন সামাজিক বা আইনি জটিলতা নেই। শুধু একবার সমুদ্রে, আর একবার কোন এক মন্দিরে যেতে হবে। এ আর এমন কি? দুটোই কাছাকাছি আছে। কিন্তু সেরকম কোন প্রয়োজন খুব শিগগির তো পড়বে বলে মনে হচ্ছে না তনয়ের।আলেয়া যথেষ্ট সুখে রেখেছে তাকে। তাছাড়া এই ক’দিনে ওকে তনয়ের বেশ ভালোও লেগে গেছে।নিজের বাড়ি থেকে এত দূরে থাকলেও কোন সঙ্গী বা স্বজনের অভাব সে আর এখন টের পায় না।
কিন্তু একটা অসন্তোষ থেকেই গেছে তনয়ের মনে। আলেয়াকে চোখে দেখা যায় না। যতক্ষণ তনয় বাড়ি থাকে ততক্ষণ আলেয়াও তার সাথে থাকে; কিন্তু এই তিনমাসের মধ্যে একবারও আলেয়াকে চাক্ষুষ করেনি তনয়। খালি ল্যাভেন্ডারের গন্ধটার তারতম্য তনয়কে আলেয়ার উপস্থিতি আর নির্দিষ্ট লহমায় তাদের দুজনের মাঝখানের দূরত্ব বুঝিয়ে দেয়। কিছুটা এরকম যে হবে সেটা অবশ্য জানাই ছিল। শিশি হাতবদলের সময় সেই বুড়ো বলেই দিয়েছিল যে সব ঠিক আছে, কিন্তু এই ভূতকে কিন্তু চোখে দেখা যাবে না। প্রয়োজনে সে কোন ইঙ্গিত রাখবে, আলেয়ার ক্ষেত্রে যেমন ওই গন্ধ; কিন্তু নজরে পড়বে না। তনয় কারণ জানতে চাইলে গুটিকয়েক কালচে দাঁত বের করে মাড়িসর্বস্ব একখানা ফোকলা হাসি হেসে বুড়ো অস্বাভাবিক মার্জিত ভাষায় বলেছিল, ‘আসলে স্যার, আমি একটু নিরীহ আর গোবেচারা লোকের আত্মা নিয়েই কারবার করি। এদের ধরা সহজ এবং এরা কাজও করে ভালো। কিন্তু এরা এতই সরল যে শরীর ধারণের জন্য যেটুকু ইচ্ছাশক্তির দরকার, সেটুকুও এদের থাকে না। আপনার সমস্ত কাজ করে দিয়ে শেষে এদের মুক্তি পেলেই হল! গ্যারান্টি নিয়ে ব্যবসা করি , তাই এদের নিয়েই থাকি। তবে একটা কথা আপনি মনে রাখবেন স্যার, যেসব আত্মা শরীর ধারণ করতে পারে, তারা কিন্তু সবসময় ভালো হয় না! ওদের বাসনার জোর অনেকসময় সাংঘাতিক হয়। তার জন্যই শরীর নিতে পারে কিনা! নিজেদের মনের বিভিন্ন সব বাসনা বা ইচ্ছাপূরণই তাদের আসল উদ্দেশ্য। ওদের ধারণা, মনের সব বাসনা মিটলেই মুক্তি পাওয়া যাবে। আসলে তা তো পুরোপুরি সত্যি নয়! কিন্তু ওরা তা মানবেই না। তাই ওদের ওপর গ্যারান্টি দেওয়া খুব মুশকিল। ফলে ওরকম কিছু আপনি আমার কাছে পাবেন না। এবার বলুন স্যার, নেবেন, কি না?’
ঝোঁকের বশে তখন এই শর্তে রাজী হয়েছিল তনয়। সেই সময় সে ভেবেছিল, তার তো খালি কাজ নিয়ে কথা। কাজ ছাড়া মাঝেমধ্যে একটু গালগপ্পো, আর এক-আধবার খুব বেশী মুড হলে হয়ত …… ওই আর কী! তা সেই ভূত আসলে কেমন দেখতে সেটা খুব বড় কথা নয়। তাছাড়া নিয়মিত ভূতদর্শনও খুব ভালো জিনিস না। অতএব বুড়োর শর্তে রাজী হলে খুব ক্ষতি হবে না। কিন্তু এখন তার অন্যকথা মনে হচ্ছে। আলেয়ার সাথে তার বেশ ভাবও জমেছে এই ক’দিনে। কোন ভয়-সঙ্কোচ নেই। সবই চলছে, তাও কিসের যেন ফাঁক! কি যেন নেই। আলেয়াকে শুধু একবার দেখার জন্যই নয়; অন্য এক বিমূর্ত, সংজ্ঞাবিহীন কিছু একটার খোঁজ যেন এক আবিষ্কারের নেশার মত দিনে-দিনে অধীর করে তুলল তনয়ের অন্তরটাকে। কিন্তু আলেয়ার ভেতর ঠিক কি সে খুঁজে পেতে চায় সেটা তনয়ের নিজের কাছেও পুরো পরিষ্কার হয় না। সব মিলিয়ে তনয় ধারণা করেছে যে সে খালি একবার আলেয়াকে দেখতে চায়।
একবার দিনের বেলায় তনয় সাহস করে তার এই ইচ্ছার কথা বলেও ছিল আলেয়াকে। কিন্তু সেই মে… না, পেত্নী হেসেই উড়িয়ে দিল! সেদিন তার হাসির দমকে ঘরের জানালার পর্দাগুলো পর্যন্ত বিনা হাওয়ায় কাঁপতে আরম্ভ করেছিল। হাসি থামলে আলেয়া বলেছিল,‘এটুকুই তো আমি। আর কি তোমার চাই?’
তনয় বলেছিল, ‘না, ইয়ে… মানে, তোমায় কি একদিনও দেখতে পাব না? আমার খুব ইচ্ছে তোমায় একবার দেখার।’
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে আলেয়া মৃদুস্বরে বলেছিল, ‘থাক। আমায় দেখে তোমার লাভ নেই। শেষমেশ আমি এতটাই সাধারণ যে তুমি দেখলে হয়ত ভয় পেতে পারো।’
[৪]
কয়েক সপ্তাহ পরের ঘটনা। ন্যাপা বলে একটা ছেলে গত চারদিন ধরে স্কুলে আসছে না। সে যেই ক্লাসে পড়ে ঘটনাক্রমে সেখানকার ক্লাস-টিচার হয়েছে তনয়। ব্যাপারটা নজরে আসায় স্কুলের আইন মেনে সে হেডস্যারকে ঘটনাটা জানায়। এখানকার হেডস্যার আবার একটু আলগা রাশের মানুষ। তিনি তাচ্ছিল্য করে তনয়কে বললেন, ‘ আরে দাসবাবু, এ তো সাধারণ কেস। আপনিই দেখে নিন না ব্যাপারটা! এর জন্য আবার আমার কাছে কেন?….’
তনয় পরেরদিন ক্লাসে গিয়ে দেখল, আজও ন্যাপা আসে নি। সে এবার মাথা খাটালো। ক্লাস শেষে ন্যাপার ঘনিষ্ট বন্ধু বিশুকে ডেকে সে বলল, ‘অ্যাই, তুই ন্যাপার ঘর চিনিস?’ এই এলাকার লোকেরা বাড়িকে ‘ঘর’ বলে। তনয়ের প্রশ্নের জবাবে বিশু ঘাড় নাড়’ল; অর্থাৎ সে চেনে। তনয় এবার আশ্বস্ত হয়ে বলল, ‘ঠিক আছে। আজ তুই নিজের ঘরে ফেরার সময় ন্যাপার ঘরে যাবি। গিয়ে ওর বাপকে বলবি কাল যেন ছেলেকে স্কুলে পাঠায়, আর তা না হলে আমার সাথে যেন এসে দেখা করে। বুঝলি?’ এবারেও আগের মত ঘাড় নাড়ল বিশু।
পরেরদিন স্কুলে না এল ন্যাপা, না এল তার বাপ। বিশু জানালো, গতকাল সে গিয়ে ন্যাপার বাড়িতে তালা লাগানো দেখেছিল। ন্যাপার পাশের ঘরের লোককে বিশু অবশ্য বিষয়খানা সবিস্তারে বলে এসেছে। ন্যাপারা ঘরে ফিরলে নিশ্চ’ই খবরটা পাবে। তনয় বুঝল যে এখন তার আর কিছুই করার নেই। আপাতত তনয় তাই ভগবানের হাতে গোটা ব্যাপারখানা ছেড়ে দিয়ে ক্লাসে পড়াতে আরম্ভ করে দিল। আর ভগবানও তেমন। তিনি যে কত বড়মাপের জটিল মনের স্ক্রিপ্ট-রাইটার সেটার প্রমাণ দিতে তিনি বিন্দুমাত্র দেরী করলেন না।
দিনের শেষে তনয় যে রাস্তা দিয়ে রোজ বাড়ি ফেরে সেটার পাশে একটা মস্ত বাঁশঝাড় পড়ে। ওই ঝাড়টার পিছনেই একখানা মজা-পুকর রয়েছে। পুকুরটার অন্য পাড়ে আছে একখানা আধভাঙা পরিত্যক্ত একতলা বাড়ি আর সেটার পিছনের প্রেক্ষাপটে ঘন সবুজ জঙ্গলের বিস্তার চোখে পড়ে। জলাশয়টা ছোট, সেটার পাশের জংলা গুল্মলতার ঝোঁপঝাড় পায়ে মাড়িয়ে ইচ্ছে করলেই সেই ঘরখানায় যাওয়া চলে। এখন শীতের সময়, একটু অন্ধকার হলেই বাতাস ভারী হয়ে নেমে এসে অনেকটা দুধের সরের মত আকৃতি নিয়ে ওই পুকুরটার জলের উপর ভেসে বেড়ায়। তাছাড়া এই দশ মিনিটের পথটাও সচরাচর বেশ নির্জন থাকে। সেদিন স্কুল সেরে তনয় সবে সেই বাঁশঝাড়ের পার্শ্ববর্তী স্যাঁতস্যাঁতে ঠান্ডা পথখানা ধরে বেশ কিছুটা এগিয়ে এসেছে এমন সময় পেছন থেকে খুব সুরেলা এক নারীকণ্ঠ তার কানে গেল, ‘ও স্যার, শুনছেন?’
গলা লক্ষ্য করে ঘাড় ফেরাতেই বেশ চমক লাগল তনয়ের। পেছনে যে নারীমূর্তি দাঁড়িয়ে আছে তার আনুমানিক বয়স সাতাশ-আঠাশ। ফর্সা, বেশ সুন্দর মুখশ্রী। সাধারণ শাড়ি পরা, সিঁথিতে ম্লান সিঁদুরের আভাও চোখে পড়ে। কিন্তু তনয়ের সবচেয়ে চোখে লাগল মেয়েটার ধারালো ফিগারটা। হয়ত অনেকদিন শহরের মুখ না দেখায় দেহসৌষ্ঠবের প্রশ্নে তার চোখ পাড়াগাঁসুলভ কিঞ্চিৎ স্থূলত্বে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল, কিন্তু তাও মেয়েটার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে তনয়ের মনে হল, এই সুপরিমিত চেহারা আর সুন্দর মুখশ্রী নিয়ে এই মেয়ে অনেক নাম-করা মডেলকে রীতিমত চ্যালেঞ্জের সামনে ফেলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। খুব যে বিশাল কিছু, তা নয়; কিন্তু তাও কি যেন আছে ওর মধ্যে। কিছুতেই তার যেন সঠিক ব্যাখ্যা চলে না।
একসময় মেয়েটার কথাতেই ফের হুঁশ ফিরল তনয়ের। মেয়েটা বলল, ‘বলছি, আপনিই তো টি.ডি. স্যার, তাই না?… ওই ন্যাপাদের স্কুলে যিনি নতুন এসেছেন…’
তনয় এবার প্রাথমিক জড়তা কাটিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, আমিই সে। কিন্তু আপনাকে তো ঠিক…’
তনয়ের জবাব শুনে হাসিমুখে কয়েক পা এগিয়ে এল মেয়েটা। কি অসাধারণ হাসি! যাই হোক, সামনে এগিয়ে এসে সে তনয়কে বলল, ‘যাক ভালোই হল আপনার সাথে দেখা হয়ে। আমি ওই ন্যাপার মা। ন্যাপার পিছন পিছন কয়েকবার স্কুলে এসে আমি আগেও আপনাকে দেখেছি, সেজন্যই চিনলাম… ওই বিশু শুনলাম গতকাল আমাদের ঘরে গিয়ে বলে এসেছিল যে আপনি ন্যাপার বাবাকে ডেকেছেন। আসলে হয়েছে কি স্যার, তখন বাড়িতে কেউ ছিল না। ছেলেটার ক’দিন ধরে খুব জ্বর তো, তাই ওর বাবা ওকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছিল। আমিও ঠিক ছিলাম না। পরে পাশের ঘরের লোকের মুখে সব শুনি। ন্যাপার বাবার আজ আবার শহরে খুব দরকার, না গেলেই নয়। তাই আমিই এলাম। সকালে অনেক কাজ ছিল। তাই ভেবেছিলাম কাজ সেরে ছুটির সময় যাব। কিন্তু আসতে একটু দেরী হয়ে গেল স্যার, মাফ করবেন…’
এরপর সেদিনকার এই প্রথম আলাপেই ধীরগতিতে বাড়ির পথে হাঁটতে হাঁটতে অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল তনয় আর ন্যাপার মায়ের মধ্যে। ন্যাপাকে অতিক্রম করতে দুজনের কারোরই খুব বেশী সময় লাগল না। তারপর নানান কথাপ্রসঙ্গেই তনয় জানতে পেরেছিল যে ন্যাপার মায়ের আসল নাম হচ্ছে আলো, তার বর, মানে ন্যাপার বাবা আশি কিলোমিটার দূরবর্তী শহরে কি-একটা কাজ করে এবং খুব কম দিন বাড়িতে ফেরে, আর ন্যাপাদের বাড়ি নাকি তনয়ের বাসা ছাড়িয়ে মাত্র পনের মিনিটের রাস্তা।
সেদিন বাড়ি ফেরা মাত্রই রোজকার মত কাঠের দরজাটা অল্প শব্দ করে সটান খুলে গেল। তনয় নাকের খুব কাছে চলে আসা ল্যাভেন্ডারের গন্ধটা থেকে বুঝল যে তার একদম সামনেই আলেয়া এসে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিনও এমন হয়। কিন্তু আজ যেন অনেক বেশী সময় ধরে গন্ধটা তনয়ের এতো কাছে টিকে রইল। তারপর হঠাৎ দূরের রান্নাঘরের দিকে একরকম ছিটকে চলে গেল। অন্যদিনের মত। কিন্তু আরেকটা জিনিস কিন্তু একেবারেই অন্যদিনের মত হল না। তনয়ের চা-এর নেশা মারাত্মক, তাই রোজ স্কুল থেকে ফেরার মিনিটখানেকের মধ্যেই আলেয়ার সৌজন্যে তার হাতে গরম চা-এর পেয়ালা চলে আসে। আজ কিন্তু চা আসতে পাক্কা দশ মিনিট দেরী হল। তারপর কাপে চুমুক দিয়েই তনয় দেখল, চা-এর চিনির মাত্রা আর উত্তাপটা আজ কেমন যেন কম-কম। অবশ্য এটাও কিন্তু অন্যদিনের মত নয়।
[৫]
সেই থেকে শুরু। এরপর মাঝে মধ্যেই রাস্তাঘাটে দেখা হতে লাগল তনয় আর আলোর।প্রথমদিন যেখানে দেখা হয়েছিল সেখানেই বেশীর ভাগ সময় দেখা হয়ে যায়। না, ন্যাপার স্কুলে যাওয়ার সাথে কিন্তু এর কোন যোগাযোগ নেই। তাছাড়া এরকম দেখা হয়ে যাওয়ার সময় কখনওই ভাগ্যিস আলোর সাথে ন্যাপা, ন্যাপার বাবা বা অন্য দ্বিতীয় কেউ থাকে না! কয়েকদিন আগে আলোর কাছ থেকেই আরেকটা ঘুরপথের সন্ধান পেয়েছে তনয়। রাস্তাটা ওই বাঁশঝাড়টার পাশের একটা সরু গলি থেকে শুরু হয়েছে। ওটা দিয়ে গেলে ন্যাপাদের বাড়ি পার করে তবে তনয়ের বাসায় আসা যায়। আগের চেয়ে প্রায় আধাঘন্টা বেশী লাগলেও তনয় ইচ্ছে করেই আজকাল ওই রাস্তা দিয়েই বাড়ি ফেরে। ফলস্বরূপহালে রাস্তার কোথাও-না-কোথাও আলোর সাথে তনয়ের দেখা হওয়াটা একরকমের ক্যালকুলেটেড নিশ্চয়তায় পরিণত হয়ে পড়েছে।
বেশ দিন কাটতে থাকে। দক্ষিণ হাওয়ায় ভর করে বসন্ত আরেকবার প্রকৃতির দরবারে আবির্ভূত হয়। এতদিনে মেলামেশার প্রসঙ্গে তনয় ও আলোর দুইজনই পরস্পরের সাথে বেশ সহজ হয়ে এসেছে। তনয়ের প্রতি তার যে টান জন্মেছে সেটা তার কথার ভাঁজে আলো ইতিমধ্যেই আড়াল দিয়ে প্রকাশ করেছে। এ’দিকে তনয়েরও খুব পছন্দ আলোকে। তার মনে হয়, আলেয়ার সঠিক কমপ্লিমেন্ট হচ্ছে এই আলো। একটা ‘হিউম্যান টাচ’ আছে এই মেয়ের মধ্যে। একে যেন অনেক বেশী বোঝা যায়। দেখে ভালোও লাগে; আবার কখনও সুযোগ পেলে হয়ত ছুঁয়ে দেখাও যাবে। আলেয়ার প্রতি এগুলোই কি তনয়ের অনুযোগ নয়?
সময়ের সাথে তনয়দের দেখা হওয়া ধীরে ধীরে দেখা করায় পরিণত হল। পূর্বনির্ধারিত কোন শণি কিংবা রবিবারে দেখা করতে লাগল ওরা। সময় দেওয়া থাকে ওই শেষ-বিকেলে, বাঁশেঝাড়ের পাশে। কখনও কখনও তনয়ের ইচ্ছে হয় আলোকে তার বাসায় নিয়ে আসতে। কিন্তু সে তো আর সম্ভব নয়। ভদ্রমহিলা প্রথমদিন ঘরে এসেই যদি দেখেন যে তার জন্য আনা চা-এর কাপ-ডিশ শূন্যে ভাসতে ভাসতে তারই দিকে উড়ে আসছে, সেটা মনে হয় খুব একটা ভালো দেখাবে না।
অন্যদিকে আলো কিন্তু কখনই তনয়কে তার নিজের ঘরে ডাকে না। মনে হয়, ছেলে আর ছেলের বাবার জন্য। তাছাড়া এসব ক্ষেত্রে গ্রাম্য এলাকা এখনও সুবিধের হয়ে ওঠে নি। সামান্য কারোর সন্দেহের ঠেলাতেই বদনাম রটে যেতে পারে। ব্যাপারটা বোঝে তনয়। সে নিজেও বোকার মত কোন তাড়াহুড়ো করতে চায় না। আলোর ব্যাপারটা সে কাউকে বলেনি। নিখিলবাবু , এমনকি আলেয়াকেও না।
আলেয়াকে ইদানীং আর ভালো লাগছে না তনয়ের। ও কেমন যেন পালটে গেছে। কাজ করছে আগের মতই, কিন্তু তাতে যেন ওর মন নেই। ল্যাভেন্ডারের গন্ধটাও কেমন বাসি ফুলের মত মিইয়ে গেছে। আলেয়া আগে অনেক কথা বলত, কিন্তু আজকাল দরকার ছাড়া তনয়কে সে কিছু বলেও না। কি যে হয়েছে, তনয় ঠিক বুঝতে পারে না।
চৈত্রমাসের শেষদিকের এক বিকেলে একখানা ব্যাপার ঘটে গেল। ক’দিনের গুমোট গরমের পরে সেদিন দুপুরের শেষভাগ থেকেই আকাশের এক কোণে মেঘ জমতে দেখা গেল। হেডস্যার অভিজ্ঞ লোক, আধাঘন্টার মধ্যেই তিনি প্রতি ক্লাসে গিয়ে সেদিনের মত ছুটি ঘোষণা করে গেলেন। কিন্তু সেই সময় এত রোদ ছিল যে ঝড়বৃষ্টির কোন খেয়ালই তনয়ের মনে আসে নি। ছেলেরা বাড়ি চলে যাওয়ার পরেও সে ক্লাসঘরে বসেই তার নেওয়া ক্লাসটেস্টের খাতা দেখতে লাগল। নিখিলবাবু কখন যে উঁকি মেরে ‘বাড়ি যাও, বাড়ি যাও’ বলে গেছেন সেটা বিশেষ খেয়ালই করেনি তনয়।
ঘন্টাখানেক বাদে মেঘের ডাকে হঠাৎ ঘোর কাটল তার। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই সে চমকে উঠল। বাইরের আকাশ কালো মেঘে মেঘে নিকশ অন্ধকার হয়ে এসেছে। একটা দমকা হাওয়াও থেকে থেকে গোত্তা খাচ্ছে। বৃষ্টি এখনও নামেনি ঠিকই, কিন্তু নামতে যে খুব দেরী নেই এটা সহজেই বোঝা যায়। তনয় টেবিলের ওপর ছড়িয়ে থাকা কাগজ-পেন গোটাতে লাগল। এমন সময় স্কুলের দারোয়ান রামু এসে তাগাদা দিল তনয়কে, ‘স্যার, ঘর বন্ধ করতে হবে। বাইরে তাকান, আজ খুব জল নামবে মনে হচ্ছে।’
সব জিনিস কাঁধের ব্যাগে ঢুকিয়ে তনয় যখন রাস্তায় এসে দাঁড়াল তখন চারপাশের অন্ধকার আরও বেড়ে উঠেছে। মেঘের স্তরের ভিতর একটা বিদ্যুতের রেখাকে আচমকা সাপের মত চলে যেতে দেখল তনয়। আর মেঘটা সেটার খোঁচা খেয়েই হয়ত একবার ডেকে উঠল গুরুগম্ভীর স্বরে। এক ফোঁটা জল উপর থেকে এসে পড়ল তনয়ের গায়ে। সংকেত বুঝে দ্রুত ঘরের দিকে পা চালালো তনয়।
আঁধার বেড়ে চললেও হাওয়াটা ক্রমশ যেন স্তিমিত হচ্ছে। রেস শুরুর আগে অ্যাথলিটরা যেমন স্টান্স নেয়, এই হাওয়ারও বোধহয় সেই কৌশল। আজ আর ঘুরপথটা নেবে না বলে মনে মনে ঠিক করেছিল তনয়। আলোর সাথে আজ আর না দেখা করলেও তার চলবে। যেই না সে বাঁশঝাড়টার কাছাকাছি এসেছে, সঙ্গে সঙ্গে তেড়ে এল একটা পাগল হাওয়ার ঢেউ। এক ঝটকায় তনয়ের চোখে-মুখে যেন সারা রাজ্যের ধুলো এসে ঢুকল। চোখে হাত-চাপা দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল তনয়। একটু বাদে চোখ সাফ করে সামনে তাকাতেই সে অবাক হয়ে গেল। আলো দাঁড়িয়ে আছে ওর একদম সামনে!! কখন এল ও? আর এই আবহাওয়ায় এভাবে একা…
তনয়কে ভাবতে দেখে এবার আলো নিজেই হেসে বলল, ‘কি ভাবছেন অত? বলছি, ঝড় উঠল বলে! চলুন তাড়াতাড়ি।’ এই বলে সে হাতছানি দিয়ে তনয়কে ডাক দিয়ে নিজে দ্রুত পুকুরের পাশ বরাবর হাঁটতে লাগল। তনয় এতক্ষণে ধাতস্থ হয়েছে। আলোকে অন্য রাস্তায় যেতে দেখে সে জোরে হাঁক দিয়ে বলল, ‘ওদিকে কোথায় চললে? আর ওদিকে রাস্তাই বা ক’ই?’
হাঁটা না থামিয়েই আলো ঘাড় বাঁকিয়ে দূর থেকে উত্তর দিল, ‘চলে আসুন। ওই বাড়িটার ভিতরে। পরে ঝড় কমলে বাড়ি ফেরা যাবে। এখন আসুন তো! আসুন বলছি জলদি…’
আলোর কথা শেষ হওয়ামাত্র সত্যি-সত্যিই ঝড় উঠল। আর ভাবার সময় পেল না তনয়। আসন্ন ঝড়ের হাত থেকে বাঁচতে আলোর চলে যাওয়া পথটাকেই অনুসরণ করল সে।
[৬]
পুকুরপাড়ের বাড়িটা পরিত্যক্ত আর পুরনো হলেও এখনও বাসযোগ্য আছে। দরজায় কোন তালা বা হুড়কো ছিল না, তাই ঢুকতে সমস্যা হয় নি। ভেতরে ঢুকে তনয় দেখল ভেতর থেকেও দরজাটা এঁটে বন্ধ করার বিশেষ ব্যবস্থা নেই। দরজার পাশের দেওয়াল হাতড়ে কয়েকটা ইলেক্ট্রিক বাতির সুইচ পাওয়া গেল বটে, কিন্তু সেগুলো টেপার পরেও ঘরে কিন্তু কোন আলো জ্বলল না। হয় লোডশেডিং অথবা ঘরের লাইন কাটা আছে। যাই হোক, ঘরটার ভেতরে একটু চোখ বোলাতেই তনয়ের নজরে এল, একটা চৌকি আর একটা জলের কুঁজো ছাড়া ঘরটায় আর কিছুই নেই। ঘরময় ঝুল জমেছে বিস্তর। দুটো বন্ধ জানালার ফাঁকফোকর আর চার দেওয়ালের চার কোণায় যে ঘুলঘুলিগুলো রয়েছে সেগুলো দিয়েই বাইরের খুব ক্ষীণ আলো চুঁইয়ে এসে ঘরের নিশ্ছিদ্র অন্ধকারটাকে নগণ্য পরিমাণে তরল করে ফেলেছে। তাতেই ঘরের ভেতরের সব জিনিসের অবয়ব চোখে পড়ছে। তনয় সাবধানে পা ফেলে এগিয়ে গিয়ে চৌকিটার এক সাইডে বসে পড়ল। আপৎকালীন আশ্রয় হিসেবে খুব মন্দ নয় জায়গাটা। ইস… সাথে একটু আলোর ব্যবস্থা থাকলে ……
আলোর কথা মনে আসতেই এইবার তনয় আলোকে নিজের আশেপাশে খুঁজতে গেল। একবার এদিক-ওদিক তাকাতেই তনয়ের চোখে পড়ল, তার ঠিক ডানদিকে চৌকির একদম পাশের দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে নিজের দেহটাকে ঘরের মেঝের সাথে একটু সূক্ষ্মকোণে হেলিয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আলো। এই অন্ধকারেও তনয় স্পষ্ট দেখতে পেল, ঠোঁটে অদ্ভুত রহস্যময় আর ইঙ্গিতপূর্ণ একটা হাসি ঝুলিয়ে আলো কিন্তু তার পরিপূর্ণ দুই চোখ মেলে সোজা তাকিয়ে রয়েছে তনয়ের দুই চোখের দিকে। এইবার আলোর দিক থেকে তনয় আর নিজের নজর ঘোরাতে পার’ল না।
কয়েক মূহুর্ত এভাবেই পার হয়ে গেল। বাইরে ততক্ষণে ঝড়ের বেগ আরও বেড়ে গেছে। অসন্তুষ্ট হাওয়ার গোঁ-গোঁ শব্দ আসছে থেকে থেকে। হঠাৎ তনয় দেখল, তার দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে আলো। হাঁ করে আলোর দিকে তাকিয়ে থাকল তনয়। আলোকে এইভাবে তার কাছে এগিয়ে আসতে দেখে তার হৃৎস্পন্দন একটু একটু করে বাড়তে আরম্ভ করেছে। আলোর কিন্তু কোন ভাবান্তর বা সঙ্কোচ চোখে পড়ল না। বরং কিছুক্ষণ বাদেইসে তনয়ের পাশে, তার খুব কাছে এসে বসে পড়ল। তনয় এখনও তাকিয়ে আছে আলোর চোখের দিকে। সে বুঝতে পারছে যে আলো ক্রমশ তার মুখ তনয়ের মুখের আরও, আরও কাছে এগিয়ে আনছে এবং তার সাথে সাথে তনয়ের কানের পাশ থেকে ঘামের একটা ক্ষীণ ধারা ক্রমশ তার গলা বেয়ে নীচের দিকে নামতে শুরু করেছে।জীবনে কোন মেয়ের এত কাছে সে কখনও বসে নি। অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে তনয়ের। বাইরে ঝড়ের সাথে এতক্ষণে সজোরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। ঝমঝম একটা শব্দ আসছে তনয়ের কানে। সহসা একটা দুর্দান্ত সুবাস নাকে আসতে লাগল তনয়ের। গন্ধটার কোন বর্ণনাই সম্ভব নয়। তবে সেই অপার্থিব সুগন্ধটা নির্ঘাত আলোর শরীর থেকেই আসছে। আলো এখন প্রায় তনয়ের গা-এর উপরে উঠে এসেছে। গন্ধটা প্রতি ন্যানোসেকেন্ডে যেন তার তীব্রতা বাড়াচ্ছে। তনয়ের সমস্ত স্নায়ু ক্রমশ অবশ হয়ে আসছে। ওই গন্ধটা… ওই গন্ধটা নিজের ভেতরে কি সাংঘাতিকভাবে টানছে তনয়কে! তনয়ও এতক্ষণে একটু একটু করে ওর ভেতরে ডুবে যেতে চাইতে আরম্ভ করেছে। হঠাৎ তনয় তার গালের উপর আলোর হাতের চারটেচিকন আঙুলের শীতল স্পর্শ অনুভব করল। খুব ঠান্ডা সেই আঙুলের প্রান্তগুলো। কেমন নেশাগ্রস্তের মত লাগছে তনয়ের। সে কি জ্ঞান হারাতে চলেছে?… আলোর শরীর থেকে ভেসে আসা সেই অসাধারণ সুগন্ধটার ভেতরে সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে যাওয়ার একদম প্রাগমূহুর্তে তনয় টের পেল আলোর ঠান্ডা নিঃশ্বাস তার নিজের নাকের ডগার উপর এসে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ-এর মতন আছড়ে পড়ছে। তনয় আর নিজেকে বা আলোকে আটকাতে চাইল না। নিজের উপর আর কোন নিয়ন্ত্রণই তার অবশিষ্ট নেই। সে এখন শুধু ওই মিষ্টি গন্ধটার ভিতর পুরো তলিয়ে যেতে চায়…গন্ধটা বাড়ছে…আরও বাড়ছে… আরও বাড়ছে……
এমন সময়ে আচমকা প্রচণ্ড শব্দ করে ধারে-কাছেই কোথাও বজ্রপাত হল। সেই সঙ্গে বাইরে চলতে থাকা ঝড়ের ভেতরেও একটা বিশাল তরঙ্গ উঠল। হাওয়ার প্রবল একটা ধাক্কা এসে তনয়দের থেকে দশ-বারো হাত দূরবর্তী ভেজানো দরজাটাকে এক ঝটকায় সশব্দে হাঁ করে খুলে ফেলল। বেলাগাম ঠান্ডা এক হাওয়া, বৃষ্টির জলের ছাঁট আর সামান্য মেঘ-সরা-আলোর একটা মিশ্রণ তনয়ের আধবোজা চোখে এসে বিঁধল। ব্যাপারটার আকস্মিকতায় সামান্য পিছনে ছিটকে এল সে। খুবই বিরক্তি লাগল তার। তার সাথে চোখের সামনে আলোকে এভাবে তার এত কাছে বসে থাকতে দেখে তার নিজের একটা অদ্ভুত আর অকারণ অস্বস্তিও হতে লাগল। কিন্তু এখন আর না এগিয়ে বিন্দুমাত্র ফিরে আসার কোন বাসনাও তনয়ের হচ্ছে না। তাইসেই ক্ষণে তনয়ের একান্ত ইচ্ছে হল, উল্টো কোন হাওয়ার স্রোতে যদি ফের ওই দরজাটা বন্ধ হয়ে যায় তাহলেই বেশ হয়। কেননা তা নাহলে তাকে স্বয়ং উঠে ওই দরজা বন্ধ করতে হবে, কারণ এই মৃদু আলোটাও এখন ভীষণ বিরক্তিকরভাবে তার চোখে লাগছে। আর আলোকে রেখে এই অবস্থা থেকে তাকে উঠে যেতে হলে আলোর সাথে তৈরী হওয়া তার এই অনন্য মূহুর্তটা নষ্ট হয়ে যাবে। এ’কথা ভাবতে ভাবতেই সে ব্যগ্রভাবে দরজার দিকে সেটার আপনা থেকে বন্ধ হওয়ার প্রত্যাশায় তাকিয়ে রইল।
আলো কিন্তু ঠিক বুঝতে পেরেছিল তনয়ের মনের উৎকণ্ঠাটা। সে এইবারে নিজের ডান তর্জনী দিয়ে তনয়ের থুতনির বাঁ দিকটা ধরে তার মুখ নিজের মুখের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে মুখে একটা অসম্ভব মোহিনী হাসি এনে সুমিষ্ট স্বরে বলল, ‘ও, এই ব্যাপার?…আচ্ছা দাঁড়াও, আমি দেখছি…’
এ’টুকু বলার পরেই তনয়ের গাল থেকে প্রথমে নিজের হাতটা সরিয়ে নিল আলো। এবং এর পরের মূহুর্তেই তনয় নিজের চোখের সামনে দেখতে পেল যে আলো চৌকিতে বসে বসেই নিজের হাত দু’খানা সোজা দরজার দিকে বাড়িয়ে দিল এবং আলোর সেই ফর্সা আর সুন্দর দুই হাত ক্রমশ দীর্ঘ থেকে আরও, এবং আরও দীর্ঘ হতে হতে একসময় ঘরের দরজার পাল্লাগুলোর একদম কাছে পৌঁছে গেল। আর তারপর অস্বাভাবিক লম্বা সেই হাতেরা তাদের লিকলিকেদশটা আঙুলের সাহায্যে আলতো একটা শব্দ করে খোলা দরজাটাকে ভেতর থেকে টেনে বন্ধ করে দিল।
এরপর ছয়-সাত মাস কেটে গেছে। তনয়কে নিয়ে এর মধ্যে প্রচুর ঝামেলা, থানা-পুলিশ হয়ে গিয়েছে। এখন অবশ্য সব সেই আগের মত ঠান্ডা।
শুধু তনয়ের হয়েছে যত্ত অশান্তি! তাকে একবার আলো এসে ধরে, আরেকবার ধরে আলেয়া। মূলগতভাবে চাহিদা এক হলেও পুরো আলাদা ঘরানার দুইজনের আবদার। অষ্টপ্রহর তাদের ঝগড়ায় তনয়ের কান একেবারে ঝালাপালা হয়ে গেল! জ্বালাতনের একশেষ যাকে বলে!
ও, এইবেলা বলে রাখি, আজকাল কিন্তু তনয় তার দুই সঙ্গিনীকে নিয়ে যত নষ্টের গোড়া পুকুরপাড়ের সেই বাঁশঝাড়টার মাথাতেই ডেরা জমিয়েছে। ওই দু’জনের যন্ত্রণায় এক পা অন্যত্র যাওয়ার উপায় নেই ওর। কিন্তু তাকে তো নিজের কথাটাও একটু ভাবতে হয়! সেজন্যই ঝাড়ের শীর্ষদেশ থেকে সে সারাদিন পথ চেয়ে বসে থাকে— যদি সেই বুড়ো ফেরিওয়ালার দেখা পায়। একবার বুড়োর দেখা পেলে তার হাতে-পায়ে ধরে যেমন করেই হোক তনয়কে কোন একটা রঙিন কাচের বোতলে ঢুকে পড়তেই হবে। মুক্তিলাভের সেটাই এখন ওর-ও শেষ আশা কি না।
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।