হাঁটি হাঁটি পা পা। এইতো হয়েছে- এবার এই পা টা, এবার ওই পা। বিমলা মেয়ের হাতটা ছেড়ে দিয়ে দুহাত বাড়িয়ে কোলে নেবার ভঙ্গী করে।
দিশা খিল খিল করে হেসে নিজে নিজেই একটা দুটো পা ফেলে ঝাঁপিয়ে পড়ে মায়ের কোলে।
বিমলা প্রবাসী স্বামীকে চিঠি লেখে –জানো, দিশা আজ হেঁটেছে, নিজে নিজে।
…
হাঁটু প্রতিস্থাপন করে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বিমলা এখন বিদিশার কাছে, বিশ্রামে।
-মা,আজকে তুমি হাঁটবে, ওয়াকার ছাড়া।
-পারব? পড়ে যাব না তো?
-আমি তো আছি, ভয় কী?
বিমলা আজ হাঁটলো, কারও সাহায্য ছাড়াই। বারান্দার এদিক থেকে ওদিক, ওদিক থেকে এদিকে।
বিদিশা ফোন করল বাবাকে – বাবা, মা আজ হেঁটেছে, নিজে নিজে।
জাহাজের ডেকে বসে দুই বন্ধু চলেছেন প্রমোদভ্রমনে। দুজনেই প্রবীণ, দুজনেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠার শীর্ষে। দুজনেই ঘোষিত ভাবে ঈশ্বর সম্পর্কে উ্দাসীন।
আলোচনা চলছিল ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য, বিশ্বরাজনীতি, অর্থনীতি সবকিছু নিয়ে।সামনে দিগন্ত বিস্তৃত নীল জলরাশি। পর্বত অথবা সমুদ্রের বিশালতার সামনে এলেই মনে এসে যায় ওপার, পরপার, পরলোকের কথা। আলোচনা হল এসব নিয়েও। দুজনেই আলোচনা শেষে একমত হলেন যে পরলোক মানুষের কল্পনা।মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হলেই সব শেষ।
কিছুক্ষন স্তব্ধতার পর ওঁরা আবার আলোচনায় ফিরলেন এবং আবার একমত হলেন যে পরলোক বলে সত্যিই যদি কিছু থাকতো তাহলে কিন্তু বেশ হত।
দাদু ছিলেন স্বাধিনতা সংগ্রামী। জেল থেকে পেয়ে মুক্তি পেয়ে ফিরলে সারা গ্রামের মানুষ সম্বর্ধনা দিয়েছিল। দেশবন্ধুভক্ত ছেলেমেয়েদের নাম রেখেছিলেন স্বরাজ, বাসন্তী, কল্যানী।এসব গল্প বালকটি মায়ের কাছে শুনেছিল।
মামার বাড়িতে মার্গো সাবান, নীম টুথপেস্ট আসতো। বালকটি একদিন মামাকে প্রশ্ন করেছিল- তোমরা তেতো সাবান, তেতো মাজন কেনো কেন?
-তেতো কী রে? ক্যালকাটা কেমিক্যাল।
-তেতোই তো। অন্য আনতে পারনা?
-নারে।
-কেন?
– ওটা যে ক্যালকাটা কেমিক্যাল,স্বদেশী জিনিষ। ও তুই বড় হলে বুঝবি।
…..
পঞ্চাশ বছর পরে আরেক বালকের প্রশ্ন- দাদু তুমি কী সিম নিয়েছ? কখনওই তোমাকে পাওয়া যায় না। তুমি সিমটা বদলাতে পার না?
-না রে, ওটা যে বি এস এন এল।
-মানে?
-ওটা ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড। স্বদেশী জিনিষ।
-তাতে কী?
-ও তুই বড় হলে বুঝবি।
Tags: গল্প, ত্রিদিবেশ বন্দ্যোপাধ্যায়
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।