[এই গল্পের সময়কাল ১৪২০-র ১লা বৈশাখের মাত্র কয়েকদিন পর। যেদিন একটি বাংলা টেলিভিশন গোষ্ঠীর দৌলতে প্রকাশ্যে এল দেশের বৃহত্তম আর্থিক জালিয়াতির ঘটনা। এই গল্পের সব চরিত্রই কাল্পনিক এমনটা বলা যাবে না। এই গল্পের কোনও চরিত্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ঘটনার কোনও চরিত্রের যদি কোথাও কোনও সাদৃশ্য এসে পড়ে তা এই রচনার পক্ষে একেবারেই আকস্মিক, অনভিপ্রেত]
কয়েকমাস আগে হওয়া জন্মদিনে একটা ব্যাটারি লাগানো হাঁস পেয়েছিল রোদ্দুর। স্যুইচ দিলেই দিব্যি মেঝেতে ঘুরে বেড়ায়। কিছুটা চলে ফিরে বেড়ানোর পর প্যাঁক প্যাঁক আওয়াজ করে ডিমও পাড়ে সে। চায়না মেইড এই খেলনা পেয়ে খুব খুশি হয়েছে রোদ্দুর। রাত সাড়ে এগারোটার পরও ঘুম নেই চোখে। সুস্মিতা চোখ রাঙালেও হাঁসের প্যাকপ্যাকানি থামে না। মাকে থোড়াই কেয়ার করে রোদ্দুর।
এক দেওয়ালের ব্যবধানে থাকা পাশের ফ্ল্যাটের লোকগুলোকে নিয়ে চিন্তায় থাকে সুস্মিতা আর রাজা। ও বাড়িতে এসব ঝামেলা ছিল না। বাবা-মার সঙ্গে অনেক রাত অবধি হৈ-হুল্লোড় চলত তাদের নাতির। এহেন পারিবারিক আনন্দের সমীকরণে বরং খুশীই হ’ত পড়শীরা। বাবুসোনা এখনও জেগে বলে খোঁজ নিত কেউ কেউ। কিন্তু সানসাইন অ্যাপার্টমেন্টের এই সাড়ে সাতশো স্কোয়ার ফুটের ফ্ল্যাটের কালচার অন্যরকম। রাত এগারোটার পর রোদ্দুর না ঘুমোলে পরদিন দেখা হলে সে প্রসঙ্গ ইনিয়ে বিনিয়ে তুলবেনই মিসেস চট্টরাজ – কাল তোমার ইয়েতো ঘুমোয় নি, আর সো ট্রেসড ছিলাম আমরা। তোমরা ছেলেকে ডিসিপ্লিন শেখাচ্ছো না কেন?
রাত পৌনে বারোটার পর রোদ্দুরের হাঁস কাণ্ড দেখে প্রমাদ গুনল সুস্মিতা। ব্যাপারটা ম্যানেজ করতে গল্প বলার টোপ দিল রাজা।
কে একটা সুন্দর গল্প শুনবে?
প্লাসটিকের হাঁসের পেটের ভেতর ডিম ভরতে ব্যস্ত ছিল রোদ্দুর। বাবা গল্প বলবে শুনে ও একটু মাথা তুলে তাকাল।
আমি একটা বাঘের গল্প বলব, বলব…। সুর তুলে বলল রাজা।
এতে দারুণ কাজ হল। হাঁস ফেলে দিয়ে বাবার বিছানায় দৌড়ে উঠে এল পুঁচকে রোদ্দুর। বাবার পাশে পা গুটিয়ে শুয়ে পড়ে বলল, বাঘের গল্প নয়, রাজার গল্প বলো-একটা রাজা ছিল…।
রোদ্দুরকে গল্প বলতে খুব একটা কসরত করতে হয় না। ‘একটা বাঘ ছিল’ বা ‘একটা রাক্ষস ছিল’ শিরোনামে যে কোনও গল্প হাত-পা নেড়ে চোখ পাকিয়ে বললেই শান্ত হয়ে শোনে ও। তবে সবের মধ্যে ওর ফেবারিট ‘একটা রাজা ছিল’ গল্পটা।
নিজের জীবনের সুর টেনেই ছেলেকে ‘একটা রাজার গল্প’ শোনাতো রোদ্দুরের বাবা। দূরের গাছ-পালার দিকে তাকিয়ে. একান্তে বারান্দায় বসে ভোজবাজির মত পাল্টে যাওয়া দিনগুলোর কথাই ভাবছিল সুস্মিতা। ঝকঝকে একটা দিনের মাঝখানে ঝুপ করে রাত নেমে এলে যতটা অবাক হতে পারে মানুষ, এই কয়েকটা মাসের ঘটনায় তার চেয়েও অবাক হয়েছে সে।
সোনামা একটু মুড়ি তরকারি খেয়ে নে, সকাল থেকে তো কিছু খাস নি –
মায়ের ডাক শুনে সম্বিত ফেরে সুস্মিতারষ সেদিনের সেই ঘটনার পর ও রোদ্দুরকে নিয়ে মায়ের কাছে পালিয়ে আসে। মেয়ে যে এসেছে তাও পাড়া-প্রতিবেশীর কাছে যতটা সম্ভব গোপন রেখেছে বাবা-মা। এখানেও কেমন যেন দমবন্ধ হয়ে আসছে সুস্মিতার। বলল, এখন খেতে ভাল লাগছে না মা।
সে তো বুঝলাম। কিন্তু কিছু না খেলে তো মুশকিল।
কিছু হবে না মা। এতদিন অনেক খেয়েছি। কটা দিন না হয় নাই খেলাম। মাথা পাগল করিস না। যা হবার হয়ে গেছে। সোনামণিকে তো মানুষ করতে হবে বলেই মুড়ির বাটিটা টেবিলে রেখে ভেতরে চলে গেলেন সুস্মিতার মা।
সুস্মিতা অনুভব করল, মাকে বুকের ভেতরের কষ্টটা বোঝানো যাবে না। সম্ভবও নয়। নিজেদের ঘিরে এক অন্যরকম ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছিল সুস্মিতা আর রাজা। রোদ্দুর হওয়ার পর থেকেই বদলে গেছিল জীবনযাত্রা। পোস্ট অফিসের সামান্য এজেন্ট রাজা যোগ দিয়েছিল ভূঁইফোঁড় কোম্পানির অর্থ সঞ্চয় প্রকল্পে। অতি কম সময়ে দুগুন-তিনগুন লাভের আশ্বাস। রাজা দারুন ভবিষ্যতের কথা শোনালেও প্রথম প্রথম অতটা গা করেনি সুস্মিতা। বছর ঘুরতেই অবস্থা গেল পাল্টে। পোস্ট অফিসের এজেন্ট হিসেবে এলাকায় সুনাম তো ছিলই, তার উপর যোগ হল টাকা বাড়ানোর একের পর এক লোভনীয় স্কিম। বাজারওয়ালা থেকে মুদিখানার মালিক, পাড়া-প্রতিবেশী থেকে বন্ধুবান্ধব সকলের কাছেই নানা পলিসি বিক্রি করেছিল রাজা। প্রথম ছ’মাসে ভাল কমিশন মেলায় ৩২ ইঞ্চি এলসিডি টিভি কিনেছিল ওরা। তখন রোদ্দুর খুব ছোট। ছেলের জন্য হরেকরকমের জামা থেকে খেলনা, অ্যাকোয়াগার্ড থেকে প্যারামবুলেটর কিছুই কিনতে বাকী রাখেনি ওরা। বছর ঘুরতেই না ঘুরতেই ফ্ল্যাট কেনার বায়না ধরে রাজা। রাতে কাজ থেকে ফিরেই বলত, দেখ এই ছোট জায়গায় বাবা মায়ের নিশ্চয়ই থাকার অসুবিধে হচ্ছে। রোদ্দুরটা রাত বিরেতে এমন কাঁদে…।
মা-বাবাকে একবার বলেছো ব্যাপারটা? ওরা কী ছেলে বউ-এর ফ্ল্যাট কিনে চলে যাওয়াটাকে মেনে নেবেন? প্রশ্ন তুলেছিল সুস্মিতা।
সুস্মিতা এ ধরনের প্রশ্ন করলেই পরে সব ম্যানেজ করে নেওয়ার কথা বলত রাজা। তারপর সত্যি সত্যিই একদিন বুক করে ফেলল সাড়ে সাতশো স্কোয়ার ফুটের একটা ফ্ল্যাট। পাড়া থেকে একটু দুরে বড় রাস্তার উপর ছ’তলা সুদৃশ্য সানসাইন অ্যাপার্টমেন্ট। গৃহপ্রবেশের দিন ফ্ল্যাটের ফাঁকা লনে খাওয়ানো হয়েছিল ২৫০ জন নিমন্ত্রিতকে। জামাই-এর এরকম কাজে খুব খুশি হয়েছিল সুস্মিতার মা-বাবা। বলেছিল অনেক উন্নতি করবে রাজা। জানিয়েছিল ওর মধ্যে লড়াই করার মানসিকতা আছে – তবেই না কোম্পানির এত সুযোগ সুবিধে পাচ্ছে। ওদের মত এজেন্টরা কোম্পানির অ্যাসেট। তবে ফ্ল্যাট কিনে চলে আসাটা মন থেকে মেনে নিতে পারেন নি রাজার বাবা-মা। ছোট্ট নাতিটাকে সর্বক্ষণ কাছে না পাওয়ার বেদনাও বড় বুকে বেজেছিল তাদের।
বাবার ডাকে সম্বিত ফিরে পেল সুস্মিতা। সাত-পাঁচ চিন্তা করতে করতে হারিয়ে গিয়েছিল ভাবনার রাজ্যে। বাবাকে দেখে চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বলল – বসো বাবা।
কিছু খাওয়া-দাওয়া না করে অসময়ে এভাবে বারান্দায় বসে আছিস কেন? বললেন সুস্মিতার বাবা অনিরুদ্ধ।
আচ্ছা বাবা, তোমার কষ্ট হচ্ছে না? রিটায়ারমেন্টের পর তোমার জমানো ২ লাখ টাকা এভাবে জলে চলে গেল – সরাসরি জানতে চাইল সুস্মিতা।
একটু ইতস্তত করে অনিরুদ্ধ বললেন, দেখ মা, আমি সেভাবে এখনও কিছু ভাবতে পারিনি। আর কিসের জন্যই বা দুঃখ করব বলতে পারিস।
কিন্তু আমার যে ভীষণ অপরাধী লাগছে বাবা। প্রায় জোর করেই তো তোমার টাকাটা নিয়ে গিয়েছিলাম।
বাবার থেকে টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্তের টানাপোড়েন স্পষ্ট মনে আছে সুস্মিতার। রাজা জোর করলেও এতে আপত্তি ছিল ওর। রাজা বলেছিল জামাই-এর জন্য তোমার বাবা কী কিছুই করবে না?
সুস্মিতা বলেছিল বাবা রিটায়ার্ড মানুষ। ব্যাঙ্কে সঞ্চিত টাকাটাই সম্বল। কোনওভাবে নষ্ট হয়ে গেলে কী করে ফেরত দেবে তুমি? এতে রেগেই গেছিল রাজা। বলেছিল ভাল রিটার্নের জন্য একটু আধটু রিস্ক নিতেই হয়। তার তুমি বাবার দিকটাই দেখলে। আমার যে কতটাকা কমিশন আসবে সেটা ভাবলে না? আর সেরকম কিছু হলে কোম্পানি বুঝবে, আমার দায় কোথায়? তখন রাজার চাপে, সংসারের আর্থিক প্রাপ্তির কথা মাথায় রেখে বাবাকে ভূঁইফোঁড় কোম্পানির অর্থ সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা জমাতে রাজি করিয়েছিল সুস্মিতা। আজ সেইসব কথা ভাবতে গিয়ে খটকা লাগল সুস্মিতার। তাহলে কী কোম্পানির এমন হালের কথা রাজা আগে থেকেই জানত? জেনেশুনে শুধুমাত্র কমিশনের লোভে শ্বশুরের টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল সে? এসব ভাবনা মাথায় আসতেই শরীরে অস্বস্তি হতে শুরু করল ওর।
ওসব ভাবনা ছেড়ে দে। তুইতো আমার ভালর জন্যই নিয়ে গিয়েছিলি। এখন নিজের ভবিষ্যত নিয়ে ভাব। আমার যা আছে অসুবিধে হবে না। দাদুভাই-এর কথাটা ভাবতে হবে তো।
কথা বলতে বলতেই ছলছল করে আসা চোখ দুটো বুজে ফেলল সুস্মিতা। গাল দিয়ে গড়িয়ে পড়ল কয়েকফোঁটা চোখের জল। রোদ্দুরের মুখ চেয়েই আলোর পথ খুঁজতে চায় ও। কিন্তু জানে না ভবিষ্যত কী লিখে রেখেছে ওদের জন্য।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাতের খাবার খেয়ে নিল সুস্মিতা। এই কদিনে বদলে গেছে তার প্রতিদিনের রুটিনটাই। সেই সন্ধ্যেবেলায় রোদ্দুরকে নিয়ে গিয়েছিল সুস্মিতার দাদা-বৌদি। কিছুক্ষণ আগেই দিয়ে গেছে। এখন দাদু-দিদার হেফাজতেই সময় কাটছে রোদ্দুরের। অথচ ক’দিন আগেও বাবা-মা ছাড়া থাকতে পারত না ও। এই কদিনে যে কী কঠিন বাস্তব ঘটে গেছে তা বুঝতেও পারেনি ছোট্ট রোদ্দুর। রাজা যে অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্ট তার ধসে পড়ার খবর টিভি দেখেই প্রথম জানতে পারে ওরা। যদিও সমস্যা শুরু হয়েছিল মাস খানেক আগেই। মাঝে মধ্যেই সল্টলেকে সেক্টর ফাইভের হেড অফিস থেকে মিটিং সেরে এসে মুষড়ে পড়ত রাজা। অথচ এরকম হওয়ার কথা ছিল না। বলত আমাদের এম ডি স্যারের লক্ষ্য বিশাল সাম্রাজ্য তৈরি করা আর মানুষের সেবা করা। এম ডি স্যারকে কিং বলে মানত রাজা। কিন্তু ইদানিং যে সব কিছুর তাল কেটে যাচ্ছিল। তা গোটা ঘটনাটা বারবার ফিরে দেখতে গিয়ে বুঝতে পারছে সুস্মিতা। এম ডি স্যারকে দেখে রোদ্দুরের বাবাও রাজার মত বাঁচতে চেয়েছিল। বছর কয়েকের মধ্যে ফ্ল্যাট, চারচাকা, এসি, এলসিডি, কিছুই কিনতে বাকি রাখেনি। ধুমধাম করে পালন করা হয়েছে রোদ্দুরের তিন বছরের জন্মদিনও। তবে শুধু নিজের জন্যই নয়, অন্যের জন্যও প্রচুর খরচ করেছে ও। ক্লাবের দুর্গাপুজো থেকে শীতলামায়ের মন্দির সংস্কার সবেতেই দেদার টাকা-পয়সা দিয়েছে। সুযোগাযোগ হোক বা ভাল ব্যবহার, এজেন্ট হিসেবে অনেকেরই আস্থা অর্জন করেছিল রাজা।
কিন্তু তিল তিল করে গড়ে তোলা আস্থাই সেদিন তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়তে দেখেছিল সুস্মিতা। চিটফান্ড কর্তা পালিয়েছে – টিভি, খবরের কাগজে এই খবর প্রকাশিত হতেই একের পর এক ফোন আসতে শুরু করে। বেশ কয়েকজন চলেও আসে বাড়িতে। জানতে চায় জমা টাকার কী হবে? কবে ফেরত পাওয়া যাবে? নাওয়া-খাওয়া লাটে ওঠে রাজা-সুস্মিতার। চিটফান্ড মালিক – যাকে রাজারা ‘কিং’ বলে মানত সে চোরের মত পালিয়েছে। এত লোকের টাকা কীভাবে ফেরত দেওয়া যাবে? ঘুম ছুটে যায় দুজনের। কিন্তু তারপর যা ঘটল তার জন্য প্রস্তুত ছিল না কেউই। শাখা অফিস ভাঙচুরের পর রাজার বাড়িতেও হামলা চালাল এলাকার লোকজন। যাদের সঙ্গে দেখা হলে দু’বেলা কুশল বিনিময় হত, যারা নানা সুখ দুঃখের সঙ্গী ছিল তারাও এসে বাড়িতে হুমকি দিয়ে গেল। রাজা এত অপমানিত আগে কখনও হয়নি। আশঙ্কায়, আতঙ্কে, অভিমানে সুস্মিতার বুকে মাথা রেখে কেঁদে ফেলেছিল ও । ভয়ে বুক শুকিয়ে গিয়েছিল সুস্মিতারও। যদিও একদিন ঝড় থেমে যাবে বলে ভাল সময়ের – স্বপ্নটা জিইয়ে রেখেছিল সে। কিন্তু ঠিক সময় আসার আগেই সব শেষ, পরদিনই গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করল রাজা। একটা ঝোড়ো হাওয়ায় খটকুড়োর মত দুমড়ে-মুচড়ে গেল সুস্মিতা। একটা মত্ত হাতির পায়ের চাপে যেভাবে মাটিতে মিশে যায় ঘাসের দেহাংশ, দিন দুই ঘরের মেঝেতে সেভাবেই পড়ে ছিল সে। প্রেস আর পাবলিককে আত্মীয় স্বজনরা সামলালেও ছোট্ট রোদ্দুরকে আগলে রেখেছিল সুস্মিতার দাদা-বৌদি।
বাপের বাড়ির বারান্দায় বসে সুস্মিতার এই সব ভাবনার মধ্যেই দাদু দিদার কাছ থেকে চলে এল রোদ্দুর। বাবার খবরটা এখনও জানে না ও। অফিসের কাজে বাবা বাইরে গেছে বলেই বোঝানো হয়েছে ওকে। ঘরে এসেই দাদুর দেওয়া গাড়িটা প্যাঁচ লাগিয়ে চালিয়ে দিল রোদ্দুর। ক্যাঁড় ক্যাঁড় আওয়াজ করে সেটা চলতে শুরু করল। রাতের বেলায় এমন আওয়াজ করায় ছেলেকে ধমক লাগালো সুস্মিতা। মায়ের বকুনি খেয়ে কিছুটা বমকে গেল ও। ফ্ল্যাটে অসুবিধে থাকলেও দাদু-দিদার বাড়িতে রাত্রে গাড়ি চালালে মা কেন বকাঝকা করছে তা বুঝতে পারল না সে। এরপর হঠাৎই সুস্মিতাকে জড়িয়ে ধরে আবদার করে বলল – মা একটা গল্প বলবে?
গল্প শুনতে শুনতেই ঘুমোনোর অভ্যাস রোদ্দুরের। আগে এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটা সামলাতো রাজাই। প্রতিক্ষণেই ওর অভাবটা গভীরভাবে অনুভব করছে সুস্মিতা। বুকের কান্না কোনওরকমে চেপে রেখে রোদ্দুরকে পাশে শুইয়ে ‘একটা হনুমান ছিল’ গল্পটা বলতে শুরু করল সে। গল্প একটু এগোতেই আরও কাছে সরে এসে বাঁ হাত দিয়ে মায়ের মুখ চাপা দিল রোদ্দুর। বলল, মা রাজা বাবাকে অনেকদিন দেখিনি। ফোনে আমাকে গল্পও বলেনি। তুমি বরং আমাকে ‘একটা রাজা ছিল’ গল্পটা শোনাও –
ছোট্ট রোদ্দুরকে বুকে জড়িয়ে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলল সুস্মিতা।
Tags: একটা রাজা ছিল, গল্প, সমীর ঘোষ
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।