প্লেনটা ছোট হলেও দেখতে ভাল। আগেকার দিন হলে বলত ‘হেলিপ্যাড’। এখন একটা গালভরা নাম হয়েছে ‘মিনিজেট’। মিনিস্কার্ট, মিনিবাস সব শুনেছে পরি কিন্তু আকাশযাত্রার এমন গাড়ির নামটা সেদিন নেটবুকের নেটকাগজে পড়ল সে। বেশ ভালই। তার ওপর পুরনো বিদেশী। তাই বিশ্বাস করে বরকে বলল, ‘বুক করো’। সটাসট বুক। ঝটপট সার্ভিস। বাড়ির চিলেকোঠার ঘরটায় একটা এয়ারল্যান্ডিং গ্যারেজ করা পরিণীতার বরের বাঁয় হাত কি খেল। এত বড় প্রোমোটার সারা শহরে মিলবে না। নইলে এই দুই হাজার পঞ্চাশ সালে দাঁড়িয়ে চাঁদে দু’হাজার একর জমি বুক করে ফেলেছে সে, নিজের ছেলের নামে। ছেলেও আমেরিকার সেন্ট ওয়েলস ইউনিভার্সিটিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। ফলে বাপে বেটায় জমিয়ে দেবার অছিলায় নতুন প্ল্যানিং-এ হুন্ডা মিৎসুবিশির মিনিজেটটা বুক করে ফেলল। আর এখন যা অবস্থা তাতে রোডওয়েজ আর রেলওয়েকে আস্থা রাখাই বিপজ্জনক।
পরির বরের নাম দিগন্ত। সফল সিভিল ইঞ্জিনিয়ার কাম প্রোমোটার। সারা পৃথিবীর ত্রিশটা জায়গায় একসাথে প্রোজেক্ট চলছে। হাইফাই যোগাযোগ ছাড়া দিগন্ত চোখে অন্ধকার দেখে। আর তাছাড়া ছেলের যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে এই ছোট প্লেনটা দারুণ। প্রায় সব সময় বাড়ির ছাদের উপর দিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে রঙ বেরঙ-এর ছোট ছোট প্লেন। ওর মেইন হেল্পিং হ্যান্ড রণ। মানে হাত কাটা রণ। বছর কুড়ি আগে বৌমাবাজিতে একটা হাত ‘খরচার’ খাতায়। এই রকম একটায় চড়ে এসে বলল, ‘দাদা এক্কেবারে লে সাপচু। কিনে ফেলুন। সেদিন থেকে ওর মিনিজেটে চাপার হেব্বি ইচ্ছাটা ভাবী পরিকল্পনার ডানায় ভর করল। আর তাই দেরি না করে প্লেনটা আসার পর পরই গায়ে নাম লেখাল – ‘দিগন্ত পরি’।
সকালে পরিকে নিয়ে কামাখ্যায় গিয়েছিল পুজো দিতে। প্লেন পুজোর জন্য এখন আবার কামাখ্যায় খুব ঝামেলা। মূল পাহাড়ের পাশে একটা এয়ারবেস করেছে। সেখানে ল্যান্ড করলে পাণ্ডারা নিয়ে যাবে মন্দিরে। ভেতরের ভি.আই.পি ব্যবস্থা করেই রেখেছিল পাণ্ডা অর্জুন দেবশর্মা। চারটে পায়রা আর দুটো ভেড়া ঝটপট কেটে রক্ত বাটিতে নিয়ে মায়ের বেদিতে চড়িয়ে তবে শান্তি পরির। যাক, বাতাসযাত্রার বিপদ কাটল তবে। ওর মা-বাবাও গাড়ি কিনলেও সোজা শিলিগুড়ি থেকে কামাখ্যায় গিয়ে পুজো চড়াত। পরিও সেই ধারা বজায় রাখল। বিকেলের মধ্যেই বাড়ি ফিরল।
ছেলের ফোনে উত্তেজিত সবাই। সামনের পুজোতে ও আসছে। সবাই মিলে কাশ্মীর বাই মিনিজেট। না না প্ল্যানিং এটা ওটা সেটার গল্প। হঠাৎ পরি বলল, ‘বাবার পুরনো গাড়িটা, সেটা বাড়ির দারোয়ান রামশরণকে দিয়ে দিয়েছে বাবা। ওর ছেলে নাকি ব্যবসা করবে। আমারটা কি করি বলতো? একদম নতুন B M W.’ ছেলের উত্তর ‘অকশন হাউসে দিয়ে দাও। ওটা আবার নতুন করে বাজার করেছে। পার্কস্ট্রিটের জে.এল.থমসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারো। ওরা নাকি ভাল দাম দিচ্ছে। অথবা ওয়েব সাইটে অ্যাড দাও। দাম না পেলে ছেড়ো না। আর একটা রোডওয়ে অপশন রেখে দিতে পারো। কতরকম ঝকমারি আছে। মনে আছে বাবাই বলছিল — দাদু ৮০ বছর বয়সে মারুতি ৮০০ কিনেছিল তখনও বাইকটা বিক্রি করেনি।’
–‘ঠিকই বলেছিল। সাবধানে থাকিস সোনা’ ফোন কাটল পরি।
ছেলের বুদ্ধিতে বিশ্বাস ও আস্থা রাখে পরি। বরকে যতদিন বরাবর দেখছে ততদিন ঠিকঠাক মানত। কিন্তু যবে থেকে আর্থিকভাবে বর্বর হয়ে উঠতে দেখল তখনই বুদ্ধিটা আর ঘরোয়া রূপে করতে পারে না। তাই ছেলের সাথে গোপন শলা।
২
‘আরে দিগন্তদা নামুন,নামুন – কি সৌভাগ্য আমার। শেষে আমার বাড়িতে আপনি’- ছাদে দাঁড়িয়ে আনন্দে ফুটছেন ঝানু সাংসদ কানন মিত্র। নতুন জেটটা নিয়ে এভাবে সারপ্রাইজ দেবেন ভাবিনি। নামুন, নামুন।
— না, ভাবলাম একবার ঘুরেই যাই। আপনার সাথে কলাবেচার কাজটাও যদি এগিয়ে…
–আরে কলা নয় দাদা, আপনি হলেন কালাকার মানুষ। আগে বসুন। পরে সব। ভাল করেছেন কিনে। যখন ইচ্ছা সাইটে যাওয়া যায়। আমারও সুবিধা অসুবিধা হলে ডেকে পাঠাব। আর এখন তো সবাই এগুলিই ব্যবহার করছে। আপনাদের কলকাতা বা বর্ধমানেও তো অনেকে কিনেছে। ভালই করেছেন।
–যাক গে। যে কথা সারতে এলাম…
দুজনেই ছাদের বৈঠকখানায় গা এলিয়ে দেয়। বেয়ারা পানীয়, সোডা, খাবারের ট্রে দিয়ে গেল।
দ্রুত কথাটা তুলল দিগন্ত, — দাদা, ব্যাঙ্গালোরের সাইবার সিটির এয়ারপোর্টের আধুনিকীকরণের প্রোজেক্টটা একটু দেখবেন?
— আরে হ্যাঁ হ্যাঁ, ওটা ভাববেন না। ওটা আপনার কোম্পানীর জন্যই ভাবা আছে। আর আপনারা একটু আমার ও আমাদের দলের কথাটা ভেবে রাখবেন।
— আরে এত ভাবার কি আছে? আমি সঙ্গেই নিয়ে এসেছি। সহকারী রণকে ইশারাতে বাক্স নামাতে বলল। রণ বাক্স নামাল।
— এতে ক্যাশ চারশো কোটি আছে। আপনার মিষ্টি আর দলের মিষ্টির প্যাকেটটা আমি অর্ডার আর কাজ আরম্ভ হলেই দলীয় অফিসে পাঠাব।
–ব্যস! হয়ে গেছে ধরে নিন। আর বলছিলাম কি নতুন প্ল্যান নিয়ে কিছু ভাবুন, আপনার সাথে কাজের মজাই আলাদা।
— না, এইবারে যেটা করব সেটা হল চাঁদের প্রোজেক্টটা নিয়ে ভারত সরকারের সাথে বসব। আপনার মন্ত্রীত্ব থাকতে থাকতেই তা করতে হবে।
–ওকে, আপনার আজ্ঞাই আমাদের জননেতাদের ভরসা। একটা কাজ করুন না মানস–পবিতোরা–নামদাফা মানে আসাম-অরুণাচলের দিকটা বুঝলেন একটু ঝামেলা কমাবার জন্য সরকার একটা সামাজিক বনসৃজন প্রোজেক্ট কাম ইকো ট্যুরিজমের প্রোজেক্ট নিচ্ছে। যদি আপনাদের কোম্পানীর ইচ্ছা থাকে…বাধা দেন দিগন্ত, — আরে ইচ্ছে মানে আপনার ইচ্ছে মানে আমার কর্ম শুরু।
— ওফ! আপনি কথা বলেন সুন্দর, ঠিক আছে তাহলে সামনের সপ্তাহে চলুন। একটা ভাল দিন দেখে একটু সরজমিনে… সবাই ঘুরে আসি। তবে হ্যাঁ, সবাই জানবে বর্ডার সিকিউরিটির জন্য ভিজিট করছেন মন্ত্রী।
–ওকে।
৩
গৌহাটি এয়ারপোর্ট থেকে ছোট মিনিজেটে মন্ত্রীর পার্ষদ সেজে দিগন্ত আজ পৌঁছালো মানসে। সেখান থেকে পবিতোবায় রাত্রিবাস। রাতের মেহেফিল বনবাংলার কোর এরিয়ায়। পান-অনুপান সহ সমস্ত আয়োজন নিয়ে। রাতের শেষ প্রহর পর্যন্ত বাংলোর অবজারভেটরি বারান্দায় বসে বসে ল্যাপটপে চাঁদের নতুন হাউসিং প্রোজেক্ট প্ল্যানিং দেখাচ্ছিলেন দিগন্ত। পাশে অর্ধশায়িত রণ। দুচোখে বিস্ময় নিয়ে সমস্ত পরিকল্পনা দেখছে। ভারত সরকারের নির্বাণ আবাসনের মন্ত্রী কানন মিত্র শেষে বলেই ফেললেন – শুনুন, এই প্রোজেক্ট রূপায়নে আরো পঞ্চাশ বছর লেগে যাবে। তাছাড়া আমেরিকার মতামতেরও একটা ব্যাপার আছে। তবে আমি প্রাইম মিনিস্টারকে বলে পুরো প্রোজেক্টের প্ল্যানিংটা তারাতারি পাশ করাব। প্রোজেক্টেড প্ল্যানিংটাই যদি আগামী ইলেকশনের আগে শো করা যায় তবে তো ইলেকশন একেবারে কেল্লাফতে।
আশার আলো দুলতে দুলতে ঢেউ হয়ে পবিতোরা–মানস–নামদাফার ঘন অন্ধকার চিরে জেগে থাকা বন্যপশুদের চোখের লোলুপ শিকারী দৃষ্টিকে কাঁপিয়ে দূরের আকাশের গায়ে একফালি চাঁদে যেন ধাক্কা খেয়ে গেল।
৪
–শুনছ? তুমি কি এখনও ওই জঙ্গলে? ফোনের ওপার থেকে উদ্বিগ্ন কণ্ঠস্বর। পরির ফোনে উৎকণ্ঠা।
–কেন? কি হয়েছে?
–কি আবার হবে? এক্ষুনি ওখান থেকে বেরিয়ে পড়।
— কেন?
–আর বোলো না!আমাদের দারোয়ান রামশরণ মারা গেছে।
–অ্যাঁ!
–হ্যাঁ।
–কেন, কি হয়েছিল?
— আরও খবর আছে, রণকেও ফিরতে হবে ওর মায়ের অবস্থা খারাপ। কি একটা জ্বর হচ্ছে। ওদিকে স্টেশনের ওপারে মেথর পাড়ায় নাকি মৃত্যুর লাইন লেগেছে।
— কি করে…
–জানি না বাপু, কি নাকি এক অজানা জ্বর। কেউ কিছু বুঝতে পারছে না। তিনদিনে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাইরে মাইকে করে করে প্রচার করছে মশা আর পশু থেকে সাবধান। তুমি শিগগিরি চলে এসো। জঙ্গলেও ওসব থাকে।
— তুমি আগে বাড়ির সব জানলা দরজা বন্ধ করো। নেট লাগাও। আচ্ছা, এই তো একবছর হল সব জায়গায় টিকা দিল সরকার থেকে। কি হল তবে?
–জানি না বাপু। তুমি আর রণ তাড়াতাড়ি এসো। ফোন কাটল পরি।
রণ তো পড়িমরি করে ব্যাগ গোছাতে আরম্ভ করল। কানন শুনে বলল, — দূর! ওসব ছোটলোক এলাকার গুজব। কান দেবেন না। তবে আপনারা এক কাজ করুন ছোট জেটে বাড়ি গিয়েই রণ মাকে নিয়ে সোজা দিল্লি চলে আসুন। আমি এইমস এ বলে রাখছি, কোনও চিন্তা করবেন না। বেরিয়ে পড়ুন।
৫
বিকেলে দিল্লির শ্মশানে ভয়টা চেপে ধরল দিগন্তকে। রণর মার মুখাগ্নি করে গাড়িতে ওঠার আগেই গাড়ি নিয়ে এসে উপস্থিত মন্ত্রীমশাই স্বয়ং। বললেন – রণর মার বয়স হয়েছিল। ঘাবড়িও না। তোমরা সেরকম হলে দিল্লিতে কয়েকদিন থেকে যাও।
–না না, তা হবে না। বাধা দিলেন দিগন্ত। — ওখানে পরি, বাড়ি সব রয়েছে। কিছু মাথায় ঢুকছে না দাদা। গত বছর এই যে এত টিকা হল, সব জলে গেল?
কাননের আশ্বাস, — দূর, ওসব কিছু না। ছোটলোক এলাকায় হচ্ছে। ছাড়ুন তো।
৬
পরদিন সকালবেলার ফোনে দিগন্তের পায়ের তলার মাটি সরতে আরম্ভ করল। দিল্লির ভোরের কাগজ জানিয়েছে, আবাসনমন্ত্রী কানন মিত্র গভীর রাত্রে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এইমসে ভর্তি। তড়িঘড়ি ছুটলেন দিগন্ত। ওদিকে পরির তাগাদা, – কিছু একটা করো বাড়িটাতে। সাধারণ জ্বর কত ভয়াবহ হতে পারে টের পেলেন দিগন্ত। খাওয়া ঘুম প্রায় বন্ধ। আমেরিকা থেকে ডাক্তার এল। মেডিকেল বোর্ড বসল। যমে মানুষে টানাটানি। বাড়ি ফিরলেন মন্ত্রী কানন মিত্র।
তখনও দিগন্তর গায়ে যেন অল্প অল্প তাপ। মনের জ্বর তখনও যায়নি দিগন্তর। দুহাজার পঞ্চাশে দাঁড়িয়েও আধুনিক ওষুধে সজ্জিত হয়েও ভয় যায়নি দিগন্তর মতন উঁচুতলার উঁচু যোগাযোগের মানুষের। দেখা করতে গেলেন কাননের সাথে।
–ওই শালা পবিতোরা। ওখানেই কামড়েছিল।
–আর ভেবে কি লাভ?
–আরে এতো শালা মহাবিপদ হল।
–কি করা যায় বলুন তো এদের নিয়ে? এ শালা মশাই সভ্যতার শত্রু।
–ব্যবস্থা একটা ঠিক হবে, ভাববেন না। এয়ার গ্যাস-কামান আনা হচ্ছে। ওপর থেকে গ্যাস বোমা ফেলা হবে আক্রান্ত অঞ্চলগুলোতে।
–ধুস! ও শালারা মরবে, আবার জন্মাবে। আপনি তো সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, আপনি ভাবুন। নইলে চাঁদেও কিন্তু কিছু করতে পারবেন না। ও শালারা ঠিক চলে যাবে।
–দেখি, এটাকেও একটা প্রোজেক্টের মধ্যে রাখব ভাবছি।
৭
রাত্রে বাড়ি ফিরে দিগন্ত ডিভানে শুয়ে ভাবছিল সমস্ত ব্যাপারটা নিয়ে। পাশে বসে পরি নোটবুকে নেট কাগজ পড়তে পড়তে চিৎকার করল – দেখেছ? একটা আধ ইঞ্চি ছোট পতঙ্গের ভয়ে পৃথিবীর আটটা দেশে বছরে খরচ করছে একলক্ষ কুড়ি হাজার কোটি টাকা। ভাব তো? আমাদের সরকারের একটা প্রোজেক্ট খরচ।
ততক্ষণে দিগন্তর দুচোখ বুজে এসেছে। দিগন্তর সামনে শুধু বাতাস আর বাতাসের দাপট। ছোট ছোট ফাইবার গ্লাসের জালবাড়ি, এই জালবাড়িগুলো ভাসতে ভাসতে কখনও উঠে যাচ্ছে, কখনও ওপরে লাফাচ্ছে। তার মধ্যে একতলা, দোতলা, তিনতলা অসংখ্য মানুষ হৈ হৈ। চিৎকার আলাদা মজা। এই একটা হাওয়া বাড়িতেই দিগন্ত ঢুকে উড়তে উড়তে দেখলেন নিচে বিশাল জঙ্গল।মনে হল যেন মানসের অভয়ারণ্য। নতুন বন বাংলো? দেওয়াল সব ফাইবার গ্লাসের। আর পুরোটা মোড়া একটা নেটে। সেই বাড়িতে ঢুকে দেখলেন, কাননবাবু দু-পা তুলে ভুড়ি বাগিয়ে বসে হাসছেন। হাতে ব্ল্যাক ওয়াইনের গ্লাস,- আসুন আসুন। চমৎকার আপনার প্ল্যানিং। এই তাহলে চাঁদের বাড়ি আর আমাদের মশার সাথে আড়ি।
দিগন্ত পৃথিবীর দিকের স্ক্রিনের মধ্যে দিয়ে দেখলেন একটা বনকর্মী সাইকেল নিয়ে একটু করে যাচ্ছে আর থামছে। সাইকেলের পিছনে বসানো একটা ট্যাঙ্ক থেকে স্প্রে মেশিনে স্প্রে করছে ওদের বস্তির আশেপাশে। ট্যাঙ্কের গায়ে লেখা অ্যান্টি ভাইরাস স্প্রে অবজেস্ট।
–কি দেখছেন ওই শালার পৃথিবীর দিকে? কাননের চিৎকার, — ছাড়ুন এখন একটু গলা ভেজান। ওই পৃথিবীর বোকা মানুষের দল মরছে এবার কীটপতঙ্গের মতন ভাইরাস আর পোকাদের হাতে। ওসব বাদ দিন। ওখানে লেগেছে অতীতের পাপ। আমরা পুণ্যবান, তাই না চাঁদের মাটিতে নতুন প্রজন্মের আশায়। আর তাই না চাঁদের মাটিতে বানিয়েছি ঘোরানো জালবাড়ি।
হঠাৎ গোঁ গোঁ শব্দ। ‘পরি ও পরি’…ঘুম ভাঙে পরির ধাক্কায়, — কি পরি পরি করছ?
–না, জানো দেখলাম চাঁদে…
পরির ধমক, –চাঁদে কি?
–চাঁদে একটা মশারি ঢাকা বাড়ি।
–অ্যাঁ, মশারি বাড়ি? দূর বোকা! কি সব আজগুবি স্বপ্ন দেখছিলে? যত্তসব! চাঁদে কখনও মশা থাকে?
–না না, থাকে না, থাকবেও না। তাই তো বানাব ওই বাড়ি।
–আর এখানকার সবাই? পরির আকুতি, — এখানকার গাছ, প্রাণী আর মানুষগুলো?
— সব ভাইরাস। পাশ ফিরল দিগন্ত।
পরি দু হাত দিগন্তে ভাসিয়ে বলল -না গো না, ওরাই তো পৃথিবীর চাঁদ। পরিকে কাছে টেনে নিয়ে দিগন্ত বলল –চাঁদ না কচু। বলো পৃথিবীর ফাঁদ। সবচেয়ে বড় ফাঁদ। আর তাই না আমরা হয়েছি চাঁদের শিকারী।
Tags: গল্প, দিগন্ত-পরি, দেবাশিস মজুমদার
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।